#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ২)?,পর্বঃ_২,৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__২
বাড়ির বৌ পালিয়েছে। আজ দুদিন ধরে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা তাকে। এই নিয়ে বাড়ি ঘর এক করে ফেলছে রাত্রি চৌধুরি। তার দৃঢ় বিশ্বাস বৃষ্টি পালানোর মতো মেয়ে না। হয়তো তাদের না জানিয়ে কারো বাড়িতে দিয়ে মজা করছে। আর নয় তো কেও কিডনাপ করে নিয়ে গেছে। এই জাতিয় ভাবনা গুলো মাথার মাঝে ইদুর দৌর করছে।
রাত তখন সকালের নাস্তা নিয়ে টেবিলে। রাত্রি চৌধুরি বক বক করেই চলছে তার মাঝে কঠিন একটা উত্তেজিত ভাব।
সেদিকে মন না দিয়ে খেয়ে চলছে রাত।
বিরক্তি নিয়ে রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– আজব আমি কথা বলছি তোর সাথে, আর তোর কোনো গুরুত্বই নেই আমার কথায়?
রাত খেতে খেতে বলে উঠে,
– বলো আমি শুনছি।
– তুই এক কাজ কর। পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দে। আর পুলিশ স্টেশানে যা।
– অযথা কেনো এতো ঝামেলা বলো তো?
– মানে কি? অযথা ঝামেলা মানে? আমি তোর সাথে মজা করছি না, সিরিয়াস হয়ে কথা বলছি।
– তো আমিও কি মজা করছি নাকি? যে চলে যাওয়ার, ভালো লাগছেনা সে চলে গেছে, এতে এতো লাফানোর কি আছে? তার এখানে ভালো লাগছেনা, সে এখানে হ্যাপি নেই তাই চলে গেছে হয়তো। আর তোমার জদি এতোই পুত্র বধুর প্রয়োজন হয় তাহলে দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছে নাকি?
– দেখ রাত মাথা খারাপ করবিনা আমার, ঠাস করে একটা চর খাবি আর সব দাত পরে থাকবে এখানে। আমার তো মনে হচ্ছে সব তুই ই করেছিস। ওই বেয়াদপ মেয়েটা ফিরে এসেছে শুনে বৃষ্টিকে সাইড করে দিয়েছিস তুই। একটা কথা পরিস্কার ভাবে শুন রাত। আরশি যেমন আমার মেয়ে বৃষ্টিকেও আমি এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভাবিনা। প্রয়োজনে বৃষ্টিকে আমার কাছে এনে দিয়ে ওই বর্ষা মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা তুই। তবুও যেভাবেই হোক খুজে নিয়ে আয় আমার কাছে।
নাস্তা শেষ করে উঠে চলে যাচ্ছে রাত। রাত্রি চৌধুরি ঠাই দাড়িয়ে আছে ওখানে। রুদ্র চৌধুরি কপালের চামরা ভাজ করে সোফায় বসে আছে চিন্তিত ভাব নিয়ে।
বৃষ্টির পালিয়ে যাওয়ার কথা পৌছে গেলো তার বারার বাড়িতেও। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টির মা। কেও কারণটা না জানলেও বৃষ্টির মা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে এটা। কারণ সে বৃষ্টিকে এসব নিয়ে ব্লেকমেইল করতে দেখেছে। সে পুরুপুরি সিউর বর্ষার কারনেই বাড়ি ছেরে চলে গেছে বৃষ্টি।
বর্ষার গালে ঠাস ঠাস করে দুটু চর দেয় তার মা।
রাগি চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– দেশে এতো মানুষ মরে তুই মরিস না কেনো? বেয়াদপ মেয়ে নিজেতো আমাদের মান সম্মান ডুবিয়ে ছেরেছেই এখন আবার এসেছে আমার ছোট মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে। কেনো ফিরে এসেছিস তুই? ধোকাই যখন খেয়েছিস তাহলে মরে যেতে পারলিনা তুই। আমার মেয়েটা, তোর কারনে এভাবে বিয়ে হয়ে গেলো তার। ওই বাড়ি থেকে বিশেষ করে রাতের থেকে হাজারো অবহেলা পেয়ে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েও সব সহ্য করে নিয়েছে চুপ চাপ। হাজারো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে ধিরে ধিরে মানিয়ে নিয়েছে সব। এই দু, হাত তুলে কতো দোয়া করেছি মেয়েটার কপালে যাতে একটু সুখ জুটে। হয়তো আমার সে দোয়া কবুল ও হয়েছিলো। সব শেষ করে দিলি তুই। কিভাবে পারলি নিজের আপন ছোট বোনের সাথে এমনটা করতে? তোর কাছে তো মানসম্মান, আমাদের ইমোশন, এগুলো কিচ্ছু আসে যায় না। কিন্তু নিজের বোনের ঘুচানো সংসার ভাংতে একটুও বিবেকে বাধলোনা তোর? তোকে আমি পেটে ধরছি এটা আমার কোন পাপের শাস্তি ছিলো কে জানে।
বর্ষা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। হয়তো তার মনেও একটু অনুসুচনা জেগে উঠেছে। আবেগের বসে একটু বেশিই বলেছিলো বৃষ্টিকে।
ওদিকে আচলে মুখ চেপে কান্না করছে তার মা।
দিনটা কেটে গেলো কিন্তু বৃষ্টির কোনো খোজ পাওয়া গেলোনা।
,
,
পর দিন সকালে, সোফায় বসে আছে বৃষ্টি। আর পাশে বসে নিউজ পেপারটা খুলে সামনে ধরে পরছে ওই বাড়ির মহিলা মানে তার আন্টি নামক মহিলাটা। সে আঙুল দিয়ে চশমাটা ঠিক করতে করতে বলে উঠে,
– তোমার নামে নিখোজ সংবাদ এসেছে পত্রিকায়। পত্রিকার এক কোনে ছোট্ট করে তোমার একটি ছবিও দেওয়া আছে দেখছি। হয়তো তোমার শশুর বাড়ির লোকই দিয়েছে এই সংবাদ।
মহিলাটার হাত থেকে পত্রিকাটা নেয় বৃষ্টি। দেখে তার নাম ও ছবি পত্রিকার পাতায়। এই মুহুর্তে নিজেকে অনেক বড় সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে তার। পত্রিকাটা রেখে হুট করেই মহিলাটার হাত ধরে ফেলে বৃষ্টি।
– প্লিজ আপনারা কাওকে বলবেন না যে আমি এখানে আছি। আমি আর ফিরে যেতে চাইনা কারো কাছে। প্লিজ আমার এই অনুরুধ টুকু রাখেন। কাওকে বলবেন না প্লিজ।
মহিলাটা একটু ভরসা দেয় বৃষ্টিকে,
– আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থাটা। নিশ্চিত থাকো কেও জানবে না।
– আপনার ছেলে মানে ওই ভাইয়াটাকেও বলে দিন যেনো এই ব্যাপারে কারো সাথে শেয়ার না করে।
– আচ্ছা বলে দিবো। তুমি টেনশন করো না। কেও জানবেনা।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, তারপর পুলিশকে ইনফ্রম করেও কোনো খোজ পাওয়া গেলো না বৃষ্টির। এতে একেবারে হতাশ হয়ে পরেছে তার বাবা মা, শশুর শাশুরি এরা সবাই। শুধু দুঃশ্চিন্তার ছাপটুকুও দেখা গেলো না রাতের মুখে। যেনো এই কয়দিনে কিছুই ঘটেনি এই বাড়িতে।
বর্ষার সামনে দাড়িয়ে আছে রাত। নির্জন জায়গা একটা নদীর পাড়।
– তোমার মনে আছে রাত এক সময় আমরা এখনে প্রায়ই আসতাম। কতো মজা করতাম দুজন মিলে। সবুজ ঘাসের উপর পাশাপাশি সুয়ে থাকতাম দুজন। তোমার কাধে মাথা রেখে নদীর জলে ঢিল ছুরে ছুরে স্বপ্ন বুনতাম আমরা। মনে আছে রাত?
– মনে না থাকেলেও ভুলে যাই নি। আর বাদ দাও ঐসব। তোমার এসব আজাইরা কেচাল শুনতে তোমায় ডাকিনি আমি। আমি কিছু প্রশ্ব করবো সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক ভাবেই দিবে।
– আচ্ছা বলো।
– বৃষ্টির সাথে তোমার কি হয়েছিলো। আই মিন কি করেছো তুমি তার সাথে?
– ক কই কিছু করিনি আমি।
– আমি তোমার তোতলামু শুনতে আসিনি এখানে। ক্লিয়ার ভাবে সত্যিটা বলো। আর তুমি ভালো করেই জানো আমি একবারের কথা দুই বার বলতে পছন্দ করিনা। কি বলেছিলে বৃষ্টিকে?
– রাত আমি আসলে,,,,,,,
রাত একটা হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– আমি আসলে কি? ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাকে আমার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছো তাই তো? আমাকে ভালোবাসো সে আমাকে ছেরে না গেলে এটা করবে ওটা করবে আত্মহত্যা করবে। এখন তোমার এসব ভালোবাসা কোথা থেকে উতলে পরছে শুনি। এই ভালোবাসা তখন কোথায় ছিলো যখন আমাকে বিয়ের আসরে রেখে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে চলে গিয়েছিলে তুমি? এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো যখন নিজের বোনকে স্ত্রীর পরিচয়ে অন্য একটা ছেলের হাতে অত্যাচারের মাঝে রেখে অন্য একটা ছেলের সাথে ফুর্তি করছিলে? তখন কোথায় ছিলো তোমার এই ভালোবাসা? আর এখন ভালোবাসা দেখাতে আসছো নিজের বোনের ঘুচানো সংসার ভেঙে। তুমি কি ভেবেছো তোমার মতো এতো লোভি নষ্টা মেয়েকে রাত বৌ করে তুলবে আবার সব জেনে শুনেই। নো বর্ষা। বরং তোমাকে আমি আরো থ্যাংক্স দিতে চাই তোমার মতো লোভি ও বাজে মেয়ে আমার লাইফ থেকে সরে বৃষ্টির মতো কাউকে আমার কাছে তুলে দেওয়ার জন্য।
এবার একটু করুন হয়ে যায় রাতের গলা,
আই এম সরি বর্ষা আমি কখনোই তোমাকে এভাবে বাজে ভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি। বাট তুমিই আমাকে বাধ্য করেছো বলতে। তুমি আমাকে যতটা চাও তার চেয়ে বেশি আমি চাই বৃষ্টিকে। তোমার শুন্যতা মানিয়ে নিয়েছি বৃষ্টির মতো কাওকে পেয়ে। তাই বলে বৃষ্টির শুন্যতা মানিয়ে নিতে পারবোনা আমি। আমি এখন বৃষ্টিকে খুব বেশিই ভালোবাসি। প্লিজ বর্ষা তোমার কাছে হাতজোর করে বলছি, তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাও।
– কিন্তু রাত……
রাত আবারও হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– তুমি না সরলে আমি নিজেই আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিবো তোমাকে। আমাদের ভালোবাসার মাঝখানে তোমাকে দেখতে চাইনা, এখন না, কোনো দিনও না।
রাত কোমরে দু হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওখানে। মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে যাচ্ছে বর্ষা।
,
,
বাইরে চাঁদের আলো। হালকা বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। এতে চাদের আলো কিছুটা রুমেও প্রবেশ করছে তার। বিছানায় শুয়ে আছে বৃষ্টি। মৃশ্রন ঠোট দুটু লেগে আছে একটা আরেকটার সাথে। চোখ দুটু বন্ধ তার। কিছু চুল এসে পরেছে মুখে। এখন ঘুমের রাজ্যে রাজত্ব করছে সে। আশে পাশে মন্ত্রি নামক অনেক গুলো পড়ির বসাবাস। এই রাজ্যে রাজত্ব শুধু তার।
বৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ঘরে অনুভব করছে কেও মুখের উপর থেকে চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে কপালে ঠোট ছুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখ ভর্তি চুমু খেলো কেও একজন। ঠোটে অন্য ঠোটের শীতল ছোয়া অনুভব করতেই জ্বমে পাথর হয়ে যায় সে। এই ছোয়াটা যে খুব পরিচিত তার।
কিছুক্ষন পর অনুভব করে পাশে কেও নেই। পিটপিট করে চোখ খোলে চার পাশটায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। পর্দা গুলো হালকা বাতাসে নরছে। হারিয়ে গেলো তার সেই পরিচিত ছোয়াটা। বৃষ্টি একটু কেদে বলে উঠে,
“” স্বপ্নে এসেও হারিয়ে গেলে কেনো? আরেকটু থাকলে কি হয়? এটা কি স্বপ্ন? নাকি তুমি সত্যিই এসেছো প্রিয়।
To be continue…..
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।??
#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__৩
বৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে। মুখের উপর কিছু চুল পরে আছে এলোমেলো হয়ে। ঘুমের ঘরে অনুভব করলো কেও মুখের উপর থেকে চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে কপালে তার ঠোট যুগল ছুইয়ে দিলো। বৃষ্টির সমস্ত শরির জুরে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।
লোকটা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখ ভর্তি ভালোবাসার পরশ একে দিলো সে। এবার নিজের ঠোটে অন্য ঠোটের ছোয়া পেতেই জমে পাথের হয়ে যায় সে। চক্ষু জোড়া বন্ধ হয়ে আছে তার। কারণ এই ছোয়া তার খুবই পরিচিত।
একটু পর অনুভব করলো পাশে কেও নেই। পিট পিট করে চার পাশটায় তাকালো সে। হালকা বাতাসে পর্দা গুলো নরছে। হারিয়ে গেলো তার সেই পরিচিত ছোয়াটা।
লাইট অন করে চার পাশটায় ভালো করে দেখে বৃষ্টি। রুমের দরজা বন্ধ, বারান্দায় গিয়ে দেখলো তাও কেও নেই। তাহলে কি এটা স্বপ্ন ছিলো?
কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে রইলো বৃষ্টি। চোখের কোন দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে তার। একটু পরই হাটু গড়ে বসে কেদে উঠে সে।
“” আপনি এতোটা নিষ্ঠুর কেনো? স্বপ্নে এসেও আবার হারিয়ে গেলেন? আচ্ছা আপনি কি সত্যিই এসেছিলেন নাকি এটা আমার মনের ভুল স্বপ্ন?
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকটা দিন। একটা অফিসে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে আসলো বৃষ্টি। করো উপরে আর কয় দিন? এবার না হয় নিজের খরচ নিজেই বহন করবে সে। অবশ্য ইন্টার ভিউ দিতে অফিসের ঠিকানাটা তার বর্তমান আশ্রয় কেন্দ্রের মহিলাটাই দিয়েছে। এভাবে অন্যের অন্ন ধংস করতে আর ভালো লাগছেনা তার। তাই বৃষ্টির ডিসিশন ছোট খাটো হলেও একটা জব করবে সে। কোনো মতে নিজের খরচ চালিয়ে নিতে পারলেই হলো। ইন্টার ভিউ দিয়ে রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরছে বৃষ্টি। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো ইন্টারভিউ না দিয়েই চাকরিটা হয়ে গেলো তার। শুধু তারা বৃষ্টির সাথে হালকা একটু কথা বলেই বললো,
– কনগ্রেচুলেশন আপনার চাকরি কনফার্ম। কবে থেকে জয়েন করছেন?
বৃষ্টি খুশিতে হকচকিয়ে বলে উঠে,
– থ্যাংক ইউ স্যার, আপনারা চাইলে কাল থেকেই জয়েন করবো।
– ওকে, নো প্রব্লেম। তাহলে কাল থেকেই শুরু। অল দ্যা বেস্ট।
– থ্যাংক ইউ স্যার।
– মোষ্ট ওয়েলকাম।
বৃষ্টির মাথায় একটা ভাবনা। এই অফিসের বস টাকে কেমন যেনো চেনা চেনা মনে হচ্ছে তার। কিন্তু মনে করতে পারছেনা ওনি আসলে কে।
ও মাই গট, রাতের সাথে একটা মিটিংএ দেখেছি তাকে। আচ্ছা লোকটা আমায় চিনে ফেলেনিতো আবার? না, তা আবার সম্ভব নাকি? সেই কবে দেখেছে তাকে। তাও ঠিক মতো কথাই হয়নি। চিনলে আজ নিশ্চই রাতের সম্পর্কে কিছু জিগ্গেস করতো অথবা তার মতো একজন বিজনেস ম্যান এর স্ত্রী হওয়ার সত্বেও এখানে সামান্ন কয়েক হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতে আসায় অবাক হতো। যাই হোক চিনেনি ভালোই হয়েছে।
রাতের কাছ থেকে দেখে দেখে মোটামুটি অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। তারপরও কোনো সমস্যা হলে এখানে তো লোক আছেই।
বাসায় ফিরে আগে ওই বাড়ির মহিলাটা মানে তার আন্টির মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয় বৃষ্টি। আজ তার আনন্দ আকাশ ছোয়া
এভাবেই চলতে থাকে সব। নতুন অফিস প্রথম প্রথম একটু নার্ভাস লাগলেও এখন সব মানিয়ে নিয়েছে বৃষ্টি।
প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক থাকলেও ইদানিং অফিসের বস তার সাথে অ-স্বাভাবিক আচরণ করে। হালকা ভুল হতেই শুধু ঝাড়ির উপর রাখে। দোষ না দেখলেও খুটিয়ে একটা দোষ বের করে ঝাড়ির উপর ঝাড়ি। এতো কিছু ও চুপচাপ সহ্য করে নেয় বৃষ্টি। কারণ চাকরিটা হারালে তাকে আবার অন্যের করুনার পাত্র হয়ে থাকতে হবে। মাস শেষে বেতনের টাকা গুলো হাতে নিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে একটা দির্ঘশ্বাস নেয় বৃষ্টি। এ রকম কতো টাকা এক সময় তার হাতে ছিলো। হাত ভর্তি টাকা থাকলেও ওসবে ইন্টারেষ্ট ছিলোনা বৃষ্টির। কারণ তার প্রয়োজনিয় জিনিস গুলো রাতকে বললে সে ই এনে দিতো। এর থেকেও বড় একটা অফিসের মালকিন ছিলো সে। আর আজ, এই সামান্য কিছু টাকার জন্য এতো ঝাড়ি খেয়েও এই অফিসের কর্মচারি হয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। সবই এই কোপাল। সার্থপর এক বোনের জন্য নিজের হাসি খুশি সব বিসর্জন দিলো সে।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েকটি মাস। শীত কাল চলে এসেছে। আজ দু,দিন হলো খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে রাত্রি চৌধুরি। কারণ গতকাল রাতের রুমে ঢুকলেই রাতের ড্রয়ারে পরে থাকা প্রগন্যান্সি রিপোর্টগুলো পায় সে। সেই চার মাস আগের রিপোর্ট। বৃষ্টি যেদিন নিখোজ হয়েছে তার দুই দিন আগের।
ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই মায়ের হাতে এই ফ্রেগন্যান্সি রিপোর্ট গুলো দেখে চমকে উঠে রাত। তাহলে মা আজ সব জেনে গেলো। রাত্রি চৌধুরি ধিরে পায়ে এগিয়ে যায় রাতের দিকে। রাগে ফোস ফোস করছে তার সারা শরির। নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে সজোরে একটা চর বসিয়ে দেয় রাতের গালে।
– ছি রাত, ছোট বেলা থেকে তোকে বড় করার এই পরিনাম? তুই আমাদের সন্তান না? ছোট বেলা থেকে কি তোকে একটু পরিমান অবহেলা অযত্ন করেছি আমরা? বরং, সব সময় চিন্তা করতাম আমার ছেলেটা আমার মেয়েটার কোনো অযত্ন হচ্ছে কিনা? তুই কি করে পারলি স্ত্রী সহ তোর এই অনাগত সন্তানের কোনো খোজ খবর না নিতে? আজ কতোটা মাস হলো তারা নিখোজ। কিন্তু তোর মাঝে কোনো উত্তেজনা বা শুন্যতার ছাপ দেখছিনা আমি। কতো স্বপ্ন ছিলো নাতি নাতনির হাত ধরে ধরে খেলা দেখাবো তাদের। এই শেষ বয়সটা তাদের নিয়েই কাটিয়ে দিবো। এই দু,হাত তুলে কতো দোয়া করেছি যেতে এই সংসারে একটা দাদু ভাই এর জন্য। আর তুই এই খবরটাও আমার কানে একটিবারের জন্য পৌছালিনা?
– আমি চেয়েছি সব মিলিয়ে একেবারে তোমাকে সারফ্রাইজড করে দিবো।
– চুপ, কিসের সারফ্রাইজড? নিজের স্ত্রীর কোনো খোজ খবর নেই সে আসছে সারফ্রাইজ দিতে বাহ্।
– রাত এবার আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠে, হুম সময় আসলে ঠিকই দেখবে।
– বৃষ্টি এই বাড়িতে পা রাখা পর্যন্ত একটু খাবারও এই গলা দিয়ে নামবে না বলে দিলাম। কোথায় থেকে খুজে বের করবি ওটা তোর ব্যাপার। আমি শুধু বৌমাকে আমার সামনে দেখতে চাই ব্যাস।
ইদানিং আরশির মাঝে মাঝে মনে হয় কেও তার পিছু নিচ্ছে। পেছন ফিরলেই কাওকে দেখতে পায় না সে। কিছু দুর যেতেই আবার মনে হয় কেও পিছু নিয়েছে। আবার পেছন ফিরলে দেখে কেও নেই।
শুধু তাই নয় রাতে ঘুমানোর সময়ও মনে হয় বারান্দায় কারো ছায়া হাটাহাটি করছে। এই শীতেও ভায়ে কম্বলের নিচে গুর গুর করতে থাকে সে। কম্বলের নিচে মাথাটা ঢুকিয়ে থাকলে কিছুক্ষন পর মনে হয় কেও একজন তার পাশে এসে বসেছে।
ইদানিং দিনের বেলায় অনেক হরোর মুভি দেখে সে। বলতে গেলে এক প্রকার নেশা হয়ে গেছে। দিনের বেলায় নিশ্চিন্তে দেখে, আর রাত হলে যতো ভয়। এই ভয়ে রাতে ছাদে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি সে। কিন্তু এতো কিছুর পরও আরশির মনে হয়, এটা তার মনের ভুল না সত্যি সত্যি কেও তাকে ফলো করছে। এই ব্যাপারে কারো সাথে শেয়ারও করতে পারছেনা আরশি। কেও এটা শুনলে নিশ্চিৎ হাসিতে গড়াগড়ি খাবে। উপকারতো হবেই না বরং আরো হাসির বস্তুতে পরিনত হবে সে। আজ রিদ ভাইয়া থাকলে হয়তো তার সাথে শেয়ার করা যেতো। আমার অনেক প্রব্লম কাওকে না জানিয়ে নিজেই সল্ভ করে নিতো সে। সেই এক মাত্র মানুষ যে বাবা মায়ের পর আমায় নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সাপোর্ট করে যেতো সব সময়। আমি সত্যিই খুব অন্যায় করে ফেলেছি তার সাথে। তার ভালোবাসাকে একটুও মুল্য দিলাম না আমি। সেই দিন কতো বাজে ব্যাবহার করেছি তার সাথে। আচ্ছা সে কি আমায় কখনো ক্ষমা করবে? ভালোবাসবে আগের মতো? আমি যে আপনার জন্য এখন পথ চেয়ে আছি রিদ ভাই কখন ফিরে আসবেন আপনি? যেই আমিকে দেখার জন্য রাতের বেলায়ও এটা ওটার বাহানা করে চলে আসতেন আমাদের বাসায়। সব চেয়ে বেশি সময় কাটাতেন এই বাড়িতেই। কিন্তু আজ এতোটা দিন পেরিয়ে গেলো। একটি বারও আমাকে দেখতে ইচ্ছে হলোনা আপনার? কেনো একটিবার ফোনে কথাও বললেন না আমার সাথে?
শীত কালিন শীতল হাওয়া এসে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির গায়ে। গায়ের চাদরটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিলো সে। শীতের রাত খুটখুতে অন্ধরার চার পাশ। ছোট একটা লাইটে হালকা আলোয় বারান্দায় দাড়িয়ে আছে সে। তখনই কেও পেছন থেকে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় বৃষ্টিকে। মুহির্তেই কফির মগটা হাত থেকে পরে যায় বৃষ্টির। কাচের মগ টা টুকরু টুকরু হয়ে গরম কফি গুলো পায়ে এসে লাগলো তার। তবুও সেদিকে কোনো ভ্রু-ক্ষেপ নেই। জমে শন্ত হয়ে আছে সে। লোকটা পেছন থেকে চুল গুলো সরিয়ে ঘারে আলতো করে চুমু একে দিলো তার।
কিন্তু আগের মতো এবারও উধাও হয়ে গেলো সে। বৃষ্টি প্রতিবারই ভাবে আরেকবার আসুক, এবার বের করেই ছারবো এটা কি আমার মনের ভুল নাকি রাত সত্যিই আমার কাছে আসে। কিন্তু আগে যাই হোক আজ এটা স্বপ্ন হতে পারেনা। রাত জদি সত্যিই আমার ঠিকানা জেনে থাকে তাহলে এমন লুকুচুরি খেলছে কেনো? না কিছুই মাথায় আসছেনা আমার। বৃষ্টি নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে। মা হওয়ার আভাস মোটামুটি ভাবে তার মাঝে ফুটে উঠেছে। এই সন্তানকে কি পরিচয়ে বড় করবে সে?
,
,
ইদানিং বৃষ্টির একটা ছেলের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হলো। তাও আবার ফেসবুকে। ছেলেটার আইডিতে কোনো ছবি পোষ্ট করেনি। আইডির নাম বৃষ্টি ভেজা রাত। সরল মনের বৃষ্টি মোটামুটি সব শেয়ার করে এই ছেলেটার সাথে। বলতে গেলে এখন ভালো বন্ধু তারা।
– সব বুঝলাম, কিন্তু হুট করে এই এ্যাবরশনের সিদ্ধান্তটা কেনো নিলেন। ওটা তো আপনারি সন্তান তাই না?
সাথে সাথেই ম্যাসেজ সিন হলো।
– পৃত্বি পরিচয় হিন আমার সন্তানকে কি করে বড় করবো আমি। আর এমন একটা সিচুয়েশনে মা হওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত নই আমি।
– দেখুন আপনি আগে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। তার পর সিদ্ধান্ত নিন। সে অনুজায়ি কাজ করুন যে আপনি কি চান।
– আমি অনেক ভেবেছি। এই সন্তান আমার ভবিশ্যতের প্রতিটা পদক্ষেপেই বাধা হয়ে দাড়াবে। আর মা হওয়ার জন্য তো এখনো অনেক সময় পরে আছে।
– একজন মেয়ের কাছে মা ডাকটা শুনা কতোটা আনন্দ দায়ক?
– অনেক। কিন্তু পরে সন্তান হলে তাদের কাছ থেকেও আমি মা ডাক শুনতে পারবো। আগে ও রকম একটা সিচুয়েশন তৈরি হোক।
– এটা আপনার প্রথম সন্তান। আর কেও কেও এই একটা সন্তানের জন্য কতো কিছুই করে। আর আপনি পেয়েও নষ্ট করে ফেলতে চাইছেন? হয়তো এমনই তো হতে পারে যে আপনি, আপনি এ্যাবরশন করলেন। পরে আপনি আর কখনো মা হতে পারবেন না। তখন?
মেসেজ সিন হলো কিন্তু বৃষ্টি কোনো রিপ্লাই দিচ্ছেনা। ছেলেটার কথাটা মনের ভেতরে গিয়ে আঘাত করেছে তার। সত্যিই জদি পরে শুনতে পায় যে সে আর কখনো ‘মা’ হতে পারবেনা তাহলে? বৃষ্টি ছোট্ট করে রিপ্লাই দিলো,
– জানিনা।
– দেখেন আপনি এখনো ওই সিদ্ধান্তটা নিতে পারেন নি। আপনার মন যা চায়।
– এখন আমি কি করবো? কিছুই বুঝতে পারছিনা।
– আমার কিছু টিপস্ ট্রাই করে দেখেন। হয়তো সিদ্ধান্তটা বদলাতেও পারে।
– কেমন টিপস্?
– আপনি যখন ফ্রি থাকবেন তখন, একটা নিরিবিলি জায়গায় বসবেন। তার পর আপনার সাথে যে আছে তার সাথে গুন গুন করে কথা বলতে থাকবেন। আর চোখ বন্ধ করে তার উত্তর গুলো অনুভব করবেন। নির্জন জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে পেটে হাত রাখবেন। চোখ বন্ধ অবস্থায় অনুভব করবেন যে, আপনি আপনার সন্তানকে কোলে নিয়ে হাটছেন। মাঝে মাঝে চুমু খাচ্ছেন। তাকে রেখে তার পাশে সুয়ে আছেন। সে হাত পা গুলো নারছে। আপনার খুব ভালো লাগছে তখন। তখনও মন ভরে আদর করছেন তাকে। সে বার বার আপনার কোলে উঠতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আপনি আদর করে কোলে তুলে নিয়ে হাটছেন। সে আপনার গলা জড়িয়ে ধরে আপনার কোলেই ঘুমিয়ে পরলো।
তার পর আবার এটা ভাবুন। বাচ্চাটি হলো আপনি। আর আপনি হলেন আপনার মা। আপনার মা আপনাকে মেরে ফেলতে চাইছে। আপনি পেট থেকে বার বার চিৎকার দিয়ে বলছেন। প্লিজ আম্মু আমায় মেরো না। আমিও দেখতে চাই দুনিয়াটা কেমন। আমিও পেতে চাই বাবা মায়ের আদর। আমাকে এভাবে মেরে রাস্তার কুকুরদের খাবার বানিও না মা।
আপনি দুই ভাবেই চিন্তা করবেন। তার পর হয়তো আপনার সিদ্ধান্তটা বদলাতেও পারে। আর হ্যা, নিজের মাঝে একটা মা মা ফিলিংস আনুন। ভালোবেসে গুন গুন করে কথা বলতে থাকুন তার সাথে। তখন বুঝবেন আপনি আপনার সন্তানকে কতো ভালোবাসেন।
– আচ্ছা আপনি সত্যি করে বলুন তো, আপনি কে?
– আপনার খুব কাছের কেও। সময় হলে বুঝবেন।
– কাছের কেও মানে? সত্যি করে বলুন তো আপনার পরিচয়টা কি?
– এই যে আমরা বন্ধু।
হেসে দিলো বৃষ্টি। ছোট্ট করে বললো,
– আচ্ছা।
To be continue……….
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।??