বিবর্ণ_নীলাম্বরী,পর্বঃ দশম
মম_সাহা
নীলা তৈরী হচ্ছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজ সে ভার্সিটিতে যাবে তাই সকালে উঠেই নাস্তা তৈরী করেছে।নাস্তা খেয়ে রেডি হয়েছে যাওয়ার জন্য। সাদা আর নীলের মিশ্রনে একটা থ্রি-পিস পড়েছে।চুল ভেজা আছে বিধায় চুল গুলো খুলে দিয়েছে।হাঁটুর নিচ অব্দি চুলের দৈর্ঘ্যতা।বেশ গুছিয়ে আজ রেডি হয়েছে।ওর জীবনে হয়তো এত সুন্দর ভাবে কখনোই রেডি হয় নি।সবসময় যেমন তেমন ভাবে থেকেছে। কিন্তু আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।সে নিজেই মুগ্ধ। আজ সে বুঝতে পারছে কালো মানেই নিকৃষ্ট না।আর সেও ফেলনা না।
নীলা তৈরী হয়েই বের হয়ে গেলো। ফ্লাটের বাহিরে গিয়ে সে মেইন গেটে তালা দিলো।হঠাৎই পিছনে থেকে রঙ ডেকে উঠলো
-‘আরে নীলা আপুই,তুমি কোথায় যাচ্ছো এত মিষ্টি করে সেজে হুম?’
নীলা পিছে ঘুরে দেখে রঙ আর তার ভাই বর্ণ দাড়িয়ে আছে।বর্ণও রঙের কথায় নীলাকে খেয়াল করে তাকিয়ে দেখে আজ নীলাম্বরীর ভিন্ন রূপ।কি অসাধারণ লাগছে মেয়েটাকে।
বর্ণের মাও দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো।সে মুচকি হেসে নীলাকে বলল
-‘কোথায় যাও মা? এতদিন তো কোথাও যেতে দেখলাম না।’
নীলা হেসে বলল
-‘আসলে আন্টি অনেকদিন ভার্সিটি যাওয়া হয় নি।ভেবেছি আজ থেকে রেগুলার ক্লাশ করবে।’
রঙ উচ্ছাসিত হয়ে বলল
-‘বাহ্ আপু আমিও তো ভার্সিটিতেই যাচ্ছি।চলো না আমাদের সাথে।ভাইয়া আমাদের ভার্সিটি অব্দি ড্রপ করবে।’
নীলা রঙের কথা শুনে বর্ণের দিকে একবার তাকালো।তারপর ইতস্তত স্বরে বলল
-‘না না রঙ তোমরা যাও।আমি একাই যেতে পারবো।সমস্যা নেই।ভার্সিটিতে গিয়ে এক হলেই হবে।’
এবার বর্ণের মা নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-‘যাও ই না মা ওদের সাথে।তোমরা তো একই জায়গায় যাচ্ছো। একসাথে গেলে সমস্যা কি।’
নীলা ইতস্তত ফিল করছে কারণ বর্ণ একবারও বলছে না।যতই হোক বর্ণের সাথেই তো যাবে সে ই তো নিয়ে যাবে।সে একবার না বললে কেমন দেখায় না।
নীলার ইতস্ততার কারণ বর্ণ বুঝতে পারে।সে চুপ করে দেখছিলো নীলা কি বলে।সে জানে সে নীলাকে না বললে নীলা যাবে না।তাই ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে পকেটে দু’হাত গুজে বর্ণ নীলকে বলল
-‘গন্তব্য যেহেতু এক সেহেতু এক সাথে চলাই ভালো।একা যাওয়ার দরকার কি যেখানে আরেকজন আপনাকে সাথে নিতে চায়।চলুন আমাদের সাথে আমি আপনাদের ড্রপ করে দিবো।’
নীলার ইতস্ততা কেটে গেলো।যার সাথে যাবে সে তো যেতে বলল।নীলা পিছে ঘুরে আরেকবার তালাটা ঠিক দিয়েছে কি না দেখে চাবিটা বর্ণের মায়ের হাতে দিলো।
রঙ নীলার চুল ধরে অবাক কন্ঠে বলল
-‘ওমা মাশাল্লাহ, মামানি দেখো আপুর চুল গুলো কত সুন্দর।কত লম্বা।আমি তো এতক্ষণ খেয়ালই করি নি।’
সবাই তখন নীলার চুলের দিকে নজর দিলো।বর্ণের মা শারমিন চৌধুরীও ‘মাশাল্লাহ’ বলে উঠলো।
বর্ণ এই চুলের দৈর্ঘ্যতা দেখে মুগ্ধ। এই মেয়ে কত সুন্দর তবুও মাঝে মাঝে নিজের রূপ নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগে।বর্ণও মনে মনে মাশাল্লাহ উচ্চারণ করলো।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
-‘এবার যাওয়া যাক।’
রঙ আর নীলা মাথা নাড়ালো।বর্ণের মাকে ‘আসছি’ বলে সবাই লিফটে উঠে গেলো।
_________
রঙ আর নীলা দুজনেই গাড়ির পিছন সিটে বসেছে।আজ নীলাও বেশ কথা বলছে রঙের সাথে।কথায় কথায় হাসিহাসিও করছে।রঙ নীলার হাত ধরে হাসিমুখে বলল
-‘আপুই তুমি কত সুন্দর হাসাহাসি করো।হাসলে বেশ সুন্দরও লাগে তোমাকে।গালে কেমন দুইটা টোল পড়ে।আমার তোমাকে হেব্বি লাগে।ছেলে হলে বিয়ে করে ফেলতাম।’
রঙের কথা শেষ হতে হতে গাড়ির ব্রেক কষে বর্ণ।তার কাশি শুরু হয়ে যায়।নীলা তো ফিক করে হেসে উঠলো সাথে রঙও।
বর্ণ কাশি থামিয়ে রঙকে চোখ রাঙিয়ে ধমকের স্বরে বলল
-‘ষ্টুপিড মার্কা মেয়ে।কোথায় কি বলা লাগে সেটাও জানে না।’
রঙ আর নীলা চুপ করে যায়। বহু কষ্টে হাসি চেপে রাখে।বর্ণ গাড়ির দরজা খুলে বের হয়।রঙ অবাক হয়ে বলে
-‘আরে দাভাই কোথায় যাও?আর হাসবো না সত্যি। তুমি আমাদের এভাবে মাঝ পথে ফেলে চলে যেও না প্লিজ।’
বর্ণ বোনের কথায় অবাক হয়ে যায়। একটা ধমক লাগিয়ে বলে
-‘চুপ,তোর সব জায়গায় ড্রামা না করলে হয় না? আমার একটু কাজ আছে পাঁচ মিনিট। আমি আসছি।’
বর্ণ দরজা আটকিয়ে রাস্তার ওপাড় কিছু একটা করতে গেলো।রঙ আর নীলা উচ্চস্বরে হেসে ফেলল।
দীর্ঘ দশমিনিট পর বর্ণ একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে ফিরে আসলো।নীলা আর রঙ এতক্ষণ মগ্ন ছিলো কথায়। বর্ণ ফিরে আসাতে দুজন চুপ হলো।
বর্ণ প্যাকেট টা রেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো।রঙ কতক্ষণ প্যাকেটার দিকে তাকিয়ে ভাইকে প্রশ্ন করলো
-‘দাভাই কি আনতে গিয়েছিলে।’
বর্ণ আমতা-আমতা করে বলল
-‘আমার দরকারি কাজের জিনিস। তুই জেনে কি করবি।’
রঙ মাথা নাড়িয়ে আবার নীলার দিকে ধ্যান দিলো।নীলার মাথায় হঠাৎ করে একটা প্রশ্ন উদয় হলো।সে তৎক্ষনাৎ রঙকে ফিসফিস করে বলল
-‘আচ্ছা তোমার ভাই কি প্রতিদিন তোমাকে ড্রপ করে দেয়? কোনো কাজ করে না?’
নীলার প্রশ্নে হো হো করে হেসে উঠলো রঙ।রঙের হাসি শুনে বর্ণ গাড়ি চালাতে চালাতে পিছে ফিরে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল
-‘কিরে আজ তো বাসায় হাসের মাংসও রান্না করা হয় নি বা তুই খাস নি হাসের মাংস তো এমন হা হা করে হাসছিস কেনো?’
নীলা জেনো অথৈ সাগরে পরলো এমন বোকা মার্কা একটা প্রশ্ন করে।অবশ্য সেই বা কি করবে।তার হঠাৎ জানতে ইচ্ছে করছিলো তাই জিজ্ঞেস করে ফেলেছে।নীলার ভাবনার মাঝেই রঙ হেসে বলল
-‘জানিস দাভাই আপুই না এখনো জানেই না তোর প্রফেশন কি।তুই কোনো কাজ করিস কি না সেটা জিজ্ঞেস করছিলো।’
বর্ণ প্রথম একটু অবাক হলেো পরে ভাবলো না জানারই কথা।এখন যে জানতে চেয়েছে মেয়েটা সেটাই তো তার সাত পুরুষের ভাগ্য।
রঙ নীলাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-‘আপুই ভাইয়া ডাক্তার।’
নীলা বেশ অবাক হলো বর্ণ ডাক্তার শুনে।
________
গাড়ি ভার্সিটির সামনে চলে এসেছে।নীলা আর রঙ নেমে গিয়েছে। বর্ণ হঠাৎ করেই নীলাকে ডেকে বলল
-‘নীলা আপনি দাঁড়ান একটু কথা আছে রঙ ভিতরে যা।’
নীলা ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে যায়।আর রঙ মাথা নাড়িয়ে ভিতরে চলে যায়।বর্ণ তখনের প্যাকেট টা বের করে নীলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
-‘এটা আপনার জন্য। নেন।’
নীলা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো।বর্ণ সে দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে বলল
-‘খুলেই দেখেন।’
নীলা প্যাকেট টা খুলে অবাক হয়ে গেলো।কথ রকমের চুলের ক্লিপ এখানে। হেয়ার স্টিক ও আছে। নীলাকে অবাক হতে দেখে বর্ণ গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘আপনার চুল গুলো কারো কাছে বিশেষ কিছু।আর বিশেষ জিনিস শুধু বিশেষ মানুষ দেখবে সবাই না।তাই এগুলো বেঁধে ভিতরে যাবেন।’
আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না বর্ণ।গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।নীলা কতক্ষণ হা হয়ে থেকে মুচকি হাসলো।দূর থেকে কেউ একজন এই দৃশ্য দেখে দেয়ালে ঘুষি মারলো।
নীলা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই রঙ প্রশ্ন করলো
-‘আপু দাভাই তোমাকে কি বলেছে গো?’
নীলা আমতাআমতা করে বলল
-‘তেমন কিছু না রঙ।চলো সামনে আগাই।’
রঙ আর নীলা হাত ধরে সামনে আগাতেই নীলার বন্ধু বান্ধব ঘিরে ধরলো ওদের।সবার সাথে কথা বললো নীলা। নীলার মোট পাঁচজন বন্ধু দুজন মেয়ে আর তিনজন ছেলে।কথাবার্তার এক পর্যায়ে নীলার বন্ধু অহন রঙকে দেখিয়ে নীলাকে বলল
-‘কিরে এই পিচ্চি কে?আগে তো দেখে নি?’
রঙ মাথা তুলে তাকালো।এই ছেলেটা তাকে পিচ্চি বললো কেনো? সে কি এত ছোট নাকি।মুখ ফুলিয়ে নীলাকে বলল
-‘আপুই দেখছো আমারে পিচ্চি বললো। তুমিই কিছু বলো।’
নীলা ফিক করে হেসে অহনকে মিছে ধমকের সুরে বলল
-‘এই পিচ্চি কি সে আমার ছোট বোন।একদম পিছে লাগবি না ওর।’
অহন হেসে বলল
-‘এত পিচ্চি মেয়ের পিছে না লাগল হয়।’
রঙ মুখ ফুলিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বলল
-“আপু দেখছো।”
অহন হেসে বললো -‘হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছে।’
সবাই এবার হেসে দিলো সাথে রঙও।
নীলার এই হাসিখুশি চেহারা দেখে ভয়াবহ রাগ হচ্ছে একজনের
চলবে