#বিপরীতে_হিত-০১,০২
#পর্ব-১
“মা, আমি যাবোনা, কিছুতেই যাবোনা?”
সুমনা দৌড়ে আরেক ঘরে গিয়ে লুকোলো। সুমনার মা আশা সেই কখন থেকে মেয়ের পিছনে পিছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এতো বড় ধাড়ি মেয়ের সাথে কি লুকোচুরি খেলে পারা যায়? আশা অল্প সময়ের মধ্যেই হাফিয়ে গেলো। ডাইনিং এ চেয়ার টেনে বসে চিৎকার করলো আশা-
“মনা, কেন যাবি না শুনি? পড়ালেখার ইচ্ছে নেই বুঝি?”
“নতুন স্কুলে কেন ভর্তি করালে? আগের স্কুল কতো ভালো ছিলো? কতো বন্ধু ছিলো আমার? এখানে আমি কাকে চিনি? একেতো নতুন এলাকা, তারউপর নতুন স্কুল! তাও আবার ছেলেমেয়ে একসাথে? কেমন না কেমন হবে কে জানে? আমার খুব ভয় করে। ঢাকার ছেলেপুলেরা খুব দুষ্টু হয়, তমা বলেছিলো।”
“তমা মিথ্যে বলেছে তোকে। ও নিজেই তো ঢাকায় থাকে? এদিকে শোন মা! আমার কাছে আয় তো?”
আশার কন্ঠ নরম হয়। মায়ের নরম কন্ঠ শুনে সুমনা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। মাথা নিচু করে মায়ের সামনে দাঁড়ালো। আশা মেয়ের হাত ধরে কোলে বসালেন-
“তোর বাবাকে ঢাকায় ট্রান্সফার করলে আমরা কি করতে পারি বল তো মা? বাবা কি ইচ্ছে করে ঢাকায় এসেছে? আর তোকে কি একা অতদূর রেখে আসতে পারি? ওখানে কার কাছেই বা থাকবি? কেউ আছে আমাদের বগুড়াতে? এখানে বরং তমা আছে, হিজল আছে। তোর খালা আছে, চাচা আছে, আমরা প্রতি উইকেন্ডে কারো না কারো বাসায় বেড়াতে যেতে পারবো। তাছাড়া ওখানেও তো একসময় তুই নতুন ছিলি? এখানে কয়েকদিন ক্লাস কর দেখবি নতুন বন্ধু হয়ে যাবে। যা মা তৈরি হয়ে নে, এখন ক্লাস নাইন, ফাকি দিলে সমস্যা হবে তোর। এমনিতেই মাসের পনেরো দিন পার হয়ে গেছে, এখন না গেলে তুই পিছিয়ে পড়বি। স্কুলটা খুব নামকরা, নিয়মগুলো কড়াকড়ি, ভালো পড়ালেখা হয়। যা তাড়াতাড়ি! ”
আশা মেয়েকে তাড়া দেয়। সুমনা আর কোনো কথা না বলে বাধ্য মেয়ের মতো নিজের রুমে চলে গেলো। ঢাকায় এসেছে আজ পনেরো দিন হলো। ওর বাবা সরকারি চাকুরী করে। তিন চার বছর পর পর এ জায়গা থেকে ও জায়গায় ট্রান্সফার হয়। লাস্ট ছিলো বগুড়ায়। তাও ভাগ্য ভালো যে, পোস্টিং টা বছরের শেষে হয়েছে। তা না হলে বড় বিপদ হয়ে যেতো। সুমনা ক্লাস এইট শেষ করলো, এবার নাইনে উঠলো। ঢাকাতে এসেই ওকে ভর্তি করিয়ে দিলো সৃষ্টি স্কুলে। কম্বাইন্ড স্কুল এইজন্যই আপত্তি সুমনার। এতোদিন বগুড়ায় গার্লস স্কুলে ছিলো সুমনা। এখন কম্বাইন্ড শুনে আর স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। একটা ছেলে ভীতি কাজ করছে হয়তো ওর মনে। মেয়ে রেডি হয়ে বেড়িয়ে আসতেই আশা মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো।
*******
আশা মেয়েকে গেটে নামিয়ে দিয়েই চলে গেলো। বলে গেলো ক্লাস শেষে আবার নিতে আসবেন। সুমনা খুব ভয়ে ভয়ে স্কুল গেট পার হলো। ওর সি সেকশন। ক্লাসরুমটা কোথায় হবে সেটা জিজ্ঞেস করতেও যেন ভয় লাগছে সুমনার। ছেলেমেয়েগুলো ওর দিকে কেমন বাঁকা নজরে তাকাচ্ছে? কাপড় ঠিক নেই নাকি? নিজের জামাটা দু-তিন বার টেনে নিলো সুমনা। ব্যাগ আর বই সামলে করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো সুমনা। তখনই হঠাৎ চুলে টান পড়লো। ব্যাথায় চিৎকার করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো সুমনা। করিডোরে হাসির হুল্লোড় ছুটলো। উঠে দাড়িয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে দাঁত বের করে হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। সুমনা তাকাতেই ওকে চোখ টিপ দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। সুমনা খুব অবাক হলো, ছেলেটার নির্বিকার ভাব দেখে। একজন অপরিচিত মেয়ের সাথে এমন কাজ করেও ছেলেটার কোনো বিকার নেই। সুমনারও রাগ উঠলো, সে পেছন থেকে ছেলেটার পাছা বরাবর একটা লাথি ছুড়লো। ছেলেটা দূরে গিয়ে পড়লো। চারিদিকে আবার হাসির হুল্লোড়। ছেলেটা পাছায় হাত দিয়ে মুখ কুচকে উঠে দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো সুমনা এবার দাঁত বের করে হাসছে। ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো –
কেমন লাগলো?
ছেলেটা দাঁত কিরমির করতে করতে পাছায় হাত দিয়ে চলে গেলো। শাসিয়ে গেলো- দেখো নেবো বলে। সুমনাও ‘হুহ’ বলে মুখ ভেংচালো।
দু’চার জনকে জিজ্ঞেস করতেই ক্লাস রুম দেখিয়ে দিলো। রুমে ঢুকতেই দেখলো সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। সামনের বেঞ্চগুলো সব ফিলআপ। খুঁজে খুজে পিছনের এক বেঞ্চে জায়গা পেলো। একটা বেঞ্চে দু’জন করে বসার নিয়ম। ও বসার কিছুক্ষণের মধ্যে আর একজন এসে বসলো ওর পাশে। ভালোমতো তাকিয়ে দেখলো, ওর চুল টান দেওয়া ছেলেটাই ওর পাশে বসেছে-
“তুমি?”
চিৎকার দিলো সুমনা।
“তুই?”
পাল্টা চিৎকার দিলো ছেলেটা।
“আমি তোমার সাথে বসবো না, কিছুতেই না! তুমি অন্য কোথাও যেয়ে বসো।”
“আমি কেন যাবো? তোর প্রবলেম তুই যা!”
“আমি আগে এসে বসেছি এই বেঞ্চে!”
“তো? নাম লিখা আছে তোর? ”
“আমি মিসকে কমপ্লেন করবো কিন্তু? ”
“আমি মিসকে কমপ্লেন করবো কিন্তু? ”
ছেলেটা ভ্যাঙালো সুমনাকে।
“মিস্টার ক্লাস নেবে না মিস ক্লাস নেবে জানিস তুই? বিচার দিলে দিবি? আমার কি? এই আদি কাউকে ভয় পায় না, বুঝলি?”
ওহ, এই বদমায়েশ এর নাম তাহলে আদি? আচ্ছা, তুই বয় আমার পাশে, আজ তোকে মজা চাখাবো। মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি আটে সুমনা। ক্লাসে মিস ই আসলো। বাধ্য হয়ে সুমনা বসে পড়লো আদির পাশে। প্রথম ক্লাস ইংরেজি ১ম। রোল কলের সময় সুমনার পরিচয় নিলো মিস। সুমনা যখন নিজের পরিচয় দিচ্ছিলো আদি বিরবির করে ফোড়ন কাটছিলো-
“গাইয়া কোথাকার? গ্রাম থেকে এসেছে, এইজন্যই তো বলি এতো বদ বুদ্ধি মাথায় আসে কোত্থেকে? আর গায়ে কি বিচ্ছিরি গন্ধ মাইরি, একেবারে ক্ষ্যাত, আনস্মার্ট কোথাকার?”
শুনে মনে মনে ফুলছিলো সুমনা। চুপচাপ অপমান হজম করে ক্লাস করছিলো। ঠিক ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে বেঞ্চের নিচ দিয়ে কলম দিয়ে আদিকে দিলো খোঁচা। সেই খোঁচা খেয়ে আদি তিড়িং করে লাফিয়ে উঠতেই মিস ওকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর আবার খোচা, আদি আবার লাফিয়ে ওঠে। মিস রাগী চোখে তাকাতেই আদি কিছু বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু মিস আদির কোনো কথা না শুনে বিরক্ত হয়ে ওকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়। রাগে গজগজ করতে করতে আদি ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর সুমনা মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আদিকে ভেংচি কাটে।
বাকী ক্লাসগুলোও এরকম খোঁচাখুঁচি করতে করতে কেটে গেলো। শেষ ক্লাসের ঘন্টা যখন বাজলো তখন সুমনা নিজেই অবাক হয়ে গেলো। প্রথম দিন, এতো দ্রুত সময় কিভাবে কাটলো? এই বাদরের সাথে ও নিজেও বাঁদরামি করেছে সারাক্ষণ। কি অদ্ভুত! জীবনে প্রথম কোনো ছেলের সাথে ক্লাস করলো তাও আবার এই রকম ঝগড়াঝাটি করে? বাড়ী যাওয়ার পুরোটা পথ এসবই ভাবছিলো সুমনা। আশা মেয়েকে ডেকে ডেকে হয়রান। কি যে ভাবছে স্কুল থেকে বেড়িয়ে, আল্লাহ জানে! তাও চিন্তা মুক্ত হওয়া গেলো, স্কুল নিয়ে কোনো খারাপ কিছু বলেনি। আশা যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।
আর এদিকে সুমনা ভাবছে, কালকে কি হবে? আদি কালকে ওকে কিভাবে জ্বালাতে পারে আগে থেকেই ভেবে রাখতে হবে। এই ছেলে হচ্ছে মহা ত্যাদর। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু একটা বড়সড় প্ল্যান করে রাখবে ওকে নাজেহাল করার জন্য!
চলবে—–
Farhana_Yesmin
#বিপরীতে_হিত
#পর্ব-২
সন্ধ্যায় পড়তে বসে মুখে কলম নিয়ে চাবাচ্ছিলো সুমনা। সামনে অংক বই আর খাতা আছে, আজ ক্লাসে করানো অনকগুলো দেখছিলো। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। বারবার করা অংকের লাস্টে এসে প্লাস এর জায়গায় মাইনাস দিয়ে দিচ্ছে। উফফ! কি হচ্ছে এসব? বিরক্ত হয়ে খাতায় বাড়ি দিলো সুমনা, কলম চাবানো বেড়ে গেলো আরো। আশা বিকেলের নাস্তা খাওয়ার জন্য মেয়েকে দুবার তাড়া দিয়ে গেলো। সুমনার ওসব মাথায়ই নেই। ওর মাথায় কেবল আদির চিন্তা। কাল কি করতে পারে সেটা ভেবে ভেবে মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওর। সুমনার বাবা সোহেল টেবিলে বসে বারকয়েক মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলো আশাকে।
“তোমার মেয়েকে একশোবার ডেকে এলাম। সে টেবিলে বসে বসে কলম চাবাচ্ছে। আজ স্কুল থেকে আসার পর থেকেই কেমন আনমনা হয়ে আছে।জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছে না।”
“স্কুল ভালো লাগেনি নাকি?”
“কে জানে কি? ভালো না লাগলে তো বলতো?”
“আচ্ছা আমি দেখে আসি ও কি করছে?”
সোহেল উঠে মেয়ের রুমের দিকে গেলো। সুমনা তখন কলম চিবাতে চিবাতে গভীর ভাবনায় মগ্ন। সোহেল মেয়ের মাথায় হাত রাখলো-
“মামনি, কি ভাবছো এতো? স্কুল পচ্ছন্দ হয়নি?”
বাবার ডাকে সুমনার ধ্যান ভাঙে।
“ওহহ, বাবা? তুমি কখন এলে?”
“এসেছি তো অনেকক্ষন। তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছে তোমার মা। কি ভাবছো এতো?”
“কিছু না বাবা। এই ম্যাথটা মিলাতে পারছিলাম না তাই একটু চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।”
“আমি হেল্প করবো?”
“লাগবে না বাবা? আমি পারবো।”
“বললে না তো স্কুল কেমন লাগলো? নতুন কোনো বন্ধু হলো?”
“ভালো বাবা। বন্ধু না জুটলেও শত্রু জুটে গেছে একজন!”
“শত্রু! কে শত্রু? দেখো সাবধানে থাকবে। উল্টো পাল্টা কিছু কেউ করলে আমায় এসে জানাবে। তুমি ওখানে নতুন, কারো সাথে লাগতে যেয়ো না কিন্তু!”
“আরে না বাবা! এতো ভেবো না তো? সেরকম কোনো ব্যাপার না। ”
“আচ্ছা তবে খেতে এসো। আমি আর তোমার মা সেই তখন থেকে বসে আছি টেবিলে?”
“চল যাই। আমারও বেশ খিদে লেগেছে। ”
সুমনা টেবিল ছেড়ে উঠে এলো বাবার পিছু পিছু।
*******
“দোস্ত! নতুন মেয়ে এসেই কাল তোকে কি নাকানি চুবানি খাওয়াইলো রে? তুই তো পেরে উঠলি না?”
শফিক ফোরন কাটলো। শফিকের কথা শুনে আদি মনে মনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। এমনিতেই মেয়েটা কাল ওকে যথেষ্ট অপমান করেছে তার উপর শফিক যেন আজ ওকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে। ক্লাস রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দু’বন্ধু। আদি মনে মনে সুমনার অপেক্ষা করছে। আজও যে করেই হোক সুমনার পাশে বসতে হবে। বদ মেয়েকে আজ কঠিন একটা শিক্ষা দিতে হবে। আদির সাথে পাঙ্গা লাগা? এই আদি! স্কুলের পুরাতন ছাত্র, তার উপর সবসময় ক্লাসে টপার ছিলো। নেহায়েত গতবছর টাইফয়েড হয়েছিলো তাই কোনোরকমে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে? ঐ গার্লস স্কুলের মেয়ে কিনা নতুন এসেই ওকে পল্টি খাইয়ে দিচ্ছে? এ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। ভাবতে ভাবতে সুমনা চলে আসলো। আদিকে দেখেইনি এমন ভাব করে ক্লাসে ঢুকে গেলো। শফিক আদিকে খোঁচা মারলো।
“গুরু, এসে পড়েছে? ”
“তুই যা, নিজের জায়গায় বসগে যা।”
আদি শফিককে পাত্তা না দেওয়ার ভাব করলো।
শফিক বিরস বদনে ক্লাস রুমে যেয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর আদি হেলতে দুলতে ক্লাসে এসে সুমনার বেঞ্চে বসলো। কাল আদির সাথে সুমনার বিহেভ দেখে কেউ ওর কাছ ঘেঁষার সাহস করছে না। সুমনা আদিকে দেখে উঠে যাচ্ছিলো। তখনই আদি বললো-
“কেউ তোর সাথে বসবে না। তুই যেখানেই যাবি ওরা উঠে যাবে অন্য জায়গায় বসবে।”
“কেন?”
“আমার কথা বিশ্বাস হয় না? যা একবার ট্রাই কর?”
সুমনা রাগী রাগী মুখে ব্যাগ নিয়ে উঠে গেলো। আসলেই তাই। কেউ বসতে চাইছে না ওর সাথে। বাধ্য হয়ে সুমনা আগের জায়গায় ফেরত এলো। আদি মুখ টিপে হাসলো শুধু।
“বলেছিলাম না কেউ বসবে না?”
“নিশ্চয়ই তুমি কিছু বলেছো?”
“আমার ঠেকা? তুই কি মহারানী ভিক্টোরিয়া? তোকে নিয়ে পড়ে থাকবো সারাদিন? ”
“পড়েই তো আছো? আমি কি বুঝিনা? মনে মনে যে আমাকে হেনস্তা করার ফন্দি আটছো তা কি আমি বুঝিনা?”
“কি বললি? জোরে বলতো?”
আদি কথা শেষ করতেই ঝিনুক মিস ক্লাসে ঢুকলো।
আজকে প্রথমেই ঝিনুক মিসের ক্লাস, অংক করাবে। মিস ক্লাসে ঢুকতেই সবাই উঠে দাড়ালো আর এই সুযোগে আদি সুমনার চেয়ারে আঠা লাগিয়ে দিলো। ক্লাসের অর্ধেক পর্যন্ত সুমনা কিছুই টের পেলো না। সমস্যা বাঁধলো যখন মিস একটা প্রশ্ন করলো আর উত্তর দেওয়ার জন্য সুমনা হাত তুললো। মিস ওকে দাড়াতে বললো। সুমনা উঠতে যেয়েই পড়লো বিপাকে। কিছুতেই উঠতে পারছে না। বেশি টানাটানি করতে গেলেই কাপড় ছেড়ার পটপট আওয়াজ হচ্ছে। আশেপাশে বসা ছেলেমেয়েগুলো মুখ চাপা দিয়ে হাসতে শুরু করেছে অলরেডি। মিস তখনও তাকিয়ে আছে সুমনার দিকে উওরের আশায়। সুমনা আদির দিকে তাকিয়ে দেখলো আদি হাসছে মাথা নিচু করে। সুমনা বুঝে গেলো আদি এই বদমায়েশিটা করেছে। সুমনা চেয়েও কিছুতেই দাঁড়াতে পারলো না।
“কি হলো সুমনা? এটা কেমন বেয়াদবি? তুমি এখনো নিজের জায়গা থেকে ওঠোনি?”
সুমনা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে –
“মিস, আমি দাঁড়াতে পারছি না। ”
“কেন? কি হয়েছে? তোমার পায়ে ব্যাথা নাকি অন্য সমস্যা? ”
মিসের কথা শুনে ক্লাসের সবাই জোরে হেসে উঠলো।
“মিস, চেয়ারে কে যেন আঠা লাগিয়ে রেখেছে?”
“হয়েছে, বুঝেছি! আর বলতে হবে না। অংক পারবে না তাই এতো ছুতো!”
“না মিস! সত্যি বলছি! দেখুন আপনি?”
ঝিনুক সুমনার ডাকে ওর বেঞ্চের সামনে এলো। এসে দেখলো সত্যি সত্যি সুমনার জামা আটকে আছে চেয়ারের সাথে। কিছুতেই চেয়ার থেকে ছাড়ানো যাচ্ছে না। বহুকষ্টে চেনে হিচড়ে জামা ছাড়ানো হলো।কিন্তু জামার অনেক খানি ছিড়ে গেলো। সুমনা লজ্জায় কেঁদে দিলো-
“মিস! নিশ্চয়ই এটা আদি করেছে?”
“আদি! সত্যি তুই করেছিস?”
ঝিনুকের রাগী কন্ঠস্বর। আদি গো বেচারা মুখ করে তাকালো-
“আমি কিভাবে করবো মিস? আমি কিছুই জানি না এসবের! এই নতুন মেয়েটা কাল থেকে আমার পেছনে লেগেছে। ”
“মিস, আপনি ওর ব্যাগ সার্চ করুন। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু পেয়ে যাবেন!”
“দেখো মেয়ে! তোমার অভিযোগ মিথ্যে প্রমান হলে কিন্তু তোমাকে তিনদিনের জন্য সাসপেন্ড করবো!”
সুমনা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো আর মিস আদির ব্যাগ সার্চ করলো। কিছুই পেলো না। পাবে কিভাবে? আদি আগেই সেসব শফিকের ব্যাগে চালান করেছে!
“কই কিছুই তো নেই?”
মিস বলে।
“আমি আগেই বলেছিলাম যে, আমি কিছু জানি না মিস? মেয়েটা আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে! কালও মিথ্যে কতা বলে আমাকে ক্লাসের বাইরে পাঠিয়েছে!”
আদি কাঁধ নাচালো।
“সুমনা, ইউ মে লিভ নাও। আগামী তিনদিন তুমি ক্লাস করবে না। তুমি একজনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দিয়েছো।”
“আমি সত্যি বলছি মিস, ওই করেছে এ কাজ?”
সুমনা আবার কেঁদে দেয়।
“মেয়ে, তোমার সামনেই তো ওর ব্যাগ চেক হলো। দেখলে তো কিছু পাওয়া গেলো না! যাও যেয়ে করিডোরে দাঁড়াও। এমনিতেই ক্লাসের অনেক সময় নষ্ট করেছো। এখনি তোমার বাসায় ফোন দিয়ে গার্ডিয়ান ডাকা হবে।”
সুমনা আদির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছেরা জামা নিয়ে কাচুমাচু হয়ে করিডোরের দিকে হেঁটে যায়। তার চোখে টলমল পানি। এতো অপমান তার জীবনে কখনো হয়নি সে। ক্লাসে সে বরাবরই টপার। আর এখানে কিনা এইভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে? ছাড়বে না! কিছুতেই ছাড়বে না ঐ শয়তানটাকে!
আদি ভদ্র বালকটি সেজে বসে মন দিয়ে ক্লাস করছে। আর মাঝে মাঝে শফিকের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিচ্ছে –
“কি রে কেমন দিলাম? ”
শফিক ভ্রু নাচায়-
“জোস, মামা!”
আদি তৃপ্তির হাসি দেয়। কতো বড় বদ মেয়ে! ওকে ক্লাসের বাইরে পাঠায়! ওকে? আজ বুঝো ঠেলা কতো ধানে কত চাল?
চলবে—–
Farhana_Yesmin