বিনিময়ে তোমায় চাই?,পার্ট_০১
লাবিবা ওয়াহিদ
আজ আমার বিয়ে। নিজের স্বামীর কথা রাখতে বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে টা করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রায় ২মাস হলো আমার হাসবেন্ড আমার প্রথম ভালোবাসা মারা যায়। বিয়েটা হচ্ছে আমারই বস আনাফ ওয়াহিদের সাথে।
,
১০মাস আগে,
,
রিফা আজ ওয়াহিদ কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। তবে এই অফিসে জয়েন হতে ভালো রেজাল্ট লাগে কিন্তু রিফার রেজাল্ট তেমন ভালো না সেখানে পিএ এর চাকরি তবুও রিফা ভাবলো একবার ট্রাই করতে ক্ষতি কি? এটা নিয়ে রিফা অনেক ভয় পেয়ে আছে। অনেকেই ইন্টারভিউ দিতে এসেছে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০। রিফার যে করেই হোক তার চাকরি টা প্রয়োজন নইলে রিফার হাসবেন্ড ইমনের চিকিৎসা করবে কি করে। রিফা এবং ইমনের রিলেশন প্রায় ২বছর। ২জন ২জনকে অনেকটা ভালোবাসে। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে দুইজন বিয়ে করে। রিফার পরিবার মেনে নিলেও ইমনের পরিবার মেনে নেয়নি। কারণ রিফা রা মধ্যবিত্ত। তাই ইমন রিফাকে নিয়ে আলাদা ফ্লাটে থাকতো। ইমনও একটা কোম্পানিতে জব করে সংসার চালাতো। খুব আনন্দেই চলছিলো তাদের ছোট্ট সংসার। কিন্তু রিফা হয়তো জানতো না তার আনন্দ স্থায়ী নয়। একদিন ইমন বাসায় ফেরার পথে খুব বড় এক্সিডেন্ট হয়। এতে রিফা অনেকটাই ভেঙ্গে পরে। প্রথম দুইদিন অনেক কস্টে টাকা জোগার করে ইমনের অপারেশন করায়। তারপর প্রায় তিনদিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। প্রায় অনেক টাকাই খরচ হয়ে যায়। প্রথম দিক দিয়ে সপ্তাহে ১০হাজারের মতো লেগেছে ইমনের চিকিৎসায়। অপারেশন এর টাকা আর খরচ রিফা এবং তার বাবাই দিচ্ছে। রিফা আর খরচ সামলাতে না পেরে ঠিক করলো তার শশুড় বাড়ি থেকে সাহায্য নিবে। কিন্তু তারাও সাহায্য করলো না। এতে রিফা আরও হতাশ হয়। পরে জানতে পারে ইমন তাদের আসল ছেলে না। তারপর আর তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি রিফা। একদিন হসপিটালে গিয়ে জানতে পারে তার ভালোবাসা কোমায় আছে জ্ঞান কবে ফিরবে সেটা ডক্টর রাও বলতে পারছে না। এতে সেদিন রিফা পাথর হয়ে যায় অতি কষ্টে। তবুও হার না মেনে চাকরি খুজতে বেরিয়ে পড়ে।কারণ তার বাবাকে সে আর কষ্ট দিতে চায় না।নিজে চাকরি করে নিজের টাকায় ইমনের চিকিৎসা করাবে বলে।অনেক খুজে রিফা ওয়াহিদ কোম্পানি তে আসে জবের খোজে।তাই এখন ইন্টারভিউর জন্য অপেক্ষা করছে।সবার শেষে রিফাকে ডাকা হলো।সেও কাপা কাপা পায়ে প্রবেশ করে এবং তাদের সামনে বসে।রিফার সামনে বসে আছে আনাফ আর আনিফা।আনিফা হচ্ছে আনাফের বড় বোন।
আনিফা-তোমার ফাইল টা দেখতে পারি মিস?
রিফা-হ্যা আপু সরি ম্যাম এই নিন।
বলেই রিফা তার ফাইল টা আনিফার দিকে এগিয়ে দিলো
আনিফা মুচকি হেসে বললো,
আনিফা-সমস্যা নেই তুমি আমায় আপু বলেও ডাকতে পারো।
রিয়া- আচ্ছা আপু।
এবার আনিফা রিফার ফাইল চেক করতে লাগলো।
আনিফা- রিফা মেহেরিন তাইনা?
রিফা- হ্যা আপু।
আনিফা- তবে রিফা তোমার রেজাল্ট তো ভালো না।
রিফা- আপু রেজাল্ট খারাপ সেটা আমিও জানি তবে আমার যে চাকরি টা খুবই দরকার।
আনিফা- বাট রেজাল্ট ভালো না হলে আমরা জব দেইনা আবার সেটা পিএ,
রিফা- আপু প্লিজ একটু বুঝুন আমার যে খুব খুব জরুরি। আমি আপনায় প্রমিস করছি আমার কাজ আমি ঠিকমতোই করবো।
আনিফা- সরি।
রিফা আর কিছু বললো না মন খারাপ করে ফাইলটা নিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখনই আনাফ বলে উঠলো,
আনাফ- দাড়ান মিস রিফা।
আনাফের কন্ঠে রিফা দাড়ালো এবং পেছনে ধুরে বললো,
রিফা- জি স্যার বলুন।
আনাফ- আপনার চাকরি কনফার্ম।
আনিফা- কি বলছিস তুই এসব?(অবাক হয়ে)
আনাফ- যা বলছি তাই হবে।
রিফা-সত্যিই স্যার?
আনাফ-হ্যা আজ থেকে আপনিই আমার পিএ।
রিফা-থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার।(খুশিতে)
আনাফ-ম্যানেজার?
ম্যানেজার-জী স্যার।
আনাফ-মিস রিফাকে তার এডভান্স দিয়ে দাও।
ম্যানেজার-ওকে স্যার আপনি(রিফাকে উদ্দেশ্য করে) আসুন আমার সাথে।
রিফা-ওকে স্যার।
বলেই রিফা ম্যানেজারর পিছে পিছে চলে গেলো।আর আনিফা আনাফকে বলতে লাগলো।
আনিফা-হচ্ছেটা কি আনাফ পাগল নাকি তুই এতো লো রেজাল্টের মেয়েকে নিজের পিএ করে নিচ্ছিস?
আনাফ-আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি
সব মেয়েরা ইন্টারভিউ না দিতে না আমাকে দেখতে আসে আর এই রিফা একবারের জন্যও আমার দিকে ফিরে তাকালো না তাহলে ভাব মেয়েটা ভালো হবে কিনা?
আনিফা-হুম তা ঠিক তোর আগের পিএ তো কাজের কাজ কিছুই করেনি শুধু শুধুই তোর পিছে ঘুর ঘুর করেছে।
আনাফ-সেজন্যই তো ওই বেয়াদব টার চাকরি নিয়েছি।
আনিফা-হুম তা ঠিক কিন্তু তোর কি মনে হয় এই রিফা নিজের কাজ ঠিকমতো করবে?
আনাফ-আমার চয়েস কখনো বিফলে যায়না।
আনিফা-হুম তা দেখা যাবে।
আনাফ-হুম দেখতে থাক।
আনিফা-তা আমি যাই তোর ইন্টারভিউ তো শেষ।
আনাফ-ওকে মেরি বেহেন যা।
আনিফা-হুহ কাজের সময় কাজি কাজ ফুরলে পাজি
আনাফ-অবশ্যই।(হেসে)
আনিফা-তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।(রেগে)
আনাফ-এখনি দেখ না মানা করেছে কে?
আনিফা প্রচন্ড রেগে বললো,
আনিফা-মর তুই। (রেগে)
বলেই অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে গেলো।আর আনাফ সেখানে দাড়িয়েই হাসতে লাগলো।
তো এখন আমাদের হিরোর পরিচয় টা দিয়ে দেই।
গল্পের হিরো হলো আনাফ ওয়াহিদ। সবে মাত্র দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরেছে এক সপ্তাহ হলো যেদিন ফিরেছে তার পরের দিনই অফিস জয়েন করেছে। আনাফ দেখতে মা্হশাআল্লাহ মেয়েদের ক্রাশ। আর আনিফা হলো আনাফের বড় বোন। মাঝে মধ্যে অফিসে আসে আবার চলে যায়। আনাফের পিএ ছিলো পুরো আনাফ পাগলি। সারাদিন আনাফের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে কাজে কোনো মনই ছিলো না। বিভিন্ন অযুহাতে শুধুই আনাফের কাছে ঘেষার চেষ্টা করতো। আনাফ এতে অনেকটাই বিরক্ত আর রেগে ছিলো। তবুও প্রকাশ করতো না। গতদিনে তো মেয়েটা প্রপোজ করে বসে আনাফকে। আনাফ রেগে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়। আনাফের এই রূপ দেখে সকল মেয়ে স্টাফরাই ভয় পেয়ে যায়। তাই আর তারা আনাফের ধারে কাছে ঘেষার চেষ্টা করেনি। আর ছেলে স্টাফরা অল্প অল্প হাসে।
তারপর আনাফ ঠিক করে নতুন পিএ খুজবে। নোটিশ পাওয়ার সাথে সাথে প্রায় ১০০-২০০ মেয়ে ইন্টারভিউ দিতে চলে আসে। বেশিরভাগ চাকরির জন্য নয় আনাফকে দেখার জন্য। আনাফ বড় বিজন্যাসমেন এর ছেলে হওয়ায় সোসাইটি তে কম বেশি সবাই চিনে। কিন্তু এই ১০০ থেকে ২০০ মেয়ের মধ্যে রিফাকেই সিলেক্ট করে।
রিফা ম্যানেজারের সাথে যায় এবং রিফাকে এডভান্স হিসেবে ১ লাখ টাকা দিলো।রিফা এতো টাকা দেখে অবাক হয়ে বললো,
রিফা-স্যার এতো টাকা?
ম্যানেজার-হুম এডভান্স।
রিফা-ওওও আচ্ছা।
ম্যানেজার-এখন তুমি বাসায় যেতে পারো কাল থেকে সঠিক সময়ে আসবা কেমন?
রিফা-ওকে স্যার।
বলেই রিফা অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।আনাফ তার রুমের কাচের জানালা দিয়ে বাইরের ব্যস্ত শহর দেখছিলো।তখনি আনাফের নিচের দিকে চোখ গেলো এবং দেখলো রিফা একটা রিক্সায় করে কোথায় জেনো চলে গেলো।এতে আনাফ মুচকি হাসলো।
রিফা রিক্সায় করে সোজা হসপিটালের সামনে চলে আসলো।হসপিটালে পৌছে ইমনের কাছে গেলো।ইমনকে স্যালাইনের মাধ্যমে খাওয়ানো হয়।রিফা চোখ মুছে মুচকি হেসে বললো,
রিয়া- আজ আমি চাকরি পেয়েছি তাও জানো কোন কোম্পানিতে?ওয়াহিদ ইন্ডাস্ট্রিতে।এখন থেকে প্রচুর পরিশ্রম করে তোমায় সুস্থ করে তুলবো।জানো তোমার দুষ্টামি ভরা কথা গুলো খুব মিস করছি।আচ্ছা কবে তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে সুস্থ হয়ে?
বলেই রিফার চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।রিফা জানে এগুলো বললে ইমন কিছু শুনবে না,বলবেও না আর বুঝবেও না।তবুও এটা ভেবে বলে তার মন হালকা করার জন্য।রিফা সেদিনের মতো হসপিটাল থেকে বাসায় চলে আসে।রিফাকে আসতে দেখে রিফার মা বলে,
আম্মু-এসেছিস মা?
রিফা-হ্যা আম্মু।
আম্মু-জব হয়েছে?
রিফা-হ্যা মা ওয়াহিদ কোম্পানিতে পিএ এর চাকরিতে।
।
।
চলবে❤