বুকের ভিতর রাখবো তোকে?,Part:4,5
Writer: Doraemon(Ayesha)
Part:4
পাখি ফোনটা রিসিভ করল দেখার জন্য যে কে তাকে ফোন করল।
–হ্যালো কে বলছেন?
–আমি তোমার হৃদপিন্ড বলছি। আমি জানি এখন তুমি কলেজে যাবে। কিন্তুু আমি তোমাকে কিছু কথা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি আগামী সাতদিন তুমি কলেজে যাবে না।
–কেন? আমি কলেজে যাবো না কেন? আপনি কে বলছেন?
–যদি বলি তোমার অরণ্য স্যার বলছি।
–মানে! স্যার আপনি বলছেন! এসব মজা করার মানেটা কি স্যার। সামনে আমার এক্সাম। কেন কলেজে যাবো না আমি?
–জানতে হলে তোমাকে আমার সাথে দেখা করতে হবে৷ তোমার বাসার সামনে গাড়ী অপেক্ষা করছে। গাড়িতে উঠে সোজা চলে এসো আমার বলা জায়গায়। আর হ্যা ভুলেও চালাকি করার চেস্টা করবে না৷ নাহলে তোমার কলেজ যাওয়া চিরদিনের জন্য আমি বন্ধ করে দিব।
–স্যার আপনি এসব কি বলছেন?হ্যালো হ্যালো স্যার কথা বলছেন না কেন! যাক বাবা ফোনটা কেটে দিল।
পাখি আর কি করবে। সোজা ঘর থেকে বের হয়ে অরণ্যের পাঠানো গাড়িটাতে বসেই যাচ্ছে অজানা অচেনা এক জায়গায়। পাখির ভীষণ ভয়ও লাগছে। কিন্তুু পাখি যে নিরুপায়। পাখির টিউশনি দিয়েই একমাত্র তাদের সংসার চলে। এখন কলেজ পড়া বন্ধ হলে যদি জানাজানি হয়ে যায় পাখি পড়াশোনা করে না তাহলে তার টিউশনিগুলো হাত ছাড়া হবে আর তার পরিবারকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। পাখির নিজেরও একটা সপ্ন আছে তা সে কিছুতেই ভেঙে যেতে দিবে না। গাড়িতে বসে পাখি আপন মনে ভাবছে, কি আছে তার কপালে। কেনই বা অরণ্য স্যার তার সাথে এমন ব্যবহার করছে। একসময় গাড়িটা একটা বিশাল বড় ফ্ল্যাটের সামনে দাড়ালো। পাখি গাড়ি থেকে বের হয়ে খুজতে লাগল তার অরণ্য স্যার কোথায় আর তাকে এখানেই বা ডেকেছে কেন। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পরেও পাখি অরণ্যকে পেল না।
কিছুক্ষণ পর পাখি রাস্তার এক জায়গায় দাড়িয়ে রইল। ফ্ল্যাটের ভিতরে যাওয়ার সাহস পাখির নেই। কিছুক্ষণ পর অরণ্য আসল।
–আমি জানতাম পাখি তুমি আসবে।
–স্যার এসবের মানে কি? আপনিতো আমায় বলেছিলেন যে আমার পড়াশোনায় কোনো বাঁধাই আপনি দিবেন না। তাহলে স্যার আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন?
–পাখি তোমাকে সব কথাই আমি বলব। কিন্তুু এখানে না। চলো আমার সাথে।
–আমি আপনার সাথে কোথায় যাবো না।
অরণ্য পাখির হাত ধরে ফেলল।
–ছেড়ে দিন আমায়।
অরণ্য পাখির কোনো কথাই শুনছে না। টেনে তার নিজের চার তলা ফ্ল্যাটে নিয়ে গেল। তারপর ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। পাখির বেশ লাগছে। পাখির হাত পা অনবরত কাঁপছে। তবুও পাখি বলল
–স্যার আপনার যা বলার আছে তাড়াতাড়ি বলুন। আমার একজনকে পড়াতে যেতে হবে।
–যাবে কিন্তুু পাখি আজ আমি তোমাকে আমার মনের কথা বলতে চাই।
–মানে কি? কি বলতে চান আপনি?
–পাখি তুমি আমার দেখা সবচেয়ে ভিন্ন এবং সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা মেয়ে। যার ছেলেদের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। সব মেয়েরা যেখানে আমার জন্য পাগল আর সেখানে তুমি আমার দিকে ঠিক মতো তাকাও না। You are really different to others pakhi.
–স্যার আপনি কি এসব ভিত্তিহীন কথা বলতেই আমাকে ডেকেছেন? দেখুন আমি কি বা আমি কেমন তা আমি নিজেই ভালো করে জানি। নতুন করে আর এসব বর্ণনা দিতে হবে না।
এই বলেই পাখি চলে যেতে নিলো আর ওমনি অরণ্য পেছন থেকে পাখির হাতটা ধরে নিল। অরণ্য পাখির হাত ধরায় পাখি রাগী দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। অরণ্যের পাখির এসব চাহনিতে কোন যায় আসে না।
–আমার কথা এখনো শেষ হয় নি পাখি। আমার পুরো কথা না শুনে তুমি কোথাও যেতে পারবে না। ইভেন এই সাতদিন তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
–মানে কি? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন যে আমি আপনার সাথে এই ঘরে থাকব। দেখুন স্যার একজন অবিবাহিত মেয়ে কখনো অন্য কোনো পুরুষের সাথে থাকতে পারে না। আমার হাতটা ছেড়ে দিন।
–পাখি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। পাখি আই লাভ ইউ৷ আই এম মেডলি ইন লাভ উইথ ইউ পাখি। তুমি যদি চাও তাহলে আজকেই আমাদের বিয়ে হবে।
অরণ্যের এমন কথায় পাখি চরম অবাক হলো সাথে অনেক রাগ হলো। পাখি রেগে গিয়ে খুব কষিয়ে অরণ্যকে থাপ্পড় মারল। থাপ্পড় খেয়ে অরণ্য নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অরণ্যের এই থাপ্পড়টা সহ্য হলো না। তাও নিজেকে সামলিয়ে অরণ্য পাখিকে বলল
–একটা কেন আমাকে হাজারটা থাপ্পড় মারো পাখি, তাও আমি তোমাকে কিছু বলব না। কারণ আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
–আপনাদের মতো বড়লোকেরা কোনোদিনও গরীবদের ভালোবাসতে পারেন না। আমি জানি আপনি শুধু আমার শরীরটাকেই ভোগ করতে চান কারণ আপনাদের মতো বড়লোকেরা তাই করতে জানে৷ প্রয়োজন ফুরালেই রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে দুবারও ভাবে না।
অরণ্য পাখির কথাগুলো শুনে প্রচুর পরিমানে কস্ট পেল। দম বন্ধ হয়ে আসছে অরণ্যের। তাও সে নিজের সামলিয়ে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোমার মনে যা ভুল চিন্তা- ধারণা জমে আছে তা সব আমি একদিন দূর করেই ছাড়ব। তুমিও একদিন আমায় ভালোবাসবে পাখি। কিন্তুু এই সাতদিন তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আর একমাস পরেই আমাদের বিয়ে হবে। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।
–মানে কি? আপনার কথাই কি শেষ কথা নাকি। আমাকে যেতে দিন।
–এখান থেকে তুমি সাতদিন পরেই ছাড়া পাবে।
বলেই অরণ্য পাখিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজা আটকে দিল। আর পাখি অনবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে আর কাঁদছে।
।
।
।
#চলবে?#বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:05
#Writer: Doraemon(Ayesha)
।
পাখি অনেক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পর হাল ছেড়ে দিয়ে বিছানার এক কোণে বসে পড়ল। আর মনে মনে বলতে লাগল
–এই বদমাশ ছেলেটার হাত থেকে কি করে মুক্তি পাবো আমি? আমিতো এটাকে ভালো মানুষ মনে করেছিলাম কিন্তুু না এটা তো পুরো শয়তান। আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না অরণ্য স্যার আমাকে ভালোবাসে কিনা। বেশ দুটানায় পড়ে গেলাম। কিন্তুু বাবা যে বলত কখনো বড়লোকরা গরীবদের আপনজন হতে পারে না!তারা কখনো গরীবদের ভালোবাসতে পারে না।তারা নাকি প্রয়োজন ফুরোলে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
পাখি এসব ভাবছে আর কান্না করছে। বেশ ঘন্টা খানেকপর অরণ্য ঘরে আসল। অরণ্যকে দেখে পাখি ভয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিল। অরণ্যের হাতে খাবার৷ এবং অরণ্য পাখির কাছে এগিয়ে এসে বলল
–সকালে তো মনে হয় না কিছু খেয়েছো। খাবারটা খেয়ে নাও।
–আমি আপনার দেওয়া খাবার খাবো না। আমার তো মনে হয় এই খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশানো আছে আর তারপর আপনি আমার সাথে…. পাখি আর বলতে পারল না। অরণ্য খাবারটা সাথে সাথে টেবিলে রেখে পাখিকে ঠাসসসস করে থাপ্পড় মেরে দিল। পাখি অরণ্যের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে।
–আপনি আমাকে মারলেন?
–ভালোয় ভালোয় বলছি খাবারটা খেয়ে নাও নাহলে আবারো মারব।
–আমি আপনার দেওয়া খাবার খাবো না বলেই পাখি টেবিল থেকে খাবারটা হাত দিয়ে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিল। অরণ্যের এবার মাথা গরম হয়ে গেছে। অরণ্য এবার সজোরে পাখিকে আরেকটা ঠাসসসস করে থাপ্পড় মারল। এবার থাপ্পড়ের কারণে পাখি বেশ শব্দ করেই কাঁদছে।
–একদম চুপ। তোকে ভালো করে বলছি তোর ভালো লাগে না। শোন আমি আবার তোর জন্য খাবার আনছি যদি এবার না খাস তাহলে তোর কপালে কি ওয়েট করছে তা তুই নিজেও জানিস না।
অরণ্যের এমন হিংস্র রূপ দেখে পাখি ভয়ে রীতিমতো কাঁপাকাঁপি করছে। অরণ্য ঘর থেকে চলে গেল পাখির জন্য আবার খাবার আনতে। সাথে দরজাটাও ভালো করে লক করে দিল যাতে পাখি পালাতে না পারে।
–মানুষ ভয়ংকর জানতাম। কিন্তুু এতোটা ভয়ংকর আগে জানতাম না। আমি থাপ্পড় দেওয়ায় এর বদলা নিল!!! বেয়াদব, ইতর, বদমাশ ছেলে। তোকে আমি স্যার ডাকতাম!! ডাকাবো না আমি আর তোকে স্যার বলে৷
বেশ কিছুক্ষণ পর অরণ্য আবার পাখির জন্য খাবার নিয়ে আসল। পাখির কাছে এগিয়ে এসে পাখির পাশে বসে অরণ্য খাবার হাতে নিয়ে বলল
–এবার খাবারটা আমি তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিব। তুমি যেই ভয়ংকর মেয়ে তোমাকে আগে বোকা ভাবাটাই আমার ভুল হয়েছিল। নাও নাও এবার হা করো দেখি।
পাখি আর কি করবে বাধ্য মেয়ের মতো হা করে খাবার খেতে লাগল নাহলে যে আবার থাপ্পড় খেতে হবে। পাখিকে খাবার খাওয়ানোর পর অরণ্য পাখির সাথে গা ঘেঁষে বসল। পাখি এটা দেখে বিছানা থেকে উঠে যেতে নিলে অরণ্য খপ করে পাখির হাতটা ধরে পাখিকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। সাথে সাথে পাখির দুহাত নিজের হাতের সাথে মিলিয়ে অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুমি তো বলো আমি নাকি খুব খারাপ। তো এখন যদি আমি তোমার সাথে খারাপ কিছু করি তাহলে তুমি কি করবে?
–প্লিজ প্লিজ প্লিজ স্যার আপনি আমার সাথে এমন কোনো কিছু করবেন না। আমার উপর থেকে সরুন স্যার। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
পাখি চোখ বন্ধ করেই কথাগুলো বলতে লাগল। অরণ্য পাখির এই ভীতু চেহারাটা দেখে বেশ উপভোগ করছে।
–কি হলো স্যার আমাকে ছাড়ুন প্লি….
পাখি আর বলতে পারল না অরণ্য পাখির ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নিল। এমন ঘটনায় পাখির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল। সে ভাবতেও পারে নি ছেলেটা এতো অসভ্য। পাখি অরণ্যের পিঠে কিল ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে। তবুও অরণ্য পাখিকে ছাড়ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর অরণ্য পাখিকে ছাড়ল। পাখি লজ্জায় অরণ্যের দিকে তাকাতে পারছে না। সাথে পাখির অনেক রাগও হচ্ছে।
–শুধু লিপ কিস করাতে এমন করছো আর বিয়ের পর তোমার সাথে আরও কত কি করব তখন কি করবে পাখি!
পাখি ধাক্কা দিয়ে অরণ্যকে সরিয়ে দিল। তারপর খাট থেকে নেমে দৌড়ে দরজার কাছে গেল দরজা খুলতে কিন্তুু দরজা লক করা।
–দরজা খুলার বৃথা চেষ্টা করো না পাখি। দরজার চাবি আমার কাছে।
পাখি অসহায় দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
অরণ্য পাখির কাছে এসে পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে নিলে পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমাকে এভাবে ঘরে আটকে রেখে আপনার লাভটা কি স্যার? আমাকে প্লিজ এখান থেকে যেতে দিন। আমি বাড়ি যাবো।
–সাতদিন পর যাবে।
পাখি এখনও কাঁদছে। কিন্তুু অরণ্য পাখির কান্না দেখে পাখির কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেল।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অরণ্য মনে মনে বলতে লাগল
–তোমাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্যই তো আমি তোমাকে এখানে আটকে রেখেছি পাখি। আর তুমি কিনা আমায় ভুল বুঝছো। আমি চাই তুমি আমাকে অনুভব করো। আমাকে ভালোবাসো। কিন্তুু আমি কি তোমার প্রতি বেশি কঠোর হয়ে যাচ্ছি? আমি তোমাকে কিছুতেই নিজের কাছ থেকে দূরে থাকতে দিব না পাখি।
।
।
।
দেখতে দেখতে সাতদিন চলে গেল। এই সাতদিন অরণ্য পাখিকে খুব যত্ন সহকারে নিজের কাছে রেখেছে। আজ অরণ্য পাখিকে তার নিজের বাসায় পৌঁছে দিবে। অরণ্যের ধারণা পাখি কিছুটা হলেও তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
আদৌ কি তাই?
চলবে?