#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)?,পর্বঃ__১৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
রান্না ঘরে চৈতি আর মা রান্না করছে। আরশি ওখানে গিয়ে কিছুটা সময় পার করলো তাদের সাথে। তার কাছে যে কেও একজন কিছু চেয়েছে তাও হয়তো ভুলে গেছে সে।
হটাৎ আরশির মনে পরলো, রিদ ভাইয়া তো এক গ্লাস পানি দিতে বলেছিলো সেই অনেক্ষন আগে। জ্বিভে একটা ছোট্ট কামড় দেয় আরশি। হাত দিয়ে মাথায় একটা হালকা করে চটি মেরে হাটা ধরে আরশি। আজ তোর খবর আছেরে আরশি। ভাবতে ভাবতে পানি নিয়ে হাটা ধরে আরশি। দেখে রিদ নেই। হয়তো রুমে চলে গেছে।
আরশি পানি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলে দেখে রুমেও কেও নেই। কিছুক্ষন আগে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে হটাৎ করেই। স্তব্দ পরিবেশ গাছপালাও তেমন নরছিলোনা, মোটামুটি গরমও ছিলো বটে। কিন্তু হুট করেই শুরু হলো বৃষ্টি।
আরশি পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বেলকনির দিকে তাকাতেই দেখে রিদ পকেটে হাজ গুজে দাড়িয়ে আছে ওখানে। বাইরের বৃষ্টি ফোটার সাথে ঝাপটা বাতাশে স্নিদ্ধ চুল গুলো উড়ছে তার।
আরশি রিদের কাছে যেতেই থমকে যায়। কারণ বিছানায় রিদের পরে থাকা মোবাইল টায় একটা মেসেজের শব্দ কানে এলো তার। কৌতহলি দৃষ্টিতে ফোনটা হাতে নিলো আরশি।
দেখে ওইদিন রিদের সাথে আসা মেয়েটার মেসেজ। যাকে রিদ আরশির সামনে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলে সন্মোধন করলো। কিন্তু ওইদিন বিষয়টা ফাজলামির দৃষ্টিতে দেখে সেই বেপারে রিদকে আর কিছু জিগ্গেস করেনি সে। আরশির চোখ রিদের ফোনের স্কিনে আটকে আছে,
“” দেখছো বাইরে কতো সুন্দর আকাশ তার সবটা বৃষ্টি কনা দিয়েই ভরিয়ে তুলছে প্রকৃতিকে। ঠিক ওই ভাবে ভালোবাসার বৃষ্টি কনায় তুমিও কি ভড়িয়ে দিবে আমায়? তোমার ভালোবাসার বৃষ্টি কনা জমে বিশাল সাগরে পরিনত হবে। আর সেই সাগরে আমি বার বার ডুবে মরতে চাই। জানো আজ এই বৃষ্টি ভেজা রাতে বড্ড একা মনে হচ্ছে নিজেকে। বাবা মা ও বাসায় নেই। সেই বিকেলে ছোট ফুফির বাসায় গেছে। এখন বাসায় শুধু আমি একা। আজ একটু বেশিই একাকিত্ব ভুগছি আমি। তুমি চলে আসোনা এই একাকিত্ব দুর করে ভালোবাসার জালে মুড়িয়ে নিতে আমায়। আজ এই রাতটা হবে শুধু তোমার আর আমার।””
আরশির এক হাতে গ্লাস অন্য হাতে ফোন। মেসেজটা পড়েই যেনো সকড হয়ে দাড়িয়ে আছে আরশি। মুহুর্তেই চোখ দুটি ভিজে উঠেছে তার। যেনো কাদতে চেয়েও পারছেনা সে। সারা শরির রীতিমতো কাপছে তার। হাত থেকে পানির গ্লাসটা ফ্লোড়ে আছড়ে পরে কয়েক টুকরু আকারে ধারন করলো। পানি গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো চার দিকে। এই বৃষ্টির শব্দের মাঝেও কাচ ভাঙা শব্দটা ঠিকই কানে এলো রিদের। রুমে আসতেই দেখে আরশি তারাহুরু করে ফোনটা বিছানায় রেখে চোখের পানি মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। রিদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে এই মেয়ের আবার কি হলো?
রিদ দ্রুত হেটেই ফোনটা হাতে নিতেই চোক্ষু যুগল বর বড় আকার ধারন করে ফেলে তার। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে ধিরে ধিরে। রাগে হাত পা কাপছে তার। ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে ফোনটা আছড়ে মেরে টুকরু টুকরু করে ফেলতে।
ওদিকে আরশি দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নেয়। বিছানায় পরে বালিশে মুখ গুজে কাদতে থাকে সে।
এদিকে রাগে ফোসফোস করতে করতে তৃনার নাম্বারে সাথে সাথেই ফোন দেয় রিদ। তৃনা ফোন ধরছেনা দেখে রাগে রিদ অস্থির হয়ে উঠে, তৃনার বাচ্চা ফোন ধর।
অবশেষে দুই বার ফোন দিতেই রিসিভ করলো তৃনা।
তৃনা ফোন ধরতেই রিদ এক নিশ্বাসে অনেকটা কথা শুনিয়ে পেলে তাকে
– এই শাকচুন্নির ঘরে শাকচুন্নি এসব কি ম্যাসেজ পাঠালি তুই আমায়? তোর মন মানসিকতা এতো নিচু তা আমার ধারনার বাইরে ছিলো। ছি ছি ছি।
– আরে আরে রিদ আমার কথাটা আগে শুন।
– কি শুনাবি তুই আমায়? মেসেজে কি লিখলি এখন তা মুখে বলতে চাস?
– আমাকে বলতে দে আগে। রাকিবের সাথে ট্রুথ অফ ডেয়ার খেলার সময় আমি ডেয়ার নেওয়ায় সে আমাকে এই মেসেজটা দিয়ে বললো, এটা যে কোনো একটা ছেলেকে পাঠাতে। তার পর তাকে স্কিনসর্ট দিতে।
– এসব বাজে মেসেজ কোনো ডেয়ারের মাঝে পরে?
– ডেয়ার নিয়ে ফেসে গেলাম কি আর করবো বল? আন্দাজি কোন ছেলেকে পাঠাবো বল? তাই তোকে পাঠিয়ে ওকে স্কিন সর্ট পাঠালাম। আমি কি খারাপ কিছু করলাম বল?
– না খুব ভালো করেছেন আপনি। আর আপনার এই ভালো আমার লাইফের হো** দিছে সালির ঘরে সালি।
– কেনো রে মামা কিছু হয়েছে?
– ফোন খাটের উপর রেখে আমি বাইরে ছিলাম। আর তখন আরশি এসে মেসেজটা দেখে, গ্লাস পাতি ভেঙে চুরে কাদতে কাদতে বেড়িয়ে গেলো।
– কি বলিস রিদ। তাহলে সমস্যা তো সাংঘাতিক। দাড়া আরশির নাম্বারটা দে আমি কথা বলছি তার সাথে।
– ফোন রাখ বেয়াদব ছেমড়ি।
রিদ দৌড়ে গিয়ে দেখে আরশি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। রিদ বাইরে থেকে দরজা থাপ্পর দিচ্ছে। ভেতরে বসে বসে কাদছে আরশি। কান্না ভেজা চোখে অভিমানি মুখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
” তাহলে রিদ ভাইয়া তলে তলে এইসব করে বেড়ায়? তাহলে কি দরকার ছিলো আমার সাথে এভাবে মায়া বাড়ানোর? কেনো আমায় ভালো বাসতে শিখিয়েছে সে। তোমার ভালো মুখের আড়ালে যে এমন একটা খারাপ মানুষ লুকিয়ে আছে তা আমার ধরণার বাইরে ছিলো রিদ ভাই। আর কক্ষনো তোমার মতো খারাপ মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো না আমি। আজ থেকে সব শেষ। একটু ভালোবাসার জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছি তোমার।
কথা গুলো মনে মনে বলতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি।
ওদিকে রিদ উত্তেজিত হয়ে দরজায় জোড়ে জোড়ে আঘাত করছে।
– প্লিজ আরশি আমায় ভুল বুঝে তুই নিজের ক্ষতি করিস না। প্লিজ আরশি দরজা খোল।
এবার আরশি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে আছে।
” সে ভাবলো কিভাবে, ওর মতো খারাপ মানুষের জন্য আমি আত্মহত্যা করবো?
– আরশি দরজা না খুললে কিন্তু আমি দরজা ভেঙে ভেতরে চলে আসবো বলছি।
এবার রিদের সাথে রাত ও বাবা মা ভাবি মামা মামি সবার গলা শুনা যাচ্ছে। চুপচাপ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি।
এবার খেয়াল করলো কেও সত্যি সত্যি দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। কারণ এতোক্ষন হয়ে গেলো ওদের ডাকে কোনো রেসপন্স দেয়নি আরশি।
আরশি এবার চুপচাপ ধিরে পায়ে দরজা খুলে দিতেই রুমে প্রবেশ করলো সবাই। প্রথমেই আরশির গালে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় রিদ। উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে আছে রিদ ও আরশির দিকে।
রিদ রাগি ও করুন দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– কি শুরু করেছিস তুই? এভাবে ডাকাডাকির পরও কেও এভাবে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে? এতো গুলো মানুষকে টেনশনে রাখতে খুব মজা পাচ্ছিলি তুই তাই না?
রিদ রাগি চোখে কথা গুলো বললেও গভির একটা মায়া কাজ করছিলো তার মুখে। যেনো হারিয়ে ফেলা প্রান আবার ফিরে পেয়েছে তিনি।
গালে হাত দিয়ে হা করে রিদ ও উপস্থিস সবাই দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। রিদের এমন রুম কাপানো থাপ্পরের কোনো প্রতিবাদ করলোনা বাবা মা ভাইয়া। কেওই কিছু বলছে না।
রাত্রি চৌধুরি ও চৈতি মিলে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছিলো। আর তার পরই এতো কিছু ঘটে গেলো।
এবার নিরবতা ভেঙে রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– অনেক হয়েছে এখানেই শেষ করো এসব। অনেক বাড় বেরেছিস তুই আরশি। আর রিদ, আরশি যাই করুক তাকে এভাবে আমাদের সামনে থাপ্পর মারা তোমার উচিৎ হয়নি।
– সরি আঙ্কেল, ওর এমন কাজে প্রচুর রাগ উঠে গিয়েছিলো মাথায়।
– আচ্ছা এখানেই সব শেষ করে খেতে আসো।
রুদ্র চৌধুরির কড়া কথায় খেতে চলে গেলো আরশিও। সবাই ক্ষেপে আছে তার উপর। এখন ত্যাড়ামি করা মানে নিজের বিপদ নিজে টেনে আনা। তাই চুপ চাপ মুখ গোমড়া করে সকলের সাথে খেতে বসলো সে।
বৃষ্টিকে সবার সামনে খাইয়ে দিচ্ছে রাত। রাত এভাবে সবার সামনে কখনোই খাইয়ে দেয়নি তাকে। তাই লজ্জায় না পারছে কারো দিকে তাকাতে না পারছে চুপচাপ খেতে।
– আপনি খান না, আমি নিজে খেতে পারবো তো।
– তোমাকে এতো কথা বলতে বলছি? চুপচাপ খাও আজ কতো দিন পর এভাবে বাসায় খাবার খাচ্ছো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুমি চুপচাপ খেতে থাকো।
এতো কিছুর মাঝেও তাদের এমন কান্ড দেখে হেসে দিলো আরশি ছারা বাকি সবাই। লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি।
সবাই প্রায় ঘুমিয়ে পরেছে। গালে কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় আরশির। দেখে রিদ গভির ভাবে তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আরশি। রিদ চর মারা গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
– খুব ব্যাথা পেয়েছিলি তাই না,?
To be continue………..
~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।??