#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ২)?,পর্বঃ__৮,৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__৮
শীতল পরিবেশ, চার দিকে নিস্তব্দতায় ঘেরা। ছাদের এক পাশে বসে ফোন টিপছে রিদ। একটু আগে আরশিকে বললো তাকে এক কাপ গরম কফি দিতে। মেয়েটার এখনো আসার খবর নাই। রিদ একরাশ বিরক্তি মুখে ভর করে ফোলের স্কিনে চোখ রাখলো। শীতে শীতল হয়ে থাকা আঙ্গুল গুলো স্কিনে নাচাচাচি করছে।
হাতে দু,কাপ কফি নিয়ে রিদের পাশে এসে বসলো আরশি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো তার। রিদের দিকে মগটা বাড়িয়ে দিলে রিদ মগটা নিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকালো।
– এতোক্ষন লাগে আসতে?
আরশি উত্তর না দিয়ে কফির মগে চুমুক দিলো। গলা টেনে দেখার চেষ্টা করলো রিদ কি করছে। কফির মগে চুমুক দিয়ে আরশি বলে উঠে,
– কি হলো রিদ ভাই, এতো বিজি তুমি? আমি যে তোমার পাশে বসে আছি সেটাও তোমার নজরে পরছেনা? কার সাথে চেটিং করছো? ভালো টালো বাসো নাকি কাওকে?
কথাটা একটু মজার ছলেই বললো আরশি। রিদ একটু মুচকি হেসে বলে উঠে,
– কি করে বুঝলি যে আমি কাওকে ভালোবাসি? তোর মাথার প্রশংশা করতে হবে আরশি। বলার আগেই সব বুঝে জাস।
আরশি একটু ভ্রু জুগল কুচকে বলে উঠে,
– মানে?
– মানে আবার কি? জানিস মেয়েটা আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে। আমাকে ছারা কিছু ভাবতেও পারেনা। আমিও খুব ভালোবাসি তাকে। বলতে পারিস আমরা দুজনি এই ব্যারে খুবই সিরিয়াস। আস্তে ধিরে সব কিছু গোচগাচ হয়ে উঠুক, তার পর ফ্যামিলিকে বলে একেবারের জন্য আমার করে ফেলবো তাকে।
আরশি একটু রেগে বলে উঠে,
– তুমি মজা করছো আমার সাথে?
– মজা করতে যাবো কেনো আমি? ও হ্যা তোর কাছে তো আবার সব মজাই মনে হয়। যে তোর জন্য যতই সিরিয়াস থাকুক না কেনো, সবই তো তোর কাছে যাস্ট ফান। উপভোগ করিস এসব। তাদের ইমোশন নিয়ে খেলে অনেক বিনোদন পাস তুই। তোর মতো মেয়ে কি আর সত্যি কারের ভালোবাসার মানে বুঝে? আর আমি তো তাকেই চাইবো যে তার সব কিছু দিয়ে আমায় ভালোবাসবে। যার কাছে আমার ভালোবাসা প্রকাশ গুলো বেহায়ার পরিচয় দিবে না। একটা সময় একটু বেশিই বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম রে। ওসব মনে উঠলে এখন সত্যিই হাঁসি পায়।
আরশি অন্য দিকে চেয়ে আছে। হাঁসি মুখটা মুহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। কারন সে বুঝলো যে রিদ তাকে উদ্দেশ্য করেই কথা গুলো বলছে। সত্যিই তো এক সময় এমন একটা রাতে এভাবে ছাদে দাড়িয়ে কতো বাজে বাজে কথা বলেছিলো রিদকে। এতে তার মনে আক্ষেপ থেকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরশি কফির মগটা ছুরে ফেলে দেয় নিচে। ভেঙে টুকরু টুকরু হয়ে গিয়েছে কাপ টা। রিদ কিছু না বলে ফোন টিপতে টিপতে কফির মগে চুমুক দিলো।
আরশি কিছুক্ষন ওভাবে দাড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে হাটা ধরলো। আবার থেকে বলে উঠে,
– অনেক রাত হয়েছে, ঘরে যাবেনা? কুয়াশায় ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
– তুই যা, আমি আসবো আরো পরে। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
আরশি আবার হেটে রিদের কাছে গিয়ে তার চাদরটা রিদের গায়ে পড়িয়ে দিলো।
– এটা কেনো পেচাচ্ছিস আবার। আমার দরকার নেই তুই নিয়ে যা।
– দরকার হবে, রাত যখন আরো গভির হবে তখন শীত আরো বাড়বে। আর তোমার দেখছি এখনো ঠান্ডা লাগছে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারাতারি ঘরে চলে এসো। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
পরদিন আরশি কলেজে গেলো একেবারে ঠিক সময়েই। কেও কেও পড়ছে আবার কেও আড্ডা দিচ্ছে। ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। আজও গতকালে নতুন স্যারটা আসলো প্রথম ক্লাসে।
আরশি খেয়াল করলো স্যারের ডান হাতের কিছুটা অংশ বেন্ডেজ করা। কেও একজন হুট করে বলে উঠলো, স্যার হাতে কি হয়েছে?
স্যারের কথায় জানতে পারলো কাল রাতে রাস্তা পার হওয়ার সময় হুট করে কে জেনো বাইক নিয়ে এসে তার হাতের তুলু বরারব ধড়ালো ছুরি দিয়ে কেটে দিয়ে চলে গেছে। দুর্ভাগ্য বসতো লোকটাকে চিনতে পারলো না স্যার।
আজ দিনটাই যেনো খারাপ যাচ্ছে আরশির। কোনো কিছুতেই মন বসছেনা তার। কলেজ ছুটির পর রিদের জন্য না দাড়িয়ে রাস্তা পার হতেই একটা গাড়ি তার গাঁ ঘেসে চলে যায়। হয়তো একটু হলেই গায়ে লেগে যেতো আজ। বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস নিয়ে হাটা ধরলো আরশি। প্রায় বিকেল হয়ে গেলো তবুও বাড়ি গেলোনা আরশি। মিম আজ কলেজে আসেনি। মেয়েটা কলেজ মিস দেয় না। আরশির গত কাল রাতে কথা হয়েছিলো তার সাথে। আরশি কয়েক দিন কলেজে আসেনি তাই মিমের কাছ থেকে কিছু নোটস নিতে চেয়েছিলো। মিম বললো আজ কলেজে আসলে দিবো। কিন্তু আজ কলেজে আসেনি সে। আজ হটাৎ মিমের আবার কি হলো? তার বাসায় ফিরার পথেই মিমদের বাসা। তাই বাড়ি না ফিরে মিমদের বাসায় গেলো আরশি। রাত ফোন দিলে বলে, মিমদের বাসায় আসছি বিকেলে চলে আসবো।
ঘরে গিয়ে দেখে মিম বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে সুয়ে আছে। গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বর এসেছে তার। ধুর আজ দিকটা পুরাই কুপা।
আন্টিকে জিগ্গেস করতেই জামতে পারে, আজ সকালে পাত্র পক্ষ এসেছিলো তাকে দেখতে। গতকাল রাতেই নাকি তাদের সাথে কথা হয়েছে। আজ সকালে আসলো দেখতে।
মিমকে পছন্দও করে গেছে তারা। মিমদের ফ্যামিলিটা মধ্যবিত্ব ফ্যামিলি। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেও নাকি বিদেশ থাকে। তিন মাসের ছুটিতে এসেছে বাড়ি। তাই বিয়েটাও তারাতারি ঠিক করার কথা চলছে। এই নিয়ে সকাল থেকে চিন্তায় চিন্তায় দুপুরে জ্বর উঠেছে মিমের। মিম নাকি এই বিয়ে করতেই রাজি না। কারণ সামনে তার ফাইনাল পরিক্ষা। পাত্রর বাড়িতে গিয়েও নাকি পড়া শুনা করতে পারবে সে। তাও এখন বিয়ে করতে চায় না মিম।
এখনো রিদ দের বাড়িতেই সবাই কথা আছে আগামি কাল চলে যাবে তারা। বিকেলে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে সোফায় প্রায় সবাই বসে আছে। এতে একটু অবাক হলেও তার চেয়ে বেশি অবাক হলো রিদের সাথে একটি মেয়েকে দেখে। মুহুর্তেই যেনো একটা ছোট্ট ঝাকুনি দেয়ে উঠে আরশির শরির জুরে। এটাই কি তাহলে সেই মেয়ে? যার কথা গত কাল রিদ ভাইয়া বলেছিলো? আরশি ভেতরে গিয়ে বৃষ্টিকে জিগ্গেস করতেই জানতে পায় এটা নাকি রিদের ফ্রেন্ড। ছোট একটা সস্থির নিশ্বাস ছারে আরশি। মেয়েটার সাথে গিয়ে পরিচিত হয় আরশিও।
– হাই আপু, কেমন আছেন?
– ভালো তুমি?
– জ্বি আলহাম্দুলিল্লাহ্।
পাশ থেকে রিদ বলে উঠে,
– আমার ফুফির মেয়ে আরশি।
– ও এটা তাহলে সেই আরশি? বাব্বাহ্।
কথাটা একটু অন্য রকম ভাবে বলে উঠে মেয়েটি।
রিদ আর মেয়েটি কথা বলছে। আরশি গিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
বিকেলে আবার মেয়েটা চলে গেলো। রিদ এগিয়ে দিয়ে এলো তাকে।
সন্ধার পর রিদকে বলে উঠে আরশি,
– এটাই কি সেই মেয়েটা যার কথা হতকাল বলেছিলে?
– তোর কি মনে হয়?
– যা বলছি তার উত্তর দাও রিদ ভাই। এটাই কি সেই মেয়ে যাকে তুমি,,,,,,
– হুম, কেমন মানিয়েছে আমাদের?
আরশির এবার চোখের কোনে পানি জমে গেলো। একটু কান্না মাখা অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– তুমি না আমায় খুব ভালোবাসতে, তাহলে এটাই বুঝি তোমার ভালোবাসা? তুমি না সব সময় ফিউর লাভ এর কথা বলো? তাহলে এটাই তোমার ফিউর লাভ? কাওকে ভালোবাসলে আবার সেই মনে এতো তারাতারিই আরেকজনকে জায়গা দিয়ে দিতে পারলে তুমি?
– হুম তখন আবেগে একটু বেশিই, বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম। তুই নিজেই তখন আমার বেহায়া নির্লজ্জ বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলি। সেগুলো তোকে নতুন করে শুনাতে হবেনা আরশি।
রিদ একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে আবার বলে উঠে,
– অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। বোকার মতো কেদেছিলামও খুব। কিন্তু দিন শেষে যখন নিজেকে এটা বুঝিয়েছি যে, লাইফে নিজেকে নিজেই গড়ে তুলতে হয়, এমন কারো জন্য নিজের চোখের জল ফেলবোনা যে আমার ইমোশনের আমার ভালোবাসার একটু মর্যাদা দিতে শিখেনি। আমাকে এমন কাওকে বেছে নিতে হবে যে আমাকে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে। ধিরে ধিরে নিজেকে বদলে নিয়েছি আমি। একটা সময় ওসব ভেবে কষ্ট নয় বরং হাসি আসতো।
হুট করেই রিদকে জড়িয়ে ধরে আরশি।
– আমায় ক্ষমা করে দাও রিদ ভাই, আমি মানছি তোমার সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অনেক বদলেগেছি আমি এখন সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি। রিদ ভাই। বলোনা সব মিথ্যে ছিলো। আর তুমি আমায় সেই আগের মতোই ভালোবাসো?
রিদ আরশিকে নিজের কাছ থেকে ছারিয়ে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় আরশির গালে।
– তোকে বলছিনা, আমার গায়ে টার্চ পর্যন্ত করবিনা, আমার অনুমতি ছারা। নিজেকে কি ভাবিস তুই? এতো কিছুর পরও আমি তোরএই নেকা কান্নায় গলে যাবো? হুট করেই আমার উপর ঝাপিয়ে পরবি আরআমি সব ভুলে যাবো? নো আরশি,,,,,। শরিরের জদি এতোই চাহিদা থাকে তাহলে আমার কাছে না, সেজে গুজে রাস্তায় গিয়ে দাড়া কাস্টমারও পাবি অনেক। নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনেও যাতে তোকে না দেখি।
রিদের কথায় ও থাপ্পরের আঘাতে গালে হাতদিয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে আরশি।
রাতে ঘুম আসছেনা আরশির, বালিশে মুখ গুজে কান্না করছি সে। এক সময় সে কাদিয়েছে আর আজ কাদছে। পার্থক্যটা শুধু সময়ের। এটাই বুঝি প্রকৃতির প্রতিশোধ? কাদতে কাদতে এক সময় ঘুমিয়ে পরে আরশি।
ঘুমের মাঝে আরশি অনুভব করে সে হাওয়ার ভাসছে। কেও একজন কোলে করে নিয়ে হাটছে। আরশি কিছু বলে উঠার আগেই লোকটা ধপ করে নামিয়ে দেয় তাকে। চার দিকে খুটখুটে অন্ধকার। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ছাদে তারা। সামনে বসে আছে সেই মাস্ক পরা ছেলেটা। আরশি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– কে আপনি? কেনো আমার সাথে এমন করছেন? কি চান আপনি?
ছেলেটা একটু ভারি গলায় বলে উঠে,
– তোমাকে,
– মানে?
– আজ নিশ্চই তোমার নতুন স্যারের হাতের অবস্থা চোখে পরেছে তোমার?
– তার মানে ওটা,,,,,
– হুম আমিই করেছি। অপরাধ ছিলো তোমার সাথে হাত মিলানো।
– কিন্তু কেনো এমন করছেন আপনি? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?
– মনটা চুরি করে ফেলেছো তুমি। এটাই তোমার অপরাধ। আর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তারই অবস্থা কারাপ হয়ে যাবে। এখন তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো আমার নেক্সট টার্গেট রিদ। আমার ভালোবাসার মানুষকে আঘাত করা। তার তালে চর দেওয়া। তোমার গায়ে হাত তোলা তো দুরে থাকে, যে আঙুল তুলে কথা বলবে তার সেই আঙুল কেটে কুকুরকে খাওয়াবো আমি।
– প্লিজ আপনি রিদ ভাইকে কিছু করবেন না। ওকে কিছু করবেন না আপনি। আপনার দুটু পায়ে ধরছি আমি। প্লিজ,,,,,,,,,
আর কিছু বলার আগেই ছেলেটা আরশির মুখে একটি রুমাল চেপে অজ্ঞান করে ফেলে আরশিকে।
To be continue…….
#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__৯
গতকাল থেকে আর রিদের সামনে যায়নি আরশি। থাকুক সে তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে। আমি তার কে? কেও না। হয়তো এক সময় অনেক কিছুই মনে করতো আমায়। কিন্তু আমি তার সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারিনি।
আজ চলে জাবে রাত, বৃষ্টি, আরশি ও তার বাবা-মা। রিদ ও বৃষ্টি বসে আছে সোফায়। ব্রেকফাস্ট করে একেক জন একেক কাজে বেস্ত। কেওবা বাইরে হাটতে গেছে, আর কেও চলে গেছে অফিসে। আর কেও দরজা বন্ধ করে গোমড়া মুখে বসে আছে ঘরে। আর রিদ ও বৃষ্টি বসে আছে সোফায়।
– আরশি আজ কলেজে যাবেনা?
– কি জানি, সকাল থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে দেখছি। আচ্ছা রিদ ভাই, গত কাল যে মেয়েটা এসেছিলো সে আপনার তো ফ্রেন্ড তাই না?
– হুম, কলেজ ফ্রেন্ড। দেশে ফিরার পর দেখা হয়েছে তাই বাড়িতে নিয়ে এলাম। আর তাছারা তাকে এখানে নিয়ে আসার অন্য একটা কারণ ও আছে।
– হুম জানি, আরশি।
– ভাবি,
– হুম,,,,,
– আরশি আর আমার সম্পর্কে কেও জানুক আর নাই জানুক। তোমার মোটামুটি কিছুই অজানা নয়। আমার দুর্বলতা সম্পর্কে আরশিকে না জানালেই ভালো হবে।
– আরশি কিন্তু এখন পুরোপুরিই আপনাকে ভালো বাসে। আর আপনিও আরশিকে। তাহলে কেনো এমন ছন্নছারা হয়ে আছেন।
– শুনেন ভাবি, কখনো ছেরে যায় ভাবোবাসার মানুষ মাঝ পথে একা ফেলে, ছেরে যায় তারা না চাইতেও উজার করা ভালোবাসা পেলে। তাই আমি চাই আবেগ নয় ভালোবাসার মানেটা আরশি বুঝতে শিখুক। আমাদের মাঝে আগে এতো কিছু হওয়ার পরও যদি আমি আরশির কথায় দুর্বল হয়ে পরি তাহলে তার কাছে আমার আত্মসম্মান টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে বলুন। আমি চাই যতোটা কষ্ট আমি পেয়েছি ঠিক ততোটা কষ্ট এখন সে পাক। যেদিন আরশি ভালোবাসার মানে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে শিখবে সেদিন আমি তাকে নিজের করে নিবো।
বৃষ্টি একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে সোফায় হেলান দিয়ে বলে উঠে,
– আজব ভালোবাসার বিস্তার আপনাদের মাঝে। আচ্ছা আরশি যদি ভালোবাসার মানে বুঝতে বুঝতে অন্য কারো ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলে তাহলে?
– আপনার কি মনে হয়?
– বলা তো যায়না, এই বয়সে মেয়েরা বিবেকের চাইতেও আবেগ কে প্রধান্য দেয় বেশি। হয়তো দেখা যাবে, আপনার কাছে থেকে অবহেলা পেতে পেতে তার কাছে মনে হবে, অন্য কেও তাকে আপনার চাইতে বেশি ভালোবাসে তখন যদি সে তার ডাকে সারা দিয়ে দেয়?
– আচ্ছা ভাবি একটা কথা বলুন, আরশি কি আমায় আগে ভালো বাসতো?
– আমার জানা মতে, না।
– তাহলে সে অন্য কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে জড়ায় নি কেনো?
– সেটা আরশিই ভালো জানে।
– কারণ আমি ছোট বেলা থেকেই আরশির পাশে ছায়া হয়ে তাকতাম যাতে তার কাছে কেও ঘেসতে না পারে।
– আপনাদের দুজনই অদ্ভুত, কখন যে মতি গতি পল্টি খায় তার কোনো হিসেব নেই।
রিদ মাথা ঝাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো সেখান থেকে।
আরশিকে ডেকে কলেজে দিয়ে এলো রিদ। যদিও আরশি রিদের সামনে পরতে ইচ্ছে করছে না তবুও নিরুপায় হয়ে তার সাথেই যেতে হলো তাকে।
ক্লাসে আজ কোনো মনোযোগ নেই তার। মন মরা হয়ে বসে ছিলো ক্লাসে।
– কিরে এমন ভাব ধরে বসে আছিস, মনে হয় জামাই অন্য কাওকে নিয়ে ভেগে গেছে সুন্দরি।
হটাৎ কারো কথায় আরশি পেছনে ফিরে দেখে, তৃনা। মেয়েটা সত্যিই অনেক বিরক্তি কর। ছেলেদের মতো চলাফেরা। মাস্তন গিরি। আরো কয়েকটা মেয়ে আছে এমন। ওদের কাজই কাওকে বিরক্ত করা। তাই কিছু না বলে চুপ চাপ বসে আছে আরশি।
মেয়েটা একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে আরশির পাশে বসে।
– ওমা, সুন্দরির দেখি কতো দেমাগ।
গতকাল থেকেই মন মেজাজ চরম পর্যায়ে আরশির। মেয়েটার বিরক্তিগুলো কিছুক্ষন দাত চেপে সহ্য করে, উঠেই ঠাস করে একটা চর মেরে দেয় মেয়েটাকে। রাগে ফোস ফোস করছে আরশি। মেয়েটাও রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি খুন করে ফেলবে আরশিকে।
ওখানে তাদের মাঝে ঝামেলা হওয়ায় ক্লাস শেষে প্রন্সিপাল অপিস কক্ষে ডাকলো আরশি ও তৃণা কে। তাদের অভিবাবক কে ফোন দিলো স্যার। আরশির সব খানে বাবা মায়ের পর লোকার অভিবাবকের জায়গায় রিদের নাম ও নাম্বার দেওয়া। কারণ সব খানে রিদ নিজেই তার নামটা দিয়েছে, যাতে কোনো প্রব্লেম হলেই সে জানতে পারে।
রিদকে ফোন করে কলেজে নিয়ে এলো স্যার। লাইফে প্রথমবার এমন হলো আরশির সাথে তাই ভয়ে রিদের পেছন গিয়ে তার হাত ধরে লুকিয়ে আছে আরশি।
ড্রাইবিং করছে আর হাসিতে লুতুপুতু খাচ্ছে রিদ। পাশে বসে রাগে জ্বলছে আরশি।
– বাব্বাহ্, তুই দেখি আজকাল কলেজে মারামারিও করিস। তোর দেখি অনেক সাহস। চেষ্টা করতে হবে কলেজে ছেলে ভিপি বাদ দিয়ে তোকে ভিপি বানিয়ে দিতে।
– তুমি বক বক বন্ধ করবে রিদ ভাই? চুপ চাপ গাড়ি চালাও।
– আচ্ছা কি নিয়ে লাগলি রে?
– ওফ চুপ করো তো।
রিদ ড্রাইবিং করছে আরশি চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাগ্যিস অভিবাবকের জায়গায় রিদ ভাইয়ার নাম ছিলো। আব্বু অথবা ভাইয়া জানলে আজ বারোটা বাজিয়ে ছারতো আমার।
– মেয়েটা সব সময় এমন করে, আজ একটু বেশিই করেছিলো তাই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারিনি। প্লিজ বাড়িতে কাওকে কিছু বলোনা প্লিজ।
বিকেলে চলে গেলো সবাই বাড়ি। রিদ ও তার বাবা মাকে যেতে বললেও গেলোনা তারা। অস্ট্রেলিয়াতে সব কিছু বিক্রি করে দেশে চলে আসলো তারা। এখানেই সব শুরু করবে তারা। তাই এখন একটু ঝামেলায় আছে। পরে সময় করে যাবে তারা। আর রিদ তো আগে মাসে ২৫ দিনই ওখানে পরে থাকতো।
সন্ধার পর পড়তে বসলো আরশি। বৃষ্টি হর্লিক্স বানিয়ে তার সামনে রেখে পাশে বসলো। হর্লিক্স দেখে একটু অবাক হলো আরশি। ভ্রু কুচকে বৃষ্টির দিকে তাকায় সে। বৃষ্টি একটু হেসে বলে উঠে,
– আরে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন তো তোমার শক্তি প্রয়োজন তাই না? তা না হলে কলেজে তৃনার সাথে ঝগড়া করবে কি করে?
আরশি চোখ বড় বড় করে তাকায় বৃষ্টির দিকে।
– তুমি জানলে কি করে? রিদ ভাইয়া বলেছে তাই না?
– হুম, বললো, এখন থেকে তোমাকে ভিটামিন যুক্ত খাবার খাইয়ে শক্তি শালি গড়ে তুলতে।
আরশি দাত দিয়ে নিচের ঠোট টা কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে মাথাটা এদিক ওদিক ঢুলিয়ে বৃষ্টিয়ে বলে উঠে,
– যাওতো ভাবি।
রিদের বাচ্চা রিদ। কতো বার হাতে পায়ে ঘরে বললাম কাওকে বলিস না বলিস না। তাও মুখে আটকে রাখতে পারলো না এটা। আজ বাচিয়ে মনে হয় এভারেষ্ট জয় করে ফেলেছে।
– এই ভাবি,,
– আবার কি?
– রিদ ভাই কি বাবা মা ভাইয়াকেও কথাটা বলে দিয়েছে?
– না শুধু আমায় বললো। ওরা কিছু জানেনা। আমিও বলিনি।
– ভালো করেছো এখন যাও। আরশি দাত মুখ খিচে টেবিলে একটা হাত দিয়ে আঘাত করলো।
কিছুক্ষন পর বাবা মায়ের চেচামেচিতে দৌড়ে নিচে চলে যায় আরশি। শুনতে পায়, বাবা মাকে বলছে,
– আমার এখনি হসপিটাল যেতে হবে।
– কেনো? এখন হসপিটালে কেনো?
– রিদ নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। এখন হসপিটালে আছে। আমাকে এখনি যেতে হবে।
– দাড়াও আমিও আসছি।
– না তোমার যাওয়ার দরকার নেই। বৃষ্টির এই অবস্থায় তাকে এভাবে ফেলে যাওয়ার দর কার নেই। তাছারা রাতও এখনো ফিরেনি। কতো সমস্যা টমস্যা আছে। আমি একাই যাচ্ছি।
আরশির বুকটা কেপে উঠে ধুক ধুক করে। মনে পরে গত কাল রাতে অচেনা লোকটার কথাটা। আমাকে থাপ্পর মারায় রিদ ভাইয়াকে ছারবেনা সে। তাহলে কি এক্সিডেন্ট টা সে ই করিয়েছে? ভাইয়া এখন কেমন আছে? কিছু হয় নিতো তার? উত্তেজনা মুলক ভাবে আরশিও বলে উঠে,
– বাবা, আমিও যাবো তোমার সাথে।
– না তোমার যাওয়ার দরকার নেই এই রাতের বেলায়। দিনে তোমার মায়ের সাথে যেও।
কে শুনে কার কথা, আরশি কেদে কেটে অস্থির। অবশেষে রুদ্র চৌধুরি তার সাথে নিয়ে গেলো আরশিকে।
রিদেম মাথায় চোট লেগেছে হাতটাও বেন্ডেজ করা। ঘুমিয়ে আছে সে। ভেতরে চুপচাপ বসে আছে আরশি। আরশির কান্না কাটিতে রিদের পাশে থাকতে দিয়েছে তাকে। বাকিরা বাইরে বসে আছে।
রিদ ঘুম থেকে উঠতেই দেখে আরশি পাশে বসে আছে। ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা বেজে গেছে।
– এতো রাতে এখানে কেনো এলি তুই? তাও আবার এই শীতের রাতে।
আরশি কাদু কাদু ভাবে বলে উঠে,
– তোমার কিছু হয়নি তো রিদ ভাইয়া?
– না তেমন কিছুনা, এমনি মাথায় একটু চোট লেগেছে আর হাতটা একটু কেটে গেছে তাই ব্যান্ডেজ করা। তাছারা কিছু হয়নি।
– তোমার এমন হওয়ার জন্য আমিই দায়ি রিদ ভাইয়া। আমার জন্যই তোমার এমন হয়েছে।
– আরে ধুর পাগলি, এটা যাস্ট একটা ছোট খাটো এক্সিডেন্ট। এতে তোর কি দোষ?
– আরশি গত কাল রাতের কথা রিদকে বলতে চেয়েও থেমে গেলো।
এই শীতের রাত্রি তাই হসপিটালে থাকা অসম্ভব। আর রিদেরও তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। তাই বাড়ি চলে গেছে সবাই। যদিও একজন থাকতে হবে আর তা হলো আরশি। রিদের মায়ের অবস্থা কান্না কাটি করতে করতে কাহিল। তাই তাকে বাড়ি নিয়ে চলে গেছে। আর আরশিও জেদ ধরেছে সে এখানে থাকবে। এখান থেকে এক পা ও নরবে না সে। তাই রুদ্র চৌধুরিও বললো সমস্যা নেই আরশি যেহেতু থাকতে চাইছে থাকুক। তাছারা একটু পর রাত ও আসছে। সমস্যা হবে না।
রিদ আরশির দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– এই হসপিটালে থাকতে পারবি সারা রাত? তাও আবার এই শীতের রাতে।
আরশি কিছু না ভেবেই বলে উঠে,
– পারবো আমি।
রিদ একটু হেসে আরশিকে ডাক দেয়।
– এদিকে আয়।
আরশি গিয়ে আসলো রিদের পাশে। রিদ একটু সরে বলে উঠে,
– আয় আমার পাশে সুয়ে পর।
– না সমস্যা নেই থাকার জায়গা আছে তো। আর তাছারা তোমারই তো প্রব্লেম হবে।
– না হবেনা। তোকে যা বলেছি তাই কর আরশি। চর খেতে না চাইলে এখানে চুপ চাপ সুয়ে থাক আমার পাশে।
– আরশিও চুপ চাপ লক্ষি মেয়ের মতো সুয়ে পরে রিদের বুকে মুখ লুকিয়ে কেদে উঠলো।
To be continue……….