#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৭৫
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
(প্রথম পরিচ্ছেদ)
রায়হান ভাই ও প্রিয়ার বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ক’দিন আগে প্রিয়ার উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট দিয়েছে, ভালোভাবে পড়াশুনা করায় তার ফলাফলও আশানুরূপ হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আজ রায়হান ভাই বাবা-মা সহ প্রিয়ার হাত চাইতে এসেছেন। যেহেতু আগে থেকেই সবাইকে জানানো হয়েছিলো তাদের সম্পর্কের কথা, সেহেতু অভিভাবক মন্ডলী বেশ রাজিখুশি এ ব্যাপারে। বিয়ের ব্যাপারে আগে থেকে না জানায়, বিস্ময় ছেয়ে আছে শুধু প্রিয়ার চোখেমুখে। রায়হান ভাই যে ওকে না জানিয়ে হুট করেই এভাবে মা-বাবা নিয়ে বাসায় আসবেন এবং পূর্ণসহ বাকি সবাই যে এত সহজে রাজি হয়ে যাবে বিষয়টিতে বেশ অবাক সে! তো বিয়ের ব্যাপারে সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার আগে হবু বর-কনে কে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ছাদে প্রবেশ করতেই নিজের প্রশ্নগুলোকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনা প্রিয়া। সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে রায়হানের উদ্দেশ্যে,
—এসব কি হচ্ছে? আমি না কিছুই বুঝতে পারছিনা। আপনিও হঠাৎ করে কিছু না বলেই আংকেল-আন্টিকে নিয়ে চলে এলেন যে? আর সবাই এত ইজিলি রাজি হবে আমি তো ভাবতেও পাচ্ছিনা! অন্য কারও কথা তো বাদ-ই দিলাম, বড় ভাইয়া কিভাবে রাজি হলো? আমায় বুঝান তো!
প্রিয়তমার থেকে প্রত্যাশিত রিয়েকশন দেখার আনন্দে রায়হানের চোখেমুখে হাসির ঝলক খেলে গেলো। অবশেষে সারপ্রাইজ দিতে সক্ষম হয়েছে সে! শুধুমাত্র প্রিয়ার চোখেমুখে বিস্ময়মিশ্রিত এই রিয়েকশনটা দেখবে বলেই এতদিন বহুকস্টে তার থেকে বিষয়টি চেপে গিয়েছিলো সে। কিন্তু রায়হান কিছু বলার আগেই অধৈর্য প্রিয়া পুনরায় তার হাত ঝাকিয়ে একি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় সরু চোখে সে জিজ্ঞেস করলো,
—তুমি সত্যিই পূর্ণর বোন তো?
—মানে?
চমকে উঠে প্রশ্ন করে প্রিয়া। এমন সময় এহেন প্রশ্ন আশা করেনি সে। ওর বড় বড় চোখ দেখে আরেকদফা হাসি পেলো রায়হানের। হাসতে হাসতেই বলে উঠলো,
—বলছিলাম যে পূর্ণর বোন হয়ে তোমার মধ্যে ধৈর্যের এত অভাব কেন? আমার তো বেশ সন্দেহ হচ্ছে এখন!
এবার কথাটার সারমর্ম বুঝে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রিয়া। নাক ফুলিয়ে ফুসে উঠে বলে,
—আপনার এসব ফালতু কথা রাখবেন? একদিনে এত চমক নিতে পাচ্ছিনা আমি। এজন্যই জিজ্ঞেস করছিলাম। কিন্তু আপনার উত্তর দিতে ইচ্ছে না হলে আমার শুনার দরকার নেই। নিচে যাচ্ছি আমি।
বলার সাথে সাথে ছাদ থেকে পা বাড়ানো শুরু করে সে। তৎক্ষণাত ওর হাত ধরে ফেলে রায়হান। আলতো টেনে এনে একটা নিশ্বাস ফেলে নরম সুরে বলে,
—আচ্ছা বাবা, বলছি। এত রাগ করার কি আছে? আমি তোমায় সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এতদিন কিছু বলিনি। বেশ আগেই আমি আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে পূর্ণকে জানিয়েছিলাম। প্রথমে খানিকটা ইনসিকিউর ছিলো আমার ব্যাপারে যে তোমায় সুখে রাখতে পারবো কি না। রাজি হচ্ছিলোনা, এরপর বেশ কিছুদিন চিন্তাভাবনা করে আমায় পরখ করে নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টেছে সে। তুরফাও হেল্প করেছে আমার। তারপর তোমার এইচএসসির কিছুদিন আগে পূর্ণ তোমার বাবা-মা কে জানায়, আমি আমার আব্বু-আম্মুকে জানাই। দুই পরিবার যেহেতু আগে সম্পর্কিত তাই সবাই বেশ সহজেই রাজি হয়! ব্যস, এরপর আর কি? শুধু তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট এর অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন এবং আজ ফাইনালি সে দিন দিলো!
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে সবটুকু শুনে বিভিন্ন অনুভূতির সাগরে মিশে গেলো প্রিয়া। মানুষটা এতদিন এতকিছু প্ল্যান করে রেখেছিলো শুধুমাত্র ওকে এভাবে চমকে দেওয়ার জন্য? ওকে খুশি দেখার জন্য? পুরুষ মানুষের ভালোবাসা সত্যিই সুন্দর, যদি সে ভালোবাসতে জানে! আবেগাপ্লুত প্রিয়া বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো, কি করবে না করবে ভেবে খুশির বশে দু’হাতে আগলে ধরলো রায়হানকে! হঠাৎ এভাবে চমকে ধরা আশা না করায় খানিকটা পিছিয়ে গেলো রায়হান, তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুতই আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়াকে।
—আপনি আমায় আগে এসব বলেন নি কেন? আমার যে কত্ত খুশি লাগছে এখন তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা!
—আগে যদি বলতাম তবে কি তোমার এমন রিয়েকশন দেখতে পেতাম বলো?
প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া কিছুই বললোনা, হাতের বন্ধন খানিকটা দৃঢ় করলো শুধু। কিছুক্ষণ অতিক্রম হতেই হঠাৎ কৌতুকের সুরে রায়হান বলে উঠে,
—একটু আগে সন্দেহ থাকলেও এখন আমি পুরোপুরি শিওর তুমি পূর্ণর-ই বোন। রাগটা তো পুরো ভাইয়ের মতোই পেয়েছো।
মুহুর্তেই ওকে ছেড়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকালো প্রিয়া। কিন্তু সে রাগ বেশিক্ষণ টিকলোনা। রায়হানের চোখেমুখে হাসি দেখে হেসে ফেললো সে নিজেও! অতঃপর দুজন হাসিমুখে নিচে নেমে গেলো একসাথে এক নতুন জীবনের সূচনার উদ্দেশ্যে!
_______________________
সেদিন বড়দের আলোচনায় প্রিয়া ও রায়হান ভাইয়ের বিয়ের কথা ঠিক হওয়ার পর তিন মাস পেরিয়েছে৷ সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের বিয়ে পড়ানোসহ অনুষ্ঠান হবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে দিন গুনতে গুনতে কত দ্রুতই না সময় পেরিয়েছে। এর মাঝেই আমি প্রায় ভুলতে বসেছিলাম যে আজ পূর্ণর জন্মদিন। উনি কত সুন্দরভাবে আমায় মাঝরাতে উইশ করেছিলেন অথচ আমি কি না তারই জন্মদিন ভুলে গিয়েছিলাম? এমনটা কীভাবে হলো বুঝে উঠলাম না। আজকাল কিছুই মনে থাকেনা ঠিকমতো, বড্ড খামখেয়াল আমি। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের উপর নিজেরই রাগ হলো বেশ। পূর্ণ সকাল সকাল প্রতিদিনের মতোই রেডি হয়ে অফিস চলে গিয়েছিলেন। আজ আমার ক্লাস না থাকায় ঘুম থেকে ডাকেনও নি। বেশ বেলা করেই উঠেছি আমি। ফোনে সময় চেক করতে যেয়ে পাশে ঝুলে থাকা তারিখ নজরে আসতেই কপালে ভাজ পড়লো, চকিত দৃষ্টিতে উঠে পড়লাম তৎক্ষণাত। ফেসবুকে ঢুকে দেখি তাকে ইতোমধ্যে কত মানুষ উইশ করে ফেলেছে। আর আমি কিনা সব ভুলে মনের সুখে ঘুমোচ্ছিলাম! এসব দেখে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ফ্রেশ হয়ে এসে ভাবতে থাকলাম তাকে কিভাবে সারপ্রাইজ দেওয়া যায়! ঠিক করলাম তার প্রিয় সব খাবার রান্না করবো যেহেতু আমার হাতের রান্না তার পছন্দ। রান্না করতে করতে ভাবলাম কি গিফট দিবো তাকে? আমার জন্মদিনের গিফট হিসেবে উনি নিজের মূল্যবান সময় দিয়েছিলেন আমায়। সুস্থ হওয়ার পর কাজপাগল মানুষটা একটা পুরো দিন শুধু আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য ছুটি নিয়েছিলেন। সেদিন ঢাকার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়ে হাসিখুশিভাবে কেটেছিল আমাদের! কিন্তু আমি তাকে কি দিবো? এসব ভাবনার মধ্যেই প্রিয়া এলো রান্নাঘরে। হাড়ি থেকে খাবারের গন্ধ শুকে লোভনীয় কণ্ঠে বললো,
—স্মেলটা অস্থির আসছে কিন্তু, ভাবী। আজ তো বড় ভাইয়ার সাথে আমাদেরও জম্পেশ খাওয়া হবে!
ওর কথার বিনিময়ে হালকা হাসলাম। কিছুক্ষণ আমায় পর্যবেক্ষণ করে সে বলে উঠলো,
—তোমার কি শরীর খারাপ? একটু পর পর হাপাচ্ছো কেন? চোখমুখও ফোলা ফোলা লাগছে। বেশ ক’দিন ধরেই খেয়াল করছি। জিজ্ঞেস করবো করবো করে বলাই হয়নি।
—জানিনা রে। রান্না করছিলাম তো এতক্ষণ, তাই টায়ার্ড লাগছে হয়তো। আর চোখমুখ ফোলা থাকার কারণ হলো ঘুম ভেঙেছে অনেক দেরিতে। তোমার ভাই তো আমাকে না ডেকেই চলে গেছে। আজকাল এত ঘুম ধরে আর কি বলবো! সুযোগ পেলেই মনে হয় শুধু ঘুমাই!
আমার কথায় হেসে উঠলো প্রিয়া। রান্নাঘরে প্রবেশ করলো বড়াম্মুও। রাইসা ওর রুমে রাফসানের সাথে ব্যস্ত। তাই আমরা তিনজন মিলে গল্প করতে করতে কাজ শেষ করে ফেললাম। সবার প্ল্যান মোতাবেক পূর্ণকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য উনি অফিস থেকে আসার আগে কেক নিয়ে আসা হলো। যেটা নিজ দায়িত্বে কাস্টমাইজ করে এনেছেন প্রান্ত ভাইয়া। উনি পূর্ণের আগেই বাসায় এসে গেছেন আজকে।
যথারীতি সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতেই পূর্ণ চলে এলেন অফিস থেকে। দরজা ঠেলে বাসায় প্রবেশ করতেই সবাই একসাথে “হ্যাপি বার্থডে” বলে চিল্লিয়ে উঠলো। উনি কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেন, অবাক হয়ে সবার হাসিমুখ দেখলেন। অতঃপর হাসির রেখা ফুটে উঠলো তার ঠোঁটেও। প্রিয়া দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ের ধরে টেনে এনে কেকের সামনে বসিয়ে দিলো। সামনে কেক দেখে লোভে পড়ে রাফসান বাচ্চাটা এবার পূর্ণর কোলে যেতে রাজি হলো। তা দেখে আরেকদফা হাসির রোল পড়লো। অতঃপর ওকে কোলে নিয়েই কেক কাটলেন পূর্ণ। সবাইকে কেক খাওয়ানো শেষে চিরচেনা গম্ভীর স্বরে বললেন,
—থ্যাংকস ফর দ্যা সারপ্রাইজ। আই এপ্রিশিয়েট দ্যাট। কিন্তু আমার কি আর এসব বার্থডে সেলিব্রেট করার বয়স আছে? এসব তো বাচ্চাদের জন্য!
—এই ছেলেকে নিয়ে আর পারা গেলোনা। কেন তুমি কি ত্রিশ না পেরোতেই বুড়ো হয়ে গেছো? তোমার বেরসিক স্বভাবটা এ জীবনে আর যাবেনা মনে হয়।
বিরক্তিকর কণ্ঠে বললেন বড়াব্বু, যেটা শুনে মিটিমিটি হাসলো সবাই।
—বাবা, তোমার ছেলে যে তলে তলে কতটা রসিক সেটা তো শুধু একজনই জানে। বড় ভাইয়া তো আমাদের সামনে বেরসিক হওয়ার এক্টিং করে!
প্রান্ত ভাইয়ার কথায় চোখ পাকিয়ে তাকালেন পূর্ণ। হাতের ইশারায় “থাপ্পড় দিবেন” দেখিয়ে দিলেন। দুই ভাইয়ের খুনসুটিতে নীরব দর্শক হলো সবাই।
—আহহা, তোমরা আমার ছেলেটার সাথে এমন কেন করছো? ও তো এমনিই বলেছে। তোমরা শুধু আমার ছেলের পিছে লেগে থাকো!
বড়াম্মুর কথায় তাকে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরলেন পূর্ণ। অতঃপর বড়াব্বুর দিক চেয়ে মুখ বেকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন রুমে।
______________________
রাতের ডিনার শেষে রুমে বসে আছি দুজন। অবশ্য শুধু বসে আছি বললে ভুল হবে। রেগে আছি পূর্ণর উপর। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে উনি অযথা জোরাজুরি করেন আমার উপর, যেটা পারতপক্ষে আমার ভালোর জন্য হলেও হিতে বিপরীত হয়ে যায়। এই যেমন আজ রাতে একদমই খেতে মন চাইছিলো না। কেমন যেন গা গুলাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো যেন খাবার মুখে দিতেই বেরিয়ে আসবে তাই না খেয়ে ছিলাম। কিন্তু পূর্ণর কাছে এসব সত্যি মনে হয়নি, তার ধারণা বিগত কয়দিনে আমার কিছুটা ওজন বেড়েছে বিধায় এসব বাহানা দিয়ে ডায়েট করছি। লোকটাকে অনেক বলেও বুঝানো গেলোনা, অন্যদের সামনে কিছু না বললেও সবার খাওয়া শেষে রুমে ঠিকি খাবার নিয়ে এলেন আমার জন্য। জোর করে খাইয়ে দিলেন ঠিকি কিন্তু সেটা পেটে টিকলোনা বেশিক্ষণ। খাওয়া পুরোপুরি শেষ না হতেই হুড়মুড়িয়ে বমি এসে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় থমকে গিয়েছি আমরা দুজনই।
—আর কতক্ষণ এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে? আজ আমার জন্মদিন, অথচ তুমি আমায় উইশ করা তো দূরের কথা উলটো আমার উপরই রাগ করে বসে আছো। পুরো দুনিয়া আমার জন্মদিন মনে রেখেছে আমার বউ বাদে! কি আশ্চর্য!
বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পর হতাশ কণ্ঠে কাধ হেলিয়ে বলে উঠলেন পূর্ণ। তার কথায় এতক্ষণের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। “জন্মদিন” শব্দটা মাথায় আসতেই এতক্ষণের রাগ ধুয়েমুছে পানি হয়ে গেলো। একেতো তাকে উইশ করিনাই এখনো আবার তার উপরই রাগ দেখাচ্ছি বিষয়টা ভাবতেই অপরাধবোধ কাজ করলো মনের ভেতর। কাছে এগিয়ে বসে তার হাত ধরে নরম কণ্ঠে বললাম,
—আই এম সরি। আপনাকে উইশ করতে ভুলে গিয়েছি। বিশ্বাস করুন আমার মাথা থেকে কিভাবে চলে গেছে নিজেও জানিনা! আমি গত সপ্তাহেও মনে করেছিলাম কিন্তু আজ কিভাবে যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
—কিছু মনে করবোনা যদি গিফট পাই। এখন বলো তুরফা রানী, কি গিফট দিবে আমায়?
—কি চান আপনি? আমি অনেক ভেবেছি কিন্তু কি গিফট দিবো খুজে পেলাম না। সারপ্রাইজ দেওয়ায় আমি বড্ড কাচা। আপনি যা চান তাই দিবো।
—ভেবে বলছো তো, তুর পাখি?
কিঞ্চিৎ বাকা হেসে কথাটি বলতেই তার চোখেমুখে দুষ্টুমির ঝলক দেখা গেলো। নির্ঘাত উল্টাপাল্টা কিছু ভাবছেন। তাই উনি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই তার ঠোঁটে আংগুল দিয়ে থামিয়ে দিলাম। আমার এ কাজে অবাক হয়ে গেলেন পূর্ণ। উনি কিছু বলার আগেই বলে উঠলাম,
—দেখুন, উল্টাপাল্টা কিছু বলবেন না। আপনি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমায় ঘুরিয়েছিলেন পুরো একদিন। তো আপনি চাইলে আমিও ভার্সিটি থেকে একদিন ছুটি নিয়ে আপনাকে ঘুরাবো।
দাত কেলিয়ে কথাটা বলতেই এতক্ষণের হাসিমুখ উধাও হলো তার। সরু চোখে একহাতে আলতোভাবে আমার কান চেপে ধরে বলে উঠলেন,
—খালি ফাকিবাজি বুদ্ধি তোমার তাই না? কিভাবে পড়ালেখা না করা যায় সেই প্ল্যানে থাকো। আর মনে করো আমি আবেগে গলে গিয়ে কিছু বুঝবোনা, তাই তো?
এভাবে ধরা পড়ে যাওয়ায় বেশ বিব্রতবোধ করলাম। তার হাত থেকে কান ছাড়ানোর চেস্টা করতেই মজার ছলে আরেকটু বল প্রয়োগ করে কান ধরলেন উনি। খানিকটা ব্যথায় করুণ চোখে বললাম,
—ব্যথা পাচ্ছি তো। ছাড়ুন।
এবার তিনি কান ছেড়ে দিলেন। অতঃপর দুই গালে হাত রেখে মিস্টি কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—তুমি আমায় কি গিফট দিবে যেখানে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট তো তুমিই। তুমি শুধু আমার কাছে থাকো, আমার পাশে থাকো আজীবন তাহলে আমার আর কিছু লাগবেনা, তুর পাখি। তোমায় দেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দিবো।
—এটা কি একটু বেশিই ফিল্মি হয়ে গেলোনা, পূর্ণ সাহেব?
আমার জন্মদিনে উনার বলা কথাগুলো নকল করে বলে উঠতেই হেসে ফেললাম দুজনে। হাসতে হাসতেই আমার নাক টেনে দিয়ে উনি বলে উঠলেন,
—আজকাল আমায় নকল করাও শিখে গেছো দেখছি। ভেরি ব্যাড, তুর পাখি।
কথাটি বলে ল্যাপটপ নিতে সোফার কাছে চলে গেলেন তিনি। আমিও বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই হঠাৎ প্রচন্ডভাবে মাথা ঘুরতে লাগলো। কিছুক্ষণ নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেস্টা করেও লাভ হলোনা। আচমকা বিছানার কোণের সাথে মাথা বাড়ি খেলাম। ধীরে ধীরে অচেতন হচ্ছে শরীর, চেতনা হারানোর আগে গালে অনুভব হলো উনার হাত। কানে এলো বিচলিত পূর্ণর অস্থির কণ্ঠস্বর,
—তুরফা, কি হয়ে তোমার? এভাবে পড়ে গেলে কেন? বেশি খারাপ লাগছে? এই তুর পাখি, কথা বলো। আমার কিন্তু অস্থির লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ চেস্টা করেও তাকে কিছু বলতে সক্ষম হলাম না। আর কিছু বুঝে উঠার আগেই পূর্ণর কোলে মাথা রেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
#চলবে
[এই পর্ব এখানেই শেষ নয়। আগামী পর্বে এই পর্বের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ অর্থাৎ শেষাংশ দেওয়া হবে]