#বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ১৬,১৭
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৬
ময়মনসিংহ যাওয়া দিয়ে আবার অর্ধপথ থেকে বাড়ি ফিরছে আষাঢ়। আজকে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার মুড নেই। আজ কেন, মেয়েটার সাথে আর কখনোই দেখা করবে না সে। আষাঢ়ের এমন পরিবর্তন কারিবকে ভাবাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে আষাঢ় তত পাল্টে যাচ্ছে। আষাঢ়ের এই পরিবর্তনে তার খুশি হওয়ার কথা। মানুষটার মেয়েদের প্রতি থেকে ঝোঁক কমে আসছে, বিষয়টা তো ভাবতেই ভালো লাগে। কিন্তু তার খুশি হওয়ার থেকে চিন্তা হচ্ছে বেশি। চিন্তার কারণে খুশি হওয়ার জো পাচ্ছে না সে।
বাড়ি ফিরে মা এবং রুপালিকে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখলে আষাঢ় জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় যাচ্ছ তোমরা?”
লায়লা খানম শুকনো মুখে বললেন,
“নোয়ানা মেয়েটার হঠাৎ করে জ্বর এসেছে, ওকে একটু দেখে আসি।”
আষাঢ় কারিবের দিকে তাকালো একবার। কারিব ইশারায় বোঝালো সে কিছুই জানে না এ ব্যাপারে। আষাঢ় মাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কখন জ্বর এসেছে তার?”
“গতকাল থেকে না কি জ্বর জ্বর ভাব ছিল, রাতে প্রচন্ড জ্বর এসেছে। মিহিক তো সকালেই বাবার বাড়িতে গিয়েছে।”
“ও। ঠিক আছে, যাও তোমরা।”
“তুমি যাবে না? বাড়িতে তো এসে গেছো, আমাদের সাথে চলো। নোয়ানা তো আমাদের আত্মীয়। মেয়েটা অসুস্থ, দেখতে যেতে হবে না? শ্রাবণ তো সকালে একবার দেখে এসে অফিস গিয়েছে। তুমিও এখন চলো।”
“আমি এখন যেতে পারবো না আম্মু, আমার এখন একটু ঘুম প্রয়োজন। ঘুম থেকে উঠে না হয় একবার গিয়ে দেখে আসবো।”
কথাটা বলে আষাঢ় সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। কারিব অবাক। আষাঢ় নোয়ানাকে দেখতে যেতে আলসেমি করছে?
“তুমিও কি এখন যাবে না?” লায়লা খানম প্রশ্ন করলেন কারিবকে।
“না, আমার মনে হয় আষাঢ় ভাই যখন যাবে তখনই গিয়ে দেখে আসলে ভালো হবে।”
বলে কারিবও সিঁড়ির দিকে ছুটলো।
আষাঢ়ের পিছন পিছন আষাঢ়ের রুমে এসে থামলো।
“আপনার ব্যাপারটা আজ কী হলো বলুন তো আষাঢ় ভাই? আফরিনের সাথে দেখা না করে চলে এলেন, এখন আবার নোয়ানাকে দেখতে যাওয়া নিয়েও তো আপনার মাঝে কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না! আমি তো ভেবেছিলাম আপনি সবার আগে নোয়ানাকে দেখতে ছুটে যাবেন।”
আষাঢ় পরিপাটি অবস্থায়-ই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বুজে বললো,
“নোয়ানাকে দেখতে যেতে আমার মাঝে আগ্রহ নেই কে বললো? আছে বলেই তো এখন যাচ্ছি না।”
কারিব একটু বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
“এমনটা কেন?”
“এখন গেলে নোয়ানার কাছে সবাই-ই উপস্থিত থাকবে। এত লোকের মাঝে আমি কি মন খুলে একটা কথাও বলতে পারবো? দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”
কারিব নিশ্চুপ হয়ে গেল। আষাঢ়ের বুঝ ব্যবস্থা ভিন্ন। আষাঢ়ের অস্পষ্ট কণ্ঠ কানে এসে লাগে,
“অসুস্থ বলে আজ সকালে আমার কল রিসিভ করেনি, ব্যালকনিতেও দেখতে পাইনি। জ্বর এসেছে সেটা এত দেরিতে কেন জানতে হলো আমার? আই থিংক ও বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে।”
কারিব আতঙ্কিত হয়ে বললো,
“আপনি এমন একটা কাজ করবেন?”
“ওটা কথার কথা বললাম। তুমি কি একটা বিষয় জানো কারিব?”
“কী বিষয়?”
আষাঢ় চোখ খুলে তাকালো। দু চোখে কেমন কাতরতা। বললো,
“মেয়েটা বড্ড হার্টলেস! কোনো মেয়ের কি উচিত এই প্রেমিক পুরুষের সাথে এত হার্টলেস হওয়া?”
কথাটা বলে আবার চোখ বুজলো আষাঢ়।
কারিব সংশয় নিয়ে তাকিয়ে রইল। আষাঢ়ের কথা শুনলেও মানে অবধি পৌঁছাতে পারলো না সে।
_________________
“দেখতেই তো পাচ্ছ এসেছি, দেখেও বসে থাকবে? যাও কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করো। যাও।”
আষাঢ়ের কথা তীব্র বিরক্তিকর ছাড়া কিছু শোনালো না মিহিকের কাছে। সে নোয়ানার পাশ থেকে উঠে এসে চাপা স্বরে বললো,
“তোমরা দু ভাই-ই বিরক্তিকর।”
কথাটা কেবল আষাঢ়ই ভালো করে শুনতে পেল। না কারিব শুনলো স্পষ্ট, আর না শুনলো নোয়ানা। মিহিকের কথার প্রত্যুত্তরে আষাঢ় হাসলো। মিহিক হাসিটা দেখে গটগট করে বেরিয়ে গেল। আষাঢ় মিহিকের থেকে চোখ এনে নোয়ানার দিকে তাকালো। নোয়ানার ক্লান্ত মুখ। ক্লান্ত চোখ। জ্বরে কাবু হয়ে বসে আছে। আষাঢ় মৃদু হাসি উপহার দিলো। চোখ দুটো হঠাৎ অভিমানী হয়ে উঠলো। অভিমানী চোখে নোয়ানার দিকে স্থির চেয়ে থেকে কারিবের উদ্দেশ্যে বললো,
“এই বাড়ির মেয়েরা খুব সাংঘাতিক কারিব। এরা কঠিন, এরা রুক্ষ, এরা হৃদয়হীন…উঁহু, হৃদয়হীন নয়। হৃদয় নেই এমন আচরণ। কিন্তু এই মিথ্যা আচরণ করে কী লাভ? যখন আমি জানি হৃদয় আছে।”
নোয়ানার ক্লান্ত চোখ যেন আষাঢ়ের কথায় বিষাক্ত হলো। আষাঢ় নোয়ানার দিকে এগিয়ে এসে, নোয়ানার পাশে বসে, প্রথমে কপালে হাত রাখলো। খুব উষ্ণ নোয়ানার কপাল। হাতটা নোয়ানার মাথায় রেখে বললো,
“হঠাৎ করে টিউলিপ ফুলের এত জ্বর কেন এলো? আমার কথা ভাবতে ভাবতেই কি এই অসুস্থতা? জ্বর এসেছে সেটা আগে জানাওনি কেন? কেন এত দেরিতে জানতে হলো আমার?”
নোয়ানা কারিবের দিকে তাকালো। নোয়ানার হঠাৎ চাহনিতে ভড়কে গেল কারিব। আষাঢ় নোয়ানার দৃষ্টি লক্ষ্য করে বললো,
“ইট’স ও কে। কারিব আমার ব্যক্তিগত মানুষ। যা খুশি বলতে পারো ওর সামনে। কোনো চিন্তা নেই।”
নোয়ানা চোখ নিয়ে এলো আষাঢ়ের উপর। ক্লান্ত গলায় বললো,
“আমার জ্বর এসেছে সেটা আপনি আরও আগেই খবর পেয়েছেন। কিন্তু খবর পেয়ে তখনই আসেননি। দেরি করে এসেছেন।”
নোয়ানার কথা শুনে যেন আষাঢ়ের মন তৃপ্তি পেল। হেসে বললো,
“আমার উপর অভিযোগ করছো? জানো অভিযোগ কখন বাড়ে? অভিযোগে ফাঁসিয়ে দিয়ো না আমায়। তোমাকেও ছাড় দেবো না কিন্তু। এর থেকে বড়ো অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেবো তোমায়। অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য আমাকেই আঁকড়ে ধরতে হবে তখন।”
নোয়ানা চোখ সরিয়ে নিলো। হঠাৎ করে যেন কঠিনতা বিরাজ করলো তার মাঝে। কঠিন স্বরে বললো,
“আপনি আমাকে দেখতে না এলেই বোধহয় খুশি হতাম আমি।”
“হতে না। অভিনয়টা দয়া করে আবার শুরু করো না। প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার অভিনয়টা সহ্যযোগ্য হবে, উপভোগ্য হবে। কিন্তু হচ্ছে না। এটা আমার সহ্য তুল্য হচ্ছে না।”
কারিব পড়লো বিপাকে। এখানে থাকা তার কাছে একদম ঠিক মনে হচ্ছে না। কিন্তু যাবে কোথায়? তবে সে আষাঢ় আর নোয়ানার কথা বলার ধরণ দেখে এটুকু স্পষ্ট বুঝতে পারলো, নোয়ানা আর আষাঢ়ের মাঝে গভীর কিছু আছে। কিন্তু সেই গভীরতা হাতড়ে আসল ব্যাপারটুকু সে উদ্ধার করতে পারছে না। কী এক অসহ্যনীয় ব্যাপার! আষাঢ় তাকে সবটা বলবে বলেও কিছু বললো না। কবে তার আর নোয়ানার মাঝে এই গভীর ব্যাপারটা হলো?
“সেই প্রথম থেকে কী অভিনয় অভিনয় করছেন? কীসের অভিনয়? কী অভিনয় করছি আমি?”
“জানো না কি অভিনয়?”
“না, জানি না।”
“বেশ, ধরে নিলাম কিছুই জানো না তুমি। কিন্তু নতুন করে জানার চেষ্টা তো করতে পারো। সেটা কেন করছো না? আমি চাই তুমি আমাকে জানার চেষ্টা করো।”
“নতুন করে কী আর জানবো আপনাকে? যা জানা বাকি ছিল, সেটা তো নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন সেদিন। অগণিত গার্লফ্রেন্ড পুষে রাখার রোগ আপনার। আমাকেও অমন ভাববেন না। ভাববেন না যে আমিও আপনার অগণিত গার্লফ্রেন্ডের মাঝে একজন হবো।”
আষাঢ় রেগে গেল। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো,
“আমার সাথে হৃদয়হীন আচরণ করা বন্ধ করো নোয়ানা। হৃদয় কেড়ে নিয়ে, হৃদয়হীন আচরণ করা সাজে না।”
মিহিকের আগমন ঘটলো। তার হাতে ট্রে। তাকে দেখে থেমে গেল রুমের ভিতরে চলমান সকল ঝড়। মিহিক আষাঢ় আর শ্রাবণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
“তোমরা এখনও দাঁড়িয়ে কেন? বসার জায়গার অভাব পড়েছে? বসো।”
আষাঢ় বললো,
“না, বসবো না। আমাদের কাজ আছে। কারিব, চলো।”
“চলো মানে? নাস্তা নিয়ে এসেছি, সেগুলো খাবে কে? খেয়ে তারপর যাও।”
“নাস্তা তোমার বোনকে খাওয়াও ভাবি। খাইয়ে দ্রুত সুস্থ করে তোলো। তার এরকম অসুস্থতা দেখে কষ্ট হচ্ছে আমার।”
আষাঢ় একটু থেমে বললো,
“বাড়ি কখন ফিরবে তুমি? আজকে ফিরবে? না কি বোনের কাছেই থাকবে?”
প্রশ্নগুলো শুনে মিহিকের কষ্ট লাগলো। কই শ্রাবণ তো তাকে একবারও এই প্রশ্নগুলো করলো না! মিহিকের এখন বড্ড অভিমান হয় লোকটার উপর। লোকটা এমন পাষাণ কেন? সে না গেলেই হয়তো ভালো হয় শ্রাবণের। তবে এই ভালো তো সে সহ্য করবে না। বললো,
“আমি গেলে, না গেলে হয়তো কারও যায় আসবে না। আর যায় আসবে না বলেই আমি যাব।”
“ভুল বললে। তুমি বাড়ি না ফিরলে অবশ্যই আমার ভাই এটা নিয়ে ভাববে। চিন্তা করো না। সব সময় এক নিয়মে জীবন চলে না। একদিন আমার ভাই তোমার জন্যই দিওয়ানা হবে। অলরেডি দিওয়ানা হয়ে গেছে কি না কে জানে।”
আষাঢ় কাঁধ ঝাঁকালো। কারিবের উদ্দেশ্যে বললো,
“কারিব, চলো।”
শেষ এক পলক নোয়ানাকে দেখে বেরিয়ে গেল আষাঢ়।
মিহিক হেসে ওঠে মনে মনে।
‘তোমার ভাই রুমকিতেই আটকে আছে আষাঢ়। বউ’তে কখন আটকাবে সেটা সেই ভালো জানে। এত ধৈর্যশীল আমি কখনোই ছিলাম না। তোমার ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পর ধৈর্যশীল হয়েছি অনেক। তবে ধৈর্য ধরে কোনো লাভ হবে কি না জানি না। তোমার ভাই আদৌ শুধরাবে কি না জানি না আমি!’
________________
মিহিক বাড়িতে ফিরলো সন্ধ্যার আগে। শ্রাবণ ভেবেছিল মিহিক আসবে না।
“আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না, চলে এলেন যে?”
শ্রাবণের কথা শুনে রাগ-কষ্ট দুটোই হলো মিহিকের। ইদানিং কেন যেন নিজের মাঝে নিদারুণ কষ্ট, অভিমান উপলব্ধি করে সে। এই লোকটা তার মাঝে এমন নিদারুণ কিছুর জন্ম দিয়েছে। সে ধৈর্য ধরে আছে। তার আর শ্রাবণের মাঝে সম্পর্কটা ঠিক কেমন, শ্রাবণ এখনও রুমকির সাথে রিলেশনশিপে আছে, এসব মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে এখন প্রকাশ করতে চায় না। কারণ, চায় না এটা নিয়ে বড়ো কোনো ঝামেলা হোক। তার এখন মনে হয় বিয়ের মতো একটা সম্পর্ক মুহূর্তেই এভাবে ভেঙে যেতে পারে না। সে আশা করে শ্রাবণ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এরকম আশা ধরে চুপ করে থাকা ঠিক হচ্ছে কি না আদৌ জানে না। মাঝে মাঝে মনে হয় এই আশা ধরে থাকাটা ভুল। এই যে, এইমাত্রও এটাই মনে হলো। মিহিক অভিমানপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
“আমি না এলে আপনি খুশি হতেন?”
শ্রাবণ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। থতমত খাওয়া গলায় বললো,
“আমি কি সেটা বলেছি?”
“স্পষ্ট বলেননি, কিন্তু আমি বুঝতে পারি। আমি না এলেই আপনি খুশি। রুমে বসে নিশ্চিন্তে সারারাত রুমকির সাথে কথা বলতে পারবেন, আপনাকে বিরক্ত করার কেউ থাকবে না, খুব খুশি থাকতেন আপনি।”
“আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না আপনার সাথে।”
শ্রাবণ মিহিককে পাশ কাটিয়ে যাওয়া দিলে মিহিক হাত টেনে ধরলো। শ্রাবণ চমকে পিছন ফিরে তাকালো।
“কী হলো?”
মিহিক কীয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থাকে শ্রাবণের দিকে। তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
“কিছু না।”
বলে শ্রাবণের পরিবর্তে নিজে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
________________
নোয়ানার জ্বর কমে গেছে অনেক। রাত এখন দশটা বারো। ঘরের পিছনে সিঁড়িতে বসে আছে সে। বাড়ির পিছনের লাইটটা ক্ষীণ আলোয় জ্বলছে। দৃষ্টি তার আনমনা। বহু বছর আগের কিছু স্মৃতি মনে জেগে উঠছে। একটা ছোট মেয়ের কান্নার আর্তনাদ, দপদপ করে জ্বলতে থাকা অগ্নি লেলিহান শিখা, দুটো অর্ধ পোড়া লাশ, মার খাওয়ার বীভৎস দৃশ্য, এক কিশোরের হাস্য মুখ, আরও অনেক কিছু। নোয়ানার জল টলমল চোখ থেকে টুপ করে অশ্রুধারা নেমে গেল গাল বেয়ে।
পিছনে কারো চরণ ধ্বনির শব্দে নোয়ানা অশ্রু মুছে নিলো।
হাফিজা এসে বসলেন নোয়ানার পাশে। নোয়ানা নিজের অশ্রুসিক্ত নয়ন লুকাতে পারলো না। হাফিজা এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলেন নোয়ানার দিকে। অতীত নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভাবলেই নোয়ানার এমন হুট করে জ্বর আসে, এটা তিনি জানেন। শুধু তিনি না, পরিবারের সবাই জানে এটা। হাফিজা বললেন,
“কতবার বলেছি তোকে ওসব ভুলে যেতে? কেন এখনও ওসব মনে করে শরীর খারাপ করিস? এই নিয়ে কতবার হলো?”
নোয়ানার চোখ থেকে উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এবার আর মুছলো না। চুপটি হাফিজার বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বললো,
“খুব কষ্ট হচ্ছে চাচি! জীবনের কষ্টগুলো এত নির্মম হয় কেন বলো তো? তোমরা না থাকলে আমার জীবনটা হয়তো অন্ধকারেই আটকে থাকতো! হয়তো মরেও যেতে পারতাম আমি!”
(চলবে)
#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৭
_____________
আজকাল মিহিক নিজেকে দেখে নিজে অবাক হয়। বিয়ের পর তার এত অধঃপতন, এত পরিবর্তন হয়েছে! ধৈর্য বিষয়টা কখনো তার ক্যারেক্টারের সাথে ছিল না। কিন্তু আজকাল সে বড্ড ধৈর্যশীল। চোখের সামনে শ্রাবণের অসহ্যকর কীর্তিকলাপ সহ্য করছে ধৈর্যের সহিত। রুমকির সাথে শ্রাবণের সম্পর্কটা তার কাছে কাঁটার মতো। এটা হৃদয়ে কাঁটার মতো এসে বিঁধে। কিন্তু এ নিয়ে সে শ্রাবণকে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারে না। কেন পারে না ভাবলে মনে পড়ে, সে আগে থেকেই জানতো শ্রাবণ রুমকিকে ভালোবাসে! শ্রাবণ আগেই তার কাছে বলেছিল এ ব্যাপারে। সে সবটা জেনেশুনে বিয়েটা করেছে। এখন চাইলেও এটা নিয়ে সে অতটা জোরদার ভাবে কিছু বলতে পারবে না। কিন্তু তাই বলে কি এতটা সহ্য করে থাকা যায়? কী জানি! থাকছে তো সে। আজকাল আরও একটা খারাপ ব্যাপার উপলব্ধি করে মিহিক নিজের মাঝে। খারাপ ব্যাপারটা হলো, আজকাল তার ইচ্ছা হয় শ্রাবণের কেয়ার করতে। শ্রাবণের কিছু কাজ নিজ হাতে করে দিতে। এমনটা কেন হয়? কাল আবার কী একটা বিচ্ছিরি কাজ করলো! শ্রাবণের হাত টেনে ধরলো সে। আর আজ? আজ কী করছে? শ্রাবণের অগোছালো বিছানা ঠিক করে দিচ্ছে নিজ হাতে। এও কি সম্ভব তার দ্বারা? না, সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। তার অধঃপতন তাকে কোন তলানিতে নিয়ে ডুবায় কে জানে! চাইছে কাজটা অফ করতে, কিন্তু হাত যেন থামছে না। কোন মন্ত্রমুগ্ধে যেন শ্রাবণের অগোছালো বিছানাটা ঠিক করে দিচ্ছে সে।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এমন এক দৃশ্য দেখবে এ ভাবনাযোগ্য ছিল না শ্রাবণের কাছে। মিহিক তার বিছানা পরিপাটি করছে! এতদিন সে নিজেই জগিং থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানা গোছগাছ করে রাখতো। কিন্তু আজ মিহিক…সত্যি অবাক করা বিষয়! শ্রাবণ বিস্ময়ান্বিত হয়ে দেখছে মিহিককে। বিষয়টা অবাকপূর্ণ হলেও ভালো লাগছে তার। মনে হচ্ছে সত্যিই তার ঘরে একটা বউ আছে। এতদিনও মিহিককে বউ বউই মনে হতো, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যেন এক পরিপূর্ণ বউ তার ঘরে। কী সুন্দর বউ তার বিছানা পরিপাটি করে দিচ্ছে। দৃশ্যটা বেশ নয়নাভিরাম ঠেকলো। শ্রাবণ নিজের অজান্তেই একটুখানি হাসে। মনে ভালো লাগার আভা ছড়িয়ে থাকলেও, মুখে কড়া করে বলতে চাইলো,
“আমি বিছানায় ঘুমাই বলে আপনার আমার বিছানায় ঘুমাতে অসুবিধা, তাহলে এখন এটা কীভাবে করছেন? এই বিছানায় এখনও আমার রেশ লেগে আছে। সকাল বেলা আমি এই বিছানা থেকেই জাগ্রত হয়েছি। এখন আমার বিছানা পরিপাটি করে রাখতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে না?”
শ্রাবণের কণ্ঠে চমকে উঠেছিল মিহিক, ধক করে উঠেছিল তার বুক। কিন্তু শ্রাবণের কথাগুলো তার চমক কাটিয়ে সৃষ্টি করলো ক্রোধের। সাথে ঘৃণাও ছড়িয়ে দিলো।
তার কথা মিহিককে এতটা রাগিয়ে দেবে আশা করেনি শ্রাবণ। মেয়েটার রাগ বেশি। এবারও অতিরিক্ত রাগের প্রতিফলন ঘটালো মেয়েটা। একটা ছোট পাতলা কম্বল ভাঁজ করে রাখছিল সে, অর্ধ ভাঁজ করা কম্বলটা তীব্র আক্রোশে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো। বালিশ দুটো ঠিক করে রেখেছিল, তাও বিছানার মাঝখানে এনে ছুঁড়ে মেরে, রাগান্বিত হেঁটে গেল জানালার দিকে। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো সে। রাগের পাশাপাশি ব্যথিতও সে। হঠাৎই চোখে জল এলো। যত্ন করে একটা কাজ করে দিচ্ছিল সে শ্রাবণকে, আর শ্রাবণ তার এই প্রতিদান দিলো? এমন কথা কী করে বলতে পারলো? এতটা নির্দয় মানুষটা?
শ্রাবণ ফ্লোরে পড়ে থাকা কম্বলটার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে মিহিকের রাগও কেন যেন খারাপ লাগলো না তার। বরং রাগটা আজ বেশি ভালো লাগলো। রাগটাও বউ বউ ধরণের হয়েছে। বউরা তো এমন করেই রাগ দেখাবে স্বামীর সাথে, তাই না? শ্রাবণ নিজেকে খুব শান্ত লক্ষ্য করলো। ভেজা চুলগুলো আরেকবার তোয়ালে দিয়ে মুছে তোয়ালেটা চেয়ারে রেখে, ফ্লোরে পড়ে থাকা কম্বলের দিকে এগিয়ে এলো। কম্বলটা উঠিয়ে ভাঁজ করে বিছানায় রেখে দিলো। বালিশ দুটোও ঠিক করে রাখলো। মিহিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো, মিহিক এখনও জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ এগিয়ে গেল সেদিকে। মিহিকের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মৃদু কণ্ঠে বললো,
“এত রাগ করবেন না মিহিক। বউ মানুষ রাগ করবেন ভালো কথা, কিন্তু আপনার রাগ মাত্রাতিরিক্ত। বিয়ের পর এমন একটা দিন ছিল না যেদিন আপনার রাগী মুখটা দেখিনি আমি।”
পিছনে শ্রাবণের কথা শুনে মিহিক আঁতকে উঠে তাকালো সেদিকে। শ্রাবণ তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্য করেনি সে।
মিহিকের চোখে চোখ পড়তে অপ্রস্তুত হয়ে গেল শ্রাবণ। বিব্রত অবস্থায় পড়লো। মিহিকের চোখে অশ্রু লক্ষ্য করে সে। খাপছাড়া কণ্ঠে বললো,
“আ…আপনার চোখে পানি কেন?”
মিহিক সঙ্গে সঙ্গে কঠিন স্বরে উত্তর দিলো,
“আমি রেগে গেলে কাঁদি।”
বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। হনহন করে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
শ্রাবণ এতক্ষণ যে রাগটা উপলব্ধি করেনি নিজের মাঝে, এবার সেটা করলো। মেয়েটার রাগ আসলেই আকাশ ছোঁয়া। না হলে রেগে গেলেও মানুষ কাঁদে এমন কিছু তো কখনও শোনেনি! এ মেয়ের এত রাগ যে, রেগে গেলে কাঁদে?
________________
“আজকেই শেষ, বুঝলে? চিন্তা করেছি বাংলাদেশ থাকাকালীন আর কোনো মেয়েকে স্বল্প সাময়িক গার্লফ্রেন্ড লিস্টে এড করবো না।”
কারিব অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করে আষাঢ়ের কথায়। উজ্জ্বল মুখে বললো,
“খুব ভালো একটা উদ্যেগ নিয়েছেন আষাঢ় ভাই।”
আয়নায় আষাঢ়ের হাসি মুখের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় কারিব। আষাঢ় শার্টের বোতামগুলো আটকে নিয়ে পিছন ফিরে কারিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যশোরই লাস্ট।”
কারিবও এক টুকরো হাসি উপহার দিলো।
সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে লিভিং রুমে চোখ পড়তে চোখ আটকে যায় আষাঢ়ের। দেখতে পায় এক সুন্দরী মেয়ে তাদের লিভিং রুম আলোকিত করে রেখেছে নিজ সৌন্দর্যে। মেয়েটার হাসি মুখ খুব করে চোখে লাগলো আষাঢ়ের। সে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
“ওয়াও!”
তারপর কারিবের উদ্দেশ্যে গলা নিচু করে বললো,
“কারিব, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? আমাদের লিভিং রুম কী পরিমাণ আলোতে ঝলমল করছে?”
“জি আষাঢ় ভাই। সকালের সোনালি আলো জানালা দিয়ে প্রবেশ করে একেবারে আলোকিত করে রেখেছে লিভিং রুম।”
আষাঢ়ের দৃষ্টি সরলো না সুন্দরীর উপর থেকে। সেদিকে অপলক তাকিয়ে থেকে কারিবের উদ্দেশ্যে বিরক্ত নিয়ে বললো,
“বোকা ছেলে! আমি কি সেই আলোর কথা বলেছি? তাকিয়ে দেখো সোফার দিকে। ঠিক যেন সূর্য লুটিয়ে পড়েছে আমার ঘরে। কী পরিমাণ আলো!”
কারিব বুঝতে পারে আষাঢ়ের কথা। অবশ্য আগেই বুঝেছিল। বললো,
“মেয়েটাকে কি খুব পছন্দ হয়েছে?”
“হুহ, ভীষণ।”
আষাঢ়ের কথা শুনে কারিব এটুকু নিশ্চিত হলো, আষাঢ়ের মাঝ থেকে এখনও মেয়ে বিষয়ক ব্যাপারটা বিতাড়িত হতে বহু দেরি। তবে আজকে আষাঢ়ের এই মেয়েটাকে দেখে এমন মন্তব্যে সে খুব খুশি হলো। মিটি হাসি অধরে ঝুলিয়ে আষাঢ়ের পাশাপাশি নেমে এলো লিভিং রুমে। আষাঢ় সুন্দরী, এবং সুন্দরীর পাশাপাশি আরও দুজন মাঝ বয়সী আগন্তুককে সালাম জানালো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
সবার মনোযোগ নিজের দিকে ঘোরাতে সক্ষম হলো আষাঢ়। সুন্দরী তাকালো একটু দেরিতে। সুন্দরী না তাকানো অবধি আষাঢ় হাসলো না। তাকানোর পর অমায়িক এক হাসি উপহার পেল সবাই। মাঝ বয়সী দুই আগন্তুক সালামের জবাব দিলেন, কিন্তু সুন্দরী চুপ রইল। কেমন বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো নাদুস-নুদুস চেহারা নিয়ে।
লায়লা খানম ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিতে।
“আমার ছোট ছেলে হিমেল। ওর কথা তো আপনাদের অনেক বলেছি। আমেরিকা থাকে নিজের ফুফুদের কাছে।”
আগন্তুক ভদ্র লোক, ভদ্র মহিলা একটু হেসে মাথা দোলালো। আষাঢ় শুনেছিল বাড়িতে কোন অতিথি আসবে, এরাই যে সেই অথিতি সেটা বুঝতে বাকি নেই। সে মিহিকের পাশে বসে বললো,
“আমার নাম হিমেল ইসলাম, কিন্তু আপনারা আমাকে আষাঢ় বলেও ডাকতে পারেন। এটা আমার ডাক নাম।”
বলতে বলতে চোখ একবার ছুটে যায় সুন্দরীর উপর। সুন্দরী এখন আর তার দিকে তাকিয়ে নেই।
মিহিক লক্ষ্য করছিল আষাঢ়কে। আষাঢ়ের ভাবমূর্তি তার ভালো লাগলো না।
কেউ কিছু না বললে, আষাঢ় আবার বললো,
“আমি দুঃখিত যে, আমি এখন আপনাদের সাথে বসে কথা বলতে পারছি না। আমার খুব জরুরি একটা কাজ আছে যশোরে। সেখান থেকে ফিরে না হয় আবার কথা হবে আপনাদের সাথে। আমি উঠছি।”
আষাঢ় কারিবকে ইশারা করলো। কারিব বাধ্য মতোন এগোতে লাগলো দরজার দিকে। আষাঢ় আড় চোখে সুন্দরীর উপর দৃষ্টি রেখে চলতে লাগলো। ঠোঁটে তার কেমন বাঁকা হাসি।
_________________
“মেয়েটা আমার মাথা থেকে নামতে চাইছে না কারিব। কে এই মেয়ে? বলা বাহুল্য যে, এই মেয়ে আমার দেখা সকল মেয়েদের থেকে বেশি সুন্দর। আমাদের আত্মীয় লিস্টে এত সুন্দর মেয়ে আছে এটা তো কোনোদিন জানতাম না। তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?”
“আমিও যে খুব আগে থেকে জানতাম তেমন না আষা…”
“ওহ, শি ইজ সো বিউটিফুল! মেয়েটার চোখ দুটো এখনও আমার মনে স্পষ্ট ফুঁটে আছে। আচ্ছা, নাম কী মেয়েটার? জানো তুমি?”
“জি, জানি। সিনথিয়া।”
আষাঢ় মনে মনে একবার আওড়ালো,
‘সিনথিয়া!’
তারপর হেসে ফেললো।
কারের উইন্ডো দিয়ে বাইরে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে বললো,
“নোয়ানার জ্বর কেমন এখন?”
প্রশ্নটা করা কালীনও সিনথিয়া নামের মেয়েটা আষাঢ়ের মাথা থেকে সরলো না।
“নোয়ানার জ্বর অনেকটা কমে গেছে। খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”
“নোয়ানা খুব কঠিন একটা মেয়ে। ওর কঠিনতার পর্দা ডিঙিয়ে ওর নরম মন অবধি পৌঁছাতে পারছি না আমি। কিন্তু পৌঁছাতে আমার হবে। ওর সম্পর্কে কিছু ডকুমেন্ট চেয়েছিলাম তোমার কাছে, সেগুলো কি কালেক্ট করেছো?”
“কারো সম্পর্কে ডকুমেন্ট কালেক্ট করা এত সহজ? আমি কি আর পুলিশের লোক? কালেক্ট করতে পারিনি এখনও, তবে করে ফেলবো। সে নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না।”
“আমি চিন্তিত নই, আমি উত্তেজিত।”
থামলো আষাঢ়। আবার বললো,
“সিনথিয়া মেয়েটা খুব করে আমার মনে লেগে গেছে। সুন্দরী নিজে আগ বাড়িয়ে বাড়িতে চলে এসেছে, কী সৌভাগ্য! আমার ভাগ্য যেন বরাবর একটু বেশিই ভালো। তবে আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা একটু বোকা ধরণের। এই ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে। সুন্দরী মেয়েদের কেন বোকা হতে হয় বলো তো? তবে এতে আমারই সুবিধা হবে, কী বলো?”
“নিশ্চয়ই।”
“আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে সে। তার সম্মান আমি উপরেই রাখবো।”
কারিব হাসছে। আষাঢ়ের কথাবার্তা শুনতে আজ খুব ভালো লাগছে তার। অবশেষে তার আষাঢ় ভাইয়ের মেয়েদের প্রতি থেকে ঝোঁক কমবে তাহলে।
__________________
“তোমার ব্যাপার-স্যাপার আমি কিছু বুঝতে পারছি না শ্রাবণ।”
“কীসের ব্যাপার-স্যাপারের কথা বলছো আম্মু?”
“মিহিকের মুখের দিকে তাকালেই আমি কেন অসুখী ভাব দেখতে পাই? তুমি কেমন আচরণ করো ওর সাথে?” লায়লা খানমের গলা রূঢ়।
শ্রাবণ বিব্রত বোধ করলো। কিন্তু তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে ভুললো না,
“আমি কেমন আচরণ করি তার সাথে? সব সময় খুব সুন্দর আচরণই তো করি। আমাদের মাঝে সম্পর্ক তো খুব সুন্দর। কখনো আমরা ঝগড়া করেছি, এমন কিছু শুনেছো? সে কি বলেছে আমি তার সাথে ঝগড়া করি?”
“যদি ঝগড়া না করো, খারাপ আচরণ না করো তাহলে ওকে অমন দেখায় কেন? কেন ওর মুখে অসুখী ছায়া দেখতে পাই?”
শ্রাবণ যেন আজ বলার সুযোগ পেল। সুযোগ পেতেই বলে উঠলো,
“তো অসুখী দেখাবে না? জোর করে বিয়ে দিলে কি আর হাসিখুশি থাকা যায়? মিহিক কি আমাকে বিয়ে করতে চাইছিল? আমি কি মিহিককে বিয়ে করতে চাইছিলাম? আমরা কেউ-ই নিজ ইচ্ছাতে এই বিয়ে করতে চাইনি। তোমাদের জোরাজুরিতে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি। যে মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে সে মেয়ে হাসিখুশি থাকবে কী করে? অসুখী তো দেখাবেই তাকে।”
মাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না শ্রাবণ। দ্রুত পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তার রাগ মিহিকের উপর হচ্ছে। মেয়েটা এভাবে বোকামি করছে?
রুমে এসে দেখতে পেল মিহিক আয়নার সামনে। চুল আচড়াচ্ছে। শ্রাবণ দেখে বুঝলো, কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মিহিক।
সে রাগ দেখিয়েই বলে উঠলো,
“আমার সাথে থাকতে আপনার অনিচ্ছা, আমাকে পছন্দ করেন না, তাই বলে এটা বাইরে মুখ গোমড়া করে রেখে প্রকাশ করতে হবে? আপনাকে তো আমি বলেছিলাম, আমাদের মাঝে সম্পর্কটা কেমন সেটা এত তাড়াতাড়ি বাইরে প্রকাশ করবো না। তারপরও আপনি এটা কেন করলেন? আমার সাথে যত ইচ্ছা রাগ দেখান, মুখে জীবনেও হাসি না ফুঁটিয়ে মুখ গোমড়া করে রাখুন, তাই বলে বাড়ির সকলের সামনে এমন কেন থাকবেন? জোর করে হলেও কি একটু হাসতে পারেন না সকলের সামনে? জানেন আম্মু আমাকে আজ জিজ্ঞেস করেছে, আমি কেমন আচরণ করি আপনার সাথে। আপনার মুখে অসুখী ছায়া দেখতে পায় সে। আচ্ছা, আমি কেমন আচরণ করি আপনার সাথে? আমি কি আপনার সাথে ঝগড়া করি? উল্টো আপনি আমার সাথে ঝগড়া করেন। আমরা দুজনই দুজনের সাথে স্বাভাবিক নই। এটা শুধু আমার সমস্যা নয়, আপনারও সমস্যা। তাহলে বাইরে আপনি কেন অমন থাকেন? যেখানে আমি সবাইকে এটা বোঝাতে চাইছি যে, আমাদের মাঝে সম্পর্কটা স্বাভাবিক। সেখানে আপনি মুখ গোমড়া করে রেখে এটাকে অস্বাভাবিক করে দেখাচ্ছেন। এতে বাড়ির মানুষ কতটা কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পারছেন আপনি? আপ…”
মিহিক তীব্র রাগে হাতের চিরুনি ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে, আর এই দৃশ্য দেখেই থেমে গেল শ্রাবণ। মিহিক রাগে জ্বলন্ত। টুল ছেড়ে সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো শ্রাবণের দিকে। এসেই চাপা গর্জনে বললো,
“আপনি যদি সম্পর্কে আমার স্বামী না হতেন না, আমি আপনাকে…”
কথা শেষ না করেই থেমে গেল মিহিক।
শ্রাবণ দমে গেল না। বললো,
“কী? আপনি আমাকে কী? গায়ে হাত তোলার কথা বলতে চাইছিলেন, তাই তো? তো তুলুন। তুলছেন না কেন? সাথে তুই-তোকারিটাও শুরু করুন।”
মিহিকের এই মুহূর্তে শ্রাবণের প্রতি যে তিক্ত অনুভূতিটা হলো সেটা প্রকাশ করার মতো না। ঘৃণা ভর্তি চোখ জোড়া শ্রাবণের উপর থেকে সরিয়ে নিলো সে অতি কষ্টে। একটু পর আবার তাকিয়ে বললো,
“আমাদের মাঝে সম্পর্কটা কেমন সেটা বাড়ির লোক জানলে তারা ক…” মিহিক বলা দিয়েও আবার ভুল হয়েছে এমন করে বললো,
“উঁহু না। বাড়ির লোক কষ্ট পাবে, কি পাবে না এটা নিয়ে তো আপনি ভাবছেন না। এটা তারা জেনে গেলে আপনাকে তেজ্যপুত্র করে দেওয়া হবে এটা নিয়েই আপনার ভয়। এটা নিয়েই ভাবছেন আপনি। কিন্তু এটা নিয়ে একবার ভাবছেন না, আমাদের সম্পর্কের গতিটা ঠিক কী হবে? আমাদের মাঝে সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয় এটা এখন আপনি জানাতে চাইছেন না, কিন্তু একদিন তো জানাবেন। কখন জানাবেন সেটা? তখন জানালে তখন কি আপনাকে তেজ্যপুত্র করে দেওয়া হবে না?”
মিহিকের কণ্ঠ বেশ অভিমান পূর্ণ। শ্রাবণ কিছু বলতে পারলো না মিহিকের উপর। শুধু হৃদয়ে একটা অপরাধ বোধ ছেয়ে গেল। মিহিকের কণ্ঠ আগের থেকে অনেক নরম হয়ে গেল,
“আমি সকলের সামনে হাসি-খুশিই থাকি, কিন্তু আমি হাসিখুশি থাকলেও যদি আমাকে সুখী না দেখায় আমি কী করবো? আমি আপনার মতো অত ভালো অভিনয় পারি না হয়তো। আমাকে এর আগে কখনো অভিনয় করতে হয়নি তাই আমি পারদর্শী নই। আর অভিনয়টা আমার নিজ প্রয়োজনে করতেও হচ্ছে না। প্রয়োজন আপনার। আপনি নিজ প্রয়োজনে অসাধারণ অভিনয় করছেন। আমার অভিনয় নড়বড়ে। নড়বড়ে অভিনয় হলে আপনার মা যে ধরে ফেলবে সেটাই তো স্বাভাবিক। আর আপনি আমাকে জোর করে মুখে হাসি ফুঁটিয়ে রাখার কথা বললেন, তেমনি আমিও বলছি আপনি জোর করে সুন্দর হওয়ার চেষ্টা করুন। আশা করছি সুন্দর হতে সক্ষম হবেন।”
মিহিক সরে গেল শ্রাবণের সামনে থেকে। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো খানিক সময় নিয়ে। তারপর দরজার দিকে গেল।
“কোথায় যাচ্ছেন? সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তো।”
মিহিক না থেমে উত্তর দিলো,
“বাড়ি যাচ্ছি। ফিরবো না আজ। মনের সুখে যত খুশি কথা বলে রাখবেন রুমকির সাথে।”
মিহিকের শেষের কথায় কেমন ব্যথা অনুভব হলো শ্রাবণের।
__________________
রাত্রি অগভীর। মৃদু হাওয়ায় জানালার পর্দা কেঁপে উঠছে। শ্রাবণ একা রুমে। মিহিক সত্যি ফেরেনি। মিহিক আজ বাবার বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো কেন? বিকেলে ওসব কথা বললো দেখে রাগ করে থাকছে? হয়তো। শ্রাবণের কাজে মন নেই। তবুও বাধ্যতামূলক কাজ করে যাচ্ছে ল্যাপটপে। রুমকি কল দিয়েছিল। খুব বেশি কথা বলেনি, কাজের চাপ দেখিয়ে ফোন রেখে দিয়েছে। রুমকির সাথে এত কম কথা বলা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে হয় শ্রাবণের, কিন্তু কথা বলার খুব একটা আগ্রহ পায় না। মিহিকের একটা কথা তাকে ভাবাচ্ছে। এই সম্পর্কের গতি কী হবে? প্রশ্নটা নিয়ে ভাবলেও মাথা ব্যথা হয়ে যায়। একটুখানি ভাবনা কাজ করে না এটা নিয়ে। কিন্তু সম্পর্ক এভাবে যে চলতে পারে না এটা তো সত্য। কী হবে এর গতি? সত্যিই ডিভোর্স?
দরজায় টোকা পড়ে। শোনা যায় আষাঢ়ের কণ্ঠ,
“আমি কি প্রবেশ করতে পারি?”
শ্রাবণ বললো,
“আয়।”
আষাঢ় দরজা খুলে ঢুকলো। রুমে শ্রাবণকে একা দেখে বললো,
“তুমি একা কেন? ভাবি কোথায়? ভাবির কাছে দরকার ছিল আমার।”
“তোর ভাবি এখানে নেই।”
“রুমে যে নেই সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। কোথায় গিয়েছে?”
“তোর ভাবি এ রুমেও নেই, আর এ বাড়িতেও নেই, চলে গেছে।”
“বাবার বাড়ি চলে গেছে? এই রাতে?”
“রাতে না, সন্ধ্যায়।”
“যাই হোক, এসেছিলাম তার অসুস্থ বোনের খবর নিতে। তার অসুস্থ বোন তো ফোন দিলে ফোন রিসিভ করে। কিন্তু তার কাছে খবর নিতে এসে দেখলাম, সেই উল্টো খবরের কাছে চলে গেছে।”
আষাঢ় শুকনো মুখ নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘুরলে শ্রাবণ বললো,
“দাঁড়া।”
আষাঢ় বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“ব্রো তোমার সাথে এখন কথা বলার মুড নেই আমার।”
“তা থাকবে কেন? হবু বউ এসেছে, হবু বউ নিয়েই তো পড়ে থাকবে তুমি।”
আষাঢ় কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,
“হবু বউ?”
শ্রাবণ আষাঢ়ের প্রশ্ন কানে তুললো না। বললো,
“খুব তো বলেছিলি, তোর হবু বউ লিভিং রুমে এসে বসে রয়েছে জানলে এক ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতি। তা ধরেছিস? এমন কোনো ঘটনা শুনতে পেলাম না কেন?”
আষাঢ় যা বুঝে নেওয়ার বুঝে নিলো। তারপরও জিজ্ঞেস করলো,
“হবু বউ…কীসব বলছো ব্রো?”
শ্রাবণ অবাক হলো।
“তুই জানিস না? কারিবও কিছু বলেনি তোকে?”
আষাঢ় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। মাথা ঘুরছে যেন তার। এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না আর। দ্রুত বেগে বেরিয়ে এলো শ্রাবণের রুম থেকে। করিডোর দিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে কল করলো কারিবকে। ইমেডিয়েটলি নিজের রুমে ডাকলো।
আষাঢ়ের মাথা এলোমেলো। দিশেহারা সে। হবু বউ মানে কী?
কারিব কিছুক্ষণের মধ্যে এসে উপস্থিত হলো। আষাঢ় বেডে মাথা নুইয়ে বসেছিল। কারিবকে দেখেই মাথা তুলে বললো,
“ওই সুন্দরী মেয়েটা কে? আমাদের বাড়িতে এসেছে কেন?”
কারিব একগাল হেসে বললো,
“জেনে গেছেন, তাই না? আপনার হবু বউ সে।”
আষাঢ় দাঁড়িয়ে গেল।
“তুমি আগে থেকেই জানতে কারিব? তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করলে আমার সাথে? কেন জানা সত্ত্বেও বলোনি মেয়েটা আমার হবু বউ?”
“আপনি এত হাইপার হচ্ছেন কেন? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি খুশি হবেন।”
“এই কাজটা কে করেছে?”
“আপনার আব্বু। আপনার আব্বুই সিনথিয়ার সাথে আপনার বিয়ে নিয়ে ভেবেছেন।”
কবির সাহেব নিজের ছোট ছেলেকে নিয়ে সন্দ্বিগ্ন ছিলেন। ছেলের মেয়েদের প্রতি কিঞ্চিৎ ঝোঁক আছে এ ব্যাপারটা মাথায় রেখে উনি সব কিছু করেছেন। সিনথিয়া’রা সপরিবারে ইন্ডিয়া থাকে। সিনথিয়ার বাবার সাথে কবির সাহেবের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আষাঢ়ের সাথে সিনথিয়ার বিয়ে নিয়ে এক বছর আগেই টুকটাক কথা হয়েছে তাদের মাঝে। কিন্তু এখন একটু বিশেষ জোর দেওয়া হলো। এবার যখন আষাঢ় বাংলাদেশ আসবে, তখন তাদেরও বলা হলো, তারা ইন্ডিয়া থেকে কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশ আসুক। ছেলে-মেয়ে একে অপরকে দেখুক। ছেলে-মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করলেই বিয়ে কনফার্ম। এ সবটাই আষাঢ়ের অজান্তে ছিল। এমনকি বাড়ির কেউ-ও এই ব্যাপারটা জানতো না। কবির সাহেব একা একা করেছেন সব। সিনথিয়া’রা আসবে এর কিছুদিন আগে ব্যাপারটা জানিয়েছিলেন লায়লা খানমকে। এরপর সবাই-ই একটু একটু করে অবগত হলো। শুধু আষাঢ় জানতো না। কারিবও জানায়নি, চেয়েছিল একটা সারপ্রাইজ হবে। কিন্তু এখন যা দেখছে…
“আপনি কি খুশি হননি আষাঢ় ভাই? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি খুশি হবেন। সকাল বেলা সিনথিয়াকে দেখে আপনি তো বেশ খুশিই ছিলেন। নিজের মুখেই তো বলেছিলেন এই মেয়ে আপনার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। আমেরিকাতেও এমন সুন্দরী মেয়ে দেখেননি আপনি।”
আষাঢ় শান্ত হয়েছে। শান্ত স্বরে জবাব দিলো,
“এটা ভালো হলো না কারিব।”
“ভালো হলো না কেন? তার মতো এত সুন্দরী একটা মেয়ে আপনার বউ হবে। এমনকি এমন একটা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করার কথা আপনার মা-বাবাকে আপনার নিজের বলতে হয়নি, তারাই ঠিক করেছে। জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবেন, ভালোই তো হলো।”
আষাঢ় হাসলো। সব সময়ের পরিচিত হাসি। জানালার দিকে এগিয়ে গেল। চোখ রাখলো পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে। রুম থেকে ভেসে আসা ঝাপসা আলোয় ব্যালকনিটা দেখা যাচ্ছে। ব্যালকনিটা মানবীহীন। আষাঢ় সেদিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“না ভালো হলো না এটা। একদমই ভালো হলো না।”
কারিবের শঙ্কা শঙ্কা ভাব হচ্ছে। মনে হচ্ছে তার সন্দেহ ঠিক। সে আষাঢ়ের দিকে এগিয়ে গেল। আষাঢ়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে। আষাঢ় কারিবের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলো কারিবের ভাবমূর্তি। বুঝতে পেরে বললো,
“কী কারিব, ভালো হলো?”
কারিব বিস্ময়ের ঘোর নিয়ে তাকালো আষাঢ়ের দিকে। আষাঢ় এখনও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে। কারিব থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,
“না আষাঢ় ভাই, ভালো তো হলো না।”
আষাঢ় মৃদু হাসলো। কারিব তার হাসিটুকুও গভীর বিস্ময়ে দেখলো। শেষমেশ তার ধারণা সত্যি হয়ে গেল? কিন্তু কী করে? বলে উঠলো,
“আপনি কি সত্যিই নোয়ানার ব্যাপারে সিরিয়াস?”
আষাঢ় আরও দীর্ঘ হেসে বললো,
“তোমাকে সব কিছু খুলে বলার সময় এসেছে কারিব। নোয়ানার ব্যাপারে আমি সিরিয়াস নই, আমি বেপরোয়া। সে আমার বিশেষ। অনেক রাতের ঘুম কাড়া ব্যক্তি সে আমার। বহু বছর পর পেয়েছি তাকে, আর ছাড়ছি না। এমন কঠিন শেকলে আটকাবো যে কিছুতেই ছাড়া পাবে না। তার বিষাদ, বিষণ্ন চোখ জোড়া যে আমার ভীষণ প্রিয়। ওই চোখ সারাজীবনের জন্য দেখতে না পেলে তৃষ্ণা মিটবে না। আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে সে, তার হৃদয়ও ছিনিয়ে আনতে চাই আমি। কিছুটা হয়তো এনেওছি। এখন সম্পূর্নটা চাই আমার।”
আষাঢ় থামলো। ক্ষণিকের বিরতি নিয়ে বললো, “ছাড়ছি না তোমায়, সত্যিই ছাড়ছি না টিউলিপ ফুল! তুমি আমার ব্যক্তিগত টিউলিপ। আমার প্রথম ভালো লাগা ছিলে। এমনকি ভালোবাসাও। তুমি আমার একমাত্র ভালোবাসা। তোমাকে কী করে ছাড়ি?”
কথাটা বলে অদ্ভুত হাসে আষাঢ়।
(চলবে)