#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ৩)
#পর্বঃ__১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
প্রায় আধা ঘন্টা কান ধরে এক পায়ে দাড়িয়ে আছে মেঘলা। তার সামনে বেত হাতে রক্তিম চক্ষু মেঘলার দিকে স্থির রেখে বসে আছে শ্রাবন। পায়েও ব্যাথা ধরে গেছে প্রচুর। তবুও পা নামিয়ে দাড়ানোর সাহস পাচ্ছে না মেঘলা।
কাঁদু কাঁদু স্বরে মেঘলা বলে উঠলো,
– ভাইয়া আর কতোক্ষন, আর পারছিনা আমি। হয়তো এক্ষুনি মাথা ঘুরে ফ্লোরে আছরে পরে মাথা ফেটে যাবে আমার। কি সাংঘাতিক একটা ব্যাপার ঘটে যাবে বুঝতে পারছো?এই যে তোমার কসম আর এমন জীবনেও হবে না,,,
মুহুর্তেই শ্রাবন লাফিয়ে উঠে একটা কড়া ধমক দেয় মেঘলাকে,
– এই আমার কসম মানে কিরে? তুই যে কতো বড় পল্টিবাজ সেটা আমি বুঝিনা ভাবছস? তোর কসমে আমার এতো মরার শখ নেই বুঝলি? এক কাজ কর, তোর মোবাইলের কসম কাট,,,,,
ঠোট ফুলিয়ে আবারও দাড়িয়ে আছে মেঘলা। যাই হোক এই মোবাইলের কসম দেওয়া যাবে না। কারন সে জানে বিপদ থেকে বাচলেই আবার কসমের কথা ভুলে যাবে সে।
রাত তখন ১১ টা,, ফ্লোরে পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে আছে শ্রাবন। তার সামনে মেঘলা কান ধরে দাড়িয়ে। বেত হাতে শ্রাবন খুব শান্ত ভাবে বলে উঠে,
– পড়া কমপ্লিট হয়েছে তোর?
মেঘলা ছোট্ট করে বলে,
– হুম,,,
– কান ছার আর এদিকে আয়, আমার কাছে এসে বস।
খুশিতে গদ গদ করে মেঘলা শ্রাবনের পাশে গিয়ে বসে, তার মানে শাস্তি শেষ?
– শাস্তি শেষ ভাইয়া?
– না এখনো বাকি আছে। এখনো তো শুরুই করলাম না।
অবাক হলো মেঘলা,,মনে মনে অনেক রাগ হলো তার। আধা ঘন্টার উপরে কান ধরিয়ে এক পায়ে দাড় করিয়ে রেখেছিলো, ওটা কি কোনো শাস্তির খাতায় পরে না?
– কলেজ পালিয়ে কোথায় গিয়েচিলি আজ?
শ্রাবনের কথায় ধ্যান ভাঙে মেঘলার।
– হ্যা?,,,
– বলছি কলেজ পালিয়ে আজ কোথায় গিয়েছিলি?
– না না নাবিলাদের বাসায়,,,,
– তোকে না বললাম, বন্ধু বান্ধব কারো বাসায় অথবা কোথাও ঘুরতে গেলে, আগে আমার পার্মিশন নিতে হবে?
রাগে মেঘলা এবার দাড়িয়ে গর গর করে বলে উঠে,
– বান্ধবির বাসায় যেতে হলেও কারো পার্মিশন নিতে হবে, এটা কোন সংবিধানে লেখা আছে ভাইয়া?
বেতটা হাতে নিয়ে আঙুলের উপর ঘুরাতে ঘুরাতে উঠে দাড়ায় শ্রাবন। ভয়ে এবার শরির কেপে উঠে মেঘলা। মাজে মাঝে নিজের বোকামিতেই নিজেকে বিপদে পরতে হয়?
শ্রাবনকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই একটু ঘাবড়ে যায় মেঘলা। নিজের অজান্তেই পা দুটু পেছনের দিয়ে চলতে থাকে। কিন্তু পেছনের দিকে আর যাওয়া বেশি হলো না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তার।
শ্রাবন দুই হাতে বন্ধি করে নেয় তাকে,, মেঘলার দিকে এক ঘোরে তাকিয়ে আছে শ্রাবন। শ্রাবন আর মেঘলার দুরুত্ব ক্রমেশেই কমে আসতে আসতে এতোটাই কাছে চলে এলো যে নিশ্বাস গুলো আছড়ে পরছে একে অপরের গায়ে। চোখ বুজে নেয় মেঘলা সাথে বড় বড় নিশ্বাস। মেঘলা হয়তো অপেক্ষা করছে এর পর কি হয় তা দেখার জন্য।
মেঘলার অবস্থা দেখে একটু মুচকি হাসে শ্রাবন। মেঘলার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠে,
– কোনো এক অলিখিত সংবিধানে তোর জন্য লেখা হয়েছে হাজারও আইন। প্রতিটি পদক্ষেপেই তোকে মেনে চলতে হবে সেই অলিখিত সংবিধান।
বলেই গদ গদ করে সেখান থেকে হাটা ধরে শ্রাবন। টপকে ফাইফ বেয়ে নেমে চলে যায় সে। মেঘলা এখনো দাড়িয়ে আছে ওই অবস্থায়। স্তব্দ করে তাকিয়ে আছে বারান্দার দিকে।
,
,
,
সকালে নামাজ পড়ে, জগিং করতে বের হয় শ্রাবন। সকালের ঠান্ডা পরিবেশে জগিং করার মজাই অন্যরকম।
ঘরে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নস্তা করতে বসে শ্রাবন। শ্রাবনকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে উঠে তার মা, বৃষ্টি।
– পড়ালেখা তো তোর শেষ,, এখন আপাততো বিজনেস টার হাল তো ধরতে পারিস নাকি?
তা না করে কি করলি? ভার্সিটির ম্যাথ টিচার হয়ে জয়েন করলি।
– মা শিক্ষকতা একটা মোহান পেশা। একজন শিক্ষকের হাত ধরেই একজন ছাত্র সামনের দিকে পা বাড়ায়। এটাকে লাভ লোকশানের সাথে তুলনা করা মুর্খতা মা। আমার দ্বারা একজন ছাত্র কিছু শিখে মানুষ হবে, এর চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে? আর আমি তো বলছিনা যে, আমি আমি বিজনেসের হাল ধরবোনা, বাবাতো এখনও সব ঠিকঠাক ভাবেই সামলাচ্ছেআর আমার বাবাতো এখনো পুরু ইয়াং, লাখে একটা,,,
– হয়েছে আর পাম দিতে হবে না।
শ্রাবনকে খাইয়ে দিচ্ছে তার মা,,,
– আর খাবোনা মা আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,,
– পুরোটা শেষ করে যা,,,,,,
,
,
নিছার, ক্লাস নাইনে পড়ে, মেঘলার ছোট ভাই। সারাক্ষন বই নিয়ে পরে থাকে সে। সারাদিন খাওয়া দাওয়া না হোক, বই হলেই চলে তার। এটাও যেনো অন্যতম একটা খোরাক তার।
নাস্তা শেষে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হলো মেঘলা। নিছারকেও একসাথে নিয়ে যায়। মেঘলা নিছারকে ডাকতে ডাকতে রুমে এলো, দেখে এখনো গল্পের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে আছে।
– এই, সারাক্ষন বই নিয়ে পরে থাকলে হবে? স্কুলে যেতে হবে না?
– এই বইয়ের নেশাটা তুই বুঝবিনা আপু,,, গতকাল রাতে একটা শেষ হইছে বই। এটা একটু আগে শেরু করলাম। ভালোই মনে ধরেছে। কি সুন্দর শব্দ চায়ন, বাচন ভঙ্গি,, আহা। তবে দেখ বর্ননা দিতে দিতে কয়েক পৃষ্টা চলে গেলো এখনো মেইন পয়েন্টেই ঢুকছেনা। লেখক জ্বি অনেক শেয়ানা আছে।
– তোর এসব আজাইরা বকবক শুনার টাইম নেই আমার। তারাতারি রেডি হ,, নাইলে ভাইয়ার থেকে অনেক কথা শুনতে হবে আমার।
– আচ্ছা আপু তুই ভাইয়াকে এতো ভয় পাস কেনো?
– জানিনা,,,,
– হুম, তুই যানবিনা, কখনো কখনো হটাৎ মন খারাপ হয় মানুষের। কিন্তু কেন মন খারাপ হয় তা সে নিজেও জানেনা। ব্যাপারটা এমনই, কোনো কারণ ছারাই কেন ভাইয়াকে তুই ভয় পাস ওটাও তুই জানিস না। তবে আমি বলি কি, যদি কখনো কাউকে দেখে কোনো কারণ ছারাই নিজের বুকের ভেতর ধুপ ধুপ করে উঠে, তাহলে বুঝে নিও সেই তোমার ভালোবাসা।
মেঘলা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিছারের দিকে। নিছার আবারও বই পড়ায় মন দিলো। জ্বিবে আঙুল দিয়ে আরেকটি পিষ্টা উল্টালো সে।
মেঘলা কান ধেরে টেনে তোলে স্কুলে যাওয়ার জন্য।
– খুব পেঁকে গেছিস না?
,
,
বাইরে গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে শ্রাবন। মেঘলা আর নিছার দুজনই গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়িতে বসেও নিছারে কথাটা ভাবতে লাগলো সে। তবে আসলেই কি ভাইয়া আমার ভালোবাসা? ছি ছি এইসব কি ভাবছি আমি,, সারাক্ষন বই পড়ে তার মাথাটা তো গেছেই, এখন আমারটাও খাওয়ার প্লেন চলছে।
ভার্সিটির মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে মেঘলা ও তার বন্ধুরা। মনে হচ্ছে আড্ডটা খুব জ্বমেছে। গল্পের সাথে হাঁসি ঠাট্টা এইসব নিয়ে ভালো জ্বমেছে বেশ। বেপারটা অনেক্ষন ধরে লক্ষ করছে শ্রাবন। তার কক্ষের দরজার বাইরে থেকে বুকে হাত গুজে রক্ত বর্ন চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। মাঝে মাঝে হুট করে কেনো যে রেগে যায় এটাও তার অজানা।
আড্ডার মাঝে একটা মেয়ে এসে বললো,
– আপু, তোমাকে শ্রাবন স্যার ডাকছে তার কক্ষে।
মেঘলা পেছন ফিরে দেখে শ্রাবন রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিচুক্ষন পর হন হন করে চলে গেলো কক্ষের ভেতর। মেঘলে ভালোই বুঝতে পারছে,কপালে আজ দুঃখ আছে তার।
To be continue,,,,,,
~~ চলে আসলাম সিজন ৩ নিয়ে। প্রথম পর্ব তাই হয়তো কিছুই ক্লিয়ার হয়নি। গল্পটার সম্পর্কে মতামত জানাবেন সকলে। আর হ্যা, যারা এই গল্পের সিজন ১ এবং সিজন ২ পড়েন নি, তারাও পড়তে পারবেন এটা।