বিয়ে_নামক_ছেলেখেলা,পর্ব১

0
1171

#ধাারাবাহিক_গল্প
#বিয়ে_নামক_ছেলেখেলা,পর্ব১

১.
“পাত্রী পছন্দ হয়েছে বাবা?”

প্রশ্নটা পাত্রীর চাচার, কিন্তু রাকিব কী উত্তর দেবে বোঝে না, মেয়ে নিঃসন্দেহে সুন্দর, তবে একান্তে দশ মিনিট কথা বলার সময়ও কেমন মনমরা হয়ে ছিল। একটা রুমে আলাদা বসানো হয়েছিল তাদের, দরজায় দুই চাচা দাঁড়িয়ে ছিলেন, এভাবে কী কথা হয়! যা বলার রাকিবই বলেছে, সোহানা শুধু মাথা নেড়েছে।

মামা আর ভাইয়ের দিকে তাকায় রাকিব, বিয়ের ব্যাপার, এত দ্রুত কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়! মাত্রই তো পাত্রী দেখলো। রাকিবের হয়ে মামাই উত্তর দেন।

“জ্বি মেয়ে তো মাশাল্লাহ রূপে গুণে আকর্ষণীয়। ভালো লাগবে না কেন।”

“তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ, কী বলেন? রাকিব বাবা তুমিও তো হ্যাঁ তাই না? ”

“ময়েজ সাহেব, আমরা ফাইনাল সিদ্ধান্ত কাল জানাই, আজ তো শুধু আমার দুই ভাগিনাকে নিয়ে আসলাম। পাত্রের অভিভাবক, আমার আপা দুলাভাই, তাদের সাথে কথা বলে কাল জানাব। তবে আমরা পজেটিভ ইনশাআল্লাহ। ”

“আপনি হলেন একমাত্র মামা, রাকিবের শুনলাম কোন চাচাও নাই। সে হিসেবে বাবা মায়ের পরে আপনিই তো ছেলের অভিভাবক, আপনার পছন্দ নিশ্চয়ই আপনার আপা দুলাভাই না করবে না।”

পাত্রীর চাচা ময়েজ মিয়ার কথায় রাকিবের মামা হেলাল হাবিব কথা খুঁজে পান না। একটু মানেও লাগে, আসলেই আপা দুলাভাই তো উনাকেই অভিভাবক হিসেবে পাঠিয়েছেন, নিশ্চয়ই ভরসা করেন, অভিভাবক ভাবেন বলেই নিজেরা না এসে পাত্রী দেখতে দুই ছেলের সাথে মামাকে পাঠিয়েছেন।

রাকিব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করে, ছোট ভাই সাকিব ঢাকা কলেজে পড়ছে। মা আর বাবাকে নিয়ে ছিমছাম পরিবার তাদের। এই জেলাশহরেই তাদের গ্রামের বাড়ি হলেও বহুদিন আগেই দেশের বাড়ির পাট চুকিয়েছেন। রাকিবের দাদা দাদী, নানা নানী কেউ বেঁচে নেই, দূরসম্পর্কের আত্মীয় স্বজন ছাড়া পরিচিত আর কেউ থাকে না এখন এখানে। এই প্রস্তাবটা এসেছে রাকিবের এক দূরসম্পর্কের ফুপুর মাধ্যমে, সেই ফুপু আবার এই বাড়ির বৌ। পাত্রীর চাচা ময়েজ উদ্দীনের স্ত্রী। আজ শুক্রবার ছুটির দিন পাত্রী দেখতে রাকিব ভাই আর মামাকে নিয়ে এসেছে দেশের বাড়িতে। এখান থেকে বের হয়ে রাত দশটার বাসে ঢাকায় রওনা দেবে, কাল অফিস আছে। ইতোমধ্যে সাতটা বেজে গিয়েছে, তাই ওঠার তাড়া আছে। কিন্তু ওনারা যেন ছাড়বেন না এমন অবস্থা।


“নাহ্ ভাই সাহেব, আপা দুলাভাই না কেন করবেন! আমার আপা দুলাভাইয়ের আর ভাগ্নেদের কাছে আমার কথাই শেষ কথা। আচ্ছা যান আমি হ্যাঁ বললাম, বারবার পাত্রী বাছাইয়ে যাওয়া মানুষ আমরাও না। ”

“আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আমি তাহলে সবাইকে জানিয়ে আসি। রাকিবের ফুপু মানে আমার স্ত্রী বড় মুখ করেই আপনাদের কথা বলেছে, জানতাম সম্মান রাখবেন আপনারা। নেন মিষ্টি মুখ করেন, এখন তো আমরা বেয়াই। ”

মামাও হেসে দেন। সোহানার পরিবারের আন্তরিকতায় মামাও খুশি। মনে মনে আশা রাখেন আপা দুলাভাইও অরাজী হবেন না। তবে এখানে আসা পর্যন্ত রাকিবের দূরসম্পর্কের ফুপু আলেয়া বেগম, যার মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব গেল, তার সাথেই দেখা হয়নি। বোধহয় গ্রামের মহিলা মানুষ, অপরিচিত মামার সামনে আসতে চাইছেন না, এমনটাই ভেবে নেন।

“অবশ্যই বেয়াই। তাহলে বেয়াই আমাদের বিদায়ের আয়োজন করতে হয়, দশটার বাস।”

“জ্বি জ্বি, চিন্তা করবেন না, বাকি আয়োজন দ্রুত করতেছি।”

“বোধহয় রাতের খাবারের আয়োজন করতে গেলেন রাকিব। তোদের পছন্দ হয়েছে তো, আমি তো হ্যাঁ বলে দিলাম।”

মাথা নেড়ে সায় দেয় সাকিব, ও ছোট মানুষ এসব নিয়ে কী বলবে, যা বড়রা ঠিক করবে তাই ভালো। রাকিব কিছু বলতে পারে না। সোহানা বেশ মিষ্টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। পড়া শেষের দিকে, বিয়ে হলে তাই সব গুছিয়ে তাড়াতাড়ি ঢাকায় সংসার শুরু করতে পারবে। তাও এত দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগে একটু ফোনে কথা বলার, একজন একজনকে জানার ইচ্ছে ছিল। যাক মামা যা বললেন, সোহানা রূপে গুণে আকর্ষণীয়, তাই মন খারাপ করার কারণই নেই। তাছাড়া হ্যাঁ বললে আজই যে বিয়ে হচ্ছে তা তো না, বিয়ের আগে পর্যন্ত কথা বলার, জানার সুযোগ হয়ে যাবে। যাওয়ার সময় সোহানার নাম্বারটা নিয়ে যাবে ভেবে নেয় রাকিব। নতুন জীবনে প্রবেশের কথা মনে হতেই মনটা পুলকিত হয়ে যায়।

২.
“আসেন বেয়াই, ভেতরের রুমে মেলা করি।”

“ভেতরের রুমে আবার কেন? আপনারা যদি খাবারের আয়োজন করে থাকেন তাহলে টেবিলে দিয়ে দিলেই হয়, আমাদের বাস আছে দশটায়, আটটা বেজে গেল।”

“আরে বাস নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমি ছেলে পাঠাব, দরকার হলে বাস আটকে রাখবে আধাঘন্টা, আমাদেরকে এখানে সবাই চেনে। আসেন বিয়ে পড়াতে বেশি সময় লাগবে না।”

মাথার উপর বাজ পড়ে যেন রাকিব, সাকিব আর মামার। কী বলে বিয়ে পড়ানো মানে!!!!

“কী বলেন ময়েজ সাহেব বিয়ে এখন কেন পড়াবেন? আজ সবে দেখাদেখি হলো। এখনো আমার আপা দুলাভাইয়ের সাথে আলোচনা হয়নি। এখন এসময় কিসের বিয়ে পড়ানো। আমাদের বড় ছেলে আয়োজন করেই মেয়ে নিব।”

“আমাদেরও বড় মেয়ে। আয়োজন ছাড়া মেয়ে আমরাও দেব না। আজ শুধু বিয়ে পড়ানো হবে। আয়োজন পড়ে ধুমধামে হবে, সমস্যা নেই। ”

“আরে বিয়ে কী ছেলেখেলা ময়েজ মিয়া? মেয়ে দেখতে এসেই বিয়ে পড়ানোর চাপ দিচ্ছেন। কী ঘটনা?”

“ফাজলামো তো আপনি শুরু করলেন হেলাল সাহেব। এই বললেন মেয়ে পছন্দ হয়েছে। আমি কাজী সাহেবকে এই রাতের বেলা আনালাম। এখন এসব কথা বলে আমাদের মেয়ের অপমান করছেন। সবাই জানলো মেয়ের সরা পড়ানো হবে। এখন আপনারা বিয়ে না পড়িয়ে চলে গেলে আমাদের অপমান হবে।”

“বিয়ে পড়ানোর কথা আমাদের কখন বললেন? বারবার শুধু পছন্দ কি না তাই জানাতে চেয়েছেন।”

রাকিব আর সাকিব শুধু মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। জীবনে এমন অভিজ্ঞতার ভেতর যেতে হবে ধারণাও করেনি রাকিব। মামা একা সোহানার পুরো পরিবারের সাথে সুবিধা করতে পারছেন না। রাকিব সাকিব কিছু বলার চেষ্টা করলেও বলতে পারে না, কেউ আমলে নেয় না, তাদের কথা বিয়ে আজই হবে। সাকিব বাসায় ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সোহানার কাজিনরা ফোন নিয়ে যায়, একবারে বিয়ের পরই ফোন ফেরত পাবে।

এক রকম চাপ দিয়ে বাধ্য করে রাত দশটা পাঁচে, পনের লক্ষ একটাকা কাবিনে রাকিব আর সোহানার বিয়ে পড়ানো হয়ে যায়। কাবিনের অঙ্কও সোহানার পরিবারের একতরফা ঠিক করা। রাকিব আর মামা বলার চেষ্টা করেছেন যে এত টাকা কাবিন তাদের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সোহানার পরিবারের কথা এরকমে তাদের বড় মেয়ের বিয়ে হবে না।

সেই রাতে আর ঢাকা ফেরা হয় না রাকিবের, সোহানার পরিবার সাকিব আর মামাকে বাসে তুলে দিয়ে আসেন। বাস ছাড়ার আগে তাদের ফোনও দেওয়া হয় না, বাস ছাড়ার সময় ফোন হাতে পান। রাকিবকে ছাড়া ওনারা যেতে রাজি না থাকলেও যেতে বাধ্য হোন। সোহানার বাড়িতে সোহানা আর রাকিবের বাসর রাতের আয়োজন করা হয়েছে, এভাবে মেয়ে জামাইকে ফিরে যেতে দিতে রাজি নয় তারা। বিয়ের পর বাসর না হলে নাকি তা বিয়েই হলো না। ফোন করে অফিসে ছুটি নেয় রাকিব। সোহানাকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি ছিল না রাকিবের, কিন্তু এমন জোর জবরদস্তি কেন তাই বুঝতে পারছে না। মামা আর সাকিবের সাথে একান্তে কথা বলারও সুযোগ আর পায়নি। তবে তারা তিনজনই বুঝতে পারছে কিছু একটা ধোঁয়াশা নিশ্চয়ই আছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here