#বিভাবতীর_জীবন
#পর্বঃ১৩,১৪
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৩
সত্যিই তো মেয়েটার কথাগুলো মন্দ নয়। এমন কিছু ঘটলে যেকোন মানুষই দ্বিতীয়বার এই সমস্যায় পরতে চাইবে না।
_________________________________
বিভা অফিসে এসেছে পর্যন্ত তার পিছনে ঘুরছে সোমা যে কিনা বিভার অফিস কলিগ। বিভা বিরক্ত হয়ে বলল –
” কি সমস্যা সোমা আপু?”
–” বিয়ে খাবো কবে?”
–” কার বিয়ে?”
–” তোর বিয়ে! কার বিয়ে আর খাবো?
–” আমার বিয়ে খাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেও! সে আশা তোমার পূরণ হবে না!”
–” তা আর বলতে, কিপ্টুস মেয়ে বিয়েতে একটু মানুষজন খাওয়াদাওয়া করবে বলে বিয়ে করছে না। হুহ!
ও জানিস,আজ না সেদিনের সেই ছেলেটা এসেছিল! ”
–” কে?”
–“আরে কি যেন নাম আলমগীর না কি যেন তোর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল!”
বিভা কিছুটা চমকে গেল আলমগীর কেন বারবার আসছে? বিভা এবার কৌতুহল নিয়ে বলল –
–” কিছু বলেছে?”
–” না বলল তোর সঙ্গে কথা বলতে চায়!”
–” ও,”
–“হুম, আচ্ছা ছেলেটা কেউ হয়তোর? মানে কোন আত্মীয়?”
–” না তো এমনি কলেজে থাকতে পরিচয়। সেখান থেকে মাঝে মাঝে কথা হতো এটাই।”
–” ও, আচ্ছা।”
–” হুম, আচ্ছা আপু কাজটা শেষ করে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলবো।”
–” আচ্ছা,”
বিভা ডেস্কের উপর জমানো কাগজপত্রগুলোকে ঠিক করতে লাগল। কাগজগুলো ঠিক করতে করতে হাতের সময় দেখতে লাগল আর জানালার দিকে তাকালো ইশশ আজ আবহাওয়াটা বেশ ভালো নয়। বাবাকে ফোন করে বলতে হবে গাড়ি যেন আগেই পাঠিয়ে দেয় আজ। ফোনটা বের করে দেখল ব্যালন্স শেষ! ওমা! এই না রাতে দেখল প্রায় পঞ্চাশের মত ছিল। এটিএম কার্ড ও তো নিয়ে আসেনি নাহলে এটিএম কার্ড দিয়ে মোবাইল রিচার্জ করা যেত! কি আর করার বাবার কলের জন্য অপেক্ষা করো আর নাহয় বাসে করে বাড়ি ফিরতে হবে। বিভা মন খারাপ করে সব কাজ করতে লাগল। সব কাজ শেষ করে অফিস থেকে বের হতেই দেখল আকাশটা আরও কালো মেঘে ছেয়েগেছে। এই বুঝি বৃষ্টি এলো! কিছুদূর এগিয়ে দেখল একটা দোকান সেখান থেকে মোবাইল রিচার্জ করে আবার বাস স্টপেজের কাছাকাছি আসতেই দেখল বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোটাগুলো ক্রমশ বড় বড় আকৃতিতে রুপ নিতে লাগল।
তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে বাসস্টপেজের সামনে দাড়াতেই বাতাস আর কিছুটা ভিজে যাওয়াতে শরীরে শীত শীত ভাব লেগে আছে। এখন আবার শীত লেগে উঠল আজব! ঠান্ডা লেগে যাবে নাকি আবার?
বিভা আকাশের দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলল-
” তোরা সব বিপদ কি একই মায়ের পেটের ভাইবোন নাকি? এলে সব এক সঙ্গে আসিস? একটু কি আগে পিছনে আসতে পারিস না?”
নিজের মনে কথা বলতে বলতেই দেখল সামনে একটা গাড়ি এসে দাড়িয়েছে। গাড়ি থেকে একজনন ছাতা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে দৌড়ে এদিকে আসছে। মুখটা দেখতে পারল না, না দেখেই বাস দেখতে লাগল। লোকটি আরেকটু এগিয়ে এসে বলল –
–‘ এ তো দেখছি সত্যিই বিভাবতী! যাক ভুল করে আর আসা হয়নি আমার!”
–” আপনি এখানে?”
–” এইতো এই মাত্র কর্মস্থল হতে আজকের মত ছুটি নিয়া আসিতে ছিলাম। পথিমধ্যে গাড়ির কাচেঁর মধ্য দিয়া আপনাকে দেখিতে পাইলাম তবে সংকোচ কাটেনি। সেই সংকোচ টাকে কাটাইতে গাড়ি হইতে নামিয়া আসিয়া দেখি আমার সংকোচকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাইয়া আমার চোখদুটো সঠিক হইয়া গেল!”
–” ঐ এইতবে ব্যাপার!”
–” জী, তা আজ গাড়ি আনেন নি?”
–দেখুন না আজ মোবাইলে ব্যালান্স নেই, বৃষ্টিও আজ পরতে শুরু করল আবার বাবার ফোন ও আজ আসেনি।
সব ঝামেলা একসঙ্গে এসেছে। এখন দেখি বাসে চড়ে যেতে হবে।”
–” বাসে চড়ে যাবেন কেন? আমার সঙ্গে আসুন, আমার গাড়িটা আছে কি করতে? বাড়ি দিয়ে আসি আপনাকে।”
–” তার প্রয়োজন নেই!”
–“অবশ্যই আছে!চলুন আমার সঙ্গে আজ, আপনাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আসি। এই বৃষ্টিতে বাস থেকে নেমে কোথায় দাড়াবেন? ঝুম বৃষ্টি!
–” না কোন সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো!”
–” না, কোন সমস্যা আছে! অনেক সমস্যা আছে! সামান্য গাড়িতে ও কি উঠতে পারবেন না? এটুকু আবদার অন্তত পূরণ করতে দিন!” বিভা পরেছে মহা ঝামেলায় এই একরোখা ঘাড় ত্যাড়া ডাক্তার তার পিছু ছাড়বে না মনে হয় সহজে। উপায় নেই এর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার।
অবশেষে সবকিছু ভেবে বলল-
–” চলুন যাই! এত করে যখন বলছেন!”
গাড়ির সামনে ছাতা ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল বিভাকে ফ্রন্টসিটে বসতে দিয়ে ড্রাইভিং করতে লাগল ফাইয়াজ।
কি বুঝে গান চালিয়ে দিল। এমন আবহাওয়ায় খানিকটা গান চালানো যায়! এফএম রেডিওতে তখন বাজতে লাগল শ্রীকান্ত আচার্যর গান –
–” আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশ,
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম!”
” শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম!”
বিভা আড়চোখে তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ সাহেব গানের তালে তালে গুনগুনিয়ে আবার সুর তুলছে। বিভা কিছুটা বিরক্ত হলো এভাবে কোন পুরুষ মানুষ তার সামনে বসে গুনগুন করা বা অযাচিতভাবে কথা বলাটা বিভা পছন্দ করে না। একরাশ বিরক্ত নিয়ে সে বাহিরে চেয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর বাহির থেকে আবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ গুনগুন করে গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আর বিভার দিকে ফিরে হেসে দিয়ে বলল –
–” আমি গান শুনলে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা তাই একটু আধটু গুনগুন করি। এটা আমার বাজে স্বভাব!”
–” হুম তা তো দেখতেই পারছি।”
–” আপনি বিরক্ত হচ্ছেন, বুঝতে পেরেছি। ভদ্রতা দেখিয়ে বসে থাকবেন না ফটাফট সব বলে দিবেন। মন হালকা হয়ে যাবে!”
বিভা কোন উত্তর করল না চুপ করে বসে রইল। প্রায় ঘন্টাখানেক এর মধ্যে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে বিভার বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে দুজন দৌড়ে চলে এলো।
কলিংবেল এর শব্দে দরজা খুলেই সামনে দাড়ানো বিভাকে দেখে অবাক হয়েগেছে বিভার মা। অস্থির হয়ে বলে উঠলো –
–” কিরে এভাবে ভিজে আছিস, গাড়ি নিয়ে আসতে পারিসনি? একদম ভিজে জবুথবু হয়ে এসেছিস?”
–” গাড়ির কথা আর কি বলবো তোমায় পরে শুনাচ্ছি ও সব। ” পিছন ফিরে ফাইয়াজকে ডেকে বলে উঠলো-
–“আরে আসুন, কোথায় যাচ্ছেন?”
–” বাসায় যেতে হবে,”
–” আরে এটা কোন কথা? আসুন আমার সঙ্গে, আম্মু নূরিকে বলো চা করতে। আর আপনি আসুন!”
ফাইয়াজ ঘরে ঢুকেই বিভার মাকে সালাম দিল।
ড্রয়িংরুমে বসতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই চা সামনে নিয়ে বসলেন বিভার মা।
—” তোমার মা কেমন আছেন?”
–” জী আন্টি ভালো আছে।”
–” ও, তো সেদিন তোমার ফুফু এসেছিলেন সেই ফুফু কেমন আছেন?”
–” সবাই ভালো আছে,”
–” তোমার বাবা কি করতো যেন?”
–” বাবার নিজস্ব একটা কোম্পানি ছিল কনস্ট্রাকশন সাইটের। সেই কোম্পানিটা বাবা চালাতো, আমি অবশ্য চালাই তবে সময় করে উঠতে পারিনা মাঝেমাঝে দেখাশুনা করি। ”
—“বাহ! হাসপাতাল সামলাচ্ছো আবার বাবার রেখে যাওয়া কোম্পানিটার ও হাল ধরেছো।”
–” হাল ধরতে চাইলে ও পারছি না আন্টি বেশ টাফ দুটো সামলানো। আমার অনেক লস হচ্ছে কোম্পানিতে শুধু ইনভেস্ট করে যাচ্ছি বেনেফিট 100 % বাদ 60 % ও নেই।
ম্যানেজার যা বলছে তা মেনেই চলছি।”
–” ব্যবসা সবাই পারেনা আর তুমি তো অন্য প্রফেশনে আছো। ”
–হুম, সামনে বড় কোন নামকরা প্রজেক্টের হাতে সেল করে দেব। এ ছাড়া উপায় নেই! আম্মু অসুস্থ উনি ঠিক থাকলে এতদিন উনি সব সামলাতে পারতেন।”
বিভা গোসল করে রুমে এসে দেখল তার মা আর ফাইয়াজ সাহেব মিলে মোটামুটি গল্পের আসর জমিয়ে ফেলেছে। বিভা সেখানে বসতেই মা বলে উঠল তোরা কথা বল আমি আসি। ফাইয়াজ চাতে খানিকটা চুমুক দিয়ে বলল –
–” বাসায় এলাম ভাবলাম নিজের হাতে চা করে হয়তো খাইয়ে ছাড়বেন।”
–” আনবো নাকি?”
–” কি?”
–” চা!”
–” না লাগবে না অত চা খেলে তৃপ্তি পাবো না পেট একদম ফুলে যাবে। ”
চলবে।
#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৪
–” না লাগবে না অত চা খেলে তৃপ্তি পাবো না পেট একদম ফুলে যাবে। ”
–” আচ্ছা তাহলে আর চা দিচ্ছি না।”
ফাইয়াজ মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। এর মধ্যেই বিভার ফোন বেজে উঠল। কলটা বাবার ছিল, বিভা ধরতেই বাবার এক গাদা প্রশ্নের সমাহার নিয়ে বসেছেন তিনি।
কেন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করল না। বাসে করে কেন এলো? জানায়নি কেন? সবকিছু বিভা এক উত্তরে দিয়ে দিল। ফাইয়াজ সাহেব বাসায় পৌছে দিয়েছেন। এতেই তিনি শান্ত হয়ে গেলেন এর বেশি কিছু প্রশ্ন করলেন না।
ফোন রেখে বিভা হাসিমুখে বলে উঠল-
–” বাবা ফোন করেছে, কেমন অস্থির হয়েগেছে বাসায় এসেছি কিনা তার জন্য। আপনার কথা বলায় চুপ করে গেল।”
–” এই বিষয়টা দ্বারা কি বুঝতে পেরেছেন বলুনতো?”
–” কি?”
–“আপনার বাবার মধ্যে একটা বিশ্বাসের জায়গা গড়ে তুলেছি আমি। একটা বিশ্বাসের স্থান গড়ে তুলেছি আমি।
এই বিশ্বাসের জায়গাটা সবাই গড়তে পারেনা। কোন বাবা নিশ্চিন্তে মেয়েকে কোন ছেলের সঙ্গে সাছন্দে তুলে দিতে পারেনা । ”
–‘তাই?”
–” ঠিক তাই,”
–” একটা কথা বলুন তো,”
–” কি কথা? ”
–” আপনার জীবনের বাকী বসন্তে যদি কোন রুপ ধরে আসতে বলা হয় তাহলে কি রুপ ধরে আসবেন? মানে কোন রুপে জন্ম নিতে চান? অনেকটা কবি জীবননান্দের মত করেই প্রশ্ন করলাম!”
–” আমিও জীবননান্দর মত উত্তর দিলাম পরের জন্মে মানুষ হয়ে আমি অন্তত আর জন্মাতে চাইনা! মানুষের ভীড়ে অমানুষ, হাজারো জন্তু জানোয়ারের ভীড়ে সবচেয়ে হিংস্র জানোয়ার মানুষ। অতএব, জন্ম নিলে মানুষ নয় কোন চড়ুই কোন গাঙ্গচিল হয়ে জন্মাবো। চড়ুই হলে পরের ঘরে বসে খাবো। পরের দোড়গোড়ায় বা জানালার ফাকে ফাকে ছোট্ট ঘর বানাবো। গাঙ্গচিল হলে আকাশে উড়ে উড়ে নিজের বিরাট বড় স্থান করে নিব।”
ফাইয়াজ কিছুটা ভাবুক ভঙ্গিতে হাতটা গালের মাঝে নিয়ে ঠেকিয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে চেয়ে আছে।
–” জীবন সুন্দর! খুব সুন্দর, ভীষণ সুন্দর যদি আপনার পাশে আপনার মনের মানুষটি থাকে। যার হৃদয়টা শুদ্ধতম আর পরিস্ফুটিত কোন মুক্তের মত! মুক্ত বলছি বলে ভাববেন না আমি বলছি সে কোন মহামূল্যবান ব্যাক্তি হবে।’
–” বুঝতে পেরেছি, আমি ও একজন স্বাভাবিক মানুষ।
প্রত্যেকটা মানুষই একজন ভালো মানুষ খুজেঁ বেড়ায় তার জীবনে যে কিনা স্বাভাবিক ভাবেই জীবনযাপনে সক্ষম।
যেকিনা প্রতিমুহুর্তে তাকে আগলে রাখবে। তাই বলে ইচ্ছে করে না পুনরায় জন্ম নিলে ভালোবাসার মানুষটিকেই পান? বা আপনি ঠিক যেমন চান। আপনার মত করে বুঝবে চিনবে আগলে রাখবে এমন কাউকে?”
–” এমন কেউ অন্তত আর আসবে না,
–“যদি বলি আসে!সে আসবে আপনাকে আগলে রাখবে। সব সময় আপনাকে কাছে রাখবে। ”
–“এটা কি আদো হয়?”
–“হয়তো!”
চায়ে চুমুক দিতে দিতে চাটাও ঠান্ডা হয়েগেল ফাইয়াজের ।
চেয়ে রইল সামনে বসে থাকা এক সুন্দরী রমণীর সামনে।
অনিন্দ্য রুপ তার! সুন্দরীরা নাকি রুপে যেমন সুন্দরী হোক না কেন মাথায় তাদের নাকি এক দন্ড বুদ্ধি থাকেনা। অনেক সময় শুনে এসেছে সুন্দরীরা যতই রুপে মুগ্ধকর হোক ভিতর নাকি তাদের কুৎসিতে ভরপুর!
এই রুপসীকে সে কোনটাই দিতে পারেনা। মেয়েটির জীবনে তার শেষ ভুল হয়তো আবেগে হলেও এরপর আর কোন ভুল হয়নি। বিভার মা ঘুরে এসে বললেন —
–” একি তুমি তো কিছু নিলে না বাবা?”
–” এই তো আন্টি চা নিলাম তো,”
–” অন্যকিছু নিলে না?”
–” আন্টি আমি চা টাই বেশি পছন্দ করি। এতেই চলবে।”
ফাইয়াজ কিছু সময় সেখান থেকে কথা বলে চলেগেল।
বাড়িতে এসে দেখল মা ড্রয়িংরুমে বসে পত্রিকা পড়ছেন।
সে এগিয়ে সেখানে দাড়িয়ে বলল-”
–” মা ঔষধ খেয়েছো?”
–” হুম,”
–” ও,”
–” কোথায় ছিলি তুই? তোর তো ডিউটি শেষ সেই কখন!”
–” তোমাকে বলেছিলাম না বিভার কথা। ও কে রাস্তায় পেয়েছিলাম সেখান থেকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসলাম বুঝলে।”
–” বিভা মানে তো সেই মেয়েটা যার বাসায় সেদিন গিয়েছিলি। মেয়েটার পরিবারের সবাই কেমন আছে রে?
আর তুই আমাকে বললি ও না মেয়েটার ব্যাপারে।”
–” সব বলবো, সবকিছু তোমাকে খুলে বলবো। এখন একটু রেস্ট নিতে যাচ্ছি বুঝলে।খুব টায়ার্ড আজ আমি।”
______________________
বিভা অফিসের কাজ গুলো সব গুছিয়ে নিয়ে উঠে দাড়াতেই আলমগীর এলো। বিভা কিছুটা ইতস্তত হয়েগেল আলমগীরকে দেখে। কারন আলমগীরকে দেখলে তার মনে পরে যায় সব পুরোনো স্মৃতি। আলমগীরের বাসায় সবুজ তাকে নিয়ে প্রথম উঠেছিল। আলমগীর সবুজের সেই সহোচরী যে কিনা বিভাকে নিয়ে থাকতে সাহায্য করেছিল। সেসব কথা মনে হতেই বিভার শরীর কেমন ঝংকার তুলল। বড্ড খারাপ লাগে তার সেই পুরোনো স্মৃতি মনে করতে।
আলমগীর এসে সালাম দিল। বিভা হাসিমুখে স্বাভাবিক হয়েই সালামের উত্তর নিল। আর বলে উঠল –
–” কি সাহায্য করতে পারি?”
–” ভাবী ভালো আছেন? যদিও বা যে মাধ্যমে বা যে সম্পর্কের মাধ্যমে ভাবী হয়েছিলেন সেই সম্পর্ক নেই।
দুঃখিত এভাবে ভাবী বলার জন্য। আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভাইয়ের। আমি আপনাকে সব সময় বোনের জায়গা দিয়ে এসেছি। কিন্তু নিজের অজান্তেই দেখুন বোনের এত বড় সর্বনাশ করে ফেললাম।”
–” প্লিজ ওগুলো বলবেন না, যা হয়েছে তাতে আমার দোষ। আপনার কোন দোষ ছিল না শুধু শুধু আপনার দোষ দিবেন না। চলুন নিচে আপনার সঙ্গে কথা বলে আসি।”
অফিসিয়াল টাইম। অফিস থেকে বেড়িয়ে আলমগীরকে নিয়ে নিচে এসে দাড়াতেই আলমগীর বলে উঠল-
–” আপনার স্বামী কেমন আছে?”
—” মানে এই তো কিছুক্ষণ আগেই বললেন সম্পর্ক শেষ। এরপর তো আর স্বামীর কথা আসার কথা না। ”
–“আপনি বিয়ে করেননি? ”
–” না,”
–” বাহ, একজন বিয়ে করে জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত আর অন্যজন এইদিকে এভাবেই জীবন কাটাচ্ছে।”
আলমগীরের কথায় বিভা তারদিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। সবুজ বিয়ে করে নিয়েছে! স্বাভাবিক একটা জীবন গড়ে তুলেছে সবুজ। এতটা সহজভাবে কিভাবে মানুষ এত কিছু করতে পারে?
–” সবুজ বিয়ে করেছে কবে?”
–” এই তো আপনি চলে যাওয়ার প্রায় আট মাস পরেই সবুজকে একদিন দেখলাম ঢাকায় স্ত্রীকে নিয়ে আসতে।
সেদিন দেখায় সবুজ কিছুই বলেনি। পরে জানতে পারলাম সবুজের স্ত্রীকে সবুজ নিয়ে এসেছে যেন বাড়ীতে না থাকে।
আপনার কথা জিজ্ঞাসা করতেই শুনলাম আপনি সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছেন। আরও শুনতে পারলাম দোষটা আপনার নয় সেটাও সবুজের মায়ের, বোনের আর তার।
সবুজ না বুঝেই আপনাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর যখন আপনি তাকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন তখন সে এমনিতেই রেগেছিল মায়ের কথা শুনে বিয়ে করতে ও দেরী করেনি সবুজ। এর প্রায় কয়েকমাস পরেই সবুজের নতুন স্ত্রীর সঙ্গে তার মা ও বোনের দন্দ্ব লেগে যায়। এবারে সবুজের স্ত্রীর পরিবার থেকে মামলা করে দিয়েছিল ওদের জন্য। ব্যাস এখন সবুজ ওর এই স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে। বাড়িতে একমাস ও টিকতে পারেনি দৈনিক ওদের মধ্যে অশান্তি লেগে থাকতো।
আর এর পিছনে ছিল সবুজের মা আর বোন সবচেয়ে দায়ী। নতুন বউয়ের মুখে আর পাড়া-প্রতিবেশীদের কথায় সবুজ বুঝতে পারলো তার বিভাই ঠিক ছিল। কিন্তু আফসোস বিভাকে আর পাওয়া হলো না তার।
সবুজ কিন্তু এখন খুব আফসোস করে জানেন।
আপনার কাছে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আপনি অনেক আগেই সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। বাচ্চাটাকে ও দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু লজ্জায় আর আপনার সামনে আসার সাহস পায় না। আমি ও ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি। ও আর আমার সঙ্গে কথা বলার সাহস পায় না। ছেলেটা না আপনাকে সুখী হতে দিল না নিজে সুখী হলো।”
—” কি হয়েছে ওর?”
–” ওর মা আর বোন মিলে ওর কোন আত্মীয়ের কাছে প্রায় বিশ লাখ টাকার মত ধার নিয়ে বাড়িতে ঘর দিয়েছে।
মিনাকে বিয়ে দিতে গিয়ে ধার করেই টাকা অর্ধেক শেষ।
ছেলেটার চেহারা আর আগের মত নেই। খুব দূর্বল!
এত কিছু এই বয়সে সহ্য করার সাধ্য কি বলুন?”
–” মানুষ ঠিক যেমন কর্ম করে তার ফল ও পায়। সবুজ একদিন এই মা আর বোনের কথা শুনেই আমাকে কোন ভাবেই বিশ্বাস করেনি। আজ সেই মা বোনের কারনেই ওকে এইসব ভোগ করতে হচ্ছে।”
–” হয়তো, এই তো আজ প্রায় কয়েক সপ্তাহ আগে ছেলেটা স্ট্রোক করেছে।”
–” স্ট্রোক করেছে মানে?”
–” হ্যা, ক্ষমা করে দেওয়া সহজ নয় তবুও বলবো ছেলেটাকে অন্তত আর কোন অভিশাপ দিবেন না বোন।
আপনাকে হারানোর পর এমনিতেই অনেক ভেঙ্গে গিয়েছে সে।”
–” আমি নাহয় তাকে ক্ষমা করে দিব। আমার অনাগত সন্তান হত্যার জন্য তাকে কি করব? সে যে আমার বাচ্চাটাকে মারতে স্বরর্যন্ত্র করেছিল?”
চলবে।