বিনিময়ে তোমায় চাই?,পার্ট_১১(বিয়ে পর্ব)
লাবিবা ওয়াহিদ
.
?
.
রিফা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বললো তখনই ওপাস থেকে একজন বলে উঠলো,
নার্স- ম্যাম আমি হসপিটাল থেকে বলছি ইমন স্যারের জ্ঞান ফিরেছে।
রিফার এ কথা শুনে আনন্দে চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
রিফা- কি আপ.. আপ.. আপনি সত্যি বলছেন?(উত্তেজিত হয়ে)
নার্স- হ্যা ম্যাম আপনি জলদি আসুন স্যার আপনাকে ডাকছে।
রিফা চোখ বুছে বললো,
রিফা- হুমা আমি এক্ষুণি আসছি।
বলেই ফোনটা কেটে রিফা কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটলো তার ভালোবাসার কাছে। আজ কতোদিন হলো তার ভালবাসার মুখে একটা শব্দও শুনেনি। রিফা এমন তাড়াহূড়ো করে চলে যাওয়া দেখে আনাফ পেছন থেকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু রিফা ইমনকে ভাবতে এতোটাই ব্যস্ত যে তার কোনো দিকে খেয়াল নেই। রিফা না শোনায় আনাফও রেগে গেলো এবিং রিফার পিছু নিলো। রিফা একটা অটো করে যেতে লাগলো আর আনাফ নিজের গাড়ি নিয়ে তার পেছন পেছন। রিফা হসপিটাল এর সামনে এসে নামলো। তারপর ভাড়া মিটিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। রিফাকে হসপিটালে দেখে তো আনাফ অবাক। তারপর কোনো কিছু না ভেবে সেও রিফার পিছে যেতে লাগলো। রিফা রিসিপশনে কিছু শিরি দিয়ে উপরে গেলো সাথে আনাফও। রিফা থার্ড ফ্লোরে গিয়ে একটা কেবিনে ঢুকলো আর আনাফ কেবিনের ভেতরে না গিয়ে বাইরে থেকে দেখতে থাকলো এটা ভেবে যে রিফা কার সাথে দেখা করতে এসেছে তাও এতো জলদি।
রিফা ভেতরে গিয়ে দেখে তার স্বামী তার ভালোবাসা এদিক ওদিক তাকিয়ে শুধু রিফা রিফা করছে। নার্স রিফাকে দেখতেই ইমনকে বললো,
নার্স- স্যার আপনার রিফা চলে এসেছে।
বলেই নার্স বাইরে চলে গেলো আর আনাফ একটু লুকিয়ে পড়লো।নার্সের কথা শুনতেই ইমন রিফার দিকে তাকালো।ইমনের চাহনি রিফা তো কেদে দিয়ে ইমনকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এটা দেখে আনাফের বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে তাই আর সেখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়।রিফা হাউমাউ করে কেদে বলতে লাগলো,
রিফা- আমাকে এতো কষ্ট কি করে দিতে পারলে তুমি? জানোনা তোমায় ছাড়া থাকতে আমার কতোটা কষ্ট হয়। কতোটা ভালোবাসি তোমায় সেটা কি জানোনা?
ইমন- সবই জানি বউ এখন তো তোমার কাছে ফিরে এসেছি কিছুক্ষণের জন্য।
ইমনের কথায় রিফা ইমনকে ছেড়ে কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে বললো,
রিফা- মা.. মা.. মানে?(অবাক হয়ে)
হঠাৎই ইমনের শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো। ইমনের এই অবস্থা দেখে রিফা ডক্টর ডক্টর বলে চিল্লিয়ে উঠলো।
ইমন- রিফাহ আহ আহ আমায়হ কহ কহ কহথা দাহ দাহ দাও তুহ তুহ তুমিহ আরেকটা বিহ বিহ বিয়ে করবে তো তোহ তোমার বাবা মায়ের পহ পহ পছন্দে?
রিফা- এই টা তুমি কি বলছো তোমার কিচ্ছু হবে না আমি তোমার কিছুই হতে দিবো না।
ইমন- যহ যহ যতোটা সহ সহ সহজ ভাবছো ততো সহজ না আমার কথা তোমায় রাখতে হহ হহ হবে নইলে যেহ আহ আহ আমি মরেও শান্তি পাবোহ না।
ডাক্টার চলে আসলো এবং ইমনের অবস্থা দেখে অক্সিজেন মাস্ক লাগাতে চাইলো কিন্তু ইমন থামিয়ে দিয়ে বললো,
ইমন- কি হলো উহ উহ উত্তর দাও।
রিফা- ইমন প্লিজ অক্সিজেন মাস্ক টা পরে নাও প্লিজ?
ইমন আর কিছু বলতে নিবে ওমনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। ইমন কথা বলছে না বলে রিফা বলে উঠলো,
রিফা- কি হলো তুমি চুপ হয়ে গেলে কেন? কথা বলো এই বর কথা কেন বলছো না তুমি? এই এই কথা বলো।
বলেই ইমনের গালে হাতাতে লাগলো কিন্তু ইমন কথা বলছে না। বলবে কি করে সে তো চলে গেছে না ফেরার দেশে।
রিফা- ডক্টর ওর কি হলো কথা বলছে না কেন?আরে কি হলো আপনারা এমন দাঁড়িয়ে আছেন কেন ওর চেকআপ করুন দেখুন কি হয়ে ওর।
ডক্টর মাথা নিচু করে রইলো এবং বললো,
ডক্টর- সরি হি ইজ নো মোর।
রিফা তো বাকরুদ্ধ হয়ে যায় এবং ইমনের দিকে তাকায়। রিফা এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ইমনের মৃত দেহটার দিকে। রিফার বাবা মাও কিছুক্ষণের মধ্যে এসে উপস্থিত হলো। রিফার ইমনের দিকে এমন তাকানো দেখে ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো আর ডক্টরও পুরো কথা খুলে বললো। মেয়ের এমন অবস্থায় রিফার মা তো কেদে দিলো। আর রিফার বাবা এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো। রিফার মা কেদে কেদে রিফার কাছে গিয়ে বললো,
রিফার মা- এভাবে থাকিস না কিছু তো বল তুই।
রিফা- মা ইমন সত্যিই কি আমায় ছেড়ে চলে গেলো? মা বলো না ও কি আর ফিরে আসবে না আমার কাছে? কখনো কি বলবে না বউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও? ওওওওও মা বলো না।(নিজের মা কে ঝাকিয়ে)
রিফার মা- এভাবে বলিস না মা ইমন কষ্ট পাবে তো।(কাদতে কাদতে)
রিফা এবার চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো,
রিফা- যদি এতোই কষ্ট তাহলে আমাকে ছেড়ে কি করে স্বার্থপরের মতো চলে যেতে পারলো কি করেএএ??(চিল্লিয়ে)
রিফার মা- শান্ত হ মা এভাবে কেন চিৎকার করিস না।
কিন্তু রিফা কোনো ভাবেই থামলো না। চিৎকার করছে তো করছেই।একসময় রিফা জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে।
?
আনাফ যখন রিসিপশন এর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো তখন রিসিপশনে ২জন মেয়ে বলাবলি করছিলো।
১ম মেয়ে- শুনেছিস ৩০৪ নং রুমের পেশেন্ট টা মারা গেছে।
অপর মেয়ে- কি বলছিস কিছুক্ষণ আগেই না জ্ঞান ফিরলো।
১ম মেয়ে- হুম ফিরেছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই মারা যায়।
অপর মেয়ে- আহারে আপু টার জন্য খারাও লাগছে সে তার হাসবেন্ড কে কতোটা ভালোবাসতো।
১ম মেয়ে- হ্যা ঠিক বলেছিস।
এগুলো শুনে আনাফ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ ৩০৪নং রুম টা ইমনের।কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে ভাবতেও পারছে না রিফার হাসবেন্ড দুই মিনিটেই…..আনাফ তাড়াতাড়ি আবার সেই কেবিনে গেলো। কেবিনে গিয়ে দেখে ইমনের মৃত দেহ টা আর সাইডে দেখে রিফা সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। আনাফ তাড়াতাড়ি রিফাকে কোলে তুলে নিলো। আর ডাক্তার কে বলতে লাগলো ওকে আলাদা কেবিন দিতে।তারপর আনাফ রিফাকে অন্য কেবিনে নিয়ে গেলো। রিফার সেন্স আসে না। এর মধ্যে ইমনকে দাফনও করা হয় আনাফ, রিফার বাবা,নাহিদ আরও কিছু লোকজন মিলে। যখন ইমনকে দাফন করছিলো তখন আনাফ মনে মনে ইমনকে প্রতিজ্ঞা করে যে আনাফ সবসময়ই রিফার পাশে থাকবে।
দাফনের পরেরদিন রিফার জ্ঞান ফিরে আর জ্ঞান ফিরতেই ইমন ইমন বলে কাহিল হয়ে ওঠে। আনাফ নাহিদ নিধি মুক্তা রিফার মা সবাই মিলে ওকে শান্ত করার এবং খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সবকিছুতেই ব্যর্থ সবাই। এভাবেই দিন যেতে থাকে রিফা আস্তে আস্তে শান্ত হয় ঠিকি কিন্তু সবসময় নিজেকে রুম বন্দি করে রাখে কারো সাথে একটা কথাও বলে না,ঠিকমতো খায়না। দিন দিন প্রায় অসুস্থও হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বারবার বলেছে ঠিকমতো খেতে কিন্তু রিফা যে খায়ই না খেতে বললেই বলে খিদে নেই। তবুও জোর করে যতটুকু পারে খাইয়েছে।এভাবেই ২ মাস চলে গেলো এতোদিনে আনিফারও বিয়ে হয়ে যায়। এইদিকে রিফার বাবা এবং মা উভয়ই চিন্তিত রিফাকে নিয়ে। তারা এবার ঠিক করে নেয় রিফাকে এবার বিয়ে দিবে। তখনই আনাফ তাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় তারাও এক নিমিষেই রাজি হয়ে যায় কারণ এই ২মাসে তাদের অনেক যত্ন করেছে আনাফ। রিফা বিয়েতে রাজি না হলেও ইমনের শেষ ইচ্ছার জন্য জন্য বাধ্য হয় বিয়ে টা করতে।
,
,???
,
বর্তমান?
রিফা বাসরঘরে বসে ইমনের কথাই ভাবছিলো ওমনি আনাফ রুমে প্রবেশ করে। আনাফ আজ অনেক খুশি। তার আজ জিত হয়েছে। তার ভালোবাসাকে পেতে সে সক্ষম হয়েছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই রিফা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
,
,
,
চলবে?