বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ২০

0
495

#বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ২০
#লেখা: ইফরাত মিলি

চোখ খুলে সিনথিকে নিজের দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভারি বিরক্তবোধ করলো আষাঢ়। সিনথি হেসে গুড মর্নিং জানালো,
“গুড মর্নিং হবু বর।”

আষাঢ় একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো। সিনথি সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
আষাঢ় বললো,
“তুমি আমার রুমে কী করছো?”

“এক সময় এ রুমটা আমারও তো হবে, এখন থেকে আসা যাওয়া চললে তোমার আপত্তি করা উচিত নয়।”

আষাঢ় তীব্র বিরক্ত। কিছু না বলে মুখ বিকৃত করে রাখলো। সিনথি আষাঢ়ের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো,
“তোমার এই এলোমেলো রূপ দেখে যে কেউ পাগল হবে আষাঢ়। নিজেকে সবসময় পরিপাটি রেখো। এত পাগল করো না মেয়েদের।”

আষাঢ় হেসে ফেললো। ঠেস মূলক হাসি। বললো,
“আমাকে অনুকরণ করছো?”

সিনথি প্রত্যুত্তরে হাসলো।

“ইন্ডিয়া ব্যাক করবে কবে তোমরা?”

“এত জানার আগ্রহ কেন? চলে গেলে কষ্ট পাবে? কষ্ট পেতে হবে না। এক মাসের আগে নড়ছি না তোমাদের বাড়ি থেকে। অবশ্য মা-বাবা কিছুদিন পরই চলে যাবে।”

“তোমারও চলে যাওয়া বেটার। আমার প্রতি ইন্টারেস্ট হয়ে লাভ নেই। আগেই সাবধান করছি। তোমাকে বিয়ে করবো না আমি।”

“বিয়ে করবে না আমায়?”

“না।”

“করবে, আমাকেই বিয়ে করবে।”

“এত কনফিডেন্স?”

“হুহ। আচ্ছা, তোমার স্থায়ী পাঁচ গার্লফ্রেন্ড না কি যেন আছে না? তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে না আমায়? তাদের সাথে পরিচিত হওয়ার খুব ইচ্ছা আমার। কারা এই সৌভাগ্যশালী?”

“সেটা তোমার জানতে হবে না। তুমি শুধু আমাকে জানার চেষ্টা করো। আর জেনে বিদায় হও।”

“তোমার বউ না হয়ে যাব না।”
আবারও ঝুঁকে পড়লো সিনথিয়া।
আষাঢ় অকস্মাৎ একটু ঘাবড়ে গেল।
সিনথি আষাঢ়ের চোখ জোড়ায় গভীর দৃষ্টি রেখে বললো,
“খুব শীঘ্রই প্রেমে পড়বে তুমি আমার। আর না পড়লেও সমস্যা নেই। বিনা প্রেমে বিয়ে হবে আমাদের। প্রেমটা না হয় বিয়ের পরই হবে।”
ফিচেল হাসলো সিনথি। রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে গেলে আষাঢ় পিছন থেকে বলে উঠলো,
“আমি একজনের প্রেমে ডুবে আছি ইতোমধ্য।”

সিনথি থেমে গেল। পিছন ফিরে তাকালে আষাঢ় বললো,
“সত্যিকারের প্রেম এটা। রিয়েল লাভ।”

সিনথি চোখ ছোট ছোট করে কেমন শ্লেষপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
“প্লে-বয়ের আবার রিয়েল লাভ’ও আছে না কি?”

আষাঢ় হেসে বললো,
“আছে বৈ কি!”

“তাহলে আমার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী বের হলো। ওয়াও! ইন্টারেস্টিং। বেশ এনজয় করবো আমি। কে সে?”

“আমার বলতে হবে না, নিজেই বুঝে যাবে ধীরে ধীরে।”

“তাই? ও কে, নো প্রব্লেম। যত প্রতিদ্বন্দ্বীই বের হোক না কেন, তোমাকে আমি ছাড়ছি না।”
সিনথি হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।

আষাঢ়ের শিরা-উপশিরা দপদপ করে উঠলো রাগে। এক হাতে বালিশটা শক্ত করে চেপে ধরে ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে।

___________________

কবির সাহেবের ক্ষুব্ধ মেজাজ। কারিব তাকে সব জানিয়েছে। এই তাহলে করে বেড়াচ্ছে শ্রাবণ?
রুপালির সকলের উপরই নজর রাখার স্বভাব। শ্রাবণ আর মিহিককেও পর্যবেক্ষণ করছিল সে। তা থেকে বুঝলো শ্রাবণ এখনও রুমকির সাথে যোগাযোগ রেখেছে, আর মিহিকের সাথে তার সম্পর্কটাও ঠিক নেই। কাল রাতে আবার দুজন ঝগড়া করেছে। সে শুনেছে ওদের ঝগড়া। প্রথমে এসব কারিবকে বলেছিল সে। কারিবকে যতই শয়তানের ছোট ভাই উপাধি দিক না কেন সে, কিন্তু এসব খবরাখবর কারিবকেই জানায় প্রথমে।
কারিব শুনে তো আর চুপ থাকেনি। কবির সাহেবকে জানিয়ে দিয়েছে সব।
প্রথমে বেশ ক্ষেপে গিয়েছিলেন কবির সাহেব। ধীরে ধীরে নিজের রাগ সংযত করেছেন আবার। ব্রেকফাস্টের সময় শ্রাবণকে বলেছে, খাওয়া শেষ করে তার রুমে আসতে।
কবির সাহেব যখন এ কথা বলেছিল তখনই শ্রাবণের মন কু ডেকে ওঠে। বাবার গম্ভীর স্বরের কণ্ঠ তাকে জানান দেয় বিপদের শঙ্কা। শ্রাবণ খাওয়া শেষ করলো দেরি করে। বাবার রুমে না গিয়ে পারলেই বাঁচতো। কিন্তু বাবার কথা অমান্য করার সাহস তার নেই। ভয়ে পড়ে হলেও বাবার সব কথা শোনে সে। আষাঢ়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। শ্রাবণ ভয়ে বাবার কথা শুনলেও, আষাঢ় বাবার কথা শোনে বাবাকে মান্য করে। এই জন্য গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারটাও বাবার কাছ থেকে সুন্দর ভাবে চেপে যেতে চায়।

শ্রাবণ বাবার রুমে এসে দেখলো বাবার পাশাপাশি মা, আষাঢ়, কারিব, রুপালিও রুমে আছে। ভয়ের শীতল স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল তার। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো,
“কেন ডেকেছো আব্বু?”

কাউচে বসে কবির সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে তিনি পর্যবেক্ষণ করলেন শ্রাবণকে। তারপর শান্ত অথচ ক্ষিপ্র কণ্ঠে বললেন,
“রুমকির সাথে এখনও যোগাযোগ আছে তোমার?”

বাবার প্রশ্নে থমকে যায় শ্রাবণ। দুই সেকেন্ড সময় নিলো ভাবতে। এরই মাঝে অস্বীকার করে অকপটে বলে উঠলো,
“না, রুমকির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আমার। বিয়ের আগে থেকেই তো ওর সাথে আমার সকল যোগাযোগ বন্ধ…”

কবির সাহেব দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন,
“খামোশ!”

চাপা গর্জনে যেন কেঁপে উঠলো পুরো রুম। শ্রাবণের মাথা নত হয়ে গেল। দু চোখে দেখলো অন্ধকার। গালটার জন্য বড়ো মায়া হতে লাগলো তার। এখনই হয়তো তার বাবা কষিয়ে চড় মারবে তার গালে। শ্রাবণের শরীর মৃদু দমকায় কাঁপতে লাগলো। এই কাঁপা ভাব কারো চোখে খুব একটা স্পষ্টতর হবে না।

কবির সাহেব গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“ইদানিং মিথ্যা কথা বলা অভ্যাস হয়ে গেছে, তাই না?”

শ্রাবণের সাহসের থলি একেবারে চুপসে গেছে। ভয়ে তার বুক দুরুদুরু। নত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু কাম্য হলো না।

“তোমার ভীমরতি যে এখনও অটল থাকবে বুঝতে পারিনি আমি। রুমকির ভূত এখনও তোমার মাথায় সুতো পেঁচিয়ে যাচ্ছে, তাই না? এমন হবে জানলে কখনোই মিহিকের সাথে তোমার বিয়ে দিতাম না। ভেবেছিলাম বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে তুমি। তোমার মাথার সাময়িক গন্ডগোলটা থামবে। কিন্তু এখন তো দেখছি এটা তোমার স্বল্প সাময়িক গন্ডগোল না, এটা দীর্ঘ স্থায়ী। বড্ড ভুল হয়ে গেছে তোমার সাথে মিহিকের বিয়ে দেওয়া। মেয়েটার জীবনেও একটা ভুলের প্রবেশ ঘটিয়েছি। তবে আর না। ভুল আমরা করেছি তো, আমরাই সমাধান করবো। মিহিকের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এখন আমাদের উপর। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। কোনো এক ভালো উচ্চবিত্ত ঘর দেখে আমরা মিহিকের বিয়ে দেবো আবার।”

বাবার কথা শুনে শ্রাবণের নত মুখ আর নত রইল না, সটান করে সোজা হয়ে গেল। সরাসরি বাবার দিকে তাকালো সে। তার মনে হলো, বাবার মাথা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে। না হলে তার বউকে আবার অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার মতো একটা কথা কী করে বলতে পারলো? শ্রাবণের খুব করে গায়ে লাগলো এটা। কথাগুলো আর নিজের মাঝে চেপে রাখতে পারলো না সে। বলে উঠলো,
“মিহিককে আবার এক ভালো উচ্চবিত্ত ঘর দেখে বিয়ে দেবে মানে? মিহিক তো আমার বউ। আমার বউকে আবার অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার কথা তোমরা চিন্তা করতে পারো কী করে? আমার বউকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার রাইট কার আছে? আমি কি আমার বউকে ডিভোর্স দিয়েছি? বা ডিভোর্স দেবো এমন কিছু বলেছি? সে আমার ওয়াইফ। অন্য কোথাও বিয়ে হবে না তার। না কোনো উচ্চবিত্ত ঘরে, আর না কোনো নিম্নবিত্ত ঘরে। সে আমার বউ পরিচয়ে এ বাড়িতেই থাকবে। আমার বউকে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়ার কথা কীভাবে বলতে পারলে সেটাই বুঝতে পারছি না আমি!”
শ্রাবণ মৃদু রাগের সাথে কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

রুমের ভিতর সবাই থ। শুধু কবির সাহেব আর আষাঢ়ের মাঝে তেমন কোনো ভাব দেখা গেল না। বরং কবির সাহেবের মুখে মুচকি হাসি ফুঁটলো।
আষাঢ় বললো,
“ভাই আমার পেরেশানিতে আছে। মনের ভিতর বউয়ের আনাগোনা চলছে, আর সেই সাথে রুমকির যাব যাব ভাব। বেচারা আসলেই খুব পেরেশান। চিন্তা করো না। ব্রোর মাথার গন্ডগোল খুব শীঘ্রই থামবে।”

আষাঢ়ও দাঁড়ালো না আর, বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
কবির সাহেব এবার জোরেই হেসে উঠলেন। তার বড়ো ছেলেটা ছোটবেলা থেকে এখনও অবধি বোকাই রয়ে গেল।

__________________

শ্রাবণ খুব রাগ। বাবা কী করে অমন একটা কথা বলতে পারলো মাথাতে ঢুকছে না তার। তার বউকে অন্য জায়গায় বিয়ে…উহ, ভাবতেই তো কেমন!

দরজা খোলার শব্দে মিহিক ক্লোজেটের এখান থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরলো।
শ্রাবণ ঢুকলো রুমে। শ্রাবণকে রুমে ডেকে তার আব্বু কিছু একটা বলেছে সেটা জানে মিহিক।
চোখ সরিয়ে নিলো সে। নিজের কাজে মন দিলো। কালকে রাত থেকে আর শ্রাবণের সাথে কথা হয়নি তার। গত রাতের কথা মনে পড়লে এখনও কষ্ট হয় তার। কত সহজ ভাবে শ্রাবণ ডিভোর্সের কথা বলে দিয়েছিল!

“দেখুন আমার আব্বুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে, সে বলছে আপনাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেবে। আপনি প্লিজ এই পাগলামিটা করবেন না। যদি বিয়ে নিয়ে আপনাকে কিছু বলে, আপনি সোজা না করে দেবেন।”

হঠাৎ শ্রাবণের কথা শুনতে পেয়ে মিহিক পিছন ফিরে তাকায়। চোখ সরু করে বললো,
“কী?”

“হ্যাঁ। আপনি আমার স্ত্রী। আমি কি আপনাকে ডিভোর্স দিয়েছি? আমার স্ত্রী হয়ে আপনি অন্য কাউকে কী করে বিয়ে করবেন?”

মিহিক তাকিয়ে রইল। ভালো করে দেখতে লাগলো শ্রাবণকে। শ্রাবণ অসহায়চিত্ত চাহনিতে চেয়ে রয়েছে। মিহিক কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বললো,
“কাল রাতে তো নিজ মুখে ডিভোর্সের কথা বলেছিলেন। তাহলে আজ আবার এরকম আচরণ করছেন কেন? আপনার তো আরও খুশি হওয়ার কথা ছিল। আপনার কাছে তো ব্যাপারটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো হয়ে গেল।”

শ্রাবণ থমকে যায়। নিজের মনে প্রশ্ন জাগে। আসলেই তো, সে কেন এত হাইপার হচ্ছে? তার তো খুশি হওয়ার কথা। তাহলে কেন এই ব্যাপারটা তার মোটেই ভালো লাগলো না? শ্রাবণ ভাবতে ভাবতে মিহিকের দিকে তাকালো। মিহিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে যায়। বিব্রত বোধ করে সে। মিহিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কোনো উত্তর না দিয়ে অপ্রস্তুত মুখ নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল সে।

মিহিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল শূন্য দরজায়। তারপর হেসে ফেললো। এই শ্রাবণ এমন কেন? গত রাত থেকে জমে থাকা কষ্ট, রাগ, অভিমান মুহূর্তে কোথায় যেন ছুটে পালালো মিহিকের।

_________________

ল্যাপটপ স্কিনে চোখ আবদ্ধ অবস্থায় আষাঢ়ের ঠোঁট দুটো হেসে ওঠে। মুহূর্তে আবার ভিড় করে অস্থিরতা। তবে ঠোঁট থেকে হাসি সরে না। আষাঢ় দাঁড়িয়ে গিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে বললো,
“আমি জানতাম…আমি জানতাম এটাই হবে। আমার ধারণা ঠিক। ইদ্রিস খান আর হাফিজা খান নোয়ানার মা-বাবা নয়। তারা নোয়ানার চাচা-চাচি। নোয়ানার বাবার নাম ইব্রাহিম। ইব্রাহিম খান আমেরিকাতে নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। নোয়ানা ইব্রাহিম খানের মেয়ে হওয়ার কারণেই আমেরিকাতে ছিল। তাই তো আমি কখনও নোয়ানার বর্তমান ফ্যামিলির কাউকে দেখতে পাইনি আমেরিকা।”

একটু আগে নোয়ানার সম্পর্কে কিছু তথ্য হাতে এসে পৌঁছেছে আষাঢ়ের। তথ্য চেক করে এটুকু জানতে পেরেছে নোয়ানার সম্পর্কে। কিন্তু এখনও তার অনেক কিছু জানা বাকি। আর এই জানার তৃষ্ণা মেটাতে হলে নোয়ানাকে প্রয়োজন এখন তার। আষাঢ় অস্থির ভাবে ডেকে উঠলো,
“কারিব…কারিব, নোয়ানাকে প্রয়োজন আমার। কোথায় আছে এখন ও?”

কারিব চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল আষাঢ়ের পাশে। নোয়ানার সম্পর্কে যা জানলো তাতে আশ্চর্যান্বিত হয়েছে সে, যদিও আষাঢ় তাকে নিজ ধারণায় এরকম কিছু আগেই বলেছিল। কিন্তু এখন যখন আষাঢ়ের ধারণা সত্যি হয়ে গেল, তখন আশ্চর্য না চাইতেও হতে হলো। কারিব থতমত গলায় উত্তর দিলো,
“উনি তো এই সময় টিউশনিতে থাকেন। টিউশনিতে আছেন সম্ভবত।”

“ড্যাম ইট! কারের চাবি দাও আমায়।”

কারিব গাড়ির চাবি দিতেই আষাঢ় ছুটে বেরিয়ে গেল। জানার যে অশান্ত ঝড় উঠেছে আষাঢ়ের মাঝে তা বোধহয় আজ না জেনে থামবে না। কারিবকে ছাড়া একাই চলে এলো আষাঢ়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সিনথি, লায়লা খানম, সিনথির মা উঠোনের চেয়ারে বসেছিল। লায়লা খানম আষাঢ়কে ব্যস্ত হয়ে ছুটতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন,
“কোথায় যাচ্ছ আষাঢ়?”

প্রশ্ন করেও অবশ্য কোনো লাভ হয়নি। আষাঢ়ের থেকে কোনো উত্তর পায়নি।
আষাঢ় এখন নোয়ানা যে বাসায় টিউশনি পড়ায় সে বাসার সামনে আছে। গাড়িতে বসে বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়ে আছে সে। জানে নোয়ানা কোন বাসায় টিউশনি পড়ায়, কারিবকে দিয়ে অনেক আগেই খোঁজ নিয়ে ছিল। ঠিকানা জানাতে তাই চলে এসেছে।

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর নোয়ানাকে বাড়ির গেট দিয়ে বের হতে দেখা গেল। বিকেল তখন শেষের পথে। একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। নোয়ানাকে দেখা মাত্রই আষাঢ় গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এলো।

আষাঢ়কে এখানে দেখে বেশ অবাক হলো নোয়ানা।
“আপনি এখানে?”

“তোমার সাথে কথা আছে আমার।”

“আপনি দেখছি সত্যি সত্যি ফলো করছেন আমাকে। জানলেন কী করে আমি এখানে থাকবো?”

“বেশি কথা বলো না, গাড়িতে চলো।”

“আপনার গাড়িতে কেন যাব?”

“জেদ করো না। আপোষে চলো।”

নোয়ানা এড়িয়ে যেতে চাইলো। আষাঢ়কে অগ্রাহ্য করে সামনে পা বাড়ালেই আষাঢ় রেগে গিয়ে নোয়ানার হাত চেপে ধরলো। নোয়ানা ব্যথা অনুভব করলো। রাগান্বিত চোখে তাকালো।
নোয়ানার রাগ গ্রাহ্য করলো না আষাঢ়। তাকে টেনে নিয়ে গেল। আষাঢ় বলে নোয়ানা চুপচাপ রইল। আষাঢ়ের বদলে এখানে অন্য কেউ থাকলে সে কী করতো তা নিজেও জানে না। আষাঢ় গাড়ি স্টার্ট করলো।
নোয়ানা রাশভারী কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন?”

“বহুদূর। যেখানে আমি ছাড়া তুমি কাউকে চিনতে পারবে না। এমনকি চেনার জন্য কোনো মানুষকে পাবেও না।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here