বৃষ্টি শেষে পর্ব – ২৮ ( শেষ পর্ব )

0
1465

বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ২৮ ( শেষ পর্ব )
আমিরাহ্ রিমঝিম

রাইসা খেয়াল করেছে ইদানীং নাফিদের কথা মনে পড়লে যেন আপনা আপনিই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে, এই যেমন এখন হচ্ছে। ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছিলো রাইসা, হঠাৎ নাফিদের কথা মনে আসলো, আর মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর। ব্যাপারটা কিছুতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা রাইসা, বা করতে চায় না।

হঠাৎ পেছন থেকে রাহিব এসে জোরে ” আপু ” বলে ডাক দিলো। রাইসা পেছনে তাকিয়ে দেখলো রাহিব এক হাতে একটা কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— আপু তুমি একা একা হাসছিলে কেন?

ধরা খেয়ে রাইসা কিছুটা বিব্রত হয়ে বললো,

— তেমন কিছু না ভাইয়া।

— বলো না, কেন হাসছিলে?

— কত কারণেই তো হাসে মানুষ।

— বলো না আপু, আমি দেখেছি তুমি হাসছিলে। তোমার কোনো ফ্রেন্ড কি কাদায় পরে গিয়েছিলো? সেটা মনে পড়ে হাসছো?

রাইসা ফিক করে হেসে ফেললো এবার। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য রাহিবের হাতের কাগজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— এটা কিসের কাগজ তোমার হাতে?

— এটা দিয়ে একটা প্লেন বানিয়ে দাও আমাকে।

— তোমাকে না রাকিব শিখিয়েছিলো প্লেন বানানো?

— ভুলে গেছি।

রাইসা কাগজটা নিয়ে প্লেন বানাতে শুরু করলো। রাহিব প্লেন বানানো দেখতে দেখতে বললো,

— ভালো করে প্লেন বানিয়ে দিও আপু, ভাইয়া যেভাবে বানায় সেভাবে। অনেকক্ষণ যেন উড়ে।

রাইসার বাবা এতোক্ষণ ধরে দুইজনের কাহিনী দেখছিলেন। মুচকি হাসলেন তিনি।

— নাও, এটা দিয়ে কিছুক্ষণ খেলে তারপর সুন্দর মতো আম্মুর কাছে পড়তে বসবে, ঠিক আছে? স্কুলে তো গেলেনা আজকে।

রাইসার কাছ থেকে কাগজের প্লেনটা নিয়ে বার দুয়েক উড়িয়ে দেখলো রাহিব। রাকিব যেভাবে বানিয়ে দেয় সেরকম হয়নি, কিন্তু চলবে। রাইসাকে নিকাব পড়তে দেখে থেমে গেলো।

— আপু, তুমি কোথায় যাচ্ছো?

— ভার্সিটিতে। ক্লাস আছে।

— কিন্তু বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে?

— ছাতা নিয়ে যাবো।

— তাও যেতেই হবে?

বৃষ্টির দিন মানে রাহিবের ছুটির দিন। যেদিন দেখে বৃষ্টি হচ্ছে সেদিন আর স্কুলে যেতে চায় না। বাইরে ঠান্ডা, বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলে জ্বর আসতে পারে, ঘুম আসছে – কত অজুহাত যে তৈরি থাকে ওর।

রাইসা একটু হাসলো। রাহিবের গাল আলতো করে টেনে দিয়ে বললো,

— আমিতো আর রাহিবের মতো ক্লাস থ্রি তে পড়ি না, আমার তো ক্লাস করতে হবে। দেখো, রাকিবও স্কুলে গিয়েছে, তুমি গেলে না।

রাহিব হাতের প্লেনের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বাইরে ঠান্ডা।

রাইসা হেসে ফেললো আবার। রাহিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

— কি নিয়ে আসবো তোমার জন্য?

রাহিব খুশিতে এক লাফ দিয়ে বললো,

— আইস্ক্রিম!

— আইস্ক্রিম? বাইরে না ঠান্ডা?

— কিন্তু ঘরে তো ঠান্ডা না।

— না আইস্ক্রিম খাওয়া যাবে না। তোমার জন্য অন্যকিছু নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।

মাঝারি ধাচের বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অনেক মানুষ বাইরে বেরিয়েছে। রাইসা বাড়ি থেকে বের হয়ে ছাতা মেলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বাস স্টান্ডের দিকে।

অল্প বৃষ্টি বাড়তে বাড়তে মুষলধারে নামতে থাকে। ঝুমঝুম আওয়াজ তুলে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ঝরতে থাকে ঘাসঢাকা মাঠে, গাছের পাতায়, পিচঢালা রাস্তায়, লেকের পানিতে, বাড়ির ছাদে। মনটা হয়তো কখনো কখনো উদাসী হয়ে যায় এমন সময়, অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে।

রাইসার যখন ক্লাস শেষ হয়, বৃষ্টির বেগ অনেকখানি কমে এসেছে। তবু আরেকটু অপেক্ষা করে বৃষ্টি আরো কমার। এখন কাদাপানিতে হাটতে মন চাইছে না মোটেও। ক্লাসরুমের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজায়।

নীচতলায় নেমে বাইরে বেরুনোর জন্য ছাতা মেলার সময় পরিচিত গাড়ি দেখতে পেয়ে থমকে যায় রাইসা। আরো অবাক হয় যখন গাড়ি থেকে নাফিদ নেমে দাঁড়ায়। নাফিদ ঢাকায় আসলেন কখন?

এগিয়ে গিয়ে সালাম দেয় রাইসা,

— আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুমুসসালাম, গাড়িতে উঠ, ভিজে যাচ্ছি।

রাইসা গাড়িতে উঠলে নাফিদ গাড়ি ঘোরালো।

— আপনি ঢাকায় এলেন কখন? সকালে না আমাকে বললেন আপনি চা বাগানে গিয়েছেন?

— প্লেনে এসেছি। বাসায় এসে পৌঁছেছি এক ঘন্টা আগে।

— প্লেনে?

— হ্যাঁ, ভাবলাম সবসময় তো বাসে যাতায়াত করি, আজ প্লেনেই যাই।

— আপনার অফিস নেই আজকে? ছুটি নিয়েছেন?

— অফিস তো এখনো শুরুই হয়নি।

— মানে?

— আমার ঢাকায় জব হয়েছে।

অবাক হয়ে রাইসা নাফিদের দিকে তাকায়। ঢাকায় জব হয়ে গেছে উনার?

— সত্যি! কিন্তু আপনি ইন্টারভিউ কখন দিলেন?

— তুই যখন সেমিস্টার ফাইনাল দিচ্ছিলি তখন।

— মানে আপনি একেবারে চলে এসেছেন? সিলেট যাবেন না আর?

— যাবোনা কেন? যাবো ইনশাআল্লাহ, বেড়াতে। তবে অফিস যেহেতু এখন ঢাকায়, এখানেই তো থাকতে হবে, তাই না?

কথা শেষ করে নাফিদ রাইসার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, তারপর আবার ড্রাইভিংয়ে মন দেয়। রাইসার মনের খুশি যেন ওর দু চোখেই প্রকাশ পাচ্ছে। গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে প্রশান্তিতে চোখ বুজে আসে রাইসার। তারপর আবার চোখ খুলে একবার তাকায় নাফিদের দিকে, নাফিদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে আছে।

বৃষ্টি থেমে গেছে। বিশুদ্ধ শীতল পরিবেশ, মৃদু বাতাস। গাড়ি চলছে ভেজা পিচঢালা রাস্তার উপর দিয়ে। উপরে নীল আকাশ, সূর্যের আলোয় চকচক করছে রাস্তার পিচ, আর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে রাইসার মন। বৃষ্টি শেষে রোদ উঠেছে আজ।

( সমাপ্ত )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here