বৃষ্টি,১ম পর্ব
Tasmima Yeasmin
অয়ন ভাই সবসময় আমার দিকে বিশ্রীভাবে তাকায়। আমার বিরক্ত লাগে মা। কাল তো হুট করে আমার রুমেই ঢুকে পরেছিলো। আর এরকম একটা চরিত্রহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছো তুমি আমার।
আম্মা পান মুখে দিয়ে বললেন,
– কই আমি তো দেখিনি অয়নকে কখনো বিশ্রীভাবে তাকাতে। আর তোর বিয়ে তো এখনো ঠিক করি নি। ভাইজান শুধু বললেন তোর মেয়েটাকে বউ করে এখানে রাখতে চাই।
-আমি আরেকটু রাগ দেখিয়ে বললাম, আমি কি তবে মিথ্যে বলেছি? রুমে ঢোকার ব্যাপারটাও কি মিথ্যা।
-হয়তো কোন প্রয়োজনে গিয়েছিলো
-যতই প্রয়োজন থাকুক আমিতো এখন আর ছোট নই।
আম্মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন রাগ করিস না অনু। অয়ন ছেলেটা ভালো। ওর সাথে বিয়ে হলে তুই ভালো থাকবি।
-নিজের ভাইয়ের ছেলের গুণগান তো গাইবেই।
আমি রেগে আম্মার কাছ থেকে রেগে উঠে ছাদে গেলাম। আম্মাকে ঠিকঠিক সত্যি বলিনি। অয়ন ভাই যে আমার দিকে বিশ্রীভাবে তাকায় এটা সত্য নয়। তবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
কাল সত্যিই দরজায় নক না করে রুমে ঢুকেছিলো কারণ তার বই আমি আমার রুমে এনে রেখেছিলাম। তাই বলে দরজা খোলা পেলেই ঢুকে পড়বে। উনি অন্যায় করেছে মহা অন্যায়।
,
,
আমি অনু। পড়াশোনার সুবাদে মামার বাড়িতে থাকি। ঠিক আপন মামা নয়। মায়ের দুঃসম্পর্কে ভাই। অয়ন ভাইয়াদের অবস্থা খুব ভালো। আব্বা আম্মার দুইমাত্র মেয়ে আমি। বড় আপার অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। আম্মা খুব করে চায় আমি এখানেই থেকে যাই। অয়ন ভাইয়ের সাথে বিয়েটা হয়ে যাক আরকি। কিন্তু আমি তো ভালোবাসি নিবিড় কে। আহা কি মায়ামায়া চেহারা। একবার মাত্র দেখা করেছি আমরা। ও সেই কতদূরে থাকে। যদিও আমার কাছে দূরত্ব কোন ফ্যাক্ট না যদি ভালোবাসা বিশুদ্ধ হয়।
,
,
অনুভব একা একা ছাদে কি করছিস?
আমি চমকে পিছনে ফিরে তাকালাম। যন্ত্রণাটা এখানে এসে হাজির। আমি রাগ চেপে বললাম আমার নাম অনুভব নয় অনু। অনুভব, অনুপমা, অনুপ্রাণনা, অনুরাগিণী, অনুরাধা এসব কি?
অয়ন ভাইয়া মুচকি হেসে বললে এসবের ব্যাখ্যা আছে অনুপ্রভা। কিন্তু তোকে এখন বলবো না।
মনে মনে বললাম আপনার ব্যাখ্যা শুনতে চেয়েছে কে। উনি যে আমাকে বেশ পছন্দ করে কার্যকলাপে বুঝি। মুখে বলতে হবে কে বলেছে।
আমি একটু হেসে বললাম অয়ন ভাইয়া আপনার হাতের চা খেতে ইচ্ছে করছে খুব। খাওয়াবেন?
তিনি মাথা চুলকে বললেন চা খাবি?
আমি ঠোঁট টিপে হেসে বললাম ঠিকাছে। ময়নার মাকে বলছি। আপনাকে বানাতে হবে না।
অয়ন ভাইয়া একরকম বাঁধা দিয়ে বললেন না না আমি করে দিচ্ছি। চা খেতে চেয়েছিস, তাজমহল তো চাসনি। দশ মিনিট অপেক্ষা কর অনু।
অয়ন ভাইয়ার পিছনে পিছনে আমিও পা টিপে টিপে রান্নাঘরে আসলাম। অয়ন ভাই পানি ফোটার পরে হাতে দুধের জগ নিয়ে একবার চা পাতার দিকে তাকাচ্ছে একবার চিনির দিকে তাকাচ্ছে। হয়ত বুঝতে পারছেনা কোনটা আগে দিবে। আহারে বেচারা। আমি কোনমতে হাসি আটকে অবনী আপুর রুমে চলে আসলাম। অবনী আপু অয়ন ভাইয়ার বড় বোন। কয়েকদিন পরে অবনী আপুর বিয়ে। সে উপলক্ষ্যেই আব্বা আম্মা এসেছেন। তাছাড়া আমাকেও মাঝেমাঝে দেখতে আসে। আমি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলাম উনি চা নিয়ে ছাদে গিয়ে যখন দেখবে আমি নেই তখন মুখটা কেমন হবে। সেটা কল্পনা করেই আমার আবার হাসি পেয়ে গেলো।
অবনী আপু আমার কান্ড দেখে বললো,
কিরে তুই একা একা বোকার মত হাসছিস কেন অনু?
অবনী আপু হাতে মেহেন্দি লাগাচ্ছিলো। আমি পাশে গিয়ে বসলাম।
-বাহ আপু চমৎকার লাগছে। মেহেদীর রঙ গাঢ় হলে নাকি বর খুব আদর করে। আর তোমার হাতে তো মেহেদীর রঙ খুব গাঢ় হয়।
অবনী আপু লজ্জা পেয়ে বললো তুই তো ইদানীং খুব দুষ্ট হয়েছিস অনু।
,
,
অবনী আপুর হলুদের দিন আমি কালো শাড়ি পড়লাম। কপালে কালো টিপ দিলাম। চুলগুলো খুলে দিলাম। হাত ভর্তি কালো চুড়ি পড়লাম। চোখে গাঢ় কাজল। শাড়ির সাথে হালকা সাজ।
সেজেগুজে আপুর হলুদের স্টেজে গেলাম। স্টেজে গিয়ে চমকে গেলাম। অয়ন ভাইয়া কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। তাকে ভীষণ রকম মানিয়েছে কালো পাঞ্জাবিতে। একগাদা মেয়ের মাঝে বসে তিনি আড্ডা দিচ্ছেন। এপাশে সবাই অবনী আপুকে হলুদ লাগাচ্ছে। আমিও আপুকে হলুদ লাগিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দিলাম।
একপাশে দাঁড়িয়েছি অয়ন ভাই পাশে এসে আস্তে আস্তে বললেন রুমে আয় জরুরী কথা আছে। আমি অয়ন ভাইয়ার পিছুপিছু হাটতে হাটতে ভাবতে লাগলাম কি বলবেন উনি।
রুমে ঢুকতেই তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই তিনি বলবেন তোকে খুব সুন্দর লাগছে। আবার ভালোবাসি ও বলতে পারেন। অবস্থা তো ভালো দেখছিনা। যদি প্রপোজ করেই বসেন আচ্ছারকম বকে দেবো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে অয়ন ভাই বললেন,
তুই এটা কি পরেছিস?
আমি হেসে বললাম শাড়ি।
তিনি বললেন তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কালো রঙের শাড়ি কেন পড়েছিস? তোর কি মিনিমাম কমন সেন্স নেই? কালো একটা রঙ হলো। গায়ে হলুদে কেউ কালো পড়ে? তুই কি শোকসভায় এসেছিস? বুদ্ধিশুদ্ধি কবে হবে তোর অনু?
-সংবিধানে কি লেখা আছে গায়ে হলুদে হলুদ শাড়ি পড়তে হবে। না পড়লে গুলি করা হবে। কালো পড়া যাবে না। আমি বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে বের হলো না। আমতাআমতা করে বললাম আপনিও তো কালো পাঞ্জাবি পড়েছেন।
উনি আবার কর্কশ স্বরে বললেন তোর কি মনে হয় তোর সাথে ম্যাচিং করে পড়েছি। আমি প্রথমে হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছিলাম। শুধু লিয়া অনুরোধ করলো তাই চেঞ্জ করলাম। আমাকে নাকি কালো পাঞ্জাবিতে ওর কাছে সুন্দর লাগে। অনুরোধ তো ফেলতে পারি না। বান্ধুবি বলে কথা।
লিয়া কে? আমি জানতে চাইলাম।
-ওইযে আমার বা পাশে সুন্দর করে একটা মেয়ে বসে ছিলো। চুল ব্লন্ড করা। ওটাই লিয়া। আর শোন এরকম অন্ধকার রঙ আর পড়িস না দেখতে বিশ্রী লাগছে।
অয়ন ভাইয়া হনহন করে চলে গেলেন। আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। উনি কিভাবে এত কঠিন কঠিন কথা আমাকে বললেন।
চলবে….