বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ_৪

0
1172

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ_৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

অভিমানি দৃষ্টিতে অন্য দিকে ফিরে যায় মেঘলা। লোকটার সাথে কথা বলবেনা আজ, কিছুতেই বলবেনা সে। কিন্তু মেঘলার অভিমানি ভাব ইগনোর করে শ্রাবন ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে হেটে চলছে সামনের দিকে। এবার এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত পা ছোরাছুরি করছে মেঘলা। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। হয়তো ছোট বেলায় হর্লিক্স কম খাওয়ার ফল এটা।
শ্রাবন মেঘলাকে নিয়ে ধপাস করে বিচানায় ফেলে সোজা হয়ে দাড়ায়।
আজকে একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিস মেঘলা। অন্যান্ন দিনের চেয়ে আজ একটু বেশিই ভারি লাগছে। দুই মন চালোর বস্তাও মনে হয় এতো ভারি হবে না। ওফ কোমর টা আমার গেলো রে।
মেঘলা রাগে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,,
– এসব মিথ্যা অপবাদ দিবেন না,,, আমি মোটেও এতো ভারি না, মাত্র ৫২।
বলেই থেমে গিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে,, যাক বাবা, আমি তো আজ ভাইয়ার সাথে কথাই বলবো না বলছি, তাহলে এটা কি হলো?

শ্রাবন মেঘলার সামনে বসে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার দিকে। দেখে মেঘলার হাত ছিলে রক্ত জমাট লাল হয়ে আছে এখনো। এতক্ষন মোচড়া মুচড়ি করায় হায়তো রক্তও বেড়িয়ে আসতে চাইছে?
শ্রাবন হাতটা আলতো করে নিজের হাত দিয়ে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো। ছিলে যাওয়া অংশ টা হাত দিয়ে চেপে ধরতেই বেদনা দায়ক শব্দ করে উঠে মেঘলা।
– ভাইয়া, কি করছো,, লাগছে আমার।
শ্রাবন হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরলে এবার চোখ মুখ খিচে সহ্য করার চেষ্টা করছে সে। সহ্য শক্তি কমে গেলে কেঁদে দেয় মেঘলা।
– হাত চেপে ধরায় খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? ঠিক এভাবে যদি কেও চামড় ভেদ করে হৃদপিন্ডটা চেপে ধরে তাহলে কেমন মনে হবে?
– শ্রাবনের কথায় কষ্ট ভুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় মেঘলা।

শ্রাবন হাতটা পরিস্কার করে মলম লাগাতে লাগাতে বলে,
– রাজকে কি পছন্দ করিস তুই?
একটু অবাক হলো মেঘলা। হয়তো শ্রাবন এমন কথা বলে উঠবে তা মেঘলার ধরনার বাইরে ছিলো।
শ্রাবন আবারও বলে,
– কি হলো বল, রাজকে কি পছন্দ করিস তুই?

মেঘলা এবার রাগের মাথায় বলেই ফেলে,,
– খুব আজব লোকতো ভাইয়া তুমি,,, সব সময় নিজেই সব বুঝো, নিজেই সব করো, নিজেই রাগ দেখাও, নিজেই আঘাত করো। তবুও আমি কেনো কিছু বলিনা এটা বুঝোনা? আর রাজকে কেনো আমি ভালোবাসতে যাবো? সি ইজ মাই যাস্ট ফেন্ড। এর চেয়ে বেশি কিছু না। তখন শুধু আমি পড়ে যাওয়ার সময় আমায় ধরেছে এতটুকুই। আর তুমি ওটাকেও কতো বড় একটা বিষয় বানিয়ে ফেললে। কেনো এমন করো আমার সাথে ভাইয়া? তুমি কি বুঝনা,,,,
বলেই হন হন করে উঠে বাইরে চলে গেলো মেঘলা।
,
,
রাত তখন গভির,, বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের মস্তবড় চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে মেঘলা। ঘুম আসছেনা তার। পাশে তাকাতেই অপর বান্দায় কেও একজনকে দেখতে পেলো সে। হ্যা, ব্যালকনিতে গল্পর বই হাতে বসে আছে নিছার। রাত জেগে বই পড়াটা হয়তো নেশা হয়ে গেছে ছেলেটার।
ফোনের টুং টাং শব্দে ফোনের স্কিনে তাকালো মেঘলা। ছোট্ট করে লিখা আছে, ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়ে গেছে। রাত জাগলে আবার শরির খারাপ করবে।
ম্যাসেজেটা দেখে ঠোঁটের কোনে একটা হাসি ফুটে উঠলো মেঘলার।
,
,
এভাবেই চলছে দিন। ফুলের টব গুলোতে পানি দিচ্ছে মেঘলা। শ্রাবন গিয়ে দাড়ায় তার পাশে। ফুটন্ত তাজা গোলাপের গাছ টা তেকে টুপ করে ফুলটা ছিড়ে নিলো শ্রাবন।
সবে একটাই ফুটেছিলো ভালো করে। আর তাও শ্রাবন ছিড়ে নেওয়ায় রাগটা পুরোপুরি মাথায় চড়ে বসে তার। শ্রাবনকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শ্রাবন একটা আঙুক দিয়ে মেঘলার ঠোঁটকে স্পর্শ করে থামিয়ে দেয়। গোলাপের কাটাগুলো একটা একটা করে ফেলে দিয়ে মেঘলার কানের কাছে গুজে দেয় গোলাপটা।
হটাৎ শ্রাবনের এমন কাজে একটু অবাক হয় মেঘলা। রাগটা মুহুর্তেই ভালো লাগাতে পরিনত হয় তার।
শ্রাবন দুই গালে হাত রেখে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিতেই কেঁপে উঠে মেঘলা। শ্রাবন মেঘলার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠে,
– খুব ভালো মানিয়েছে তো দেখছি আমার মেঘ রানীকে।
কিছু বললো না মেঘলা,, লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে নিচের দিকে তাকায় সে।
,
,
অতিতের সেই দিন গুলোর কথা মনে পরতেই চোখ দিয়ে অশ্র গড়িয়ে পড়ে মেঘলার। কেনো যে দিন গুলো এতো তারাতারি শেষ হয়ে গেলো। কেনোই বা একটা কালরাত কেড়ে নিয়েছে তার হ্যপি থাকার প্রধান কারণ টা। শ্রাবনের ছবিটা বুকে জড়িয়ে ডুকড়ে কেঁদে উঠে মেঘলা। “এক বার ফিরে আসো না,, খুব ভালোবাসবো তোমায়। তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো প্রিয়? মেঘলা কাঁদছে আর বার বার মনে পরছে অতিতের সব স্মৃতি।
,
,
সেই দিনটা ছিলো শুক্রবার। শ্রাবনের বাবা মা ও মেঘলার বাবা মা সবাই গেছে বাইরে। মেঘলা ও তার ছোট ভাই নিছার আছে বাড়িতে।
একটা দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো মেঘলার মাথায়। আর তা ছিলো আজ শ্রাবনকে চমকে দেওয়ার। সকাল থেকে নিজ হাতে শ্রাবনের সব পছন্দের খাবার রান্না করলো মেঘলা। শ্রাবনের দেওয়া লাল শাড়িটা পড়ে নিলো সে। সাথে লাল চুড়ি,, কানের পাশে সেদিনের মতো একটা গোলাফ ফুল গুজে নিলো সে।
নিছারকে ঘরে থাকতে বলে বেড়িয়ে গেলো মেঘলা। নিছার বসে বসে হোম ওয়ার্ক কমপ্লিট করছে, আর কাজের মেয়েটা টিভি দেখছে আর হাসছে। একটা সি,এন,জি নিয়ো সোজা চলে গেলো শ্রাবনের বাসার সামনে। সি,এন,জি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে রাস্তার এক পাশে দাড়ালো সে। আশে পাশে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসে মেঘলা। আজ নিশ্চই সারপ্রাইজড হয়ে যাবে শ্রাবন।

শ্রাবনের সাথে অন্য একটা মেয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে হ্যাং হয়ে দাড়িয়ে আছে মেঘলা। সারপ্রাইজ দিতে এসে যে নিজেই এতো বড় সারপ্রাইজড হয়ে যাবে তা হয়তো ধারনার বাইরে ছিলো তার। এটা কি সত্যিই শ্রাবন ভাইয়া?

To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here