বুকের ভিতর রাখবো তোকে?,Part:07,08
Writer: Doraemon(Ayesha)
Part:07
পাখির বাবার কথা শোনার পর অরণ্য কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। এরপর অরণ্য পাখির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আংকেল আপনার ধারণা হলো সব বড়লোকেরা বোধয় এক৷ কিন্তুু না আপনার এই ধারণাটা সম্পূর্ণই ভুল। হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান হয় না ঠিক তেমনি সব মানুষও এক হয় না। আমি পাখিকে আমার জীবনের থেকেও বেশী ভালোবাসি। আর বিয়ের পরে পাখিকে ছুঁড়ে ফেলে দিব সেরকম মানুষ আমি নই। নিজের বউয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ কিভাবে পালন করতে হয় তা আমার জানা আছে। বিয়ে করতে হলে আর কোনো মেয়েকেই নয় আমি শুধু পাখিকেই বিয়ে করব। আর আপনার ধারণাটাও একদিন ভুল প্রমাণিত হবে।
পাখির বাবা অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তোমার এসব কথা বলে তুমি কি মনে করেছো যে আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দিব! কিছুতেই তা আমি হতে দিব না।
–আংকেল পারলে আমার আর পাখির বিয়ে আপনি আটকে দেখান। এমনিতেও আপনি অসুস্থ মানুষ বেশী রাগ আপনার সাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। আপনি হাজার চেষ্টা করলেও আমার থেকে পাখিকে আলাদা করতে পারবেন না।
পাখির বাবা আর কিছু বলল না। তিনি রাগে বুকে ব্যথা অনুভব করছেন। এবার পাখির বাবা পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–পাখি তুই কি এই ছেলেটাকে ভালোবাসিস?
–কি বলছো বাবা তুমি? আমি এই ছেলেটাকে ভালোবাসব। এই ছেলেটা আমাকে কৌশলে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে এতদিন গৃহ বন্ধি করে রেখেছিল। আমি তোমাকে কতক্ষণ ধরে তা বলার জন্য চেষ্টা করেছি কিন্তুু তুমি আমার কোনো কথা না শুনেই আমাকে মারলে। আমি এই ছেলেটাকে ভালোবাসি না। আমি তোমার আদর্শে বড় হয়েছি বাবা। আমি কোনো বড়লোক পরিবারের ছেলেকে ভালোবাসতে পারি না। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এরা একেকটা ঠকবাজ।
পাখির বাবা পাখির কথা শুনে ভীষণ খুশি। তিনি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–দেখলে? আমার মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে না। এসব বৃথা চেষ্টা না করে বাড়ি ফিরে যাও।
অরণ্য পাখির বাবার কথায় কোনো রাগ করে নি৷ কিন্তুু পাখির কথাগুলো অরণ্যের বুকের মধ্যে কাঁটার মতো লেগেছে। অরণ্য পাখির কথা একটুও সহ্য করতে পারে নি৷ তাই অরণ্য চেয়ার থেকে উঠেই সবার সামনে পাখির হাত ধরে ফেলল। এই ঘটনায় পাখির মা, বাবা, বোন অবাক।
–কি হলো আপনি এভাবে আমার হাত ধরছেন কেন?
অরণ্য পাখির কোনো কথা না শুনেই টানতে টানতে পাখির পাশের রুমটাতে নিয়ে গিয়ে খুব জোরে দরজা লাগিয়ে দেয়। পাখির মা বাবা দৌড়ে গিয়ে দরজা ধাক্কায়।কিন্তুু অরণ্য দরজা তো দরজা খুলল না বরং এখন পাখির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাখি যে দরজাটা খুলবে তারও উপায় নেই।
পাখির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। পাখির ঘরেই অরণ্য পাখিকে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল!
–তুমি যেন কি বলছিলে? আমাকে তুমি ভালোবাসো না। আমি ঠকবাজ। তো তোমাকে কোন জন্মে আমি ঠকিয়েছিলাম?
–না মানে স্যার আমি তো এমনি বলেছিলাম।
–কি এমনি বলেছিলে!
অরণ্য ধীরে ধীরে পাখির কাছে এগোতে লাগল আর পাখি ভয়ে পিছাতে লাগল। একসময় পাখির পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। অরণ্য পাখির খুব কাছে চলে আসে। দেয়ালে দু হাত দিয়ে পাখির আরো কাছে চলে আসে অরণ্য। পাখির হৃদপিন্ড ভয়ে কাঁপাকাঁপি করছে।
–আমাকে ছেড়ে দিন স্যার।
–আমাকে এত ভয় পাও কেন তুমি পাখি? কেন বোঝনা যে আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।
–স্যার প্লিজ আমাকে…
পাখি আর বলতে পারল না অরণ্য পাখির ঠোঁটে নিজের ঠোঁটে মিলিয়ে নিল। আবার এমন পরিস্থিতিতে পড়ে পাখির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল। পাখির পুরো শরীর এক অজানা অনুভূতিতে বরফ হয়ে গেল। অরণ্য পাখির ঠোঁট ছেড়ে আবারো পাখিকে বলল
–একবার বলো না পাখি তুমি আমাকে ভালোবাসো। কেন এত মিথ্যা কথা বলো তুমি পাখি।
এবার পাখি রাগী দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল
–স্যার আপনি কিন্তুু সহ্যের সীমা…
এবারও পাখিকে অরণ্য কিছু বলতে দিল না। পাখির ঠোঁট জোড়া আবারও নিজের দখলে নিয়ে নিল। পাখি অরণ্যকে ধাক্কাচ্ছে, পিঠে কিল ঘুষি দিয়েই চলেছে কিন্তুু অরণ্যের তাতে কোনো হুঁশ নেই।
।
।
।
চলবে?
#বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:08
#Writer: Doraemon(Ayesha)
।
কিছুক্ষণ পর অরণ্য নিজেই পাখির ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিল। সাথে সাথেই পাখি অরণ্যকে ধাক্কা দিল। ধাক্কার ফলে অরণ্য পাখির থেকে কিছুটা হলেও দূরত্বে সরে যায়। কিন্তুু অরণ্যের তাতে কোনো যায় আসে না। অরণ্য পাখির লজ্জা মাখা মুখ তার সাথে পাখির রাগী মুখটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথে মুচকি মুচকি হাসছে।
পাখি অরণ্যর দিকে খুব রাগী দৃষ্টিতে অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–অসভ্য ছেলে। বড়লোক বলে যা ইচ্ছে তাই করবেন।আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে অসভ্যতা করার?
অরণ্য এবার মুচকি হেসে পাখির একেবারে কাছে এসে পাখির কানের কাছে আসতে আসতে বলতে থাকে
–আমার হবু বউয়ের সাথে আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। তুমি বলার কে? আর অসভ্যতার কি দেখলে পাখি। আমিতো শুধু তোমার মিস্টি ঠোঁটের একটু স্বাদ নিলাম। যা আমাকে তোমার প্রতি আরও মাতাল করে দেয়।
অরণ্যর কথায় পাখি ভীষণ লজ্জা পেল সাথে রাগও হলো। তবুও পাখি অরণ্যকে বলল
–আমার সাথে আপনি এরকম অসভ্যতা করবেন আবার আপনি আমাকে বলেন আমি বলার কে!
–পাখি তুমি যখন রেগে যাও তোমাকে যে কত কিউট লাগে তা আমি মুখে বর্ণনা করে বলতে পারব না।How cute you are!
অরণ্যের এমন কথায় পাখি আরও লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে রইল । পাখি চুপ করে আছে। পাখি জানে অরণ্যকে বলে কিছু লাভ নেই।
অরণ্য পাখির লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে ভীষণ ভালোবাসে। পাখির গাল লজ্জায় একদম লাল হয়ে আছে। হঠাৎ অরণ্যের দৃষ্টি পরল পাখির শরীরে দিকে। অরণ্য পাখির পুরো শরীরের নিচ থেকে উপর দিকে একবার তাকিয়ে পাখিকে বলল
–পাখি এসব কি টাইট জামা কাপড় পরো তুমি! শরীরের প্রতিটা অংশের ভাজ খুব ভালো করে বুঝা যাচ্ছে।এবার থেকে তুমি গলায় ওড়না না পেচিয়ে হিজাব আর বোরকা পড়বে। আমি আমার বউকে পর্দা করায় দেখতে চাই।
–আমি আপনার বিয়ে করা বউ না। আপনার কোনো কথাই আমি শুনব না। আমার যা ইচ্ছে আমি তাই পড়ব।
–আর কয়েকদিন পরেই তো তুমি আমার বউ হবে পাখি। এটা কেন তুমি ভুলে যাও। পাখি তুমি এই সাতদিনে খুব ভালো করেই আমাকে চিনেছো যে আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। আর কোনো বিষয়ে না বলা আমার ডিকশনারিতে নেই।
পাখি শুধু অরণ্যের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
–যা বলব চুপচাপ মেনে নিবে। এবার থেকে আমি নিজে গাড়ি করে তোমাকে কলেজে পৌঁছে দিব। আর হ্যা তোমার পরিবারকে আর এই বস্তিতে থাকতে হবে না৷ তারা এবার থেকে আমার দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকবে। এই নাও ফ্ল্যাটের চাবি।
অরণ্য পাখির হাতের মধ্যে চাবিটা জোর করে দিল। পাখি নিতে চাই নি।
পাখি চাবিটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
–আপনার দয়া আমাদের চাই না স্যার।
অরণ্য পাখির কথায় মুচকি হাসল৷ অরণ্য চাবিটা মাঠি থেকে উঠিয়ে আবার পাখির হাতে দিয়ে বলল
–এবার চাবিটা আবার ফেলে দেখাও তোমার কপালে যে কি অপেক্ষা করছে তা তুমি নিজেও জানো না।
পাখি ভয়ে চাবিটা আর ফেলল না।
–গুড গার্ল। কালকে আবার আমাদের দেখা হবে।
বলেই অরণ্য পাখির দুই বাহু ধরে কপালে চুমু দিয়ে দিল৷
অরণ্যের এসব কান্ডে বরাবরই পাখি অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। অরণ্য মুচকি হেসে পাখিকে বলল
–আমাদের আবার কালকে দেখা হবে পাখি।
অরণ্য এবার গিয়ে দরজাটা খুলল। দরজা খুলেই অরণ্য দেখতে পেল পাখির মা -বাবা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে এবং পাখির ছোট বোন ফুলিও পাশে দাড়িয়ে আছে। অরণ্য ওদের দেখে কিছু না বলে সোজা ঘর থেকে বের হয়ে পকেট থেকে কালো সানগ্লাসটা চোখে পড়ে গাড়ি করে নিজের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলে গেল৷ পাখির মা, বাবা বোন এবার পাখির ঘরে এলো। পাখির বাবা পাখির সামনে গিয়েই ঠাসসসসস করেই পাখির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। পাখি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কোনো কথা পাখির মুখে আসছে না। পাখির বাবা পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই যে আমার মেয়ে তা আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে৷ শেষে কিনা আমার মান সম্মান তুই এইভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিলি। ছি ছি ছি। আমার আদর্শে তোকে আমি বড় করতে পারলাম না। এটা ভেবেই আমার খারাপ লাগছে ছি।
এই কথা বলেই পাখির বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল৷ পাখি চুপ করে একজায়গায় দাড়িয়ে আছে। পাখির মা পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মা রে আমার মনে হয় ছেলেটা সত্যি তোকে খুব ভালোবাসে । তুই ছেলেটাকে মেনে নে।
পাখির মায়ের কথায় পাখি অবাক। পাখি তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে
–মা তুমি আমাকে বলছো ওই শয়তানটাকে মেনে নিতে? ওই ছেলেটার জন্য আজকে আমার বাবা জীবনে প্রথম আমার গায়ে হাত তুলল৷
–তুই তো জানিস তোর বাবা একটু রাগী। ভাইয়ের মেয়ের মৃত্যুটা এখনও তোর বাবা ভুলতে পারে নি৷ আমি বলছি পাখি ছেলেটা ভীষণ ভালো। তুই ওকে মেনে নে। তাহলে তুই সুখী হবি মা।
পাখির মা এই বলে পাখির ঘর থেকে চলে গেল।
পাখির মায়ের সাথে পাখির বোন ফুলিও সম্মতি দিল। এবং ফুলিও বলল
–হ্যা আপু তুমি ভাইয়াকে মেনে নাও। ভাইয়া খুব ভালো।
বলে ফুলিও পাখির ঘর থেকে চলে গেল। পাখির রাগে মাথা গরম হয়ে আছে। পাখি ঘরের বেসিনে নিজের পুরো মুখ পানি দিয়ে ধুতে লাগল। আয়নায় তাকিয়ে নিজের ঠোঁট হাত দিয়ে ঘষতে লাগল আর মনে মনে অরণ্যের দেয়া লিপ কিসের কথা চিন্তা করতেই পাখির গায়ে কাঁটা ধরে গেল। পাখি মনে মনে বলতে লাগল
–এটা কি আসলেই আপনার ভালোবাসা নাকি আমাকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলানোর ধান্দা! উফফ আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।
।
।
।
অরণ্য প্রতিদিন পাখিকে কলেজে নিয়ে যায় আবার বাসায় পৌঁছে দেয়। পাখির প্রতি অরণ্য সবসময় সচেতন থাকে। কিন্তুু এরই মাঝে ঘটল এক ঘটনা!
অরণ্য পাখিকে ফোন দিল। পাখির অনিচ্ছা থাকা সত্তেও ফোনটা রিসিভ করল
–হ্যালো
–হ্যালো পাখি আজকে আমি তোমাকে কলেজে পৌঁছে দিতে পারব না কারণ আজকে আমার অফিসে প্রচুর জরুরি একটা মিটিং আছে। কিন্তুু আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌছে দিবে ঠিক আছে। নিজের খেয়াল রেখো। কিন্তুু কলেজ ছুটি হলে আমি তোমাকে নিতে আসব।
পাখি খুব খুশি কারণ এই সুযোগটাকেই পাখি কাজে লাগাবে। কারণ পাখি আজকে যে করেই হোক অরণ্যের কাছে নিজেকে খারাপ প্রমাণিত করবে তাহলেই অরণ্য তাকে আর বিরক্ত করবে না।পাখি খুশিতে অরণ্যকে বলল
–ঠিক আছে স্যার।
–হুম বউ। সাবধানে চলাফেরা করবে কিন্তুু ঠিক আছে?
–হ্যা, হ্যা স্যার ঠিক আছে।
এই বলেই পাখি ফোনটা কেটে দিল। পাখি মনে মনে বলতে লাগল
–এবার তো আপনি আমার থেকে ঘৃণায় হাজার মাইল দূরে থাকবেন অরণ্য স্যার। আপনাকে আমার অসহ্য লাগে। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। I hate you…
।
।
।
চলবে?