বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩)?,পর্বঃ_৮(শেষ)

0
1394

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩)?,পর্বঃ_৮(শেষ)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

মেঘলাকে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে থেকে আলতো করে কপালে একটা চুমু একে দেয় শ্রাবন।
মামার কাছ থেকে গল্প শুনে দৌড়ে বাবা মায়ের কাছে গেলো শ্রাবনের মেয়ে মিম। শ্রাবন কোলে তুলে নেয় তাকে। মেয়ের গালে একটা চুমু দিয়ে শ্রাবন বলে,
– আজ কি আনবো আমার আম্মুটার জন্য?
মিম একটুও না ভেবে বললো,
– আজ অনেক গুলো চকলেট আনবে,, আজ মামা আমায় খুব সুন্দর গল্প শুনিয়েছে, তাই মামাকে আজ অনেকগুলো চকলেট খাওয়াবো আমি।
শ্রাবন হেসে দেয়,,,
– আচ্ছা আম্মু, নিয়ে আসবো। এত্তগুলো নিয়ে আসবো।
মিমকে কোলে নিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখে মেহেরাব দাদির সাথে খেলনা গুলো নিয়ে খেলা করছে। আর রাত সোফায় বসে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছে কোথাও কোনো খবর পায় কি না।
মিমকে নামিয়ে শ্রাবন বসে ছেলে মেহরাবের কপালে চুমু দিলেন। রাত ও বৃষ্টির কাছে গিয়ে বললো,
– আব্বু-আম্মু আমি যাচ্ছি।
রাত ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
– সাবধানে যাস।
বৃষ্টিও হাত বুলিয়ে বললো,
– যাচ্ছি বলতে নেই, বলতে হয় আসি।
বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো শ্রাবন। মেঘলা দরজার কাছ থেকে হাসি মুখে হাত নাড়ালো। মিমকে নিয়ে চলে গেলো ভিতরে।

– এই মিম, এদিকে আয় তো।
মিম নিছরের কাছে বতেই নিছার মিম এর কোলে মাথা রেখে বললো,
– মামার মাথাটা একটু টিপে দে তো,,,
মেঘলা পাশে এসে বললো,
– কি হচ্ছে এখানে? আর নিছার তুইও এই বাচ্চাদের সাথে থেকে থেকে বাচ্চা হয়ে গেছিস? তুই না এবার বি,সি,এস দিবি। পড়া নেই নাকি?
– প্যারা দিস না তো আপু,,, আমি সব পড়ে অলরেডি ভেজে ফেলেছি। এখন শুধু রিভাইস দেবো।
– এটা বি,সি,এস যেমন তেমন ব্যাপার না। প্রচুর পড়তে হবে তোকে। পড়ে আরো ভাজতে হবে, যাকে বলে কড়া ভাজা।
,
,
দুপুরে মেঘলা রান্না শেষে কাজের মেয়েটাকে বললো, সব গোছগাছ করে রাখতে। তার পর মিম আর মেহরাবকে নিয়ে গোছল করিয়ে দাদা দাদির কাছে পাঠিয়ে দিলো। নিজেও ফ্রেশ হয়ে কাপরগুলো বারান্দায় শুকাতে দিলো।
রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলো। তখন বাজে বরাবর ২ টা। শ্রাবনের নাম্বারে ফোন দেয় মেঘলা।
– হ্যালো,,,
– খেয়েছেন?
– উহু, এখনো খাইনি।
– কেনো?
– অফিসে আজ কাজের অনেক চাপ।
– এখন খেয়ে নেন।
– আচ্ছা নিবো, এখন ফোন রাখি।
– আচ্ছা, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিবেন কিন্তু।
– আচ্ছা, ঠিক আছে,, লাভ ইউ,,,,,,,,,,
– হুম টু,,,, আর টেক কেয়ার।
,
,
রাত তখন নয়টা ত্রিশ মিনিট।
ফোনের শব্দে রুমে আসে মেঘলা। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে শ্রাবনের ফোন।
ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায় মেঘলা।
৩০ সেকেন্ড পর,,,
কানের কাছ থেকে ফোনটা ছুটে ফ্লোরে কয়েক লাফ দেয়। মুহুর্তেই চোখ দুটু ঝাপসা হয়ে চার পাশটা এলোমেলো হতে শুরু করে। ফোনটা হাতে নিয়ে বাবা দৌড়ে চলে যায় ড্রয়িং রুমে। রাতের দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয় মেঘলা কিছু বলতে চেয়েও মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা মেঘলার।রাত ফোনটা হাতে নেয়।

সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রাত। বৃষ্টি বার বার অনুরুধ করছে কি হয়েছে বলার জন্য। রাত বসা থেকে উঠে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
– তোমরা থাকো আমাকে এখনই হসপিটালে যেতে হবে।
পাশ থেকে বৃষ্টি রাতের হাত ধরে বলে,
– হসপিটালে কেনো? কার কি হয়েছে? বলেন না প্লিজ,,,,
– এসে বলবো তোমাকে।
বলেই হাটা ধরে রাত। পেছন থেকে মেঘলা ডেকে বলে উঠে,
– বাবা, আমিও যাবো।
– আচ্ছা চলো, আর তুমি টেনশন নিও না,, মেহরাব ও মিমকে দেখে রেখো। (বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে)

গাড়ি ছুটছে নির্দিষঁট এক গন্তব্য ধরে। রাত পাশ থেকে ড্রাইভার কে তাড়া দিচ্ছে দ্রুত যাওয়ার জন্য। আর নিছারকেও ফোন দিয়ে বলে তারাতার হসপিটালে আসতে। হসপিটালের নাম বলে দেয় রাত।

শ্রাবনের গাড়িটি ভাঙচোড়া অবস্থায় পরে আছে রাস্তার এক পাশে। ধোয়া উড়ছে গাড়ি থেকে। আর তার পাশে দাড়িয়ে আছে মালবাহি ট্রাক টি।
,
ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলো শ্রাবনকে। বাইরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রাত। চোখ দিয়ে বেয়ে পরছে জল। হয়তো মনে মনে একটাই চাওয়া। আমায় নিয়ে গিয়ে হলেও আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও খোদা।

নিছারকে ধরে কেঁদে চলছে মেঘলা। যাকে বলে হিচকি তুলে কাঁদা।
– বলনা ভাই, ওর কিছু হয়নি তো। ও ঠিক আছে তো। বল না ভাই ওর কিছু হয়নি তো।
বলেই আবার কাঁদতে শুরু করে মেঘলা। শ্রাবন মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– চিন্তা করিস না আপু, আল্লার উপর ভরশা রাখ। তিনি যা করে ভালোর জন্যই করে।

রাত তখন ২ টা ১৫ মিনিট। ভেতর থেকে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে আসলেন। ডাক্তারকে দেখেই রাত জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। ডাক্তার মাস্ক টা খুলে ব্যথিত চোখে তাকায় রাতের দিকে।
– সরি আঙ্কেল, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেও কোনো আশার আলো দেখতে পাইনি। শেষ পর্যন্ত আমরা ব্যার্থ হলাম। We couldn’t save your son, sorry uncle.

কাঁদতে কাঁদতে ধপাস করে বসে যায় রাত।
– দেখুন আঙ্কেল ভেঙে পরবেন না, আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে।

অপর পাশে আর কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারায় মেঘলা। ঢলে পরে যেতেই নিছার ধরে ফেলে তাকে।
,
,
,
সকাল ৮ টা, সারা বাড়িতে কান্নার রোল। শ্রাবনের মা বৃষ্টি এই নিয়ে তিনবার জ্ঞান হারিয়েছে। রাত ছেলের মাথার পাশে বসে নিরবে কেঁদে চলছে। আর মেঘলা তো সেই রাতে জ্ঞান হারিয়েছে, এখনো জ্ঞান ফেরেনি। স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।
নিছার এক পাশে স্তব্দ হয়ে বসে আছে, নিজের মনকে প্রশ্ন করে সে। “এক তরফা ভালোবাসা দেখেছিস কখনো?

শ্রাবনের মেয়ে মিম, দাদার পাশে দাড়িয়ে চার পাশে তাকাচ্ছে। হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি কি হয়েছে এখানে। মেহেরাব মিম এর পাশে এসে জামা টানতে টানতে বলে,
– আপু আপু, সবাই কাঁদছে কেনো?
– জানিনা রে, বাবাই ঘুমাচ্ছে আর সবাই কাঁদছে। এই তো বাবাই ঘুমিয়ে আছে।
– দেখ না আপু, এতোক্ষন বেলা হয়ে গেছে, বাবাই এখনো আমায় কোলে নিয়ে আদর করেনি। এখনো ঘুমাচ্ছে। এক কাজ কর, বাবাইকে আমরা ডেকে দিই। দেখবি আমরা ডাকলে বাবাই উঠে যাবে।
মিম মেহেরাবকে ধরে বলে,
– না না এখন ডাকিস না। বাবাইয়ের ঘুম ভেঙে যাবে। বাবাই ঘুম থেকে উঠলে আমাদের কোলে নিবে, দেখিস।

রাত এবার মেহেরাব ও মিমকে বুকে নিয়ে জোড়ে কেঁদে উঠে।
– হে আল্লাজ্ কেনো এই দুইটা অবুজ শিশুকে এতিম করলে তুমি।
,
,
,
ছেলে মেহরাবের ডাকেই বাস্তবে ফিরে আসে মেঘলা। শ্রাবনের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চখের পানির স্রোত বয়ে গেছে শরির দিয়ে তা হয়তো খেয়ালই নেই তার। ছবিটা অনেক্ষন বুকে জড়িয়ে রেখে সাদা কাপরের আচল দিয়ে ছবিটা মুছে নিলো মেঘলা। আর কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ছবিটা টেবিলে রেখে ছেলের ডাকে চলে যায় মেঘলা। রুম থেকে বের হওয়ার আগে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মেঘলা। কারণ ভেতরে যতই ভেঙে পরুক না কেনো? বাহিরে জোড় করে হলেও তাকে হাসি খুশি থাকতে হবে।

গাড়ি এসে থামে কবরস্থানে। গাড়ি থেকে নেমে, বাবা ও দাদার কবর গুলোর পাশে গিয়ে দাড়ায় মেহেরাম। বাবার আদর তেমন একটা না পেলেও দাদার আদর পেয়েছে সে। এই তো বছর তিনেক আগে দাদাও চলে গেছে তাদের ছেরে।
সবাই মিলে কবর জিয়ারত করে নিলো। ফেরার পথে মেঘলা বার বার ফিরে তাকাচ্ছে সেই কবর গুলোর দিকে। কারণ এখানে যে তার খুব আপনজনরা ঘুমিয়ে আছে। চোখের সামনে ভেষে উঠছে বার বার শ্রাবনের ছবি। মনে হচ্ছে ওই কবরের কাছ থেকে শ্রাবন মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে তাদের। এবার শব্দ করে কেঁদে উঠে মাটিতে বসে পড়ে মেঘলা। আজ যদি আমিও আপনার সাথে ওই অন্ধকার ঘরে থাকতে পারতাম। আমার আর কিচ্ছু প্রয়োজন হতো না। আমি যে এখনো আপনাকে সেই আগের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।।

……..সমাপ্ত………

~ আমি কিছু বলবো না। আজ শুধু আপনাদের মতামত গুলোই দেখবো। যারা এই গল্পের তিনটা সিজনই পড়েছেন ও আমার উৎসাহ দিয়েছেন, সবার প্রতি অবিরাম ভালোবাসা। সব গল্পের ইন্ডিং হ্যাপি হয় না,,, মৃত্যুতেও কিছু গল্পের পরি সমাপ্তি ঘটে। হ্যাপি রিডিং?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here