বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ_৬

0
1334

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩),পর্বঃ_৬
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– গালে হলে ১০×৫ মানে ৫০ মিনিট আর ঠোঁটে হলে ১০×২ মানে বিশ মিনিট। নে শুরু কর তারাতারি।
মেঘলা অন্য দিকে ঘুরে বলে,
– পারবো না আমি, কিছুতেই পারবো না।
শ্রাবন একটু রিলেক্স মুডে শুয়ে বলে,,
– যতই দেড়ি করবি পানিশমেন্টততোই বাড়বে। বাকিটা এবার তোর ইচ্ছে।
মেঘলা একটা শুকনো ঢোক নিয়ে বলে,
– করতেই হবে?
– তো আমি কি তোর সাথে মশকরা করছি নাকি? এই শ্রাবনের গায়ে আজ পর্যন্ত কেও থাপ্পর মাতার সাহস পায়নি। এমনকি আমার বাবা মাও কখনো দেয়নি। এই প্রথম তুই এই দুঃসাহস দেখালি। পানিশমেন্ট তো তোকে পেতেই হবে।
ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে মেঘলা মনে মনে হাজারও কিছু বলে ফেলেছে শ্রাবনকে। সালা, গন্ডার, হাতি, মহিষ, উগান্ডা, ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা, ফাজিল, সয়তান, লুচি,,,, সময় আসুক আমারও তোর লুচি গিরি ঠিকই বের করে ছারবো। আর না পারলে আমার নামও মেঘলা চৌধুরি না,, হুহ্,,,,,,,

শ্রাবনের ডাকে মনে মনে বকা বন্ধ করে কেঁপে উঠে মেঘলা। শ্রাবন শান্ত গলায় বলে,
– কি হলো শুরু করছিস না কেনো? পানিশমেন্ট বাড়ানোর শখ হয়েছে নাকি?
মেঘলা কি বলবে কি করবে কিছুই ববেবে পাচ্ছে না,,, আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– পা পা পানি খাবো,,,
– তোর পাশেই তো গ্লাস ভর্তি পানি আছে।
মেঘলা পাশে ফিরে দেখে এক গ্লাস পানি একটা প্রিচ দিয়ে ঢাকা। এই পানির গ্লাস টা আবার এখানে আনতে গেলাম কেনো কে জানে।
মেঘলা একটু পানি খেয়ে নিলো,,, আবারও শ্রাবনের দিকে তাকালো। বাচার কোনো উপায়ই খুজে পাচ্ছে না সে। দরজার দিকে তাকিয়ে আগে হিসেব মিলিয়ে নিলো দরজাটা খুলতে কতোক্ষন সময় লাগতে পারে। হিসেব শেষে শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
– এভাবে তাকাবেন না, আমার লজ্জা লাগে,,, চোখ বন্ধ করুন।
শ্রাবন চোখ বন্ধ করে নিলো৷ মেঘলা আবারও বলে,,
– চোখ খুলবেন না কিন্তু, চোখ খুললে আমার লজ্জা লাগবে।

মেঘলা বিড়ালের মতো বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে দৌড় দিতেই খপ করে হাতটা ধরে নেয় শ্রাবন। শ্রাবনের হেচকা টানে তার বুকে এসে আছড়ে পরে মেঘলা। এখন একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে খুব কাছ থেকেই।
শ্রাবন এক হাতে মেঘলার কোমড় জড়িয়ে নিলো। শ্রাবনের স্পর্শেই কেঁপে উঠলো মেঘলা। এই প্রথম শ্রাবনের এতোটা কাছে আসায় নিশ্বাসটা উঠা নামা করছে তার। শ্রাবন খুব শান্ত ভাবে বলে,
– পালাতে চাইছিস না, আমার থেকে? কতদুর যেতে পারবি পালিয়ে?
মেঘলা চুপ করে আছে লজ্জা ভঙ্গিতে চোখ দুটু নিচের দিকে তাকিয়ে।
শ্রাবন মেঘলার মুখে আসে হালকা চিকন চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিলো। হাত দিয়ে মেঘলার গালে স্নাইড করতেই সিউরে উঠে মেঘলা।
হটাৎই আলতো করে মেঘলার ঠোঁটে ঠোঁট মিসিয়ে দিতেই জমে পাথর হয়ে যাওয়ার অবস্থা তার। কিছুক্ষন পর মেঘলা জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে কিয়ে বলে,
– আমায় ভালোবাসেন শ্রাবন ভাই? আমি তো বুঝি, তবুও একবার মুখ দিয়ে বলুন না,,, খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।
শ্রাবন মেঘলাকে ছেরেই উঠে দাড়ায় আচমকাই এমন হয়ে যাওয়ার নিজের কাছেও নার্ভাস ফিল হচ্ছে তার। টপিক ঘুরাতে শ্রাবন বলে,
– তোর কি এখনো ভালোবাসার বয়স হয়েছে? পিচ্চি মেয়ে এসবের কি বুঝিস হ্যা?
শ্রাবন পাশে থাকা পানির গ্লাসের পেছনে এক গ্লাস দুধ ও দেখতে পেলো। দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে,
– দুধ টুকু এখনো গ্লাসে কেনো?
মেঘলা মাথা নিচু করা অবস্থায় অভিমানি কন্ঠে বললো,
– খেতে ইচ্ছে করেনা,,,
– দেখি কেমন ইচ্ছে করে না,,,
বলেই মেঘলার গালে দুই আঙুল দিয়ে ধরে মুখে দুধের গ্লাসটা চেপে ধরলো। ততোক্ষন ধরে রইলো যতক্ষন পর্যন্ত গ্লাসের শেষ ফোটা টুকু তার পেটে গেলো। পানি খাইয়ে গ্লাস গুলো ওখানে রেখে মেঘলাকে শুইয়ে দিলো শ্রাবন।
– ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়েছে।
বলেই হন হন করে দরজা অব্দি চলে এলো শ্রাবন। আবার কি বুঝে ফিরে এলো, একটু মুচকি হেসে মেঘলার কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললো,
– ভালোবাসি প্রিয়,,,,,,
,
আবারো অতিত ভেবে শ্রাবনের ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো মেঘলা। মাথার চুল গুলোও আধ পাকা অবস্থা। গায়ে সাদা কাপর অনেক আগে থেকেই। চোখে সোনালি ফ্রেমের একটা চশমা। শ্রাবনের ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে চশমা খুলে চোখ মুছে নিলো মেঘলা। আজ যে শ্রাবনের ২০ তম মৃত্যু বার্ষিকি।
শ্রাবন মেঘলার ছেলে মেহেরাব ও মেয়ে মিমি। মেহেরাব পাঞ্জাবির হাতা পোল্ড করতে করতে দরজার পাশে এসে বলে,
– মা রেডি হয়েছো?
মেঘলা চোখের পানি মুছে বলে,
– হচ্ছি,,,,,
মিমি এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমরা তো এখন বাবার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি তাই না? কেদোনা মা,,, বাবার আদরটাও ঠিক ভাবে মনে নেই,,, এখন তুমিও কাদলে আমি কার কাছে যাবো মা,,,,,,?
– তোরা যা, আমি রেডি হয়ে আসছি।
মেহেরাম ও মিমি চলে গেলো, মেঘলা ছবিটার উপর আবারও হাত বুলিয়ে পূর্বের স্মৃতি ভাবতে লাগলো।
,
,
দিনটা ছিলো শুক্রবার। দুপুরের শুয়ে ছিলো মেঘলা। হুট করে শ্রাবন এসে তার মাথার পাশে বসে, হাতে দুইটি শপিং ব্যাগ। মেঘলার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কপালে আলতো করে চুমু একে দিতেই ঘুম ভাঙে মেঘলার।
– ভাইয়া আপনি?
– হুম ওঠ বের হবো একটু।
– কোথায়,,
– আরে বাবা গেলে দেখবি তো,,,
বলেই মেঘলার হাত ধরে টেনে তোলে শ্রাবন। ওয়াশ রুমে গিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে নেয়। এর পর রুমে এসে ব্যাগটা মেঘলার হাতে দিয়ে বলে,
– শাড়িটা পড়ে নে,,,

বিকেলের ফুরফুরে বাতাসে একটা রিক্সায় ঘুরছে দুজন। জায়গাটা কোনো ঘনবসতি নয়, কোলামেলা প্রকৃতি৷ একপাশে খোলা মাঠ, আরেক পাশে নদী, মাঝখানে সুন্দর করে একটা নদী বয়ে গেছে। কিছু দুরে দুরে চটপটি, ফুচকা এইসবের দোকান। মানুষ ও আছে কিছু, হয়তো তারাও ঘুরতে এসেছে ছুটির দিনে। নদীর ধারে কাশ ফুল গুলো দোল খাচ্ছে হালকা বাতাসে। মেঘলা গায়ে নীল শাড়ি, হাতে নীল চুড়ি, আর কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ। কানের পাশে একটা লাল গোলাফ গাথা। তার পাশেই শ্রাবন, নীল পাঞ্জাবি গায়ে আর পড়নে একটা সাদা পায়জামা।
দুর থেকে একটা ছেলে দৌড়ে দৌড়েতাদের দিকে আসছে, হাতে একটা ক্যামেরা। তাদের কাছে এসে বলে,
– ভাইয়া-ভাবি আপনাদের দুজনকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, ভালো মানিয়েছে দুজনকে। পিক তুলবেন ভাইয়া? পিস মাত্র ৫ টাকা।
– শ্রাবন মুচকি হাসলো, বললো, আসো।
অনেক্ষন ধরে প্রকৃতি উপভোগের সাথে ছবিও তুলে যাচ্ছে দুজন।

ফেরার পথে, একটা বাচ্চা এসে দাড়ায় শ্রাবনের সামনে।
– ভাইয়া খুব ক্ষিদা লাগছে, পাঁচটা টাকা দেন না কিছু খাই।
ছেলেটার হ্যাংলা পাতলা শরির, চুল গুলো এলোমেলো। শ্রাবন বসে ছেলেটার মাথার চুল গুলো আঙুল দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বলে,
– ক্ষিদে লেগেছে তোমার?
– হুম ভাইয়া, দুপুরেও কিছু খাইনি।
– তোমরা এখানে মোট কয়জন আছো?
ছেলেটা হাস্যজ্জল মুখ নিয়ে বলে,
– সবাইরে খাইতে টাকা দিবেন?
শ্রাবন একটু হেসে বলে,
– হুম, নিয়ে আসো সবাইকে।
ছেলেটা এক দৌড়ে চলে গেলো। ফিরে আসলো পাঁচ ছয়টা ছেলের সাথে।
মেঘলা বলে,
– সবাইকে কি করবেন?
– খাওয়াতে নিয়ে যাবো।
– কোথায়? তেমন কিছু তো দেখছি না।
– পাশেই কয়েকটা ছোট রেস্টুরেন্ট আছে। অত ভালো মানের না হলেও খারাপ না।

ছেলে গুলোকে দুই হাতে আগলে হেটে হেটে তারের সাথে যাচ্ছে শ্রাবন। আর মেঘলা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ওইদিকে। শ্রাবন পেছন ফিরে বলে,
– কি হলো, আয়,,,,

একটা রেস্টুরেন্টে ছেলেগুলোকে নিয়ে গেলো শ্রাবন। ছেলে গুলো তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। আর ছেলেগুলোর প্রতি উদারতা দেখে শ্রাবনের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘলা।
খাবার শেষে বিল পরিশোধ করে বেড়িয়ে এলো তারা। ছেলে গুলোর হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে। সবাি মিলে রাতে আবার খেয়ে নিও। তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ছেলে গুলো, মুখে তাদের তৃপ্তিময় হাসি।

প্রায় সন্ধা শ্রাবন বৃষ্টি হেটে চলছে একটা পথ ধরে। এক হাতে বৃষ্টিকে ধরে রাখে নিজের হাতে। আর হেসে বলে,
– আমার কারণে ছেলেগুলোর যদি আজ দিনটা ভালো কাটে তাহলে মন্দ কি? খাবার পেয়ে তাদের মুখের হাসিটা দেখেছিস? আর এই শহরের কিছু মানুষকে কোটি টাকা দিয়েও তাদের মুখে এই তৃপ্তিময় হাসিটা দেখতে পাবি না। কোটি কোটি টাকা পেয়েও তাদের মুখে সেই হাসিটা নেই। কারণ আধুনিকতার সাথে শহর টা নষ্ট হয়ে গেছে রে।

To be continue…….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here