বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ৭,৮,৯
আমিরাহ্ রিমঝিম
পর্ব – ৭
দেখতে দেখতে রাইসার জেএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসে। পড়তে পড়তে রাইসার নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। খাওয়া, ঘুম,নামাজ আর পড়াশোনা করা ছাড়া কোনোদিকে তাকানোর ফুসরত পাচ্ছে না। সবাই আশা করছে রাইসা ইনশাআল্লাহ ভালো রেজাল্ট করবে।
পড়ার চাপে নাফিদের কথাও বেমালুম ভুলে আছে। যখন নাফিদের নাম কানে আসে বা রাহিবের আকিকার গল্প করে কেউ তখন মনে পড়ে নাফিদের কথা। রাইসা ভাবতে বসে সেসময়। নাফিদ ভাইয়া গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে এসেছিলো, সময়টা কত সুন্দর ছিলো। রাহিবের আকিকার দিন চকলেট কিনে দিয়েছে। আকিকার তিন দিন পর আবার ভুলে রেখে যাওয়া ঘড়ি নেয়ার জন্য এসেছিলো। এরপর আর আসেনি নাফিদ।
রাইসা মনে মনে খুজতে থাকে নাফিদ ওর প্রতি কোনো আলাদা কেয়ার করেছে কিনা, কিন্তু পায় না। সেদিন বৃষ্টির মধ্যে যদিও বাসায় নিয়ে এসেছে কিন্তু অতটুকুই। এছাড়া আর কিছুই তো দেখতে পাচ্ছে না রাইসা। তবুও মন কল্পনা করে হয়তো কোনোদিন সবাইকে চমকে দিয়ে নাফিদ বলবে সে রাইসাকে পছন্দ করে।
আজগুবি ভাবনাগুলো আর আগায় না। রাইসা আবার পড়তে বসে, নয়তো মায়ের ডাকে পড়া থেকে উঠে খেতে যায়। এরপর আবারো ভুলে যায় নাফিদের কথা।
….
শেষ পরীক্ষা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাইসা। পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। খুশিতে রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে ইচ্ছা করছে ওর। কিন্তু তারপর যদি আবার কেউ ওকে নিয়ে পাগলাগারদে ভর্তি করে দেয়?
ফুরফুরে মেজাজে বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে অজু করে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর ধীরেসুস্থে এসে খেতে বসে। খায়ও অনেকক্ষণ সময় নিয়ে। খাওয়া শেষ করে ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসে। রাকিব ভীষণ অবাক হয়।
— এই আপু শুনো…
— কি?
— তুমি পড়তে বসবেনা আজকে?
— না।
— কেন?
— আমার পরীক্ষা শেষ।
রাকিব খুশি হয় খুব।
— মানে তোমার আর পড়তে হবে না?
— পড়তে হবে।
— তুমি না বললে যে তোমার পড়া শেষ?
— পড়া শেষ বলি নি, বলেছি পরীক্ষা শেষ।
— তাহলে পড়বে না কেন?
— কারণ আমার পরীক্ষা শেষ। পরের ক্লাসে উঠলে তখন ইনশাআল্লাহ আবার পড়তে বসবো।
— মানে এখন তোমার পড়া নেই?
— না এখন আর পড়া নেই।
— ও।
রাকিব গিয়ে রাইসার পাশে সোফায় বসে যায়। রাইসা ততক্ষণে টিভি অন করে রিমোট দিয়ে একটার পর একটা চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।
— আপু ওটা কি?
— ওটা একটা মেশিন, ওটা দিয়ে ধান কাটে।
— ও। ওটা কি ফুল?
— ওটার নাম আমি নিজেও জানি না।
— ওটা কি?
— ওটা সাপের লেজ।
রাকিব তাড়াতাড়ি দুই হাতে চোখ ঢেকে ফেলে।
— এটা পাল্টাও,পাল্টাও এটা। আমি সাপের লেজ দেখবো না।
— পাল্টিয়েছি চ্যানেল। দেখো সাপের লেজ নেই।
— এই আপু, চলো কার্টুন দেখি।
— আচ্ছা।
দুই ভাইবোন কার্টুন দেখতে বসে। রাকিব অনেক খুশি। অনেকদিন পর আপু ওর সাথে কার্টুন দেখছে।
আসরের নামাজ পড়ে ছাদে যায় রাইসা। কত্তদিন পর আজ ছাদে এলো। মনটা আরো ভালো হয়ে যায় ওর, প্রাণভরে শ্বাস নেয়। ছাদে আছে আরো অনেকেই। ছোটরা একসাথে খেলছে, বড়রা নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। রাইসাকে দেখতে পেয়ে তাহমিনা আন্টি কাছে ডাকলেন। রাইসা হাসিমুখে এগিয়ে গেলো।
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
— ওয়ালাইকুমুসসালাম। কি খবর রাইসা? পরীক্ষা তো শেষ না?
— জ্বী আন্টি।
— কেমন হলো পরীক্ষা?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে…
….
মাগরিবের নামাজ পড়ে রাইসা অনেকক্ষণ ফোনে তিন্নি আর দিশার সাথে কথা বললো। কথা শেষ করে গেলো রাহিবের কাছে। রাহিব বিছানায় শুয়ে হাত-পা ছুড়ছিলো, রাইসা গিয়ে ওকে কোলে নিলো। রাকিব সারাক্ষণ রাইসার আশপাশ দিয়েই ঘুরছে, পড়তে বসেনি আজ। ওর কথা হচ্ছে আজ রাইসার ছুটি তাই ওরও ছুটি। রাইসা রাহিবকে বসানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু রাহিব বার বার পরে যাচ্ছে।
— রাইসা….
বাবার ডাক শুনে রাহিবকে কোলে নিয়ে রাইসা ড্রইং রুমে চলে আসে, রাকিবও আসে ওর পিছু পিছু। বাবা মা দুইজনই সেখানে বসা। রাহিবের কাছে রাইসা থাকায় ওদের মা এখানে চলে এসেছিলেন।
— জ্বী আব্বু?
— তোমার নাফিসা আপুর তো বিয়ে আর কিছুদিন পর। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য শপিং কি কি করতে হবে তুমি আর তোমার মা মিলে লিস্ট করো।
— ঠিক আছে আব্বু।
নাফিসার বিয়ে অনেকদিন আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। অবশেষে এই সময় সবারই অবসর থাকায় বিয়ের দিনটা ঠিক করা হয়েছে।
— তোমার চাচ্চুর বাসায় যাবো কালকে। সকালেই যাবো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিও সকালে। তোমার ফুপিরাও থাকবে। ভাই সবাইকে যেতে বলেছে।
বাবার কথা শুনে রাইসা থমকে যায়। চাচ্চুর বাসায় যাবে ওরা, নাফিদ থাকবে সেখানে, কত্তদিন পর নাফিদ ভাইকে দেখতে পাবে! খুশির স্রোত বয়ে যায় রাইসার মনে।
( চলবে ইনশাআল্লাহ)
বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ৮
আমিরাহ্ রিমঝিম
( কপি করবেন না)
সকাল সকালই নাফিসাদের বাসায় পৌছে গেছে রাইসারা, ফুপিরা এসেছেন আরো আগে। ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনি সবাইকে একসাথে পেয়ে রাইসার দাদা দাদির আনন্দ দেখে কে! গল্পে-কোলাহলে পুরো বাসাটা মুখরিত হয়ে আছে।
সব চাচাতো ফুপাতো ভাই বোনেরা এক ঘরে বসে গল্প করছিলো। বড়দের সবার সাথে দেখা করে রাইসা সেই ঘরে গেলো। রাইসা যেতেই সামিয়া, যুথি দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। নাফিসা হেসে বললো,
— ছাড় মেয়েটাকে। মাত্র আসলো। বসতে দে।
সামিয়া, যুথি রাইসাকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের পাশে বসালো।
সামিয়ার বড় ভাই সিয়াম জিজ্ঞাসা করলো,
— পরীক্ষা কেমন হলো রাইসা?
— জ্বী ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
নাফিসা বললো,
— ছুটি তো আছে অনেকদিন। ছয় সাত দিন থেকে যাও আমাদের বাসায়।
— আপু, আর কয়দিন পর তো আসবোই ইনশাআল্লাহ। তখনই থাকা যাবে। মাত্র তো কালকে পরীক্ষা শেষ হলো।
রাইসার ভাইবোনদের হাসি ঠাট্টার আওয়াজ অন্য ঘর থেকেও শোনা যাচ্ছে। আলোচনার মুল বিষয়ই হলো নাফিসার বিয়ে। রাইসা কিছু বলছে না, চুপচাপ শুনে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে অন্যদের কথা শুনে হাসছে। এর মধ্যে আরেকটা চিন্তা ঘুরছে মাথায়। আসার পর থেকে একবারও নাফিদের দেখা পায়নি। নাফিদ ভাইয়া কি বাসায় নেই?
রাইসার চিন্তার মধ্যেই যুথির বোন যারিন প্রশ্ন করলো,
— নাফিদ কোথায় রে নাফিসা? আসার পর দেখলাম না একবারও।
সিয়াম ওকে টিটকারি মেরে বললো,
— আহারে, দেখলাম না আসার পরে! এতো দেরি করে আসলে কিভাবে দেখবে? বাসার সবাই চলে আসলো আর তুমি আসলে দুই ঘন্টা পর। অবশ্য আসতে যে পেরেছিস সেটাই অনেক বড় ব্যাপার।
যারিন রেগে গিয়ে বললো,
— মানে কি? ভার্সিটিতে যেতে হয়েছে আমার, সেই জন্য দেরি হয়েছে।
— এই যুথি, ওই কি সত্যি কথা বলছে? ভার্সিটিতে গিয়েছিলো সত্যি?
— জ্বী ভাইয়া, আপু ভার্সিটিতে গিয়েছিলো সেইজন্যই দেরি হয়েছে।
— আচ্ছা, তাহলে বিশ্বাস করলাম। নাকি যারিন আবার যুথিকে শিখিয়ে দিয়েছিস কেউ দেরি কেন জিজ্ঞেস করলে যেন ভার্সিটির কথা বলে?
এবার যারিন যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
— কিহ! আমার বোনকে আমি শিখিয়ে দিয়েছি?
সিয়াম আর যারিনের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়া বেধে গেছে। বাকিরা সবাই ওদের কথাবার্তা শুনে হাসছে। রাইসাও হাসছে আবার মনে মনে একটু আফসোসও লাগছে। সিয়াম ভাইয়া বলে দিতো নাফিদ ভাইয়া কোথায় গেছে। রাইসা তো নিজে থেকে জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না।
নাফিসাদের বাড়িটা দোতলা। নিচতলায় রান্নাঘর, ডাইনিং, ড্রইং। রাইসার দাদা-দাদি আর চাচা-চাচির ঘরও নিচতলায়। বাকি সবগুলো ঘর দোতলায়। বাড়ির সামনে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। পুরো বাড়িটাই বেশ ছিমছাম,সুন্দর। কোনোকিছুতে অতিরঞ্জনতা নেই। এই বাড়িতে এলেই যেন মন ভালো হয়ে যায়। তবু আজ রাইসার মনটা আকুপাকু করছে। নাফিদ ভাইয়া যে বাসায় নেই!
বড় ফুপির ডাকে চা-নাস্তা নিতে ডাইনিংয়ে এলো সামিয়া, যুথি আর রাইসা। এই সুযোগে সামিয়াকে প্রশ্নটা করেই ফেললো,
— এই সামিয়া
— কি?
— সিয়াম ভাইয়া কি বলছিলো তখন? নাফিদ ভাইয়া কোথায় গেছে?
সামিয়া উত্তর দেবার আগেই রাইসা দেখলো নাফিদ এসেছে।
— কিরে রাইসা? তোদের এতো দেরি হলো কেন আসতে?
রাইসা কিছু বলার আগেই সামিয়া বলে ফেললো,
— আসলে ছোটমামাদের তো আসতে দেরি হয়নি। আমরাই বেশি তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। যারিন আপুও এসেছে।
— যারিন আসতে পারলো তাহলে! যাইহোক, তোর পরীক্ষা কেমন হলো রাইসা?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে ভাইয়া।।
রাইসা, সামিয়া, যুথি নাস্তা নিয়ে ঘরে যাওয়ার দশ মিনিট পর নাফিদও চাচা-চাচির সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে সেই ঘরে গেলো। নাফিদ ঘরে ঢুকতেই সিয়াম মিচকে হেসে বললো,
— কিরেএএএএএএএ নাফিইইইইদ!
ঘরের সবার মুখেই এরকম মিচকে হাসি। নাফিদ লাজুক হাসছে। এদিকে রাইসা ঘটনা কিছুই বুঝতে পারছে না। ফিসফিসিয়ে যুথিকে জিজ্ঞাসা করলো,
— এই যুথি, কি হয়েছে রে?
— নাফিদ ভাইয়া উনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। সকালে যে কাহিনীটা হলো। বাইরে আয়,বলছি।
যুথি এক হাতে রাইসার অন্য হাতে সামিয়ার হাত ধরে নিচতলায় ড্রইং রুমে চলে এলো। তারপর বলতে শুরু করলো সকালে নাফিদ ভাইয়া কিভাবে তাড়াহুড়া করে গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে গেলো। তিন বছর ধরে নাকি সম্পর্ক উনাদের। নাফিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড কোথায় থাকে, কেমন দেখতে এসব নিয়েও যুথি আর সামিয়া গল্প জুড়ে দিলো।
রাইসা শুধু চুপচাপ সব কথা শুনে যাচ্ছে। কিছুটা কষ্ট কষ্ট লাগছে ওর। তার চেয়ে বেশি লাগছে বোকা বোকা। নিজেকে নিজের কাছে প্রচন্ড বোকা লাগছে রাইসার। ভালোতো যুথি বা সামিয়া কাউকে বলেনি নাফিদ ভাইয়াকে যে ওর ভালো লাগে।
( চলবে ইনশাআল্লাহ )
বৃষ্টি শেষে
পর্ব – ৯
আমিরাহ্ রিমঝিম
দারুণ অবসর কাটছে রাইসার। টিভি দেখে, গল্পের বই পড়ে, এখানে সেখানে ঘুরতে গিয়ে, বান্ধুবিদের সাথে গল্প করে, রাহিব আর রাকিবের সাথে খেলে বেশ ভালোই সময় যাচ্ছে। মায়ের কাছ থেকে টুকটাক রান্নাও শেখা হয়ে গেছে, বাসার কাজেও বেশ সাহায্য করে। বিকেল বেলাটা ছাদেই কাটে। আসরের নামাজের পর ছাদে যায় রাকিবকে নিয়ে। মাঝে মাঝে মা ও চলে আসে ছাদে রাহিবকে কোলে করে। সূর্যাস্ত দেখতে রাইসার অনেক ভালো লাগে। মাগরিবের আজান হলে বাসায় ফিরে আসে।
এর মধ্যে খালামনির বাসায় গিয়ে দুইদিন থেকে এসেছে। সেখানে রাইসার সমবয়সী কেউ নেই বলে থাকতে অত ভালো লাগে না, যদিও খালামনি অনেক আদর করেন। সামিয়া আর যুথি দুজনেই পড়ে নাইনে, কিছুদিন পর তাদের পরীক্ষা। তাই মেজ ফুপি বা ছোটফুপির বাসায়ও যাওয়া যাবে না। আর বড়ফুপির বাসার অবস্থা তো খালামনির বাসার মতো, রাইসার সমবয়সী কেউ নেই। বড় ফুপির দুই ছেলেই রাইসার বড়। আর নাফিসার বিয়ে উপলক্ষে কিছুদিন পর এমনিই যাওয়া হবে চাচাদের বাসায়, সেখানে এখনি গিয়ে কি কাজ?
….
আজ পাঁচদিন ধরে রাইসা ওর নানার বাসায় আছে। এখানে দুই মামারা আছেন, মামাতো বোন রিতু আছে, ছোট ছোট আরো মামাতো ভাই বোনের আছে। বেশ ভালো লাগে এখানে। রিতুও এবার জেএসসি পরীক্ষা দিলো, তাই ওরও ছুটি এখন।
বিকেল বেলা নানা বাড়ির ছাদে হাটছে দুইজন।
— জানিস কয়দিন পর নাফিসা আপুর বিয়ে।
— তাই নাকি?তাহলে তো অনেক মজা হবে তোদের।
— হ্যাঁ।
এরপর রিতু একের পর এক প্রশ্ন করতেই থাকলো। আপুর বিয়ে কার সাথে? ছেলে কি করে? ছেলে কোথায় থাকে? ছেলের বয়স কত? ছেলে দেখতে কেমন?ছেলের মাথায় টাক আছে কিনা?
রাইসা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে রাইসার অবস্থা খারাপ। সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলে বলবেনা বলবেনা করেও কথাটা শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললো রাইসা
— জানিস, নাফিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে।
রিতু বিস্মিত হয়ে বললো
— সত্যি?
— হ্যাঁ।
তারপর আবারো প্রশ্ন শুরু হলো রিতুর। গার্লফ্রেন্ডটা কে? কই থাকে? কি করে? বয়স কত? দেখতে কেমন? ইত্যাদি ইত্যাদি…
….
নাফিসার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। রাইসা আর ওর ফুপুরা সবাই বিয়ের সপ্তাহখানেক আগেই চলে এসেছে নাফিসাদের বাসায়। নাফিসার মামা এবং খালারাও চলে এসেছেন। জোরেশোরে চলছে বিয়ের প্রস্তুতি। কমিউনিটি সেন্টার, বিয়ের ফটোগ্রাফার সবই ঠিকঠাক। শপিং ও করা হয়েছে সবই। এখন শুধু বিয়ের দিনটা আসার অপেক্ষা।
নাফিসাকে যখন তখন হবু বর শাহাদাতের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। এই দেখা যাবে ভাই বোনদের সাথে আড্ডা-গল্পে মেতে আছে, পরক্ষণেই তাকে আর পাওয়া যাবে না। খুঁজলে দেখা যাবে কোনো রুমের বারান্দায় গিয়ে শাহাদাতের সাথে কথা বলছে। এই নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে হাসাহাসির শেষ নেই।
কিন্তু কোনো এক কারণে চাচাদের বাসায় আসার পর থেকেই নাফিদকে মলিন মুখে ঘুরতে দেখছে রাইসা। কাজ-কর্ম যা আছে সব ঠিকভাবেই করছে, সবার সাথে হাসিমুখেই কথা বলছে। কিন্তু বাকিটা সময় মুখ মলিন করে থাকছে। আর সুযোগ পেলেই কাউকে ফোনে কল করছে বারবার, কিন্তু অপরপাশ থেকে ফোন রিসিভ হচ্ছে না।ব্যাপারটা যে শুধু রাইসা খেয়াল করেছে এমনটা নয়, অনেকেরই নজরে এসেছে।
বিয়ে উপলক্ষে নাফিসা, নাফিদ দুজনেরই বন্ধুবান্ধবদের আনাগোনা হচ্ছে বাড়িতে। নাফিদের দুই-চারজন বন্ধু এসেছে কোনো কাজে। নাফিদ তখন মলিন মুখে কাউকে ফোন করার চেষ্টায় ব্যস্ত, বাসায় যে তার বন্ধুরা এসেছে সেটা খেয়ালই করেনি। নাফিসা ভাবলো, নাফিদের ব্যাপারটা ওর বন্ধুদের কাউকে জিজ্ঞাসা করতে করতে হবে। অনিককে ডাক দিলো নাফিসা।
— অনিক
— জ্বী আপু?
— নাফিদের কি লাবন্যের সাথে ঝামেলা হয়েছে?
— ওদের নাকি ব্রেকাপ হয়েছে। ওদের তো দিনের মধ্যে বিশবার করে ঝগড়া হয় আর দশবার করে ব্রেকাপ হয়। দুইদিন পরে আবার ঠিক হয়ে যায়।
সেদিন সন্ধ্যার পরেই নাফিদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখা গেলো। তাতেই ভাইবোনেরা সবাই বুঝে গেলো সবকিছু মিটমাট হয়ে গেছে। যারিন বললো,
— ভাবির সাথে দেখা করাবি না?
— হুম, করাবো। হলুদের দিন নিয়ে আসবো।
— নাম কি আমাদের ভাবির?
— লাবন্য।
….
হলুদের দিন সব মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরে, ফুলের গয়না পরে সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাইসাও হলুদ শাড়ি পরেছে। হিজাবের উপর মাথায় শুধু ফুলের টায়রা পরেছে একটা, আর কোনো গয়না পরেনি। সবাইকেই আজ খুব সুন্দর লাগছে। নাফিসাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। রাইসা ভাবে, নাফিসাকে কি পুতুলের মতো সুন্দর লাগছে নাকি ফুলপরীর মতো সুন্দর লাগছে?রাইসা ভেবে ঠিক করতে পারেনা।
— কিরে তুই এখানে বসে আছিস কেন একা একা?
সামিয়ার কথায় ধ্যানভঙ্গ হয় রাইসার। তাকিয়ে দেখে যুথিও আছে সাথে।
— তোদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
— আমরা আরো তোকে খুজছি। চল ওদিকে গিয়ে বসি।
যাওয়ার পথে হঠাৎ থেমে যায় সামিয়া। একটু দূরে নাফিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ের দিকে ইশারা করে রাইসাকে বলে,
— দেখ, ওইটা হচ্ছে আমাদের লাবন্য ভাবি।
রাইসা প্রথমে বুঝতে পারে না। কোন ভাইয়ের বউয়ের নাম লাবন্য?
— লাবন্য ভাবি কে?
রাইসার বোকা বোকা প্রশ্নে যুথি হাসে, সামিয়া হতাশ হয়।
— আরে বোকা, উনি নাফিদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড।
রাইসা এবার ভালো করে তাকায় লাবন্যর দিকে। অনেক সুন্দর, মেকাপ করায় হয়তো আরো বেশি সুন্দর লাগছে। ফটোগ্রাফির জন্য দেয়ালে বসানো একটা আয়নায় চোখ যায়। আয়নায় নিজেকে দেখে মন খারাপ হয়ে যায় রাইসার। আজ সবাইকেই কম বেশি সুন্দর লাগছে। রাইসাও তো সেজেছে, কিন্তু ওকে তো সুন্দর লাগছে না।
( চলবে ইনশাআল্লাহ )