বৃষ্টি তোমাকে দিলাম❤️,১৪ শেষ পর্ব
ফাবিহা নওশীন
ইশারা গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা পরিধান করে ফুলে ফুলে সাজানো ঘরের গোলাপের পাপড়ি ছিটানো বিছানায় বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। পুরো ঘরে ক্যান্ডেলের আলো ছাড়া অন্য কোন আলো নেই। ফারানের মনে হচ্ছে কোনো পরী নেমে এসেছে ওর ঘরে। যার আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হচ্ছে। ফারান ধীরে ধীরে ইশারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফারান যতই ইশারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। ইশরার পুরনো স্মৃতি গুলো নাড়া দিয়ে উঠছে। যতই চাইছে সে-সব আর মনে করবে না কিন্তু মনে পড়ে যায় বারবার। প্রথম বিয়ে, প্রথম বাসর ভুলবে কি করে? না চাইতেই চোখের কোন চিকচিক করে উঠে পানিতে।
মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য নারী নির্যাতন মামলা, আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করা এবং একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত এটাক, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনায় সোহেলের পাঁচ বছরের জেল হয়েছে। পাশাপাশি স্ট্রং পয়েন্ট থাকায় ডিভোর্সটাও দ্রুত কার্যকর হয়। তার দু সপ্তাহ খানেক পরেই আজ ওদের বিয়ে হয়ে গেল। ফারান একদমই দেরি করতে চায়নি। তবুও বিভিন্ন কারণে দু সপ্তাহ কেটে যায়।
ফারান বিছানার পাশে এসে ইশারার দিকে দু-হাত বাড়িয়ে দিল। ইশারা ঘোমটার আড়ালে থাকায় ওকে দেখতে পাচ্ছে না। আর না বুঝতে পারছে ফারান এখন কোন এংগেলে আছে।
ফারান তাই মুচকি হেসে বলল,
“ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে আছো কেন? ঘোমটাটা তো তুলো। একটু আমাকেও দেখো।”
ইশারা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল। মুচকি হেসে ধীরে ধীরে ঘোমটা তুললো। ঘোমটা তুলে দেখে ফারান দুহাত বাড়িয়ে আছে। ইশারা কিছু বুঝতে না পেরে ফারানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়।
“একটু কষ্ট করে নামো।”
ইশারা ভারি লেহেঙ্গার দুপাশ হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসে। ফারান কিছুটা দূরে গিয়ে বলল,
“দাঁড়াও আগে তোমাকে ভালো করে দেখে নেই। বিয়ের সময় তো দেখতেই পারলাম না।”
ইশারা লজ্জা মিশ্রিত হেসে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফারান নিষ্পলক চোখে দেখছে ওকে। অনেকক্ষন কেটে যাবার পরেও ফারান কিছু বলছে না তাই মাথা তুলে ফারানের দিকে তাকাল। ফারানের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা পেয়ে গেল।
মাথা নিচু করে বলল,
“তোমার কি দেখা শেষ হবে না?”
ফারান দুষ্ট হেসে বলল,
“যেভাবে বউ সেজেছো তাতে যে কারো হুশ উড়ে যাবে। তোমাকে আমি আর সাজতেই দেব না। পরে দেখা যাবে হার্ট অ্যাটাক করে বসলাম।”
ইশারা লজ্জা পাচ্ছে। ফারান ওর হাত দুটো নিজের দু’হাতে নিয়ে ঠোঁট ছোয়ালো। ইশারার সারা শরীরে যেন কারেন্ট বয়ে গেল। ফারান হাত ছেড়ে ইশারার দিকে তাকাল। ফারান ইশারার দু’গালে হাত রাখতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে দেখে নিল। ফারান ইশারার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। ইশারা বন্ধ চোখ খুলতেই ফারান স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“আজ আমি শুনতে চাই তোমার কথা, তোমার হৃদয়ের কথা, তোমার ভালোলাগা, ভালোবাসা, তোমার স্বপ্নের কথা সব জানতে চাই। তোমাকে নতুন করে জানতে চাই, বুঝতে চাই। এতদিন এমপ্লয়ি হিসেবে, ভালোবাসার মানুষ হিসেবে জেনেছি, আজ প্রিয়তমা স্ত্রীকে জানতে চাই। আজ তুমি বলবে আর আমি শুনব।”
ইশারার চোখ ছলছল করছে। এমনই একটা বাসর চেয়েছিল, সে ওকে শুনবে, জানতে চাইবে, বুঝতে চাইবে।
ইশারার চোখে পানি টের পেয়ে ফারান ফিসফিস করে বলল,
“উহু, ওই চোখে পানি নয়, আমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখতে চাই। তোমার ওই চোখের তারায় সব সময় খুশির ঝিলিক দেখতে চাই। কেউ যদি তোমাকে কষ্ট দেয়, তোমার এই চোখে পানি আনে তবে তার মোকাবিলা আমার সঙ্গে হবে।”
ইশারার নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ফারানের মত একজন স্বামী পেয়েছে।
ফারান দু-হাত প্রসারিত করে ইশারাকে জড়িয়ে ধরল। ইশারা ফারানের বুকে নিজের মাথা রাখে।দু’হাতে ফারানকে জড়িয়ে ধরে। পৃথিবীর সব সুখ যেন ইশারা পেয়ে গেছে।
হটাৎ করে ইশারার মোবাইলটা বেজে উঠল। ফারান আর ইশারা দুজনেই চমকে উঠে।
ফারান ইশারাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“এখন আবার কে কল করল?”
ইশারাও ভেবে পাচ্ছে না কে কল করল।
“মনে হয় অহনা, ও হয়তো মজা করছে।”
কিন্তু কল কেটে যাওয়ার পর আবারো বেজে উঠল। ফারান সেটা দেখে বলল,
“অন্য কেউ হবে হয়তো। তুমি রিসিভ করে নেও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
ইশারা কল রিসিভ করে কথা বলে নিল। ফারান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে ইশারা চুপচাপ বসে আছে। ওর চোখ মুখ কেমন অন্য রকম লাগছে। থুম মেরে আছে। গভীর ভাবে কিছু ভাবছে।
ফারান ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ইশারা কি হয়েছে? কে কল করেছে?”
ইশারা কেমন চমকে উঠে। তারপর আমতা আমতা করে বলল,
“কেউ না এমনি, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
ইশারা ব্যস্ততা দেখিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালে ফারান ওর হাত ধরে ফেলে। ইশারা কাচুমাচু করে ফারানের দিকে তাকাল।
“কে ফোন করেছে? কি এমন বলল যে তোমার চেহারার রং পালটে গেল?”
ইশারা বলতে চাইছে না। কিন্তু ফারানের জোড়াজুড়িতে বলল,
“সোহেল জামিনে আজ ছাড়া পেয়েছে।”
ফারান অন্তত আজকের দিনে এমন একটা নিউজ আশা করেনি। ফারান বলল,
“তাতে আমাদের কি? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”
ইশারা ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফারান যতই বলুক ও নিজেও টেনশড।
ইশারা বের হয়েই ফারানের মুখ দেখে বুঝতে পারে ও কিছু ভাবছে। ইশারা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর কাছে আসে।
ইশারা ফারানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ও বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। ফারান বুঝতে পারছে ও কাঁদছে। কিন্তু কিছু বলছে না।
ইশারার ভয় লাগছে। সোহেল অনেকগুলো টাকা খরচ করে জেল থেকে বের হয়েছে, ওর চাকরিটাও চলে গেছে। ও যে এত সহজে ইশারাকে ছাড়বে না তা জানে। ওর জন্য ফারান আর ফারানের পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। ওর জন্য ফারানও ঝামেলায় পড়বে। ফারান ওর জন্য এতকিছু করল আর ও ওকে সুখের মুখ দেখাতে পারবে না। ইশারা এ-সব ভেবেই কাঁদছে। ফারানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ওর বুকে মাথা গুজল।
“ইশারা শান্ত হও। তুমি কান্নাকাটি থামিয়ে নিশ্চিন্তমনে ঘুমাও। আমি আছি তো। আমি থাকতে তোমার কিসের ভয়? কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।”
ফারান ইশারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আর মনে মনে বলছে,
“আজকের দিনে ইশারার চোখ থেকে পানি ঝড়লো, এত অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে সময় পাড় করছে, সোহেল তোকে এর মূল্য দিতে হবে। তুই যদি আর কখনো ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করিস তাহলে আমার অন্য রুপ দেখবি। ভয়ানক খেসারত দিতে হবে।”
.
ইশারা ঠিক করেছে ও আর জব করবে না। সংসার সামলাবে। সবাই অনেক করে বলেছে কিন্তু ওর একই কথা সংসারে মন দিবে। নিজের হাতে সব গোছাবে। আসল ব্যাপার হচ্ছে ও সোহেলের নাগালের বাইরে থাকতে চায়। ও চায়না ওর জন্য কোনো সিন ক্রিয়েট হোক। ও চায় যারা ওর জন্য এত কিছু করল তাদের জন্য কিছু করতে। ফারান আর ওর পরিবারকে খুশী রাখতে।
ফারানের আজ দুপুরে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। বাসায় বসে বসে যার প্রিপারেশন নিচ্ছে। মাথাটা ভার হয়ে গেছে তাই উঠে এল ইশারার কাছে এক কাপ কফি চাইবে।
ইশারা কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে সবজি কাটছে। ফারানের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এল। ফারান পা টিপে টিপে ইশারার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর পেছনে থেকে আচমকা জড়িয়ে ধরে।
ইশারা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে। তারপর ফারানকে দেখে রাগী গলায় বলল,
“এগুলো কেমন মজা? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
ফারান মিটমিট করে হাসছে। ইশারাকে দু’হাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। ইশারা ছটফট করতে করতে বলল,
“কি হচ্ছে এ-সব? আরে কেউ দেখবে। এটা তোমার বেডরুম নয়।”
“তাতে কি? বউ তো আমার। বেডরুম আর কিচেনে কি আসে যায়?”
“ফারান, ছাড়। পরে তোমার জন্য আমাকে লজ্জায় পড়তে হবে।”
“আরে বাসায় কেউ নেই। আপু কলেজে, তন্ময় স্কুলে, বাবা ঘরে ঘুমাচ্ছে। এখানে শুধু তুমি আর আমি।”
ফারান ইশারার কাঁধে ঠোঁট ছোয়ালো। ইশারা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“তোমার না মিটিং আছে? তুমি না তার প্রেজেন্টেশন তৈরি করছিলে?”
“হ্যাঁ, মাথা ধরে আছে। কফি হবে? সেটাই বলতে এসেছি।”
ইশারা চিন্তিত হয়ে বলল,
“আগে বলবা না? তুমি গিয়ে বসো আমি কফি নিয়ে আসছি।”
ফারান চলে যেতেই ইশারা ওর জন্য কফি বানাতে শুরু করে।
ফারান কফি শেষ করতেই ইশারা ওর মাথা টিপে দিচ্ছে।
“তুমি বেশি প্রেসার নিচ্ছো। এত প্রেশার নিও না।”
“ইশশ, আমার বউটা কত কেয়ারিং। সামান্য মাথা ব্যথা হচ্ছে আর তিনি মাথা টিপতে শুরু করেছে। আরে ছাড়ো তো, আমি ঠিক আছি। শুধু শুধু টেনশন করছো।”
ফারান জোর করে ইশারার হাত সরিয়ে নিল। ইশারা ফারানের চোখের দিকে চেয়ে বলল,
“তুমি আমার জান, তোমার কষ্টে আমি কষ্ট পাব না? আমি টেনশন করব না?”
ফারান মুচকি হাসল।
ইশারা রান্নাবান্না শেষ করে ফারানকে অফিসের জন্য তৈরি করে দিচ্ছে। কলার ঠিক করে টাই বেঁধে দিল। ওর জন্য স্যুট আনতে গেল। ফারানের মোবাইল বাজছে। ফারান মোবাইল হাতে নিতেই হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেখতে পেল। ও মেসেজ ওপেন করতেই হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। ইশারা স্যুট হাতে নিয়ে ওর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। কি এমন হলো যে মোবাইল পড়ে গেল?
ইশারা মোবাইল তুলে হাতে নেয়। ফারানের দিকে একবার চেয়ে মোবাইলের স্কিনে চোখ রাখে। ইশারা চিৎকার করে উঠে হাত থেকে মোবাইল ফেলে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।
ফারানের হুশ হয়। ও ইশারাকে ডাকতে ডাকতে ওর পেছনে যায়। ইশারা অন্য ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফারান বারবার দরজা ধাক্কাচ্ছে। ইশারা ভেতরে থেকে বলে,
“আমাকে একা থাকতে দেও।”
ফারান আর ওকে বিরক্ত করতে চায় না। অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভাবছে,
“আমার এত চেষ্টা সব বিফলে গেল। আমি এত লড়াই করেও ওকে সেফ রাখতে পারছি না। কম তো চেষ্টা করলাম না। কিন্তু বারবার ওর অতীত এসে ধরা দেয়। আমি হেরে গেলাম। বড্ড ক্লান্ত আমি।”
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল।
“যে পুরুষ নিজের বউয়ের সাথে ইন্টিমেট হওয়ার ভিডিও অন্যকে দেখাতে পারে সে পুরুষ নয়। এখন নাহয় ইশারা ওর স্ত্রী নয়, কোনো এক সময় তো ছিল।”
এর আগেও সোহেল বারবার কল করে আজেবাজে কথা বলেছে, সামনাসামনি অনেক কিছু করেছে। অনেক ঝামেলা করার চেষ্টা করেছে। ফারান সব হ্যান্ডেল করেছে একাই। ইশারাকে জানতে দেয়নি কিছুই।
রাতে বাড়িতে ফিরে ইশারার দেখা নেই। নানান বাহানায় ওর কাছ থেকে, ওর ঘর থেকে দূরে থাকছে। মেয়েটা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। ইশারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ফারানের পায়ের শব্দ পেয়ে দ্রুত চোখ মুছল। ফারান ওকে ধরতে গেলে ইশারা সরে যায়।
ফারান বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে। ইশারা চোখ মুছে বলল,
“ছুবে না আমায়। এভাবে বাঁচতে পারব না। একটা ডিসিশন নেওয়া জরুরী।”
ফারান জোর করে ইশারাকে জড়িয়ে ধরল।
“ইশারা এ-সব বলো না। এখনে আমার দোষ কোথায়? আমাকে কিসের শাস্তি দিচ্ছো? তুমি না কথা দিয়েছিলে আমাকে কখনও কষ্ট দেবে না?”
“আমি কি করব? সোহেল আমাদের ভালো থাকতে দেবে না। তোমার খারাপ লাগছে না? তোমার কষ্ট হচ্ছে না”
“নাহ, কারণ আমি জানি আমার আগে তুমি অন্যের বউ ছিলে। আমি তো তোমার অতীত মেনেই তোমাকে ভালোবেসেছি। বিয়ে করেছি। আমি পুলিশ কমপ্লেইন করব। তুমি চিন্তা করো না।”
সাতদিন পর~
শীতকালে সারাদিন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে। মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ফারান আর ইশারা কম্বলের ভেতরে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। ফারান টিভিতে খেলা দেখছে। ইশারা মোবাইলে ব্যস্ত। হটাৎ একটা পিকচার দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল।
ভয় পেয়ে ফারানকে খিচে ধরে। ফারান ওকে এভাবে দেখে হকচকিয়ে উঠে। ওর হাত থেকে মোবাইল নেয় ব্যাপারটা বুঝার জন্য। ওর এক রিলেটিভ একটা পিকচার পাঠিয়েছে।
সোহেলের পিকচার। ওর বলতে ওর ডেড বডির। সারা শরীর রক্তাক্ত। চোখে মুখে ছুরির আঘাত। চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ দেখলে চিনতে পারবে না। এতটা বিকৃত ধারণ করেছে যে কেউ ভয় পেয়ে যবে। চোখ উলটে আছে, জিভ বের হয়ে আছে। হাত-পা সারা শরীরে ক্ষত, সব ক্ষতই ছুরি কিংবা ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে মনের খায়েশ মিটিয়ে করা হয়েছে। হাতের রগ কাটা হয়েছে বুঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। কারণ সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। বুকের দিকটা ভয়ানক ভাবে কেটেছে। মনে হচ্ছে হৃদপিণ্ড বের করে নিয়েছে। পায়ের রগও কাটা। কতটা নির্মম মৃত্যু। ফারান চোখ সরিয়ে নিল। ইশারা কাঁপছে। ফারান নিজেও চিনতে পারতো না যদি না সেখানে লিখা দেখত এটা সোহেল।
ফারান ইশারাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“মনে হচ্ছে ভয়ংকর কারো সঙ্গে পাঙ্গা নিয়েছিল তাই ওর এই হাল করেছে। জানি না কার ক্ষতি করতে গিয়েছিল। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। ও ওর প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে। তুমি ভয় পেও না।”
ফারান বাইরের দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙে পড়ছে। তারপর মুচকি হেসে মনে মনে বলল,
“ইশারার ক্ষতির কথা না ভাবলেই পারতি, হয়তো জীবনটা অকালে হারাতে হতো না।”
হটাৎই ঝুম বৃষ্টি থেমে গেল। তারপর শুরু হলো হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। রাত বাড়ছে, বৃষ্টির সুগন্ধি ঘ্রাণ বাতাসে ভাসছে।
সমাপ্ত