বৃষ্টি শেষে,পর্ব – ৪,৫,৬
আমিরাহ্ রিমঝিম
পর্ব – ৪
” নাফিদ, তুই লুঙ্গি পরেছিস!”
ঘরে ঢুকে নাফিসার প্রথম কথা ছিলো এটাই। বিস্মিত নাফিসাকে আরো অবাক করে দিয়ে নাফিদ হাসিমুখেই জবাব দিলো,
” হ্যাঁ পরেছি। তো কি হয়েছে?”
বিস্ময়ে নাফিসার চেহারা তখন দেখার মতো। রাইসা আর বাকি বোনদের দিকে তাকিয়ে বললো, ” অষ্টমাশ্চর্য ঘটে গেলো ভাই আজকে!” উপস্থিত সবাই নাফিসার সাথে একমত পোষণ করলো।
এদিকে রাইসা, সামিয়া, রিতু, যুথি ওদের কারো হাসি থামছেই না। দুপুরে নাফিদ গাড়ি পার্ক করে ফেরার পথে আছাড় খেয়ে গায়ে কাদা মেখে বাসায় আসার পর চারজন একদফা হেসে পেট ব্যাথা করেছে। এখন এই বিকালবেলা আবার আরেকদফা হাসি। হাসি জিনিসটা সংক্রামক। রাকিব ওদের হাসি দেখে নিজেও হো হো করে হাসতে হাসতে বললো, ” এই আপু এই তোমরা হাসছো কেন?”
রাস্তা অনেকক্ষণ বন্ধ থাকায় আর বৃষ্টির কারণে রাইসার চাচাদের আসতে আসতে বিকাল হয়ে গিয়েছে। নাফিদ গিয়েছিলো এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে, সেখান থেকে সরাসরিই এসেছে রাইসাদের বাসায়। পিছল খেয়ে গায়ে কাদা মাখার পর উপায় না পেয়ে চাচার লুঙ্গি পরতে হয়েছে তাকে, কারণ ওর জামাকাপড় সব নাফিসারা আসার সময় সাথে নিয়ে আসার কথা ছিলো। এখন বাবা-মা, নাফিসা, দাদা-দাদি সবাই চলে আসার সাথে সাথে নিজের জামাকাপড়ও চলে আসায় স্বস্তিবোধ করলো নাফিদ।
দাদার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলো রাইসা। দাদার খুবই আদরের সে। মাঝে মাঝে ওর আফসোস হয় দাদা-দাদি কেন ওদের সাথে না থেকে ওর চাচার সাথে থাকেন। কিন্তু এই কথা কাউকে বলতে পারেনা রাইসা।
মায়ের ডাক শুনে উঠে যাওয়ার পরেও ওর দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকেন রাইসার দাদা। তার দুই ছেলে আর তিন মেয়ের ঘরের নাতনিদের মধ্যে সবার ছোট এই নাতনি। বাবা মায়ের বিয়ের সাত বছর পর ঘরে এসেছিলো রাইসা, তাই ওর প্রতি সবারই অনেক বেশি আদর ছিলো। রাইসা হওয়ার পর নিজের ছোটছেলের আনন্দে কেদে ফেলার দৃশ্যটা এখনো চোখে ভাসে উনার, এইজন্যই হয়তো স্নেহটাও বেশি। আর রাইসাও কি ভালো মেয়ে একটা, দেখলেই ভালো লাগে।
মায়ের কাছে গিয়ে রাহিবকে কোলে নিয়ে বসে আছে রাইসা। রাইসার মা গিয়েছেন খেতে। কাছে অবশ্য রাইসার নানি আছেন, কিন্তু রাহিবকে নানির কাছে না দিয়ে নিজের কোলেই রেখেছে রাইসা। রাহিবও শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। রাইসা রাহিবকে কোলে নিয়ে রাখলেও দৃষ্টি রুমের বাইরে, কে কি করছে সেটা দেখায় ব্যস্ত। নানা আর দাদা গল্প করছেন, সেখানে মামারাও আছে। বাবা আর চাচা সম্ভবত আগামীকালের অনুষ্ঠান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় আলোচনা করছেন, রাইসার ঘর থেকে মাঝে মাঝে বোনদের কথার আওয়াজ আসছে, আর ভাইয়েরা কেউ বাসায়, কেউ বাইরে। এমন সময় হটাৎ ঘরের সামনে দিয়ে নাফিদ কোনদিকে গেলো। নাফিদ নিজের এক সেট পোশাক পরে নিয়েছে। যতক্ষণ দেখা গেলো ততক্ষণ নাফিদকেই দেখতে থাকলো রাইসা।
কিছুক্ষণ পর রাহিবকে নানির কাছে দিয়ে ঘর থেকে বের হলো রাইসা। পাশের ঘর থেকে নাফিদের গলার মৃদু আওয়াজ আসছে। রাইসা একবার উকি দিয়ে দেখতে পেলো নাফিদ ফোনে কথা বলছে। তারপর নিজের ঘরে চলে গেলো।
রাইসার দাদার পরিবারে সবার বন্ধন বেশ মজবুত। যেকারো যেকোন আনন্দে, দুঃখে সবাই সঙ্গী হয়। একজনকে রেখেও তাদের উৎসব পূর্ণতা পায় না। এইজন্যই সব আয়োজনে ঘর ভরা মানুষ হয় তাদের।
বেশ খানিকক্ষণ পর যখন রাইসা আবার রাহিবকে দেখতে এলো তখনো খেয়াল করলো নাফিদ ফোনে কথা বলছে। এতো কার সাথে কথা বলে নাফিদ ভাইয়া?তাও আবার এতো সুন্দর করে, এতো হেসে হেসে?
( চলবে ইনশাআল্লাহ )
বৃষ্টি শেষে
আমিরাহ্ রিমঝিম
পর্ব – ৫
” হেহে, রাহিব বাবুকে টাক্কু বেল বানিয়ে দিয়েছে”
” রাকিব…”
ডাক শুনে রাকিব হাসিমুখেই নাফিদের দিকে তাকালো।
” কি?”
” তোমাকেও টাক্কু করে দেই?”
” না! ”
” না কেন? রাহিবকে টাক্কু করে দিসে তাহলে এখন তোমাকে টাক্কু করে দিতে হবে না?”
” রাহিবের তো আজকে আকিকা তাই ওকে টাক্কু করে দিসে। আমার তো আজকে আকিকা না ”
” তাহলে চলো তোমারও আকিকা দেই, তারপর তোমাকেও টাক্কু করে দেই।”
“না, আমার আকিকা হয়ে গেছে”
” তাতে কি হয়েছে। আরেকবার আকিকা দিয়ে টাক্কু করে দেই তোমাকে”
এবার রাকিব বেশ রেগে গিয়ে বললো
” এই, এখন কিন্তু তোমাকেই টাক্কু করে দিবো ”
” আচ্ছা দিও। আগে আমি তোমাকে টাক্কু বানিয়ে দেই।”
” এই চুপ করো”
” শোনো রাকিব, চাচি কালকে কি বলছিলো জানো? বলছিলো যে রাকিবকেও টাক্কু বানিয়ে দিতে হবে।”
রাইসার আম্মু সত্যিই এটা বলেছিলেন নাফিদের মা কে। রাকিবের চুল গুলো বেশ বড় হয়ে গিয়েছে, বাচ্চা মানুষ, তাই ভাবছিলেন ওকে টাক্কু বানিয়ে দিবেন।
নাফিদের কথা শুনে রাকিব ওর দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।
” না, আম্মু আমাকে টাক্কু বানাবে না”
” হ্যাঁ সত্যিই। তারপর তুমিও রাহিব বাবুর মতো টাক্কু বাবু হয়ে যাবে”
রাকিবের চেহারা এতক্ষণ কাঁদো কাঁদো ছিলো, এবার কাদঁতে কাদঁতে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। রাইসা আর ওর দলবল এতোক্ষণ সবকিছু দেখে মিটমিটিয়ে হাসছিলো। ওদের দাদিও ছিলেন সেখানে, বিরক্ত হয়ে বললেন ” শুধু শুধু পোলাটারে কান্দাইলি, এখন যা এরে হাত কর।”
দুই সেকেন্ড পরেই নাফিসা ঘরে ঢুকলো, সাথে রাকিব।
” নাফিদ, তুই রাকিবকে কি বলেছিস?” নাফিসার কন্ঠে কপট রাগ।
নাফিদ উত্তর দেয়ার আগেই রাকিব জবাব দিয়ে দিলো
” বলেছে…. বলেছে যে আমাকে নাকি টাক্কু করে দিবে…”
বলতে বলতে রাকিব আবারো কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতেই আবার বললো
” আমি টাক্কু করবো না………. টাক্কু করলে আমার মাথা পটেটোর মতো হয়ে যাবে….”
নাফিদ হাসি চাপিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কিসের মতো হয়ে যাবে?”
নাফিসার এক ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো নাফিদ। এদিকে এতো শোরগোলের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় রাহিবও উঠে কান্না জুড়ে দিলো। দাদি তাড়াতাড়ি রাহিবকে নিয়ে ঘরের বাইরে যেতে যেতে বললেন, ” বেআক্কেল পোলাপান সব!”
আকিকার অনুষ্ঠানে এতো আয়োজনের শুরু হয়েছিলো রাইসাকে দিয়েই। রাইসার আগে দাদার নাতি-নাতনিদের কারো আকিকাই এতো আয়োজন করে করা হয়নি। রাহিবের আকিকাও বেশ বড় করেই করা হচ্ছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে। বড়রা সবকিছুর দেখভাল করছে, রাইসার ভাইয়েরা সব দৌড়াদৌড়ি করে কাজ করছে,বোনেরা সব বাসার ভেতরেই ছুটাছুটি করে কাজ সামলাচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর ভিতর কোথাও নাফিদ নেই। রাইসা তার সমবয়সী বোনগুলোর সাথে হৈ চৈ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সাথে তিন্নিও আছে। দিশা এখনো ফেরেনি গ্রাম থেকে।রাইসার কাজিনদের সাথে ভালোই সখ্যতা হয়ে গেছে তিন্নির। মোটামুটি সবার সাথে পরিচয় করানোও হয়ে গেছে।
সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখা গেলো নাফিদ রাকিবকে নিয়ে উপরে উঠছে। রাকিবের কান্না থেমে গেছে, হাতে দুইটা চকলেটের প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। নাফিদের সাথে একবার চোখাচোখি হয়ে গেলো রাইসার। সবাইকে দেখে উঠতে গিয়ে থেমে গেলো নাফিদ।
” কিরে, কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
“এমনি, হাটতে” যুথি জবাব দিলো।
“ভাইয়া, কিছু খাওয়াও ” হুট করে এমন কথা বলায় সবাই সামিয়ার দিকে তাকালো।
” কি উপলক্ষে?” নাফিদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো।
” আমাদের খাওয়াতে আবার উপলক্ষ লাগবে?”
” হ্যাঁ সেটাই তো ভাইয়া। আর আজকে তো গিয়ে পিজ্জাও খেতে চাইছি না। দোকানে গিয়ে আইস্ক্রীম খাবো।” যুথিও সামিয়ার কথায় সায় জানিয়ে বললো।
রাকিব ফট করে বললো, ” আমিও আইস্ক্রীম খাবো”
” না ভাইয়া,কেউ আইস্ক্রীম খাবে না” নাফিদ বললো।
“তাহলে কি খাবে সবাই?”
“সবাই চকলেট খাবে”
” আমিও চকলেট খাবো”
” তোমাকে না এইমাত্র দুইটা চকলেট কিনে দিলাম?”
রাকিব নিজের হাতে ধরে রাখা দুই প্যাকেট ডেইরি মিল্কের দিকে তাকিয়ে বোকা হেসে বললো, ” ভুলে গেছিলাম, হেহে।”
নাফিদ এবার রাইসাদের দিকে তাকালো
“তোরা কেউ রাকিবকে নাফিসা আপুর কাছে দিয়ে আয়। আর আপুকে বলিস ওর কাছে চকলেট আছে, এতোগুলো চকলেট যেন একসাথে না খায়।”
রিতু নিয়ে গেলো রাকিবকে। রাকিব যেতে যেতেও বার বার প্রশ্ন করছে ওরা ওকে রেখে আবার আইস্ক্রীম খেয়ে নিবে নাকি, আর রিতু ওকে আশ্বস্ত করছে যে এমন হবে না। রিতু আর রাকিব চোখের আড়াল হতেই সামিয়া খুশি হয়ে বলে উঠলো,
” ইয়েএএএ, আমরা আইস্ক্রীম খাবো!”
” কেউ আইস্ক্রীম খাবে না” কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে নাফিদ ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সামিয়া কিছুটা চুপসে গেলো।
সবাই দাঁড়িয়ে রিতুর জন্য অপেক্ষা করছে। রাইসা একবার নাফিদের দিকে তাকাচ্ছে, আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। এমন করতে করতে একসময় চোখাচোখি হয়ে গেলো নাফিদের সাথে। নাফিদ ভ্রু উচিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলো, রাইসা না-সূচক মাথা নাড়িয়ে বুঝালো কিছু হয়নি।
মাগরিবের নামাজের পর ড্রয়িংরুমে জমজমাট আড্ডা বসলো। আজকের আকিকার অনুষ্ঠানটা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ভয় ছিলো আবার বৃষ্টি হয় কিনা, তবে সকালের পর সারাদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টি হয়নি একটুও। একটুপর রাইসার মামি, খালা, ফুপু সবাই মিলে চা-নাস্তা নিয়ে এলে পরিবেশটা আরো জমজমাট হয়ে উঠলো। বড়রা সবাই সারাদিনের কাজকর্মে ক্লান্ত। কিন্তু ছোটদের ফুর্তি এখনো কমেনি। তিন্নিকেও আজকে রেখে দিয়েছে রাইসা, দিশাটা থাকলে আরো মজা হতো। রাইসা, সামিয়া, যুথি, রিতু, তিন্নি – সবাই মিলে ঠিক করলো আজ সারারাত জেগে গল্প করবে।
কিন্তু ক্লান্তির কারণে আর পরেরদিন স্কুল থাকায় সারারাত গল্প করা হলো না। নয়টায় শুরু হওয়া গল্পের আসর চললো এগারোটা পর্যন্ত। এরপর একেকজনের চোখে ঘুম নেমে এলো।
( চলবে ইনশাআল্লাহ )
বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ৬
আমিরাহ্ রিমঝিম
ছুটির ঘন্টা বাজার সাথে সাথে চতুর্দিকে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা ছোটাছুটি করে স্কুল থেকে বের হচ্ছে। এর মাঝে শান্তভাবে হেটে গল্প করতে করতে ক্লাসরুম থেকে বের হয় রাইসা আর দিশা। আজ সপ্তাহখানেক পর দিশা ক্লাসে এসেছে। এতোদিন পর বান্ধবীর সাক্ষাৎ পেয়ে দুজনের গল্প যেন আর শেষ হচ্ছে না।
” রাহিবের আকিকার আগের দিন আমি আর তিন্নি তোর বাসায় গিয়েছিলাম।”
” হ্যাঁ, ফুলি আন্টির কাছে শুনেছি। আজকে সকালে আমরা বাসায় ফেরার পর আন্টি প্রথমেই আমাকে তোদের কথা বললো।”
” আজকে সকালেই ফিরেছিস?এজন্য এতো দেরি হলো স্কুলে আসতে?”
” হ্যাঁ, আর বলিস না সেই সকালে কোনোমতে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রেডি হয়েই দৌড় দিয়েছি। তাও তো কোনোমতে এটেন্ডেন্স টা দিতে পেরেছি।”
এরপর দুইজনেই চুপ হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর দিশা মন খারাপ করে বলে, ” বড় নানাভাই অনেক আদর করতেন আমাদের।”
দিশার কথা শুনে রাইসার মনটাও খারাপ হয়ে যায়। দিশা ওর মায়ের নানাকে বড় নানাভাই ডাকতো। রাইসা দেখছিলো একদিন উনাকে দিশার বাসায়। অনেক বয়স ছিলো তার, নব্বই তো হবেই। ছোটদের খুব পছন্দ করতেন, গল্প করতেন অনেক ছোটদের সাথে।
হাটতে হাটতে দুজন বাসের কাছে চলে আসে। বাসে উঠে পাশাপাশি সিটে বসে।
” দিশা, আজকে আমাদের বাসায় চল। রাহিব বাবুকে দেখে আসবি।”
” যাবো? না থাক, আরেকদিন গিয়ে দেখে আসবো ইনশাআল্লাহ রাহিব বাবুকে। আজকে ক্লান্ত লাগছে, ঘুমও আসছে। কোচিংয়েও হয়তো যাবো না আজকে।”
” ঠিক আছে।”
….
বাসার গ্যারেজে অন্য গাড়িগুলোর সাথে আরো একটা গাড়ি দেখে অবাক হয় রাইসা। রাহিবের আকিকার তিন দিন হয়ে গেছে। আত্মীয় স্বজনরাও যারা এসেছিলেন সবাই চলে গেছেন, শুধু রাইসার নানা-নানু আর এক খালা বাদে। হয়তো কোনো ভাড়াটিয়ার কোনো অতিথি এসেছে, তাদেরই গাড়ি। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে যেতে আরেকবার গ্যারেজের দিকে তাকায় রাইসা, গাড়িটা নাফিদ ভাইয়ের গাড়ির মতো লাগছে না?
বাসায় ঢুকে ড্রয়িং রুমের দিকে চোখ যেতেই অবাক হয় রাইসা। নাফিদ ভাই এসেছে! মানে গাড়িটা আসলেই উনার!কিন্তু নাফিদ ভাই এলেন কি মনে করে আবার? রাইসার মনে আবছা একটা চিন্তা উঁকি দেয়, আচ্ছা, নাফিদ ভাই কি রাইসাকে দেখার জন্য এসেছে?
নাফিদ ড্রইংরুমের সোফায় বসে এক ধ্যানে ফোন টিপছিলো। চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই খেয়াল করলো রাইসাকে।
নাফিদ তাকাতেই রাইসা তড়িঘড়ি করে সালাম দিলো।
” আসসালামু আলাইকুম নাফিদ ভাইয়া, কেমন আছেন?”
” ওয়ালাইকুমুসসালাম। আছি ভালোই, তোর কি অবস্থা? ”
” এইতো ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালোই”
” পড়ালেখা কি করছিস ঠিকমতো? নাকি অনুষ্ঠানের রেশ যায়নি এখনো?”
” না ভাইয়া পড়ছি ঠিকমতো”
এমন সময় রাইসার বাবা এলেন সেখানে।
” রাইসা এসেছিস? তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। নাফিদ তুমি আসো খাও।” রাইসার বাবার কন্ঠে ব্যস্ততা।
রাইসা ঘরে এসে দেখে দুইটা দশ বেজে গেছে। এতটা দেরি হয়ে গেলো আজকে। দ্রুত গোসল সেড়ে এসে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাতে থাকে। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে মাথায় আবার আগের সেই চিন্তা এসে ভর করে। নাফিদ ভাইয়ারা তো গতকাল সকালেই চলে গেলো, আজকে আবার এলো কি কারণে?যদিও চাচার বাসা, যখন তখন আসতেই পারে। কিন্তু নাফিদ ভাইয়া তো কখনো এভাবে হুটহাট চলে আসে না। তাহলে কি……?
মন ভাবতে চায় নাফিদ ওকে দেখতেই এসেছে, যদিও মস্তিষ্ক বলে এটা সত্যি নয়। দোদুল্যমান চিন্তাভাবনা নিয়ে খাবার টেবিলে আসে রাইসা, দেখে ওর মা টেবিল গুছাচ্ছেন।
” আব্বু কোথায় আম্মু? আর নাফিদ ভাইয়া?”
” নাফিদ তো তখন খেয়ে দেয়েই চলে গেলো। তোর আব্বুও বের হলো ওর সাথেই। তুই হাত ধুয়ে আয়, আমি খাবার দিচ্ছি। ”
রাইসার মন খারাপ হয়। ও ভাবছিলো নাফিদ হয়তো ওকে গাড়িতে করে কোচিংয়ে নামিয়ে দিবে।
” আম্মু, নাফিদ ভাইয়া আজকে হঠাৎ কেন আসলো? এমনি আসলো নাকি কোনো দরকারে?”
“ওর ঘড়ি নাকি ভুলে রেখে গিয়েছিলো” রাইসার জন্য খাবারের প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে ওর মা জবাব দেন।
….
রাইসা ভেবেছিলো কোচিংয়ে আসতে হয়তো দেরি হবে, কিন্তু তাড়াতাড়িই চলে আসে। এসে দেখে তখনো অর্ধেক ছাত্র ছাত্রীই আসেনি। তিন্নিও আসেনি, আর দিশাটা তো বলেই দিয়েছে আসবে না যে।
রাইসা বেঞ্চের উপর ব্যাগ রেখে ভাবতে বসে। এতোদিন নাফিদ ভাইয়াকে ওর ভালো লাগতো, আর সেদিন থেকে মনে হয় সেটা দুর্বলতায় রূপ নিয়েছে। নাফিদের সাথে বাড়ি ফেরার সময়টা ভাবলেই রাইসার ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু এই কয়দিনে অনেক খুঁজেও রাইসার প্রতি নাফিদের আলাদা কোনো কেয়ার চোখে পড়েনি রাইসার। তবুও রাইসা ভাবতে চায় নাফিদ ওকে পছন্দ করে।
হঠাৎ মাথায় কেউ টোকা দিলে রাইসা তাকায়, দেখে তিন্নি হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। রাইসার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে তিন্নির সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে যায় রাইসা, ভুলেই যায় নাফিদের কথা।
( চলবে ইনশাআল্লাহ)