বিনি সুতোর টান,পর্ব-৩০ শেষ পর্ব

1
2376

#বিনি সুতোর টান,পর্ব-৩০ শেষ পর্ব
#শারমিন আঁচল নিপা

শুধু চিন্তা করতে লাগলাম আমি কি নীলকে হারিয়ে ফেললাম? ক্রমশ আমার শরীর খারাপ করতে লাগল। মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। গা গুলিয়ে বমি আসছে। চোখে ঝাঁপসা দেখছি। আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেল। বুঝতে পারছিলাম আমার নীল আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। বিয়োগ বেদনা আমাকে গ্রাস করতে লাগল। নিজেকে বেশিক্ষণ স্থির রাখতে পারলাম না। লক্ষ্য করলাম দেয়ালটা উল্টে যেতে লাগল৷ ঘরটা ঘুরতে লাগল। চোখ বন্ধ করতেই চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। আর আমি তলিয়ে গেলাম অজানা এক দেশে।

তীব্র শীত করছে। শীতে হাত পা কনকন করে কাঁপছে। গায়ের উপর একটা চাদর দেওয়া অনুভব করলাম। চাদরটা টেনে মুচড়ে শরীরে দিতে লাগলাম। কেউ একজন সজোরে বলে উঠল রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। শরীরের ট্যাম্পারেচার একটু বেশি। এ রুমের এসিটা বন্ধ করে ম্যাডামকে ডাক দিতে হবে। রোগীর অভিভাবক বাহিরে আছেন তাদেরকে জানান। আমি শুধু কান দিয়ে শ্রবণ করছি তবে চোখ মেলে বা ঠোঁট প্রশস্ত করে কিছু বলার শক্তি পাচ্ছি না।

রুমটা একটু উষ্ণ হতে লাগল। আমার হাত, পা গরম হলো কিছু। তবুও হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। কেউ একজন আমার হাতটা টেনে ধরে প্রেসার মাপল। দু গালে হালকা থাপ্পর দিল। তবুও আমি চোখ খোলার শক্তি পেলাম না। জানি না তারপর কী হলো। মনে করতেও পারছি না। বুঝতে পারলাম আমি আবারও কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি।

শুঁ শুঁ করে বাতাস ঢুকছে কানে। শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মাথায় চিন্তা জাগছে আমি বেঁচে আছি নাকি কোনো স্বপ্নের রাজ্যে ডুবে আছি। অনেকটা হালকা লাগছে শরীর। অনেকটা উষ্ণতা অনুভব করলাম। শরীরটায় একটু শক্তিও পাচ্ছে। হাত টা নাড়াতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম হাতে স্যালাইন দেওয়া। বেশ কসরত করে চোখ দুটো টেনে খুললাম। আশেপাশে চোখ বুলালাম। রুমের ছাদে ফ্যান চলছে সেটাই চক্ষুগোচর হলো শুধু। কিছু না ভেবে পুনরায় চোখ বন্ধ করলাম।

মৃদু কণ্ঠ কানে আসছে। জানি না কণ্ঠটা কার? তবে অনুধাবন করতে পারছি কেউ আমার পাশে বসে আছে। আমি চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি না। নীলকে শুধু চোখে ভাসছে। তাকে নিয়ে সুখময় অধ্যায় কল্পনা করছি। কারো হাতের স্পর্শ কপালে অনুভব করলাম। চোখটা সাহস করে মেলে তাকালাম। ঝাঁপসা চোখে চেনা সে মুখ অবয়ব ভেসে উঠল। এই তো আমার নীল। আমি আরও বড়ো চোখে তাকালাম। ঝাঁপসা মুখটা স্পষ্ট হতে শুরু করল। নীল আমার পাশে বসা। আমি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম। নীলের হাতটা নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি পড়ছে। ভাঙা গলায় বলে উঠলাম

“আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া নিজেকে বিষন্ন ছন্নছাড়া লাগে। আমি চাই না আপনি অন্য কারও হোন। আমি চাই দিনশেষে আপনি আমার থাকুন। আমি শুধু আপনার মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে চাই। আমি কি আপনাকে হারিয়ে ফেললাম? আপনি কি আমায় ছেড়ে মিহির কাছে চলে যাবেন? প্রথমবার অবিশ্বাস করে আমি চরম ভুল করেছি। তাই দ্বিতীয় বার অবিশ্বাস করে আমি আবারও সেই একই ভুল করতে পারব না। আমি জানি মিহির সাথে আপনার কিছু নেই। তবুও এ অবোধ মনে হাজারও চিন্তার ডানা মেলছে। দুশ্চিন্তা এসে ঘিরে ধরছে। নিজেকে সামলাতে না পেরে বারবার তলিয়ে যাচ্ছি। কী হচ্ছে জানি না। মনে হয় আপনাকে ছাড়া আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাব।”

কথাগুলো বলে পাশ ফিরে তাকিয়ে আরেকটি মুখ লক্ষ্য করলাম। চিনতে অসুবিধা হলো না। মিহি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মিহিকে দেখে আমার বুকের ভেতরটা ছেদ করে উঠল। মনে হচ্ছে গরম তেলে কেউ শীতল পানি দিয়েছে। যার দরুণ যন্ত্রণার লাভা এদিক ওদিক বেসামাল ভাবে ছিটকে পড়ছে। আমি কিছু বলে উঠার আগেই মিহি বলে উঠল

“আঁচল আমি তোমার নীলকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে আসিনি। আমি একজন সিনগেল মাদার। আমার বাচ্চাটাকে আমার হাসবেন্ড তার কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার বাচ্চা। জীবনে হীরা ফেলে কাঁচকে আলিঙ্গন করেছিলাম। তাতে আমার এখন কোনো অনুতাপ নেই। তবে বাচ্চাটাকে ছাড়া আমি একদম অসহায়। বাচ্চাটাকে নিজের করে পাওয়ার জন্যই নীলের কাছে আসা। আমাদের মাঝে যা ছিল সেটা অতীত। বর্তমানে আমাদের মাঝে কিছু নেই। যেটুকু আছে সেটা কেবল সৌজন্যতা। তুমি চিন্তা করো না। নীল বেশ দায়িত্বশীল । একবার যেহেতু তোমার দায়িত্ব নিবে বলে কথা দিয়েছে সুতরাং সে তোমার হাত ছাড়বে না। আজ তিনদিন যাবত তুমি অসুস্থ। আমি প্রতিদিন তোমাকে দেখে যাচ্ছি। তোমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছি কেবল মাত্র এ কথাগুলো বলার জন্য। আজকে এটুকু বলে শান্তি লাগছে। এ মাসের ১৭ তারিখ আমি আমেরিকা চলে যাব আমার বাচ্চাকে নিয়ে। তোমরা ভালো থেকো। নীলের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ থাকবে না তবে তোমাকে আমি ঠিকানা নম্বর দিয়ে যাব তুমি চাইলে যোগাযোগ করতে পারো। তোমাদের জন্য শুভকামনা রইল।”

মিহি কথা গুলো বলে হাসপাতালের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। আমি চুপ হয়ে নীলের দিকে তাকলাম। নীলের বিষন্ন মুখটা বলে দিচ্ছে মিহির চলে যাওয়াতে সে খুশি না। মিহির প্রতি লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা এখনও তার মুখে ফুটে উঠেছে। আমি নীলের হাতটা ধরে বলে উঠলাম

“আপনি মিহিকে অনেক ভালোবাসেন তাই না? মিহির চলে যাওয়াটায় আপনি কষ্ট পাচ্ছেন তাই তো?”

নীল আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল

“সকল ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। আমি মিহিকে ভালোবাসতাম। এখন বাসি কি’না জানি না। মিহির প্রতি আমার যেটা কাজ করে সেটা কেবল মায়া। আমি আপনাকে নিয়ে আমার শেষ জীবনটা পার করতে চাই। আপনার সাথে আমি নতুন করে রঙিন স্বপ্ন বুনতে চাই। কারও জায়গায় কাউকে দেওয়া যায় না। মিহির জায়গাটায় একটা বড়ো ক্ষত হয়ে আছে এখনও। তবে আমি আপনার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সে ক্ষতটা সারিয়ে তুলতে চাই। আমার পথ চলার সাথী হবেন তো? আমাকে আপনার পাশে হাঁটার সুযোগ দিবেন তো? আপনার থেকে একটু দূরে গিয়েছিলাম আর এত নাটক করেছিলাম আপনাকে শুধু বুঝানোর জন্য। আমি আপনাকে যতটা না ভালোবাসি তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস আর সম্মান করি। ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও বিশ্বাস একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। একটা সময় বিশ্বাসের জোরেই মানুষ বেঁচে থাকে। মিহির প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল অসীম সে সাথে বিশ্বাসও। একটা সময় পর মিহি বিশ্বাসটা ভেঙে দিয়েছে। যার দরুণ এখন ভালোবাসা কাজ করলেও বিশ্বাস না থাকার কারণে আমি মিহিকে মেনে নিতে পারিনি। আপনি দ্রূত সুস্থ হোন। মান অভিমানের পালা শেষ করে নাহয় আমরা এক হব।”

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না গড় গড় করে চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল৷ নিজেকে সামলে নেওয়ার হাজার চেষ্টা করেও পারলাম না। জোরে কেঁদে দিলাম। নীলের হাতটা বুকে চেপে ধরলাম। এ ভরসার হাতটা এভাবেই আমি বুকে আগলে রাখতে চাই।

সময় পার হলো। দিনটা বেশ শুভ্র। নিজের মনটাও আজ প্রফুল্ল। আমার বিয়ে বলে কথা। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার সাধনার মানুষটা আজকে আমার হবে। মিহির সাথে আজকে কথা হয়েছে সেও দেশের বাইরে চলে গিয়েছে। জীবন মানেই সরল রেখা বক্ররেখা। আর সে রেখার সূতা ধরেই তৈরী হয় এক টান যাকে বলে বিনি সুতোর টান। সে সুতোর এক কোণে আমি আরেক কোণে নীল। কেউ হারিয়ে যেতে চাইলে সুতোর টানে ঠিকেই আবার একত্র হব। জীবন মানে বৈচিত্র্য অধ্যায় আর সে অধ্যায়ের পরিক্রমায় বিচিত্র রঙ ধারণ করে আমাদের এ জীবন। এখানে হয় মিলন, হয় বিচ্ছেদ। সর্বশেষ যা থাকে তা হলো টান আর সেটাকেই আমি বলি বিনি সুতোর টান।

আঁচল ঘটে যাওয়া কাহিনিটা বর্ণণা করে হাসছে। মানসিক হাসপাতালের এক কোণে বসে আছে সে। ডাক্তার শাহেনুর চুপ করে একটা পাগলের প্রলাপ শুনছে। আঁচলকে মোটেও এখন তার পাগল মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এক উন্মাদ প্রেমিকা তার ভালোবাসার টানটা এখনও জাগ্রত করে প্রিয়তম এর অপেক্ষা করছে। মেয়েটা শুধু বউ সেজে বসে থাকে। আর নীলের অপেক্ষা করে। আচ্ছা নীল কী আসবে?
ডাক্তার শাহেনুর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। অতৃপ্ত ভালোবাসার সুর গুলো যেন বিষাদময় হয়। এ বিষাদময় কাটিয়ে উঠা ভীষণ কঠিন। শত চড়াই উতরাই পার হয়েও কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।

সেদিন আঁচল লাল টুকটুকে বউ সেজেছিল। নীল সেজেছে বর। তাদের মিলনের সন্ধিক্ষণ কেবল কয়েক ক্ষণের ফারাক। বেশ ধুমধামে তাদের বিয়ে হয়। নীলের মায়ের খুশির অন্ত নেই। আঁচল বউ সেজে সোফায় বসে আছে। নীল কানে কানে এসে মৃদু সুরে বলল
“আপনাকে বেশ সুন্দর লাগছে। ”
আঁচল মৃদু হেসে উত্তর দিল
“দেখতে হবে না কার বউ”

নীল মুচকি হেসে রুমের দিকে এগুলো। ড্রইং রুমটায় আত্মীয় স্বজনে ভরপুর। সবাই কিছুক্ষণ পর পর বউ দেখছে। মনে হচ্ছে বউ দেখার হিরিক পড়েছে। এ দিকে নীলের অস্থিরতা কখন সে আঁচলকে একটু নিরিবিলি পাবে, সুখ দুঃখের গল্প কষবে তার সাথে। শূন্য বুকটা তাকে জড়িয়ে ধরে পূর্ণ করবে। রুম থেকে বারবার উঁকি দিয়ে কেবল আঁচলের মুখখানায় দেখার চেষ্টা করছিল৷ এত দেখছে তবুও যেন প্রেম তৃষ্ণা মিটছে না।

আস্তে আস্তে সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীলের মা আঁচলকে নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকল। নিজের হাত থেকে চুড়ি খুলে আঁচলের হাত ধরে চুড়ি পরাতে নিল। সাথে সাথে সমস্ত বাড়ি অন্ধকার হয়ে গেল। এ অসময়ে কারেন্ট কেন গেল কারও বোধগম্য হচ্ছে না। হুট করে নীলের মা গাল বরাবর আচমকা থাপ্পর খেল। নীলের মা বেশ জোরে চেঁচিয়ে বলল

“আঁচল আমাকে থাপ্পর মারলে কেন?”

সাথে সাথে আঁচলের উত্তর আসলো

“মা থাপ্পর তো আপনি মারলেন আমি তো না!”

বাড়ি সহ সমস্ত লোক কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেল। এমন সময় সবাই মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে ঘটনায় প্রবেশ করল। নীলও আসলো দ্রূত। সবার চোখ কাপালে উঠল। নীল ঢুক গিলতে পারছিল না৷ হাত পা তার কাঁপতে লাগল। নীলের মায়ের পেটে আঁচল ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে৷ আর সে ছুরি হাতে নিয়ে আঁচল হতভম্ব হয়ে বসে আছে। নীলের মা মেঝেতে ছটফট করছে। নীল কিছু বুঝে উঠার আগেই বাকি লোকজন নীলের মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল আর আঁচলকে পুলিশের কাছে নিয়ে গেল।

শত চেষ্টার পরও নীলের মাকে বাঁচানো গেল না। এদিকে নীল তার মাকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। আঁচল বারবার বলতে চেয়েছে সে নির্দোষ তবে কেউ বিশ্বাস করেনি৷ কারণ সকল প্রমাণ আঁচলের বিরুদ্ধে। নীল নিজে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আঁচলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। কারণ সত্যটা আবেগময় গল্পের কাছে হার মানে। আদালত আঁচলকে মৃত্যুদন্ড দিল। মৃত্যুদন্ড দেওয়ার সাথে সাথে নীল তা শুনে ঢলে পড়ল। দ্রূত বেগে সবাই এগিয়ে গেল। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করল। এত বড়ো ধাক্কা সামলাতে পারেনি সে। সেদিন নীলের মৃত্যুর খবর জানার পর আঁচল তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

তাহলে কী নীলের মাকে আঁচল খুন করেছিল? নাহ সেটাও সমাধান হয় এক মাসের মাথায়। নীলের মাকে খুন করেছে নীলের খালাত বোন টয়া। যে কিনা পুরো গল্পের একটা কোণ জুড়েও ছিল না। তবে শেষটা যেন সে এই রচনা করে দিল। নীলকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসত সে। আর সে ভালোবাসার জন্যই শেষটা রচনা করেছিল কৌশলে। বিদ্যুৎ লাইনটা কেটে দিল। নীলের মা যখন আঁচলের হাতে চুড়ি পারাতে নিতে হাতটা ধরল। ঠিক তখন তার থেকে হাত ছুটিয়ে টয়া নীলের মাকে এক চড় কষাল আর আচঁলকেও। স্বাভাবিক ভাবে সে ঘরে ছিল শুধু দুজন তাই দুজনের কথোপকথন ছিল তেমন। তারা তো বুঝতেও পারেনি যে তাদের মাঝে তৃতীয় কেউ এমন করেছে। যখন বুঝে উঠে তখন টয়া নীলের মায়ের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। অন্ধকার হওয়ার দরুণ বিষয়টা আঁচলের চোখের আড়ালে চলে যায়। তবে নীলের মায়ের আচমকা চেঁচানোতে সে একটু উঠে বসে৷ এর মধ্যেই সবাই যখন রুমের দিকে এগুতে লাগল। মৃদু আলো রুমে প্রবেশ করতেই আঁচল লক্ষ্য করল নীলের মা পড়ে আছে মেঝেতে এবং তার পেটে ছুরি। সে নীলের মাকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরি বের করতে নিয়ে নিজেই ফেঁসে গেল মিথ্যা খুনের জালে৷ আর সেখান থেকে শত চেষ্টা করেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারল না। ফলস্বরূপ নীলের সাক্ষীর ভিত্তিতে তার ফাঁসির রায় হলো।

এদিকে নীলের মৃত্যুর পর টয়া ভেঙে পড়ে। নিজের করে যাওয়া অন্যায় পুলিশের কাছে স্বীকার করে। তার শাস্তি হয় মৃত্যুদন্ড। তবে এদিকে সদ্য বিবাহিত দুটি প্রাণ আলাদা হয়ে যায় মিথ্যা অন্যায়ের কড়ালগ্রাসে।

সাত বছর কেটে গেল। আজও আঁচল নীলের অপেক্ষায়। পাগলিটা মানতেই চায় না তার নীল ওপারে চলে গেছে। আর নীল জানতেও পারল না তার ভালোবাসার প্রিয়তম তার মায়ের খুনী না।

একটা অতৃপ্ত চাওয়া, একটু অবিশ্বাস সব যেন তছনছ করে দিল। নীল ঠিকেই বলেছিল ভালোবাসার ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সেটা চলে গেলে ভালোবাসা টিকে না। আঁচল আর নীলের গল্পের শেষটায় একে অপরের প্রতি বিশ্বাসটায় হারিয়ে গিয়েছিল যার দরুণ হারিয়ে যায় একটা পূর্ণতা পাওয়া অপূর্ণ ভালোবাসার গল্প।

ডাক্তার শাহেনুর ভাবছে আঁচলের মৃত্যুর পর কী তারা এক হবে? নীল হয়তো ওপারে এক বুক বিশ্বাস নিয়ে বসে আছে আঁচল এসে তার ভুল ভাঙাবে আচঁল প্রমাণ করবে সে খুনী না। আর পাগলিটাও হয়তো দিনকে দিন নীলের অপেক্ষা করতে করতে নীলের কাছেই চলে যাবে। হয়তো তাদের না হওয়া সংসারটা পরকালে হবে। কারণ তাদের মাঝে এক অদ্ভুত টান আছে যাকে আঁচল নাম দিয়েছে বিনি সুতোর টান।

সমাপ্ত

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here