বৃষ্টি তোমাকে দিলাম❤️,পর্ব-৬
ফাবিহা নওশীন
জনালা ভেদ করে এক মুঠো সোনারোদ ইশারার বিছানায় জায়গা করে নিয়েছে। ইশারা পাশ ঘুরে শুতেই ওর মুখের উপর রোদ পড়ে। চোখ কুঁচকে কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে দেয়। ওর শীত শীত লাগছে। শরীরটাও দূর্বল লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেছে তাই প্রচন্ড ব্যথা। মাথা ভার হয়ে আছে। চোখ দুটো মেলতে পারছে না। চোখের পাতায় মনে হচ্ছে আঠা লাগানো। এভাবে শুয়ে থাকতেই ভালো লাগছে। হটাৎ মনে হলো অফিসে যেতে হবে। কটা বাজে দেখা উচিৎ।
ইশারা চোখ বন্ধ করে কাঁথার নিচ থেকে হাত বের করে মাথার পাশ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে কাঁথার ভেতরে নিল। মোবাইলের স্কিন অন করল। পিটপিট করে অনেক কষ্টে চোখ মেলল। চোখ জ্বলছে প্রচুর। সাড়ে আটটা বাজে। ইশারা চোখ বড়বড় করে তাকাল। না ঠিক দেখছে। দুম করে উঠে বসে। কিন্তু শরীর প্রচুর দূর্বল। কাঁথা সরিয়ে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামে।
আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করল। মাথা প্রচুর ব্যথা করছে। মাথায় হাত দিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকল। পানিতে হাত দিতেই শরীর সিরসির করে উঠে। গায়ে কাটা দিচ্ছে। ইশারা হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। গোসল করার সাহস করল না। রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলের কাছে গেল। ততক্ষণে ন’টা বাজে। অহনা অফিসে চলে গেছে। ইশারা চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ল।
অহনার মেসেজ এল। ইশারা তাতে লিখা পেল,”তোর গায়ে জ্বর। ফ্ল্যাক্সে চা আছে খেয়ে নিস। ভালো লাগবে। টেবিলের উপর নাস্তা প্লেট দিয়ে ঢাকা। খেয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়িস। তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই ডিস্টার্ব করতে চাইনি। পরে কল করব। আজ অফিসে যেতে হবে না। সবকিছু টেবিলের উপর আছে। কোনো সমস্যা হলে ফোন করিস।”
ইশারা মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখে ফ্ল্যাক্স থেকে চা ঢেলে ধীরে ধীরে পান করছে আর ভাবছে এত কষ্ট করে রেডি হলো আর অফিসে যাবে না? তাছাড়া ক’দিন হলো জয়েন করেছে আর এখুনি যদি বন্ধ দিতে শুরু করে তবে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। তাছাড়া অফিসে অনেক কাজ সেটা তো ইশারা জানে। ইশারা চা শেষ করে নাস্তার দিকে তাকাল। ওর খেতে ইচ্ছে করছে না। খাবার দেখেই কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। রুচি হচ্ছে না। ওষুধও খেতে ইচ্ছে করছে না। নাস্তা আবারও ঢেকে রেখে টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। কপালে হাত দিতেই হাত পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না।
.
ইশারা কম্পিউটারের স্কিনের দিকে চেয়ে থাকতে পারছে না। ওর চোখ বারবার বন্ধ হয়ে আসছে। আঙুল বারবার থেমে যাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না। খুক খুক করে কেশে উঠে। গ্লাসের উপর থেকে পিরিচ সরিয়ে পানি খেয়ে গলা ভেজায়। পানিরও কোনো স্বাদ পাচ্ছে না। ইশারার সবকিছু বিষাদ লাগছে। শরীর ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। সব কিছু বিরক্ত লাগে। ইশারারও তাই লাগছে।
ইশারা আজ পাক্কা আধাঘন্টা দেরি করে এসেছে। ওর এত দেরি করার কথা ফারানের কানে পৌঁছে গেছে। ডিসিপ্লিন মেনে না চলা, লেইট করে আসা ফারানের একদম পছন্দ নয়। ফারান ল্যাপটপের স্কিনে চোখ রেখে বিরবির করে বলছে,
“গতকাল সাহসী একটা কাজ করেছে। ওকে বাহবা দিয়েছি তাই কি মাথায় চড়ে বসল? আধা ঘণ্টা লেট। দশ মিনিট হলে মানা যেত।”
ফারান ইশারাকে ডেকে পাঠাল।
ইশারা মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে চুপ করে বসে ছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ ওভারে থাকতে পারল না। ইশারার ডাক পড়েছে। ফারান ওকে ডেকে পাঠিয়েছে।
ইশারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। কাজের মধ্যে হটাৎ কেন ডেকে পাঠাল বুঝতে পারছে না। ইশারার হটাৎ মনে হলো আজ ও লেট করে এসেছে। এ নিয়ে কিছু বলবে না অফিসের কোনো কাজ? কিন্তু স্যার তো কাজ নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওর সাথে বলার কথা না। ইশারা এটা সেটা ভাবতে ভাবতে ফারানের রুমের দিকে যাচ্ছে। যতবার পা ফেলছে মাথাটা ঝাঁকিয়ে উঠছে। ইশারা পারমিশন নিয়ে ভেতরে গেল। ফারান ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। ও যাওয়ার পরেও চোখ তুলে একবার তাকায়নি।
ল্যাপটপে চোখ রেখেই ফারান ভারী কন্ঠে বলল,
“আপনি আজ আধা ঘণ্টা লেট করে এসেছেন? আপনি কি অফিসের নিয়মকানুন জানেন না? এই অফিসের একটা ডিসিপ্লিন আছে। সেটা আপনাকে মেনে চলতে হবে।”
ইশারা মলিন মুখে মৃদুস্বরে বলল,
“সরি স্যার।”
“সরি বলে কি হবে? এর আগেও আপনি লেট করে এসেছেন। নিউ এমপ্লয়ি ছিলেন তাই সুযোগ দিয়েছি কিন্তু আপনি আজও লেট করে এসেছেন। আপনার বাসা তো অফিস থেকে দূরে নয়। তাহলে?”
ফারান এইবার ইশারার দিকে চোখ তুলে তাকাল। ইশারা নিচের দিকে চেয়ে আছে। নিচের দিকে চেয়েই বলল,
“সরি ছাড়া বলার মতো কিছু পাচ্ছি না। আমি জানি আপনার সব এমপ্লয়ি ডিসিপ্লিন মেনে চলে। আমিও চেষ্টা করেছি কিন্তু স্যার আমি সত্যিই খুব অসুস্থ। তাই দেরি হয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করব আর যেন এমন না হয়।”
ফারান ইশারার মুখটা ভালো করে দেখছে। চোখগুলো খুব ক্লান্ত, মুখটা শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে আছে। সৌন্দর্য কিছটা ম্লান হয়ে গেছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও আসলেই অসুস্থ।
ফারানের গতকালের কথা মনে পড়ল। গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে ইশারা বাচ্চামি করেছে। অর্ধেক রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজেই উৎসব করতে করতে হেঁটে গিয়েছে। ফারান ধমকে গাড়িতে তোলার পর রাস্তায় অনেক বার হাঁচি দিয়েছি। ভেজা কাপড়ে অনেকক্ষণ ছিল। নিশ্চয়ই জ্বর বাঁধিয়েছে।
ফারান রাগী কন্ঠে বলল,
“গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাঁধিয়েছেন?”
ইশারা আমতা আমতা করে নিচুস্বরে বলল,
“জি স্যার, একটু আর কি।”
ফারান ইশারাকে বসতে বলল। ইশারা বাধ্য মেয়ের মতো বসল।
ফারান লেকচার দিতে শুরু করল,
“আপনি একটা জব করেন। তাছাড়া আপনি ছোট বাচ্চা নয় যে বৃষ্টি দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে সব ভুলে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিজতে থাকবেন। যতটুকু জানি আপনার কেউ নেই৷ অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কে দেখবে আপনাকে? তাই আপনাকে সব দিক বুঝে চলতে হবে। আর অবুঝের মতো কাজ করবেন না। বস হিসেবে নয় একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বললাম।”
“জি স্যার। আসলে আমি…
ইশারার কাশি শুরু হয়ে গেল। কাশি কমলে ফারানের দিকে না চেয়েই বলল,
” সরি স্যার।”
ফারান পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। ইশারার খেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু ভদ্রতা বশত একটু মুখে দিল। পানি তেতো লাগায় চোখ মুখ কুঁচকালো। ফারান বেশ লক্ষ্য করল বিষয়টা। হুট করে ফারান টেবিলের উপর রাখা ইশারার হাত ছুয়ে চমকে গেল। ফারান হটাৎ হাত ধরায় ইশারা ঘাবড়ে যায়৷ যদিও ফারান ওর হাত ছুয়ে সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নিয়েছে।
ফারান চোখে মুখে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে বলল,
“আরে তোমার তো দেখছি খুব জ্বর?”
ইশারা ফারানের ছোয়ায় খারাপ কিছু অনুভব করেনি যেটা করেছে সেটা হচ্ছে কেয়ার, টেনশন। তবুও অস্বস্তি লাগছে।
ফারান আবারও বলল,
“ডক্তর দেখিয়েছো? মেডিসিন নিয়েছো?”
ইশারা নিচুস্বরে বলল,
“জি না। সকালে ঘুম ভেঙে দেখি জ্বর। তাই ডাক্তার দেখানো হয়নি।”
“আর মেডিসিন?”
ইশারা কথা বলছে না। অহনা ওর জন্য মেডিসিন রেখে গেলেও ওর খেতে ইচ্ছে করেনি। এখন সেটা কি করে বলবে?
ফারান যা বুঝার বুঝে গেল। ফারান দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার সাথে চলো।”
ইশারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“কোথায় স্যার?”
“আমাকে জাস্ট ফলো করো। ডোন্ট টক।”
ইশারা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ফারান ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
“ফার্স্ট…!”
ফারান বের হওয়ার পর ইশারাও বের হয়ে ফারানের পেছনে পেছনে যাচ্ছে। ফারান হটাৎ থেমে গিয়ে বলল,
“পেছনে পেছনে আসছো কেন? পাশাপাশি যেতে সমস্যা?”
ইশারা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“জি না।”
“তাহলে পাশাপাশি হাঁটো।”
ইশারা আর ফারান পাশাপাশি গাঁটছে। গাড়ির কাছে যেতেই ফারান ইশারার জন্য দরজা খুলে দিল। ইশারা মৃদু হেসে গাড়িতে ওঠে বসে। ফারান ওর পাশে ড্রাইভিং সিটে বসেছে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ইশারা বুঝতে পারছে না ওরা যাচ্ছে কোথায়? জিজ্ঞেস করার জন্য উসখুস করলেও জিজ্ঞেস করতে পারছে না। ওর মাথা ব্যথাটা আবারও চাড়া দিয়ে উঠেছে। সিটে মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষণ পর পর চোখ মেলে দেখছে গাড়ি কোথায় যাচ্ছে। ফারানের গাড়ি হসপিটালের সামনে এসে থামল। ফারান আবারও গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ইশারার দিকের দরজা খুলে দিল। ইশারাকে দাঁড় করিয়ে গাড়ি পার্কিং লটে রেখে এল।
ইশারা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আমরা এখানে কেন স্যার?”
ফারান ইশারার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
“রোগীকে হসপিটালেই আনতে হয়।”
ফারান ডাক্তার দেখিয়ে মেডিসিন লেখিয়ে নিয়েছে। ফার্মেসি থেকে প্রয়োজনীয় মেডিসিন নিয়ে গাড়িতে ওঠে ইশারাকে জিজ্ঞেস করে,
“সকালে কি খেয়েছো?”
ইশারা আবারও যেন ধাক্কা খায়।
“ইয়ে মানে চা।”
ফারান অবাক হয়ে বলল,
“চা!”
ফারান বেশ হতাশ হলো। তারপর বলল,
“তোমার কোনো কমন সেন্স নেই? চা খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলে? তাও এই শরীরে? ফোন করে জানিয়ে দিতে অসুস্থ। অফিসে যাওয়ার কি দরকার ছিল?”
ইশারা উত্তর দিচ্ছে না শুধু ফারানকে দেখে যাচ্ছে৷ ফারানের দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে ধরতে পারছে না। ফারান একটা রেস্টুরেন্টে গেল। ইশারার জন্য খাবার অর্ডার দিয়ে ওর বরাবর বসে বলল,
“খাবার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। কিছু খেয়ে মেডিসিন নিবে। খালি পেটে তো আর মেডিসিন নেওয়া যাবে না।”
ইশারা কিঞ্চিৎ বিরক্তবোধ করছে।
“স্যার কেন করছেন এসব? কি দরকার ছিল আমার জন্য এত কষ্ট করার? অফিসে আপনার কত কাজ! আর সেসব ফেলে এখানে বসে আছেন। কেন?”
ফারান কেন এর উত্তর দিতে পারছে না। সব কেন এর উত্তর হয়না। হলেও অসময়ে সেই উত্তর দেওয়া উচিৎ না।
ফারান বেখেয়ালি ভাবে বলল,
“জানি না।”
ইশারা অবাক চোখে ফারানের দিকে চেয়ে আছে। ফারান সিচুয়েশন পাল্টানোর জন্য বলল,
“তোমার আত্মীয় স্বজন কেউ নেই? আর তোমার কেউ নেই মানে কি? তোমার বাবা-মা?”
ইশারা চট করে বলল,
“মরে গেছে।”
এত স্বাভাবিকভাবে বলতে দেখে কিছুটা অবাক হলো ফারান। তারপর প্রশ্ন করল,
“বর্তমানে গার্ডিয়ান বলতে কে আছে তোমার?”
ইশারার বিরক্ত লাগছে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে। ওর গার্ডিয়ান দিয়ে কি করবে? ও কাজ করে সম্পর্ক ওর সাথে? ফ্যামিলি কি প্রয়োজন?
তবুও উত্তর দিল,”আমার বড় খালামনি।”
ফারান আবারও প্রশ্ন করতে উদ্বত হলে খাবার চলে এল। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারল না। খাবার দেখে ইশারার খাওয়া তো দূর বমি আসছে। ফারানের ধমকানিতে ইশারা অনেক কষ্টে কিছুটা খাবার খেয়ে নিল। মেডিসিন নিয়ে ফারানকে ধন্যবাদ জানাল।
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার কেয়ার করার মতো, আমাকে জোর করার মতো কেউ নেই তাই আমি এতটা অগোছালো, নিজের প্রতি এতটা কেয়ারলেস।”
ফারান মায়াময় দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“জানো তো আমারও মা নেই। যার মা না থাকে তার খেয়াল রাখার মতো কেউ থাকে না। তার জীবন অগোছালোই হয়।”
ইশারা ফারানের কথা শুনে ব্যথিত হলো।
“কি করে মারা গেলেন?”
ফারান মলিন মুখে বলল,
“তখন আমার দশ বছর। একদিন মা’য়ের খুব জ্বর হলো। অনেক ডাক্তার দেখানো হলো, বিভিন্ন টেস্ট, ওষুধ কিছুতেই কিছু হলো না। তারপর একদিন সন্ধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।”
ইশারা উৎসুকভাব জিজ্ঞেস করল,
“তারপর আপনার বাবা বিয়ে করলেন?”
ফারান মুচকি হেসে বলল,
“না, তিনি আর বিয়ে করেন নি। তবে ভাবছো আমার জীবন অগোছালো না কেন? কারণ গোছানোর মানুষ ছিল। আমার বড় আপা। আপা আমার চেয়ে ছ’বছরের বড়। মায়ের চলে যাওয়ার পর তিনিই আমাকে সামলিয়েছে। শুধু আমাকে নয়, বাবাকে, গোটা সংসারকে। পড়াশোনাও করেছেন। খুব মেধাবী ছিল আপা। এখন সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা। বাবা, আপু এই নিয়ে আমার পরিবার।”
ইশারা আনমনে বলে উঠে,
“আর আমার পরিবার জোড়াই লাগে না।”
ফারান অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
ইশারার হুশ হলো। তারপর কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
“ও বাদ দিন। আপনি বিবাহিত?”
ফারান ইশারার দিকে অদ্ভুতভাবে চেয়ে আছে। ওর ঠোঁটে হাসি লেগে আছে। উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করেছে।
“না। এখনো সিঙ্গেল। মন মতো কাউকে পেলেই হুট করে বিয়ে করে ফেলব।”
ইশারা মৃদুস্বরে হেসে বলল,
“দোয়া করি খুব শীঘ্রই পেয়ে যান। জীবন সঙ্গী পছন্দ মতো না হলে সারাজীবন দুঃখ পিছু ছাড়ে না।”
ইশারা হটাৎই বিমর্ষিত হয়ে পড়ল।
ফারান ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করল,
“তোমার বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা কতদূর?”
ইশারার ভেতরে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বয়ে গেল। ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠছে। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“এসব নিয়ে আমার কোনো চিন্তাভাবনা নেই। বলতে পারেন ইন্টারেস্ট নেই। এসব নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না। যেমন আছি ভালো আছি। আমি শুধু ভালো থাকতে চাই আর কিছু না।”
ফারান ইশারার কথা শকড হলো। কি বলল কিছুই বুঝতে পারল না। সব মাথার উপর দিয়ে গেল। একটা মেয়ের না-কি বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা নেই। কোনো স্বপ্ন নেই।
“চলুন উঠা যাক।”
ফারান বিল মিটিয়ে ইশারার সাথে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এল। বাইরে বের হতেই রোদের মধ্যে হটাৎ করেই বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। ফারান আর ইশার কিংকর্তব্যবিমুঢ়। কি করবে, কোন দিকে যাবে ঠিক করতে পারছে না। ইশারার গায়ে জ্বর। এ নিয়ে আবারও বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হবে না। ফারান ইশারার হাত আঁকড়ে ধরে বৃষ্টির মধ্যে দৌড়াচ্ছে। ইশারার মনে হচ্ছে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। রিয়েক্ট করতে ভুলে গেছে। গাড়ির সামনে গিয়ে ইশারার হাত ছেড়ে দরজা খুলে ইশারাকে বসতে বলল। ইশারা দ্রুত ভেতরে বসল। ফারান ভেতরে বসে রুমাল বের করে ইশারাকে এগিয়ে দিল।
ইশারা অন্য একজনের রুমাল কি করে ইউজ করতে পারে?
ইশারার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ইশারা মুচকি হেসে বলল,
“লাগবে না স্যার৷ আমি ওড়না দিয়ে মুছে নেব।”
ফারান তারপর নিজের মুখ মুছতে লাগল রুমাল দিয়ে। ইশারা বোকার মতো ওর দিকে চেয়ে আছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
চলবে…..!