বৃষ্টি তোমাকে দিলাম❤️পর্ব-১১

0
2164

বৃষ্টি তোমাকে দিলাম❤️পর্ব-১১
ফাবিহা নওশীন

ইশারা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলছে। কেমন ঘাবড়ে আছে। ফারানের মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে মাথা গরম করা যাবে না। ইশারাকে প্রথমে শান্ত করতে হবে। তারপর ঠান্ডা মাথায় ইশারার মন বুঝে কথা বলতে হবে।

ফারান ইশারাকে ছেড়ে দিয়ে প্রথমে নিজেকে ঠান্ডা করছে। কয়েক কদম হেঁটে ইশারার সামনে এসে দাঁড়াল। ওর কক্ষের বড় জানালা খুলল। হুর হুর করে বাতাস বইছে। তারপর ইশারাকে আসতে বলল। ইশারা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। দক্ষিণা বাতাস আছড়ে পড়ছে ওর মুখে। প্রাণভরে শ্বাস নিল। চোখের পানিটাও শুকিয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কান্নার রেষ কাটেনি পুরোপুরি।

ফারান কিছুক্ষণ ইশারাকে লক্ষ্য করল। কি অপরুপ লাগছে। এত সুন্দর একটা মেয়েকে কোন পুরুষ কষ্ট দিতে পারে? ফারান তো মাথায় তুলে রাখত। ফারান আপসোস করছে সোহেলের আগে যদি ওর সাথে দেখা হতো তাহলে ইশারার জীবনটা আজ অন্য রকম থাকতো। মাথায় তুলে রাখত, ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতো। কিন্তু এখন আর এসব ভেবে কি হবে?
ফারান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তবে ইশারা বিবাহিত কি-না এসবে ওর কিছু আসে যায় না। ইশারার সাদাকালো জীবনটা রাঙিয়ে দিবে এটাই এখন একমাত্র ভাবনা।

ফারান কন্ঠ যথাসম্ভব মোলায়েম করে বলল,
“ইশারা এখন তুমি কি চাইছো? কিসে খুশি থাকবে তুমি?”

ইশারা বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
“রাজশাহীতে আসার পর থেকে ভালো ছিলাম। খুব ভালো ছিলাম। আমার জীবনের সেরা মুহুর্তগুলো এখানেই কাটিয়েছি। আমি শুধু চাই সোহেল নামের মানুষটা আমার জীবন থেকে চিরতরে বিদায় নিক।”

“তার মানে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছো?”

“সেটা জানি না। যে বিয়ের মূল্য নেই তার বিচ্ছেদে আমার খুশির কিছু নেই। আমি শুধু চাই ও আমার জীবনে আর না আসুক।”

ফারান বুঝতে পারছে ইশারা সোহেল নামক আতংকের কাছ থেকে মুক্তি চাইছে। আরেকটু ভালো ভাবে বুঝার জন্য বলল,
“তোমার কি মনে হয় ও কেন এসেছে?”

“প্রতিশোধ নিতে। ওর অবাধ্য হওয়ার, দুঃসাহস দেখানোর জন্য প্রতিশোধ নিবে।”

“যদি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজের ভুল শুধরে সংসার করতে চায়? তাহলে তুমি কি বলবে?”

ইশারার কন্ঠস্বর শক্ত হয়ে এলো। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
“কখনও না। ওকে আমি চিনি। নিজেকে কখনো শুধরাবে না। আর শোধরালেও আমি যাব না।”

“কেন? কখনো ভালোবাসো নি?”

ইশারার সোজাসাপটা উত্তর,
“এক বিছানায় পাশাপাশি বছরের পর বছর থেকেও ভালোবাসা সৃষ্টি হয় না। বাধ্য হয়ে এক সাথে থাকে৷ সেখানে দু মাসে একটা হিংস্র জানোয়ারকে কাছে থেকে দেখে ভালোবাসা না ঘৃণা আর ভয় সৃষ্টি হয়। আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন।”

“হুম!”

ইশারা আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছে না। ফারান অনেক কিছুই বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। বারবার আঁটকে যাচ্ছে। ইশারা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। নয়তো ফারান কখন কোন আবদার করে বসে। তখন অস্বস্তি আর অপরাধবোধে ভুগবে। তাই চলে যাওয়ায় শ্রেয়।
ইশারা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে ফারান ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“চলে যাচ্ছো?”

“হ্যাঁ। আমার কাজ শেষ। আগামীকাল এসে কাগজপত্র নিয়ে যাব। আজ আসি।”

“চাকরি কেন ছাড়ছো?”

“এখানে কাজ করা সম্ভব না।”

“কারণটা কি আমি?”

“হ্যা আবার না।”

ফারান আর পারছে না নিজেকে, নিজের অনুভূতিকে আঁটকে রাখতে। ইশারার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সমস্ত আবেগ, আকুলতা এসে পড়ল কন্ঠে।
“ইশারা আমার সাথে নতুন করে জীবনটা শুরু করা যায় না?”

ইশারা চমকায়নি। সে জানতো ফারান এমন কিছুই বলার জন্য উশখুশ করছিল আর ইশারা প্রাণপণ চেষ্টা করছিল এড়িয়ে যাওয়ার। ইশারা ফারানের আকুলতা অগ্রাহ্য করতে পারছে না কিন্তু ওর পক্ষে এটা সম্ভব না। ও পারবে না।
ইশারা আমতা আমতা করে বলল,
“স্যার, আমি… আসলে আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি পারব না। এটা হয় না।”

ফারানের মনে যে আলোটা নিভু নিভু জ্বলছিল তা নিভে গেল।
“কেন সম্ভব না ইশারা? আমি কি তোমার হাসব্যান্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখি না?”

ইশারা কি বলবে, কিভাবে ফারানকে দূরে সরাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ব্যাপারটা ফারানের যোগ্যতা নয় ওর অযোগ্যতা।
“অবশ্যই রাখেন। বলতে পারেন আমি রাখি না।
আপনার যোগ্যতার প্রশ্ন কেন উঠছে? আমি আসলে চাইছি না।”

ইশারা দরজা খোলার জন্য হাত রাখলে ফারান দরজা ঘেঁষে দাঁড়ায়।
ওর চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। ইশারা ওর চোখের দিকে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিল।
“কেন চাইছো না? ওকে ভালোবাসো না, মুক্তি চাইছো। আর আমাকে তোমার অযোগ্য মনে হচ্ছে না তবে কারণটা কি?”

“আমি মুক্তি চাইছি ঠিক কিন্তু আপনার সাথে জীবন জড়াতে চাইছি না। একা বাঁচা যায়। আমি একাই বাঁচব।”

“একা বাঁচা যায় না। বাঁচার জন্য কিছু আঁকড়ে
ধরতে হয়। তোমারও কাউকে প্রয়োজন পড়বে। তবে সে কেন আমি হতে পারি না?”

ইশারা আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। উচ্চস্বরে বলল,
“কারণ আমি বিবাহিত। আমার একটা অতীত আছে। আমার একবার বিয়ে হয়েছে। কিছুদিন পরে ডিভোর্সের তকমা গায়ে লাগতে যাচ্ছে। আর আপনার? শুনুন স্যার, ইউ ডিজার্ভ বেটার। আপনি অন্য কাউকে নিয়ে সুখে থাকুন। আর আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন প্লিজ স্যার।”

ফারান ইশারার কথা শুনে আলতো হেসে বলল,
“আমাকে তোমার কি মনে হয়? আমি এতটাই ন্যারো মাইন্ডের? তোমার অতীত, তোমার বিয়ে, তোমার সংসার এ-সব নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে, তোমার পাশে থাকতে চাই। তোমাকে সে-সব কিছু দিতে চাই যা তুমি ডিজার্ভ করো। ইশারা আই রিয়েলি লাভ ইউ।”

ইশারার বড্ড লোভ হচ্ছে এই ভালোবাসা পাওয়ার কিন্তু শায় দিতে পারছে না। ও পারবে না ফারানের মতো ছেলেকে কষ্ট দিতে। নিজেকে ফারানের যোগ্য স্ত্রী করে তুলতে পারবে না। ওদের সম্পর্কের মাঝে অতীত হানা দিবে বারবার।

ইশারা কঠোর গলায় বলল,
“আমাকে যেতে দিন।”

ইশারার কঠোর গলা শুনে ফারান আরো কঠোর হয়ে উঠল। ইশারার হাত চেপে ধরল। ইশারা বড়বড় চোখ করে হাতের দিকে চেয়ে ফারানের দিকে তাকাল। ফারানের দৃষ্টিতে ভয়ংকর কিছু দেখতে পাচ্ছে।

ফারান অনুতাপহীন ভাবে বলল,
“তোমার হাত ধরতে আজ বিন্দুমাত্র দ্বিধা হচ্ছে না। কারণ এই হাতের অধিকার এখন শুধুমাত্র আমার। এই যে ধরেছি সারাজীবন ধরে রাখব। অপেক্ষা শুধু ডিভোর্সের।”

ইশারার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ফারান হাত না ছেড়েই অন্য হাত দিয়ে ইশারার চোখের পানি মুছতে গেলে ইশারা ঝারা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। ততক্ষণে ফারান দরজা থেকে কিছুটা দূরে সরে এসেছে। ইশারা দরজা খোলে বেরিয়ে যায়। ফারান আটকায়নি।
ইশারা চলে যাওয়ার পর রাগে গজগজ করতে কর‍তে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রুম জুড়ে কিছুক্ষণ পাইচারি করে চেয়ারে সজোরে লাথি মারে।

.

ইশারা অহনাকেও কিছু বলতে পারছে না। একা একাই নিঃশব্দে কাঁদছে। এক ঝড় যেতে না যেতে আরেক ঝড়। ফারান পাগলামি শুরু করেছে। ও জানে না কি করে ফারানকে আটকাবে। ওর ভয় হয় নতুন করে সম্পর্কে জড়াতে। যদি আবারও আঘাত পায়? ভেঙে পড়ে?
ইশারা কিছু ভাবতে পারছে না। ওর এখন একমাত্র চিন্তা ডিভোর্স নেওয়া। যদিও এতটা সহজ হবে না।

.

ফারানের যতই ইশারার বলা কথা আর শেষের আচরণ মনে পড়ছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। কাজে মন বসতে না। অথচ অফিসের কত কাজ বাকি ওর। রোজ রাত জেগে কাজ করে আজ পারছে না। বিছানার উপরে ল্যাপটপ ওপেন করা। টি টেবিলের উপর কফির ধোঁয়া উড়ছে। কিন্তু ফারান এখন নিজের মধ্যে নেই। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখল। কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে ছিল তারপর আচমকা ড্রেসিং টেবিলের উপর সজোরে আঘাত করে সব কিছু মেঝেতে ফেলে দিল। বিকট আওয়াজে ঘরময় জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। তারপর জোরে চিৎকার করল।

ফারানের বোন রান্নাঘরে সব গুছিয়ে রাখছিলেন। ফারানের রুম থেকে শব্দ পেয়ে দৌড়ে আসেন। দরজায় অনবরত ধাক্কা মারছে।
“ফারান, কি হয়েছে ভাই? দরজা খোল।”

ফারান জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। নিজেকে সামলে বলল,
“আপু আমি ঠিক আছি। তুমি যাও।”

ওর বোন বুঝতে পারছে কোনো কারণে রেগে গেছে। কিন্তু ও যতই রাগ করুক কিছু ভাঙচুর করে না। আজ কি হলো বুঝতে পারছে না। আর যত চেষ্টাই করুক ফারান দরজা খুলবে না। সকাল হওয়ার আগে কিছুই জানা সম্ভব না। তাই দাঁড়িয়ে থাকা একদম বৃথা। তিনি চলে গেলেন কিন্তু অস্থিরতা আর চিন্তা কাটছে না। ছোট থেকে মা’য়ের মতো আগলে রেখেছে। তাই অল্পতেই ভয় হয়।

ফারানের আঙুল দিয়ে রক্ত পড়ছে। প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে তবে হাতে নয় বুকে। কিছু মন থেকে চেয়েও হারিয়ে ফেলার ব্যথা।

ফারান সকালে স্বাভাবিক ভাবেই রেডি হয়ে বের হলো। ওর বোন নাস্তা দিল। ফারান নিজের মতো খাচ্ছে।
“ফারান, রাতে কি হয়েছিল?”

“কিছু না। কাজের প্রেসার ছিল তাই রাগ উঠে গিয়েছিল।”

“এর আগেও তো কাজের প্রেসার ছিল তখন তো এমন কিছু করিস নি। কাজ না অন্য ব্যাপার?”

ফারান মাথা নিচু করে দৃষ্টি লুকিয়ে বলল,
“অন্য কি ব্যাপার হবে? কাজের চাপ ছিল। অন্য কিছু না। তুমি টেনশন করো না।”

ফারানের বোনের কাছে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি তার ভাইকে চিনেন। ফারান সহজে নিজের ব্যথা প্রকাশ করে না। নিজেকে লুকিয়ে রাখে৷ কেননা ওর ধারণা মানুষ জানলে সহানুভূতি দেখাবে, ওকে দূর্বল ভাববে। যেটা ওর পছন্দ না।

.

কেটে গেছে কয়েক দিন। ইশারার দেখা নেই। ফারান অনেকবার কল করেছে তুলেনি কিংবা রিসিভ করলেও নানান বাহানা দেখায়। অহনা কল করেছিল ফারানকে। একজন চেনাজানা উকিল প্রয়োজন তাই ফারানের সাহায্য দরকার। ফারান ইশারার সাথে দেখা করার জন্য, একটু কথা বলার জন্য কল করে জানায় ওর কাগজপত্র, সরঞ্জাম যেন অফিস থেকে নিয়ে যায়। ইশারা তাই আজ বাসা থেকে বেরিয়েছে। এতগুলো দিন নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি রেখেছে।

ইশারা পারুলের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। পারুল কাজের ফাঁকে বাচ্চা আর নিজের কথা বলছিল। তখনই ওয়াচ ম্যান আর পিয়নের চিৎকার শুনতে পেল। সবার দৃষ্টি সেদিকে। কি হয়েছে দেখার অপেক্ষায়। ইশারাও সেদিকে তাকাল। সোহেল ওর অফিসে এসেছে।
ইশারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ভয়ার্ত চোখে চেয়ে আছে। অফিসে না জানি কি সিন ক্রিয়েট করার জন্য এসেছে।

সোহেল ইশারাকে দেখে ওর দিকে এগুচ্ছে।
ইশারা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। এখানে এতগুলো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে তাদের সামনে না ওকে ছোট করে, লজ্জিত করে। আজ ওর মান সম্মান হয়তো মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার প্লান করেছে সোহেল।

সোহেল ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
“তুমি আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছো? তুমি কি ভেবেছো তুমি এ-সব কার আশকারায় করছো কিছু জানি না?”

তারপর সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
“আমি ওর হাসব্যান্ড। ও আমাকে ছেড়ে চলে এসেছে। আপনারা জানেন ও এখানে এসে কি করছে?এখানে এসে যা খুশি করে বেড়াচ্ছে।”

সবার মুখে কলরব শুরু হয়ে গেল। ইশারা বিবাহিত!
সোহেল সবার বিস্ময়কর দৃষ্টি দেখে বলল,
“জানি এটাও বলেনি। কিন্তু এটাই সত্য যে আমি ওর হাসব্যান্ড। আমাকে রেখে এখানে পর পুরুষের সাথে যা খুশি করে বেড়াচ্ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না? এই মেয়েটাকে ভালো মনে করার কোনো কারণ নেই। এর আগেও আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কে ছিল। নিজের খুশি মতো চলতে দেইনি তাই চলে এসেছে। এখন ধরেছে আপনাদের বসকে। আর তার আশকারায় এখন আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলেছে।”

“এত খারাপ বউকে কে রাখতে চাইবে? আপনার স্ত্রী যখন এতই খারাপ চরিত্রের অধিকারী তবে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। একদম বেঁচে যাবেন।”
ফারানের কথা শুনে সবাই সেদিকে তাকাল। ইশারা অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।

ফারান সোহেলের সামনে এসে দাঁড়াল।
“আরে ভাই, আপনি কি চান? বউয়ের বদনাম করছেন অথচ বউ ডিভোর্স দিচ্ছে তাতে খুশি না। তাহলে কিসে খুশি হবেন?”

সোহেল রক্ত চক্ষু নিয়ে বলল,
“তার কৈফিয়ত আপনাকে দেব?”

ফারান চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“অবশ্যই দেবেন। কারণ আপনি এই বিষয়ে আমাকে জড়িয়েছেন।”

“আমি সব জানি।”

ফারান দু-হাত ভাজ করে বলল,
“কি জানেন?”

“আপনার আশকারায় এত বাড় বেড়েছে। আপনার সাহায্যেই তো ডিভোর্স নিতে চাইছে। আর এও জানি ওর সাথে আপনার কি সম্পর্ক।”

“কি সম্পর্ক?”

সবাই কাজ রেখে এই ঘটনা উপভোগ করছে। নানান জন নানান মন্তব্য করছে। সোহেল একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে যতটা জোরে সম্ভব বলল,
“আপনাদের দু’জনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক চলছে। ওকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া, এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া, ওর ফ্ল্যাটে যাওয়া আশা করেন। সব জানি আমি। সব খবর আমি পেয়েছি। আপনি আপনার এমপ্লয়িকে ইউজ করছেন, সুযোগ নিচ্ছেন আর সে ইউজ হচ্ছে টাকার লোভে। আর ওর তো এই স্বভাব আগে থেকেই।”

ইশারা ওর কথা শুনে শকড। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না। কাঁদতেও ভুলে গেছে। ফারানের কান জ্বলে যাচ্ছে এমন নোংরা কথা শুনে। ফারান রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে তখনই ইশারা সেখান থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেল।

ফারান ওর এভাবে ছুটে যাওয়া দেখে ভয় পেয়ে গেল। ব্যস্ততা দেখিয়ে সোহেলের দিকে আঙুল তুলে বলল,
“যা যা বলেছেন তার প্রমাণ আপনাকে দিতে হবে নয়তো ভুগতে হবে। ইশারা ছেড়ে দিলেও ফারান ছাড়বে না। পাই পাই করে হিসাব নিবে।”

তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“কাজ করুন সবাই। সত্যিটা শীঘ্রই আপনাদের সামনে আসবে।”

তারপর ওয়াচ ম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই পাগলকে এখুনি বের করুন। ওকে যেন আমার অফিসের আশেপাশে না দেখি। বাড়াবাড়ি করলে আবির পুলিশ ডাকো।”

ফারান দ্রুত ছুটে গেল। ফারান যাওয়ার সাথে সাথে ওর এসিস্ট্যান্ট সবাইকে কাজে মন দিতে বলল। তারপর সোহেলের দিকে তাকাতেই বাকা হেসে বেরিয়ে গেল।

ইশারা রাস্তা দিয়ে এলোমেলো হয়ে হাঁটছে। মানুষজন, গাড়ির হর্ন, গান বাজনা কিছুই ওর কান দিয়ে প্রবেশ করছে না। ও যেন অন্য জগতে আছে। হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছে জানে না। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে মোছার প্রয়োজন মনে করছে না। হটাৎই বিকট শব্দ। আকাশ কাঁপানো আত্মচিৎকার। চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। সারি সারি গাড়িগুলো থেমে আছে। লোকজন ছুটাছুটি করছে। পিচঢালা রাস্তা গাঢ় লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে। যেন রক্তের স্রোত বইছে। রক্ত মাখা হাতটা উঁচিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করার আগেই চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল।

চলবে…..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here