বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন৩),পর্বঃ__২

0
1165

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন৩),পর্বঃ__২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মেঘলাকে আসতে দেখে নিজের কক্ষে ঢুকে গেলো শ্রাবন। এই অসময়ে শ্রাবন তাকে ডাকলো কেনো? এটা নিয়ে একটু অবাক হলো মেঘলা। ধিরে পায়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো শ্রাবনের কক্ষে। দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখে টেবিলে দুই হাতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে শ্রাবন। খুবই শান্ত দেখাচ্ছে তাকে। মেঘলা ভালোই বুঝতে পারছে শ্রাবনের শান্ততা বর্ষণের পূর্বাভাস। কারন ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে শ্রাবন খুব রেগে গেলে তখন খুবই শান্ত থাকে,, যাকে বলা যায় অতি শান্ত।

– ভাইয়া আসবো?
– হুম আয়,,,
– আমায় ডেকেছিলে?
– কি করছিলি তুই?
– ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম,,,,(মাথা নিচু করে বলে উঠে মেঘলা)
– ছেলেরা গায়ে হাত দিলে খুব ভালো লাগে তাই না?
– এসব কি বলছো ভাইয়া?
– রাজ কয়বার তোর হাত ধরেছেে, মজা করার নাম করে?
– ক ক কই একবারও না তো ভাইয়া,,,,(ভয়ে ভয়ে বলে উঠে মেঘলা)
শ্রাবন খুব শান্ত ভাবে বলে উঠে,,,
– কিন্তু আমি তো এখান থেকে খেয়াল করেছি গুনে গুনে ছয় বার তোর হাত ধরেছে রাজ।
– ও আল্লা কি বলে, ছয় বার ধরতে যাবে কেনো? ও তো মাত্র ২ বার,,,,,,,,,
বলেই জ্বিভে কামর দেয় মেঘলা।
শ্রাবন এবার পকেটে হাত গুজে সোজা হয়ে দাড়ায়,,,
– ২ বার তোর হাত ধরেছে তাই তো? তবুও তুই বাধা দিসনি কেনো?
মেঘলা একটু নেকামির সুরে বলে,
– ফ্রেন্ড তো আমার,,,,,
তখনই দরজার সামনে একটা মেয়ে এসে বললো, মে আই কামিং স্যার?
শ্রাবন শান্ত ভাবে মেঘলাকে বলে,
– সোজা ক্লাসে যাবি, এদিক ওদিক যাতে আমি না দেখি।
,
,
টিফিন টাইমে বড় বট গাছটার নিচে বসে বসে সকালের বইটা পরছে নিছার। সেই মুহুর্তে তার পাশে এসে বসলো তার ক্লাসমেট চুমকি। চুমকির চোখে পানি। নিছার বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে চুমকির দিকে তাকায়,,, শান্ত ভাবে চুমকি কে বলে উঠে,,
– ছেরে চলে গেছে তাইতো?
চুমকি মাথা দুলিয়ে হ্যা সুচক সম্মতি জানায়,,
নিছার আবারও বলে,,
– আগেই বলেছিলাম ছেলেটা ভালো না,, তুই তো আমার কথা শুনলি না। এখন বুঝ,,,,
চুমকি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– ছেলেরা এতো বড় ধোকাবাজ কিভাবে হয় বলতো নিছার। কতো নিখুত অভিনয় ছিলো তার? ছেলে জাতিটার নাম ছেলে না রেখে বেঈমান রাকলেই বোধ হয় ভালো হতো রে,,,
নিছার এবার একটু রেগে গিয়ে বলে উঠে,
– এখানে একধম ছেলে জাতিকে টানবি না। তোদের মতো কিছু কিছু মেয়েদের একটাই দোষ, প্রেম করবি নিজে, ভুল মানুষটাও বেছে নিলি নিজে, সব করবি নিজ ইচ্ছায়, তার সে ছেরে চলে যাবে,, এর পর ঢোল পিটিয়ে ছরাতে থাকবি যে, ছেলে জাতি বেঈমান খারাপ। কেনো, মানুষটা আর মানুষগুলো কি এক হলো? দৃষ্টি ভঙ্গি বদলা,,,
চুমকি আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,
– কি করবো আমি? সে আমায় বলতো আমিই তার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। আমি তার সব আমি তার একমাত্র প্রেম।
– ভুল সব ভুল, তোকে আমি আগেও বুঝিয়েছি যে, ছেলেটা খারাপ, অনেক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আছে। তখন তো তুই এসব বিশ্বাস করতি না। আর বললো, তুই তার এক মাত্র প্রেম? ভুল বললো, তুই ছিলি তার শুধুই মোহ,,,, যা সম্পূর্ণই অধর্ম,,,,
চুমকি মাথা তুলে বলে উঠে,
– প্রেম আর মোহের মাঝে পার্থক্য কি? মোহ কিভাবে অধর্ম হয়?
নিছার মুচকি হেসে একটু মাথা ঝাড়ে,,,
– ‘প্রেম’ আর ‘মোহের’ মাঝে পার্থক্য অনেক। বাস্তবে যা ‘প্রেম’ তা কোনো ‘মোহ’ নয়, প্রেমের জন্ম করুনা থেকে হয়, আর মোহের জন্ম লোভ থেকে। ‘প্রেম’ মুক্তি দেয়, আর ‘মোহ’ আবদ্ধ করে। তাই ‘প্রেম’ ধর্ম আর ‘মোহ’ অধর্ম। তুই তার ‘প্রেম’ ছিলি না, ছিলি কিছু মুহুর্তের ‘মোহ’,,,
তখনই ব্যাল বাজতেই আবার ক্লাসে হাটা ধরে দুজন।
– মন খারাপ করিস না চুমকি,, মানুষের জীবনটাই একটা ভুল। আর এই ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়। বইয়ের পাতায় তো শুধু জ্ঞান থাকে,, আর শিক্ষা? তা তো জীবনের পাতা থেকেই নিতে হয়।
,
,
ক্লাসে সবার সামনে কান ধরে দাড়িয়ে আছে মেঘলা। আর তার পাশেই অঙ্ক করে সকলকে বোঝাচ্ছে শ্রাবন। একটু আগে ক্লাসে আশার পর মেঘলাকে ডেকে মার্কার হাতে ধরিয়ে বলে অঙ্কটা করতে,,, মেঘলা গতকালও আসেনি আর এখন কিছুই বুঝেনি তাই আর কি? কান ধরে দাড়িয়ে আছে সবার সামনে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো আর কাউকেই সামনে অঙ্ক করার জন্য নিয়ে আশা হয়নি। সবাইকে অঙ্ক বোঝাচ্ছে শ্রাবন। মেঘলা খুব ভালো করেই বুঝতে পরছে তখন কার ঘটনার জন্য ভাইয়া ইচ্ছে করেই আমার সাথে এমন করছে। তখন তো অনেক কৈফিয়ত দিলামই, আর এখন নিজেকে ধুয়ে ধুয়ে অপমানিত হতে হচ্ছে সবার সামনে।
,
,
কলেজ ছুটির পর মাথা নিচু করে সোজা গেট পার হয়ে গেলো মেঘলা। পেছন থেকে রাজ দৌড়ে এসে হাটা ধরে তার সাথে।
– কিরে স্যার আজ তোর সাথে এমন করলো কেনো? ও না তোর কাজিন হয়?
মেঘলা মনে মনে হাজারো কথা বলে ফেললো রাজকে,,(সালা কুত্তা তোর কারনে সব হয়েছে আজ, নেক্সট টাইম আমার থেকে পাঁচ হাত দুরে থাকবি, কুত্তা) কিন্তু কিছু বললো না, বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,
– না জানিনা, পড়া পারিনি তাই এমন করেছে, তোর কোনো সমস্যা?
– সমস্যা টা তো আমারই, যেভাবে তোকে সবার সামনে ধুয়ে ধুয়ে অপমান করলো। আচ্চা তখন অফিস রুমে ডেকে নিয়ে গেলো কেনো?
– করণ ছিলো নিশ্চই,,, আর ভাই শুন আমার এখন একধম কিছু ভালো লাগছে না,, বাসায় যাবো আমি।
– চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি?
– প্লিজ তুই যা তো ভাই, মন মেজাজ এমনিতেই অনেক খারাপ আছে আজ।
– একা যেতে পারবি তো?
– হুম পারবো আমি তুই যা,,,

মেঘলা হাটছে তার পাশে হেটে হেটে কথা বলছে রাজ।
বিরক্তি নিয়ে হাটছে মেঘলা। প্রতিদিন শ্রাবনই বাড়ি পৌছে দেয় তাকে। কিন্তু আজ লোকটার সাথে কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছেনা, কিছুতেই না। আর এই রাজও আজ তার পিছু ছারছে না, সুজুগ ঠিকই আজ মেঘলার সাথে হেটে চলছে সে। কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে পরে যেতেই রাজ ধরে ফেলে তাকে। মেঘলা এখন পুরোপুরিই রাজের হাতেই ঝুলে আছে,, এতে একটু বিরক্ত হলো মেঘলা,, তখনই তাদের সামনে এসে ব্রেক করে একটা কালো রংয়ের গাড়ি। মেঘলা খেয়াল করে গ্লাস নামিয়ে শ্রাবন তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। মুহুর্তেই অন্তরাত্বা কেপে উঠে মেঘলার।

To be continue………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here