বৃষ্টিময়_প্রেম #পর্বঃ১,০২

0
2974

#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ১,০২
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
০১

ঘুম থেকে চুলের মুঠি ধরে টেনে তুললো আমাকে! আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ধাক্কা মেরে আমার গা থেকে কাথা সরিয়ে নিয়ে মুখের উপর ঠান্ডা পানি ছুড়ে মারলো। প্রথমে অবাক হলেও চোখ খুলে দাদিকে দেখে অবাক হলাম নাহ! কেননা এইরকম আচরণ গত কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়ে থাকছে আমার সাথে!

—“এই জমিদারের বেটি, সকাল যে হয়ে গেছে চোখে পড়েনা? তুই সারাদিন শুয়ে থাকলে কাজে হাত লাগাবে কে শুনি?” (রেগে)

—“কাল রাতে অনেক দেরিতে শুয়েছি,দাদি। তাই সকালে উঠতে পারিনি আজ!” (ভয়ে ভয়ে)

—“কেন? রাতের বেলা তোর কোন নাগারের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলি যে দেরি করে ঘুমাইছিস?” (রেগে)

দাদীর কথা শুনে রাগে আমার গা জ্বলে গেল। উনি সবসময় এভাবে কথা বলেন আমার সাথে কিন্তু আমি চেয়েও তাকে কিছু বলতে পারিনা কারণ আমি যে তাদের বাড়িতে আশ্রিতা!

—“আজ বাড়িতে মেয়ে দেখতে আসবে, জানিস না? কত বড়লোক ওরা জানিস?অবশ্য তুই তো ফকিন্নি, মানুষের টাকায় পড়িস-খাস। তুই কি বুঝবি বড়লোকদের কথা?” (টিটকারি মেরে বললেন উনি)

উনার কথায় লজ্জায় অপমানে আমার কান জ্বলে উঠলেও আমি এবারো তাকে কিছু বলতে পারলাম নাহ। ঠিকি তো বলছেন উনি। তাদের টাকায় চলছি , নিজের তো কিছুই নাই আমার। আসলে দাদি আমার নিজের দাদি নয়, আমি শুধু তাদের বাসায় থাকি।

আমি একজন অনাথ।যাদের বাসায় থাকি তিনি আমার মায়ের সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সীমা আন্টি। তার আর আংকেলের বিয়েতে আমার আম্মুই মূলত ঘটক ছিলেন আর আংকেল এর বিজনেসে আমার বাবা অনেক সাহায্য করেছিলেন। এক্সিডেন্টে আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার সময় আন্টিকে বলেছিলেন আমাকে দেখে রাখতে তাই বাবা-মা হীন সাত বছরের ছোট্ট আমিকে আন্টি নিয়ে এসেছিলেন তার সাথে। তখন থেকেই মূলত আমি এই বাসায় আছি। আংকেল-আন্টি আমাকে খুব ভালোবাসলেও এই দাদি আমাকে একদমই সহ্য করতে পারেন না। উনি আন্টিকে বলেন তিনি আমায় বাড়িতে রেখে ভুল করছেন, আমি নাকি পড়ে পড়ে তাদের অন্ন ধ্বংস করছি অথচ বাড়ির অনেক কাজই আমি করি।

আন্টি আমাকে কাজ করতে মানা করলেও দাদি খোটা দেয় যে, “পরের বাড়িতে পড়ে আছে, কিছু কাজ না করেই বসে বসে অন্ন ধ্বংস করবে নাকি?” আন্টি প্রতিবাদ করলেও আমি কাজ করি। এমনিই তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, আমার পড়াশুনা থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ আংকেলই দেন তাই শুধুমাত্র শুয়ে-বসে তাদের বাসায় থেকে তাদের টাকায় খেতে ভালো লাগেনা আমার।এবার কলেজের ২য় বর্ষে আমি। কিছুদিন পর ভার্সিটিতে উঠবো তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কলেজ শেষ হলেই নিজে কিছু টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালাবো। আমি এসব ভাবছিলাম এরই মধ্যে দাদি বলে উঠলেন,

—“কি ভাবিস,জমিদারনি?এখন উঠে কাজের মেয়ের সাহায্য করবি নাকি আরও আরাম করা বাকি আছে তোর?” (কোমরে হাত দিয়ে)

দাদির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে গেলাম আমি। তারপর বের হয়ে রান্নাঘরে গেলাম। আন্টিও দেখি রান্না করছেন৷ আমাকে দেখে মিস্টি হেসে বলে উঠলেন,

—“ঘুম হয়েছে? আমি ভাবলাম পরীক্ষা সামনে তোর তাই মনে হয় রাত জেগে পড়েছিস তাই আর ডাকিনি সকালে।”

—“হ্যাঁ আন্টি, ঘুম হয়েছে। কি রান্না করছো তুমি? আমাকে বলো কি করতে হবে,আমি করছি।”

—“তোর বেশিকিছু করতে হবেনা মা। তুই এক কাজ কর শুধু ক্ষীর বানিয়ে রাখিস কলেজে যাওয়ার আগে, তুই তো ওটা খুব ভালো পারিস।দুপুরে আসবে মেহমানরা” (গালে হাত রেখে বললেন)

দাদির প্রতিদিনের খারাপ ব্যবহারের পরও আমার এই বাসায় ভালো থাকার অন্যতম কারণ আন্টি। তার দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলেটা বড় আর মেয়ে আমার সমবয়সী, নাম রাইসা। আজ রাইসাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে। শুনেছি অনেক বড়লোক নাকি, টিভিতেও বলে দেখা যায় উনাদের! সে যাই হোক, রাইসাকে আমি আমার বোনের মতোই ভাবি। ও যদি খুশি থাকে এই বিয়েতে তাহলে সম্পর্ক ঠিক হলেই আমি খুশি!

আমি কলেজের জন্য বের হচ্ছিলাম এমন সময় দাদি ডেকে বললেন,

—“তোর কলেজ কখন শেষ হবে?”

—“দুপুরে দাদি। কেন?”

—“আজ দুপুরে বাড়িত আসবিনা তুই। বিকালের আগে যেন তোরে বাড়ির মধ্যে না দেখি” (গম্ভীর মুখে)

—“কেন দাদি? আমি এতক্ষণ কি করব বাইরে?” (অবাক হয়ে)

—“ওইডা তোর বিষয়। ছেলেপক্ষ বিকালে যাবে, ওদের সামনে যেন না পড়িস তুই। ফকিন্নি হলে কি হবে? এমনিতেই রুপের ডালা নিয়ে ঘুরিস, বড়লোক ছেলে যদি তোরে দেইখা ফাসে যায় তাইলে আমাদের মাইয়ার বিয়া হওয়া লাগবোনা আর। রাইসার বিয়া এই বাড়িত না হইলে তোরে আমি বাড়িত থেইকা বাহির করে দিমু।”

দাদির কথা শুনে ভয়ে আমার জান কেপে উঠলো। আংকেল-আন্টি যদিও আমাকে সাপোর্ট করেন তাও দাদি যদি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বের করে দেন? আমি কোথায় যাব! আমার তো কেউ নেই দুনিয়ায়।

কলেজ শেষে বান্ধবীদের সাথে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে আমি বিকেলের দিকে ভয়ে ভয়ে বাসায় গেলাম। আকাশে বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব তাই আর দেরি করলাম না। বাসার সামনে পৌঁছাতেই বৃষ্টি রীতিমতো শুরু হয়েছে।

দাদীর কথা মনে হতেই ভিতরে ঢুকবো কি না দ্বিধা কাজ করছিলো। পরে ভাবলাম ছেলেপক্ষ হয়তো এতক্ষণে চলে গিয়েছে। তাই সাত-পাঁচ না ভেবে বাসায় ঢুকছিলাম এমন সময় হঠাৎ কারও শক্ত পুরুষালি বুকের সাথে ধাক্কা লাগায় চমকে উঠে পড়ে যেতে ধরলাম আমি।

কিন্তু মাটিতে পড়ে যাবার আগেই একটি বলিষ্ঠ হাত টেনে উপরে তুললো আমায়, আরেকটি হাতে আগলে রেখেছে আমার কোমর! তার স্পর্শে শিউরে উঠে তার চোখের দিকে তাকালাম। বৃষ্টির জন্য ঠিকমতো তাকানো যাচ্ছেনা। পিটপিট করতে থাকা চোখে কোনমতে তার সুদর্শন চেহারার দিকে তাকাতেই যেন হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো আমার! এই প্রথম কোন পুরুষের সান্নিধ্যে আসায় তন ও মনে রীতিমতো কম্পন উঠে গেছে আমার!

কাপাকাপা হাতে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেস্টা করলাম আমি কিন্তু তার সুঠাম দেহে আমার ছোট্ট হাতের ধাক্কায় বিন্দুমাত্র স্থান পরিবর্তন হলোনা। হঠাৎ তার হাত আমার চেহারার দিকে এগিয়ে আসতেই অজানা আশংকায় চোখ আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো!

কিছু বুঝে উঠার আগেই অনুভব করলাম আলতো হাতে আমার মুখের উপর আসা একগোছা চুল সরিয়ে দিলেন তিনি। বৃষ্টির নিচে অচেনা যুবকের সাথে এমন মুহুর্তে রিয়েকশন কি হওয়া উচিত আমার জানা নেই কিন্তু অদ্ভুত কোন কারণে সংকোচবোধ হলেও তার স্পর্শে আমার অস্বস্তি লাগছিলোনা।

অতঃপর দুইজন কিছু বলার আগেই তার ফোনের কর্কশ রিংটোন বেজে উঠলো জোরেশোরে। মুহুর্তেই যেন হকচকিয়ে গেলেন তিনি। এক ঝটকায় সরিয়ে দিলেন আমায় তারপর ফোন রিসিভ করে হনহন করে চলে গেলেন সামনে দিয়ে যেন এতক্ষণ কিছুই ঘটেনি।

তার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাড়ির দিকে ঢুকতেই দেখি দাদি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হঠাৎ মনে ভয় হলো উনি একটু আগে আমাদের একসাথে দেখেননি তো?

#চলবে

#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ২
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

দাদিকে দেখে ভয়ে ভয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলাম আমি। শুকনো ঢোক গিলে তার মুখ থেকে নিজের নামে বাজে কিছু শুনার প্রস্তুতি নিতেই তিনি বললেন,

— বাসায় কখন আসলি তুই? আর ঢুকার সময় কেউ তোরে দেখেনি তো?

দাদির কথা শুনে এতক্ষণ চেপে রাখা শ্বাস ছাড়লাম আমি! তার মানে তিনি কিছুই দেখেননি! যাক আল্লাহ বাচিয়েছেন আজকে। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেই আবার দাদির গলা শুনলাম,

—কি রে, কথা কস না ক্যান? সত্যিই কারও সাথে দেখা হয়নি তোর? কোন ব্যাটামানুষেক দেখছোস বাড়ি থেকে বাইর হতে?

দাদির কথা শুনে বুঝলাম তিনি উনার কথা বলছেন। তবুও মুখে বললাম,

— না তো দাদি, আমার তো কারও সাথে দেখা হয়নি আর আমিও কাউকে দেখিনি। কেন? কারও সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিলো কি?

দাদি আমার কথা শুনে খুশি হলেন মনে হয়। তার মুখে স্বস্তির আভাস দেখা গেলো। তিনি বললেন,

— আর কইস না। ছেলেরা মেয়ে দেখে খাওয়াদাওয়া করেই চলে যাচ্ছিলো, ওদের নাকি এক জরুরি কাজে যাওয়া লাগবো। পাত্রের বড় ভাইও আসছিলো, সেই দেখতে পোলাডা। তবে সারাদিন ফোনে কথা কয় অফিসের মানুষের লগে। খাওয়া শেষে ওই ফোনই ছেড়ে গেছিলো টেবিলের উপর ওডা নেওয়ার জন্য আসছিলো আবার।

দাদির কথা শুনে বুঝলাম একটু আগে যার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো উনি পাত্রের বড় ভাই! তার মানে উনি পাত্র না! হঠাৎ করেই যেন মনের মধ্যে অদ্ভুত স্বস্তি লাগলো উনি পাত্র না শুনে। কিন্তু কেন লাগলো তার কারণ বুঝতে পারলাম না আমি।

—আরেহ তুরফা, তুই এসে গেছিস? এত দেরি হলো কেন আজ? আমি এতক্ষণ ধরে ভাবছিলাম তুই কলেজ করে বাসায় আসছিস না কেন এখনো!

আন্টির কথা শুনে তার দিকে তাকালাম। তিনি খানিকটা চিন্তিত মুখে আমার দিকে চেয়ে আছেন। বুঝলাম দাদি আমাকে মানা করার কথা তাকে জানায়নি! দাদির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি চোখের ইশারায় আমাকে মানা করছেন আন্টিকে যেন না বলি তার বলা কথা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আন্টিকে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরে বললাম,

— উফফো আন্টি, তুমিও না আমার বড্ডো চিন্তা করো! কলেজ শেষে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম ফ্রেন্ডদের সাথে। দুপুরে ওদের সাথে খেয়েই বাসায় এসেছি তাই লেইট হয়ে গেলো আজকে।

— চিন্তা কেন হবেনা মা? তুই আমাদের দায়িত্ব। তোর মাকে কথা দিয়েছি আমি তোকে দেখে রাখার জন্য। যতদিন তোকে যোগ্য ছেলের হাতে তুলে না দিয়েছি তোর খেয়াল তো আমাদেরই রাখতে হবে। এরপর কোথাও গেলে আমাকে বলে যাস।

আন্টির কথা শুনে মাথা নাড়লাম। বিয়ের কথা শুনে মনের মধ্যে শিহরণ খেলে গেলো। আমারও জীবনে কি কেউ আসবে যে আমাকে আগলে রাখবে এই কঠিন দুনিয়া থেকে? যার সবকিছুতে আমার অগ্রাধিকার থাকবে সবার উপরে? যে তার ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভরিয়ে দিবে আমার হৃদয়ের মরুভূমি। যার আগমনে পরিপূর্ণ হবে আমার ছোট্ট জীবন?

— পাত্রপক্ষ রাজি হলেই হয় বিয়ের জন্য। এত ভালো ছেলে আর পরিবার হাতছাড়া করা যাবেনা। চৌধুরী বংশের লোকজন বলে কথা। ব্যবসা-সম্মান সবদিক দিয়েই তাদের বহু নাম-ডাক।

আমার ভাবনার মধ্যেই দাদির কথা শুনতে পেলাম। চৌধুরী বংশ? আন্টির কাছে শুনেছি আমার বাবাও চৌধুরী বংশের ছেলে ছিলেন। এইজন্যই আংকেলের ব্যবসা দাড় করাতে তিনি অনেক সাহায্য করেছেন ওই সময়। ইশ! আজ যদি আমার বাবা-মা বেচে থাকতো? তাহলে এই বাসায় থেকে দাদির খোটা শুনতে হতোনা প্রতিদিন। আমার জীবনটাও অন্যরকম হতো।

বাবা-মায়ের কথা মনে হতেই চোখে পানি চলে আসলো আমার। দ্রুত রুমে চলে আসলাম আমি। নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া করলাম আর আল্লাহর কাছে চাইলাম আমার জীবনকেও সুন্দর করে দেওয়ার জন্য। তারপর ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সবার চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। সময় দেখলাম রাত ৮ টা বাজে। বেশ অনেকক্ষণই ঘুমিয়েছি আমি তাহলে। হাত-মুখ ধুয়ে বাইরে আসতেই দেখি আন্টি মিস্টি নিয়ে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। রাইসার দিকে তাকাতেই দেখি ও লাজুক হাসিতে আমার দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আমায়। কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি কি হয়েছে তাই আন্টিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম, উনিও হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। বিস্তৃত হলো আমার মুখের হাসি। পাত্রপক্ষ রাজি হয়েছে!! দাদির খুশি দেখে কে! উনি নাকি পাড়ায় মিস্টি বিলি করতে গিয়েছেন এই খুশিতে! তার পাগলামির কথা শুনে হাসলাম আমি।


রাইসা একের পর এক রুপচর্চা করেই যাচ্ছে আর আমি বসে বসে ওর কাণ্ড দেখে যাচ্ছি। যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে অর্থাৎ প্রান্ত, তার সাথে নাকি কালকে ওর রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা। তার জন্যই এত প্রস্তুতি। কিন্তু আমি বুঝে পাচ্ছিনা আজকে তো প্রান্ত ওকে দেখেছেই তবে এত রুপচর্চার কি দরকার? যাই হোক, ওর ব্যাপার ও জানে। রাইসা ফেইসপ্যাক তুলতে বাথরুমে গেছে আর আমি চুপচাপ আমার ফোন টিপছিলাম। হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠতেই দেখি প্রান্ত কল দিয়েছে।

রাইসাকে বারকয়েক ডাকার পরেও ও শুনলোনা। এদিকে ফোন বেজেই যাচ্ছে। একপর্যায়ে রাইসা বললো আমি ধরে যেন প্রান্তকে বলি রাইসা একটু কাজে ব্যস্ত। ফ্রি হয়ে নিজে কলব্যাক করবে। ইতস্ততবোধ হলেও রাইসার কথা শুনে কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম আমি,

— হ্যা-হ্যালো, প্রান্ত ভাইয়া। (আস্তে করে বললাম আমি)

ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া গেলোনা। অদ্ভুত গাম্ভীর্য বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিরক্ত হলাম প্রান্তের উপর। কথা বলার জন্যই যদি ফোন দেয় তবে চুপ করে আছে কেন? তাই বিরক্তি নিয়েই এক নিশ্বাসে বলে উঠলাম,

— হ্যালো ভাইয়া, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? যদি শুনতে পারেন তাহলে জেনে রাখুন আপনি যাকে ফোন দিয়েছেন আমি সে নই। আমি রাইসার বোন তুরফা। ও এখন একটু ব্যস্ত আছে, ফ্রি হয়ে পরে আপনাকে কলব্যাক করবে।

তার উত্তর শুনার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলাম না। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ফোন কাটতেই ওপাশ থেকে শুনা গেলো গম্ভীর আওয়াজ,

— আমি প্রান্তের বড় ভাই, পূর্ণ বলছি। ওর কালকে জরুরি মিটিং আছে তাই কাল দেখা করতে পারবেনা। এই কথাটা ও নিজে রাইসাকে বলতে পাচ্ছিলো না সে কস্ট পাবে ভেবে। তাই আমি ফোন দিয়েছি ওর পক্ষ থেকে। আপনি রাইসাকে পরশুদিন আসতে বলবেন, এই মিটিং জরুরি না হলে আমি কখনোই প্ল্যান ক্যান্সেল করতে বলতাম না ওকে। আশা করি রাইসা বুঝবে।

একবারে এতকিছু বলে সাথে সাথেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলেন না। অথচ এইদিকে তার কন্ঠ, তার নাম শুনে আমার হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। “পূর্ণ” নামটা শুনেই মনের মধ্যে শিহরণ জাগলো। উনার সাথেই দেখা কি তবে হয়েছিলো আজ বৃষ্টিতে আমার? আবার এখন ভাগ্যক্রমে তার সাথেই কথা হলো ফোনে??
এ কেমন অদ্ভুত ব্যপার।

একদিকে রাইসা বাথরুম থেকে ডেকে যাচ্ছে কি হয়েছে শুনার জন্য কিন্তু এইদিকে “পূর্ণ” নামক ব্যক্তির অদ্ভূত আচরণে ভাবনার জগতে ডুবে রয়েছি আমি! কোন এক অজানা কারণে তার কথা মনে হতেই কেন জানি চিন্তার ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে আমার হৃদয়জুড়ে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here