বিপরীতে_হিত-০৩,০৪

0
302

#বিপরীতে_হিত-০৩,০৪
#পর্ব-৩

তিনদিন পর না বরং পুরো একসপ্তাহ পর স্কুলে গেলো সুমনা। আগের ড্রেসটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে ড্রেস নতুন করে বানাতে হয়েছে। তাই এতো দেরি। তবে এবার সুমনা খুব সাবধান। নিজের মাঝে কেমন একটা গম্ভীরতা এনেছে। আজ একটু আগে আগে এসে ক্লাসের কোনার দিকের ফাস্ট বেঞ্চে বসলো। এই বেঞ্চটায় রুপা আর দিবা বসে। দিবা এসে সুমনাকে নিজেদের বেঞ্চে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
“তুমি এখানে কেন? এটাতে তো আমি আর রুপা বসি?”
“দেখো ভাই, কোনো বেঞ্চে তো আর নাম লেখা নেই? আমি আগে এসে জায়গা পেয়েছি তাই বসেছি। তুমিও বোসো না! রুপা আসলে না হয় পিছের বেঞ্চে বসবে? প্লিজ, রাগ করো না! আমি তো নতুন মানুষ, তোমরা এমন করলে আমি কোথায় যাবো বলো তো?”
সুমনার কথা শুনে দিবা একটু নরম হলো যেন। সুমনার পাশে বসতে বসতে বললো-
“তোমার সাথে সেদিন খুব খারাপ হয়েছিলো। ঐ বদমাশ আদিটা খুব চতুর। ওকে সহজে ধরা যায় না। অন্যান্য বার তো টপার থাকে, অতো দুষ্টুমি করার সুযোগ পায় না। এবার যেহেতু টপার হতে পারেনি এইজন্য একেবারে হাত পা খুলে নেমেছে।”
সুমনা অবাক হলো একটু। ঐ বদমাশটা আবার টপার? যদিও প্রচুর রাগ আদির উপর তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো-
“তাই নাকি? ও ক্লাস টপার? এবার তাহলে হলো না কেন?”
“আরে গতবছর ওর টাইফয়েড হয়েছিল তাই।”
“ওহহহ, আচ্ছা! ”
“এবার দেখবে ঠিকই আবার টপ করবে!”
“করতে দিলে তো? এই সুমনা থাকতে কোনোদিন আদুভাই টপার হতে পারবে না।”
সুমনা মিনমিন করে বললো।
“হ্যা, তুমি কিছু বললে?”
“নাহ, কিছু না! ফ্রেন্ড?”
সুমনা হাত বাড়িয়ে দিলো দিবার দিকে। দিবা দ্বিধা ছাড়াই সুমনার সাথে হাত মেলালো। রুপা আসতেই ওকে সরি-টরি বলে বন্ধু বানিয়ে ফেললো সুমনা। পেছন থেকে আদি সেসব দেখে খালি ফুলছিলো। সুমনা দুএকবার আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো আদির হিংসায় পূর্ণ মুখ। মনে মনে সুমনা হাসলো একচোট। আদুভাই, তুমি তোমার কাজের যোগ্য শাস্তি পাবে, জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!

সেদিন থেকেই দিবা সুমনা আর রুপা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। কয়েকদিনের ভেতর ওরা তিনজন জিগরি দোস্ত হয়ে গেলো। তাই দেখে আদি শুধু জ্বলে। সুমনারা তিন বান্ধবী মিলে বেশ ভালো গ্রুপ হয়ে গেলো। তিনজনাই সায়েন্স নিয়ে নিলো। একই টিচারের কাছে পড়া, গ্রুপ স্টাডি করা। সুমনার দিনগুলো বেশ সুন্দর কেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু মনে মনে আদিকে শায়েস্তা করার প্লান সুমনার অনেকদিনের। একদিন সুযোগ হয়েও গেলো। আদিও সায়েন্স নিয়েছে মেজর আবার স্কুলের ফুটবল টিমেও খেলে। বিকেলে স্কুল ছুটির পর স্কুল গ্রাউন্ডে ফুটবল প্র্যাকটিস করে ওরা। কয়েকদিন সুমনা আড়ালে দাঁড়িয়ে থেকে আদিকে প্র্যাকটিস করতে দেখেছে। একদিন হঠাৎই মাথায় প্ল্যানটা চলে আসলো।

কয়েকদিন ধরে রুমের দরজা আঁটকে কি যে করে সুমনা আল্লাহ জানে। আশা মেয়ের উপর চরম বিরক্ত। দরজা টোকালেই সুমনা উত্তর দেয় –
“পড়ছি মা, বিরক্ত করো না।”
রাগে গজগজ করতে করতে নিজের কাজে যায় আশা। আজও সন্ধ্যার পর থেকে দরজা আটকে বসে আছে সুমনা। আশা আজ ডাকা মাত্রই সুমনা হাসিমুখে বেড়িয়ে এলো। এসেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো, মুখে চুমু দিয়ে বললো-
“সরি মা, একটা প্রজেক্ট নিয়ে বিজি ছিলাম কয়দিন। তুমি প্লিজ রাগ করো না!”
মেয়ের আদর মাখা কন্ঠ শুনেই আশার রাগ পানি হয়ে গেলো। তবুও কেমন যেন সন্দেহ জাগছে মনের মধ্যে –
“স্কুলে সব ঠিক আছে তো? ঐ ছেলেটার কি অবস্থা? তোকে আর জ্বালায়?”
“কোন ছেলে মা?”
বলতে বলতে মুখে নুডলস চালান করে সুমনা।
“ঐই যে তোর জামায় আঠা লাগালো যে?”
“ওহ, না আর জ্বালায় না। ”
আশার মন শান্ত হয়। সুমনা মায়ের সাথে এটা ওটা গল্প করে সময় পার করে, আজ তার মন ভালো। শুধু ভালো না, ভীষণ ভালো!

*******

“দোস্ত! অনেক দিন তো হলো?”
“তো?”
“মেয়ে তো তোকে পাল্টা কিছুই করলো না?”
“হুহ, ভয় পেয়েছে হয়তো? এই আদির সাথে পাঙা নেওয়া এতো সহজ না, বুঝলি?”
“হুম, বুঝলাম। ”
শফিকের আশাহত কন্ঠ। সে ভেবেছিলো এই খেলা জমবে ভালো, এখন দেখছে খেলা শুরু হতে না হতেই শেষ? ফুটবল প্র্যাকটিসে দুবন্ধু কথা বলছিলো। এরমধ্যেই মাঠে একজন আরেকজন কে বল পাশ করতে যেয়ে বলটা মাঠের বাইরে স্কুল বিল্ডিং এর সামনে এসে পড়লো। সুমনা যেন ওত পেতে ছিলো আজ। সে হাসিমুখে বল হাতে নিয়ে বসলো। আদি বল নিতে আসতে আসতে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো সুমনার দিকে। আদি ভাবছিলো, এই মেয়ে এখানে কেন? তাও আবার বল হাতে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে? আদি কাছে এসে দুবার চোখ কুচলে নিলো, সে ভুল দেখছে না তো?
“তুমি খুব ভালো খেলো?”
আদি কোমরে দু’হাত রেখে সুমনার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়-
“মতলব কি?”
“আমার আবার কি মতলব থাকবে? প্রশংসা করলেও দোষ? তুমি খামোখাই সন্দেহ করছো?
নাও তো তুমি বরং এখান থেকে একটা শট মেরে দেখাও।”
সুমনা বলটা নিয়ে আদির পায়ের কাছে রাখে। টিমের অন্যরা ততক্ষণে আদিকে ডাকতে শুরু করেছে-
“আদি, বল পাশ কর তাড়াতাড়ি, সন্ধ্যে হয়ে এলো তো? বাসায় যাবো?”
সবার তাড়ায় আদি দ্বিধাগ্রস্থ। সুমনা একটু দুরে যেয়ে দাঁড়ালো-
“কি হলো? মারো?”
আদি কনফিউশানে পড়ে একটু পিছিয়ে এসে দৌড়ে যেয়ে বলে কিক মারতেই ককিয়ে উঠে উল্টে পড়ে গেলো।
“আআআয়য়য়য়াাাা”
প্রচন্ড ব্যাথায় আদির চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। পা মনেহয় ভেঙে গেছে। কি ছিলো ওটা?বল নাকি লোহা? ছেলেগুলো ছুটে কাছে আসার আগেই সুমনা বল পাল্টে ফেললো। আদির কাছে যেয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বললো-
“তুমি আমাকে তিনদিনের জন্য সাসপেন্ড করেছিলে না? দেখো আমি তোমাকে তিনমাসের জন্য বিশ্রাম দিলাম। ভালো থেকো কেমন? বাই!”
শয়তানি হাসি দিয়ে সুমনা ওখান থেকে সরে যায়।

পরদিন স্কুলে যেতেই সুমনা শুনলো, আদির নাকি ফুটবল খেলতে যেয়ে পা ভেঙে গেছে। ডাক্তার ওকে টানা তিনমাসের রেস্ট দিয়েছে। শুনে সুমনা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করলো। বদমায়েশ ছেলে! আমার সাথে লাগতে আসা? এখন বোঝো ঠেলা?

তিনমাস সুমনা বেশ আনন্দ নিয়ে ক্লাস করলো। আর ওদিকে আদি এই তিনমাস বিছানায় শুয়ে শুয়ে কেবল রাগে মাথার চুল ছিড়তো। শফিক একদিন পর পর আদির বাসায় যেয়ে ওকে ক্লাস লেকচার দিয়ে আসতো। বাসায় টিচার রেখে আদি ওই ভাঙা পা নিয়েই পড়তো। ভাঙা পা নিয়েই আদি হাফ ইয়ারলি এক্সাম দিলো। পরীক্ষার হলে আদিকে দেখে সুমনা কেবল বাঁকা হাসি দিতো। আর অসহায় আদি দাঁত মুখ খিচিয়ে নিজের রাগ সামলে নিতো।

হাফ ইয়ারলি রেজাল্টে দেখা গেলো আদি সুমনার চেয়ে তিনমার্ক কম পেয়েছে। পুরো ক্লাস জুড়ে সুমনার চর্চা। টিচাররা সবাই সুমনাকে আলাদা নজরে দেখা শুরু করলো। আদি আরো একবার সুমনার কাছে হেরে যেয়ে যেন পাগল হয়ে গেলো। কি করে সুমনাকে শায়েস্তা করা যায় দিনরাত সেটাই ভাবতে লাগলো। সুমনাও জানতো আদি কিছু একটা বড়সড় করবে ওর সাথে। একদিন ছুটির পর বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে একা একাই রিকশা করে বাড়ি যাচ্ছিলো সুমনা। রিকশা কিছুদূর যাওয়ার পরই থেমে গেলো।
“কি হলো মামা, থামলেন কেন?”
সুমনা কিছু বোঝার আগেই রিকশায় মুখ বাঁধা কেউ উঠে সুমনার মুখ চেপে ধরলো-
“মামা, চালান রিকশা।”
“কে আপনি?”
আদি একহাত দিয়ে নিজের মুখের কাপড় সরালো।
“তুমি? কি চাও?”
“তোকে শাস্তি দিতে?”
“দেখো আদি, যা করবে স্কুলে করবে। এসব কি? নামো রিকশা থেকে?”
“খুব শখ না আমাকে হারানোর? আমার পা ভেঙে দিয়ে আমার সাথে চিটিং করে ফাস্ট হওয়া? আজ বোঝাবো?”
“কককককি বোঝাবে?”
সুমনা কিছু বোঝার আগেই আদি কিছু একটা সুমনার চুলে দিয়ে দিলো।
“ককককি করছো? কি দিচ্ছো চুলে?”
“তোর লম্বা চুলগুলোর ব্যবস্থা করছি।”
“আদি প্লিজ! উল্টা পাল্টা কিছু করো না? আমার লম্বা চুল ভীষণ প্রিয়।”
“তোর টাক মাথা দেখতে আমার ভালো লাগবে, সুমো কুস্তীগীর। আমার সাথে কুস্তি লড়তে চাইছিলি না? এবার লড়িস!”
বলেই সুমনার গালে চকাম করে একটা চুমু দিয়ে রিকশা থেকে নেমে গেলো লাফ দিয়ে। সুমনা বোকার মতো গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন বসে রইলো।
“এটা কি হলো?”
ভাবতেই মনে হলো বদটা মাথায় কিছু দিয়েছে? হাত দিতেই চুলের সাথে হাত আঁটকে গেলো। আঠা! তারমানে চুলে আঠা লাগিয়ে দিয়েছে শয়তানটা? অনেক কষ্টে হাত টানতেই কয়েকগাছি চুল উঠে এলো মাথা থেকে। সেই সাথে রক্ত আর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। সুমনা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলো।
“তোমাকে কোনোদিন মাফ করবো না, আদি! খুব খারাপ কাজ করলে তুমি?”

এরপরে আর কোনোদিন সুমনাকে ওই স্কুলে দেখা গেলো না। কারনটাও আর কারো জানা হলো না।

চলবে—–
Farhana_Yesmin

#বিপরীতে_হিত
#পর্ব-৪

৬ বছর পরঃ

আজ এমনিতেই ক্লাসের জন্য দেরী হয়ে গেছে। হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে দৌড়ে ছুটে আসছিলো আদি। সকালে ডাটা স্ট্রাকচারের ইমপর্টেন্ট ক্লাসটা সে কিছুতেই মিস দিতে চায় না। এমনিতেই এই সাবজেক্ট ঘটে ঢুকতে চায়না কিছুকেই। আর যেটা মাথা ঢোকে না সেটা পড়তে একফোটাও ইচ্ছে করে না আদির। আর সাবজেক্ট টিচারটাও মাশাআল্লাহ বোরিং। একটু যে মজাটজা করবে সে উপায়ও নেই! এই ক্লাসটাতে আদির মেজাজ খুব খিচে থাকে। তবুও করতে হয়। ফাস্ট ইয়ারে টপার হয়ে বিপদে পড়ে গেছে। এমন না যে টপার হওয়ার জন্য দিনরাত গাধার মতো খেটেছে। সাবজেক্টগুলো পড়তে মজা লেগেছে তাই পড়েছে। কিভাবে কিভাবে যেন টপ করে ফেললো। এখন পড়েছে বিপদে, টিচাররা যেন জোর করেই ওকে ফাস্ট বানাতে চায়। আর বাবা মা তো খুশিতে পাগল হওয়ার দশা! একটু কিছু হলেই বলতে শুরু করে, ভালোমতো পড় বাবা, তোকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা? আদির বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে। কেন রে বাবা! আমাকে নিয়েই আশা করতে হবে কেন? ছোট আরো দুটো আছে ওদের নিয়েও ভাবো? আমাকে নিয়ে পড়ে থাকার দরকারটা কি?
এতো চাপে আদি ভয় পায়। কবে না জানি পড়ালেখার প্রতিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে! ভাবতে ভাবতে কারো সাথে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খেলে পড়ে গেলো আদি। কাঁধে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে, মাথার সাথে মাথা বাড়ি খেয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মাথা ধরে উঠে বসার চেষ্টা করলো আদি, তার আগেই কারো কর্কশ কন্ঠ কানে তালা লাগিয়ে দিলো-
“বলি, চোখ কি মাথার পেছনে আপনার? সামনে কে আসছে দেখতে পান না? জলজ্যান্ত একটা মানুষকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন? মাথাটা তো আস্ত রাখেননি মনেহয়?”
আদি ঘোলা চোখে তাকালো কর্কশ কন্ঠির দিকে। তাকিয়েই চোখে যেন ঘোর লেগে আসছে। ঘোলা চোখের সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে মনেহচ্ছে কোনো অপ্সরী। আদি মাথার ব্যাথ্যা ভুলে গেলো, ভুলে গেলো তার ডাটা স্ট্রাকচার নামক সাবজেক্টের ইমপর্টেন্ট ক্লাস আছে। আদি চোখে দুটো ভালোমতো কচলে নিয়ে আবার তাকালো মেয়েটার দিকে। অদ্ভুত সুন্দর তো মেয়েটা? ফর্সা গোলগাল মুখ, পাতলা ঠোঁট, খাড়া নাকের ডগায় একটা কালো কুচকুচে তিল যেন নাকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। কালো ঘন চোখের পাপড়ির গভীর চোখ দেখে মনেহচ্ছে আগেও কোথাও দেখেছে? খুব চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু কোথায় দেখেছে এই মুহুর্তে মনে করতে পারলো না আদি। একটা জিনিস শুধু খারাপ লাগলো, মেয়েটার চুল! মেয়েটার চুল ছোট, ঘাড় পর্যন্ত কাটা। আদির মনেহলো, এই মেয়ের মাথায় যদি লম্বা চুল থাকতো তবে বেশ লাগতো দেখতে!
“এই যে হ্যালো, ওমন হা করে তাকিয়ে দেখছেন কি? কিছু বলছি আমি, শুনতে পারছেন না? এই যে এতোবড় করিডোর আর আপনার কিনা আমার সাথেই ধাক্কা খেতে হলো? যত্তোসব ছাগল পাগল কোথাকার। আমার কপালে যে একটা আলু বানিয়ে দিয়েছেন তা দেখতে পাচ্ছেন? এই যে?”
“আহ, আস্তে! এতো চিৎকার করছেন কেন? কান তো মনেহচ্ছে বয়রা করে দেবেন? শুনতে পাচ্ছি আমি, দয়া করে একটু আস্তে কথা বলুন!”
আদি কানে হাত দিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলো। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেও কপালটা বেশ ফুলে আছে।
“তা আপনি যে শুনতে পাচ্ছেন সেটা বুঝবো কি করে? সেই তখন থেকে তো হা করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন?”
আদি নিজের হাতটা মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলো-
“ধরুন, তুলুন তো আমাকে?”
আদির কথা শুনে মেয়েটা বোকা বোকা মুখ করে তাকিয়ে থাকলো। ভাবছে, এ আবার কেমন পাগল? এতোকিছু হয়ে গেলো আর এই লোক কিনা দিব্যি স্বাভাবিক আচরন করছে? এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি?
“এ্যা! কি বলছেন?”
“আরে বাবা, হাত ধরে একটু তুলতে বলছি? মাথাটা আমারও টনটন করছে কিনা?”
“ঢং! ঢং হচ্ছে? দামরা ছেলে কিনা নিজে উঠতে পারছে না?”
মুখ ঝামটা দিলো মেয়েটা। আদি নিজেই মেঝেতে হাতের ভর দিয়ে উঠলো। মেয়েটার মুখের একেবারে সামনে মুখ এনে বললো-
“তোমার চোখ দুটো সুন্দর খুব। আর তোমাকে না আমার খুব চেনা চেনা লাগছে। মনেহচ্ছে তোমাকে আগে কোথাও দেখেছি। দেখেছি কি?”
মেয়েটা ঘাবড়ে গেলো। ঘাবড়ে একটু পিছিয়ে দাঁড়ালো-
“দোষ করে এখন কথা ঘোরানোর চেষ্টা?”
“মোটেই না? সত্যি বলছি, তোমাকে আমার চেনা লাগছে খুব?”
মেয়েটা চরম বিরক্ত হলো –
“পথ ছাড়ুন তো?যেতে দিন, সরি বলা বাদ দিয়ে আপনি আমার সময় নষ্ট করছেন। সরুন!”
মেয়েটা হাটতে নিয়ে আবার পিছিয়ে এলো-
“আপনি আমাকে তুমি করে বললেন কেন?”
“বললাম না, চেনা চেনা লাগছে? আপন মনে হচ্ছে খুব!”
“বেয়াদব লোক একটা! চেনা নেই জানা নেই, হঠাৎ আপনি থেকে উনি তুমিতে চলে গেলেন!”
বলেই মেয়েটা চলে যেতে নিতেই আদি পেছন থেকে চেচিয়ে উঠলো –
“সরি!”
“আপনার সরি আপনার পকেটে রাখুন। ওটা আর আমার চাই না।”
মেয়েটা মাথা ঘুড়িয়ে জবাব দিলো। আদি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে নিজের ক্লাসের দিকে হাঁটা দিলো। আজকের ক্লাসতো মনেহয় শেষই। তবুও যাওয়া যাক!

*******

স্যার বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই জিনাত আর মামুন ঘিরে ধরলো আদিকে। জিনাত বললো-
“কিরে টপার! আজ ক্লাসে এতো দেরি করে এলি যে? এটা তো তোর ফেবরিট সাবজেক্ট? ”
জিনাত ফোড়ন কাটে। জানে এই সাবজেক্ট আদি পচ্ছন্দ করে না।
“আর বলিস না, একজনার সাথে এমন ধাক্কা খেলাম না….”
কথা শেষ হওয়ার আগেই মামুন বলে-
“দোস্ত ছেলে না মেয়ে?”
“আরে মেয়ে। মেয়ে তো না যেন বোম?”
“বলিস কি রে?”
“হ্যা। তবে মেয়েটাকে আগে দেখিনি রে? আমাদের বিল্ডিংএ ছিলো যেহেতু তাহলে তো এই ডিপার্টমেন্ট এরই হওয়ার কথা? আর সিনিয়রদেরকে তো চিনি, তাহলে মনেহয় জুনিয়র?”
“সেই মেয়ে নাকি আবার? ”
মামুন জিনাতকে ইশারা করে।
“কোন মেয়ে? ”
আদি প্রশ্নবোধক চাহনি ছুড়ে দেয় দু’জনার দিকে।
“আরে দোস্ত! তুই তো ছিলি না, নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরু হইছে ঐ দিন। আমরা কয়জন মিলে একটু রেগিং করতে চাইলাম কিন্তু জুনিয়র এক মেয়েতো আমাদেরই রেগ দিয়ে দিলো?”
মামুন বলে। পাশে দাঁড়িয়ে জিনাত মুচকি হাসছিলো।
“তাই নাকি? জুনিয়র মেয়ের এতো সাহস? কি করেছিলো?”
আদি জানতে চায়।
“কি করে নাই তাই বল?”
মামুনের উত্তেজিত কন্ঠস্বর।
“আরে বাবা, না বললে জানবো কি করে?”
“আরে দুজন একসাথে ছিলো। আমরা বললাম একজন গান গাও আর একজন নেচে দেখাও। তো একজন গান ঠিকই গাইলো। কিন্তু আরেকজন যার নাচের পালা সে বলে কিনা, ভাইয়া আমি নাচবো কিন্তু আপনাকেও আমার সাথে নাচতে হবে। ভাবতে পারছিস মেয়ের সাহস কতো?”
আদির বেশ মজা লাগলো শুনে।
“তারপর?”
“তারপর আর কি? আমাদের মামুন যেহেতু নাচার অফার দিয়েছিলো তাই ওকে ওঐ মেয়ের সাথে নাচতে হলো। সে কি নাচ মাইরি! নাচিয়ে নাচিয়ে মামুনকে এমন ঘুরানো ঘুরিয়েছে যে মামুনের মেয়েদের নাচ দেখার শখ চিরজীবনের মতো ঘুচিয়ে দিয়েছে। নিজের বিয়ে করা বউয়ের সাথেও আর কোনোদিন নাচবে না মামুন!”
বলেই হাসতে থাকে জিনাত। মামুন স্ন্যাগ করলো-
“ধুর তুই বেশি বেশি বললি। এতোটাও করেনি?”
“ওলে লে, মেয়ে সুন্দরী বলে ওটাও কম মনেহচ্ছে বুঝি তোমার কাছে?”
জিনাত মুখ ভেংচি দিলো। আদির মনেমনে কিছু ভাবছিলো। অনেক পুরনো স্মৃতি হৃদয়ে হানা দিয়ে গেলো। এরকম দুর্দান্ত সাহসী তো সে একজনই দেখেছে জীবনে। আদি আনমনেই জিজ্ঞেস করে ফেললো-
“কোন মেয়েরে? প্রথম দিনেই এতো সাহস দেখিয়ে ফেলেছে? তাকে তো দেখতে হয়?”
“হ্যা, ক্লাস শেষে দেখাবো তোকে। মেয়েতো আমাকে নাচিয়ে ক্যাম্পাসে বিখ্যাত হয়ে গেছে?”
মামুনের বলার ভঙ্গিতে জিনাত আর আদি দু’জনেই হেসে দিলো। মুখে হাসি থাকলেও মনেমনে ভীষণ অস্থির হলো আদি। মেয়েটাকে দেখার তীব্র বাসনা জাগছে মনে। আবার হঠাৎ হঠাৎ সকালের ধাক্কা খাওয়া মেয়েটাও মনে উকি দিয়ে যাচ্ছে। কেন জানে না অদ্ভুত পুলক জাগছে মনে। বহুদিন বাদে আজ খুব মনে পড়ছে তাকে!

চলবে—–
Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here