বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩)?,পর্বঃ_৭

0
1407

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩)?,পর্বঃ_৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

শ্রাবন আর মেঘলা বাসায় ফিরতেই দেখে সন্ধায় সবাই সোফায় বসে বেস ভালোভাবেই আড্ডা জমিয়েছে। যদিও ব্যাপারটা আড্ডার মতো মনে হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে কি বিষয়ে আলোচনা চলছে। শ্রাবন আর মেঘলা ভেতরে প্রবেশ করতেই বৃষ্টি এগিয়ে এসে মেঘলার কপালে চুমু দেয়, সাথে শ্রাবনেরও। দুজনকে এক সাথে দাড় করিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– দুজনকে মানিয়েছে না খুব?
পাশ থেকে আরশি বলে,
– আরে ভাবি, মানাবেনা কেনো,,, ওদেকে কি তুমি আজ নতুন দেখছো? আর স্বাধে কি আমরা সব কিছু তারাতারি করছি?
বৃষ্টি আরশিকে একটু ধমক দিয়ে বলে,
– এই ভাবি কি রে? এখন থেকে বেয়াইন লাগি তোমার।
সোফা থেকে রাত একটা কাগজ এগিয়ে দেয় শ্রাবনের দিকে,,
– দেখতো লিস্ট ঠিকঠাক আছে কি না?
শ্রাবন কাগজের দিকে তাকিয়ে বাবাকে বলে,
– কিসের লিষ্ট এটা?
– বিয়ের,,,,,
শ্রাবন নিছারের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,,
– কি বলো বাবা, নিছারকে এতো তারাতারি বিয়ে করানো টা কি উচিৎ হবে?
পাশ থেকে নিছার একটু হেসে বলে,
– এ জন্যই লোকে বলে, লম্বা মানুষের বুদ্ধি হলো হাটুর নিচে। তারা উপরের দিকে যত উঠতে থাকে, তাদের বুদ্ধি নিচের দিকে ততো নামতে থাকে। তোমাদের বিয়ে তা বুঝেও যতসব ন্যাকামি।
নিছারের কথায় হেসে দেয় সবাই। শাড়ির আচল দিয়ে মুখ লুকিয়ে দৌড়ে উপরে চলে গেলো মেঘলা।
,
,
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে মেঘলা। হাসি যেনো থামছেই না আজ। একটু পর পর মুচকি হাসছে সে। আশ্চর্য আজ এতো হাসি আসছে কোথা থেকে?
পেছন থেকে কেও একজন জড়িয়ে ধরতেই হাসি বন্ধ রেখে চুপচাপ হয়ে আছে মেঘলা। শ্রাবন তার কাধে থুতনিটা রেখে ছোট্ট একটা কামড় বসায় কানে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– আজ একটু বেশিই খুশি মনে একজন কে? শুনতাম পাত্র পক্ষ এসে বিয়ের কথা পাকা করার সময়, কিছু মেয়েরা দরজা বন্ধ করে নাচে।
– আচ্ছা, আপনি কখনো কাউকে নাচতে দেখছেন?
– হুম দেখছি তো,,,
– কাকে,,,
– এইযে আমার সামনে যে বিয়ের কথা শুনে মনে মনে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে।
– হুম, আমার তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই,, যে বিয়ের কথা শুনে নাচবো। এতো বিয়ের শখ নাই,, হুহ্।
– শখ নেই তাই না?
– হুম, যেমন আছে ভালা আছি,,,,,
– আচ্ছা দাড়া এখনই বলে দিচ্ছি বিয়ে আরো বছর খানেক পর করবো।
বলেই উল্টো দিকে হাটা ধরলেই মেঘলা পেছন থেকে হাত ধরে টেনে আবার নিজের দিকে ফেরায়। টি-শার্ট টা খামছে ধরে মুখের কাছে টেনে এনে ভিলেন স্টাইলে বলে উঠে,
– একবারে খুন করে ফেলবো। বিয়ে না করে আবার অন্য মেয়েকে বাসায় আনার খুব শখ তাই না? আচ্ছা ওসব বাদ, এখন একটা অনুরুধ রাখবেন?
– হুম,,,,
– আমায় কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকবেন?
একটু হেসে মেঘলাকে জড়িয়ে নেয় শ্রাবন। মেঘলা শ্রাবনের বুকে কান রেখে হৃদপিন্ডের শব্দ শুনছে।
শ্রাবনের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে একটা দুস্টু বুদ্ধি চাপে মেঘলার মনে। শ্রাবনের বুকে জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেয় মেঘলা। কিন্তু শ্রাবনের কোনো ব্যাথার আওয়াজ শুনতে পেলোনা সে। এবার আরো জোড়ে চেপে ধরে তবুও কোনো শব্দ পাচ্ছে না। মেঘলা মনে মনে ভাবছে,
– ভাই তুই কি দিয়ে তৈরি?
মেঘলা মুখ তুলে শ্রাবনের দিকে তাকাতেই দেখে চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পরছে শ্রাবনের। মেঘলা একটু অভিমানি কন্ঠে বলে,
– লেগেছে খুব তাই না? তাহলে ব্যাথা প্রকাশ করলেন না কেনো?
– তোর হয়তো ভালো লাগছিলো, তাই ডিস্টার্ব করিনি।
,
,
বিয়েটা স্বাচ্ছন্দ ভাবেই হয়েছে। সকালে মেহমানদের জন্য নাস্তা তৈরি করছে বৃষ্টি। কাল রাতে বিয়ে শেষে চলে গেছে সকলে। আজ বৌ ভাত এই বাড়ি। যে দু,একজন ছিলো তাদের জন্য নাস্তা তৈরি করছে সে। একটু পর থেকে মেহমান আসতে শুরু করবে একে একে। ঘুমু ঘুমু চোখে বিছানা ছেরে উঠে রাত। কিচেনে এসে দেখে বৃষ্টি নাস্তা তৈরি করছে। কাজের মেয়ে ড্রয়িং রুমে সব গোচগাচ করছে। কিচেনে ঢুকে বৃষ্টিকে পেছন থেকে জড়িয়ে কাধে থুতনি রেখে সামনে তাকিয়ে আছে রাত। বৃষ্টি হাতের কুনুই দিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,
– কি করছেন? ফ্রেস হয়েছেন?
– হুম,,,,
– টেবিলে গিয়ে বসুন আমি নাস্তা দিচ্ছি।
– সমস্যা নাই এখানে আছি ভালোই লাগছে,,,
– ওফ যান তো, বাড়ি ভর্তি মেহমান, যে কেও চলে আসতে পারে।
– আসলে আসুক আমার কি?
– যান তো এখান থেকে, কেও দেখে ফেললে মান ইজ্জত সব প্লাস্টিক হয়ে যাবে।
– আচ্ছা, নাস্তা পরে দিও আমি আগে দেখে আসি বাইরে সব ঠিক ঠাক চলছে কি না।
– আচ্ছা।

সকালে সূর্যের আলো এসে রুমে প্রবেশ করতেই ঘুম ভেঙে যায় শ্রাবনের। ঘুম থেকে উঠতেই দেখে মেঘলা ঘুমিয়ে আছে তার বুকে। খুব মায়াবি লাগছে আজ তাকে। কে যেনো বলেছিলো, ঘুমন্ত নারীর চেয়ারাই হয় সবচেয়ে মায়াবতি। মেঘলার মুখে আসা চুলগুলো আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবন।
,
,
,
মেঘলার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে থর থর করে কাপছে শ্রাবন। আর বাইরে হয়তো বসে আছে নয়তো পায়চারি করছে বাকি সবাই। মেঘলার চিৎকারে চোখ বন্ধ করে কাপছে শ্রাবন। বেশ কিছুক্ষন পর পরিস্থিতি শান্ত দেখে চোখ খুলে দেখে তার প্রথম কন্যা সন্তান।
,
,
এভাবেই চলছিলো সব সুন্দর ভাবে। শ্রাবনের এখন ২ সন্তান। একটা মেয়ে বয়স ৬ আর একটা ছেলে বয়স ৪ বছর।
– মামা মামা, ভ্যাম্পায়ারের গল্পটা শুনাও না,,,, কাল তো আম্মুর কারণে ঘুমিয়ে গেলাম।
নিছারের কাছে গিয়ে তার পাশে বসে আদুরে গলায় আবদার করলো শ্রাবনের মেয়ে।
– ওসব শুনিস না মামা, ভয় পাবি রাতে।
– না না, আমি শুনবোই, শুনবোই শুনবো।
– কি শুনবে মামুনি?
চায়ের ট্রে টা সামনে রেখে বললো মেঘলা।
– গল্প শুনবো আম্মি,,,, মামা খুব ভালো ভালো গল্প জানে।

তখনই উপর থেকে ডাক এলো,
– কই গেলে তুমি,, শুনছো?
– এই যে আসছি।
তাদেরকে চা দিয়ে উপরে চলে গেলো মেঘলা। নিচে আবার শুরু হলো মামা ভাগনির গল্পের আসর।

– টাই টা বেধে দাও তো,,,,
– হুম জানতাম, এই জন্যই তো ডাকবেন। দরকার ছারা কি আর আমায় ডাকা হয়?
– তাই না?
– হুম, তাই,,,,, এই তো বাধা হয়ে গেছে। সাবধানে যাবেন। আর নিজের যত্ন নিয়েন।
শ্রাবন মেঘলার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো,,,,
– টেক কেয়ার মাই হার্ট।
একটু মুচকি হাসলো মেঘলা। হেসে বলে,,,
– আসার সময় আমার জন্য গোলাপ আনতে যেনো না ভুলেন সাহেব।
– কখনো কি ভুল হয়েছে?
– না, তবুও মনে করিয়ে দিতে ভালো লাগে তাই,,,,
– আচ্ছা, আজ তোমার জন্য আরো একটা স্পেশাল গিফ্ট আছে।
– তাই? কি?
– এখন বলবো না,,,
– প্লিজ বলুন না, আমি আবার কোনো কিছু জানার জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। জানেন না?
– হুম জানি, তবে বলে দিলে কি আর মজা থাকে।
– আচ্ছা, অপেক্ষায় রইলাম।
– আচ্ছা,,,,
বলেই মেঘলাকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রইলো শ্রাবন। আজ একটু বেশিই সময় ধরে নিজের সাথে রাখছে মেঘলাকে। কেনো যানি আজ একটা অদৃশ্য টান অনুভব করছে সে।

নিজের দুই সন্তানকেও আদর করে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো শ্রাবন। মেঘলা দরজা থেকে মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বললো,
– সাবধানে যাবেন। আর টাইম লি খেয়ে নিবেন।

To be continue………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here