বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ৩৭

0
484

#বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ৩৭
#লেখা: ইফরাত মিলি

গাড়ির ভিতরের বাতাসও যেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে রইল। নোয়ানা অপলক দু চোখে বিস্ময় রাজ্য নিয়ে তাকিয়ে রইল আষাঢ়ের দিকে। ক্ষণকালের পিনপতন নীরবতা কাটিয়ে আষাঢ়ের কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হলো,
“ভয় পাচ্ছ টিউলিপ? বিয়ের কথা বলছি বলে?”

নোয়ানার চোখের পলক পড়লো। স্তব্ধ হৃদয় চলিত বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাসের স্বাদ গ্রহণ করলো। অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিয়ে খানিক বাদে আবার তাকালো। এই চোখে এক ধারালো ব্যাপার আছে। এই চোখের রহস্য আষাঢ় আজও বুঝলো না। চোখ জোড়া হৃদয়ে কোমল অনুভূতির চাদর বিছিয়ে দেয়।

নোয়ানা স্পষ্ট গলায় বললো,
“আশা রাখি আপনি এতটাও পাগল নন।”

আষাঢ় ওষ্ঠ্য বাঁকিয়ে হাসলো। হাসতে হাসতে দৃষ্টি নত করে, এরপর আবারও চাইলো নোয়ানার চক্ষু পানে। কেমন মন্থর কণ্ঠে বললো,
“তোমার মাঝে কী আছে টিউলিপ? আমার এমন কেন মনে হয় যে তুমি জাদু করেছো আমায়? আমি এত কেন গাঢ় অনুভূতি অনুভব করি তোমার জন্য? তুমি কি সত্যিই জাদু করেছো? তুমি কি জাদুরানি?”

নোয়ানার মনে হলো সে কোনো উন্মাদের প্রলাপ বকা শুনছে। উন্মাদই তো! আষাঢ় তো উন্মাদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। তবে প্রশ্ন– কেন এই উন্মাদের প্রলাপ বাক্য শুনে হৃদয় উথাল-পাথাল হচ্ছে? কেন হৃদয় হাহাকার করে মরছে? নোয়ানা নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বললো,
“পাগলের পাগলামি করতে জাদুর প্রয়োজন হয় না।”

“এতবার পাগল শব্দটা উচ্চারণ করো না। আজকাল শব্দটা শুনতে কেন যেন কষ্ট হয়। আর শুধু আমার দিকটা না ভেবে নিজের দিকটাও ভেবো একটুখানি। আমি পাগল হলে, তুমিও তো পাগলি। তুমি কেন ভালোবাসো আমায়?”

“কে বলেছে আমি আপনাকে ভালোবাসি?”

“বাসো না?”

“না।” দৃঢ়তার সাথে প্রত্যুত্তর দিলো নোয়ানা। যদিও অন্তঃকরণে দৃঢ়তার লেশমাত্র নেই।

আষাঢ়ের দিক থেকে আর কোনো কথা শোনা গেল না। সে ঘাড় ফিরিয়ে সোজা হয়ে বসে সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো। মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবন ক্ষণিকেই অশান্তিতে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে।

দীর্ঘ পথের পর যখন গাড়ি থামলো, নোয়ানা ব্যস্ত হলো আশপাশ পর্যবেক্ষণ করতে। জায়গাটা চেনা চেনা লাগছে একটু। আগে এসেছিল?

“নামো।”
নোয়ানার সিটের পার্শ্ব সিটের দিকে থাকা দরজা খুলে বললো আষাঢ়। নোয়ানা বিনা বাক্যে নামলো। হ্যাঁ এই জায়গা পরিচিত। সামনে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ।

“চিনতে পেরেছো জায়গাটা?”

“না।” চিনতে পেরেও অস্বীকার করলো নোয়ানা।

“তুমি ভুলে যাওয়ার পাত্রী নও। নিজের দুঃখী জীবনী শুনিয়েছিলে আমাকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে।”

“আমার ওসব কিছুই মনে নেই। আপনারও ভুলে যাওয়া উচিত ছিল।”

“অভিনয় তুমি জানলেও, আমি জানি না।”

“এখানে নিয়ে আসার মানে কী?”

“কোনো মানেই নেই, ইচ্ছা হয়েছে তাই এনেছি। হাতের আংটি খুলে ফেলো।”

“হাতের আংটি খুলবো মানে?”

“নিজ থেকেই খোলো। আমার খুলতে হলে সেটা ভালো হবে না।”

“এটা অতিরিক্ত আষাঢ়। আপনার এমন করার কোনো মানেই নেই।” নোয়ানার কণ্ঠ ক্ষিপ্র হলো।

আষাঢ় সে ক্ষিপ্রতা গায়ে মাখলো না। এগিয়ে এসে নোয়ানার হাতটা হাতে তুলে নিলো। নোয়ানা রুষিত কণ্ঠে বললো,
“দিস ইজ টূ মাচ! লেট গো অব মাই হ্যান্ড রাইট নাও।”

আষাঢ় শুনলো না। আংটি খোলার জন্য উদ্যত হলেই নোয়ানা অন্য হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। কারিব চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলো সব। নোয়ানা প্রায় চিৎকার করে বললো,
“আপনার এরকম করার মানে কী হিমেল? কেন করছেন আপনি এরকম? শুধু শুধু এরকম করা বন্ধ করুন। অশান্তির সৃষ্টি করবেন না দয়া করে।”

“আমি এরকম কেন করছি তুমি জানো না?”

“না, জানি না। আমাদের মাঝে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই যাতে আপনি এরকম করবেন। আপনিই বলুন আছে আমাদের মাঝে তেমন কোনো সম্পর্ক?”

“তুমি বোকামি করছো টিউলিপ।”

“বোকামি আপনি করছেন। আপনি অবুঝ। আপনি শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবছেন। বাকিদের নিয়েও ভাবা উচিত আপনার। আর কাউকে না, আপনি শুধু নিজের মা-বাবাকে নিয়ে একটু ভাবুন। আপনি যেরকম করছেন তাতে তারা কষ্ট পাবে। যেখানে তারা ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করেছে, সেখানে তাদের ছেলে অন্য একটা মেয়ের জন্য শুধু শুধু পাগলামি করছে। তাও আবার অনাথ একটা মেয়ে! এটা ভেবে নিশ্চয়ই তারা শান্তি অনুভব করবে না? আর কেনই বা তারা আমার মতো অনাথ-আশ্রিতা মেয়েকে গ্রহণ করবে?”

“তুমি বার বার অনাথ-আশ্রিতা শব্দ দুটোকে কেন হাইলাইট করো? এই শব্দ দুটো বড়ো পানসে। তোমাকে যদি নাঈমের মা-বাবা গ্রহণ করতে পারে, তাহলে আমার আব্বু-আম্মু কেন পারবে না? আমার আব্বু-আম্মুকে কী মনে হয় তোমার?”

নোয়ানার মুখ বেঁকে কান্না আসতে চাইছে। এত কেন কষ্ট হয় অন্তরে? কিছুক্ষণ কান্না করা প্রয়োজন এখন। কিন্তু এখানে আষাঢ়ের সামনে কান্না করা কি শোভা পায়? নোয়ানা বললো,
“নাঈমের সাথে আমার বিয়ে, এর কোনো নড়চড় হবে না।”

আষাঢ়ের রাগ ক্রমশ বেড়ে চললো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আমি চাইলে হাজার বার হবে।”

বলেই এগিয়ে এসে নোয়ানার আঙ্গুল থেকে আংটি খুলে ফেললো, বাধা দিয়েও আর কাজ হলো না। আষাঢ় আংটি ছুঁড়ে ফেললো না, আংটিটা নোয়ানার হাতে গুঁজে দিয়ে বললো,
“এই আংটি যদি আবারও কখনও পরতে চাও, তাহলে তোমার আঙুল কেটে ফেলবো।”

নোয়ানার চোখের অশ্রু অবাধ্যর মতো চিকচিক করে চোখের কার্নিশে। আষাঢ় ওর দু চোখে চেয়ে বললো,
“এখনও কি বলবে ভালোবাসো না? ভালোই যদি না বাসো তাহলে কাঁদো কেন?”

নোয়ানা জলপূর্ণ চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর মাথা নত করে, চোখ মুছে, আংটিটা পরে নিলো আবার।

আষাঢ় বাকরুদ্ধ হয়ে দেখলো। মেয়েটা ইদানিং তার ধারণার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নোয়ানা চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,
“এসব বন্ধ করুন। আপনার পাগলামি অহেতুক। এর ইতি ঘটান। আমি চাইছি না আমার বিয়েতে কোনো প্রকার ঝামেলা হোক।”

আষাঢ়ের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে। দুই হাত দিয়ে মাথার ছোট ছোট চুলগুলো আঁকড়ে ধরে কেমন অসহ্যকর একটা ভঙ্গি করে হাত নামিয়ে এনে বললো,
“উহ তুমি এত কেন বিরক্তিকর? বলো কেন এত বিরক্তিকর তুমি? আমি তো তোমার এমন রূপ দেখতে দেখতে প্রচণ্ড বিরক্ত। তুমি কি নিজেকে একটু অনুধাবন করে বুঝতে পারছো না তুমি কতটা বিরক্তিকর হয়ে উঠছো? নাঈমকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করো কীভাবে? তুমি তো বেচারা নাঈমের জীবনটা নষ্ট করে দেবে। বিয়ে করবে ওকে, অথচ তোমার মনে তো আমি পড়ে থাকবো।”

নোয়ানা স্থির তাকিয়ে রইল, অশ্রু ল্যাপ্টানো চোখ জোড়া সরলো না আষাঢ়ের চোখ থেকে। কণ্ঠে জোর দিয়ে বললো,
“আমি এত পাগল নই যে স্বামী থাকতে অন্য কাউকে মনে রেখে বসে থাকবো। একেবারেই ভুলে যাব আপনাকে। আপনার এই পাগলামিগুলোও মনে পড়বে না আমার।”

নোয়ানার সাধারণ কথাগুলো অসাধারণ সুনিপুণ ক্লেশ বুনতে লাগলো আষাঢ়ের অন্তঃকরণে। সে আরক্ত কণ্ঠে বললো,
“কী বললে?”

“আশা করি আপনিও আর মনে রাখবেন না আমায়।”

আষাঢ়ের বুকে কষ্ট কাঁটার মতো এসে বিঁধে বসলো। দু চোখে গাঢ় অভিমান, অবিশ্বাস জড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে বোঝাতে বোঝাতে সে ক্লান্ত হয়ে গেছে। সত্যি, বড্ড ক্লান্ত সে। সহসা নোয়ানার কপালে কপাল ঠেকালো। নোয়ানা চমকালো না, কিছু বললো না, এমনকি নড়লোও না।
আষাঢ় বললো,
“এটা কীভাবে বললে নোনা? ভুলে যাবে আমায়? কীভাবে ভুলবে? মানুষ মানুষকে কীভাবে ভুলে যায়? তুমি তো আমার মানুষ। আমার মানুষ হয়ে আমাকেই ভুলে যাবে?”

নোয়ানার দর্শনেন্দ্রিয় হতে টুপ করে জলধারা গড়িয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে তার হৃদয়ে প্রবাহমান কষ্টগুলো ব্যক্ত করার ইচ্ছা হলো আষাঢ়কে। কিন্তু গলার কাছে কিছু একটা বিঁধে আছে। বাতাসে বাতাসে সংঘর্ষ হয়ে যেন সাবধান করছে, দুর্বল হয়ে পড়ো না।
আসলেই, যারা নিদারুণ কষ্টের মাঝে থেকে বড়ো হয় তাদের কোনো কিছুর জন্য দুর্বল হয়ে পড়াটাও যেন একটা পাপ। এই পাপ থেকে বিরত থাকতে চায় সে।

আষাঢ়ের কণ্ঠ শোনা গেল ফের,
“আমি খুব ক্লান্ত নোয়ানা, খুবই ক্লান্ত। তুমি সবাইকে নিয়ে ভাবলেও আমাকে নিয়ে একদমই ভাবো না। বুকের বাম পাশটা স্পর্শ করে দেখো, আশা করি তুমি অনুভব করতে পারবে, আমি আসলেই কষ্টে আছি।”
একটু থেমে আবার বললো,
“তুমি সকলকে সুখী রাখতে গিয়ে একটা মানুষকে কিন্তু নির্মম কষ্ট দিচ্ছ! সবাই যতটা কষ্ট পেত, সকলের কষ্টের সমষ্টির দ্বিগুণ কষ্ট এখন শুধু এই একটামাত্র মানুষ পাচ্ছে। এটা ঠিক নয়। একদমই ঠিক নয়।”

নোয়ানা নীরব। আষাঢ়ের কথাগুলো কর্ণপাত হয়ে হৃদয় বিক্ষত করে তুলছে। আষাঢ় কপাল সরিয়ে নিলো কপাল থেকে। নোয়ানার দিকে তাকালো না একবারও।
কারিবের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“ওকে বাড়িতে নিয়ে যাও।”

কারিব সবকিছুর প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আষাঢ়ের কথায় সম্বিৎ ফিরলে বললো,
“আপনি বাড়ি যাবেন না?”

“যাব, একা একা। বিরক্তিকর মানুষটার সাথে যেতে ভালো লাগবে না। তাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত আমি!”
বলে কারিবের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
কারিব কথাটা অনুধাবন করার চেষ্টা করে নোয়ানার দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখ জলে ভিজে আছে। কারিবের ইচ্ছা হচ্ছে নোয়ানাকে কঠিন কিছু বলতে। মেয়েটা আসলেই খুব বিরক্তিকর! কাঁদছে অথচ তাও মুখে একটু নরম হবে না। মেয়েরা আসলেই খুব কঠিন ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কথাটা হঠাৎ কেন মনে উদয় হলো জানে না, তবুও হলো।

_________________

তমসাচ্ছন্ন রাত্রি। ক্ষুদে বাতিগুলো টিমটিম করে জ্বলছে। বাগানের হাস্নেহেনা নিজের সুগন্ধ বিলিয়ে দিয়েছে বাতাসে।
মিহিকের গায়ে শাল জড়ানো। বাসার পাশের ছোট্ট বাগানে এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে আছে। বিকেল থেকে গায়ে শাল জড়িয়ে হাঁটছে সে। আজ যে শ্রাবণের কারণে বৃষ্টিতে ভিজেছিল। জ্বর আসবে সেই আশঙ্কায় আছে। থার্মোমিটার দিয়ে অযথাই কয়েকবার তাপমাত্রা মাপা হয়ে গেছে। জ্বর আসেনি এখনও। সন্ধ্যার ঘটনাটা মাথা থেকে যাচ্ছে না। সে তখন লিভিং রুমে বসেছিল। সে সময় আষাঢ় এসেছিল বাইরে থেকে।
কোনোদিক দৃষ্টিপাত না করে আষাঢ় সোজা সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু অর্ধ পথে গিয়ে মিহিক সোফায় বসে আছে খেয়াল করলো। অতিক্রম করা পথ পিছু হটে এসে মিহিককে বললো,
“তোমার বোনের মতো হার্টলেস মেয়ে এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই বোধহয়!”

কথাটা যখন বলেছিল মিহিক প্রত্যক্ষ করেছিল আষাঢ়ের মাঝে রাগ। এই একটা কথাই শুধু বলেছিল আষাঢ়। তারপর পায়ের গতি বাড়িয়ে গটগট করে চলে যায়। হঠাৎ আষাঢ় এরকম একটা কথা বললো কেন বুঝতে পারেনি মিহিক। এখনও বুঝতে পারছে না। কোন বোনের কথা বলেছে ভাবতে নোয়ানার নামটাই মনে এসেছিল প্রথমে। কী হয়েছে বিষয়টা যাচাই করতে নোয়ানাকে কল করেছিল। আষাঢ় এরকম একটা কথা কেন বলেছে জানতে চাইলে নোয়ান বলেছে,
“কেন এরকম কথা বলেছে সেটা ওনাকেই জিজ্ঞেস করো। আমি কিছু জানি না।”

এর বেশি কিছু আর বলেনি নোয়ানা। বিষয়টা কেমন যেন লাগছে মিহিকের। স্বাভাবিক লাগছে না ঠিক। ঘোলাটে ঘোলাটে! হঠাৎ করে আষাঢ় কেন এরকম একটা কথা বলবে? কারণ কী? ভেবে পাচ্ছে না। পায়চারি করতে শুরু করলো। বাগানের এ মাথা থেকে ও মাথা একবার হেঁটে আসতেই হুট করে শ্রাবণ উপস্থিত হলো। এসেই বিরক্ত ধরানো কথাটা বললো,
“আপনি এখনও শাল পেঁচিয়ে ঘুরছেন?”

মিহিক অসহ্য চাহনিতে তাকালো। এমনিতেই সে চিন্তাতে মগ্ন, মেজাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটিয়ে বললো,
“আমার জ্বর এলে এর জন্য আপনিই দায়ী থাকবেন। আপনি একজন অপরাধী, ভুলে যাবেন না।”

শ্রাবণ হাসলো। মিহিকের চিন্তারা টুপ করেই কেটে পড়লো। দৈবাৎ প্রশ্ন করলো,
“রুমকি খুব শীঘ্রই ওর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসছে, জানেন?”

শ্রাবণের হাস্য আভা মুখে আঁধারের ঘনঘটার সৃষ্টি হলো। একটুখানি হয়ে গেল মুখ। রুমকি! শ্রাবণের মনে পড়ে যায় তার প্রথম প্রেমের মানুষটার নাম রুমকি ছিল। একটু কষ্ট অনুভব হয় হৃদয়ে।
মিহিক শ্রাবণের মুখ লক্ষ্য করে বললো,
“কী ব্যাপার? গার্লফ্রেন্ডের শোকে কাতর হয়ে উঠছেন?”

শ্রাবণের মুখ একটুখানিই হয়ে রইল। শুকনো মুখে বললো,
“সারারাত বাইরে থাকবেন না নিশ্চয়ই? ভিতরে আসুন।”

বলে ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে দিলো। কয়েক পা হেঁটে আসতেই পিছন থেকে ডাকলো মিহিক,
“দাঁড়ান।”

শ্রাবণ দাঁড়ালো। পিছন ঘুরলেই দেখলো মিহিক একটা হাস্নেহেনা ফুল বাড়িয়ে আছে ঠিক তার মুখ বরাবর। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে মিহিক বললো,
“হাস্নেহেনা আমার প্রিয় ফুল!”

শ্রাবণের মুখে লজ্জার ছটা লাগলো। লজ্জায় দৃষ্টি নত হয়ে এলো। স্ত্রী তার দিকে নিজের প্রিয় ফুল বাড়িয়ে দিয়েছে। কী মিষ্টি একটা ব্যাপার, সেই সাথে দারুণ লজ্জার! ফুলটা গ্রহণ করা উচিত। শ্রাবণ লজ্জা ধামাচাপা দিয়ে ফুলটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে ফুলটা ধরার আগেই মিহিক সেটা সরিয়ে নিলো। চুমু খেলো ফুলে, আর তারপর ফুলটা গুঁজে দিলো শ্রাবণের কানে। শ্রাবণ হতবিহ্বল হয়ে গেল।
মিহিক হাস্য মুখে বললো,
“প্রিয়র জন্য একটি প্রিয় ফুল!”

শ্রাবণ বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। মিহিকের কাছ থেকে প্রশ্ন এলো,
“আপনার প্রিয় ফুল কী?”

শ্রাবণ অপ্রস্তুত কণ্ঠেই উত্তর দিলো,
“কৃষ্ণচূড়া।”

“পরের বছর অপেক্ষা করে থাকবো, কৃষ্ণচূড়া উপহার দেবেন আমায়। ঠিক আছে?”

শ্রাবণ মাথা দোলালো। মিহিক মুচকি হেসে ঘরের অভ্যন্তরে চলে গেল।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here