#বিপরীতে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৬
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরেছে অর্ণব। আদেশ অনুসারে যথারীতি অফিসে যেতে হয়েছে তাকে। ব্যক্তিগত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজের চাপে সারাদিন কেঁটে গেলো। মাগরিবের আযান মাত্র শেষ হয়েছে। ডানে হাতে খাম নিয়ে দ্রুত পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। দরজা পেরতেই দেখতে পেলো বসার রুমের ছোট খাটো জটলা। জটলার কেন্দ্রবিন্দু কিরণ। তাকে ঘিরেই বসে আছে মেহরাব, মিতু, ও মিহু। এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো আরে একদলকে। বড় ও ছোট ফুপির ছেলেমেয়ে রোহান-ঋতু, জিহাদ-জান্নাতও হাজির। বিয়েতে এরা উপস্থিত ছিল বটেই তবুও আজ মেহরাবের জন্য আবার এসেছে। এদের হৈ-হুল্লোড়েরের মাঝে অর্ণবের খেয়াল হলো কিরণের অসহায় মুখটা। হয়তো খুবই বিরক্তবোধ করছে। হওয়াটাই খুবই স্বাভাবিক। অপরিচিত একদল বাচালের মাঝে মিতভাষী এক নারী বিরক্ত অনুভব করবে তা স্বাভাবিক। বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। চারপাশ থেকে সকলের কথার উত্তরের পাল্লায় পরে কিরণ শুধু হাসি ছাড়া আর কোনোরূপ জবার করতে পারছে না। বলা যেতে পারে এরূপ পরিস্থিতিতে সে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। অর্ণব হাতের লেটারটা পাশের টেবিলে রাখলো । দু হাত দু পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এই আড্ডা, এই আনন্দ মহলটা এক সময়ে তার প্রিয়র তালিকায় ছিল। সময় হলেই হুট করেই সকল ভাই বোনেরা মিলে এরকম ছোট খাটো জটলা পাকিয়ে দিত সময় অসময়। কত খুনসুটি! কত মারামারি! সে সব এখন সবই স্মৃতি। হুট করেই বদলে গেল সবকিছু। বদলে গেল অর্ণবের চেনা জানা পৃথিবী। নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ানো অর্ণবের কাঁধে অর্পিত হলো বিশাল ভারি কাজ। পরিবর্তন আসলো আচরণে। হুট করেই যেন বড় হয়ে গেলো বেশ। গাম্ভীর্যতায় ছেয়ে গেলো নিজের পুরোটায়।
এইতো অর্ণব চলে এসেছে!
রোহানের চিৎকারে কিরণ চমকে ওঠলো। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই বরাবর আবিষ্কার করলো অর্ণবকে। কখন এলো মানুষটা তা বলতেই পারবে না। কিরণের মনে আবারো জমা হলো বিন্দু পরিমাণ অভিমান। এসেছে কিন্তু দূরে সরে আছে। অর্ণব জানে কিরণ এতো বেশি অপরিচিত মানুষদের মধ্যে থাকতে স্বস্তি বোধ করে না। চট করেই মানুষদের সাথে মিশে যাওয়ার গুণটা কিরণের নেই। এসব জেনেও লোকটা দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে। বদ লোক! কিরণ এবার ওঠে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
আপনারা তবে এখন গল্প করতে থাকেন। আমি কিছু নাস্তা বানিয়ে আনছি।
কথাটা বলেই কিরণ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে। অর্ণবের পাশ দিয়ে চলে গেলো কিন্তু একটাবারের জন্যও চোখ তুলে তাকালো না। সে যেন পালালে বাঁচে। রান্না ঘরে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাসে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেলো। ফ্রিজটা খুলে ঠান্ডা পানির বোতলের তালাশ করতে লাগলো। পানি পেয়ে কিরণের বোধ হলো সে বুঝি হারানো আত্মা খুঁজে পেয়েছে। পেছনে রাখা একটা টুল টান দিয়ে বসে নিলো। বোতলের মুখ খুলে ঠোঁটের কাছে নিতেই আটকে গেল বোতল। বাঁধা পেয়ে কিরণ বেশ হচকচিয়েই উঠলো। আড়চোখে পাশ ফিরে দেখে নিলো অর্ণবকে। এ লোক এখানে আবার করেটা কি? অর্ণবের চোখে চোখ রাখতেই কিরণ বুঝতে পেলো সেই চোখের ক্ষোভের ভাষা। কি সাংঘাতিক এ ভাষা! কিরণের বুক ধক করে ওঠলো। মনে হলো এর থেকে তো ভালো বকে দিক তবুও এভাবে যেন না তাকায়। কিছু বলার পূর্বেই অর্ণব বোতলটা কেড়ে নিল। মাঝারি ধরণের ধমকে কাপিয়ে দিল কিরণকে,
সমস্যা কি তোমার? সরাসরি এতো ঠান্ডা পানি কেউ খায়? তারপর তোমার টনসিল বাড়লে তার চিকিৎসা কে করাবে তোমাকে? আমি তো অন্তত করাবো না। আর যদি ভেবে থাকো বাবার বাড়ি গিয়ে করবে তাহলে সেই চিন্তাও বাদ দাও। আমার বউয়ের জন্য বউয়ের বাবার বাড়ির সাহায্য নিবো না।
কিরণ জমে গিয়েছে। এর আগেও সে অর্ণবের রাগ দেখেছে। এবং যতবারই দেখেছে ততবারই জমে গিয়েছে। নিজের প্রতিবাদী সত্তা এবারেই ভুলে বসে। পুতুলের মতো জড় বস্তুতে পরিণত হয়। অর্ণব কিরণকে দেখে এবার নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। মেয়েটা যে রাগ মারাত্মক ভয় পায় তা তো অজানা নয়। তবুও কেন যেনো ভুল করে ফেলে। কিরণকে স্বাভাবিক করতে পাশ থেকে একটা গ্লাস এনে তাতে ঠান্ডা পানি ও স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে কিরণের সামনে ধরে। সামনে পানি পেয়েই কিরণও ঢক ঢক করে খেয়ে নিল। কিরণের মনে হলো চৈত্রের খরায় বৃষ্টির পানি পেয়েছে। এক দমে পানি টুকু খেয়ে ভারি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। গ্লাসটা হাতে রেখেই ওঠে দাঁড়ালো। অর্ণব এখনো দাঁড়িয়ে আছে ওভাবেই। কিরণ অর্ণবকে এক পলক দেখে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু যেতে পারলো না। অর্ণব কিরণের ডান হাত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে কিরণকে ঠেকিয়ে দিলো রান্না ঘরের দরজার দিকে। পর পর এতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিরণ হজম করতে পারছে না। অর্ণবের বাম হাতটা কিরণের শাড়ির আড়ালের উন্মুক্ত পেট চেপে আছে। শীতল অনুভূতিতে কিরণ ক্রমশ জমে যাচ্ছে। স্পর্শ কাতর স্থানে অর্ণবের প্রথম ছোঁয়ায় নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। মাথা নিচু করে অর্ণবের কাঁধে হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তুলে তাকানোর বিন্দুমাত্র সাহস কিরণের মাঝে অবশিষ্ট নেই। কিরণে ভেতরে যখন বিরূপ অনূভুতি শতরঞ্জি খেলায় ব্যস্ত তখনই অর্ণব বলে ওঠে,
সূর্যরাণী! একবার বলবে ভালোবাসি? দেখো সব দেয়াল এক নিমিষেই ভেঙে যাবে। গলে যাবে সব অভিমানের স্তুপ।
কিরণ এবার চোখ তুলে তাকালো। কিছু পূর্বের অনুভূতিগুলো যেমন রঙ্গিন প্রজাপতি হতে চেয়েছিল সেগুলো এবার আবার বর্ণহীন হলো। সোজাসাপ্টা সহজ জবাব এলো কিরণের থেকে,
ভুল জায়গায় ভুল আবদার করে ফেলেছেন। পরেরবার থেকে খেয়াল রাখবেন। ভালোবাসার ঠিকানা আমি নই।
কিরণ অর্ণবের হাত ছাড়িয়ে বেড়িয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। অর্ণব শুধু তাকিয়ে রইলো অপলক। এভাবেই কি হাত ছেড়ে বেড়িয়ে যাবে তার ভালোবাসা, এতো দিনের অপেক্ষা ও ত্যাগস্বীকারের উপহার?
চলবে~~~~
পর্বটা একটু বেশি ছোট হয়েছে। আজকের মধ্যে আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!
ধন্যবাদ শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহযোগিপূর্ণ পাঠক পাঠিকাদের আমাকে এতোটা সাপোর্ট করা জন্য। ভালোবাসা রইলো।
#বিপরীতে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৬ ( বর্ধিতাংশ)
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
বারো চেয়ার বিশিষ্ট লম্বা খবার টেবিলের এক মাথায় বসে আছেন মাত্র দুজন মানুষ। টেবিলের মাথায় বড় চেয়ারটায় বসে আছেন রফিউল্লাহ খান এবং তার পাশেরটায় বসে আছেন তার সহধর্মিণী। তাদের দু পাশে দু জন কাজের মানুষ দাড়িয়ে অপেক্ষায় আছে আদেশের জন্য। নিস্তব্ধ পরিবেশে কেবল চামচের টুকটাক শব্দ। নিঃশ্বাসও সেখানে গণনা যোগ্য। রফিকউল্লাহ খান প্লেটের শেষটুকু চামচে ওঠিয়েছেন মুখে দেওয়ার জন্য। তখনই বেল বাজার বাজখাঁই শব্দে ছন্দপতন হলো নীরব, শান্ত পরিবেশের। বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেলো রফিকউল্লাহ খানের। ঘড়ির দিকে তাকিযে দেখলেন দুপুর দুটো বেজে আঠারো মিনিট। দুটো ত্রিশ পর্যন্ত তার খাবারে সময়। কর্মরত সকলকে তার সময়সূচি কড়াভাবে জানানো। খুববেশি প্রয়োজন ব্যতীত খাবারের সময় ব্যঘাত নিষেধ। খাবারের সময় কোনো প্রকারের কথা বার্তা ও আওয়াজ তিনি পছন্দ করেন না। ‘চ্যাহ’ সূচক শব্দে বিরক্তি প্রকাশ করে হাত থেকে চামচ নামিয়ে রাখলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মধ্যবয়স্ক কাজের লোকের দিকে তাকাতেই লোকটা দৌড়ে গেলেন দরজার দিকে। অপর একজনও একই বয়সের। তিনি একটা তাওয়াল এনে রফিকউল্লাহ খানের হাতে দিলেন। হাত মুছতে মুছতে দেখে নিলেন আগন্তুককে। আগন্তক হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো বাড়ির ভেতরে। এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়েই দেখে নিলেন রফিকউল্লাহ খাবার টেবিলে। সে বুঝতে পারলো সে ভুল সময়ে এসে গিয়েছে। কিন্তু তার কাজও যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেরি করলেও এর জন্য শাস্তি পেতে হতো। তাই আল্লাহর নাম যপতে যপতে মাথা নিচু করে চুপচাপ গিযে বসলেন সোফায়।
রফিকউল্লাহ নিঃশব্দে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সাথে সাথে ওঠে দাঁড়ালো তার সহধর্মিণীও। পাশে ফিরে সহধর্মিণীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
সালেহা! আগামী একঘন্টা আমার খোঁজ করবে না কেউ। এক কাপ কফি স্টাডি রুমে নিয়ে পাঠাবে।
সালেহা বেগম পুতুলের ন্যায় শুধু ঘাড় নাড়িয়ে দ্রুত চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। তার পেছন পেছন ছুটে গেলেন দুজন কাজের সহকর্মী।
রফিকউল্লাহ বিনা বাক্যে সিঁড়ি ভেঙে উপরে চলে গেলেন। আগুন্তকঃ তা দেখতে পেয়ে নিজেও চলেন গেলেন তার পিছু পিছু।
নিজের সাদা পাঞ্জাবিটা টেনে আয়েশি ভঙ্গিতে শরীর ছেড়ে দিলেন আরাম কেদারায়। চোখ বন্ধ। দরজা খুলে ভেতরে এলো আগুন্তকঃ। চোখ বন্ধ অবস্থাই রফিকউল্লাহ বললেন,
আমার খাবারের সময়টা তোমার অজানা নয় রেজওয়ান। তবুও অসময়ে আগমন কেন? কোনো বিশেষ কারণ?
রেজওয়ান রফিকউল্লাহ সাহেবের ব্যক্তিগত কাজের কর্মী। ডান হাত বললেও খুব ভুল হবে না। নিজের কালো টাকার এ বিশাল সাম্রাজ্যের অনেক অজানা ঘটনা ও তথ্যের সাক্ষী সে। রেজওয়ানের মন ও মস্তিষ্কে অস্থিরতা বিরাজমান। যে খবর সে দিতে এসেছে তা কিভাবে দেবে ভাবতে সময় লাগছে। খবরটা জানার পর তার কর্তা কেমন আচরণ করবেন তা কল্পনায় ভাবতেই কলিজা শুকিয়ে আসছে। কোনো জবার না পেয়ে এবার চোখ খুললেন রফিকউল্লাহ খান। রেজওয়ানের অস্থিরতায় খারাপ কিছু আঁচ করতে পেরে সোজা হয়ে বসেন। ধমকে বলে ওঠেন,
কি হলো? এভাবে খামের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে এসেছিস এ সময়? আমাকে তোর দাঁড়িয়ে থাকা দেখতে হবে বসে বসে?
রেজওয়ান কেঁপে ওঠলো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
স্যার! চকবারের দিকে আমাদের যে তেলের বড় বড় ছয়টা গোডাউনে রেট পড়েছে। অতিরিক্ত জমানো তেল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। কিছু তেল খারাপ বলে ওখানেই ফেলে দিয়েছে আর প্রতি গোডাউনে দেড় লাখ টাকা করে জরিমানা করে নিয়েছে।
রফিকউল্লাহ খান নড়ে ওঠলেন। চেয়ারে ধরে রাখা হাতটা ফসকে পড়ে গেল। বৈদ্যুতিক তারে ঝাটকা খেলো মন হলো। লাখ লাখ টাকার তেল বাজেয়াপ্ত! তার মধ্যে আবার জরিমানা? প্রতি গোডাউনে দেড় লাখ করে মোট নয় লাখ টাকা! কোটি টাকার ক্ষতি তার মুহুর্তেই। কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু জমে গেলো ঘাম। কয়েকদিন আগেই অবৈ*ধভাবে আসা এক ট্রাক মাল একইভাবে ধরা পড়ে যায়। সেখানেও আনুমানিক লাখ দশেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ে পর পর এতো ধাক্কা খেলে নিশ্চিত কিছু দিনের মধ্যেই দেউলিয়া হতে হবে। পকেট থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে রুমাল বের করে কপাল মুছে নিল। রেজওয়ান কর্তার বেহাল অবস্থা দেখে দ্রুত টেবিল থেকে পানির গ্লাস এনে সামনে ধরে বললো,
স্যার আপনি এতো ঘামছেন কেন? একটু পানি খেয়ে নিন। আপনার কি শরীর খুব খারাপ লাগছে?
রফিকউল্লাহ চিন্তায় ও ক্ষোভে ঘামছেন। চিন্তায় চারপাশটা এখন তার চরম বিরক্ত লাগছে। রেগে সামনের গ্লাস হাত থেকে ফেলে দিলেন। গ্লাসটা মেঝেতে পরতেই লাফিয়ে সরে দাঁড়ালো রেজওয়ান। রফিকউল্লাহ রেগে উঠে দাঁড়ালেন। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে তার। বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে বললো,
পুলিশ জানলো কি করে রে? কোন হারা**** খবর দিয়েছে? পর পর আমার ব্যবসায়েই ধরা খাওয়া কোনো কাকতালীয় ব্যপার না। বিপরীত কোন পার্টি কাজ করছে তিন দিনের মধ্যে খবর আনবি। না আনতে পারলে তোকে পুলিশের কাছে পাঠাবো আমি।
রেজওয়ান ভয়ে আমতা আমতা করে বললো,
স্য স্যার আমি আমি জানার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কে বা কারা খবর দিয়েছে তা কিছুতেই জানা যাচ্ছে না। তবুও আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এবারের মতো আ আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার!
যা যা বের হো এখনি। আমাকে আর বসে থাকলে চলবে না।
রেজওয়ান হাতে প্রাণ নিয়ে যেনো কোনো মতে বেড়িয়ে গেলো। সিঁড়ি কাছে আসতেই পুনরায় মনে পড়ে গেলো অসম্পূর্ণ আরেকটি কাজের কথা। হতাশায় চোখ বন্ধ করে নিজের ভোলামনে নিজেই গালি দিল। পুনরায় স্টাডি রুমের দিকে দরজায় কড়া নেড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। রফিকউল্লাহ আরাম কেদারায় ঢুলছেন। রেজওয়ানের পুনঃআগমনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
আবার কোন সর্বনাশের কথা বলতে ভোলে গেছিস?
না না স্যার! সর্বনাশ না। ভালো খবরটাই দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
বলে ফেল।
রেজওয়ান পকেট থেকে একটা খাম বের করলো। খামের ভেতর থেকে কিছ কাগজপত্র বের করে রফিকউল্লাহর সামনে রেখে দিলো। বিশ্রিভাবে হেঁসে দিয়ে বলে ওঠলো,
শিকারের প্রাণভ্রমরা আর আমাদের টোপ। সব তথ্য দেওয়া আছে।
কাগজগুলো হাতে নিয়ে এদিক ওদিক করে দেখে নিল রফিকউল্লাহ খান। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে শেষের পাতা দেখতেই চোখ মুখে দৃশ্যমান হলো সাক্ষাৎ ইবলিশ শয়তান।
—
বিকেলের দিকে হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন হলো। অর্ণবের আজ নাইট ডিউটি। তাই সে সারাদিন বাড়িতেই। দুপুরে বিশ্রাম নিতে গিয়ে কখন ঘুমিে পড়েছে খেয়াল নেই। বিকেলের দিকে মাত্রই ঘুম ভেঙে শীতল মেঘলা হাওয়ায় মন ভালোলাগায় ভরে গেলো। এমন সময় প্রিয়তমা পাশে আর হাতে এক কাপ চা থাকলে নিজেকে সুখী মানুষের তালিকায় ফেলতে পারতো। কিন্তু আফসোস! চা পেলেও প্রিয়তমাকে পাওয়া পাওয়া হচ্ছে না। দুপুরে খাওয়ার টেবিলে একবার দেখেছিল। তারপর সে যে ননদদের কাছে ভিরেছে আর এ মুখী হয় নি। কাল সন্ধ্যা অবদি যাদের মাঝে তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল আজ তাদের থেকে সরছে না। তার পুরো কৃতিত্ব অবশ্য ঋতু, মিতু ও জান্নাতের। অর্ণবের মতোই ওরাও বেশ মিশুকে। অর্ণবও ওদের জানিয়ে দিয়েছিল কিরণ অন্তর্মুখী হলেও বিপরীত পাশের মানুষের আন্তরিকতা পুরোপুরি বুজতে পারলে তাদের আপন করতে বেশি সময় লাগে না। তাই ওরাও কিরণকে সেভাবেই নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছে। অর্ণব বিছানা ছেড়ে ওঠে জানালার পাশে দাঁড়ালো। বাতাসে পর্দা ওড়তেই দেখতে পেলো ছোট্ট টেবিলটার উপরে অবহেলায় পড়ে থাকা তার প্রিয় বাদ্যযন্ত্রটি। মুচকি হেসে গিটারটি হাতে নিলো। ধুলো জমেছে সামান্য। পাশের টিস্যুবক্স থেকে টিস্যু নিয়ে গিটারটা সযত্নে মুছে নিলো। কালো কাউচটাতে বসলো জানালা মুখী হয়ে। গিটারের তারে আঙ্গুল নাড়াতেই তাল ওঠে এলো। দু একবার পুনরায় তার নাড়িয়ে এবার কন্ঠে নিয়ে এলো সুর,
তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না…
হাত থেমে গেল গিটারের উপরে। পায়ের শব্দ কানে এলো। অর্ণবের মন বলছে এ পায়ের ধ্বনি তার প্রিয়তমার। কয়েক মূহুর্ত অপেক্ষা করে ঠোঁটের গোড়ায় হাসি রেখে পুনরায় শুরু করলো,
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো….
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
গান গাওয়া অবস্থায়ই বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো অর্ণব। হেঁটে হেঁটে চলে এলো দরজার কাছে। কন্ঠে তখনও গানের সুর ডান হাতে গিটারে তারের ছন্দ। বাম হাত দিয়ে নীরবে দরজা খুলতেই দেখতে কিরণকে দেখতে পেলো। দরজার পাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত জোড়া বুক বরাবর আবদ্ধ। চোখ দুটো বন্ধ। কি আবেশে গান শুনছে। অর্ণব নিশব্দে হেসে আবারো গান ধরলো,
এটা কি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে?
চাইলে ভেঙে দেবে গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে
আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাব বলে
হঠাৎ কিরণের মনে হলো গানের আওয়াজ অনেক কাছে চলে এসেছে। ব্যঘাত ঘটলো সেই আবেশে। চোখ খুলে পাশ ফিরতেই চমকে ওঠলো অর্ণবকে দেখে। আর অর্ণবের মুখে খেলে গেলো চমৎকার এক হাসি। গিটারের তালে সে হাসির আওয়াজ গড়ে তুললো অন্যরকম মোহময় সুর। কিরণ শুনতে পেলো সেই সুর। এক জনম পর সেই হাসি! সেই ম*রণফাঁদ! সে ফাঁদে এবার পড়ে বার বার ম*রেছে কিরণ।
চলবে~~~
চেয়েছিলাম ইফতারের আগে আরেকটা পর্ব দিতে। কিন্তু কাজের জন্য দিতে পারি নি। তার জন্য দুঃখিত। কিন্তু যেহেতু দিতে চেয়েছি আজই আরকটি পর্ব তাই দেরি হলেও দিয়ে দিলাম। ভুলগুলো ক্ষমা করে সাথে থাকবেন। আর এট্টু সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে যাবেন প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ। সকলকে অনেক ধন্যবাদ আর অবিরাম ভালোবাসা।