#বৃষ্টি থামার আগে
#সূচনা_পর্ব
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
১.
নিজের বাগদত্তাকে ভার্সিটির স্যারের রূপে দেখে কিছু মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় মিরা। চোখ দুটো কচলে সামনে তাকালো,নাহ!ও স্বপ্ন দেখছে না পুরোটাই বাস্তব। মাথায় একটা ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাদ স্যার আর ওর বাগদত্তা কিভাবে সম্ভব তা। মিরার ভাবনাচ্ছেদ ঘটে যখন ওর বোন ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”আপু কোথায় হারিয়ে গেলি?ভাইয়া তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছে!”
মিরা নতজানু হয়ে রাদের উদ্দেশ্যে বলে,”জ্বী কিছু বলছিলেন?”
রাদ কিছুটা ইতস্ততবোধ করতে লাগলো,মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বলে,”না।”
মিরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। রাদের সাথে কথা বলতে মিরা আর ওর বোন মিহি এসেছিলো কিন্তু জানতো না ওর বাগদত্তা যে ওর ভার্সিটির স্যার। রাদের সাথে টুকটাক কথা বলে মিরা আর মিহি বেরিয়ে আসে। মিরা যেনো একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে তার কাছে। মিরার বিস্ফোরিত চাহনি মিহি খেয়াল করলো,বলল,”আপু?কি হয়েছে তোর?”
মিহি জানে না যে রাদ মিরার ভার্সিটির টিচার। মিরা নিজের ঘোর কাটিয়ে মিহিরকে বলল,”কি হবে আমার আবার?”
মিহি পালটা জবাব দিলো না ওর বুঝতে পেরেছে মিরা কিছু একটা নিয়ে ভিষণ চিন্তিত। বাসায় এসে মিরা কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে। ওর এইরকম ব্যবহারে সবাই অনেক অবাক হয়েছে। মিরা নিজের রুমে এসে ব্যাগ টেবিলের উপর রেখে ধপ করে বিছানায় বসে পরে। হাতের মুঠোয় ফোন নিয়ে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নেহাকে কল দেয়। নেহা কল ধরতেই চিন্তিত স্বরে মিরা বলে,”আজ কি হয়েছে জানিস?”
নেহা অপরপাশ থেকে নাসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,”তোর সাথে তো আমি যাই নি তাহলে কি করে জানবো!”
মিরা কপাল ভাজ করে বলে,”মজা করিস না।”
নেহা পালটা জবাবে বলে,”না আমি মজা করি নি,এইবার বল কি হয়েছে।”
মিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজকে ঘটে যাওয়া সব কিছু নেহাকে খুলে বলে। সব শুনে নেহা ভিষণ রকম চমকায়,অবাক হওয়ার সুরে বলে,”তাই বলে তুই এতো চিন্তিত?এটা চিন্তা হওয়ার কোনো কারণ নাকি?”
বিরক্তিতে মিরার কপাল কুঁচকে যায়,নেহাকে কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়। মিরাকে ডাকতে প্রকট হোন মিরার মা, তিনি মিরাকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে অবাক হোন,মিরার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”কিছু নিয়ে কি চিন্তিত তুই মা?”
মিরা সরু দৃষ্টিতে নিজের মার দিকে তাকিয়ে বলে,”না।”
মিরার মা মিরার পাশে বসে বলে,”দেখ আমি তোর মা তাই বুঝতে পারি তুই চিন্তিত নাকি না,এখন চট জলদি বলে ফেল কি নিয়ে চিন্তিত?”
মিরা প্রতুত্তর দিলো না দেখে মিরার মা মিরার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”তুই বিয়ে নিয়ে কি কোনোভাবে চিন্তিত?”
মিরা মুখ ফুটে কিছু বলতে চাচ্ছে না। মিরার মা এখনো বুঝতে পারছেন না মেয়ে এতো চিন্তিত কেনো?কিছু তো বলছেও না। উনি কথা ঘুরিয়ে কিছুটা হেসে বলেন,”এইসব একটু আধটু হয়’ই যখন তোর বাবার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো তখন আমিও সারাদিন চিন্তিত থাকতাম। দেখ রাদ ছেলেটা অনেক ভালো তোকে সুখি রাখবে ইন শা আল্লাহ।”
মিরা এইবারো জবাব দিলো না। মিরার মা মেয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে বলেন,”বাহির থেকে এসেছিস কিছু খেয়েছিস কি?তোর পছন্দের খাবার বানিয়েছি খাবি?”
মিরা এইবার চট জলদি উত্তর দিলো,”হু।”
মিরার মা খুশি হয়ে দ্রুত মেয়ের জন্য খাবার বেড়ে আনেন। ততক্ষনে মিরা ফ্রেশ হয়ে এসে বসে, মিরার মা মিথিলা মিরার সামনে প্লেট ভর্তি খাবার রেখে বলেন,”খেয়ে নে।”
মিরা আদুরী গলায় বলল,”খাইয়ে দিবে আমাকে?অনেকদিন ধরে তোমার হাতে কিছু খাই না।”
মেয়ের আবদার শুনে মিথিলা খাতুন হেসে ফেললেন। হাত ধুইয়ে হেসে এক লোকমা খাবার মেয়ের মুখের সামনে ধরলেন,মিরা বিনা শব্দে খাবার মুখে পুরে নিলো। খাবার শেষ করে মিথিলা খাতুন প্লেট নিয়ে চলে গেলেন।
মিহি এসে মিরার পাশে বসে অভিমানী গলায় বলল,”বাহরে মা তোকে খাইয়ে দিলো আর আমি বললেই আমাকে বলে তোর হাত নেই?নিজের হাতে খা। নট ফেয়ার!”
মিহির কথায় মিরা উচ্চস্বরে হেসে ফেলে,মিহির গাল টেনে বলে,”আরে জানিস কি?আম্মু-আব্বু তোকে কুড়িয়ে পেয়েছে তাই তো তোকে আদর করে না চিন্তা করিস না আমি তো তোকে অনেক আদর করি ভালোবাসি। তুই ভালোবাসিস আমাকে?তোর এই বোনকে?”
মিহি মুখ গোমড়া করে বলে,”আই লাভ ইউ ভেরি মাচ!”
মিরা ভ্রকুচকে বলে,”মুখ কালো করে আছিস কেনো?”
মিহি মিরাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি চলে গেলে আমি কার সাথে ঝগড়া করবো আপু?আমি তোমাকে খুব মিস করবো। প্রতি সপ্তাহে একবার করে বাসায় এসো কিন্তু!”
মিহির কথায় মিরার মুখও কালো হয়ে যায়,চোখের কোণে জলের দেখা দেয়। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে বলে,”তোকেও আমি খুব মিস করবো বোন আমার!”
এর মাঝেই মিহি আর মিরার বাবা এসে দরজায় কড়া নেড়ে বলেন,”বোনদের ইমোশনাল সিনে আমি আবার কাবাবের হাড্ডি হলাম না তো।”
নিজেদের বাবার কন্ঠস্বর পেয়ে দুইজন’ই হেসে দেয়। ফয়েজ সাহেব এগিয়ে এসে দুই মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন,”এখন’ই এতো ইমোশনাল হলে হবে?বিয়েরদিন তাহলে বিনা চোখের পানি ছাড়া শশুড় বাড়ি যেতে হবে।”
তিনজনেই পুনরায় হাসলো। ফয়েজ সাহেব মিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”সেইদিন’ই তো মেয়েটার জন্মহলো আর আজ চোখের পলকেই কিভাবে বিয়ে হয়ে যাবে মেয়েটার। সুখি হো মা দোয়া করি সবসময়।”
মিরা এক গাল মলিন হাসলো। কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসছে কোনোমতে নিজেকে সংযত রেখেছে। ফয়েজ সাহেব নিজের চোখের পানি মুছে বলে,”ইমোশনাল হওয়া চলবে না এখন কিছুতেই!তা নাহলে মেয়ে বিদায়ের সময় কাঁদতে পারবো না।”
মিহির অবস্থা প্রায় কাঁদো কাঁদো একটু হলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবে ফুপাতে থাকে। মিরা মিহির গালে হাত দিয়ে বলে,”আরে পাগল নাকি?আমার যেতে আরো কিছুদিন আছে চিন্তা করিস এই কয়েকদিনে তোর সাথে ঝগড়া করে যাবো।”
বাবা-মেয়েদের দেখে মুখ টিপে হেসে উঠলেন মিথিলা। মৃদু শব্দে সবাই তাকালো,মিথিলা এগিয়ে হেসে বললেন,”তোমাদের ইমোশনাল সিন শেষ হলে একটা কথা বলতে পারি?”
ফয়েজ সাহেব আড়চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,”বলো।”
মিথিলা খাতুন সবার দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে বলেন,”আগামীকাল বাড়িতে মেহমান আসবে অনেক কাজ আছে নিশ্বাস ফেলারও মনে হয়না সময় হবে তাই সবাই কিন্তু কাজে লেগে পড়বে।”
কথাটা বলে ফয়েজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,”আর শুনো তুমি বাজারে যাবে,আমি লিস্ট দিয়ে দিবো সেই অনুযায়ী সব কিছু আনবে।”
ফয়েজ সাহেব মাথা নাড়ালেন এছাড়া কি’ই বা করবেন। মিহি বাদে উনারা দুইজনে চলে গেলেন। মিহি মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,”বুঝলি আপু?তুই কিন্তু কোনো কাজ করবি না বসে থাকবি।”
মিরা হেসে মাথা নাড়ালো। মিহির সাথে কিছুক্ষন গল্প করলো,মিহি চলে যেতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কয়েকদিন পর অন্যের বাড়ি চলে যাবে শুনেছে মেয়েরা নিজের বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়ি গেলে মা-বাবা পর হয়ে যায়,আসলেই কি তার মা-বাবা পর হয়ে যাবে?নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,”দুনিয়া উল্টিয়ে গেলেও মা-বাবা কখনো পর হয়না।”
মিরা আরো ভাবলো ওর শশুড় শাশুড়ি কেমন হবে?রাদ’ই বা কেমন হবে?আরো অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম থেকে উঠলো মিহির ডাকে……..
#চলবে