বিষাদময়_নিষাদ পর্বঃ ০৪

0
1220

বিষাদময়_নিষাদ
পর্বঃ ০৪
জাহান আরা

চন্দ্রর মুখ থমথমে হয়ে আছে,বুকের ভিতর ব্যথার প্রলয় নৃত্য। বারবার অনিককে মনে পড়ছে চন্দ্রর,আজ যদি অনিক থাকতো!
অনিক নিশ্চয় এখন তার বউয়ের কাছে।
চন্দ্রর মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়,অনিক কেনো শেষ সময়ে বিয়ে করতে এলো না,কেনো বর সেজে কাল নিষাদ গিয়েছে বিয়ে করতে?
তবে কি অনিক আর নিষাদ একে অপরকে চেনে?
এটা অনিকের আর নিষাদের ষড়যন্ত্র ছিলো?

ভাবনাটা মাথায় আসতেই চন্দ্রর রাগ আরো বেড়ে যায়।বিছানায় শুয়ে থাকা এই মানুষটাকে এখনই চন্দ্রর বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে।
হাবিব টেক্সট করে চন্দ্রকে,”চন্দ্র ভেঙে পড়ো না,নিষাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করবোই।”

চন্দ্র রিপ্লে দেয়,”আমার খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে হাবিব ভাই ওকে।”
তারপর ফোন ছুঁড়ে মারে সোফার উপর।

বাহিরে আমের বোলের সুবাস পাওয়া যাচ্ছে,জানালা দিয়ে তাকায় চন্দ্র,জানালার পাশের একটা আম গাছ,আমের গুটি বড় হচ্ছে সবে মাত্র।
চকিতে মনে পড়ে চন্দ্রর সেই শৈশবের কথা,ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে,কালবৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানোর কথা।
বাতাসে গাছ ভেঙে পড়তো,সেই ঝড়েই ছুটে যেতো চন্দ্র আম কুড়াতে।
কতোদিন হয়ে গেছে সেই স্মৃতির,তবুও মনে পড়ে চন্দ্রর।বিছানায় গিয়ে শোয় চন্দ্র,নিষাদ অন্যপাশ ফিরে শুয়ে আছে,এক নজর নিষাদের দিকে তাকায় চন্দ্র।

বুকের ভিতর থেকে উথলে উঠে একরাশ হতাশা।
জীবন বারবার তাকে ধোঁকা দিচ্ছে,নিজের বলতে তার কেউ নেই।
নিষাদকে মৃদু ধাক্কা দিতেই নিষাদ ঘুরে তাকায় চন্দ্রর দিকে,তারপর জিজ্ঞেস করে,”কিছু বলবে?”

চন্দ্রর নিজেকে কেমন অসহায় মনে হয়,কেউ নেই তার,এই একটা মানুষ,যার হওয়ার কথা ছিলো চন্দ্রর সবচেয়ে আপন,সেই মানুষ টা চন্দ্রর সবচেয়ে বড় শত্রু।

চন্দ্রর ফর্সা মুখে বিষাদের ছায়া,কেমন ব্যথার চাপ মুখে।নিষাদের বুকের ভিতর ভাঙ্গন শুরু হয়। ইচ্ছে করে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে এই অপূর্ব মেয়েটিকে।

“আপনি অনিককে কিভাবে চেনেন সত্যি করে বলেন।”

অবাক হয় নিষাদ।
“অনিক?
কোন অনিক?
কে অনিক?”

“ভান করবেন না একদম,আমি জানি আপনি অনিককে চেনেন,না চিনলে আপনি কেনো কাল বিয়ের আসরে হাজির হলেন?
আমার তো অনিকের সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো।”

“হ্যাঁ তা ছিলো হয়তো,আমি জানি না,আমি শুনলাম তোমার বিয়েতে বর আসে নি,একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাবে তা কিভাবে হয় বলো,তাই তোমাকে লোকলজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে বিয়ে করেছি,তুমি কি ভেবেছো তোমাকে বিয়ে করতে আমি রাজী ছিলাম না-কি?
হু,কতো মেয়ে ঘুরে এই নিষাদের পেছনে,তোমার মতো দজ্জাল একটা মেয়েকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে।”

“কি বললেন আপনি?”

“আয়নায় নিজেকে দেখেছো তুমি?
মুখ ভর্তি তিল,নাক বোঁচা,চোখের কোলে কালি,এটা একটা চেহারা হলো না-কি?
তোমার হাত দেখো আর আমার হাত দেখো,তুমি নিজেই বলো এবার,কে বেশি ফর্সা?
আমি আরো সুন্দরী বউ ডিজার্ভ করি বুঝলা।”

অপমানে চন্দ্রর চোখে জল চলে এলো,নিষাদ একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো চন্দ্রর অশ্রু টলটল চোখের দিকে,নিষাদ কিভাবে বুঝাবে,চন্দ্রর এই বোঁচা নাক,মুখের তিল,চোখের নিচের কালি,এইসব নিষাদের কতো চেনা,কতো প্রিয়!
কিভাবে বুঝাবে জল টলমল চোখে চন্দ্রকে ক্লিওপেট্রার চাইতে সুন্দরী লাগে!
নিষাদের ভিতর তোলপাড় শুরু হয় যে।

চন্দ্র কিছু না বলে শুয়ে পড়লো।রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে।নিষাদ ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে,মনে পড়ে যায় প্রথম দিন চন্দ্রকে দেখার কথা।

মিটিং শেষ করে কলেজ থেকে বের হয়েছে নিষাদ,চন্দ্র তখন তড়িঘড়ি করে ছুটছে ক্যাম্পাসের দিকে।প্রথম দেখায় ভালো লেগে যায়।পায়ের স্যান্ডেল খুলে যায় দৌড়াতে গিয়ে,নিষাদ বাইকে বসে খেয়াল করে মেয়েটা একপায়ের স্যান্ডেল ফেলেই চলে গেছে।

চন্দ্রর ফেলে যাওয়া স্যান্ডেল টা নিষাদ তুলে এনেছে সবার অজান্তে।আজও তো আছে সেটা নিষাদের আলমারিতে প্যাকেটে মোড়ানো।
কখনো চন্দ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নি নিষাদ ভালোবাসার কথা বলতে,আড়ালে থেকে খেয়াল রেখেছে চন্দ্রর।
এই খেয়াল রাখতে গিয়েই ভুল বুঝাবুঝি হয়ে যায়।

শোয়া থেকে উঠে বসে নিষাদ,এতোদিনে তার একটা কথা মাথায় এসেছে।
চন্দ্রর তো ফেইল করার কথা ছিলো না,তবে চন্দ্র কেনো ফেইল করলো এক্সামে?
কিছু একটা তো হয়েছে,কিন্তু কি হয়েছে?

শুরু থেকে ভাবতে থাকে নিষাদ।

চন্দ্রর ইন্টার এক্সাম শুরু হওয়ার পর নিষাদ প্রতিদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে চন্দ্রকে দেখে আসতো।রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় এক্সাম টাইমে ও ভিতরে যেতে পারতো নিষাদ।তার উপর স্বয়ং হাসনাত সাহেব ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট।

সেদিন ও তেমন নিষাদ হলের বাহিরে দিয়ে যাচ্ছিলো,চন্দ্রর সামনে সিট ছিলো তুসির।তুসি ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য হল থেকে বের হয়,নিষাদের সাথে দেখা হয়ে যায় তখন।
তুসির সাথে নিষাদের পরিচয় ছিলো আগে থেকেই,তুসির থেকেই নিষাদ চন্দ্রর খোঁজ খবর নিতো।

চন্দ্রর এক্সামের কথা জিজ্ঞেস করতেই তুসি জানায় চন্দ্রর এক্সাম আজ খুব খারাপ হবে,চন্দ্রর কোনো প্রশ্ন কমন পড়ে নি আজ,চন্দ্র লিখা বন্ধ করে বসে আছে,কান্না করছে,প্রশ্ন অনেক কঠিন হয়েছে।

শুনে নিষাদের মন খারাপ হয়ে যায়।সেবার সত্যিই প্রশ্ন হার্ড হয়েছে অনেক,নিষাদ প্রশ্ন ম্যানেজ করে নিয়ে সব লিখে হলে সেবার প্রথম নকল পাঠায়।
ইংরেজিতে অনার্স করছে নিষাদ,কলেজের ফার্স্ট বয় হওয়ায় খুব দ্রুতই সব সলভ করতে পারে।

কিন্তু তবু কেনো চন্দ্র ফেইল করলো?

নিষাদের দেওয়া উত্তর থেকে সবাই পরীক্ষা দিয়ে ভালো মার্ক পেয়েছে শুধু চন্দ্র ছাড়া।তবে কি কেউ হলে সেদিন গুটিবাজি করেছে?

কপালের রগ রাগে দপদপ করছে নিষাদের,কেউ নিষাদের অজান্তে একটা কূটচাল চেলেছে নিষাদ এতোদিনে ও বুঝতে পারে নি সেটা।
বাকি রাত আর ঘুমাতে পারে না নিষাদ,মাথায় চিন্তা ঘুরছে।
চন্দ্রর ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেলেছে নিষাদ,কে করেছে এরকম তা জানতে হবে নিষাদকে।

চন্দ্রর ঘুম আজ দ্রুতই ভেঙে যায়,চোখ মেলে দেখে নিষাদ ইয়োগা করছে।ঘাম চুইয়ে পড়ছে নিষাদের শরীর থেকে,খালি গায়ে বুকের সব লোম দেখা যাচ্ছে।
ফর্সা বুকে ঘন কালো লোম চন্দ্রর মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
অনিকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে,অনিকের বুকে মুখ গুঁজবার কথা ছিলো চন্দ্রর।
এখন নিশ্চয় অনিকের বউ অনিকের বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে!
মানতে পারছে না চন্দ্র।

কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে তার?
কার জন্য কষ্ট হচ্ছে?
যে কি-না বিয়ের দিন পালিয়েছে তার জন্য?
না ভাববে না তাকে আর চন্দ্র।

চোখ মুছে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।

চলবে???

(বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,রিচেক দিই নি।ব্যস্ত থাকায় গতকাল লিখতে পারি নি আজও ছোট পর্ব দিয়েছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here