#বিনি সুতোর টান,পর্ব-১৭,১৮
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৭
পড়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে ভালো হত। তবে এর বিস্তৃতি এত দূর তলাবে কে জানত। এ বাসায় এলিসন নামে একটা পার্সিয়ান বিড়াল আছে যার সাথে আপনাদের আগে পরিচয় করাতে ভুলে গিয়েছি। বাসায় আসার পর থেকে এ মহাশয় আমাকে দেখলে তেড়ে আসে। কোন জন্মের শত্রু ছিলাম জানি না। তবে সে যে আমাকে সহ্য করতে পারে না এটা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলাম। তাই ভুল ক্রমেও আমি তাহার সাথে বন্ধুত্ব ফলাতে যাই না। তিনি নীলের সাথে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গতকাল রাতে নীল আমার রুমে থাকায় তিনি নীলের পাশে বসেই ঘুমিয়েছিলেন। আর এখন আমার ধপাস করে পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে এ মহাশয় দৌড়ে এসে আমার গায়ের উপর উঠে শোধ নেওয়ার জন্য কোমড়ে কামড়ে ধরলেন। আমি একটু বিড়াল ভয়ও পাই। তার উপর এলিসন এসে এমনভাবে কামড়ে ধরল যে আমি কিছুটা জোর গলায় চিৎকার দিতে লাগলাম। দ্রূত বেগে নীল আমার রুমে প্রবেশ করল। প্রথমে আমাকে এ অবস্থায় দেখে মিনিট এক তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর আমার চিৎকারের বিস্ফোরনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রূত এলিসনকে আমার কাছ থেকে ছুটিয়ে উনার কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বললেন
“এলিসন বাবা তোমার কোথাও ব্যথা লাগেনি তো। তুমি ঠিক আছো তো?”
নীলের কর্ম দেখে আমার মাথায় আগুন চড়ে যাচ্ছে। কোথায় বিড়াল আমাকে কামড়ে ধরল আমাকে জিজ্ঞেস করবে কিছু হয়েছে কি’না কিন্তু না আমাকে জিজ্ঞেস না করে বিড়ালকে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে মনে হচ্ছে আমি বিড়ালটাকে কামড়ে ধরেছি৷ আমি এবার চিৎকার থামিয়ে কর্কশ ভঙিতে বললাম
” বিলাইরে কী আমি কামড়ে ধরছি নাকি যে বিলাইয়ের কিছু হবে। বিলাই আমাকে কামড়ে ধরেছে। আর আমি পড়ে গেছি আপনার কী তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই? আমাকে না ধরে বিলাই নিয়ে পড়ে আছেন।”
নীল আমার কথা শুনে হেসে জবাব দিল
“ভালো করেছে এলিসন আপনাকে কামড় দিয়েছে। এত বড়ো মেয়ে হয়েছেন ধপাস করে কেন পড়েন? দূর্ভাগ্যক্রমে এলিসনের উপরে পড়ে থাকলে কেমন হত একবার ভেবে দেখেছেন তো? এলিসন আপনার মতো এত পাহাড়ের ভর সহ্য না করে চ্যাপ্টা হয়ে যেত। ভাগ্য ভালো বাথরুমে গিয়ে পড়েছেন।”
নীলের কথা শুনে আরও চটে গেলাম। পেটটাও মুচরাতে লাগল আবার। আন্টি আংকেল হয়তো আমার চিৎকার শুনেনি নাহয় এতক্ষণ চলে আসতো। আমি বাধ্য হয়ে রাগ গলায় উনাকে বললাম
“আমাকে কী একটু আপনি ধরে তুলবেন দয়াকরে। আমি পায়ে সত্যিই ব্যথা পেয়েছি। আপনাকে লজ্জায় চলে যেতে বলেছিলাম কারণ ওয়াশরুমে আসা দরকার ছিল। আপনার সামনে কী করে ওয়াশরুমে যাব এ ভেবে আপনাকে তখন চলে যেতে বলেছিলাম। এদিকে পায়ের ভর সামলাতে না পেরে ধপাস করে পড়ে যাই। আর কোমরে এলিসন হয়তো বেশ জোরেই কামড় দিয়েছে নাহয় এত ব্যথা করতেছে কেন বুঝতেছি না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমার পেটটা ভীষণ মুচর দিচ্ছে। দয়াকরে আমাকে একটু তুলুন। নাহয় এখানেই আমাকে কর্ম সম্পাদন করতে হবে৷”
নীল আমার কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসতে লাগল। এ বিপদে উনার এত হাসি কীভাবে পাচ্ছে আমার জানা নেই। রাগ গলায় অনেক কিছুই বলতে মন চাইলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে চুপ রইলাম। নীল আমাকে ধরে উঠাল। তারপর নম্র হাসির রেখা টেনে বলল
“কমোডে কী বসতে পারবেন? নাকি পাজামাও আমাকে খুলে দিয়ে বসাতে হবে?”
আমি ড্যাবড্যাব করে নীলের দিকে তাকলাম। নীল দ্রূত পায়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল
“আমি রুমেই বসলাম। আপনার শেষে হলে ডাক দিয়েন। বাবা মায়ের রুম সাউন্ট প্রূফ করা আছে। দরজা লাগানোর পর চিৎকার তেমন রুমে প্রবেশ করতে পারে না। তাই এ মুহুর্তে আমি ছাড়া আপনাকে কেউ সাহায্য করতে পারবে না। আমি আবার অনেক ভালো ছেলে মানুষকে বিপদে রেখে যেতে পারি না। তাই রুমেই বসলাম।”
আমি নীলের কথায় তেমন পাত্তা দিলাম না। বিসর্জন কর্ম শুরু করলাম। বুঝতে পারলাম জীবনে অর্জনের চেয়ে বিসর্জন অনেক আরামের। ভোগে নয় ত্যাগে প্রকৃত সুখ ছোটোবেলায় ভাব সম্প্রসারণ পড়েছিলাম এখন তা হারে হারে টের পাচ্ছি। বিসর্জন কার্য সম্পাদন শেষে নিজেকে বেশ হালকা লাগছে। তবে পায়ে হালকা ব্যথা আর কোমড়ে এলিসনের কামড়টা বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি নিজেকে একটু গুছিয়ে নীলকে ডাক দিলাম।
“আছেন আপনি? আমি বের হব। ”
দরজাটা অটো লক করা ছিল। নীল দরজা খুলে আমাকে ধরে বলল
“আর ইউ ওকে নাউ?”
আমি রাগে গজ গজ করতে করতে বললাম
“বিলাইয়ের কামড় খেয়ে ওকে থাকি কী করে! যে কামড় দিয়েছে মনে হচ্ছে ১৪ টা ইনজেকশন নিতে হবে। একে তো আমার পা গিয়েছে এখন আবার কোমর যাবে। আমি মনে হয় প্যারালাইজড হয়ে যাব।”
নীল আবারও একটু হাসলো। কিছুক্ষণ আগে বলে যাওয়ার কাহিনির সময় নীলের মুখে যে মলিনতার ছাপ লক্ষ্য করা গিয়েছিল তা এখন নীলের মধ্যে বিদ্যমান নেই। সে হাসিটাকে বিস্তার করে বলল
“আঁচল রাণী আপনার চিন্তার কারণ নেই। এলিসনকে রেভিস ভ্যাকসিন দিয়ে রেখেছি। সে আপনাকে কামড় দিলেও আপনার কিছু হবে না। তবে এবার বাথরুমে দাঁড়িয়ে বকবক না করে আমাকে ধরে বের হোন। ”
আমি নির্দ্বিধায় নীলের কাঁধে ভর দিয়ে বের হলাম। তবে কোমড়টায় বেশ ব্যথা করছে। নীল আমার মুখ দেখে বলল
“আপনার অসুবিধা না থাকলে এলিসন কোথায় কামড় দিয়েছে দেখতে পারি কী? আমি একটু ওয়াশ করে দিই। এখন বেশ সকাল মাকে ডাকলে মায়ের সারাদিন মাথা ব্যথায় কাটবে। আর বাবা তো আর আসবে না এসব করতে। আপনি বিনা সংকোচে আমাকে দেখাতে পারেন। ধরে নিন একজন ডাক্তারকে ট্রিটমেন্টের জন্য কোমড়টা দেখাচ্ছেন।”
নীলের এত কেয়ার নেওয়ার বিষয়টা আমাকে বেশ মুগ্ধ করে। নীলের ক্ষেত্রে আমার কোনো সংকোচ যদিও কাজ করে না তবুও নীলকে সেটা বুঝতে দিলাম না। মুখে হালকা সংকোচের ছাপ এনে কোমড় থেকে কাপড়টা সরালাম। নীল কোমরের কাপড় টা সরাতেই জিহবায় কামড় দিয়ে এলিসনকে বলতে লাগল
“ভেরি বেড ব্যাটা। তুমি আন্টিকে এভাবে কামড়ে কেন দিয়েছো?”
তারপর আমাকে বলল
“আপনি একটু এভাবেই বসেন আমি মেডিসিন নিয়ে আসি। ওয়াশ করে মলম লাগাতে হবে।”
এই বলে রুম থেকে বের হতে নিলেন। আমি পিছু ডেকে বললাম
“বিলাই নিয়ে যান। আপনি গেলেই এ আবার আমার উপরে হামলা করবে।”
নীল আমার কথা শুনে এলসিনকে কোলে নিয়ে উত্তর দিল
“এলিসন কেন কামড় দিয়েছে বুঝতে পেরেছি। আপনি তার সুন্দর নাম থাকা সত্ত্বেও বিলাই বিলাই করছেন তাই কামড় দিয়েছে। ”
আমি কপালটা কুঁচকে জবাব দিলাম
“বিলাইকে বিলাই বলব না তো কী বলব? আপনি কিন্তু বিলাই নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন বেশি।”
“আপনার ত্যাড়া রগ কখনও সোজা হবে না।”
কথাটা বলেই নীল এলিসনকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো৷ আমি এভাবেই বসে রইলাম। এবার নীল হাতে মেডিসিন নিয়ে রুমে প্রবেশ করল। আমার কাছে এসে স্যাভলন মিশ্রিত পানিতে তুলা ভিজিয়ে কোমরে লাগাতে লাগল। নীলের হাতের স্পর্শে আমি কেমন যেন মাতাল হয়ে গেলাম। এ মাতালতার নেশা আমি চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে লাগলাম।
মাতালতার মোহ কাটে নীলের কণ্ঠসুরে। নীল জায়গাটা পরিষ্কার করে তাতে মলম লাগিয়ে দিয়ে বলল
“এখন ব্যথা কমে যাবে। আপনি তো নতুন মানুষ তাই এলিসন চিনতে পারেনি। কিছুদিন থাকলেই চিনে ফেলবে।”
আমি মুখটাকে বাঁকিয়ে বললাম
“আমার থেকে বেশি চিন্তা আপনার এলিসনকে নিয়ে বুঝতে পারছি। এদিকে একটা জলজ্যান্ত মানুষ মরে যাচ্ছে সেদিকে আপনার ভ্রূক্ষেপ নেই আপনার যত চিন্তা এলিসনকে ঘিরে। আপনার মনে দয়া মায়া নেই বুঝতে পারছি। আমার প্রতি আপনার একটু খেয়াল নেই।”
নীল আমার কানের কাছে এসে বলল
“আপনার প্রতি আমার অনেক খেয়াল আছে। এখনই তার প্রমাণ আমি দিতে পারব।”
নীলের কথা শুনে আমি দেয়ালের দিকে তাকালাম। নীলের নিঃশ্বাসটা আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। উষ্ণ নিঃশ্বাসের অনুভূতিকে জাগ্রত করে বললাম
“প্রামাণ দিন তাহলে।”
এরপর নীল যা বলল তা শুনে রিতীমতো আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য।
চলবে?
#বিনি সূতোর টান
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৮
এরপর নীল যা বলল তা শুনে রিতীমতো আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য।
“আমি যখন আপনার কোমরে মলম লাগিয়েছিলাম তখন আপনার কোমরের দিকে খেয়াল করে লক্ষ্য করলাম কোমরের এক পাশে জোড়া তিল। আপনার ঘাড়েও একটা দাগ আছে কালো, হয়তো সেটা জন্মদাগ। নাক বরবার একটা তিল রয়েছে। চোখের ভ্রূ গুলো জোড়া। ঠোঁটের কোণে একটা তিল। কপালের এক পাশে কাটা দাগ। হয়তো ছোটো বেলা পড়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। লম্বায় ৫ ফিট হবেন। স্বাস্থ্যবান তবে মোটা না। চোখের লেন্স কালো কুচকুচে নয়। যদিও আমার পছন্দ কালো কুচকুচে লেন্স তবুও আপনার চোখ গুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে। চুলগুলো লম্বা না হলেও বেশ সোজা আর সিল্কি। গায়ের রঙটা কিছুটা বিবর্ণতা বিস্তার করেছে। বুঝতে পারছি ফর্সা বলব নাকি শ্যামলা। আপনার ডান পায়ের সর্বকনিষ্ঠ আঙ্গুলটির নখটা কালো হয়ে আছে। কোথায় চাপ লেগে হয়তো ব্যথা পেয়েছেন। আপনার উপরের ঠোঁটটা নীচের ঠোঁটের তুলনায় একটু সরু। সামনের দুখানা দাঁত একটু বড়ো আকৃতির। আরও কিছু কী বলার বাকি রেখেছি বলুন? যতটুকু পেরেছি আপনাকে খেয়াল করে মুখস্ত করে ফেলেছি। ”
আমার স্তব্ধতা যেন কাটছেই না। নীল কখনও আমাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে যতটুকু দেখেছে তাতে এত মনোনিবেশ ছিল আমি টেরেই পাইনি। মৃদু গলায় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম
“আচ্ছা আমাকে তো কখনও আপনি এত পর্যবেক্ষণ করে দেখেননি। তাহলে এতকিছু আপনার চোখে পড়ল কীভাবে? ”
নীল হালকা হাসলো। তার মুখ থেকে বের হওয়া বাতাস আমার ঘাড়ে এসে ঝাঁপটা দিতে লাগল। এক অন্যরকম শীতলতার অনুভূতি আমাকে গ্রাস করতে লাগল। শরীর যেন আবেগে কাঁপুনি দিচ্ছিল। মন চাচ্ছিল নীলের উষ্ঠ জোড়া চেপে ধরে বাতাস নির্গমনের পথটা বন্ধ করে দিই। তবে ইচ্ছা থাকলেও এ মুহুর্তে সে দুঃসাহস আমি দেখাতে পারব না। নীল কিছুক্ষণ হেসে উত্তর দিল
“আমার এ চোখ অপরাধীকেও খুঁজে বের করে সেখানে আপনি একজন সাধারণ মানুষ। এ তো শুধু আপনার দৈহিক বর্ণণা দিয়েছি। এ মুহুর্তে আপনার মনে কী চলছে সেটাও আমি বলতে পারব।”
নীলের শেষ কথাটা শুনে আমার বুকটা ধুক করে উঠল। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। সত্যিই কী নীল আমার মন পড়তে পারছে আর সে কী বুঝতে পেরেছে আমি তাকে পছন্দ করি, ভালোবাসার বন্ধন ডোরে বাঁধার রঙিন স্বপ্ন দেখি,তার ঘরণী হওয়ার স্বপ্নের বীজ বুনি। আমি নীলকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম
“বলুন তো আমি মনে মনে কী ভাবছি। আমি মেয়েটা কেমন?”
নীল আমার একদম সন্নিকটে এসে বলতে লাগল
“আপনার বয়স অনুপাতে বুদ্ধির ব্যাস্তানুপাত ঘটেছে। মানে বয়স বাড়লেও বুদ্ধি কমেছে। ত্যাড়ামির একটা বিষয় আপনার মধ্যে সবসময় লক্ষ্য করা যায়। এটার মূল কারণ হচ্ছে আপনার মা না থাকায় আপনার বাবা আপনাকে সবসময় অধিক আদর করেছে যার দরুণ আপনি একটু আদরে বাদর হয়ে গিয়েছেন। খুবই অগুছালো একটা মেয়ে। আপনি কথাও গুছিয়ে বলতে জানেন না। আকাশ কুসুম চিন্তা বেশি করেন। নিজের ব্যাপারে অনেক গাফেল। আমার দৃষ্টি বলে আপনি জীবনে দুবার প্রেমে পড়েছেন। প্রথমবার প্রেমে আপনি নিজেকে খুব একটা গুছিয়ে উঠতে পারেননি তাই আপনার প্রিয় মানুষটাকে কথাটা বলতে পারেননি। আর দ্বিতীয় প্রেমে আপনি বেশ দ্বিধাদ্বন্দে আছেন কী করবেন। একবার মনে হচ্ছে এগুবেন আরেকবার মনে হচ্ছে পিছুবেন। বলুন বিষয়গুলো সত্যি কি’না।”
নীল কথা গুলো বলে আমার থেকে একটু দূরে সরে বসলো। আর আমি চুপ হয়ে বসে আছি। শুধু ভাবছি এটা কী করে সম্ভব? নীল তো কোনো জ্যোতিষি না। তাহলে এত নিখুঁত ভাবে মন কী করে পড়ল? এস এস সিতে পড়ার সময় একজনকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। আবেগের বয়স ভালোলাগাটা আবেগকে ঘিরেই ছিল তবে সে আবেগটাকে বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারিনি। ইন্টারে উঠার পরেই সব ভুলে যাই। সে ছেলের নাম ছিল উর্ব। জানি না ছেলেটা কোথায় আছে। শুধু জানি তার বাবার চাকুরির সূত্রে তারা ট্রান্সফার নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। তাই তার প্রতি থাকা অব্যক্ত আবেগগুলো কখনও তাকে বলা হয়নি। আর নীলের বিষয় নিয়ে আমি সত্যিই কনফিউশানে আছি। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। একবার মনে হচ্ছে নীলকে সব বলে দিই আবার যেন বলতে গেলে অচেনা একটা বাঁধা এসে আঁকড়ে ধরে। আমি নীলের দিকে তাকলাম। নীল মুচকি মুচকি হেসে বলল
“এখন আমি জানি আপনি কী ভাবছেন। এখন আপনি ভাবছেন আমি কোনো জ্যোতিষি কি’না। আমি আপনার এত গোপন তথ্য কী করে জানলাম। কী করে আপনার মন এত সহজে পড়তে পারলাম।”
আমি নীলের কথা শুনে চমকে গেলাম। এই তো দেখি রিতীমতো আমি যা ভাবছি তাই বলে দিচ্ছে। আমি বড়ো চোখ করে নীলের দিকে তাকিয়ে বললাম
“আপনি কী মানুষ নাকি কোনো জ্বিন! কেন জানি না এখন আপনাকে মানুষ মনে হচ্ছে না। আপনি আন্দাজে কথাগুলো বললে এতটা পারফেক্ট ভাবে বলতে পারতেন না। তবে আমিও তো আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলি নি। আর আমার কোনো প্রিয় কারও সাথে আপনার পরিচয় নেই বাবা আর নিরা ছাড়া। বাবা আর নিরা তো আমার ব্যাপারে এতকিছু জানে না। তাহলে আপনি কী করে জানলেন? আপনি কী কোনো জাদু জানেন?”
নীল মুচকি হেসে বলল
“এটা তো আমার ক্রেডিট। আমি কেন আপনাকে বলব?তাহলে তো আপনিও শিখে যাবেন আর আমার মন পড়ে ফেলবেন। আমি তো তা হতে দিতে পারি না।”
আমি নিঃশব্দ কয়েকটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। তারপর পুনরায় বললাম
“আচ্ছা আপনি বলেন তো আমি দ্বিতীয় যার প্রেমে পড়েছি সে কে? যদি সেটা বলতে পারেন তাহলে আমি মেনে নিব এটা সত্যিই আপনার ক্রেডিট কারও মন পড়তে পারা। আর যদি বলতে না পারেন তাহলে ভাববো আপনি আন্দাজে ঢিল মেরেছেন। আর সেই ঢিল মেরে আমাকে কপোকাত করেছেন।”
নীল থুতনীর নীচে হাত দিয়ে বলে উঠল
“আমি যদি তার নাম এ মুহুর্তে বলি সবচেয়ে বেশি বিব্রত হবেন আপনি। তাই নাম বলা থেকে বিরত থাকলাম। কারণ আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে আমার একদম ইচ্ছা করছে না। এতে আপনি লজ্জায়ও পড়বেন। তবে একটা ক্লু আপনাকে দিচ্ছি। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারায় যথেষ্ঠ। আপনি বর্তমানে যাকে পছন্দ করেন তার সাথে আপনার বয়সের বিস্তর অনেক তফাত। আশাকরি আমার আর তার নাম বলার প্রয়োজন পড়বে না।”
নীলের কথা শুনে আমি চুপসে গেলাম। তার মানে নীল বুঝতে পেরেছে আমি তাকে পছন্দ করি। আমি নীলের কথা শুনে হালকা গলায় বললাম
“আমি কী দ্বিতীয়জনের প্রেমে পড়ে ভুল করেছি কোনো?”
নীল অকোপটে জবাব দিল
“ভুল, ঠিক বিবেচনা করে প্রেমে পড়ে না কেউ। প্রেমটা মনে হয় অলৌকিক। কখন মনে এসে ঝেঁকে বসে বলা যায় না। তবে আমি বলব সময়ের উপর ছেড়ে দিন। সময় হয়তো আপনাকে সঠিক উত্তর দিয়ে দিবে। ”
“মাঝে মাঝে তো সময়ের অপেক্ষা করার মতো সহ্য শক্তি সবার থাকে না।”
“সহ্যশক্তি গড়ে নিলেই হয়।”
কথাটা বলে নীল রুম থেকে বের হলো। আমি বুঝতে পারছি না নীল কী করে এতকিছু জানল। কী করে আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলো নির্দ্বিধায় বলে দিল। কিন্তু শেষদিকে নীল ইতিবাচক ইঙ্গিত দিল নাকি নেতিবাচক সেটাই বুঝতে পারছি না। এত বুঝার চেষ্টা করছিও না। এর মধ্যেই লক্ষ্য করলাম নীলের বিড়াল এলিসন আমার রুমে আসছে। বিছানায় লাফ দিয়ে উঠে কী যেন কামড়াচ্ছে। আমি দ্রূত সেদিকে নজর দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে কাঁপতে লাগলাম।
চলবে?