#বিভাবতীর_জীবন
#পর্বঃ১৭,১৮
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৭
দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব।
দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব ।
বাঁধন-বিহীন সেই, যে বাঁধন অকারণ।
মায়াবন বিহারীনি!…
বরাবরের মত পছন্দের গানটি ঠোটে উচ্চারিত হচ্ছে বিভার। দীর্ঘ বালির স্তরের মাঝে উচ্ছাসিত সমুদ্র! কি অপুরুপ দৃশ্য! সমুদ্রে এখন চঞ্চলা ঢেউ খেলে বেড়াচ্ছে। ঢেউ গুলো আস্তে আস্তে সমুদ্রের তীরে এসে আছড়ে পরছে। আর সেই আছড়ে পরা ঢেউ গুলোতে যে যার মত জলকেলিতে ব্যাস্ত। ঢেউ গুলো সব পায়ে এসে ঠেকছে। এমন একটা মুহুর্ত যেন অন্যরকম ভাবনায় মত্ত করছে। জলরাশিগুলোর ছোয়াঁয় কিছুটা শিহরণ বয়েগেল শরীরে। সেসব কিছুকে তোয়াক্কা না করে সমুদ্রের তীরে কিছুটা হেটে যেতে লাগল বিভা। তার পিছন পিছন ফাইয়াজ যে কখন দৌড়ে চলে এলো বুঝতেই পারেনি সে। দৌড়াতে দৌড়াতে বেচারা যেন হাপিঁয়ে উঠেছে।
হাপিঁয়ে উঠা গলায় বলে উঠল –
–” আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে চুপিচুপি চলে এলেন এখানে। এই কাজটা কিন্তু ঠিক করেননি!”
বিভা ভ্রু কুচকে তাকাতেই, ফাইয়াজ বলে উঠল।
-“না মানে আমাকে কিন্তু বলে ছিলেন আপনি আমাকে বন্ধু ভাবেন। বন্ধু হিসেবে কি আমাকে নিয়ে ভাবার দরকার ছিল না? আমাকে ডেকে আনার দরকার ছিল না?”
বিভা ফাইয়াজের দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্যদিকে ফিরে তাকালো। ফাইয়াজৈর হঠাৎ মনে হলো সে তো ভুলেই গিয়েছিল বিভা তাকে বন্ধুত্বের কথা বললে ও এখন ও বিশ্বস্ত বন্ধুর স্থানে জায়গা দেয়নি। হাটতে হাটতে কিছুদূর যেতেই আবার পিছন ফিরে দেখল বিভা সামনে দাড়িয়ে থাকা দম্পতিদের দিকে চেয়ে আছে। যারা নিজেদের মধ্যে খুব সুন্দর সময় কাটাতে ব্যাস্ত। কোলে প্রায় সাত আটমাসের বাচ্চাটাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে মহিলাটি, পাশেই তাঁর স্বামী তাকে পানিতে ভিজিয়ে দিচ্ছে আছড়ে পরা ঢেউ থেকে। কোলে থাকা বাচ্চাটি খিলখিল করে হেসে দিচ্ছে। বিভা সেই মুহূর্তটা উপভোগ করছে প্রাণ ভরে। ফাইয়াজের ও এতক্ষণে নজর পরল দৃশ্যটি। ফাইয়াজ আবার সামনে এগিয়ে গেল।
বিভার সামনে দাড়িয়ে বলল-
–” খুব সুন্দর একটা পরিবার না? বাবা-মা আর ছোট্ট একটা সদস্য। মনে হয় না আপনার ও এমন একটা পরিবার থাকতো। খুব করে নিজেকে গুছিয়ে নিতে ইচ্ছে করে না? মনে হয় না আবার বিশ্বাস করে একজনের বুকে আত্মসমর্পণ করতে?”
–” করতে তো ইচ্ছে হয়, ভিষণ রকম ইচ্ছে হয় তবে সব ইচ্ছেরা যে পূর্ণতা পায় না!”
–” চেষ্টা করলেই হয়। যদি বলি আজ এমন দিনেই আমি আপনার কাছে আপনার সেই ইচ্ছের একটা অংশ হিসেবে নিজেকে চাই। আপনার কাছে আমি আমাকে তুলে ধরতে চাই। আপনার বন্ধু হিসেবে নয়, জীবন সঙ্গী হিসেবে চাই।
বন্ধুত্বের সম্পর্কে সব সময় ভালো যায় না ফাটল ধরে যায়।
কখনও বা সেই সম্পর্ক খুব বেশি বিশ্বস্ততার হয় না।
কিন্তু জীবন সঙ্গীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকে। একজন একজনের গভীরতায় ডুবে থাকে। হাজারো ঝড় ঝাপটায় সঙ্গীনি বা সঙ্গীর হাত ছাড়তে চায় না সহজে। আমি ও ঠিক তেমন ভাবেই চাই। উত্তরটা আমার চাই বিভাবতী!”
–” পারবেন বিরহ ব্যাথায় জ্বলতে থাকা হৃদয়টাকে প্রশান্তিময় করতে? পারবেন রাতের পর রাত অশ্রুভেজা চোখগুলোকে ঘুমের দেশে নিয়ে যেতে?”
–” অবশ্যই, একবার শুধু হাতটা ধরে দেখুন!”
মনের মাঝে সংকোচটা অনেক আগেই কেটে গিয়েছিল।
সেই সংকোচটা শুধু ভাঙ্গার একটা সময় খুজেঁছিল বিভা।
আজ সেটাও সে দূর করে দিল। অপর দুটো হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে দিল। জীবনকে আরেকটা সুযোগ নাহয় দিয়েই দিল। ভুলগুলো শোধরানোর সময় হয়তো হাতে নেই কিন্তু নতুন করে জীবনের নতুন অধ্যায় তো তৈরী করা যায়? বিভার হাত জোড়া খুব শক্ত করে ধরল ফাইয়াজ। অনেক সাধনা করেও অনেকে তাদের পছন্দের মানুষের হাত ধরতে পারেনা। ফাইয়াজের মুখে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি। বিভা ফাইয়াজের মুখের হাসি দেখেই অবাক হলো এতটা খুশী ও কেউ হয়?শুনেছে ছেলেরা সব সময় নিজেদের ভালোবাসার মানুষকে এবং একান্ত নিজের করেই চায়। তার শরীরে অন্য কারো স্পর্শ ছিল সে সেটা কখনোই মেনে নিবে না। খুব সহজে ফাইয়াজ সেই কঠিন আর কঠোর কথার বাহিরে গিয়ে এত সহজে কি করে মেনে নিল? আর মানলোই বা কিভাবে?
এতটা সহজ আর স্বাভাবিক ভাবে কেউ মেনে নেয়?
বিভা ফাইয়াজের হাত থেকে নিজের হাতটা সরাতে চাইলে ফাইয়াজ বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিল।
দুজনের মধ্যে কিছুটা নিরবতা চলছে। এই নিরবতার অবসান ঘটিয়ে ফাইয়াজ বলে উঠল-
–” জানেন, আমার বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পরেছিল তখন মাকে দেখতাম হাসপাতালের বেডের পাশে বসে তজবী নিয়ে কানের সামনে আয়াত উচ্চারণ করতো আর মাঝে মাঝে ফু ফু দিত। বাবার সেই কঠিন মুহুর্তে ও মা আশাহত হোননি সব সময় তাকে সুস্থ রাখতে ভালো ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা করেছিলেন। ডাক্তারদের প্রতি বিশ্বাসটা শেষ সময় ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি রাত দিন লাগিয়ে বাবার সামনে পরে থাকতেন। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম মায়ের এসব দেখে। মা সব সময় বলতেন বাবার মত এমন ভালোবাসার মানুষ তিনি কখনোই পাবেন না। মায়ের মতে বাবার মনটা ছিল খুব নরম আমার মত নয় একদম নরম আর সরল প্রকৃতির। খুব বেশি ভালোবাসতেন আমার মাকে। মা বলতেন বাবার ভালোবাসাটা ছিল অন্যদের থেকে অনেকটা আলাদা বাবা কখনও মুখ ফুটে হাজার বার নয় কাজ আর কর্মেই ভালোবাসা জিনিসটা শিখিয়ে ছিলেন। যেখানে অন্যরা হয়তো মুখেই ফাকা বুলি ছুড়তেন। বাবা যখন মারা যায় তখন মাকে নানার বাড়ি থেকে বলে দেওয়া হলো বিয়ের জন্য। পাত্র যখন ঠিক করা হচ্ছিল তখন মা আমাদের বুকে টেনে চিৎকার করে বলেছিলেন –
–” আমাকে বিয়ে দিতে হলে ফাইয়াজের বাবাকেই আবার নিয়ে আসতে হবে! ওর বাবাকে ছাড়া আমি আর অন্য পুরুষকে মন থেকে ভালোবাসতে পারবো না!
জীবনে যদি কোন পুরুষ আসে তাহলে সেই একমাত্র ভাগ্যবান পুরুষ! দুনিয়া জুড়ে হাজার মানুষ আসবে কিন্তু একজন গভীর থেকে গভীরে আগলে রাখা মানুষ কখনই আসবে না!” বাবার রেখে যাওয়া কন্সট্রাকশন সাইটের সেই কোম্পানি চালিয়ে আজ অবধি মা আমাদের পাশে ছিলেন। তখন থেকেই ভেবেনিলাম যদি কখনও কাউকে নিজের মত করে পাই। যার সঙ্গে নিজের মনের অনুভূতি গুলোকে নিজের মত করে সাজাতে পারি সেই মানুষকেই নিজের জীবনের অংশ করে তুলবো। পেয়েছি ও ঠিক তেমনই একজন ভালোবাসার মানুষ। হয়তো বড্ড দেরী করে, ভুলটা হয়তো অজান্তেই আপনি করে বসেছেন কিন্তু
শোধরানোর কাজটা আমাকেই করতে হবে! কারন আপনার ভুলটা ভুল হলেও আপনাকে পেয়ে হারিয়ে ফেলেটা আমার জীবনের সবছেয়ে বড় ভুল হবে বিভাবতী!
বিভার শরীরে হালকা ঝাকুনি দিয়ে উঠল। ভুল করল সে আর তা শুধরে দিবে আরেকজন? ফাইয়াজ আরেকটু অবাক করে বলল-
–” আপনার প্রতিটা বসন্তে মনে, শিহরণে, ভালো লাগায় কাছে আসায় আমি থাকতে চাই। ঠিক যেমন করে আপনি আপনার ভালোবাসা গুলো সাধারণ মানুষের জন্য জমিয়ে রাখেন আমি শুধু বলবো তার থেকে ও একটু বেশি করে আমায় ভালোবাসুন আর একটু ভরসা রাখুন।”
–” এতটা জটিল করে কেউ কখনও আমার কাছে ভালোবাসা চায়নি!”
–” এতটা গভীর করে আজ অবধি কোন মেয়ের প্রেমে ও পরিনি।
আপনিই প্রথম আপনিই শেষ!
আপনাতেই শ্বাস আপনাতেই বাস!”
–” বাহ! দারুন, এমন কবি কবি ভাব নিয়ে বসলে প্রেসক্রিপশনে ঔষধের বদলে কবিতা লেখা হয়ে যাবে।
লোকে বলবে পাগল ডাক্তার!”
–” আমি পাগল হইতে প্রস্তুত তবুও বিরহে কাঙ্গাল হইতে প্রস্তুত নই। প্রেম বিরহে কাঙ্গালের মত ঘুরঘুর করতে আমি প্রস্তুত নই।”
–” একটু চুপ করুন তো, এত কথা বলতে পারেন আমার জানাই ছিল না। এখানে দাড়িঁয়ে থাকবেন নাকি? ওরা সবাই এইদিকে আসছে। ওদের কথাবার্তা কিন্তু বেশ লাগামহীন।”
–” তাতে কি? প্রেম করবো আর তীর ছুড়লে পালাই পালাই করবো? আমি কি টিনেজার নাকি? আমার একটা ভাব আছে না ডাক্তার বলে কথা একটু রোমান্টিক ডাক্তার হতেই পারি।”
–” দূর আপনাকে নিয়ে আর পারলাম না!”
–” পারা পারির কাজ বাদ দিয়ে বলুন কবে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবো?”
চলবে।
#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৮
–” পারা পারির কাজ বাদ দিয়ে বলুন কবে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবো?”
–” এত তাড়া কিসের?”
–” বিয়ে করে সংসারী বর হবো! বউ আমার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিবে, টাই টা নিজের হাতে লাগিয়ে দিবে!
মাঝে মাঝে চুপিসারে সবার আড়ালে তাকে কাছে ডেকে কানেকানে কিছু মধুর আলাপন করবো! ইশশ, এমন একটা মুহূর্ত যে কি শান্তিদায়ক তা কি আপনি জানেন? এমন একটা সুন্দর আর শুভ কাজ কি করে দেরী করি বলুন তো?”
–” হা,হা, সংসারী বর? সংসারী মেয়ে শুনেছি। এই প্রথম সংসারী বর শুনেছি তাও আপনার কাছ থেকে। তবে একটা কথা বলতেই হয় এই যে এত রোমান্টিকে ভরপুর কথা বলছেন। এত এত রোমান্টিকতার সময় পাবেন না ডাক্তার সাহেব! বিয়ের পর নিম পাতা হয়ে যায় সব!”
–” উহুম, আমি হবো মৌমাছি আর আপনি হবেন সুমিষ্ট ফুলের মধু! আমি ক্ষনে ক্ষনে সেই মধু আহরন করবো।
ইশশ,কি একটা মুহূর্ত হবে বলুন তো? টিনেজারদের প্রেম আমরা বিয়ের পর করবো। ”
বিভা ফাইয়াজের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে এই লোকটা তাকে মনে হয় পুরো চমকের উপরেই রাখবে। এত রোমান্টিক কথাবার্তাও যেন তার মুখে সব সময় লেগে থাকে।
— হুহ,ফাকাবুলি!”
ফাইয়াজ আর কিছু বলবে তার আগেই উর্মির আবির্ভাব ঘটল।
–“বিভা, ভাইয়া আপনারা এখানে দাড়িঁয়ে আছেন? আর ঐদিকে রিসোর্টে রশীদ আঙ্কেল খুজেঁ বেড়াচ্ছে। আপনারা সেই সকাল সকাল বেড়িয়ে পরেছেন কিছু খেয়েছেন কিনা তা প্রশ্ন করছে। সুমিকে বললাম ও বলল বিভা বেড় হয়েছে। আর কিছুক্ষণ পর আপনি ও নাকি বেড় হয়ে এসেছেন। খুজেঁ খুজেঁ আমি হয়রান!”
বিভা উর্মির হাত ধরে বলল চল যাই, আপনি ও আসুন।
ফাইয়াজ ও বিভার দিকে করুণ চোখে চেয়ে আছে। কি করার আর পিছন পিছন তাকেও যেতে হলো।
রিসোর্টে আসার পর বিভা, উর্মি, সুমি গিয়ে দেখল রশীদ সাহেব তাদের জন্য এলাহী কান্ড করেছেন। রশীদ সাহেব তাদের দেখে বললেন –
–“ঘুরতে গিয়েছিলে বুঝি? ”
–” জী আঙ্কেল, ”
–” এই জন্যই সকালে তোমাকে খুজেঁ পাচ্ছিলাম না। বাকিরা তো ঘুমিয়েছিল ওদেরকে বলতেই ওরা কিছু বলতে পারেনি। এখন ব্রেকফাস্ট করতে বসো পরো।
তুমি হলে আমার পরম স্নেহের অধিকারী তোমাকে কি আর কাছ ছাড়া করতে পারি? তোমাদের সবার দায়িত্ব এখন আমার উপর এসেছো যখন ভালোভাবে থাকার পরিবেশ তো করতে হবে।
তুমি মনে হয় কক্সবাজার খুব ছোট থাকতে এসেছিলে? ”
–” জী, আম্মু আব্বুর সঙ্গে এসেছিলাম ক্লাস টু তে যখন ছিলাম।এরপর আর আসা হয়নি।”
–” ও, আমি তখন ঢাকায় ছিলাম,তোমার বাবাকে ফোন করে বলেছিলাম আমাদের বাড়িতে থাকতে। সে থাকেনি কি আর করার এখন তুমি আর তোমার বন্ধুরা এসেছো এতেই যথেষ্ট।”
রশীদ আঙ্কেল তার রিসোর্টের লোকদের ডেকে বলে দিলেন ভালোভাবে পরিবেশন করতে। বন্ধুর মেয়ে বলে কথা বিভার বাবা তার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। সেই বন্ধুর মেয়ে ও তার বন্ধুরা এসেছে আর তিনি তাদের ফেলে দিবেন এমন নয়।
হঠাৎ করে উর্মির চাচাতো ভাই সাব্বির বলে উঠল –
–” হ্যা রে উর্মি আস্ত একটা সৈকত থাকতে সৈকতে আসা লাগে নাকি?”
সৈকত খাচ্ছিল ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারল তাকে নিয়েই কথা হচ্ছে। উর্মি মুচকি মুচকি হেসে বলল –
–” তো কোথায় নিয়ে যাবো?”
–” কোথায় নিয়ে যাবি মানে সৈকতের মত বিশাল দেহী একজন মানুষ থাকতে তুই আবার সমুদ্র, সৈকত ঘুরতে এসেছিস কেন ভাই পাহাড় কি নজরে পরেনি?”
সাব্বিরের কথা শুনে সুমি বলে উঠল –
—” পাহাড় কেন যাবে ভাইয়া? পাহাড় ও তো আমাদের সামনেই আছে।”
–” কোথায়?
–” এই যে তুমি! বিশাল আকৃতির উচু লম্বা মোটা আস্ত একটা কালা পাহাড়! আমার ভাই লম্বা বলে সব সময় তুমি সৈকত ভাইকে পচাঁনো শুরু করে দেও।”
–” তুই চুপ কর পচাঁ নর্দমার পানি!”
–” আমি পচাঁ নর্দমার পানি আর তুমি কালা পাহাড়! এই ভাবী তুমি ভাইকে কিছু বলবে?”
তাদের ভাইবোনদের কথা শুনে হাসতে লাগল সবাই। উর্মি বোন সুমি আর তার ছোট ভাই সৈকত। সাব্বির ও তার স্ত্রী, বোন এসেছে তাদের সঙ্গে একসঙ্গে বেড়াতে। তাদের মধ্যে সম্পর্কটা চাচাতো ভাইবোন কম! কখনও তারাঁ ওই সম্পর্কটাকে আলাদা হিসেবে তৈরী করেনি উল্টো নিজের ভাইবোন হিসেবে দেখেছে। সাব্বির উর্মিদের পরিবারের সব দায়িত্ব না হোক অন্তত মাসের বাজারটা অন্তত করে দেয়। বিভা যখন উর্মি সঙ্গে পড়াশুনা করতো তখনই শুনেছিল উর্মির বাবা নেই, মা অসুস্থ তখনই উর্মির মুখে বিভা দেখেছিল একরাশ অসহায়ত্ত্ব। উর্মির কথা বলা চালচলন তার কাছে মনে হতো কেমন হয়েগিয়েছিল মেয়েটা। তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পেরেছে সে পরিস্থিতি এমন একটা জিনিস যা মানুষকে একদম বদলে দেয়। উর্মি পাশে সেদিন এসে দাড়িয়েছিল সাব্বির আর তাঁর পরিবার। এখনকার এই সমাজে অনেক পরিবার আছে প্রভাবশালী হয়ে শুধু নিজের সুখটাকেই দেখে যায়।
কিন্তু তার ব্যাতিক্রম সাব্বির,সে নিজে হাতে পুরো সংসারটাকে আগলে রেখেছিল। সাব্বির উর্মিদের ভাইবোন সবার দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে নিয়েছে।
ব্রেকফাস্ট করতে বসে অনেকবার চোখে চোখ পরেছে ফাইয়াজ আর বিভার। অস্বস্তি হচ্ছে বিভার, ফাইয়াজের চোখ থেকে লজ্জায় চোখ সরিয়ে ব্রেকফাস্ট করে উঠে পরল সে।
কক্সবাজার এসেছে আর হিমছড়ি ইকোপার্কে আসবেনা তা হয় নাকি? তাই আজ এসেছে সবাই। আজ পুরো প্রকৃতিকে দেখবে আর আপন করে নিবে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে। হিমছড়ি ইকোপার্কে অবস্থিত ঝর্ণার ধারায় আগেও ভেসেছিল বিভা এবার একটু অন্যরকম। আগেরবার ছোট্ট দুহাতের সঙ্গী ছিল তার বাবা আর মা এবার সে পূর্ণযুবতী তার সঙ্গে আছে তার প্রাণের বান্ধবী আর ঘুটিকয়েক বন্ধুবান্ধব। সঙ্গে একজন স্পেশাল মানুষ
যে কিনা একাই পারে পুরো দলটাকে হাসিয়ে তুলতে।
ফাইয়াজ ঝর্ণার নিচে এসে দাড়িয়ে পরল। ঝিরিঝিরি ঝর্ণার ধারা বহিছে পাহাড়ের উপর থেকে। সেই জলের ধারায় নিজেকে একদম মুক্ত করে দিল। প্রথমে ফাইয়াজ নামলে ও পরে অন্যরা ও ভিজতে লাগল।
মেয়েরা সবাই একটু কমই ভিজেছে কারন এখানে টুরিস্টের সংখ্যাটা খুব বেশি। কক্সবাজার বাংলাদেশের ব্যস্ততম একটি টুরিস্ট প্ল্যাস বা জায়গা যেখানে সারাবছর টুরিস্ট থাকেই আর তার গননা করে নির্ধারণ করাও কঠিন। ঝর্ণার পানিতে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করেই দৌড়ে চলে এলো বিভা এত ঠান্ডা কেন পানি? শীত প্রায় যায় বলে সে নির্দ্বিধায় পানিতে ভিজেছে কিন্তু এখন যে এমন ঠান্ডার প্রকোপে পরবে তা ভাবেনি সে। বিভা নিজের গায়ে জড়ানো ওড়নাটা ভালোভাবে পুরো শরীরে টেনে জড়িয়ে নিল। ফাইয়াজ পানিতে ভিজতে ভিজতে দেখল বিভা একপাশে দাড়িঁয়ে গায়ে ওড়না দিয়ে প্যাচিঁয়ে দাড়িয়ে আছে। সে সামনে গিয়ে দাড়িঁয়ে বলল —
—” শীত করছে?”
–“হুম কিছুটা,”
–” আপনার ঠান্ডার সমস্যা আছে?”
–” হ্যা আছে,”
–” তারপর ও আপনি এই ঠান্ডা পানিতে ভিজেছেন? ঠান্ডা বাধিঁয়ে ফেললে কি হবে বুঝতে পারছেন কিছু?”
–‘ আমি কি জানতাম নাকি এমন কিছু হবে?”
–” সামনে হাটুন আমি আসছি,”
–” কেন?”
–” ভিজে কাপড়ে দাড়িঁয়ে থাকবেন নাকি? এতটা কেয়ারলেস কি করে যে হতে পারে মানুষ, চলুন।”
সাব্বিরকে বলে ফাইয়াজ বিভাকে নিয়ে রিসোর্টে এসেছে। বিভা একটু নয় অনেকটাই ভিজেছে। বিভা নিজের রুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করতে চলেগেল। ফাইয়াজ রিসোর্টের কুক হাউজে গিয়ে নিজ হাতে চা বানিয়ে নিয়ে এলো। দুকাপ চা বানিয়ে ট্রেতে করে নিজেই এনে টি-টেবিলের উপর রাখল। বিভা তখন ওয়াশরুম থেকে সবেমাত্র। ফাইয়াজকে নিজের রুমে দেখে কিছুটা অবাক হলো বিভা । ভিজেঁ যাওয়া চুলগুলোকে টাওয়ালে প্যাচিঁয়ে বলল–
–” আপনি এখানে, কিছু বলবেন?”
–” না তেমন কিছু নয়, এক কাপ চা শুধু আপনার জন্য!
সেদিন আপনি তো নিজ হাতে চা বানিয়ে আমাকে দেননি তাই আজ নিজেই আপনার জন্য বানিয়ে নিয়ে এলাম।”
চলবে।