বিষাদময়_নিষাদ
পর্বঃ ১১
জাহান আরা
চন্দ্র বসে আছে ফ্লোরে,ভেজা শাড়ি শরীরের শুকিয়ে গেছে আবার।চন্দ্র বসে বসে ভাবছে কিভাবে এখান থেকে বের হওয়া যায়।নিষাদের চেহারা বারবার ভেসে উঠছে চন্দ্রর চোখে,নিজের কাছেই নিজেকে কেমন অসহায় মনে হয়।
নিজের মাথার ঠিক নেই।
এই ভাবে আর নিষাদের কাছে যেতে হবে না আবার মনে পড়ে নিষাদকে ছাড়া থাকবে কিভাবে!
হঠাৎ করেই মনে পড়ে চন্দ্রর তার কোমরে গুঁজে রাখা আছে একটা ছুরি।
সোজা হয়ে বসে চন্দ্র,তারপর কোমর থেকে বের করে নেয় ছুরি।চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে চন্দ্র।তারপর ধীর পায়ে উঠে যায় দরজার সামনে,ডানহাতে ছুরি নিয়ে শাড়ির নিচে হাত রাখে চন্দ্র,বাম হাতে দরজায় নক করে।
ওপাশ থেকে একটা বাজখাঁই গলা জবাব দেয়,”কি চাই?”
“পানি খাবো।”
১ মিনিট পর দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সেই ছোট বাচ্চাটা। চন্দ্রর মন খারাপ হয়ে যায়।এই ছোট মেয়েটিকে কিছুতেই চন্দ্র আঘাত করতে চায় না।
পানির বোতল রেখে দিয়ে মেয়েটা তাকায় আবার চন্দ্রর দিকে অবাক হয়ে।যেনো তার জীবনে এতো আর কিছুতেই হয় নি।
চন্দ্র জিজ্ঞেস করে,”আপনি এতো সুন্দর ক্যান আপা?”
মুচকি হাসে চন্দ্র।
মেয়েটা চলে যায় আবার।
ছুরিটা আবার কোমরে লুকিয়ে চন্দ্র বসে পড়ে ফ্লোরে।এখন কয়টা বাজে?
জানা নেই চন্দ্রর।হাতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছে চন্দ্র।সেই সাথে বুকে ব্যথা ও।
চন্দ্র চুপ করে স্থির হওয়ার চেষ্টা করে।বুক ব্যথাটা কে বাড়তে দিতে চায় না।কিন্তু নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে একটা চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে,তার থেকেই শুরু হয় বুকে ব্যথা।
———————–
সকাল ৮টা।
নিষাদ ঘুম থেকে উঠেছে সেই সকালে,নামাজ পড়ে এতোক্ষন ধরে ব্যায়াম করেছে।আক্রোশে ফুঁসছে গতকাল রাত থেকে।
একগ্লাস পানি খেয়ে বের হয় বাসা থেকে,মাসুদ চাচাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,”চাচা,আপনি পাগলটাকে কোন দিকে নিয়েছেন তাড়িয়ে?”
“এইতো সামনে,মসজিদের কাছাকাছি। ”
আর কিছু জিজ্ঞেস না করে নিষাদ বের হয়ে যায়।বাসা থেকে বের হওয়ার পর একটা দোকান পড়ে,তারপর মসজিদ,তারপর বড় একটা মার্কেট।মসজিদে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে।মনের কষ্ট সহ্য করতে না পারলেই নিষাদ মসজিদের বারান্দায় এসে বসে থাকে।কোনো জটিল সমস্যা আসলেও মসজিদে বসে ভাবলে মাথায় বুদ্ধি আসে নিষাদের। এটা হয়তো আল্লাহর রহমত।
কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তার পর মন শান্ত হয় নিষাদের।উঠে যায় মসজিদ থেকে।
তারপর সোজা গিয়ে মার্কেটের সিকিউরিটি রুমে ঢুকে,সিকিউরিটি গার্ড আলম নিষাদকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
“মার্কেটের বাহিরে সিসি ক্যামেরা আছে না আলম ভাই?”
“হ্যাঁ ভাই আছে তো ভাইজান।”
“কয়টা?”
“মোট মিলাইয়া ৪ পাশে ৮টা আছে ভাইজান।”
“আমার গতকাল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পুরোটা সময়ের ফুটেজ দেখা দরকার,এক এক করে প্লে করো তুমি।”
আলম কোনো কথা না বাড়িয়ে নিষাদের কথামতো ক্যামেরার ফুটেজ প্লে করে।
১,২,৩,৪ নং ফুটেজে কিছুই পায় না নিষাদ খুঁজে,৫ নং ফুটেজে দেখতে পায় মার্কেটের বাহিরে রেস্টুরেন্ট বরাবর একটা পাগল দৌড়ে এসে মাথা থেকে পরচুলা খুলে ফেলে দাঁড়ায়,নিষাদ পজ করে ভিডিও সেখানে,তারপর স্ক্রিনশট নেয় ল্যাপটপে।আবার প্লে করে ভিডিও,পরমুহুর্তেই দেখা যায় একটা মাইক্রো এসে দাঁড়ায়,সাথেসাথে পাগল বেশের লোকটা মাইক্রো তে উঠে যায়।
মাইক্রোর লাইসেন্স নাম্বার লিখে নেয় নিষাদ।তারপর পাগল লোকটির ছবি নেয় নিজের ফোনে,তারপর উঠে চলে যায় সিকিউরিটি রুম থেকে।
বুকের ভিতর একটা আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে।
ঘামে ভিজে গেছে নিষাদের মুখ,কপালে,নাকের ডগায় বিন্দুবিন্দু ঘাম যেনো মুক্তোর দানা।গায়ের সাদা শার্ট ভিজে জবজব করছে।
থানায় এসে সোজা ওসির রুমে ঢুকে যায় নিষাদ,তারপর সটান হয়ে বসে পড়ে চেয়ারে।
ওসি কামরুল একটা ফাইল দেখছেন মনোযোগ দিয়ে,হঠাৎ করে নিষাদকে দেখে কিছুটা অবাক হয়।
মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,”আরে নেতাজী যে,কি খবর?”
“কামরুল ভাই,আমার একটা হেল্প দরকার।”
কামরুল হাসান হেসে উঠেন,তারপর বলেন,”তাই নাকি!নেতাজীকে এই অধম কিভাবে সাহায্য করতে পারে বলুন?
এ যে আমার সৌভাগ্য নেতাজীর সেবা করতে পারা।যেখানে প্রতিদিন আমাকে ধর্ণা দেওয়া লাগে আপনার কাছে,সেখানে আজ আপনি আমার কাছে এসেছেন,এর চাইতে সুখবর আর কি হতে পারে?”
কিছু না বলে নিষাদ মুচকি হাসলো।নিষাদের এক হাসিতেই কামরুল সচেতন হয়ে গেলো।নিষাদকে কামরুল হাসান চিনে খুব ভালো করে,এতো সহজে ভেঙে পড়ার মানুষ না নিষাদ।কতোবার নিষাদ তাকে কতোভাবে সাহায্য করেছে,একবার তো তার স্ত্রী হাবিবা কে ও বাঁচিয়েছে ধর্ষণের হাত থেকে।সেই থেকে নিষাদের ভক্ত কামরুল হাসান।
সবসময় দেখতো নিষাদকে কি হাসিখুশি,কিন্তু নিষাদের আজকের হাসির পিছনে কেমন বিষাদ জড়ানো,নিষাদ না বললেও কামরুল হাসান জানে কিছু একটা হয়েছে নিষাদের।
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে নিষাদ এগয়ে দেয় কামরুলের দিকে,তারপর বলে,”এই গাড়ির মালিক কে আমার খুব দরকার জানা,যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কামরুল ভাই।”
“১ ঘন্টার মধ্যে জানাচ্ছি আমি।”
নিষাদ উঠে চলে যায় আর কিছু না বলে।
——————
বাহিরে কারো কথার শব্দ পেয়ে চন্দ্র জেগে উঠে ঘুম থেকে,২ লোকের সাথে একটা মহিলার কথা শোনা যাচ্ছে।চন্দ্রর অন্তরাত্মা কিসের বিপদ সংকেত অনুভব করে যেনো।
দরজা খুলে প্রবেশ করে ২ জন পুরুষ,সাথে একজন মহিলা পিছনে। মুখে মাস্ক দেওয়া মহিলার।
পুরুষ ২ জনের চেহারা ষণ্ডামার্কা।
১ম জন মুচকি হেসে বলে,”মাল তো ভালোই রে দেখতে সোহেল।”
সোহেল নামের লোকটা জবাব দেয়,”বসের নিষেধ থাকায় কাল রাত থেকে এখনো মুখে তালা মেরে বসে আছি,নয়তো কি এখনো উপোষ থাকতাম নাকি ?”
“বসের কাজ শেষ হলে বস ছেড়ে দিবে,আমাদের সেই উপোষ করা লাগবে,তারচেয়ে চল,মজা লুটি,এই জাকির এরকম মাল ছেড়ে দেয়ার মানুষ না।”
ভয়ে চন্দ্র দেয়ালের সাথে মিশে যায় আরো।এই লোকদের উদ্দেশ্য যে খারাপ চন্দ্র বুঝতে পারে,মনে মনে আল্লাহ কে ডাকে চন্দ্র।
“তোর দরকার হলে তুই থাক,আমি ভাই পারবো না,বসের অনুমতি ছাড়া।”
সোহেল নামের লোকটা বের হয়ে যায় রুম থেকে,পিছনে চলে যায় মহিলা টা,থেকে যায় জাকির নামের লোকটা।ভিতর থেকে দরজায় ছিটকিনি দিয়ে জাকির এগিয়ে যায় চন্দ্রর দিকে।চন্দ্রর দম বন্ধ হয়ে আসছে যেনো,বুকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়,হাত পা অসাড় হয়ে যায়।
বিপদ,বড় বিপদ চন্দ্র বুঝতে পারে।কিন্তু নড়াচড়া করার শক্তি পায় না আর।
জাকির এগিয়ে এসে টান দেয় চন্দ্রর শাড়ির আঁচল ধরে,আৎকে উঠে মুঠো করে ধরে চন্দ্র শাড়ির আঁচল।
হিহি করে বিভৎস হাসি হাসে জাকির, তারপর চন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,”মা*,কি লুকাস শাড়ির আঁচল দিয়ে,তোর রুপের সুধা পান করমু আমি এখন,খোল সব।”
এরকম অশ্লীল কথা চন্দ্র কারো থেকে শোনে নি কখনো,মুহুর্তেই যেনো চোখে অন্ধকার দেখে,চন্দ্রর মনে পড়ে যায় কোমরে গুঁজে রাখা ছুরিটার কথা।
মনে পড়তেই কেমন সাহস চলে আসে বুকে,জাকির এগিয়ে গিয়ে চন্দ্রর চুল টেনে ধরে শাড়ির আঁচল ফেলে দেয়,একটুও বিচলিত না হয়ে চন্দ্র কোমরে রাখা ছুরি বের করে নেয় ডান হাতে,তারপর চালিয়ে দেয় জাকিরের গলা উদ্দেশ্য করে।
চন্দ্রর দুর্ভাগ্য!
চন্দ্র হাত উপরে তুলতেই জাকির হাতের তালু এগিয়ে দেয় হাত ধরে ফেলার জন্য, ছুরি গিয়ে লাগে জাকিরের হাতের তালুতে।
আর্তনাদ করে উঠে জাকির চন্দ্রকে ছেড়ে দিয়ে।
চন্দ্রর হাত থেকে ছুরি হয়ে যায় ভয়ের ছোটে।
সোহেল আর সাথের মহিলা প্রবেশ করে সাথেসাথে রুমে,চন্দ্র হাঁপাচ্ছে একপাশে দাঁড়িয়ে,হৃৎপিন্ড যেনো বুকের খাঁচা ছেড়ে বের হয়ে আসবে।
বুক চেপে ধরে বসে পড়ে চন্দ্র।মহিলাটা এসে ছুরি নিয়ে নেয় চন্দ্র বুঝার আগেই।
চন্দ্র বসে পড়ে ফ্লোরে,মনে মনে আল্লাহকে বলে,”আল্লাহ মৃত্যু দিয়ে দাও আমার,তবু যেনো ইজ্জত না যায় এই পশুদের হাতে।”
সোহেল এগিয়ে যায় হিংস্র হয়ে,তারপর কিড়মিড়িয়ে বলে,”খা*কি,আজকে তোরে শেষ কইরা ফালামু,তোর এতো তেজ,দেখতাছি তোর তেজ আমি।”
চন্দ্র কিছু বলতে পারছে না আর।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে চন্দ্রর,নড়তে পারছে না কিছুতেই।মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে।
চলবে……????
(আজকে বড় করে লিখেছি কিন্তু,অনেকগুলো বানান ভুল হতে পারে,সরি তার জন্য)