বিরহে_মরণ,পর্ব-০১,০২

0
1308

#বিরহে_মরণ,পর্ব-০১,০২
এমি
পর্ব-০১

১.
সন্ধ্যা হয়েছে বেশ কিছুক্ষন আগে। অন্ধকার নেমে আসবে কিছুক্ষনের মাঝে। এখনও আকাশে হাল্কা কমলার ছটা। ডিউটি ছিল না আজ শান্তর। তবুও একটা নতুন কেস আসায় জরুরী ভিত্তিতে যেতে হয়েছিল। বাড়ির গলির মোড়ে বাইক রেখে সিগারেট নেয়ার জন্য নামার সাথে সাথেই লোডশেডিং। জেনারেটর চালু হতেও কিছুটা সময় লাগে। তবে আলো জ্বলা শুরু হল একটা একটা করে। দোকান থেকে বাহির হয়ে হেলমেট পরতেই চায়ের দোকানে বসে থাকা ছেলেগুলোর কুৎসিত কথাগুলো কানে এল। কাকে বিরক্ত করছে? এলাকার কোন মেয়ে হলে এই সাহস তো ওদের পাবার কথা না। পাশের দোকানের আলোটা জ্বলতেই মেয়েটাকে দেখতে পেলো। বাইক রেখে সামনে এগিয়ে গেল সে।
-তুই এই সময় একা এখানে কেন?
শান্তকে দেখে নিশিতা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
-রাত্রির কাছে এসেছিলাম। কালকে একটা গ্রুপ প্রেজেনটেশন আছে। ওইটার স্লাইড বানাতেই দেরি হয়ে গেল। রিক্সা পচ্ছিলাম না।
-বাসায় আসতে হবে কেন? ইউনিভার্সিটিতে কি করিস? রাত হবে জেনেও কাউকে সাথে আনিস নাই কেন? দেশের অবস্হা কেমন বুঝিস না নাকি?
-শেষ করতে পারিনি বলেই তো বাসায় আসছিলাম। রাত হবে জানতাম না। দুইবার করে লোডশেডিং।
-খুব ভাল লাগে বখাটেদের কথা শুনতে তাই না?
শান্তকে দেখে একটু ভরসা পেয়েছিল নিশিতা। কিন্তু এই কথায় তার চোখে পানি চলে এল। মাথা নিচু করে ফেলল সে। এমনিতেই বাবার ভয়ে অস্থির হয়ে আছে সে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কি আছে কপালে আল্লাহ জানে।
-আয় আমার সাথে।
-কোথায়?
-কোথায় আবার? তোকে নিয়ে তো আর বৃন্দাবনে যাব না। বাসায় দিয়ে আসি।
বাইকের পেছনে উঠে বসল নিশিতা। ভয়ে সিটিয়ে গেল। এই লোকটার সাথে যাওয়া তো ইমপসিবল।
-এভাবে বসলে তো এখুনি পড়ে যাবি। ঘাড়ে হাত রেখে বস।
-একটা রিক্সা ঠিক করে দিলেই হবে।
বলেই সে নেমে যায়।

-কেন আমার সাথে বাইকে গেলে কি গায়ে ফোস্কা পড়বে? রাস্তার মাঝখানে সিনক্রিয়েট করলে একটা চড় খাবি। ওঠ বলতেছি।

নিশিতাকে নামিয়ে বাইক নিয়ে চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো শান্ত। ছেলেগুলো এখনও আড্ডা মারছে। তাকে দেখে সবাই চুপ করে গেল।
-কি রে মেয়ে মানুষ দেখলেই কি হুঁশ চলে যায়? আর একদিন যদি দেখছি তাহলে সবগুলারে লকাপে পুরবো। কথাটা মাথায় থাকে যেন। তোদের সব কয়টার পেছনে লোক লাগিয়ে রাখবো। আর মামা এই ছেলেদের আড্ডাবাজি এখানে চলবে না। বেশিক্ষণ বসতে দিবা না।

বাসায় এসেই রাত্রির ঘরের দরজায় নক করলো।
-ভেতরে আসো ভাইয়া।
-কি করে বুঝলি আমি?
-যেভাবে তুমি বুঝতে পারো সেভাবে। কি বলবে বলো?
-কিছু বলবো এটা তো নক শুনে বোঝার কথা না?
-তুমি তো সহজে আমার ঘরে আসো না। কিছু বলবে বলেই এসেছো নিশ্চই?
-বাব্বা বুদ্ধি তো ভালই হয়েছে। তবে আরেকটু হলে ভাল হত আরকি।
-বোকার মত কিছু করেছি কি?
-না ঠিক বোকার মত না। তবে অবিবেচকের মত। সন্ধ্যার সময় একটা মেয়েকে একা ছেড়ে দিলি কেন? বাসায় গাড়ি ছিল না?
-ছিল তবে ড্রাইভার ছিল না। আর তুমি কখন আসবে তাও তো জানা ছিল না। আর ওই মেয়েও তো একখান চিজ। যখন যা বলবে তা করতেই হবে। বাসায় যাব বলেই বেরিয়ে গেল। আমার তো কিছুই করার ছিল না।
-এমন চিজদের সাথে না মিশলেই তো পারিস।
-কি যে বলো। ও একটু পাগলাটে বটে। কিন্তু মানুষ হিসাবে অসাধারন।
-হয়েছে। আর গুনগান করতে হবে না। এরপর থেকে এমন যেন না হয়।
-কিন্তু কি হয়েছে বলবে তো?
-পাড়ার বখাটেগুলো টিজ করছিল।
-তাতে কি হল? মেয়েদের তো এমন কত কিছুই সহ্য করতে হয়। শুধু তো বাইরে না ঘরের মানুষও তো এবিউজ করে।
-সেই জন্যই তো বলি ভাল করে পড়া লেখা করেন। নিজের পায়ে দাঁড়ান।
-ভাইয়া তুমি এত বোকা কেন? তুমি না পুলিশ। তুমি কি দেখ না কত শিক্ষিত মেয়েরাও এই সমাজ ব্যবস্হার কাছে কত অসহায়। মেয়েরা কোথাও সেফ না।
-ওরে বাবা। বড় হয়ে গেছিসরে বুড়ি। তোর না কাল কিসের প্রেজেন্টেশন। প্রিপারেশন নে। পরে কথা বলবো।

২.

পল্লবী থানায় গত দুদিন ধরেই বেশ ব্যস্ততা। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সেই এলাকা এবং মিডিয়া তোলপাড়। শিক্ষিকার বাবা মা অবশ্য খুন বলেই দাবি করছেন এবং সেই মোতাবেক তার স্বামী ও শাশুড়ীর নামে মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু আসামী পক্ষের রাজনৈতিক খুঁটির জোর খুব ভাল থাকায় তেমন কিছু করা যাচ্ছে না।

কিছুক্ষন আগে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে। শান্ত রিপোর্ট নিয়ে চুপচাপ বসে আছে তার টেবিলে। ঠিক যা ভেবেছিল তাই। প্রথমে দমবন্ধ করে মেরে পরে গলায় দড়ি পরিয়েছে। সেদিন যখন এস আই সোলায়মান ফোন করেছিল তখন সে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিল। বাথরুমের শাওয়ারের সাথে ঝুলছিল মেয়েটা। হাটু মেঝেতে লেগে আছে। আর যে শাওয়ার তা আর যাই হোক একটা মানুষের ওজন নিতে পারার কথা না। এমন দেখলে যে কারো মনেই প্রশ্ন আসবে এভাবে আত্মহত্যা করা সম্ভব না কিছুতেই। কতই বা বয়স হবে মেয়েটার? তার মতই হয়তো। পাশ করেই একটা ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছিল। পাশাপাশি পিএইচডি করবার জন্য দেশের বাইরে আবেদন করেছিল। তারপরেই বিয়ে। বিদেশের একটা ইউনিভার্সিটিতে যখন ডাক এলো তখন স্বামী ও শাশুড়ীর সাথে ঝগড়া। আর তারপরেই এই ঘটনা।
শান্ত এসপি সাহেবের ঘরের দরজায় নক করলো।
-কি ব্যাপার মাহফুজ ?
-স্যার রিপোর্ট এসেছে। এখন তো নিশ্চই আসামীদের ধরে আনা যায়। এর মধ্যেই ফেরারী হয়ে গেছে কিনা আল্লাহ জানে।
-তা তো যায় । উপর মহল সামলাতে পারবে তো? আর কোর্টে মামলা উঠলে দেখবে ঠিক বেরিয়ে গেছে। তখন নিজের চাকরী নিয়ে টানাটানি।
-তাই বলে কি অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরবে। আর আমরা চুপ করে থাকবো?
-নতুন জয়েন করছো তো এখন এমন লাগবেই। আমারও এমন মনে হত। আস্তে আস্তে গায়ের চামড়া মোটা হয়ে গেল। যাক নিয়ে আস ধরে। দেখ মামলা কোর্টে উঠলে রিমান্ডে নেয়া যায় কিনা। আর যাবার সময় ওয়ারেন্ট নিতে ভুলোনা।

আসামী গ্রেফতার করে আনতে না আনতেই থানার সামনে সাংবাদিকদের মেলা লেগে গেল। এরা যে কোথা থেকে খবর পায়। থানা থেকেই নিশ্চই কেউ জানিয়েছে। এখন মিডিয়াকে কোনো রকম তথ্যই সে জানাতে চায় না। রিমান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের আন্ডারে নিতে পারলে আরও ভাল হয়। এখন সোংবাদিকদের মুখামুখি পড়া ল্যাবের না কিছুতেই। সে তাই অপেক্ষা করলো বেশ কিছুক্ষন। বাইরে যখন মোটামুটি ফাঁকা হয়ে গেল তখন সে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

মানুষের এই কদর্যরূপ দেখতে তার ভাল লাগে না। দয়া, মায়া, মূল্যবোধ, মানবতা সব কিছু যেন দিন দিন উধাও হয়ে যাচ্ছে। এরও কি বিচার হবে? নাকি আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবে? এলোমেলো ভাবে বাইক চালিয়ে ঘুরে বেড়ালো অনেকটা সময় । কিন্তু এক সময় তো ঘরে ফিরতেই হবে।
একটা চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো। পকেট থেকে ফোন বাহির করল। রাত প্রায় বারোটা। মা আর রাত্রি এর মাঝেই বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। হাতের সিগারেট মাটিতে ফেলে নিভিয়ে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিল ।

চলবে……

#বিরহে_মরণ
০২

৩.
এবারের শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। তার উপর অসময়ে এমন ঝড় বৃষ্টি। গরম এক কাপ চা নিয়ে শান্ত থানার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষন।

মামলা শেষ পর্যন্ত কোর্টে উঠেছে এবং আসামীর রিমান্ডও মন্জুর হয়েছে। এখন মামলা ঠিকঠাক ভাবে এগুলেই হয়। ফোন বাজতেই সে পকেট থেকে ফোনটা বাহির করে। রাত্রির ফোন ।
-হ্যালো।
-ভাইয়া একটা সমস্যায় পড়েছি।
-কি সমস্যা?
-ভাইয়া ক্লাস শেষে বসুন্ধরা শপিং মলে এসেছিলাম। বৃষ্টির জন্য আটকে গেছি। এখন উবার, ট্যাক্সি কিছু পাচ্ছি না।
-কেন গাড়ি কই?
-গাড়ি তো আনি নাই।
-আচ্ছা অপেক্ষা কর। আমি আসছি। তবে সময় লাগবে। রাস্তার কি অবস্থা তাও তো জানি না।
-তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ। আমরা অপেক্ষা করছি।
-আমরা মানে?
-আমি আর নিশিতা।

দুজনে বাইরে থেকে আবার মলের ভেতরে এসে দাঁড়ালো । বৃষ্টির জন্য অনেকেই আটকে আছে। রাত প্রায় আটটা। নিশিতা বৃষ্টিতে ভিজে আর কিছুটা ভয়ে অনেকটা চুপসে আছে। রাত্রির তো ভাই আসবে। তাই ওর বাসায় কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু তার কি হবে। কত না জানি রাত হবে। আজ যে বাবা কি করবে আল্লাহ জানে।
– কি রে কি হয়েছে তোর?
-আজ কপালে দুঃখ আছে। বাবা মনে হয় বাড়িতেই ঢুকতে দেবে না।
-কেন?
-অনেক রাত হয়ে যাবে। আর জানিস তো বাবা কেমন। এখনও মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।
-চিন্তা করিস না। আমি আর ভাইয়া যাব তোকে দিতে।
তবুও নিশিতার বুক দুরুদুরু করতে থাকে। ওদের সামনে হয়তো কিছু বলবে না বাবা। কিন্তু পরে…… নাহ এই চিন্তা আর নেয়া যাচ্ছে না। এই মেয়ের পাল্লায় আর পড়া যাবেনা। কোথায় ক্লাস শেষেই বাড়ি যাবার কথা তা না মহারাণীর নতুন ড্রেস কিনতে হবে।

-কি রে কি চিন্তা করছিস। ভাইয়া বাইরে অপেক্ষা করছে চল।
তারা বেরিয়ে এসেই অবাক হয়ে গেল। এমন আজব মানুষও হয়?
-আপনি পুলিশের গাড়ি নিয়ে এসেছেন?
-পুলিশ তো পুলিশের গাড়ি নিয়েই আসবে। এমন আকাশ থেকে পড়ার কি হল? আর এই গাড়ির জন্যই তো তাড়াতাড়ি আসতে পারলাম।
-আমি কিছুতেই এই গাড়িতে উঠবো না। মানুষ জন ছবি তুলে ভাইরাল করে দেবে।
-তোর ছবি তোলার জন্য কে বসে আছে? রাত্রি চল। তুই তোর নিজের ব্যবস্হা করে নে।
-আপনি এমন নিষ্ঠুর কেন?
-যাহ বাবা। কষ্ট করে নিতে এলাম। তুই নিজেই যাবি না। আর নিষ্ঠুর হলাম আমি।
-কি করে যাব? এই গাড়ি নিয়ে আমার বাসার সামনে নামিয়ে দিতে গেলে তো মান সন্মান সব চলে যাবে। মানুষ কত রকম কথা বলবে।
-তোর তো দেখি অনেক রকম সমস্যা। তবে তোর কথায় লজিক আছে।
রাত্রি বলল,
-আগে তাহলে আমাদের বাসায় চল। তারপর বাড়ির গাড়ি নিয়ে তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবো।

কলিং বেল বাজাতেই নাসিমা বেগম দরজার খুলতে ছুটে গেলেন। নিয়াজ সাহেব তখনও সোফায় বসা। নিশিতা ঢুকতেই তিনি এগিয়ে এসে গালে চড় বসিয়ে দিলেন। নাসিমা বেগম শান্ত আর রাত্রিকে নিয়ে দরজার কাছেই দাড়িয়ে পড়লেন। ওরা আসতে চাইছিল না। তিনিই জোর করে আনলেন। নিশিতা নিজের ঘরে চলে গেল।
– সরি আঙ্কেল। আসলে আমার জন্য এমনটা হয়েছে। বৃষ্টিতে আটকে পড়ে ছিলাম।
-তা তো বুঝলাম মা। কিন্তু আমার মেয়ে তো জানে আমি এসব পছন্দ করি না। আর তোমরা বড়লোক মানুষ। তোমাদের গায়ে তো কাঁদা লাগবে না মা। আমাদের তো অনেক কিছু চিন্তা করে সমাজে বাস করতে হয়। এই জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে চাইনি। আচ্ছা তোমরা বস। নাসিমা ওদের খাওয়ার ব্যবস্থা কর।
-না আঙ্কেল আমরা আজ আসি। দেরি হয়ে যাবে অনেক।
-আচ্ছা ঠিক আছে যাও তাহলে। পরে একদিন এস।
শান্ত রাত্রিকে নিয়ে বেরিয়ে এল। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সে চিন্তাও করেনি। মেয়েটার কতটা অপমান হল।
-শোন আর কোথাও নিশিতাকে নিতে যেন না দেখি।
-কেন?
-কেন মানে? দেখেই তো এলি।
-ওর বাবার মাথায় সমস্যা। হি হি হি।
-তোরও তো মাথায় সমস্যা। বান্ধবি চড় খাচ্ছে আর তুই হি হি হি করছিস।
-বুকে ব্যাথা করছে বুঝি?
-মানে?
-কিছু না।

৪.

-নাসিমা তোমার এই মেয়েকে আমি আর বেশিদিন পালতে পারবো না।
-কি বলছেন এসব। আর ও তো খারাপ কিছু করে নাই। বৃষ্টির মধ্যে আটকে গিয়েছিল।
-আজ বৃষ্টি, কাল অমুক, পরশু তমুক । এইসব লেগেই থাকবে। আর ওই যে ওই ছেলেটা। কি যেন নাম ? পাশের বাড়ির রহমত সাহেব বলছিলেন যে সেদিন নাকি মোটরসাইকেলে করে নামিয়ে দিয়ে গেছে। কদিন পর তো আর পাড়ায় মুখ দেখাতে পারবো না। বড় বিপদ আসার আগেই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
-কি যে বলেন। এত ছোট বয়সে কি কেউ বিয়ে দেয় কেউ। পড়া শেষ করুক।
-বিয়ের পর পড়বে। দরকার হলে পড়ার খরচ আমি দেব।
-মাথা গরম করেন না। বাচ্চা মানুষ । এই বয়সে বন্ধুদের সাথে ঘুরবে না তো কবে ঘুরবে।
-তুমি তো দেখি আধুনিক হয়ে গেছ। তবে আমার ডিসিশন আমি বদলাব না। তোমার মেয়েকেও বলে দিও।
-আপনি এখন ঘুমান তো। পরের টা পরে দেখা যাবে।

বৃষ্টি এখনও হচ্ছে। নিশিতা তার ঘরের বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে অনেকক্ষন হল। এমনিতেই বৃষ্টি পাগল সে। বৃষ্টি হলেই ভিজতে হবে। কিন্ত আজ সব কিছু অসহ্য লাগছে। বাবা রাগ করবেন এটা তো জানাই ছিল । মারবেন কেন? মনে হচ্ছে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কোথায় বা যাবে।

-কিরে মা অন্ধকারে দাড়িয়ে আছিস কেন? চল খাবি।
-তুমি যাও মা।
-মন খারাপ করিস না। জানিসই তো লোকটা এরকমই রাগ হলে আর হুঁশ থাকে না।
-তাই বলে গায়ে হাত তুলবে অন্য মানুষের সামনে?
-ভুল করে ফেলেছে। মানুষেরই তো ভুল হয়।
-এইসব বলে কি লাভ মা। কার হয়ে কথা বলছ? যে মানুষটা তোমাকে মানুষ বলেই মনে করে না? দিনের পর দিন এই সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছ। কখনও কি তোমার কোন মুল্যায়ন হয়েছে মা?
-এই জন্যই তো বলি লেখাপড়া কর ভাল করে। নিজের পায়ে দাড়িয়ে নিজের মত চলবি। আমার তো কোন উপায় ছিল না। এখনও নেই। আমি খাবার ঘরে আছি। তুই আয়।

খাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে ফোনটা হাতে নেয় নিশিতা। অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা টেক্সট।
“ঠিক আছিস তো?”
কে হতে পারে? তুই করে তো শুধু শান্ত ভাইয়া বলে। কিন্তু উনি কেন ম্যাসেজ পাঠাবেন?
-“কে?”
-“আমি শান্ত।”
-“নাম্বার পেলেন কোথায়?”
-“হা হা হা । এইটা কি খুব কঠিন কিছু। যাক তাহলে ঠিক আছিস। মন খারাপ করিস না। বাবা মায়েরা সন্তানের খারাপ চায় না।”
-“এমন আজগুবি কথা বলার কোন মানে হয়? আপনি না পুলিশ। কত খবর তো আসে পত্রিকায়। পরকিয়ার কারনে মা বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে। বাবা মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে। আরও কত রকম ভয়ঙ্কর সব খবর।”
-“ তা অবশ্য ঠিক। কিন্ত তোর বাবা নিশ্চই এমন না?”
-“সেটা আপনার জেনে লাভ নেই। আমি আর রাত্রি ভাল বন্ধু হলেও আমাদের বসবাস সম্পুর্ণ আলাদা জগতে।”
-“ মাথা ঠান্ডা কর। আর ঘুমিয়ে পড়। পরে কথা হবে।”

নিশিতা আর কোন উত্তর দেয় না। উনি কেন ম্যাসেজ করলেন? দয়া করে? নাকি তার অপমানটাকে আরও খুঁচিয়ে দিতে। কিন্তু কথাগুলো তো তেমন মনে হল না। আর পরে কথা হবে এর মানে কি? যত নষ্টের গোড়া রাত্রি। সব সময় মাথায় অদ্ভুত সব রোমান্টিক চিন্তা। প্রেম প্রেম ভাব। মানুষ কি করে এত বোকা হয় আল্লাহ জানে।
-“তোর ভাইয়াকে তুই নাম্বার দিয়েছিস?”
-“কেন? ফোন করেছে ?”
-“ আমার কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবি কাল থেকে।”
-“আমার ভাই কি এতটাই খারাপ?”
-“তুই থাক তোর ভাই নিয়ে।”
-“সাথে না হয় তুইও থাকলি।”
-“তোর মাথা নষ্ট। তোর ভাইয়ের টা নষ্ট করিস না।”
-“এখনই এত দরদ?”
-“কিসের মধ্যে কি? তোর সাথে কথা বলে লাভ নাই।”
-“সমস্যা নাই বলিস না। ভাইয়ার সাথে বলিস।”

চলবে…..

এমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here