#বিনি সুতোর টান,পর্ব-১৩,১৪
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৩
“কেন কী করেছিল?”
নীল পুনরায় বলা শুরু করল।
সেদিন মিহির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম বরাবরের মতো। সেদিন মিহি স্কুল থেকে বের হতে দেরি করতেছিল। অনেক মেয়েরাই বের হচ্ছে কিন্তু ও হচ্ছে না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। এর মধ্যে একটা মেয়ে আমার পাশে দাঁড়াল। আমাকে দেখে কেমন করে যেন হাসছিল। আমি মেয়েটার হাসি উপেক্ষা করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি মিহির জন্য। এমতবস্থায় মিহি আসলো। মিহি এসে লক্ষ্য করল মেয়েটা আমাকে অনুসরণ করছে। বিষয়টা লক্ষ্য করে মেয়েটার কাছে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা শব্দ পেলাম। লক্ষ্য করলাম মিহি মেয়েটাকে থাপ্পর কষিয়ে বলতে লাগল
“সমস্যা কী? আমার বরের দিকে তাকিয়ে হাসছেন কেন? ছেঁছড়া মেয়ে মানুষ। ”
আমি বুঝতে পারছিলাম বিষয়টা বাড়বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তাই মিহির হাতটা ধরে দ্রূত জায়গা পরিবর্তন করলাম। মিহি রাগে গজগজ করছে। আমি মিহিকে মোলায়েম কণ্ঠে বললাম
“শুধু শুধু মেয়েটাকে মারলে কেন? কী দরকার ছিল সিনক্রিয়েট করার? তুমি আসলেই কিছু বুঝো না। এত রাগ করলে চলে?”
মিহি আমার মাথার চুল টেনে ধরে বলল
” ও তোমার দিকে তাকিয়ে কেন থাকবে? তাকিয়ে থাকব আমি। তোমাকে দেখব আমি অন্য কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি মানতে পারব না। আর তোমাকে দাঁড়াও একটা নজর টিপ দিয়ে দিই।”
কথাটা বলেই ব্যাগ থেকে কাজল বের করে আমার কপালে বড়ো বৃত্ত অঙ্কন করে দিল। যেমন টা মায়েরা বাচ্চার কপালে দেয়। হতবাক হয়ে আছি আমি ওর কান্ড দেখে। জানতাম টিপটা মুছে ফেললে ও রেগে যাবে। এদিকে মিহির প্রতি আমার দুর্বলতা অনেক। তাই টিপ মুছার দুঃসাহস দেখালাম না। টানা দুই ঘন্টা ওকে নিয়ে এ টিপ পড়ে ঘুরেছি। সবাই আমাকে দেখে হাসছিল তবে আমার কাছে সকল ঠাট্টা তামাশার বাইরে মিহির চাওয়াটায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য ছিল। মিহির এ ছোটো ছোটো পাগলামির জন্য ওর প্রতি কখনও আমার বিরক্তি আসে নাই বরং উল্টো ওকে আমার ভালো লাগত আরও প্রবলভাবে। এ ভালোলাগার রেখা গুলো প্রচুর পরিমাণে আমার রগে রগে বিদ্ধ হত।
নীলের কথা শুনে আমার বুকের বা পাশটায় কেমন জানি লাগছিল। একরকম ব্যথা অনুভূত হতে লাগল। একের পর এক সুন্দর বর্ণণা শৈলী আমার মনটাকে কেবল ক্ষতবিক্ষত করছে। মিহির কপালটা কত বড়ো হলে সে নীলের মতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিল সেটাই কল্পনা করছি আমি। কতটা ভাগ্যবতী হলে সে নীল নামক মানুষটাকে এভাবে পেয়েছিল। আমার একদমেই বিশ্বাস হচ্ছে না নীল এরকম ছিল। আগের নীল আর এখনের নীলের মধ্যে কত ফাঁরাক। তবে এটুকু বুঝতে পারছি নীল অনেক কেয়ারিং সেটা আগেও ছিল এখনও। কেয়ারিং না হলে সে আমাকে এত যত্ন নিত না আমাকে নিয়ে এত ভাবত না। তবে মিহির জন্য অফসোস ও হয় সে নীলকে হারিয়েছে। আবার নীলের জন্য কষ্টও হচ্ছে সে মিহিকে এত ভালোবেসেও পাই নি। আচ্ছা আমরা কেন জানি না ভুল মানুষগুলোকে ভালোবেসে ফেলি। সঠিক মানুষের প্রতি ভালোবাসা কেন জানি না আসে না। ঘুরেফিরে মানুষ নির্বাচনেব ভুল করে এমন কাউকেই নির্বাচন করে ভালোবাসি যে কোনোদিন আমার হবে না। আমরা নিজেরাই না পাওয়ার গ্লানি কাঁধে নিই। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“সত্যিই আপনি কাপলে টিপ নিয়ে ঘুরেছেন? আপনার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকেনি?”
তিনি হাসি মুখে উত্তর দিলেন
“সত্যিই আমি টিপটা নিয়ে ঘুরেছি। মানুষ শুধু আমাকে দেখছিল আর মুখ চেপে হাসছিল।”
“আপনার খারাপ লাগে নি?”
“মিহির খুশির কাছে সব খারাপ লাগা মলিন হয়ে গিয়েছিল।”
“আচ্ছা তারপর কী হয়েছে বলুন।”
সেদিনের পর থেকে আমাদের সম্পর্কটা আরও সুন্দর হতে লাগল। মিহি কিছু চাইতে দেরি করত আমার দিতে দেরি হত না। দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেল। সেদিন মিহির জন্মদিন ছিল। রাত ঠিক বারোটায় ওর বাসায় ছুটে গেলাম। বাসাটা নীচতলা ছিল। আমি বাসার পেছনটায় ওর জানালার কাছে গিয়ে পুরো জানালা বেলুন দিয়ে সাজালাম। পুরো জানলায় ফুল গেঁথে দিলাম। সুন্দর করে সব সাজালাম। তারপর কেকটা জানালার কাছে রেখে মোমবাতি জ্বালিয়ে মিহিকে কল দিলাম
মিহি কলটা ধরতেই বললাম
“জানালা টা খুলো।”
মিহি জানালাটা খুলল। জানালাটা খুলতেই আমি ওকে উইশ করলাম। মিহি গলা চেপে বলতে লাগল
“আরে তুমি এখানে। বাবা দেখলে তো সমস্যা।”
“বাবা বাবা না করে কেকটা আগে কাটো আর কেমন সাজানো হয়েছে বলো।”
মিহি হাতে ছুরিটা নিয়ে কেকটা কেটে আমাকে খাইয়ে দিল। আমার কপালে জানালা দিয়ে একটা চম্বন দিল। অন্যরকম একটা অনুভূতি ঘিরে ধরেছিল আমাকে। মিহির ঠোঁটের স্পর্শ আমাকে মাতাল করে দিল মুহুর্তেই। আবেগের বয়স ছিল তখন মস্তিষ্ক কাজ করত না বরং আবেগেই কাজ করত। আমি জানালা দিয়ে হাত দিয়ে মিহির মথাটা আমার দিকে চেপে ধরে ওর ঠোঁট দুটো চেপে ধরলাম। পরক্ষণেই ছেড়ে দিয়ে মিহির দিকে তাকালাম। মিহি বড়ো বড়ো চোখ করে আমার দিকে তাকাল। রাগী গলায় বলে উঠল
“কিস করলে কেন? এগুলা ঠিক না।”
“তুমি যে করো ঐটা বুঝি অনেক ঠিক৷”
“বিয়ে ছাড়া এগুলা ঠিক না। দাঁড়াও তোমাকে বিয়ে করি।”
আমি বিস্মিত গলায় বললাম
“কীভাবে বিয়ে করবে। বিয়ে করলে তো তোমাকে দেনমোহর দিতে হবে৷ ”
মিহি আমার কথা শুনে এক পিস কেক আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
“এ কেককে দেনমোহর রেখে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে আমাকে বিয়ে করো। ”
মিহির বাচ্চা কথা গুলো আমার বেশ ভালো লাগছিল। মিহির কথা মতো বললাম
” এ কেককে দেনমোহর করে আমি তোমাকে বিয়ে করলাম। বলো কবুল।”
মিহি হাসতে হাসতে বলল
“কবুল। ”
এর মধ্যেই একটা গম্ভীর কণ্ঠ সুর কানে আসলো। কণ্ঠটা মিহির বাবার। তিনি বলে উঠলেন
“মিহি এত রাতে কিসের শব্দ হচ্ছে। ঘুমাও নি এখনও?”
মিহি তার বাবার কণ্ঠ শুনে আমাকে ফিসফিস করে বলল
“আমাদের বিয়ে কমপ্লিট। এখন থেকে আমার স্বামী স্ত্রী। এবার বাসায় চলে যাও। পরে কথা হবে। আর কেকটা আমি খেয়ে ফেলতেছি। ধরে নিও দেনমোহর আমার পেটে চলে গেছে। এবার যাও। ”
কথাটা বলেই মিহি জানালাটা বন্ধ করে দিল। আমি মিহির বাচ্চাসুলভ কান্ড গুলো বেশ উপভোগ করতাম। ভালো লাগত ওর এই পাগলামিগুলো।
কথাগুলো বলেই নীল হাসছিল। আমি শুধু নীলের দিকে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কত রোমান্টিক ছিল নীল। প্রেমটা হয়তো ঐ বয়সেই সুন্দর। কারণ আবেগগুলো সে বয়সেই বেশি কাজ করে। আচ্ছা আমাদের কী প্রেম হবে? আমার জন্য নীল এমন পাগলামি করবে? ধুর আবারও আকাশ কুসুম ভাবছি। নীলের মুখে যতই কাহিনি শুনছি ততই তার প্রতি একটা দুর্বলতা অনুভব করছি। অদ্ভুত রকম দুর্বলতা। কেন এত দুর্বলতা অনুভূত হচ্ছে জানি না। নীলকে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে। এ মায়ার বাঁধন কী ছেড়া কখনও সম্ভব? আমি নীলের হাসিটা উপভোগ করতে লাগলাম। এ হাসিতে অনেক স্মৃতি লুকিয়ে আছে নীলের। নীল হাসিটা থামিয়ে পুনরায় কাহিনির বর্ণণা দিতে লাগল
সেদিন বাসায় এসে মিহির সাথে কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়ি। আমাদের কথা হত অনেক। তখন তো মেসেন্জার, ফেসবুক এত কিছু ছিল না। এখন তো যোগাযোগের দিক গুলো অনেক সহজতর হয়েছে। এখন চাইলেই ভিডিও কলে কথা বলা যায় তখন চাইলেও একে অপরকে হুট করে দেখার সুযোগ ছিল না৷ কথা বলে শুধু কল্পনা করতাম। মিহির সাথে কথা বলে কল্পনা করতে করতেই ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙল প্রেরণার কলে। আমি কলটা ধরতেই প্রেরণা যা বলল তা শুনে কলিজা কেঁপে গেল।
চলবে?
#বিনি সুতোর টান
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৪
আমি কলটা ধরতেই প্রেরণা যা বলল তা শুনে আমার কলিজা কেঁপে উঠল। সে বলল
“ভাইয়া মিহি তো বাসায় ধরা পড়েছে ফোন নিয়ে। বাসা থেকে তাকে অনেক মেরেছেও। যদিও খালা খালু জানে না আপনার সাথে সম্পর্ক তবে লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহারের জন্য ওর বাবা মা অনেক মেরেছে ওকে। আপনি আপাতত ঐ নম্বরে কোনো কল দিয়েন না। আমি সময় করে আপনাদের দেখা করার ব্যবস্থা করে দিব। আর কোনো খোঁজ খবর লাগলে আমাকে বলবেন। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।”
প্রেরণার কথা শুনে কেমন যেন লাগছিল। মিহিকে কেউ মেরেছে সে আঘাত পেয়েছে এটা ভেবেই বেশ কষ্ট হতে লাগল। বারবার মন চাচ্ছিল মিহির কাছে ছুটে যাই তবে সে সুযোগ ছিল না। সে সময়টায় এমন মনে হয়েছিল যে আমার যদি দুটো ডানা থাকত তাহলে তার কাছে ছুটে যেতাম। অথবা আমাকে যদি কোনো দৈত্য এসে জিজ্ঞেস করত আমার শখ কী? তিনটি শখ তিনি পূরণ করবেন তাহলে তিনটি শখের জায়গায় মিহিকে চাইতাম। মিহির প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল এত গভীর।
মিহির কাছে ফোন না থাকায় আমাদের কথা বন্ধ। এভাবে প্রায় দুদিন কেটে গেল মিহির কোনো খবর নেই। প্রেরণার কাছ থেকে টুকটাক মিহির খবর পাই। তবে এতে আমার মন শান্ত হচ্ছিল না। মিহির কথা ভেবে দিন রাত পার করতাম। খাওয়ায় মন বসছিল না, পড়ায় মন বসছিল না। সে সময়টায় টের পেয়েছিলাম আমি মিহিকে কতটা ভালোবেসেছি। ভালোবাসার মানুষের অনুপস্থিতি জানান দেয় একটা মানুষ অপর মানুষকে কতটা ভালোবাসে। টানা চারদিন এরকম অবস্থার পর আমি আর নিজেকে দমাতে পারলাম না। সোজা মিহির বাসায় গেলাম ওর মা কে গিয়ে বললাম আমি মিহিকে পছন্দ করি। আমার ব্যাপারে খু্ঁজ নিয়ে যদি ভালো পায় তাহলে যেন এ সম্পর্ক মেনে নেয়৷ মিহির মা আমার কথা শুনে আমার ব্যাপারে খুঁজ নিলেন। এদিকে মিহিও আমার ব্যাপারে ছিল সিরিয়াস। সব মিলিয়ে দুই পরিবার আমাদের সম্পর্ক মানতে বাধ্য হলো৷ তবে আমার পরিবারের সবাই মেনে নিলেও মিহির বাবা আমাদের বিষয়টা জানত না। শুধু মিহির মা আমাদের মেনে নিয়েছে। মিহির বাবাকে বিষয়টা জানানো হয়নি। কারণ তিনি জানলে বিষয়টা আরও জটিল হত। তাই সবার মত ছিল একেবারে আমার একটা অবস্থান হলে মিহির বাবাকে জানাবে।
সব কাহিনির ঘটনা আবর্তনে আমাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল। মিহি এস এস পরীক্ষা দিল। তারপর এইচ এস সি পরীক্ষা দিল। আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো। মিহি যতই বড়ো হচ্ছিল ততই তার পাগলামি কমার পরিবর্তে বাড়ছিল। তবুও তার পাগলামি আমার বেশ ভালো লাগত। সে যা চাইত আমি তাই দিতাম। নিজের পকেটে টাকা না থাকলেও বাবার পকেট কেটে হলেও মিহির সব চাওয়া পূরণ করতাম।
দেখতে দেখতে আমাদের সম্পর্কের অনেকদিন পার হয়ে গেল। সম্পর্ক আরও গভীর হলো। আমার তখন পড়াশোনার শেষ দিকে। গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট আর কিছুদিন পর হবে। এর মধ্যেই মিহি একদিন রাতে কল দিল তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। আমাকে তার দেখতে মন চাচ্ছে। আমি যদি না যাই সে আর আমার সাথে কথা বলবে না। প্রথম দিকে ওর কথাটা মজা মনে হলেও পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম ও বেশ সিরিয়াস হয়েই যেতে বলছে। আমি মিহির প্রতি আসক্ত ছিলাম। মিহির একটা কথাও নড়চড় হত না। আর বাসার সবাইও এ বিষয়টা জানত। রাত বাজে বারোটা। ড্রাইভার আংকেলকে কল দিলাম মিহির বাসায় যাওয়ার জন্য। ড্রাইভার আংকেল দ্রূত গাড়ি নিয়ে বের হলেন। আমি রওনা দিলাম মিহির বাসার উদ্দেশ্যে। রাস্তায় গাড়িটা একটা ট্রাকের সাথে লেগে উল্টে গেল। এর মধ্যেই মিহি কল দিল। আমি কলটা ধরে বললাম
“গাড়িটা উল্টে গেছে মিহি। এখন কীভাবে আসব? আসার মতো কিছু তো পাচ্ছি না।”
নাছোরবান্দা মিহি আরও চড়ে গিয়ে বলল
“আমি কিছু জানি না, আমি তোমাকে আসতে বলেছি মানে আসবে। আর তো বেশি দূর না হেঁটে আসো।”
আমি মিহির কথা ফেলতে পারলাম না। বুকে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। বুকে একটু চাপ লেগেছে। তবুও সে ব্যথা উপেক্ষা করে মিহির কাছে হেঁটেই রওনা দিলাম। প্রায় বিশ মিনিট হাঁটার পর মিহির বাসার সামনে গেলাম। মিহি জানালা খুলে আমাকে দেখে হালকা হেসে চলে যেতে বলল। আমার সকল কষ্ট যেন মিহির এ হাসিতে মলিন হয়ে গেল।
মিহির সাথে সাক্ষাত শেষে সেখান থেকে একটা সিন এন জি নিয়ে বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম। বুক ব্যথা বাড়তে লাগল। আম্মু,আব্বুকে বুঝতে দিচ্ছিলাম না আমি ব্যথা পেয়েছি। কিন্তু মায়ের মন সব টের পায়। আম্মু আমাকে নিয়ে সরাসরি ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার বুকে এক্স রে করার পর জানাল আমার পাজরের একটা হাড় ভেঙে গিয়েছে।
নীলের মুখে কথাটা শুনেই আমি বেশ বিস্মিত হলাম। ভালোবাসা কত উন্মাদ হলে পাজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার পরও সেটা অনুভূত হয়নি। বরং ভালোবাসার মানুষের এক গুচ্ছ হাসির নিকট সব মলিন হয়ে গিয়েছে। সত্যিই ভালোবাসা এক অতল নেশা। যে নেশায় মানুষ হুট করেই তলিয়ে যায়। তখন সে নেশার ঘোরে বাকি সব চাওয়া পাওয়া ফিকে হয়ে যায় এবং সে নেশা আরও বেশি নেশাক্ত করে মাতাল করে দেয় সব। আমি হালকা গলায় নীলকে বললাম
“আপনার পাঁজর ভেঙে গিয়েছে আপনার তো অনেক ব্যথা হওয়ার কথা। আপনি টের পাননি?”
নীল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
“ব্যথা পেয়েছি তবে মিহির চাওয়া পূরণ করতে পেরেছি এটা ভেবে সে ব্যথাও যেন মলিন হয়ে গিয়েছিল। আমি সত্যিই মিহিকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম। পাগলের মতো ভালোবাসতা।”
নীল কথাটা বলার সাথে সাথেই বলে উঠলাম
“আর মিহি আপনাকে ভালোবাসত না?”
নীল প্রতিউত্তরে জবাব দিল
“সে যদি আমাকে ভালো না বাসত তাহলে কি আমাদের সম্পর্ক এতদূর গড়াত? সে আমাকে ভালোবাসেছিল বলেই আমাদের সম্পর্ক এত বছর টিকেছিল। ৬-৭ বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের। ভালোবাসা না থাকলে এত বছর কী টিকে থাকত? মোটেও না। বরং ভালোবাসা ছিল বলেই টিকে ছিল।”,
” তাহলে মিহি এখন কোথায়? এতকিছু,এত পাগলামির পরও কেন আপনারা এক হতে পারেননি।?”
নীল পুনরায় কাহিনি বিন্যাস করতে লাগল
আমাদের সম্পর্ক এভাবেই বেশ ভালো চলতে লাগল। মিহির ছোটো বড়ো সব পাগলামি আমি সহ্য করতাম। জোর করে সহ্য করতাম বিষয়টা এমন না বরং তার পাগলামি গুলো আমি ভালোবেসে উপভোগ করতাম।
এর মধ্যে মিহির বাবা মিহির জন্য পাত্র দেখল। মিহি বরাবরেই অনেক সুন্দরী মেয়ে হওয়ায় তার জন্য যোগ্য পাত্রই আসত। মিহির জন্য যে পাত্র এসেছিল সে ছিল ম্যাজিস্ট্রেড। তাই মিহির বাবা মিহির বিয়ে ঠিক করে। বিয়ে ঠিক করার পর মিহির মা আর মিহি আমার কথা জানায়। মিহির বাবা আমার বিষয় জানার পর জানাল আমি উনার মেয়ের যোগ্য না। আমি তো এখনও কোনো চাকুরি নিতে পারিনি। গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে বাবার হোটেলে খাচ্ছি। আমার বাবার টাকা আছে আমার তো কোনো টাকা নেই, যোগ্যতা নেই। এসব নিয়ে বেশ ঝামেলা হতে শুরু করল। এদিকে মিহি বিয়ে করবে না আমাকে ছাড়া তাই সে ও বাবার সাথে লড়াই করতে লাগল।
একটা সময় মিহির বাবা আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন। আম্মু আমাকে বলে দিল মিহির বাবার সাথে নম্র ভাবে কথা বলার জন্য এবং মিহির বাবা যদি চায় তাহলে আমার পুরো পরিবার মিহিকে যোগ্য সম্মান দিয়ে আমাদের বাড়ির বউ করে আনবে।
সেদিন মিহির বাবার সাথে দেখা করতে যাই। মিহির বাবার সাথে দেখা করতে গিয়ে যা জানতে পারি তা শুনার পর আমার কলিজা দু ভাগ হয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছিল।
চলবে?