বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ_৪,৫

0
1606

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ_৪,৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__৪

“না এ্যাবরশন কেনো করবো এটাতো আমারই সন্তান। আমি মা হয়ে এমনটা কি করে ভাবলাম?
গত দুদিন ধরে ভেবেছে বৃষ্টি। নিরবে বসে দু,হাত পেটে রেখে গুন গুন করে কথা বলেছে তার সন্তানের সাথে। অনুভব করছে তার রিপ্লে। সত্যিই খুবই মা মা ফিলিংস আসছে তার মাঝে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার আগেই যেনো মা হয়ে গেছে সে।

ইদানিং রাতে তেমন ঘুম হয়না বৃষ্টির। আজ দু,দিন জেগে ছিলো কিন্তু সে আসেনি। তাহলে কি এটা মাত্রই তার কল্পনা?
রাত তখন ১২ টা,
চার পাশ টা কুয়াশা ঘিরে ধরছে বাইরে। কম্বল দিয়ে সারা শরির ঢেকে শুয়ে আছে বৃষ্টি। তখনই চোখ পড়ে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা একটা লোকের উপর। এটাই কি তাহলে সেই লোক? কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে ধিরে ধিরে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। রুম থেকে বারান্তা অব্দি যেতে পাঁচ মিনিট হাটতে হলো তাকে। এতো সময় লাগারও একটি কারণ আছে। তার মনে জেগে উঠছে নানান ভয়। এটা ভুত নয়তো আবার? এক পা আগাচ্ছে তো আবার দুই পা পিছিয়ে আসছে। কাপা হাতে গ্লাসটা তুলে পানিতে চুমুক দেওয়ার আগেই হাত থেকে পড়ে টুকরু টুকরু হয়ে যায় গ্লাস টা। পানিটা ছরিয়ে পরে মেঝেতে। পানিটা এতোটাই জায়গা দখল করলো যে, মনে গহচ্ছে এখানে এক গ্লাস নয় বরং এক বালতি ঢেলে দেওয়া হয়েছে পানি। কাচ ভাঙার শব্দেও কোনো সারা দিলোনা ছেলেটি। আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। অনেক হাটার পর বারান্দায় পা রাখতে সক্ষম হলো বৃষ্টি। এবার ছেলেটি ঘুরে দাড়ায় বৃষ্টির দিকে। মুহুর্তেই যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো বৃষ্টি। সাদা টি সার্টের উপর একটা কালো জেকেট পরে আছে লোকটা। মাথায় বাচ্চাদের মতো একটা কান টুপি। হাতদুটি বুকে গুজে তার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,
– আ আ আ আ আপনি?
– কেনো অবাক হলে বুঝি?
– আ আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন বা কি করে জানলেন আমি এখানে এসব জিঙ্গের করে সময় নষ্ট করবোনা আমি। কারন আমি জানি আপনার কাছে এসব ছোট খাটো বিষয় গুলো বের করা অসাধ্য কিছু নয়। আমি বলতে চাইবো, আপনি এখানে কেনো এসেছেন? আপুর সাথে তো সুখেই আছেন নিশ্চই।
– না এমনি দেখতে আসলাম আমার সালিটা কেমন আছে।
– আমি ভালোই আছি এখানে। এর চেয়ে ভালো থাকতে আমি চাইও না। চলে যান আপনি এখান থেকে।
ঠাস করে একটা চর পরে বৃষ্টির গালে। বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগে আরো একটা চর পরে অপর গালে। এবার ভয়ে বাকি যা বলার ছিলো তাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা বৃষ্টির। গালে হাত দিয়ে ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে। দেখে মনে হচ্ছে এতোক্ষন অনেক কষ্টে কান্নাটা আটকে রেখেছিলো সে। এবং এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কতোক্ষন এই চেষ্টা সফল থাকবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
রাত রক্তিম চক্ষু জোড়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– প্রথম চর টা এই জন্য দিলাম যে। আমাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার সাহস হলো কি করে তোমার? আর দ্বিতীয় চর টা এই জন্য দিলাম যে আমার মুখের উপর ধমক দিয়ে কথা বলার সাহস পেলে কোথায় তুমি। এতো সাহস আসলো কোথা থেকে তোমার?
বৃষ্টির মুখে কোনো কথা না শুনে রাত এবার জোর গলায় বলে উঠে,
– আমি কোনো মুর্তির সাথে কথা বলছি না, যা বলার তোমাকেই বলছি।
– সরি।
– আমার মাথায়ই আসছেনা যে এতো বোকার মতো বলদা বুদ্ধি আসলো কি করে তোমার মাথায়? কি করে ভাবলে যে এই রাতের হাত থেকে পালিয়ে তুমি অন্য জায়গায় থাকতে পারবে? আর তুমি ভেবোনা তোমার রেখে আসা ডিবোর্স পেপারে সাইন করেছি আমি। ওটা অনেক আগেই ছিরে ফেলে দিয়েছি। কেনো এমনটা করলে তুমি? আর যাই হোক তোমার প্রব্লেম গুলো আমাকে জানাতে পারতে।
এবার হুট করেই রাতকে জড়িয়ে ধরলো বৃষ্টি। বৃষ্টির চোখের জন মিশে যাচ্ছে রাতের গায়ে। রাতের বুকে মাথা রেখে অঝরে কেদে চলছে বৃষ্টি।
রাত নিজেকে না চাইতেও শক্ত করে বলে উঠে,
– এতো ঢং আমার মোটেও পছন্দ নয়। আরএতো রাতে কোনো ভদ্র লোকের বাড়িতে আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা যাও ঘুমাও এখন। যা বলার কাল বলা যাবে।
বলেই সোজা হেটে বেড়িয়ে যাচ্ছে রাত। পেছন থেকে নিচু স্বরে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কোথায় যাচ্ছেন? ঘুমাবেন না।
থামকে দাড়ায় রাত। মনে মনে বলে উঠে, তোমার কাছে থাকলেই তোমার ইমোশনাল কার্যকালাপে দুর্বল করে ফেলবে আমায়। আর তোমার কাছে থাকলে হাজারো রাগ করে থাকলেও বার বার তোমাকে আদর করতে চাইবে এই অবুজ মন।
রাত একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে উঠে,
– অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে তোমার সাথে। বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় রাত।
,
,
বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো রাত। কলিং ব্যাল বাজাতেই আরশি দরজা খুলে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে থাকে ওখানে। কিছুক্ষন পর উত্তেজনা মুলক একটা চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিকে। আরশির চিৎকারে বেড়িয়ে আসে রাত্রি চৌধুরি। বৃষ্টিকে দেখে স্তব্দ হয়ে যায় সে ও। এই সকাল সকাল যেনো বড় একটা সারফ্রাইজ হয় সবাই। ঘরে গিয়ে সোফায় বসে সবাই। রুদ্র চৌধুরি ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?
রাত বলে উঠে,
– খালাম্মাদের বাসায়।
– চট্টগ্রাম।
– হুম।
রাতের মা বলে উঠে,
– কিহ্? রাহি তো আমায় এই ব্যপারে কিছুই বলেনি।
– আসলে আমিই বারণ করছিলাম কাওকে বলতে।
– তার মানে সব তুই জানতি?
– মা পরে সব বলবো। কাল সারা রাত ঘুমাই নি। ওখানে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ১২ টা বেজে গিয়েছিলো। আর ভোর চার টা বাজে আবার বেড়িয়ে গেলাম সকাল সকাল তোমাদের সারফ্রাইজ দিবো বলে। রাস্তা ফাকা ছিলো তাও দেখো ছয় ঘন্টার মতো লেগে গেলো। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তোমাদের পরে সব বলি?
সকাল দশটা পার হয়ে গেলো। কিন্তু কুয়াশা এখনো পুরুপুরি কাটেনি। শীত কাল, তার উপর সত্য প্রবাহ। সূর্যি মামার দেখা পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।

আজ দিনটা নানার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই কেটে গেলো তাদের।
রাত তখন নয়টা, শীতে কন কন অবস্থা।
বারান্দায় ইজি চেয়ারটায় বসে আছে রাত ও বৃষ্টি। একই চাদরে মোড়ানো দুজন। রাতের কোলের উপর বসে আছে বৃষ্টি।
– তুমি তোমার নিজ সুবিধা মতোই বসো। এই অবস্থায় কোনো প্রব্লেম যেনো না হয়।
– মানে? তার মানে আপনিও জানেন? কিন্তু কি করে? আমিতো আপনাকে বলিনি।
– তোমার মাঝে যে বড় হচ্ছে সে কে? তোমার আমার মানে আমাদেরই তো সন্তান তাই না? তো আমি জানবো না? আর প্র্যাগনেন্সি রিপোর্টগুলোও তো আমার কাছেই আছে। তুমি যে সেদিন ডাক্তাদের কাছে গিয়েছিলে। পরিক্ষা করে সুখবরের আভাস পেয়েই বেড়িয়ে গিয়েছিলে। তো তুমি কি জানো যে রিপোর্ট গুলো আনতে হয়?
– আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো জানেন না।
– তাই এ্যাবরশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে তাইতো?
রাতের কথায় চক্ষু জুগল বড় বড় হয়ে যায় বৃষ্টির।
– কে বললো আপনাকে? আমি এমন একটা জঘন্ন সিদ্ধান্ত কেনো নিতে যাবো? আমার নিজেরই তো সন্তান নাকি?
রাত মেসেন্জার অন করে বৃষ্টির সামনে ধরলো। এতে পুরাই হতোভাগ বৃষ্টি।

– আচ্ছা ভালো কথা আপনি জানলেন কি করে যে আমি পালিয়ে যাবো?
– সেদিন আমি আর বর্ষা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে তুমি রাগে ফোসফোস করছিলে ওটা কি আমি দেখিনি? আর ওদিন আমি বর্ষাকে ডেকেছিলাম এই জন্য যে, ওর কিছু সৃতি আমার কাছে রয়ে গিয়েছিলো? তাই ওগুলো ফেরত দিতে।
আর জানলাম কি করে? তোমাকে আমি ফলো করতাম, কারন তোমার অঙ্গি ভঙ্গি কেমন সন্দেহ জনক ছিলো। ফলো করেতে করতেই সব জানলাম ও বুঝলাম। যখন রাতে আমায় ঘুমের মাঝে রেখে বেড়িয়ে গিয়েছিলে তখন কি আমি সত্যিই ঘুমিয়েছিলাম? নাকি করছিলাম ঘুমের অভিনয়। তুমি গাছের ঢালে হাটলে আমি হাটি পাতায় পাতায়।
– সবই যখন জানতেন তাহলে আটকালেন না কেনো?
– কারণ আমি তোমাকে বুঝেতে চাইছি শুন্যতা শব্দটার স্বাদ কেমন। মাহিতের অফিসে কাজ করিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে, অন্যের কাজ করে খাওয়ার স্বাধ কেমন। মাহিত তোমার সাথে ও অন্যান্ন রা তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার কারতো, কারণ আমি তোমায় বুঝাতে চেয়েছি যে, এই শহরে কাছের মানুষগুলো ছারা অন্যের কাছে তুমি কতোটা তুচ্ছ। আমি সব সময় তোমায় চার পাশ থেকেই তোমায় আগলে রেখেছি কিন্তু তোমায় বুঝতে দেইনি আমি। নাহলে ঠিকই বুঝতে বাস্তবতা কখনো কখনো কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাও আবার এক অচেনা শহরে।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
– হুম।
– এতো কিছুর পরও আপনি আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছেন কেনো? এমন সিচুয়েশনে কারোর ই স্বাভাবিক আচরণ করার কথা না। কিন্তু আপনি এমন ভাবে আচরন করছেন যেনো কিছুই হয়নি।
– হুম, ভালোবাসি তাই।
– আপনি এতো ভালো কেনো?
– কে বললো তোমায়? এখন তো তোমার সামনে আমার সব চেয়ে ভয়ঙ্কর রুপটা আনতে মন চাইছে।
– কেনো?
– কারণ তুমি কেনো আমাদের ভালোবাসার অংশ টুকু ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছিলে?
– সরি।
কন কনে শীতে চাদরটা ঠিক করে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বৃষ্টিকে।
,
,
সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আরশিকে বলে উঠে বৃষ্টি,
– আরশি শুনলে একটি কথা?
– না বললে শুনবো কোথায়?
– মামারা দেশে ফিরছে।
– কোন মামা?
– রিদ ভাইয়া সহ তার বাবা মা। কথা ছিলো আরো কয়েকমাস পর আসবে দেশে। কিন্তু দু, একদিন পরই আসছে তারা।
আরশির চোখে মুখে উত্তেজনা মুলক খুশির আভাস। খুশিতে যেনো চোখ মুখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো তার। আরশি হকচকিয়ে বলে উঠে,
– রিদ ভাইয়াও আসছে?
– বাপরে, তোমার মনে দেখি আজ হুট করেই লাড্ডু ফুটেছে।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।??

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__৫

আজ দেশে ফিরছে রিদ ও তার বাবা মা। সন্ধার পর দেশের মাটিতে পা রাখবে তারা। গত কয়েকদিন আরশি একটা ছোট্ট শব্দের সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। আর তা হলো অপেক্ষা। পূর্বের দিনগুলো থেকে তুলনা মুলক ভাবে এই কয়েকটা দিন মনে হয়েছিলো একটু বেশিই বড়। অবশেষে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটবে আজ। মামা মামিকেও সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছে। যখন তার বয়স ছিলো ১২। তখন মামি তাকে দুষ্টুমি করে বলতো, আমার পিচ্চি বৌ মা। মামির কথায় একটু বিরক্তি ভাব ফুটে উঠতে চাইলেও, লজ্জার কাছে তা চাপা পরে যেতো। তখন লজ্জায় দুরে চলে যেতো আরশি। মাঝে মাঝে অভিমানি স্বরে বলেই ফেলতো।
” মামি তুমি সব সময় আমার সাথে এমন করো কেনো? আমার লজ্জা করেনা বুঝি?
” ওরে আমার পিচ্চি সোনামনিটা দেখি লজ্জাও বুঝে।
” কেনো বড় হয়েছিনা? আর তুমি সব সময় একই কথা বলো কেনো? রিদ ভাইয়া তো আমার ভাইয়া। তুমি এসব বললে তো আমার তার সামনে যেতেও লজ্জা করে।
তখন এক গাল হেসে দিয়ে আলতো করে আরশির গাল টেনে চলে গেলো মামি। তার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলো আরশির সম্পর্ক। যেদিন তারা চলে গিয়েছিলো সেদিন আরশির সে কি কান্না। সেদিন রাতে দোলনায় রিদের কোলে মাথা রেখে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে ছিলো আরশি। সেদিন সারা রাত ওভাবেই রিদের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো আরশি। রিদের আরাম করে বিছানায় সোয়া ছারা ঘুম আসতোনা তখন। ওইদিন সারা রাত জেগে তাকিয়ে ছিলো আরশির পিচ্চি মায়া ভরা মুখের দিকে। আরশির প্রতি সেই দির্ঘ দৃষ্টিই নজর কাড়ে তার। তার পর থেকে কেনো যানি আরশিকে কোনো ছেলের সাথেই সহ্য হতোনা রিদের। তার কাছে কোনো ছেলে ঘেসলেই কায়দা করে সরিয়ে দিতো তাকে। তার ছেলে বন্ধুগুলো হটাৎ করে এমন পল্টি খেতো কেনো তা আরশির কান অব্দি পৌছাত না। ধিরে ধিরে এক সাথে বড় হতে থাকে দুজন। রিদ আর রাত প্রায় সম বয়সি, আরশি তাদের থেকে ছয় বছরের ছোট। আজ আরশি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। সাথে বৃষ্টিও। আচ্ছা মামি কি আজও আমাস সেই পিচ্চিই ডাকবে? তখন তো পিচ্চি ডাকটা শুনে অভিমান ভর করতো তার মাঝে। সেই অভিমানেও নাকি আরশিকে একটু বেশিই কিউট লাগতো তাই বার বার ক্ষপাতো তাকে সবাই। আগের কথা মনে পরতেই গাল চেপে হেসে উঠে আরশি। তার হাসির শব্দ রুমের দরজা পার হয়ে হয়তো পাশের রুমেও প্রবেশ করে ফেলেছে।
তখনই রুমে প্রবেশ করতে করতে তার মা বলে উঠে,
– কিরে পাগলের মতো এমন হাসছিস কেনো একা একা? মনে হচ্ছে আনন্দের বাধ ভেঙে কিছু আনন্দ পাবনা হসপিটালের বারান্দায়ও প্রবেশ করে ফেলেছে।
– হুম রিদ ভাইয়া আসছেনা আজ। ওফ কবে যে সন্ধা হবে?
আরশির কথায় একটু ভ্রু কুচকে তাকায় তার মা। নিজের বোকামুতে জ্বিভে ছোট্ট একটা কামর দেয় আরশি।
– ইয়ে মানে, তোমার মনে আছে মা? মামা মামি রিদ ভাইয়া সবাই যখন ছিলো তখন আমাকে আমাকে নিয়ে কোতো ফাজলামি করতো? মামি একটু বেশিই ছিলো তাই না।
রাত্রি চৌধুরির কুচকানো ভ্র-জুগল এখনো ঠিক হয়নি। কুচকানো ভ্র-জুগল স্বাভাবিক করে বলে উঠে,
– তারাতারি রেডি হয়ে নে বিকেলের মধ্যেই ওই বাড়িতে যেতে হবে।
– তাদের রিসিভ করতে যাবোনা আমরা?
– না, রাত আর তোর বাবাই যাবে।
– ওহ্।

আরশি এক এক করে দেখছে কোন ড্রেসটা পড়লে ভালো হয়? তখনই দেখে আলমারিতে পরে থাকা একটা নীল শাড়ি। তখনই হারিয়ে যায় সেই আগের সৃতি তে।
কলেজের একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরশির কয়েকজন সহ পাঠি এক সাথে শাড়ি পড়ে নাচছিলো। রিদ আরশিকে আনতে গিয়ে তাদের দেখলো। ওখানে কিছু বললো না আরশিকে।
রাতে যখন সবাই ঘুমিয়েছিলো তখন হুট করে রিদ একটা নীল রংয়ের শাড়ি হাতে আরশির রুমে প্রবেশ করলো। আরশি তখন লেপটপে মুভি দেখছিলো। রিদকে দেখে একটুও অবাক হলো না সে। কারণ প্রায়ই রিদ মাঝ রাতে আসে। বারান্দার দরজা অফ করে লাইট অফ করে গায়ে একটা পাতলা কাঁথা টেনে কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার চলে যেতো। আবার কখনো কখনো বর্ষনের রাতে তার পাশে বসে থাকতো সারা রাত, যাতে একটুও যেনো ভয় না পায় আরশি।
কিন্তু আজ রিদের হাতে শাড়ি দেখে চমকে উঠে আরশি।
– একি রিদ ভাই, তুমি এতো রাতে? তাও আবার শাড়ি হাতে?
– তোর জন্য। একটা অনুরুধ রাখবি আরশি?
– কি অনুরুধ।
– তুই এই শাড়িটা পড়ে যাষ্ট পাঁচ মিনিট আমার সামনে দাড়াবি। আমি শাড়িতে তোকে কেমন লাগে এটা দেখেই আবার চলে যাবো।
– পারবোনা।
– প্লিজ।
অনেক জোড়াজুরি করেও লাভ হলোনা।
– আমি শাড়ি পরতে জানিনা। আর পড়লেও সুন্দর হবে না।
– জানতে হবেনা। তুই যা পারবি এটাই আমার জন্য অনেক। না পারলে এমনি পেচিয়ে পড়ে আয় তাও দেখি তোকে কেমন লাগে। প্লিজ আরশি?
– তুমি যাওতো আমি ঘুমাবো এখন।
সেদিন অনেক জোড়াজুরি করেও আরশিকে তার কথা থেকে এতটুকু নড়াতে পারেনি রিদ।
আরশি কড়া মেজাজে বলে উঠে,
– এক কথা কতো বার বলা লাগে? তোমাকে বলছিনা এখান থেকে যেতে।
রিদ কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে ছিলো আরশির দিকে। তার পর সোফায় শাড়িটে রেখে বলে উঠে,
– কখনো ভালো লাগলে পড়িস, হ্যাপি হবো।
এর পর আর কখনো আরশিকে শাড়ি পড়তে বলেনি রিদ। অবশেষে তাদের এই রাগ অভিমান খুনশুটি এগুলোর সমাপ্তি হয় বিচ্ছেদেই। রিদ কেনো চলে গেলো তার বাবা মায়ের কাছে অস্ট্রেলিয়া? আরশির কথা নামক প্রতিটা তীরের আঘাত রিদের বুকের রাজ্য পাজরে কতোটা গড়ির ভাবে আঘাত এনেছে তা প্রথম সিজনেই সবাই দেখলেন।

শাড়ি পড়া নিয়ে রিদের অভিমান গুলো ভাবতে ভানতে আরশি আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়িটা মেলে ধরলো গায়ে। বাহ্, ভালোই মানিয়েছে তাকে। আচ্ছা আজ এই শাড়িটা পড়লে কি রিদ ভাইয়া খুশি হবে? ভাবতে ভাবতে আবারও তার মা রুমে এসে বলে উঠলো,
– কি রে তোর হলো?
– মা এই শাড়িটা পড়লে কেমন হয়?
– তুই আর শাড়ি? কখনোই তো পড়িস নি।
– তাতে কি? আজ পড়বো।
– পড়তে পারিস?
আরশি মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
– নাহ্।
– আয় আমি পড়িয়ে দিই।
মায়ের কথায় আজ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আরশি। কি ব্যাপার? মা আজ কোনো প্রশ্ন করলো না কেনো? শাড়ি পড়ার কারণ জানতে চাইলোনা কেনো? আরো কেমন আগ্রহ ভঙ্গিতে পড়াতে রাজি হয়ে গেলো।
শাড়ি পড়ানোর পর,
– বাহ্ আমার মেয়েটাকে তো দেখছি আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। মাশাল্লাহ্ যেনো নজর না লেগে যায়। লজ্জা ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে একটা ছোট্ট হাসি দেয় আরশি।
,
,
বিকেলের মাঝেই সবাই চলে গেলো ওই বাড়িতে মানে রিদ দের বাড়ি। বাড়িটা সুন্দর ভাবে পরিপাটি করেই গুছানো সব। রিদ ও তার বাবা মা সবাই বাইরে থাকেও এই বাড়িতে থাকে, এক দারোয়ান ও জমির মিয়া ও জরিনা আপা। জমির মিয়া ও জরিনা আপা সম্পর্কে দুজন স্বামী-স্ত্রী। দুজনই এই বাসায় আগে থেকেই থাকতো। সবাই যখন এখানে ছিলো, তখন তারা দুজনই বাড়ির সব কাজ কর্ম করতো।
বাড়ির চার পাশটায় চোখ বুলায় আরশি। খুব ঝাক ঝমক পুর্নই বাড়িটা। দেখে বুঝাই যাচ্ছেনা এই বাড়ির মালিক গত ৭-৮ বছর ধরে বাইরে ছিলো। আর রিদ চলে যাওয়ার পরও বাড়িটার একটুও অজত্ন হয়নি।

সন্ধা পার হতে চললো, আরশির বুকের বা-পাশের টিপ টিপ শব্দটা যেনো ক্রমশ বেড়েই চলছে। বুকে হাত দিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে বার বার স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে আরশি। কিন্তু না টিপ টিপ করা আওয়াজ টা ক্রমশ বারছেই। মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট এ্যাটাক করবে সে।
কিছুক্ষন পর গাড়ির আওয়াজ এলো কানে। রোবট হয়ে যায় আরশি। আজ কিসের এতো ভয় তাও বুঝতে পারছেনা সে। সবাই ছুটে গেলো মেইন দরজার দিকে। রিদ ও রাত একে অপরের কাধে হাত রেখে কথা বলতে বলতে ঘরের দিকে আসলো সাথে তার বাবা মা ও রুদ্র চৌধুরি। রিদ গিয়ে সালাম করলো রাত্রি চৌধুরিকে।
– তুমি গেলেনা কেনো ফুফি। আংকেল বললো, তুমি নাকি যেতে ইচ্ছুক নও তাই তাদের পাঠিয়েছো?
– কিহ্, ও তোকে এইসব উল্টোপাল্টা বুঝিয়েছে না? আরে সে ই তো আমাদের নেয়নি। আমাদের এখানে রেখে চলে গেছে বাপ ব্যাটা মিলে। আর এখন তোকে উল্টোপাল্টা বুঝাচ্ছে না?
– আচ্ছা ফুপি বাদ দাও চলো।

আরশি এক পাশে দাড়িয়ে থেকে উকি দিয়ে দেখছে তাদের। সাদা টি-শার্টের উপরের জামাটার রং কালো। চোখে সানগ্লাস। হাতে একটা কালো রংয়ের এ্যাপেল ওয়ার্চ। ফর্সা মুখে দাড়ি ও হেয়ার কাট টা যেনো স্পর্শ ফুটে উঠেছে।
আরশি বির বির করে বলে উঠে,
– ওয়াও, নিজেকে তো দারুন পরিবর্তন করেছে দেখছি। একেবারে হ্যান্ডসাম বয়। তাই বলে এই সন্ধা বেলায়ও সানগ্লাস? বাপরে কি ঢং।
আরশির বির বির রিদের কান অব্দি যেতে সময় লাগলো না। সবাই উত্তেজনায় অস্থির রিদ একটু আর চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। রিদ একটু এগিয়ে বলে উঠে,
– কেমন আছো জমির চাচা?
– জ্বি বাবা আলহাম্দুলিল্লাহ ভালো। তোমাদের সবাইকে পেয়ে আরো বেশি ভালো হয়ে গেলাম।
– আরে জরিনা আপা, কেমন আছেন?
– এই বাবা দাড়াও এক মিনিট, আমি তোমার চাচা হলে সে আপা হলো কি করে।
– ওফ চাচা পুরনো অভ্যাস তো তাই মুখে স্লিপ কাটছে। এখন তো উনি আমার চাচি।
রিদের কথায় লজ্জায় আচল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো জরিনা।

আরশি খেয়াল করলো রিদ সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছে। কিন্তু তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। এতে একটু রাগ হলো আরশির।
রিদ বলে উঠে,
– তোমরা কথা বলো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।
পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– আচ্ছা তুই যা ফ্রেস হয়ে আয়, আমি গাড়ি থেকে জিনিস গুলো নিয়ে আসি।
– তুই যাবি মানে? লোকজন আছে তো।
– আরে তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবেনা। তুই যা তারাতারি চট করে ফ্রেশ হয়ে আয়।
বলেই বাইরে চলে গেলো রাত। রিদ উপরের দিকে হাটা ধরতেই আরশি গিয়ে পথ আটকায় তার। অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– আমায় দেখতে পারছোনা রিদ ভাই? নাকি দেখেও না দেখার ভান করছো?
– আমি কি অন্ধ নাকি যে এরোকম একটা জল জেন্ত মানুষকে দেখবো না?
– তাহলে কথা বলছো না যে?
– কি বলবো? আরশি কেমন আছিস? তুই বলবি ভালো আছি। এটাই তো নাকি?
রিদের কথায় একটু কষ্ট পেলো আরশি। তাও একটু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠে,
– আমায় কেমন লাগছে আজ।
– আমায় নয়, আগামি কাল বাবার বন্ধুদের সাথে তাদের দু,একজন ছেলেও আসবে। তাদের দেখাস ও জিগ্গেস করিস তোকে কেমন লাগছে?
রিদ এখনো অন্য দিকে তাকিয়েই কথাটা বললো। আরশির দিকে তাকালোনা সে। আরশি আবারও বলে উঠে,
– পড়নের শাড়িটা তুমি চিনতে পারছো?
রিদ এবার হন হন করে উপরে চলে গেলো। আরশির প্রশ্নের উত্তর দিলো না সে।
আরশি হয়তো দেখাতে চেয়েছিলো, দেখো আমি তোমার দেওয়া শাড়িটা পড়ে আজ তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি। আজ তোমার যত খুশি দেখো আমায়। আর শুধু একটিবার বলবে আমার কেমন লাগছে?
রিদ যতক্ষন রুমে গেলোনা ততোক্ষন পর্যন্ত তাকিয়ে রইলো আরশি। বৃষ্টি এসে হাত ধরে কি কারণে যেনো হাসতে হাসে সেখান থেকে নিয়ে গেলো তাকে। কিন্তু আরশির মুখে আজ কোনো হাসি নেই।
আরশিকে দেখেই রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– এই তো আমার আরশি।
– বাহ্, সেই পিচ্চিটা বড় হয়ে গেছে দেখছি, মাশাল্লাহ্।
– হুম। কতো জায়গা থেকে দেখতে এসেছে তাকে। পছন্দও করে গেছে কিন্তু পরে শুনি মেয়ে তাদের পছন্দ হয়নি। বুঝতাম না কেনো এমন করতো সবাই? পরে জানতে পারি সব তারই কাজ। কৌশলে সব পাত্র পক্ষকে বিদায় করে দিতো, বিয়ে না করার ধান্দায়।
– বাব্বাহ্, দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো পিচ্চি পিচ্চি, কেমন একটা ইনোসেন্ট ভাব।
– ইনোসেন্ট না? আস্ত ফাজিলের হাড্ডি।
পাশ থেকে আরশির মামা বলে উঠে,
– নিজে মনে হয় একে বারে শান্ত স্বভাবের ছিলি? আমার মনে হয় না আরশি তোর অর্ধেক ফাজলামু করে। তুই যে বিয়ের আগে কেমন সয়তানের হাড্ডি ছিলি তা তো আমিই জানি বাপরে বাপ।
তাদের ববাই বোনের এমন তর্ক দেখে মুচকি মুচকি হাসছে রুদ্র চৌধুরি।

রুমে গিয়ে শাড়ি চেন্জ করে জামা পরে নেয় আরশি। রাগে শাড়িটা খুলে ফ্লোড়ে ছুরে মারে সে। পরে আবার তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে কাদতে থাকে সে। সারাদিনে করা প্লেন টা নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো। খুব বদলে গেছে রিদ।
ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে টেবিলে রাখা একটা কাগজ। সেটা তুলে নেয় আরশি। লেখা ছিলো,
“” রিদ ফিরেছে ভালো কথা,তার সামনে শাড়ি পড়ে দাড়ানো তো দুরের কথা, হেসে হেসে কথা বললেও এর পরিনাম খুব খারাপ হবে।””

~ইতি, নামটা না হয় অজানাই থাক।

To be continue……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here