#বিশ্বাস_অবিশ্বাস (সাজু ভাই সিরিজ)
#পর্ব:- ০৫
‘ তুমি তো জানো আমি এক কথার মানুষ। আমি কিছুক্ষণ আগে আপুর বাসায় এসেছি। বিকেলে তোমার সঙ্গে জসীমউদ্দিন মোড়ে বিএফসি তে দেখা হবে ‘
আফরিন যখন তার মোবাইলে এই কথা বলতে বলতে বাসায় প্রবেশ করে তখন সে সজলের নাম্বারে কথা বলেনি। যদিও আফরিনের মোবাইল পাওয়া যায়নি কিন্তু তার নাম্বারটা সকালে হাসান সাহেবের কাছে দিয়েছিল সাজু ভাই। ফয়সালের কাছ থেকে সজল সরকারের পারসোনাল নাম্বার সাজু নিয়ে এসেছিল।
ভিডিও ফুটেজে সাজু আফরিনকে যেই সময়ে কথা বলতে দেখেছে। সেই সময়ে সজলের ওই পারসোনাল নাম্বারে আফরিন কথা বলেনি। নতুন একটা নাম্বারে সে কথা বলেছে ৷ যেই নাম্বারে লাস্ট সাতদিনে মাত্র দুবার কল করেছে আফরিন। আর সেই নাম্বার থেকে সাতদিনে কোনো কল আসেনি। শুধু তিনদিন আগে মাত্র একটা মেসেজ এসেছিল৷ প্রযুক্তির বদৌলতে সেই মেসেজ বের করে দিয়েছে হাসান আলী।
মেসেজটা হচ্ছে,
‘ ফ্রী হয়ে কল দিস, আমার মনে হয় ওদের সঙ্গে তোর সামনাসামনি কথা বলে ঝামেলাটা মিটিয়ে নেওয়া উচিৎ। ‘
তাজুলের সঙ্গে কিছু না বলে সাজু বাহিরে আসে। যেই ওসি সাহেব আফরিন হ!ত্যার বিষয় তদন্ত করছেন তিনি থানায় নেই। ঘন্টা খানিক আগে বের হয়ে কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না। সাজু ভাই নতুন সেই নাম্বারে কল দিলেন কেউ রিসিভ করলো না।
সাজু বিড়বিড় করে ভাবতে লাগলো,
কিসের ঝামেলা ছিল আফরিনের? সেই ঝামেলা শেষ করার জন্যই কি আফরিন বিএফসি তে দেখা করতে চেয়েছিল?
কিন্তু কার সঙ্গে?
কে হতে পারে সেই ব্যক্তি? নারী না পুরুষ?
এসব বিষয় তাজুলের জানার কথা নয়। নিশ্চয়ই সজল সরকার কিছু না কিছু জানেন। হাসবেন্ড হিসাবে আফরিন তার সঙ্গে নিশ্চয়ই বলেছে। তাই সজলের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি হয়ে গেল। কিন্তু সজল তো কথা বলতে রাজি হচ্ছে না। নিজ থেকে যে মানুষ লুকিয়ে বেড়ায় তাকে খুঁজে বের করা কষ্টকর।
ওসি সাহেব থানায় এসেছে। তার পিছনে পিছনে সিদ্দিক সরকার। সাজুকে দেখে সরকার যেন খানিকটা বিব্রত হয়ে গেল। তবুও চেহারার রূপ বজায় রেখে দাঁড়িয়ে রইলেন।
‘ আরে সাজু সাহেব যে, কখন এসেছেন? ‘ হাসি হাসি মুখে কথাটা জিজ্ঞেস করেন ওসি সাহেব।
‘ আধা ঘণ্টার মতো হবে, তাজুল সাহেবের সঙ্গে কথা বললাম। তা হঠাৎ সরকার সাহেবকে নিয়ে এলেন যে? ‘
‘ তিনি তাজুলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। ‘
‘ ওহ্ আচ্ছা। ‘
খানিকটা চুপ করে থেকে সাজু বললো, ‘ তাকেও কি টাকার লোভ দেখাতে এসেছেন নাকি সরকার সাহেব? ‘
‘ মা মানে? ‘ থতমত খেয়ে উত্তর দিল সিদ্দিক সরকার।
‘ আপনার বাসার দারোয়ান রফিক আপনাকে তাজুলের ফ্ল্যাটের সামনে দেখল। আপনি সে কথা গোপন করার জন্য তাকে নিষেধ করেছেন কেন? তাকে টাকার লোভ দিয়েছেন কেন? আপনি কিছু লুকাতে চাইছেন! ভালো মানুষ সেজে সবার অগোচরে কঠিন কোনো খেলা শুরু করেছেন। ‘
‘ আপনাকে এসব কে বলেছে? ‘
‘ আমি থানা থেকে সরাসরি আপনার কাছেই কথা বলতে যেতাম। কিন্তু ওসি সাহেবের সামনেই যখন দেখা হয়ে গেল সেহেতু এখানেই বলি সবকিছু। ‘
‘ কি কথা সাজু সাহেব? ‘ চিন্তিত হয়ে ওসির প্রশ্ন।
সাজু নিজের মোবাইল বের করে কিছুক্ষণ আগে রফিকের সঙ্গে বলা কথোপকথনের রেকর্ড চালু করে দিলেন। রেকর্ড চলছিল আর সিদ্দিক সরকার দরদর করে ঘামছিল। সবটুকু শুনে ওসি সাহেবও তাকিয়ে রইল সরকারের দিকে।
সরকার সাহেব এতটা আশা করে নাই। এমনটা হবে জানলে তিনি কখনো থানায় আসতেন না। রফিক এভাবে সবকিছু বলে দিবে তিনি বুঝতে পারেননি। সামান্য সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য শুধু নিষেধ করেছে রফিককে।
ওসি সাহেব বললেন, ‘ কাহিনি কি সিদ্দিক ভাই? ‘
‘ কোনো কাহিনি নাই। আর রফিক মিথ্যা কথা বলেছে, আমি তাকে এসব কিছু বলিনি। কোনো টাকার লোভ দেখাইনি। ‘
সাজু দেয়ালের দিকে মুখ রেখে বললো ‘ তাজুল সাহেবের কাছে শুনলাম আপনি নাকি গত বছর হজ্জ করে এসেছেন। তা এতো সহজে গরগর করে মিথ্যা বলতে বুক কাপে না? ‘
সিদ্দিক সরকার কিছু বললো না। সাজু প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললো, ‘ আপনার ছেলে এখর কোথায়? ‘
‘ আমি জানি না, সকাল থেকে তার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। ‘
‘ দেখা হয়নি নাকি আপনি নিজেই তাকে লুকিয়ে থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন? ‘
‘ আমি কেন লুকিয়ে থাকার পরামর্শ দেবো? ‘
‘ আফরিনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বের হলেই আপনার ছেলে যে আফরিনের স্বামী সেটা বের হয়ে যাবে। ‘
‘ কে বলেছে এসব? সম্পুর্ণ মিথ্যা কথা। ‘
‘ আমি সজলের বন্ধু ফয়সাল সাহেবের কাছে সবকিছু শুনেছি। পরশু রাতে তাজুলকে ডেকে অপমান করেছেন সেটাও তাজুল সাহেবের কাছে শুনলাম। মোটামুটি সবকিছু জানি বলতে পারেন। আপনি বরাবরই সবসময় ভালো সাজার চেষ্টা করেছেন। ভেবেছিলেন যদি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে আপনার উপর কোনো সন্দেহ আসবে না। কিন্তু ছোটবেলার সেই কথাটা ভুলে গেছেন যে “অতি ভক্তি চোরার লক্ষ্মণ” তাই না? ‘
ওসি সাহেব বললেন, ‘ ওনার প্রশ্নের উত্তর দেন সিদ্দিক ভাই। চুপ করে আছেন কেন? ‘
মাথা নিচু করে সিদ্দিক সরকার বললো, ‘ আমি জানি না আপনি কি কি জেনেছেন। তবে আমি ধরে নিচ্ছি আপনি যা যা জানতে পেরেছেন সবকিছু সঠিক। মেনে নিলাম আপনার কথা। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ওই মেয়েকে খু!ন করিনি। ‘
‘ তাহলে রফিককে কেন নিষেধ করেছেন? ‘
‘ ওই কথা জানলে তো যে কেউ সন্দেহ করবে। তাছাড়া আমার ছেলে এরকম একটা কাজ যেহেতু করেছে তাই সব সন্দেহ আমার উপর আসবে। তাই ওকে শুধু ডেকে নিয়ে বলেছিলাম তখনকার কথা কাউকে বলিস না। অন্তত একটা সন্দেহ হতে মুক্তি থাকতাম। কিন্তু আমার কি দুর্ভাগ্য, সেটাই বড় বিপদ হয়ে গেল। ‘
‘ আপনি আপনার ছেলের বউকে কেন মেনে নিলেন না? যখন জানতে পেরেছেন আফরিন মা হতে চলেছে তখন অন্তত আপনার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলা দরকার ছিল। ‘
‘ আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে আমাকে খু!নি বলবেন না। বিশ্বাস করেন আমি সত্যিই কিছু করিনি। ‘
সাজু বললো, ‘ বিশ্বাস অবিশ্বাসের এই দুনিয়ায় আমরা সবসময় বিশ্বাসের কাছে হেরে যাই। এক ব্যক্তি বলেছিলেন ‘ পৃথিবীতে মানুষ ধর্মগ্রন্থ আর আদালতে নাকি সবচেয়ে বেশি মিথ্যা কথা বলে। আর আজকাল মানুষ সবচেয়ে বেশি মিথ্যা কথা বলে অপ্রয়োজনে। ‘
ওসি সাহেব বললেন, ‘ আপনিই ওই বাসায় গিয়ে মেয়েটাকে খু!ন করেছেন তাই না? ‘
‘ না, বললাম তো আমি জানি না। তাছাড়া ওই মেয়ে যে গতকাল সকালে আমার বাড়িতে এসেছে সেটাও জানতাম না আমি। আমি তো আগেরদিন রাতে তাজুলকে বলেছিলাম ওই মেয়ে যেন এই বাড়িতে আর না আসে। ‘
সাজু ভাই বললেন ‘ ওসি সাহেব আপনি কি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন? আফরিনকে খু!ন করা খু!নির হাতে বেশি সময় ছিল না। ‘
‘ এটা কেন বলছেন? ‘
‘ যদি সময় থাকতো তাহলে আফরিনের লা!শটা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলাইতে চাইতো। তাহলে মামলা পুরোপুরি উল্টে যেত। ‘
‘ হুম, আপনার যুক্তি ঠিকই আছে। তখন আমরা এটা আত্মহত্যা ভাবতাম। ‘
সাজু ভাই সিদ্দিক সরকারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ আমি আপনার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাকে কল দিয়ে আমার সামনে বসে কথা বলেন। জিজ্ঞেস করেন সে কোথায়? ‘
সিদ্দিক সরকার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল বের করে ছেলের কাছে কল দিলেন। সাজু মোবাইল হাতে নিয়ে লাউডস্পিকার অন করে দিল। তারপর ইশারায় কথা বলার নির্দেশ দিলেন।
সজল বললো, ‘ হ্যাঁ বাবা বলো! ‘
‘ বাবা কোথায় তুই? ‘
‘ মানিকগঞ্জে আছি, কেন কি হয়েছে? ‘
‘ সাজু সাহেব তোর সাথে দেখা করতে চায়। তোর সঙ্গে নাকি জরুরি কথা আছে। ‘
‘ তার সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই। আর তুমি তাদের কাছে আফরিন আর আমার বিষয় কিছু বলতে যেও না। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাবার আগ পর্যন্ত তারা যেন কিছু জানতে না পারে। ‘
‘ তিনি সবকিছু জেনে গেছেন। ‘
‘ কীভাবে সম্ভব? ‘
‘ ফয়সাল সবকিছু বলে দিয়েছে। তুই নিজেকে বাঁচাতে হলে তার সঙ্গে দেখা করে যা যা জিজ্ঞেস করে তার ঠিক ঠিক উত্তর দে। তাহলে তারা বউমার আসল খু!নিকে খুঁজে বের করতে পারবে। তোকেও লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে হবে না। ‘
‘ এখন বৌমা হয়ে গেল? এতদিন কতো অনুরোধ করলাম তখন তো মানলে না। আর আজ যখন মেয়েটা মা!রা গেছে তখন বৌমা হয়ে গেল। আমি কারো সঙ্গেই দেখা করতে পারবো না। ‘
সাজু ভাই পাশ থেকে বললো, ‘ আপনার সঙ্গে আমার দেখা করাটা জরুরি মিস্টার সজল। আফরিন বেশ কিছুদিন ধরে একটা ঝামেলার মধ্যে ছিল। সেই বিষয় কিছু জানেন নাকি? ‘
সজল খানিকটা থতমত খেয়ে গেল। তারপর তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ তোমার পাশে সাজু বসে আছে বাবা? ‘
‘ হ্যাঁ, আমি থানায়। ‘
‘ তাকে বলে দাও যে আমি কোনো ঝামেলার কথা জানি না। আফরিন কখনো সেরকম কিছু আমার কাছে কখনো বলে নাই। ‘
সাজু বললো,
‘ আপনি কি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহী নয়? কোনো কারণে ধরা পড়ার ভয় লাগে তাই না সজল? ‘
‘ আপাতত আপনার সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন মনে করছি না। যেহেতু আপনি সবটাই ফয়সাল ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। সেহেতু নতুন করে বলার মতো কিছু নাই আমার। যেটা বলার আছে সেটা হচ্ছে যে আফরিনের হ!ত্যার কথা আমি কিছু জানি না। ‘
‘ আপনার বাবা কিন্তু এখন থানায়। আপনি যদি আমাদের সাহায্য না করেন আমরা তাকে থানায় রাখতে বাধ্য হবো সজল। ‘
‘ যা ইচ্ছে করেন, আমার বাবার জন্যই আজকে এরকম হয়েছে। তিনি যদি মেনে নিতেন তাহলে ঘটনা ভিন্ন হতে পারতো। ‘
সিদ্দিক সরকার চেচিয়ে উঠলো।
বললেন ‘ তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি। নিজের বাবার সম্পর্কে এসব কি কথা বলিস? ‘
‘ আমি রাখলাম। ‘
সাজু বললো, ‘ আমি যদি বলি আপনার জন্যই সবকিছু হয়েছে সজল সাহেব। আপনার স্ত্রীকে আপনিই হ!ত্যা করেছেন। কিন্তু লা!শ সিলিং ফ্যান এর সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার সুযোগ পাননি। কারণ আফরিনের দুলাভাই তাজুল তখন কল দিচ্ছিল বারবার। আর আপনি আফরিনের মোবাইলের কল রিসিভ না করে একটা মেসেজ করেন। সেই মেসেজে তাজুলকে বাসায় আসতে বলেন। আপনার ধারণা ছিল তাজুল বাসায় এসে লাশ দেখবে। তারপর সব দোষ তার উপর পড়বে। ঠিক যেমনটা এখন সব দোষ তার উপর পড়েছে। ‘
‘ আপনি রাস্তার পাগলের মতো কথা বলছেন মিস্টার সাজু। ‘
‘ আপনি যদি আমাকে পাগল মনে করেন তাহলে তো ভুল করবেন। সম্ভবত সেটাই মনে করেছেন নাহলে এভাবে কথা বলতে পারতেন না। ‘
কল কেটে গেলে সিদ্দিক সরকার অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইল।
সাজু ওসি সাহেবকে বললো, ‘ আফরিনের লা!শের খবর কী? ‘
ওসি সাহেব বললেন,
‘ দুপুরের পরে আফরিনের মামা হাসপাতাল থেকে লা!শ নিয়ে এসেছে। মিতু ও তার মা-বাবা এখান থেকে সরাসরি গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। লা!শ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে। ‘
‘ তাদের গ্রামের বাড়ি কোথায়? ‘
‘ মানিকগঞ্জে। ‘
‘ কোথায় বললেন? মানিকগঞ্জ? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ এইমাত্র সজল বললো সে মানিকগঞ্জ আছে। তারমানে সজল আফরিনের লা!শ দা!ফন করতে মানিকগঞ্জে গেছে। ‘
‘ তাই তো। ‘
ওসি সাহেব সজলের বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ আফরিনের লাশটা ঝুলানো হলে মনে হয় খু!নির জন্য ভালো হতো। আ!ত্মহ!ত্যা ভেবে পোস্টমর্টেম করে প্রেগ্ন্যাসি ধরা পড়তো। সবাই ভাবতো অপবাদ থেকে বাঁচার জন্য আ!ত্মহ!ত্যা করেছে। কিন্তু এখন দেখুন কতজন ফেঁসে যাচ্ছে। এজন্যই বলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। ‘
★★
মাত্র পনের মিনিট আগে মাগরিবের আজান দেওয়া হয়েছে। সরকার বাড়ির ভেতর গেইটের কাছে বসে বসে গল্প করছে রফিক ও সিদ্দিক সরকারের ড্রাইভার। সিদ্দিক সরকারের একটা গাড়ি আছে, সেই গাড়ির ড্রাইভার। দুজনের কেউ নামাজ পড়তে যায়নি। আফরিন হ!ত্যার ঘটনা নিয়েই দুজনের সলাপরামর্শ চলছে।
সরকার বাড়ির সামান্য দুরে মাস্ক পরে মাথায় হেলমেট দিয়ে দুটো লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের একজনের হাতে একটা ৪/৫ ফিট লম্বা চিকন 10 mm রড। রডের এক প্রান্ত ওয়ার্কশপ থেকে মেশিনের সাহায্যে সূচালো করে নিয়ে আসা হয়েছে। যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে একজন বেশ মোটা আর দ্বিতীয়জন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তাদের সঙ্গে একটা বাইক আছে।
একজন বললো ‘ আমি ডাক দিয়ে গেইটের কাছে নিয়ে আসবো। কথা বলার মধ্যেই তুই কাজটা শেষ করবি। খবরদার মিস হয়না যেন। ‘
‘ ঠিক আছে মিস হবে না। ‘
‘ শা!লায় হয়তো গেইট খুলতে চাইবে না তাই রড পুড়ে গরম করে নিয়ে এসেছি। দুই সেকেন্ডের মধ্যে এটা শরীরের এপাশ থেকে ওপাশে বের হয়ে যাবে। ‘
দুজন এগিয়ে গেল সরকার বাড়ির সামনে। দ্বিতীয় লোকটা বাইক থেকে নেমে গেল। তার হাতে সেই সূচালো রড, রডের প্রান্ত খুবই গরম। যে প্রান্ত হাত দিয়ে ধরেছে সেখানে মোটা কাপড় পেচিয়ে নিতে হয়েছে। অ!স্ত্র বা ছোট কিছু হলে কাজটা করা যেত না। কিন্তু রড দেখে রফিকের সন্দেহ হবে না এটাই স্বাভাবিক।
মোটা লোকটা বাইকে বসেই রফিককে ডাক দিয়ে বললো,
‘ রফিক ভাই এদিকে আসেন তো। ‘
রফিক গেইট না খুলে গেইটের একদম কাছে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ কারা আপনারা? ‘
রড হাতে দ্বিতীয় লোকটা বললো,
‘ তোর য!ম আমরা, নেমকহারা!মের বাচ্চা তুই যার নুন খাইলি আজ তারই বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে সাক্ষী দিলি? ‘
রফিক কিছু বলার আগেই দ্বিতীয় লোকটা তার হাতের রডটা গেইটের গ্রীলের ফাঁক দিয়ে রফিকের পেটের খানিকটা উপর দিয়ে ঢুকিয়ে দিল। গরম ও
ওয়ার্কশপ থেকে একপ্রান্ত সূচালো করে আনার কারণে সেকেন্ডে মধ্যে কাজ হয়ে গেল।
‘ শালা এবার কবরে গিয়ে সাক্ষী দিস। ভাগ্য ভালো যে যা যা দেখছে সবকিছু বলে নাই। যদি বাসার ভিতরে যা দেখেছে তাও বলে দিত তাহলে তো সবশেষ হয়ে যেত। ‘
রফিকের মর্মান্তিক চিৎকার আশেপাশের মানুষের কানে পৌঁছে গেল। দুই অজ্ঞাত হাম!লাকারী বাইক নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেল।
★★
মানিকগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে আফরিনের লা!শ নিয়ে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। মাগরিবের খানিকটা আগে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আফরিনের মেজো মামা নিজেই এক মসজিদের ইমাম। জানাজা তিনিই পড়াবেন। শেষ মুহূর্তে লা!শ সামনে রেখে যখন আফরিনের মামা বললেন,
‘ আমার বোনের মেয়ের প্রতি কারো কোনো দাবি থাকলে সেগুলো মাফ করে দিবেন। যদি কোনো দেনাপাওনা থাকে তাহলে আমাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করবেন। সবাই আমার বোনের মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। ‘
সেই মুহূর্তে ১২/১৩ বছরের একটা ছেলে মামার কাছে এসে ছোট্ট একটা কাগজ দিল। আফরিনের মামা সেই কাগজ খুলে দেখেন সেখানে লেখা আছে,
‘ এই মেয়েটা একটা বিশ্বাসঘাতক। আল্লাহ যেন ওকে কোনদিনই ক্ষমা না করে। তার মৃত্যুর কারণ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা করা। ‘
#চলবে…..
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।