বিছিন্ন_ভালোবাসা
৮ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
” যাকে পিচ্চি একটা মেয়ে মনে করে আদর করে পড়াতাম সে আমার আদর গুলোকে ভালোবাসা ভেবে নিলো কিভাবে!”
,
এমনই ভাবনায় পড়ে আছে রাফিদ। রাইসা তাকে ভালোবাসে এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছেনা। হবেই বা কি ভাবে রাইসা তো কোনোভাবেই তার মনের কথা প্রকাশ করেনি।
,
রাফিদ ডায়েরির পাতায় চোখ বুলিয়ে দ্রুত রাইসার ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। রাইসার মা কিছু বলতে গেলো কিন্তু তার আগেই রাফিদ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। নিজের ঘরে গিয়ে খালি পায়চারা করেই যাচ্ছে। কি হচ্ছে তার কিছু মাথায় আসছেনা।
,
?
,
আকাশ মায়ের সাথে দেখা করার জন্য বাড়িতে এসে খানিকটা অবাক হয়। “সুমনার বাবা এখানে কি করছে!”
,
রোজিনা চৌধুরী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
,
– আমি তোকেই ফোন দিতে যাচ্ছিলাম বাবা।
,
আকাশ মায়ের পাশে বসে বলল,
– কেন, কি হয়েছে মা?
,
সুমনার বাবা সোফা থেকে উঠে এসে আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের হাত চেপে বলে,
,
– বাবা আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। এই বার আমাকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দাও।
,
আকাশ জবাবে বলে,
,
– আমি আপনার কথা বুঝতে পারছিনা আংকেল!
,
সুমনার বাবা রোজিনা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
,
– বেয়াইন সাহেবা আপনি বলেন।
,
আকাশ চোখ বড়বড় করে বলল,
,
– কে আপনার বেয়াইন সাহেবা?
,
মা আকাশকে বলে,
,
– এতো হাইপার হসনা বাবা। আমার কথাটা শোন আগে। উনি সুমনাকে তোর হাতে তুলে দিতে এসেছেন।
,
আকাশ রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,
,
– হোয়াট! সুমনাকে আমার হাতে তুলে দিতে এসেছেন মানে? সুমনা আমার হাতের কোনো ঘড়ি কিনবা মানিব্যাগ না যে উনি আমার হাতে তুলে দেবেন। তাছাড়া একজন বিবাহিত মেয়েকে আমি কেন বিয়ে করবো।
,
সুমনার বাবা আকাশকে বলেন,
,
– বাবা সুমনার স্বামী মারা গেছে।
,
কথাটা শোনার পর আকাশের মনটা একটু খারাপ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তা না হতে বরং আরও বেশি রেগে যায় আর বলে,
,
– আপনি জেনে শুনেও একটা বিবাহিত ছেলের সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে আসলেন? লজ্জা করে না আপনার?
,
রোজিনা চৌধুরী আকাশকে থামিয়ে বলে,
,
– ওনাকে আমিই আসতে বলেছি। গতকাল ফোন দিয়ে সুমনার সাথে ঘটে যাওয়া সব কথা আমাকে বলেন তাই আমিই আসতে বলি।
,
– কিন্তু মা তুমি কিভাবে এসব নিয়ে ভাবতে পারো!
,
– দেখ বাবা কাজলকে তো পাওয়াই যাচ্ছেনা। তাই আমি ভাবলাম……
,
– মা! তুমি এতোটাই যদি আমাকে নিয়ে ভাবতে তাহলে কাজলকে আমার থেকে আলাদা করতে পারতে না। আরেকটা কথা শুনে রাখো মা, তোমার ভুল হলেও আমি কাজলকে এই বাড়িতে আনতাম কিন্তু আজকে যেটা দেখলাম এর পর আমি কাজলকে এই বাড়িতে আনবোই না। যদি ওকে এখানে আনি তাহলে তুমি হয়তো নতুন ষড়যন্ত্র করবে ওকে বের করে দেওয়ার জন্য।
,
এরপর আকাশ সুমনার বাবাকে বলে,
,
– মাফ করবেন আংকেল। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। আপনি সে সময় আমাকে লাফাঙ্গা, ফ্রড বলে সুমনার হাত আমার হাতে তুলে দেননি। আপনি কি মনে করেছিলেন, আমি সুমনার জন্য আজও অপেক্ষা করছি? হাহাহা। সুমনা ছিলো আমার প্রেম, যার বন্ধন খুবি ঠুনকো একটা দমকা ঝড় আসলেই ভেঙে যেতো, গিয়েছেও। কিন্তু কাজল আমার স্ত্রী, বেচে থাকতে বা মরে গেলেও ওর আর আমার বন্ধন কোনোদিন নষ্ট হবেনা।
,
আকাশ মায়ের সাথে আর কথা না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। আকাশের কথা শুনে সুমনার বাবা মাথা নিচু করে নেন। কিছুই বলার নেই তার। মেয়ের ভালোর জন্য তিনি আকাশের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। সুমনা অবশ্য এসবের কিছুই জানেনা। আজকে সে রাইসাদের বাসায় গেছে এই ফাকে বাবা আকাশের বাড়িতে চলে এসেছে।
,
রোজিনা চৌধুরী সুমনার বাবাকে বলল,
,
– আমাকে মাফ করবেন। আমি আমার ছেলের সাথে বড্ড অন্যায় করেছি। এখন তার প্রতি অধিকার দেখাতে আমার বড্ড লজ্জাবোধ কাজ করে।
,
– আসলে আমারই ভুল। মেয়েটাকে সুখে রাখার জন্যই আজকে এসেছিলাম। তবে সে সময় মেয়েটাকে আকাশের হাতে তুলে দিলে আজকে আমি শান্তি পেতাম, তবে সেটা কোনোদিন সম্ভব না। আসি।
,
সুমনার বাবা ওখান থেকে চলে যান।
,
,
?
,
শপিং শেষ রাইসা ও সুমনা আর ছোট্ট পিউ বাসায় ফিরে এসেছে। ড্রয়িং রুমে শপিং করা জিনিস গুলো রেখে যার যার ঘরে ফ্রেশ হতে গেলো।
,
রাইসা নিজের ঘরে ঢুকে দেখলো ডায়েরিটা খাটের উপর পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে চেচিয়ে মাকে বলে,
,
– মা তুমি কি আমার ঘরে এসেছিলে?
,
মা জবাব দেয়,
,
– না আমি যাইনি তবে রাফিদ গেছিলো একবার।
,
রাইসা ডায়েরিটা লুকিয়ে ফেলে। “ইশ! উনি আমার ডায়েরিটা পড়েনি তো! আমি চাইনা আমার মনের কথা উনি জানুক। যে আমার জীবনে আসবেনা তাকে মনের কথা জানানোও ঠিক না। তবুও আকারে ইঙ্গিতে জেনে আসি রাফিদ ভাইয়া আমার ডায়েরি পড়েছে কিনা!”
,
রাফিদ অনেক্ক্ষণ পায়চারি করার পর বারান্দায় গিয়ে বসলো। রাইসা সরাসরি রাফিদের ঘরে প্রবেশ করলো। দেখলো রাফিদ বারান্দায় বসে আছে। সেখানে গিয়ে রাইসা রাফিদকে জিজ্ঞাসা করলো,
,
– আপনি কি আমার ঘরে গিয়েছিলেন?
,
– হ্যা গেছিলাম৷ আমার একটা ফাইল ফেলে এসেছিলাম ভেবে সেটা আনতে গেছিলাম। কিন্তু ঘরে ভালো অরে খুজে দেখলাম সেটা এখানেই আছে।
,
রাফিদ সম্পুর্ন মিথ্যা বলল।
,
রাইসা বলল,
,
-আর কিছু দেখেননি তো?
,
– না তো। কেন কি হয়েছে রাইসা?
,
– ইয়ে, না কিছু না। আমি আসি।
,
রাইসার নিজের ঘরে এসে হাফ ছেড়ে বাচলো। “যাক রাফিদ ভাইয়া তাহলে কিছুই পড়েনি।”
,
এদিকে রাফিদ গভীর চিন্তায় মগ্ন। রাইসা তাকে ভালোবাসে লেখাগুলো যেন এখনও তার চোখে ভাসছে। রাফিদ নিজের মনকে স্থির করলো, ” একজন ভালোবাসলেই যে অন্য জনকে ভালোবাসতে হবে এমন তো না। আমি কাজল কে ভালোবাসলেও কাজলতো আমাকে আর ভালোবাসেনা। তাহলে রাইসা আমাকে ভালোবাসলেও আমি কেন ওকে ভালোবাসবো কেন!”
,
?
,
কাজলের নাম্বার থেকে কল আসতেই আকাশ রিসিভ করলো,
,
-হ্যালো কাজল, কোথায় তুমি? তোমাকে খুজতে খুজতে আমি বড্ড ক্লান্ত। প্লিজ বলো কোথায় তুমি?
,
– আকাশ আমি মনে হয় বাচবোনা। জীবনের শেষ সময়টা তোমার সাথে কথা বলেই মরতে চাই। কেন তুমি আমাকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেছিলে আকাশ।
,
কাজল হাও মাও করে কাদতে থাকে। আকাশ বলে,
,
-তুমি কোথায় আছো আর কি হয়েছে বলো। তারপর সব কথা তোমাকে বলবো। প্লিজ কাজল বলো কোথায় তুমি, কি হয়েছে তোমার?
,
চলবে,
,
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল পাবেন।
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।