বিনিময়ে তোমায় চাই?,পার্ট_০৭
লাবিবা ওয়াহিদ
?
এভাবেই দিন যেতে লাগলো।ইমনের সেন্স ফিরে না আর রিফাও এতে হতাশও হয় এবং খুব পরিশ্রমও করছে।রিফার কাজে আনাফ অনেক খুশি এবং মুগ্ধ। দিনে দিনে আনাফও রিফার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে।দিন রাত শুধু রিফাকে নিয়েই ভাবে।আনিফাও তার ভাইয়ের এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে।কিন্তু কিছু বলে না।আর নিধি সে তো নাহিদের জন্যে অনেক পাগল।না চাইতেও নাহিদকে ভালোবেসে ফেলেছে নিধি।কিন্তু লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে প্রপোজ করতে পারে না।আর নাহিদ সে তো তার পরিবার এবং অফিস নিয়েই থাকে।মাঝে মাঝে একটু আধটু আনাফের সাথে দেখা করতে যায়।
এভাবে ৩ মাস কেটে যায়।রিফা তো আনাফের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলেনা।এতে আনাফ বিরক্ত। আর ওদের কোম্পানির ডিল টাও খুব সুন্দর ভাবেই সাকসেসফুল হয়। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু রিফার জন্যই। আনিফাও অনেকটা অবাক হয় রিফার এতো ভালো কাজ দেখে। তাই সেদিন রিফার কাছে ১ম দিনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেয়। আর আনিফা আনাফকে বলে, “সত্যিই তোকে ফাস্ট প্রাইজ দেওয়া উচিত এতো ভালো একজনকে চুজ করার জন্য।” সেদিন আনাফ উত্তরে শুধু মুচকি হাসি দেয়। আনাস সাহেবও ছেলের এতো ভালো পজিশন দেখে খুবই গর্বিত।
একদিন,
নাদিয়া এসেছে আজ আনাফের সাথে দেখা করতে।এই কয়েকমাসে নাহিদই আনাফকে নাদিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।আনাফ নাদিয়ার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও আনাফের একদম সহ্য হয় না কারন নাদিয়ার গায়ে পড়া স্বভাব।আর গায়ে পড়া স্বভাব সবসময়ই আনাফের অপছন্দ। তবুও আনাফের কিছুই করার ছিলো না কারন সে নাহিদের বোন।নাদিয়া ফোন টিপতে টিপতে আনাফের রুমের দিকে যাচ্ছিলো আর রিফা ফাইল ঘাটতে ঘাটতে সামনের দিকে যাচ্ছিলো ওমনি রিফা নাদিয়ার সাথে ধাক্কা খায়।ধাক্কা খাওয়ার ফলে রিফার হাত থেকে ফাইলটা পড়ে যায় আর নাদিয়ার ফোনটাও।নাদিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে রিফার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো,
রিফা-সরি ম্যাম আই এক্সট্রেমলি সরি আসলে আমি ফাইল চেক করছিলাম তাই।
নাদিয়া-জাস্ট শাট আপ থার্ড ক্লাস মেয়ে তুমি জানো আমার ফোনের দাম কতো?
রিফা-সরি ম্যাম ওয়েট আমি এক্ষুনি ঠিক করে দিচ্ছি আপনার ফোন।
বলেই মোবাইল নিতে গেলো তখনই নাদিয়া রিফার হাত ঝাড়ি মেরে বললো,
নাদিয়া-খবরদার আমাকে বা আমার ফোনকে টাচ করবা না তোমার ওই ময়লা হাত দিয়ে।
রিফা-ম্যাম ময়লা কোথায়?
নাদিয়া-তুমি তো এই কোম্পানির কাজের বুয়া রাইট?
তখনই ওইখান দিয়ে মুক্তা আর জয় কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো ওমনি নাদিয়ার কথা গুলো শুনতে পেলো।
মুক্তা-হেই কে আপনি অফিসে ঢুকে একজনকে অপমান করছেন? আপনার এতো রাইট নেই এই কোম্পানিতে এসে একজন মেয়েকে অপমান করবেন।
নাদিয়া-ইউ শাট আপ একজন কাজের মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা কি আমি তোমার থেকে শিখবো?
জয়-মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ মিস যার সম্পর্কে জানেন না তাকে নিয়ে এভাবে বলছেন আর আপনি এমন কোন মহানারী যে আপনি যা ইচ্ছা করবেন আর আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবো। হুহ আর ইউ?
নাদিয়া-আমি তোমাদের বসের উডবি ওয়াইফ সো এখানে আমার কথা বলার রাইট আছে ওকে?
মুক্তা-কি বলে এই পাগল মেয়ে?
বলেই মুক্তা জোরে জোরে হাসতে লাগলো আর সাথে জয়ও।রিফা সব চুপচাপ দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না।নাদিয়া রেগে চিৎকার করে বলতে লাগে,
নাদিয়া-জাস্ট শাট আপ গাইস ইটস নট এ জোক।
রিফা-ম্যাম ফোন দিন ঠিক করে দেই।
বলেই রিফা এগোতে নেয় ওমনি নাদিয়া রিফাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।মুক্তা তো রিফা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। রিফা পড়ে যেতেই রিফার ব্যাগ থেকে ফোনটা পড়ে একদম ভেংগে যায়।মুক্তা গিয়ে রিফাকে ধরে উঠায়।
মুক্তা-তুই ঠিকাছিস?(উত্তেজিত হয়ে)
নাদিয়া রিফার ফোনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভাবে হেসে বললো,
নাদিয়া-হাহা কি সস্তা ফোন।যার এই চেহারার ঢং আর ফোন…….
বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো।ফোনের কথা উঠতেই রিফা ফ্লোরে তাকালো এবং দেখলো ফোনটা ভেংগে চুরমাড় হয়ে গেছে।এটা দেখে রিফার বুকের মধ্যে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।এই ফোনটা যে ইমন রিফার বার্থডে তে গিফট করেছিলো।
#FlasH_BacK…….
রিফা-আহ আর কতোক্ষন চোখে কাপড় দিয়ে থাকবো ধুর ভালো লাগছে না।
ইমন-আরেকটু সোনা নাও এবার চোখের বাধনটা খুলে ফেলো।
রিফাও উত্তেজিত হয়ে বাধনটা খুলে ফেললো আর অবাক হয়ে গেলো।একটা চকলেট কেক আর এর উপরে হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ লেখা।আর পাশে নাইফ।রিফা তো প্রায় কেদে দেয় এমন অবস্তা। ইমন আস্তে আস্তে করে বলে উঠলো
ইমন-হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?
রিফা মুচকি হেসে জবার দিলোঃখুব সুন্দর।
ইমন-হুহ এখন কেকটা কেটে ফেলো।
তারপর ইমন আর রিফা মিলে কেক কাটলো এবং একে অপরকে খাইয়েও দিলো।খাওয়া শেষ হলে ইমন রিফার সামনে একটা গিফট দেয়।
রিফা-এতে কি আছে?
ইমন-খুলেই দেখো কি আছে?
রিফাও মুচকি হেসে প্যাকেট টা খুলতে লাগলো।
প্যাকেট খুলে রিফা অবাক।ইমন যে তাকে ফোন গিফট করবে সেটা রিফা ভাবতেও পারেনি।অবাক চোখে রিফা ইমনকে জিগ্যেস করলো এটা কার জন্য?
ইমনও মুচকি হেসে দিলো,যেহেতু তোমার জন্য এনেছি তো তোমারই হবে তাইনা?
রিফা -হ্যা কিন্তু এত্তো টাকা খরচ করার কি প্রয়োজন ছিলো?
ইমন-ওহ কাম অন আমি আমার বউ এর জন্য এনেছি এতে কার কি?এখন দেখোতো কেমন লেগেছে?
রিফা-ভালো কিন্তু?
ইমন-আর কোন কথা না ফোনে সিমসহ সবকিছু সেট করা আছে।
বলেই রিফার সাথে কাপল পিক তোলে।সেইদিন থেকে ফোনটা হাত থেকে পড়া তো দূরের থাক কখনো আচরও লাগতে দেয়নি ফোনে।এতোটা যত্ন করেছিলো ফোনের আর আজ সেটা ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে।এই ফোনের সাথে কতোই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে রিফা আর ইমনের।
রিফা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো ফোনটার দিকে তাকিয়ে।চোখ দিয়ে তো অনবরত পানি পরছেই।ধীরে ধীরে ফোনটার দিকে এগিয়ে ফোনের সমস্ত টুকরাগুলো নিজের হাতে নিলো এবং তাকিয়েই রইলো।নাদিয়ার কাছে রিফার সবকিছু ড্রামা মনে হচ্ছে।
নাদিয়া-ওহ এই ড্রামা অফ করবা প্লিজ আমি অনেক টায়ার্ড এসব ড্রামা দেখতে দেখতে।
কথা বলতে না বলতেই নাদিয়ার গালে অনেক জোরে একটা থাপ্পড় মারল কেউ।সে ‘কেউ’ টা আর কেউ নয় সেটা আনাফ।আনাফ অনেকটাই রেগে আছে।আনাফ নাদিয়াকে চড় মারতেই নাদিয়া বলে উঠে,
নাদিয়া-হাউ ডেয়ার ইউ আমায় চড় মারলে কেন?
আনাফ-হাউ ডেয়ার ইউ আমারই অফিসে ঢুকে আমারই পার্সোনাল এসিস্ট্যান্টকে অপমান করা আর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো?হাউ ডেয়ার?(রেগে চিল্লিয়ে)
নাদিয়া- ওয়াট এই লুজার মেয়ে তোমার পিএ?
আনাফ আরেকটা থাপ্পর দিলো নাদিয়া কে।
আনাফ- আর একবার ওর সম্পর্কে খারাপ কথা বললে দেখিও কি করি। তুমি মেয়ে বলে তোমায় কিছু বলছি না নাও গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার স্টুপিড গার্ল।(রেগে চিল্লিয়ে)
নাদিয়া- তুমি এই মেয়েটার জন্য এভাবে সবার সামনে অপমান করলে আমি এই মেয়ে কে ছাড়বো না।
বলেই রিফার দিকে তেড়ে যেতে নেয় আরেকটা চড় খায় আনাফের থেকে।
আনাফ- এই তোর লজ্জা শরম কি নেই ৩টা থাপ্পর খেলি আবার ওর দিকে তেড়ে যাস। মেয়ে মানুষের লজ্জা তা বেশি থাকা লাগে সেই জায়গায় তুই…. কি বলবো I just Speechless now get lost from here নইলে সিকিউরিটি ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।
নাদিয়া- এত্তো বড় অপমান এই নাদিয়া উহান কে? লাইক সিরিয়াসলি? আমিও তোমাদের দেখে নিবো।
আনাফ- সিকিউরিটি??(চিল্লিয়ে)
সিকিউরিটি দৌড়িয়ে এসে বললো,
সিকিউরিটি- ইয়েএস স্যার?
আনাফ- এসব পাগল ছাগলদের ভেতরে ঢোকার জন্য তোমাদের মাসে মাসে মাইনে দেই?(রেগে চিল্লিয়ে)
সিকিউরিটি- সরি স্যার ভেবেছি আপনার কিছু হয় তাই ঢুকতে দিয়েছি।
আনাফ- জাস্ট শাট আপ একে এখন বের করো।
নাদিয়া- আনাফ তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো।(রেগে)
আনাফ- যা করছি বেশ করছি তোমাদের মতো মানুষরা আমার অফিসের ক্লিনারদের জুতারও সমান না। সো আর কখনো অফিসে ঢোকার চেষ্টাও করবা না।
নাদিয়া- এই নাদিয়া উহান কখনোই এতোটা অপমানিত হয়নি যতোটা তুমি আমাকে করেছো। নেক্সটে দেখো তোমায় আমি কি করি।
নাদিয়া উহান নামটা শুনতেই রিফার মনটা কেমন যেনো ছেত করে উঠলো। অবাক চোখে নাদিয়ার দিকে তাকালো।
রিফা-(এ কি তাহলে সেই নাদিয়া? তবে এটা কি করে সম্ভব?)
আনাফ- (নাদিয়ার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে) সিকিউরিটি এভাবে কি তাকিয়ে রয়েছো একে তাড়াতাড়ি ঘাড় ধরে বের করো না কেন নাকি তোমাদের চাকরি….
সিকিউরিটি- নো নো স্যার।
বলেই নাদিয়াকে নিয়ে গেলো। নাদিয়া যেতেই আনাফ রিফার কাছে গেলো এবং বললো,
আনাফ- তুমি ঠিক আছো?
রিফা- স্যার আমি ছুটি চাইছি আমি বাসায় যাবো।
আনাফ- আচ্ছা তুমি তাহলে যাও।
রিফা ফোনের ভাঙ্গা অংশগুলো নিয়ে বাসায় চলে গেলো। আর আনাফ সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো রিফার কথা।
এইদিকে নাদিয়া ড্রাইভ করছে আর ভাবছে,
নাদিয়া-(এতো সহজে তোমায় ছাড়বো না আনাফ ওয়াহিদ। তুমি যাই করো না কেন তোমায় আমি বিয়ে করবোই তারপর দেখো তোমার কি হাল করি।)
বলেই নিজের বাসায় চলে গেলো। বাসায় এসে গাড়িতে বসেই নিজের জামার হাতা ছিড়লো। ব্লেড দিয়ে হাত কেটে সেই রক্ত টা ঠোটের কোণায় লাগালো আর জামায় লাগালো,চুলগুলো এলোমেলো করে, চোখের নিচে কালো দাগ করে আর চোখে ড্রপ মেডিসিন দিয়ে চোখে পানি আনলো। হাতে আচড়ের দাগও করলো। তারপর গাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা নাহিদের রুমে গেলো। আজ নাহিদের বাবা নেই কয়েকদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে নাহিদের মাকে নিয়ে। নাহিদ অফিসের কাজের জন্য আর নাদিয়ার জন্য যায়নি।
,
,
,
,
,
চলবে❤