বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ__১২,১৩

0
1278

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ__১২,১৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১২

– মাইন্ড ইউর লেঙ্গুএ্যাজ অফিসার। বর্ষার খুন? আর তাও আবার খুনি বৃষ্টি? এটা হতেই পারেনা। আরে যেই মেয়ে থাপ্পর খাওয়ার ভয়েও এক পাশে গুটিসুটি মেরে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকে সে কাওকে খুন করেছে এটা আমার বিশ্বাস করতে হবে।
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে দ্রুত গতিতে কামরুল হাসানের কাছে গিয়ে কথাটা বলে উঠে রাতের বাবা রুদ্র চৌধুরি।
– কে দোষি আর কে নির্গোষ তা আদালত প্রমান করবে আমরা নয়। আপাততো আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন। এই নিয়ে চলো একে।
একটা মহিলা পুলিশ এসে হাতকরা লাগায় বৃষ্টির হাতে।
ভয়ে কাপছে বৃষ্টি। কাঁদো কাঁদো গলায় আকুতি মিনতি করতে থাকে সে।
– বিশ্বাস করুন বাবা আমি আপুকে কিছু করিনি। ওরা মিথ্যা বলছে, আমি কিছু জানিই না এই বেপারে। রাত আপনি তো আমায় বিশ্বাস করছেন।
ঘরের ভেতর থেকে বৃষ্টির ছেলে শ্রাবন কে কোলে নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসে আরশি।
বৃষ্টি পুলিশের হাত থেকে হেচকা দিয়ে ছুটে শ্রাবনকে কোলে তুলে নিলো।
– আমার ছেলে, তুমিও কি আমার কথা বিশ্বাস করবেনা শ্রাবন? বিশ্বাস করো মা কিচ্ছু করিনি। নিজের ছেলে কে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে বৃষ্টি।
পাশ থেকে মহিলা পুলিশটা তাকে টানতে টানতে বাড়ির গেট পার হয়ে যায়।
রাত ছুটে আশে পেছন পেছন। বৃষ্টিকে গাড়িতে উঠানোর আগে রাত গিয়ে বৃষ্টির গুই গালে হাত রেখে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,
– চিন্তা করো না বৃষ্টি। আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে তুমি কিছুই করোনি। তুমি নির্দোষ। আমি যত তারাতারি সম্ভব তোমায় ছারানোর ব্যাবস্থা করছি।
বৃষ্টিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা। গাড়ির পেছন পেছন দৌড়ে অনেকটা পথ এসেছে রাত। কিন্তু এবার গাড়ির গতি বেড়ে যাওয়ায় ধিরে ধিরে চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে। রাতের দিকে চেয়ে চেয়ে নিজের পাঁচ মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে বৃষ্টি। তার একটাই কথা আমি কিচ্ছু করিনি।

খুব জঘন্ন ভাবে মারা হয়েছে মেয়েটাকে। পিঠের দুটু হার ভাঙা পাওয়া গেছে। হয়তো কেও পেছন থেকে সজোড়ে লাথি মেরেছিলো। খুব ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কাটা হয়েছে মেয়েটার। লাশটা যেই যায়গায় পাওয়া গেছে ওখানে খুন করা হয়নি। বাইরে থেকে খুন করে ওখানে এনে ফেলে দিয়ে গেছে। কারণ ওখানে জদি জবাই করা হতো তাহলে প্রচুর রক্ত পরে থাকতো ওই জায়গায়। খুনটা হুট করেই হয়নি আগে থেকেই প্লেন করা ছিলো।
রিদের কাছে বর্ষার গলা কাটা ছবি গুলো দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে কথা গুলো বলে উঠে ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান।
রিদ ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
– খুন যে সে ই করেছে তা আপনারা শিউর হলেন কি করে?
– মিসেস বৃষ্টি ও বর্ষা এদের দুজনের মাঝে একটা ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে দন্ধ চলছিলো। আর বৃষ্টির বিরুদ্ধে অভিযোগটা তোলেন বর্ষার বয় ফ্রেন্ড। কয়েকদিন পরই তাদের বিয়ে করার কথা ছিলো।
রিদ ছবি গুলো টেবিলে রেখে অবাক চোখে ই. কামরুল হাসানের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– তার বয় ফ্রেন্ড মানে?
– দেখুন রিদ সাহেব আপনি যেই কথা বলছিনের যে টাকা পয়সার ব্যপারে ওটা সম্ভব নয়। কারণ বৃষ্টির নামে অলরেডি মামলা হয়ে গেছে। তাও আবার যেই সেই মামলা নয়, মার্ডার। এখন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আদালত নিবে। আপনারা মিসেস বৃষ্টিকে এখন নির্দোষ প্রমান করতে চান তাহলে ভালো দেখে একটা উকিল নিয়ে ট্রাই করতে পারেন।

পাশে চুপ চাপ বসে আছে রাত। কপালে জমে থাকা ঘাম গুলো মুছে একটা বড় দির্ঘশ্বাস ফেললো সে। শান্ত গলায় বলে উঠে,
– আমরাকি তার সাথে দেখা করতে পারি?
– চলুন আমার সাথে।

রাত ও রিদ গিয়ে খাচার সামনে দাড়াতেই বৃষ্টি শ্রাবনকে কোলে নিয়ে রাতের সামনে এসে দাড়ায়।
– প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন আমাকে। আমি কিচ্ছু করিনি। দেখেন শ্রাবন শুধু কান্না করছে এখানে। এখানে খাবার গুলোও কেমন। খুব ভয় করছে আমার এখানে প্লিজ নিয়ে চলুন আমাকে এখান থেকে।
রাত বৃষ্টির গালে হাত রেখে বলে উঠে,
– হুম নিয়ে যাবো। আর খুব শিগ্রই।
– জানেন, পুলিশ মহিলাটা আমার গায়ে হাত তুলেছে। বার বার জিগ্গেস করছে আমি খুন করেছি কিনা?
রাত এবার রেকে ই. কামরুল হাসানের দিকে এগিয়ে যেতেই রিদ থামায় তাকে। রিদ ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– পদোন্নতি করতে চাইছেন? তাও আমার মহিলার গায়ে হাত তুলে?
– দেখুন রিদ সাহেব আইনের চোখে সবাই সমান। সে না দেখে নারি না দেখে পুরুষ সে সুধু দেখে অপরাধি।
রিদ একটু ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
– আচ্ছা? তো ই. কামরুল হাসান আমার মনে হয় আপনার আইন সম্পর্কে জ্ঞান টা অসম্পূর্ণ। অপরাধি ও সন্দেহ বাচনের মাঝে পার্থক্য জানেন? দেখি একটা করে সংজ্ঞা বলুন তো এগুলোর। অপরাধি হলো যার দোষ সবার সামনে প্রমানিত হয়ে গিয়েছে। আর সন্দেহ বাচন হলো যাকে সন্দেহ করা হয়েছে এবং তার দোষ এখনো কারো কাছেই প্রমানিত হয়নি।
পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– দেখুন আমরা চুপ করে আছি তার মানে এই নয় আমরা কিছু করতে পারবো না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে আমরা এখনো চুপচাপ আপনাদের সব ক্যাচাল সহ্য করে যাচ্ছি।
রিদ পাশ থেকে রাতের কাধে হাত রেখে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
– মাথা ঠান্ডা কর। এখন রাগের বসে কিছু করে বসাটা বোকামি। এগুলো শুধু আমাদের আরো এক ধাপ পিছিয়ে নিবে।

রাত তখন দশটা কপালে চিন্তার ভাজ নিয়ে সোফায় বসে আছে রুদ্র চৌধুরি ও রাত্রি চৌধুরি। সারাদিন টেনশন ব্যাস্ততায় ক্লান্ত হয়ে পরেছে সে। রাত এখনো থানার সামনে বসে আছে। তার স্ত্রী এবং সন্তানকে ফেলে কিছুতেই বাড়ি যাবে না সে। রিদ অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছে তাকে। কিন্তু কিছুতেই মানছেনা রাত। পারছেনা শুধু সকল আইন অমান্য করে পুরু থানা গুড়িয়ে দিয়ে নিয়ে যেতে বৃষ্টি ও তার সন্তানকে।

বৃষ্টিকে ছারাতে শহরের সব চেয়ে বড় উকিলকে নিযুক্ত করলেন রুদ্র চৌধুরি। তার একটাই কথা বৃষ্টিকে মুক্ত দেখতে চায় সে। আর তা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে।

কয়েকদিন পর কোর্টে হাজির করা হলো বৃষ্টিকে। তার ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি। আজ পর্যন্ত একটাও হারার রেকর্ড নেই তার। তবে এই কেসটা একটু জটিল তার কাছে। কারণ খুনি যেই হোক, বৃষ্টির বিরুদ্ধে একের পর এক কারণ রেখে গেছে।
– তো মিসেস বৃষ্টি। এই যে আপনার বোন বর্ষার সাথে আপনার কিছু ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলছিলো তাই না?
– হ্যা আমি মানছি যে আমার আর আপুর মাঝে দন্ধ ছিলো। কিন্তু আমি ওকে মারিনি।
– তো কি নিয়ে দন্ধ ছিলো?
– আপু সব সময় আমায় জ্বালাতো আর ব্লেকমেইল করতো যে আমি যেনো আমার স্বামী ও সংসার ছেরে তাদের থেকে দুরে সরে যাই। সব সময় আমাকে চাপ দিতো। তার কারণে আমার সংসারে একের পর এক অশান্তি লেগেই থাকতো। তবুও কিছু বলতাম না ভাবতাম সব ঠিক হয়ে যাবে নিজেরই তো আপু।
– কি বললেন? সে আপনাকে ব্লেকমেইল করতো, তার কারনে আপনার সংসারে অশান্তি লেগে থাকতো। তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনার জীবন টা পুরাই উলট পালট হয়ে গিয়েছে তার জন্য। আর এই কারণে আপনি ওকে মেরে আেপনার জীবন থেকে সরিয়ে দেন যাতে আপনি তার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
– না, আমি আপুকে মারিনি।
– আপনিই মেরেছেন তাকে। কারণ সে আপনি অন্তঃসত্বা থাকতে সীড়ি দিয়ে ফেলে আপনার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো আর সেই ক্ষোপ থেকেও আপনি তার প্রান নিয়ে নিলেন।
– না আমি সত্যি বলছি আমি আপুকে মারিনি।
পাশ থেকে বৃষ্টির ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি বলে উঠে,
– আপনি কাওকে এভাবে প্রমান ছারা খুনি বলতে পারেন না মিস্টার আনোয়ার সাহেব।
জ্বজ ও বলে উঠে,
– হ্যা কি প্রমান আছে যে ওনিই খুনি।
– জ্বজ সাহেব, আমার কাছে একটা জোড়ালো প্রমান আছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যায়। পুলিশ পাওয়ার ১০ ঘন্টা আগে ওনার খু হয়েছে। আর পুলিশ লাশ পেচেছে সকা৭ টা নাগাদ। তার মানে খুন হয়েছে রাত নয়টায়। আর ঠিক রাত সারে নয়টায় মিসেস বৃষ্টিকে বাইরে থেকে আসতে দেখেছে তাদের বাড়ির দাড়োয়ান আলি।
– জ্বি স্যার, আমি ম্যাডামকে রাত নয়টা নাগাত গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেখেছি। আর উনি খুব রেগেছিলেন আমি জিগ্গেস করলাম কি হয়েছে তখন উনি কিছুই না বলে ভেতরে চলে গেছেন।
তখনই বৃষ্টির বি পক্ষের উকিল বলে উঠে,
– কারন উনি তখন কাওকে খুন করে এসেছে তাই আপনার সাথে কোনো কথা বলেনি। কারণ নয়টার সময় খুন হয়েছে আর উনি সারে নয়টায় বাড়ি ফিরলেন এর আগের সময়টা তিনি কোথায় ছিলে। আর এটাও জানা গেছে যে মিসেস বৃষ্টি রাতে কখনো বাইরে যান না, তাহলে ওই রাতে কেনো গিয়েছিলেন? নিশ্চই বর্ষাকে খুন করতেই গিয়েছিলেন।
– না আমি কাওকে খুন করিনি। আপনারা কেনো আমার কথা বিশ্বাস করছেন না? এটা বলেই কাদতে থাকে বৃষ্টি। ভয়ে শরিরটা কাপছে তার। কারন কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরেনি সে।
– মিসেস বৃষ্টি আপনার কান্নায় কিন্তু আমারও কান্না পাচ্ছে কিন্তু আফসোস আদানল আবেগ নয় প্রমান দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়। বলেই হেসে উঠলেন আনোয়ার সাহেব।

বৃষ্টির সাথে দেখা করতে গেলো রাত। প্রতিবারের মতো আজও খাচার বাইরে দাড়িয়ে আছে রাত। চেহারাটা কেমন উস্কো খুস্ক হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ঠিকঠাক মতো খেতে দেয়না এখানে। যাত্ন নিতে পারে নাসে। পারবেই বা কি করে এটা তো আর বাড়ি নয়। ভেতরে অঝরে কেদে চলছে বৃষ্টি।
– আমাকে কি আর কখনো আপনার কাছে যেতে দিবেনা তারা?
রাত বৃষ্টির দু গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠে,
– কে বলছে দিবেনা। আর কয়েকদিন অপেক্ষা করো। তোমাকে ঠিকই এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবো আমি।
– ওরা বলছে সব প্রমান আমার বিরোদ্ধে। কিন্তু আমি তো আপনার কাছে কখনো মিথ্যা বলিনি। আপনি কি আমায় বিশ্বাস করছেন না? আমি মারিনি আপুকে।
– বৃষ্টি ভেঙে পরো না। কখনো কখনো মিথ্যার আড়ালে লুকিয়ে থাকে সত্যটা। আর তা এক সময় ঠিকই সামনে আসে।
– আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে। আপনাদের ছারা এতোটা দিন পরে আছি এভানে। রাতে অন্ধকারে একা একা আমার খুব ভয় করে এখানে। মশার জন্য ঘুমাতেও পারিনা ঠিক মতো। বার বার আপনার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে। অনেক্ষন ধরে কাদলেও কেও সামনে এসে দেখে না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।

To be continue………

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__১৩

– সেদিন রাত ৯ টার সময় আমার ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। রিসিভ করতেই কে জেনো বললো, আমার স্বামি এক্সিডেন্ট করেছে। সে ঠিকানা বললেই আমি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে সেখানে চলে যাই।
কথাটা খুব শান্ত ভাবেই বললো বৃষ্টি। তার ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি বলে উঠে,
– ওখানে গিয়ে কি দেখলেন?
– কিছুনা। সব ঠিকঠাক। রাতকে ফোন দিয়ে জিগ্গেস করলাম জানতে পারি তারা বন্ধুরা মিলে ডিনারে গেছে।
– কি বললেন, সেদিন আপনার স্বামী বললো সে ডিনারে গেছে বন্ধুদের নিয়ে? আচ্ছা সে কি আগেও এমন বন্ধুদের সাথে ডিনারে যেতো?
– হুম মাঝে মাঝে যেতো।
– ওহ্, তো এসব আমাকে আগে বলেন নি কেনো? আসলে আমি খুব ভয়ে ছিলাম কোর্টেও কিছু বলতে পারিনি।
– আচ্ছা বর্ষাকে কে মারতে পারে? আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
– আমি জানিনা। আমি শুধু জানি, আমি আপুকে মারিনি।

বর্ষার বাবা মায়ের সামনে বসে আছে ফারহান রেজবি।
– আচ্ছা খুনের দিন রাতে বর্ষা কোথায় ছিলো। বা কোথায় গিয়েছিলো?
– সেদিন সে রাত আটটার সময় ঔষধ আনতে গিয়েছিলো এই পাশের মেডিসিন শপ থেকে। তার পর আর ফেরেনি। ফোনটাও বন্ধ পেলাম। সব আত্বিয়দের বাসায় ফোন দিলেও শুনি বর্ষা কারো বাড়ি যায়নি।
– পেশের মেডিসিন শপ?
– হ্যা।
ফারহান রেজবি তার পি,এ অধিরকে বললো, চলো আপাততো এটা জানতে পেরেছি যে বর্ষা তখন কোথায় গিয়েছিলো? ওখান থেকে কিছু পাওয়া যাবে নিশ্চই।
,
,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমরা ৩ মার্চ রাত আটটার পর থেকে, আপনার দোকারে সামনের সিসি টিভি ফুটেসটা দেখতে চাই।
– কারনটা জানতে পারি নিশ্চই।
– দেখুন এটা একটা খুনের কেস।
– স্যার ওই দিন সন্ধা সাত টার সময় আমরা শপ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। আমার ওয়াইফ অসুস্থ ছিলো তাই।
– ফুটেস তো আর আপনাদের সাথে বাড়ি যায়নি তাই না। আমরা সেই সময়ের ফুটেস দেখতে চাইছি।
– ওকে স্যার।

ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান ও ফারহান রেজবি বসে আছে একসাথে। ফুটেসে দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে বৃষ্টিকে জোড় করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেলো।
– ছেলেটার সম্পর্কে খোজ নিয়েছি আমি। ছেলেটার নাম প্রিকি, বাবা নেই, মা আর তার এক ছোট ভাই নিয়েই তার পরিবার। শুনলাম তার মায়ের দু,টু কিডনিই ডেমেজ হয়ে গেছে। আর্থিক অবস্থাও খারাপ। মিরপুরেই ছেলেটার বাড়ি।
– ছেলেটার সাথে বর্ষার কি শত্রুতা থাকতে পারে? নাকি টাকার জন্য এসব করেছে?
– সেটা তো ছেলেটাকে ধরলেই জানা যাবে।

রাত ২ টার সময় প্রিকিকে গ্রেপতার করে পুলিশ। জিগ্গাসাবাদে অবশেষে প্রিকি স্বীকার করে নিলো যে, খুনটা সেই করেছে তবে কারো কথায়। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো তাই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে সে। কিন্তু কে সে যার কথায় বর্ষাকে মেরেছে প্রিকি তা এখনো বলেনি সে। ই. কামরুল হাসান হাত থেকে লাঠিটা ফেলে হতাশার নিশ্বাস ছেরে ক্লান্তিতে ফ্যানের নিচে গিয়ে বসে।
,
,
প্রিকির সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছে ফারহান রেজবি।
– দেখো প্রিকি, তুমি কিন্তু এখন খুব ভালো ভাবেই ফেসে গেছো। এটাও প্রমানিত হয়ে গেছে যে খুনটাও তুমিই করেছো। দেখো তোমার ফ্যামিলিতে তোমার মা ও তোমার ছোট ভাই আছে। তুমি চলে গেলে ওদের কি হবে? তার চেয়ে ভালো তুমি কার কথায় খুনটা করেছো তার নামটা বলে দিলে তোমার সাজা কিছুটা কম হতে পারে তোমার অবস্থাটা চিন্তা করে।
– আমি তার নাম বলবো না, কিন্তু আপনাে আমি একটা ধাঁধাঁ দিতে পারি। আপনাকে এই ধাঁধাঁর উত্তর খুজে তাকে বের করতে পারলেই আমি আদালতে সব সত্যি বলে দিবো।
– কেমন ধাঁধাঁ।
– ধাঁধাঁ টা হলো, আমায় হত্যার পর আমার লাশটা নিজের জায়গাতে পুতে দিস না ওরে হত্যা কারি। কৌতহলি লোকদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনিস না। নাহলে পৃথিবীর মানুষ আমার লাশ খুজতে খুজতে তোকে ও তোর অপরাধ গুলো টিকই খুজে বের করে ফেলবে।
– এটা কেমন ধাঁধাঁ?
– এটা আপনাকেই খুজে বের করতে হবে। আমি তার বেপারে আপনাকে বলেই দিয়েছি।
– ওকে থ্যাংক্স।

রাত ও রিদ বসে আছে ফারহাত রেজবির সামনে। রাত গম্ভির ভাবে বললো,
– ছেলেটা কিছু বললো?
– হুম সে বললো, আমায় হত্যার পর আমার লাশটা নিজের জমিতে পুতে দিস না ওরে হত্যাকারি। কৌতুহলি লোকদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনিস না। তাহলে পৃথিবির মানুষ আমার লাশ খুজতে খুজতে তোকে ও তোর অপরাধ দুটুই খুজে বের করে ফেলবো।
– এটার মানে?
– মি. রাত সাহেব প্রিকি এটা আমাদের একটা ধাঁধাঁর মতো দিয়েছে। এটার মাধ্যমেই আমাদের আসল খুনিকে বের করতে হবে। তাহলেই ও সব সত্যি টা বলে দিবে।
– তো বের করতে পারলেন?
– আমি একটা উত্তর খুজে বের করেছি। সে বললো, হত্যার পর লাশটা নিজের জমিতে পুতে দিস না, তাহলে লাশটা যদি বর্ষারই হয় তাহলে বর্ষার লাসটা কোথায় ফেলে আসা হয়েছে? রাস্তার পাশে একটা বড় লিচু বাগানে। আর ওই বাগানটা হলো বর্ষার বয়ফ্রেন্ড মি. তিহান সাহেবের। যিনি আপনাদের সাথে মামলায় লড়ছে। কিন্তু আমার আইডিয়াটা যদি সত্যি হয় তাহলেও একটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্ষা তিহানের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার সত্বেও কেনো তাকে মেরেছে আার সেই খুনের দায় মিসেস বৃষ্টির উপরই বা কেনো চাপাতে চাইছে?
রাতের কাছে এখন সব জলের মতো পরিস্কার। কারণ তিহানের সাথে বর্ষা পালিয়ে যাওয়ার পরও তিহানের ব্যাপারে কি যেনো জানতে পেরে তাকে পেলে চলে এসেছে বর্ষা। আর তিহান বিয়ে করতে চাইছিলো, আমার বোন আরশিকে আর তাও ভেঙে দিয়েছে বৃষ্টি। তিহানের ব্যাপারে সব বলে দিয়েছে সবাইকে। হতে পারে এটাই বৃষ্টির প্রতি তিহানের ক্ষোপ।

তিহানের বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। তখন রাত ৩ টা। কয়েকজন পুলিশ দিয়ে ঘুমের মাঝে এরেস্ট করে তিহান কে।
এবার সবার সামনে বেড়িয়ে আসে আসল সত্যটা। যে খুনটা তিহানই করিয়েছে। বর্ষাকে মেরে বৃষ্টিকে ফাসিয়ে দিয়েছিলো কারণ বৃষ্টির কারনে তার একটা বড় প্লেন নষ্ট হয়ে গেলো। আর তা হলো আরশিকে নিয়েই। তিহান চেয়েছিলো আরশিকে বিয়ে বরে ব্লকমেই ও কেশলে সব নিজের করে নিতে। কারণ রাতের বাবার ও তিহানের বাবা দুজনই কারো থেকে কেও কম নয়। কিন্তু তার প্লেনটা সাক্সেস হলে আরো শির্ষে পৌছে যেতো তাদের বিজনেস। কিন্তু সব নষ্ট করে দিলো বৃষ্টি।
অবশেষে সত্য প্রকাশ হওয়ার পর ছারা পেলো বৃষ্টি।

অবশেষে অনেক দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরছে বৃষ্টি। সারা রাস্তায় বৃষ্টির সাথে কোনো কথা বলেনি রাত। পেছনে বৃষ্টির সাথে বসে আছে রাত। সামনে ড্রাইবিং করছে রিদ, পাশে আরশি। রাতের বাবা রিদের বাবা ও বৃষ্টির বাবা তারা আসছে পেছনের গাড়িতে। গাড়িতে চুপ চাপ শ্রাবনকে কোলে নিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। আর বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
বাসায় ফিরতেই বৃষ্টিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে রাত্রি চৌধুরি ও রিদের মা রুবিনা ও বৃষ্টির মা সাহেলা বেগম। বাসায় ফিরতেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন সাহেলা বেগম। যেনো বড় মেয়েকে হারিয়েও এতো দুঃখ পায়নি যতটা খুশি এখন হয়েছে সে।

বৃষ্টিকে একটা গোলাপি রংয়ের শাড়ি দিলো রাত্রি চৌধুরি।
– ফ্রেশ হয়ে এই শাড়ি পরে আমার সামনে আসবে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
আধা ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো বৃষ্টি। গায়ে টাওয়াল পেচিয়ে আয়নায় সামনে বসে সে। এই কয়েক দিনে কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে সে। তখনি কেয়াল করলো বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রাত। বৃষ্টি ধিরে পাশে তার পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাইরে অন্ধকার। চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে রাত। বৃষ্টির সাথে কোনো কথা বলছেনা সে।
বৃষ্টি রাতের পাশে দাড়িয়ে বলে উঠে,
– আমার উপর কি রাগ করে আছেন আপনি? আমার সাথে কোনো কথাই বলছেন না?
হুট করেই বৃষ্টিকে জড়িয়ে ঘরে রাত। যেনো গভির এক শুন্যতার নদি শুকিয়ে ছিলো রাতের মন জুড়ে। আর তা এই মুহুর্তে বৃষ্টি তার সর্বোচ্চ বর্ষনে ভরিয়ে তুলবে নিমেষেই। ৩০ মিনিটেরও অধিক সময় জড়িয়ে ধরে আছে একে অপরকে।

রিদ সোফায় বসে আছে আর সময় দেখছে। ১০ মিনিটের কথা বলে রাত রুমে গেলো সেই ১ ঘন্টা পার হয়ে গেলো এখনো বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই। ইশ বড্ড মায়া হচ্ছে তার জন্য। কিভাবে যে এতো দিন পার করেছে কে জানে? আহারে বেচারা।
পাশ থেকে আরশি এসে বসে তার পাশে। একটু নরম শুরে রিদকে বলে উঠে,
– ওগো কি ভাবছো এভাবে বসে বসে।
– ইশ আজ দিনটা জদি তোর আর আমার মানে আমাদের হতো।
আরশি একটু অবাক হয়ে তাকায় রিদের দিকে। হুট করে রিদ লাফ দিয়ে উঠে বলে,
– কিরে আরশি তুই আমায় ওগো বললি কেনো? কোন দিক দিয়ে আমি তোর ওগো লাগি?
– তুমি কি ভাবছিলা আবার বলো তো।
– মাথাটা প্রচুর ধরে আছে রে আরশি।
– টিপে দিবো?
– তোকে বলছি আমি? সব সময় শুধু গায়ে হাত দেওয়ার অজুহাত খুজিস। যা আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো।
আরশি একটু অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– পারবো না তোমার পানি তুমি এনে খাও।
রিদ এবার বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরশির দিকে। জ্বিভে একটা ছোট্ট কামড় দেয় আরশি।
– ইয়া মানে আমি যাচ্ছি তো।

To be continue…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here