বিনিময়ে তোমায় চাই?,পার্ট_০৩
লাবিবা ওয়াহিদ
.
.
?
আনাফ- হ্যা মিস রিফাকে ফাইল গুলো বুঝিয়ে দাও।
নিধি- ওকে স্যার। আসুন আমার সাথে।
রিফা- জি।
তারপর রিফা নিধির পিছে পিছে গেলো। নিধি রিফার কেবিনে রিফাজে নিয়ে আসলো এবং একেক করে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে লাগলো।
নিধি- আমি নিধি তুমি?
রিফা- হুম আমি রিফা মেহেরিন।
নিধি- বাহ খুব সুন্দর নাম তো তোমার।
রিফা- থ্যাংকস তোমার টাও।
নিধি- কেন উই ফ্রেন্ডস?
রিফা- হ্যা অবশ্যই।(মুচকি হেসে)
এরপর আরও কিছুক্ষণ কথা বললো দুইজন। আর আনাফ এই দৃশ্য টা তার রুম থেকে দেখছে। আনাফের রুমের কাচের ভেতর দিয়ে রিফার কেবিনের সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়। কারণ রুম টা পাশাপাশি মাঝে দেওয়াল হিসেবে শুধুই কাচ। এই ব্যাপার টা রিফা খেয়াল করেনি।
আনাফ হাসিটা দেখছে রিফার।কেন জানিনা তার খুব ভালো লাগছে। আনাফ সেটা না ভেবে আবার নিজের আসনে গিয়ে বসলো এবং রিফাকে ল্যান্ডলাইনে কল দিলো।রিফা তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে বললো,
রিফা-ইয়েস স্যার?
আনাফ-আপনাকে গল্প করার জন্য রাখা হয়নি নিজের কাজ করুন স্টুপিড।
বলেই আনাফ কল রেখে দেয়।আনাফের কথায় রিফা অবাক হয়ে যায়।
রিফা-(কথা বলছি আমার কেবিনে আর স্যার তার রুম থেকে কি করে জানলো অদ্ভুদ।)
নিধি-কি বললো স্যার?
রিফা-গল্প না করে কাজ করতে বলেছে।
নিধি-ওকে ওকে আমি তাহলে যাই কেমন কাজ কর মন দিয়ে নইলে তোমার চাকরিও যাবে সাথে আমারও।
রিফা -ওকে নিধি।
নিধি-বেস্ট অফ লাক।(মুচকি হেসে)
রিফা-থ্যাংকস।
তারপর নিধি চলে গেলো আর রিফাও নিজের কাজে মন দিলো।কাজের ফাকে ফাকে আনাফও রিফাকে দেখছে।লাঞ্চ টাইম হয়ে গেলো। তবুও রিফা টুকটাক কাজ করছে।তখনি নিধি আর তার কলিগ জয় কেবিনে প্রবেশ করলো।জয় তো প্রথম দেখাতেই রিফার প্রতি ফিদা হয়ে গেলো তবুও প্রকাশ করলো না।
নিধি-কি রে তুই এখনো কাজই করছিস?
রিফা নিধির কথায় নিধির দিকে তাকালো।
নিধি-ওওহ সরি ভুলে তুই বলে ফেলেছি।
রিফা-প্রব্লেম নেই তুই করেই বলতে পারিস।
নিধি-ওকে এখন এসব ছাড় খেতে যাবি চল।
রিফা-না আমি বাসা থেকে খাবার এনেছি।
নিধি-তাহলে আমাদের সাথেই কেন্টিনে চল এক সাথে খাবো।
রিফা-বাট যদি প্রব্লেম হয়?
নিধি-আরে না কিছু হবে না চলতো।
রিফা-আচ্ছা…….
রিফার জয়ের দিকে নজর গেলো এবং নিধিকে প্রশ্ন করলো ইশারায় কে উনি?জয় বিষয়টা লক্ষ্য করে তাই সে নিজেই উত্তর দিলো,
জয়-আমি জয়।
রিফা-ওওহ আমি রিফা মেহেরিন।(মুচকি হেসে)
জয়-(চেহারার সাথে নামটাও অনেক সুন্দর)নাইস নেম।
রিফা-থ্যাংকস ইউ টু।
নিধি-তো চল যাই?
রিফা-হ্যা নিশ্চয়ই।
তারপর ৩ জন মিলে কেন্টিনে গেলো এবং এক কোণায় গিয়ে বসলো।কেন্টিন 4th ফ্লোরে। অনেক বড় ক্যান্টিন।রিফা নিধি জয় মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো আর তখনই মুক্তা এসে হাজির হয়।
মুক্তা-সরি দেরি হয়ে যায়নি তো?
নিধি অবাক হয়ে বললো,
নিধি-তুই না ছুটি নিয়েছিলি?
মুক্তা-হ্যা নিয়েছিলাম তবে হাফ বেলার।
নিধি -ওহ আচ্ছা।
মুক্তা-তা ইনি কে?(রিফাকে দেখিয়ে)
নিধি -ও রিফা স্যার এর নিউ পিএ।
মুক্তা-ওহ হাই আমি মুক্তা।(হাত বাড়িয়ে)
রিফা-(হাত মিলিয়ে) হ্যালো আমি রিফা মেহেরিন।
মুক্তা-একটা কথা বলি?
রিফা-হ্যা বলো।
মুক্তা-তুমি না অনেক কিউট।
রিফা-থ্যাংকস মুক্তা।(মুচকি হেসে)
মুক্তা-হায় আল্লাহ আমি তো তোমার হাসির প্রতি ফিদা হয়ে গেছি। আমি ছেলে হলে এখনি তোমায় নিয়ে পালিয়ে যেতাম।
মুক্তার কথায় ৩জন জোরে জোরে হেসে দিলো।মুক্তা গাল ফুলিয়ে বলতে লাগলো,
মুক্তা- আহ এতো হাসার কি হলো আমি মজা করছি না কিন্তু।
নিধি- রিফা কে নিয়ে পালালে তোর আনাফ স্যারের কি হবে?
মুক্তা- ওহ আনাফ স্যারের কথা তো ভুলেই গেছি।
রিফা- আচ্ছা আনাফ স্যার টা কে?
রিফার কথায় সবাই অবাক হয়ে গেলো।
রিফা- কি হলো এভাবে তাকানোর কি আছে?
মুক্তা- লাইক সিরিয়াসলি তুমি আনাফ স্যারকে চিনো না?(অবাক হয়ে)
রিফা- নাহ তো কে উনি?
নিধি- এমায়া যার পিএ তার নামই জানে না হে খোদা এ আমায় কোন দুনিয়ায় পাঠালা?
নিধির কথায় রিফা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,
রিফা-ওহ সরি তাড়াহুড়োর কারনে নামটা জানা হয়নি।
নিধি-ঢাকায় এমন কোনো মেয়ে নেই যে আনাফ স্যারকে চিনে না।তুমি কোথা থেকে উদয় হলে বইন?
রিফা-আসলে আমি বিজনেস বা কোনো ছেলেদেরকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করি না।
মুক্তা-ঢাকার মধ্যে তোমাকেই এক পিস পেলাম যে কিনা আনাফ স্যারকে চিনে না ।
নিধি-হুম ঠিক পুরো ই একপিস।
রিফা বেকুবের মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে কিছুই বুঝতেছে না।
রিফা-আমার কি দোষ এতে?
মুক্তা – না কিছু না।জানো আমি না আনাফ স্যার এর উপর ফুল্লি ক্রাসড।বাট এটা আবার বলো না স্যারকে।তুমি আনাফ স্যারকে দেখো নি।
রিফা-আমি স্যারের দিকে ভালো ভাবে তাকাইও নি।
রিফার কথায় তারা আরও বেশি শকড হয়ে গেলো।রিফা মুখ ছোট করে ৩ জনকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
রিফা-গাইস আবার কি হলো তোমাদের?
মুক্তা-আচ্ছা কেউ আমায় চিমটি কাটতো।
নিধি-কেন?
মুক্তা-আরে কাট না যদি এটা স্বপ্ন হয় তাই।
নিধি মুক্তার হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলো। ব্যাথায় মুক্তা চিল্লিয়ে উঠলো,
মুক্তা-ও মা গো এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে?
নিধি-তুই ই তো বললি চিমটি কাটতে।
জয়-আচ্ছা এখন মেইন টপিকে আসি।
মুক্তা-ওহ হ্যা এটা বাস্তব।আচ্ছা তুমি কি আমাদের সাথে মজা নিচ্ছো?
রিফা-মজা নিতে যাবো কেন?যা সত্যি তাই বললাম।
মুক্তা – হায় আল্লাহ কই ভাবলাম নিউ পিএ স্যারের সাথে লাইন মারবে তা না এখন তো দেখছি তুমি পুরো উল্টা নামও জানো না আবার ভালো করে দেখোওনি।
রিফা-আসলে প্রয়োজন মনে করিনি আমার চাকরিটা প্রয়োজন ছিলো সেটা আমি পেয়েছি আর নিজের কাজ ঠিকমতো করবো এর বেশি কিছু না গাইস।
নিধি-চাকরিটা এতোই কেন প্রয়োজন তোর?
রিফা বলতে যাবে তখনি আনাফ রিফাকে ডেকে পাঠালো।রিফা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।
রিফা-স্যাএ আসবো?
আনাফ-হুম।
রিফা ভয়ে ভয়ে ভেতরে গেলো।আনাফ রেগে বললো,
আনাফ-এতো সময় লাগে আসতে?(রেগে)
রিফা-আ….আ……সলে সরি স্যার কেন্টিনে ছিলাম।
আনাফ-ওওও আচ্ছা।আমার জন্য এককাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসো।
রিফা-আ….আমি?
আনাফ-হ্যা অবশ্যই তুমি।
রিফা-কিন্তু স্যা….স্যার আমি তো জানিনা কিচেন কোথায়?
আনাফ-কেবিনের ওইপাশে সব পাবে।(হাত দিয়ে দেখিয়ে)
রিফা এতোক্ষনে চারপাশ দেখলো।কেবিন টা প্রায় তিন রুম নিয়ে এক রুম এমন অবস্থা। দুইপাশে কাচের দেওয়াল।একসাইডে বড় বড় একটা ঝার,আরেক দেওয়ালে ঘাসের মতো লাগানো এবং কিছুটা জায়গা জুড়ে ছোট পানির পুল যেটাতে গোল্ডেন ফিস গুলো এদিক ওদিক খেলছে।আরেকদিকে কিচেনের মতো দেখছে।রিফার খুব ভালো লেগেছে রুমটা।
রিফার এতোক্ষণে খেয়াল গেলো আনাফের ডান পাশের কাচের দেওয়ালের দিকে। সেখান থেকে রিফার কেবিন এর সব কিছু ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে। এবার রিফা বুঝতে পারলো পুরো ব্যাপার টা যে রিফা কখন কি করছে সব টাই দেখতে পারবে আনাফ।
রিফা-(ওওওহ আচ্ছা তাহলে এই হলো সব জানার উপায়। নাহ আর কাজে ফাকি দেওয়া যাবে না।)
আনাফ- কি হলো কখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে এতো কি ভাবছেন?(রেগে)
রিফা- হুম না স্যার কিছু না।
বলেই রিফা কফি বানাতে গেলো।
এতোক্ষণ ৪জনের কথোপকথন আনাফ সব টাই শুনেছে। সে এটা ভেবে অবাক যে রিফা তার নামও জানে না। আনাফের দিকে রিফা ভালো করে তাকায়নি সেটা আনাফও বেশ ভালো করে জানে। সব শুনলেও লাস্ট এ দিয়ে শুনতে পায়নি কিছু কথা।
কফির দিকে তাকাতেই রিফার ইমনের কথা মনে পরে গেলো।
✨একদিন রিফা ঘুম থেকে উঠতে লেট করে ফেলেছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখলো ইমন হাতে কফি নিয়ে বসে আছে।
রিফা- ক..কফি কার জন্য?
ইমন- তোমার জন্য।
রিফা- কিন্তু?
ইমন- মাথা ব্যথা কমবে খেয়ে নাও।
রিফা- কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে আমার মাথা ব্যথা?
ইমন- এমনি এমনি ভালোবাসিনি তোমায়, আর তুমি এতো লেট করে কখনোই উঠো না তোমার মাথা ব্যথা না থাকলে।
রিফা- ওকে বাবা খাচ্ছি।
তারপর রিফা খেতে নিলে ইমন থামিয়ে দিয়ে বললো,
ইমন- এতো গরম কফি খেলে তো ঠোট পুড়ে যাবে। একটু ফু দিয়ে খাও।
রিফা- আচ্ছা।
ইমন রিফাকে কফি খাইয়ে অফিসে চলে যায়।
?
বর্তমান✨
রিফার আগের কথা গুলো ভেবে চোখে পানি চলে আসলো। তারপর আর কিছু না ভেবে কফি বানানোতে মন দিলো। আনাফ স্থির দৃষ্টিতে রিফার দিকে তাকিয়ে আছে এটা ভেবে একটা মেয়ে কি করে এতোটা চুপ থাকে আর ভদ্র বিহেভ করছে,,এর আগের পিএ তো পুরোই ফাকিবাজ ছিলো আর রিফা পুরোই অন্যরকম।
রিফা কফি বানিয়ে আনাফের সামনে নিলো। আনাফ কফি হাতে পেতেই এক চুমুক দিলো।
আনাফ- (বাহ এ তো দেখছি খুব ভালো কফি বানায়?)
এক চুমুকে পুরো কফি শেষ করলো গরম কম থাকায়।
আনাফ- আরেক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন।
রিফা- ওকে স্যার।
বলে আবার কফি বানিয়ে দিলো।
আনাফ- ওকে আপনি এখন আসতে পারেন।
রিফা আর কথা না বলে নিজের কেবিনে চলে গেলো আর কাদতে লাগলো। এতোক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে ধরেছিলো।
রিফা-(কবে ফিরবে তুমি আমার কাছে? তোমার স্মৃতি গুলো যে বারবার আমায় তাড়া করে বেড়ায় নিজেকে যে একদমই ঠিক রাখতে পারছি না।)
কিছুক্ষণ কেদে রিফা কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পর জয় আসলো রিফার রুমে।
রিফা- আরে আপনি?
জয়- হ্যা আসলে….
।
।
চলবে❤