বিনি সুতোর টান,পর্ব-৯,১০

0
1814

#বিনি সুতোর টান,পর্ব-৯,১০
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৯

তবে উনি আমার কাছে কী চায় সেটাই ভাবতে লাগলাম। অনেকক্ষণ চুপচাপ দুজন দাঁড়িয়ে একে অপরকে দর্শন করতে লাগলাম। দর্শনের এক পর্যায়ে আমি আমতা আমতা করে বললাম

“আপনি কে? আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না। আমার কাছে কী চান?”

তিনি তার মুখটা প্রশস্ত করে হেসে বললেন

“আমি নুরা। আপনার পা থেকে নখ পর্যন্ত কেয়ার করার দায়িত্ব আমার। আমাকে নীল সাহেব পাঠিয়েছেন। আমাকে এক মাস আপনার পরিচর্যা করতে হবে। আমি কী ভেতরে আসতে পারি ম্যাডাম।”

আমি কিছুটা অবাক হলাম মেয়েটার কথা শুনে। নীল আমার জন্য একজনকে পাঠিয়েছে ভাবতেই শিরধারায় হিরহির করে যেন শীতল বাতাস বইতে লাগল। আমি স্তম্ভিত কণ্ঠে উত্তর দিলাম

“হ্যাঁ অবশ্যই ভেতরে আসুন। আমার রুমে গিয়ে বসবেন নাকি ড্রইং রুমে?”

তিনি আরেকটু হেসে উত্তর দিলেন

“ম্যাডাম আপনার রুমে গেলেই ভালো হত। আমি কিছু এক্সারসাইজ করব আপনার পায়ে আর শরীর ম্যাসেজ করব। আপনার পুরো বডির পরিচর্যার দায়িত্ব আমার। মোট কথা আপনার সকল ধরণের বিউটি টিপস আমি দিব। আমাকে এক মাসের জন্য আপনার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। আর এ একমাসে আপনাকে আমার পরিবর্তন করতে হবে। আপনার পুরো লুক পরিবর্তন করে দেখাতে হবে।”

আমি কিছুটা বিস্মিত। উনি আমার কী পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন সেটা আমার মোটেও মোটা মাথায় ঢুকছে না আবার বোধগম্যও হচ্ছে না। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি সূচক বাক্য নেড়ে গেলাম। আর হালকা হেসে বললাম

“আসুন আমার সাথে।”

বলেই উনাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। উনি উনার ব্যাগ থেকে চিরুনি বের করে আমার মাথাটা আঁচরাতে লাগলেন। আঁচড়ানোর এক পর্যায়ে বলে উঠলেন

“আপনি কি নীল সাহেবের স্ত্রী? আপনাদের বিয়ের কত বছর হলো। নীল সাহেব মনে হয় আপনার ব্যাপারে অনেক কেয়ারিং। ”

উনার কথা শুনে আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলাম। কী উত্তর দিব বুঝে উঠতে পারছি না। নিজেকে নীলের বউ ভাবতে মন্দ লাগছে না। তবে মন্দ না লাগলেও নিজেকে নীলের বউ ভাবার মতো দুঃসাহস করাও উচিত হচ্ছে না। আমি কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলাম। বলা চলে ভাবনায় বিমূর্ত হয়ে গেলাম। আমাকে তিনি আবারও ডাক দিয়ে বললেন

“ম্যাডাম কী কিছু ভাবছেন?”

উনার কথায় যেন সম্ভিত ফিরে পেলাম। মৃদু গলায় বললাম

“আমি নীল সাহেবের বেস্ট ফ্রেন্ড হই। উনি অবিবাহিত।”

উনি এবার আরেকটু হাসলেন। আর আমার কথায় তাল মিলিয়ে বললেন

“নীল সাহেবের হবু বউ আপনি তাই না ম্যাডাম? পায়ের জন্য হয়তো বিয়েটা পিছিয়ে গিয়েছে। আচ্ছা আপনাদের কী সম্পর্কের বিয়ে নাকি পারিবারিকভাবে বিয়ে?”

আমি যেন উনার কথায় আকাশ থেকে পড়ছি মনে হচ্ছে। একেক কথা বলেই চলেছেন আর আমার আবেগী মন যেন আরও বেশি আবেগী হচ্ছে। আবেগের বহুরুপিতায় মনটা কখনও ছন্নছাড়া হচ্ছে আবার কখনও নতুন রুপে সজ্জিত হচ্ছে। এ যেন থরে থরে সাজানো আবেগের দেয়াল। একটু নড়লেই পুরো শরীরটায় প্রবাহিত হয়ে যায় এক অনুভূতির কম্পন। আমি কিছুটা নীরব গলায় উত্তর দিলাম

“আমাদের কেনো বিয়ে না। আপনি অযথায় যা তা ভাবছেন। আমরা ভালো ফ্রেন্ড। এর বাইরে কিছু না।”

তিনি বেশ নম্র গলায় বললেন

“সরি ম্যাডাম। আমি একটু বেশি কথা বলি। তাই কথায় কথায় কী বলে ফেলি বুঝতে পারি না। আপনি মনে কিছু নিবেন না।”

“আমি মনে কিছু নিই নি। আচ্ছা নীল সাহেব আপনাকে কী বলেছে?”

“বলেছে আপনার স্কিন থেকে শুরু করে প্রতিটা বিষয় যেন নজরদারি করা হয়। আমি একজন বিউটি এক্সপার্ট আপনাকে সুন্দর রূপ দেওয়ায় আমার কাজ। আমি চাচ্ছিলাম আপনার চুল গুলো একটু কাটতে। এতে আপনার চেহারাটা আরও ফুটে উঠবে।”

আমি যতই উনার কথা শুনছিলাম ততই মুগ্ধতা যেন আমাকে ঘিরে ধরছিল। সবিস্তারের সন্নিবেশন কোনো উপঢৌকণ যেন আমার জন্য নীল সাজিয়ে এনেছে তাই মনে হচ্ছে। আমার সমস্ত কিছুর দায়িত্ব উনি কেন নিয়েছেন জানি না। আমি কোনো উত্তর দেওয়ার ও অবকাশ পাচ্ছি না। কিছুটা বিলম্ব করে উত্তর দিলাম

“আপনার যা ভালো মনে হয় করুন। নীল সাহেবের ভালো লাগলেই হলো।”

জানি না শেষের কথাটা কেন বলেছি তবে মনে হচ্ছে নীলের ভালো লাগায় যেন আমার ভালো লাগা। আমার কথা শুনে তিনি আরও হেসে বললেন

“ম্যাডাম আমি বুঝতে পেরেছি সব। আমার মনে হয় আপনি নীল সাহেবকে ভালোবাসেন।”

“ভালোবাসা তো বলে আসে না। অনুভূতিতে চলে আসলে সেটা থেকে নিজেকে দূরে রাখাও যায় না। তবে আমি বলব না ভালোবাসি আমি বলব তাকে আমার অনেক ভালো লাগে। তার ভালো লাগায় আমার ভালো লাগার উর্ধ্বে চলে যায়। আপনি না চুল কাটতে চেয়েছিলেন? কাটুন। দয়াকরে আমাকে এসব প্রশ্ন করে দুটানায় ফেলবেন না।”

তিনি আর কথা বাড়ালেন না। আমার চুল কেটে দিলেন মুখে ফেসিয়াল করে দিলেন। গোসল ধোয়ার মতো পরিস্থিতিতে আমি নেই তাই সারা শরীর মুছে নিলাম। কাপড়টা পাল্টে নীল রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পরে নিলাম। গুছগাছ করতে করতে বেলা দুটো বেজে গেল। নুরা আমাকে প্রতিদিন দু ঘন্টা সময় দিবে বলেছে। তবে মেয়েটা কথা বলতে বলতে চার ঘন্টা সময় পার করে ফেলেছে। দুপুরে খেয়ে যেতে আন্টি বললেও নুরা রাজি হয়নি তাই না খেয়েই চলে গিয়েছে। মাজেদা গিয়েছে আমাদের বাসায় কাজ করতে। কয়েক বাসায় কাজ করলেও তার সময় নিয়ে কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না৷ যে বাসায় ঢুকে কথার বহর খুঁজে পেলে সে বাসায় অনায়েসে সারাদিন কাটিয়ে দেয়। আর সেজন্য প্রতিবেলা আমাদের বাসায় বাবার বকা খেতে হয়। কারণ প্রতিদিন তিনি কাজের থেকে বেশি অকাজ করে সময় পার করবেন।

আজকে আয়নাতে দেখে নিজেকে একটু অন্যরকম লাগছে। আয়নায় আমার পেছনে নীলকে কল্পনা করতে বেশ ভালো লাগছে। মন চাচ্ছে এখনই কল্পনার জগতে একটা ডুব দিই তবে সে ডুব আর দিতে পারলাম না। কারও কাশির শব্দ কানে আসলো। পরক্ষণেই গম্ভীর গলার শব্দ। এ আর কেউ না নীলের গলা। আমার বুঝতে বেশিক্ষণ সময় লাগল না। তিনি বলে উঠলেন

“আমি কি আসতে পারি?”

“জি আসুন। আপনি কি অফিস থেকে চলে এসেছেন?”

“এ সময়টায় আমি বাসায় থাকি। সবার সাথে একসাথে খেয়ে অভ্যাস আমার। খাওয়ার সময় হয়েছে সবাই টেবিলে বসেছে। আপনি কি টেবিলে বসে খেতে পারবেন নাকি রুমে নিয়ে আসব খাবার?”

“আমি টেবিলে বসেই খেতে পারব। আচ্ছা আপনি ঐ মেয়েটাকে পাঠিয়েছেন কেন? আমার পুরো লুক পরিবর্তনের কী দরকার?”

“আমার মনে হয়েছে আপনাকে একটু মডিফাই করলে আপনাকে দেখতে ভালো লাগবে। আর নুরা খুব ভালো মেয়ে। সে দেখবেন আপনাকে একদম গুছিয়ে ফেলেছে। মেয়েদের একটু গুছালো থাকায় ভালো। আপনাকে আজকে অন্য দিনের তুলনায় ভালো লাগছে। নীল রঙ আমার খুব পছন্দ। আপনাকে নীল রঙে বেশ মানিয়েছে। তবে কলো টিপে আর চেখ ভর্তি কাজলে আরো মানাবে। ”

আমি নীলের কথা শুনে আরও বেশি দুর্বলতা অনুভব করলাম তার প্রতি। ভাবতে লাগলাম সে ও কী আমায় ভালোবাসে যতটা আমি বাসি। সে ও কী আমায় অনুভব করে যতটা আমি করি। সব মিলিয়ে প্রেমের রসাতলে তলিয়ে যেতে নিলাম। নীল সাহেব হুইল চেয়ার ধরে টেনে যেন সে রসাতল থেকে বের করে আমাকে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে গেলেন।

খুব সাবলীল ভাবে খাওয়া শেষ করলাম। নীল সাহেবেই আমাকে রুমে দিয়ে গেলেন। কিছু না বলেই উনি রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগলেন৷ আমি পিছু ডেকে বললাম

“আচ্ছা আপনি আমার এত কেয়ার নিচ্ছেন কেন?”

উত্তরে তিনি যা বললেন তা শুনে আমার বুকের ভেতরটা দ্বিগুণ বেগে স্পন্দিত হতে লাগল। সে সাথে এক রাশ হতাশা নাকি ভালোবাসা ঘিরে ধরল বুঝার উপক্রম পাচ্ছি না।

চলবে?

#বিনি সুতোর টান
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১০

“মা বলল না আপনি আমার বোনের মতো। এদিকে আবার আপনি আমার ভালো ফ্রেন্ড। দুটো সম্পর্ক আপনার আর আমার মধ্যে তাই আপনার যত্ন তো নেওয়ায় যায়। ভাই হিসেবে বোনের যত্ন নিচ্ছি আবার ফ্রেন্ড হিসেবে ফ্রেন্ডের যত্ন নিচ্ছি। যত্ন নিতে এর চেয়ে বিশেষ কোনো কারণের প্রয়োজন হয় না। আপনি রেস্ট নিন আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে একটু। একটা মামলার রায় দিতে হবে।”

আমি কথাগুলো শুনে মুখটাকে অনেকটা বকের ঠোঁটের মতো চিকন করে ফেললাম। মন ভাঙার তীব্র যন্ত্রণা ভেতরে বহমান হচ্ছে। হালকা গলায় বললাম

“রায় কী দিবেন মৃত্যুদন্ড নাকি যাবজ্জীবন। ”

তিনি আমার বোকা প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ খিলখিল করে হাসলেন। তারপর হাসতে হাসতে বললেন

“মামলায় রায় কী সব সময় মৃত্যুদন্ড আর যাবজ্জীবনেই হয়। রায় ছাড়াও আরও অনেক কাজ আছে। আপনি বিশ্রাম করুন। আচ্ছা আপনি যেন কোন সাবজেক্টে পড়েন?”

আমি নীচু গলায় জবাব দিলাম

“পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে।”

“অনেক ভালো সাবজেক্ট মাশআল্লাহ । মন দিয়ে পড়ুন জীবনে কিছু একটা করতে পারবেন। ”

“জি পড়ব। আচ্ছা আপনি বিয়ে করবেন না?”

তিনি আবারও হাসি টেনে উত্তর দিলেন

“সময় হলে করব। সময় তো চলে যায় নি। বিয়ের সময় হলে এমনিতেই বিয়ে করব। ”

“বয়স তো আপনার কম হলো না। আন্টি লিনার জন্য আপনাকে বলতে বলেছে। মেয়েটা নাকি অনেক ভালো। তাকে বিয়ে করে ফেলুন।”

“কী যে বলেন আপনি। লিনা একটা বাচ্চা মেয়ে অনার্স শেষ করল সবে তাকে বিয়ে করব কীভাবে? বয়সের ফারাক ১০ বছর। সে আমার চেয়ে ভালো পাবে। বাবা মায়ের কথা রাখতে গিয়ে আমার মতো বুড়োকে বিয়ে করে জীবন নষ্ট করুক তা চাই না। ওর জীবনে সুন্দর কেউ আসুক সে দোয়া করি। আর তার সাথে আমার যাবে না। আমি গতানুগতিক আপডেট মেয়ে পছন্দ করি না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা পুরনো ক্ষত এখনও শুকায়নি। আগে নিজেকে স্বাভাবিক করি তারপর নাহয় বিয়ের কথা ভাববো। মা তো দেখি আমার জন্য আপনাকেও ঘটক হিসেবে নিয়োগ করে দিয়েছে। মা যে কী করে। মায়ের পাগলামিতে আবার সায় দিতে যাবেন না। গেলাম আমি। বেশ দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

বলেই নীল রুম থেকে দ্রূত বেগে বেড়িয়ে গেলেন। কিন্তু আমার মনে ছুটে চলেছে অন্য আশঙ্কা। লিনা নীলের থেকে ১০ বছরের ছোটো আর এদিকে সবে আমি ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। বয়স ১৯ চলছে। সে হিসাব করলে আমি নীলের চেয়ে ১৮ বছরের ছোটো। আমি কী নীলকে নিয়ে চিন্তা করে ভুল করছি? এ অসম ভালোবাসা কী কখনও এক হবে? যতই ভাবছি ততই যেন আমার ভেতরটায় কেমন জানি অদ্ভুত ঝড় বয়ে যাচ্ছে।।তার উপর নীল আমাকে ঐ চোখে কখনও দেখেনি। যে জায়গায় বয়সের জন্য লিনাকে মেনে নিচ্ছে না সে জায়গায় আমাকে মেনে নিবে আশা করাটা এক রকম বোকামিই। তবে আমরা মানুষ মাঝে মাঝে জেনেশুনে বোকামি করতে পছন্দ করি। পাব না জেনেও সে জিনিস পাবার ভীষণ আকাঙ্খা মনে চেপে ধরি। নীল কী চায় সেটা বুঝার জন্য হলেও আমি তাকে পছন্দ করি এ বিষয়টা তাকে বুঝাতে হবে। জানি না এ অসম চাওয়ার সফলতা আদৌ হবে কি’না। নীলকে হারিয়ে ফেলার ভীষণ ভয় কেন কাজ করে জানা নেই। এ ভয়টা যখন কাজ করে তখন সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়। কেমন জানি এক অদ্ভুত বিরহ গ্রাস করে ফেলে সারা শরীর।

বাবা অফিস থেকে এসে কয়েকবার আমায় দেখে গেছে। নিরাও দেখে গেছে। এ বন্দি জীবন আর ভালো লাগছে না। দুদিন যাবত ঘরে বসে আছি। আমি যে জায়গায় এখানে সেখানে টই টই করে বেড়াই সেখানে দুদিন যাবত ঘরে বসে যেন বন্দি পাখি লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার ডানা ভেঙে দিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখেছে। এক তো বাইরে যেতে পারছি না অন্যদিকে নীলের চিন্তা আমায় ঘিরে ধরেছে। এ বাসায় থেকে যেন আমি নীলের প্রতি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছি। প্রতিটা দেয়ালে যেন নীলের ঘ্রাণ খু্ঁজে পাই। এ মেহমায়া থেকে কী করে নিজেকে বের করে আনব জানি না। শত চিন্তার ডানা মেলছে চিন্তার আকাশে। এর মধ্যেই সে চিরচেনা কণ্ঠ ধ্বনি কানে আসলো

“আসতে পারি?”

আমার ভেতরটায় এক শীতলতার বাতাস প্রবাহিত হতে লাগল। বেশ লাজুক কণ্ঠে উত্তর দিলাম

“জি আসুন”

নীল ঘরে প্রবেশ করল। আমার দিকে একটা চকলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল

“আপনার জন্য। আপনি নাকি এ চকলেট অনেক পছন্দ করেন।”

আমি হাতে কিটকাটটা নিলাম। কিছুটা অবাক হলাম এটা ভেবে যে উনি আমার পছন্দ সম্পর্কেও জানেন কী করে! বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম

“আপনি জানেন কী করে আমার কিটকাট পছন্দ। আমি তো আপনাকে বলেছি বলে মনে পড়ছে না। তাহলে কী আন্দাজ করে নিয়েছেন? ”

তিনি রুমে ঢুকে চেয়ারটা টেনে বসে বললেন

“আন্দাজ করে কথা বলা আমার পছন্দ না। হুটহাট ঢিল মারল সে ঢিলে ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে এসব উটকো মতবাদে আমি বিশ্বাসী না। আমি আপনার বোন নিরার কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কী খেতে পছন্দ করেন। সে বলল আপনি অনেক চকলেট খেতে পছন্দ করেন এর মধ্যে কিটকাট খেতে বেশি পছন্দ করেন। তাই আসার সময় নিয়ে আসলাম।”

নীলের কথা শুনে আমি যেন আরও দুর্বলতা অনুভব করলাম তার প্রতি। এ মায়া যেন আরও বিস্তৃত হলো। নব স্বপ্নের জাল বুনতে লাগলাম মনে। কেমন যেন এক অন্যরকম অনুভূতির বিচরণ ঘটছে মনে। চাইলেও সে অনুভূতি থেকে বের হতে পারছি না। আমি জানি না এ চাওয়ার শেষটা কী হবে। শুধু এটাই বুঝতে পারছি আমি এক অজানা অনুভূতির রসাতলে ডুবে যাচ্ছি। ডুব দিয়ে তীরে উঠার চেষ্টা করেও তীরে উঠতে পারছি না। আর কিছু বলতে পারছি না। কেবল নীলের দিকে তাকিয়ে আছি নীলও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উনার এ তাকানোতে আমি ভালোবাসার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছি । কোনো এক অদ্ভুত মায়ার বিন্ত ফুঁটে উঠছে মনে। মন চাচ্ছে জোর গলায় বলে উঠি আমি আপনাকে ভালোবাসি। বলার সাহসও তৈরী করে নিলাম। আজকে উনাকে আমি আমার আবেগটা বুঝাবই। যদি উনি তাতে সায় না দেয় আমি এখান থেকে নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করব আর সায় দিলে উনার ভালোবাসায় নিজেকে ডুবিয়ে দিব। ঠোঁটটা সবে নাড়িয়ে বলতে যাব। এর মধ্যেই মাজেদা খালার কর্কশ গলার স্বর কানে আসলো। সাথে সাথে চমকে উঠলাম। চোখের দৃষ্টি দুজনেরেই নড়ে গেল। এদিকে মাজেদা খালাকে মনে চাচ্ছে গলা টিপে ধরি। এমন সময় কেউ এভাবে ডাকে। আমি চুপ হয়ে রইলাম। মাজেদা খালা আমাদের খেতে ডাকছেন। আমাদের খেতে দিয়ে উনি উনার বাসায় যাবেন। নীল সম্মতি দিয়ে মাজেদা খালাকে বললেন আমরা খেতে আসছি।

মাজেদা খালাকে উত্তর দিয়ে আমাকে বললেন

“চলেন খেতে যাই। আপনাকে নিয়ে যেতে হবে নাকি একাই হুইল চেয়ারে করে আসতে পারবেন?”

“হুম আমি আসতে পারব। আচ্ছা আপনার ঘটনাটা তো এখনও বললেন না। আপনার অতীতের সে কথাটা।”

“বলেছিলাম আপনার পা ঠিক হলে বলব।”

“কিন্তু পা ঠিক হতে গেলে অনেক দেরি। এতদিন অপেক্ষা করতে করতে আমি মারা যাব। আজকেই বলেন প্লিজ”

” ঠিক আছে আজকেই বলব এখন খেতে চলুন।”

দুজন খাওয়া শেষ করলাম। মাজেদা খালা চলে গেলেন। নীল আমার রুমে আসলো। আমি ছটফট গলায় বলে উঠলাম

“এবার বলুন কাহিনি। দেখি কোনো উপন্যাস আমি লিখতে পারি কি’না। ”

নীলের মুখে বিরহের ছাপটা প্রস্ফুটিত হলো। সে নম্র গলায় কাহিনি বলা শুরু করল।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here