বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_১২,১৩

0
984

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_১২,১৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ_১২

রাতকে এভাবে দেখে হাত পা যেনো অবস হয়ে আসছে বৃষ্টির। নিজের চোখ কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে আর সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাতও হতভ্বম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। ওদিকে তৃষ্না এখনো জড়িয়ে ধরে আছে রাতকে। যেনো পরিস্থিতির দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। রাতও আজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। মুখে যেনো কিছু বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে।
আর এক মুহুর্তও ওখানে না দাড়িয়ে থেকে মুখ চেপে কান্না করতে করতে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায় বৃষ্টি। রাত তৃষ্নাকে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দেয়। তৃষ্নার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে ছুট দেয় বৃষ্টির পিছন পিছন।
পেছন থেকে অনেকবার ডাকলেও কোনো সারা দেয়না বৃষ্টি। নিচে গিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে যায় বৃষ্টি। রাত দৌড়ে গিয়ে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টিকে বলতে থাকে,
– প্লিজ বৃষ্টি একবার আমার কথাটা শুনো তুমি।।
বৃষ্টি শান্ত ভাবে ড্রাইভারকে বলে উঠে। ভাইয়া চলেন।
গ্লাসটা উঠিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো বৃষ্টি।

দুপুরে উত্তপ্ত রোদে ওখান থেকে কিছুটা দুরে নাদিটর পাড়ে গিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। হাকলকা মরে যাওয়া ঘাসের উপর তার ছায়াটা যেনো সাদা কাগজে কালো পেন্সিল দিয়ে একে দেওয়া ছায়ার মতংো বুঝা যাচ্ছে এমন রোদ। ছাতি ফাটা রোদ যাকে বলে। নদীর পানিও কোমে যাচ্ছে ধিরে ধিরে ধরে। শীত এলে হয়তো আরো কমে যাবে। তার জীবনটাও আজ এই নদির মতো মনে হচ্ছে তার। নদী যেমন বর্ষায় পানিতে ভর্তি থাকে তখন মনে হয় তার সব চাওয়াই আজ পরিপূর্ন। আবার যখন ঋতু পরিবর্তনে শুকিয়ে যায় তখন মনে হয় এই প্রশান্তি টা ছিলো শুধু কিছু মুহুর্তের জন্য। তেমনই আজ বৃষ্টির জীবনটা। এতোদিন ভেবেছিলো বর্ষার সেই সতেজ নদীটার মতো স্বচ্ছল। কিন্তু জানতোনা এভাবে ঋতু পরিবর্তনের আগেই সেই জোয়ার শুকিয়ে ফাটা মাটিতে রুপ নেবে। কপালের ঘাম ঘাম বেয়ে মাটিতে পরছে তার। পেছন থেকে ড্রাইভাল লোকটা বলে উঠে, আপা চলেন, এভাবে ভর দুপুরে খারা রোদে বসে থাকা ঠিক না। কোনো উত্তর দিলোনা বৃষ্টি। আশে পাশে পরিবেশটা আরো অসহ্য লাগছে। সেখান থেকে উঠে গাড়ি করে সোজা বাড়ি পৌছে গেলো সে।

বাসায় প্রবেশ করে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে গেলো বৃষ্টি। শরিরের ঘাম গুলো শুকিয়ে গেছে এতোক্ষনে।
রাত্রি চৌধুরি সবে খাবার শেষ করে উঠেছে। হাত ধুয়ে সোজা চলে গেলো বৃষ্টির রুমে।
তখন বিছানায় বসে বসে কাদছিলো বৃষ্টি। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঝটপট চোখের পানি মুছে নিলো বৃষ্টি। এমন ভাব ধরে বিছানায় বসলো যাতে কিছুই হয়নি। রাত্রি চৌধুরি তার কাছে এসে বসলো।
– এতো তারাতারি চলে এলে, সব ঠিক টাক আছে তো?
– হুম মা।
– পাগলটা কি সারপ্রইজ’ড হয়নি?
বৃষ্টি জোর পূর্বক হাসি দিয়ে আবারও বলে উঠে,
– হুম।
মনে মনে বলতে থাকে। “আমি নিজেই তো আজ অনেক বড় সারপ্রাইজ’ড হয়ে গেছি মা। রাত্রি চৌধুরী আবারও হাসি মুখে বলে উঠে,
– পাগলটার কি রাগ ভেঙেছে?
– হুম।
রাত্রি চৌধুরি হাসির রেখা টেনে বলে উঠে,
– আমি জানতাম আমার ছেলেটা আর যাই হোক আর রাগ করে থাকতে পারবেনা। রাত ছোট বেলা থেকেই এমন। যতই রাগ করুক না কেনো, হালকা একটু ভালোবাসা আর তার পছন্দের কিছু জিনিস পেলেই রাগটা পানি হয়ে যেতো। তুমিও আস্তে আস্তে সব বুঝে যাবে। মিশে যাবে রাতের প্রতিটি শিরার সাথে। এক চাহোনি দেখেই বলে দিতে পারবে সে কি চায়। জানিনা আর কতোদিন এভাবে থাকবো? একটাই ছেলে আমার। এই শেস বয়সেও নাতি-নাতনি নিয়ে খেলা সব দাদা দাদির ই শখ। জানিনা আমাদের সেই শখ টা পুরন হবে কিনা? জানিনা কবে এই ঘরটায় ছোট্ট ছোট্ট পা দৌড়া দৌড়ি করবে? দোয়া করি দিনটা যেনো খুব তারাতারিই আসে। আর তুমি অনেক শুখি হবে মা। শুধু আমার পাগল ছেলেটাকে সামলে রেখো, যদি কখনো আমরা হারিয়ে যাই। তো খেয়েছো?
– হুম, আপনার ছেলের সাথেই খেয়ে নিয়েছি।
বৃষ্টি যদিও খায়নি, তবুও মিথ্যা বলেছে শাশুরিকে। তার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছেনা। আশেপাশে কিছুই ভালো লাগছেনা। চার পাশটায় মনে হয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিথ্যা না বললে, রাত্রি চৌধুরি খাইয়েই ছারতো তাকে। মাঝে মাঝো খুব লোভ হয় বৃষ্টির, এমন একটা ফ্যামিলিকে খুব আপন করে পেতে। আচ্ছা সে কি এই ফ্যামিলির আপন কেও?

সেখানে আর না থেকে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো বৃষ্টি। পুরু গতিতে শাওয়ার অন করে ফ্লোড়ে বসে পরে সে। চোখে বার বার ভেষে উঠছে তৃষ্না আর রাতের দৃশ্যটা। নিশ্চুপ হয়ে কান্না করছে সে। কেনো হচ্ছে তার সাথে এমন? অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়েটা হলো তার। তাও আবার অন্যরকম ভাবে। ছিলোনা কনো প্রস্তুতি। পরিবার একটিবার জানতে চাইলোনা তারও কোনো মনের মানুষ আছে নাকি? কিছুই জিগ্গেস করেনি তাকে। শুধু মান সম্মান বাচাতে তসর সম্মতি নিয়ে বৌ সাজিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে এই বাড়ি। মাত্র কয়েকদিনের কেয়ারে কিচ্ছু ভুলে যায়নি সে। বাশর রাতেও সেই ফিন ফিনে রুমটা কাপিয়ে তোলা থাপ্পরটাও ভুলেনি। গাল পুলে গিয়েছিলো সেদিন। দু,দিন ব্যাথা ছিলো গালে। কিচ্ছু ভুলেনি। হ্যা, ভুলে যেতে চেয়েছে তার সাথে কি হয়েছে। মনে রাখলে তো আর সব আবার আগের মতো ফিরে পাওয়া যাবেনা। এতোদিনের রাতকে দেখে একটু হলেও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো মনে। চেয়েছিলো সব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করবে সে। কিন্তু এভাবেই কি সব শুরু করা যায়? সব সহ্য করে কি পরে থাকা যায়? কেনো তার জিবনটা বার বার ঘুচিয়ে তুলতে চাইলেও এমন এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে? কেনো? কেনো? কেনো? প্রশ্ন।

কান্নার গতিটা এবার আরো বেড়ে গেলো বৃষ্টির। চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাদছে সে। সবে মাত্র ইন্টার শেষ করে, অনার্সে একটি বছর পার হলো। তার মাঝে এতো কিছু ঘটে গেলো তার সাথে। এতো চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কি তার আছে? কম বয়সি মেয়েদের ধর্যটাও এতো শক্ত না। কিছু চেয়ে তা না পেলেও অভিমান ভর করে মনে। আর সেই বয়সেই সে, একটা পরিবারকে ঘুচিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে। নিজের সব ইচ্ছা বিষর্জন দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। তারও কি অন্য আট দশটা মেয়ের মতো স্বামির ভালোবাসা নিয়ে সংসার ঘুচিয়ে তুলতে ইচ্ছে করেনা? তার তা না হয়ে, এই বয়সেই নিজের স্বামির বুকে দেখেছে অন্য একটা মেয়েকে। এর চাইতে আনন্দের মুহুর্ত আর কিই বা হতে পারে? কেনো তার সাথে এমন হচ্ছে বার বার। কেনো? কেনো? কেনো? এই সব কেনোর উতর সে আজ পেতে চায়। এসব ভাবতে ভাবতে শুধু বেড়ে চলছে কান্নার গতি। আর তা চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ।

ঘন্টা খানেক পর দরজায় আওয়াজ পেতেই চেন্জ হয়ে বাইরে আসে বৃষ্টি। রাতকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে সে। রাত পেছন থেকে বৃষ্টির হাতটা ধরে টান দিয়ে মিশিয়ে নেয় তার সাথে।
– ছারুন প্লিজ। অসস্থি লাগছে আমার।
– আমি টার্চ করলে তোমার অসস্থি লাগে?
– লাগে এখন সব লাগে। ছারুন আমায়?
– আগে আমার পুরু কথাটা শুনো তুমি। তার পর তুমি যা ইচ্ছে তাই করো।
– কি শুনাবেন আপনি? যে ওই মেয়েটার সাথে যে আপনার সম্পর্ক আছে তা আমাকে জানাতে মনে নেই তাই তো? আমি আপনার কাছ থেকে কোনো কিছুরই জবাবদিহি চাইছিনা। সো আপনার জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই। আর আমি বা আপনার কে? শুধু নামেই মাত্র সম্পর্কটা। আর আমাদের মাঝেও কি এমন কিছু হয়েছে? যার কারনে আমি কষ্ট পবো? নো ওয়ে। যে আমার ইমোশন বুঝেনা তার জন্য কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই হয়না। আর অনয় মেয়ের সাথেপ্রেম করুন, ফুর্তি করুন, যাই করুন, কিছুই মনে করবো না আমি। দিনের পর দিন অন্য মেয়ের সাথে ফুর্তি করে আমার কাছে ভালো সাজার কোনো প্রয়োজন নেই।
“” ঠাস,,,
বৃষ্টির গালে আচমকাই একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রাত। ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে বৃষ্টি। অন্য একটা মেয়ের জন্য আজ আমার গায়ে হাত তুললো রাত। এটাই বুজি আমার ভাগ্য।
রাগের বসে হটাৎ কি করে ফেললো তা নিয়েও আফসোস শুরু হয়ে গেলো রাতের। বৃষ্টি দৌড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করায়, ফ্যালফ্যাল ভাবে চেয়ে আছে রাত। কিছুক্ষন দাড়িয়ে ৎেকে সেও ঢুকে যায় ওয়াশ রুমে।

রাতের ব্যাগটা এখনো সোফায় পরে আছে। ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা বাইরে বের হয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা হাতে নিতেই রাগটা ঘৃনায় পরিনত হতে থাকে। ব্যাগ থেকে বেছিয়ে এলো মেয়েদের একটা ছোট্ট কাপর। ছি! এতটা নিচে নেমে গেছে রাত?

নিচে গিয়ে টেবিন থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো বৃষ্টি। তবুও যেনো উত্তেজন কমছেনা তার। হাতে থাকা গ্লাসটা জোড়ে ছুড়ে মারে ফ্লোড়ে। কাচ বাঙার শব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে রুদ্র চৌধুরি।
– কি ব্যাপার তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো? রাত কি কিছু করেছে?
– না বাবা। এমনিতেই পানি কাওয়ার সময় গ্লাসটা পরে গেছে।
– তোমার কিছু হয়নি তো?
– না বাবা।
রুদ্র চৌধুরি একটু জোড়ে বলে উঠে,
– এই চৈতি। কোথায় তুই। এখানে এসে কাশ গুলো পরিস্কার করে দে তো।
– না বাবা আমি করে নিচ্ছি সমস্যা নাই।

সন্ধার পর রুদ্র চৌধুরিকে বলে নিজের বাড়ি চলে এলো বৃষ্টি। আর এক মুহুর্তেও ওই বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার? এতো দিন ধরে তৈরি হওয়া স্বপ্নটা আজ থেকে দুই ভাগে বিভক্ত।

To be continue………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__১৩

আজ রাতের চরিত্রে সত্যি হতভাগ বৃষ্টি। রাতের মতো ছেলে যে এতোটা নিচে নেমে যাবে তা ভাবতেও পারেনি সে।
ওই বাড়িতে আর ফিরবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিলো বৃষ্টি। বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় বৃষ্টির মা। বৃষ্টিকে জড়িয়ে একটা হাসি দেয় সে। কাধে হাত রেখে ঘরে নিয়ে যায় তাকে।
– আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোর?
– না মা।
– আর তুই একা কেনো? জামাই আসেনি?
– মা প্লিজ এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগেনা। এক গ্লাস সরবত দাও তো মা। খুব গরম লাগছে।
বৃষ্টির মা একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো। হয়তো বুঝে গেছে মেয়ের এমন কথা ফিরানোর কারণটা। এমজন মায়ের কাছে যে সন্তানের কিছু লুকানোটা কস্টের তার একটা প্রমান হয়তো বৃষ্টির মা ই।
– তুই বস আমি এক্ষুনি আসছি।
সোফায় ধপাস করে বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। সামনে আসা চুল গুলো কানের পেছনে পার করে সোফায় হেলান দিয়ে মুখটা উপর করে আছে বৃষ্টি। এক অদৃশ্য আগুনের শিখায় ভিতরটায় সব পুড়ে যাচ্ছে তার। সব যেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অন্তরে। অন্তর্দহনে শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ।

কিছুক্ষন পর মায়ের ডাকে ঠিক হয়ে বসে বৃষ্টি। সরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে গ্লাসে চুমুক দেয় সে। সামনে থাকা অন্য কোনো খাবারেই হাত দেয়নি সে। সরবত টুকু খেয়ে আর কিছু না বলেই রুমে চলে যায় বৃষ্টি। ব্যাগটা রেখে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে খাটে লম্বা হয়ে সুয়ে থাকে বৃষ্টি।
আজ চোখে একটুও পানি নেই বৃষ্টির। হয়তো আজ চোখের জলও বন্ধী হয়ে গেছে মনে কোনো এক বন্ধি দরজার ঘরে।
এই সন্ধার পর সময়টায় বৃষ্টির সব চেয়ে ফেভারিট একটা খাবার ছিলো চিপ্স ভাজা। এক প্লেট চিপ্স ভেজে পড়তে পড়তেও খেতো সে।
চিপ্স ভেজে বৃষ্টির পাশে এসে বসে তার মা।
– কিরে মা শরির খারাপ?
– না মা, এমনি সুয়ে আছি। কিছু বলবে?
– এই নে সিপ্স খাঁ।
– না মা, ইচ্ছে করছেনা এখন।
– আরে খেয়ে দেখ, এক সময় এটা তোর এই সন্ধায় পছন্দের খাবার ছিলো।
– পছন্দের তো অনেক কিছুই ছিলো মা। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে গেছে। বাবা কখন আসবে মা?
– চলে আসবে একটু পর। আর তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– হুম মা বলো।
– বিয়ের আগের আমার সেই বৃষ্টি আর এখন কার বৃষ্টির মাঝে যেনো আকাশ পাতাল তফাৎ খুজে পাই আমি। সত্যিই তুই সম্পূর্নই পরিবর্তন হয়ে গেছিস মা। তুই ওই বাড়িতে ঠিক আছিস তো? এতো কম বয়সে আমরা তোর মাথায় গোটা একটা সংসারের ভার চাপিয়ে দিয়েছি। আমরা মা বাবা হিসেবে সত্যিই অনেক সার্থপর। সমস্যা হলে বল। আজই তোর বাবার সাথে কথা বলে ফাইনাল সিদ্ধান্তে পৌছাবো আমরা। তোকে আর ওই বাড়িতে যেতে হবে না। আবার আগের মতো জিবন যাপন করতে পারবি তুই। সব আগের মতো হয়ে যাবে আবার।
– চাইলেই কি আবসর আগের জীবনে ফিরে যাওয়া যাবে কি, মা? এই দুই চোখ যা দেখলো, এই হৃদয় যা অনুভব করলো তা তো আর চাইলেও মুছে ফেলতে পারিনা মা। ভুলতে পারবো কি, জীবনে ঘটে যাওয়া মুহুর্তগুলো? সব সৃতির দেয়াল হয়ে বার বার আমার চলতি পথে বাধা হয়ে দাড়াবে।
– এখন তুই কি চাস মা? তুই যা চাইবি তাই করবো আমরা। মানসম্মান বাচাতে তোর সাথে অনেক সার্থপরতার পরিচয় দিয়ে ফেলেছি আমরা। আমরা চাইলেও তোকে আর আগের জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারবোনা। এখন তোর মনের অবস্থাটাও বুঝা মুশকিল। তুই কি সত্যিই ঠিক আছিস রে মা?
এবার মা’কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেদে দিলো বৃষ্টি।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রাতের অনেক গুলো মিসড কল। ফোনটা হাতে নিয়ে অফ করে ফেললো বৃষ্টি। হয়তো এর পর রাত আরো ফোন দিবে। আর রাতের সাথে কথা বলারও ইচ্ছে আমার নেই।
চা য়ের কাপে পুনরায় চুমুক দিতেই টেবিলে থাকা মায়ের ফোনটা বেজে উঠলো। বৃষ্টি সিউর যে এখন নিশ্চই রাতই ফোন দিয়েছে। বাবা একটু আগে নাস্তা শেষ করে চলে গিয়েছে আর সে এখনো টেবিলে বসা। মা ও রান্না ঘরে সব ঘোচাচ্ছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আন নোন নাম্বার। মা কে কয়েকবার ডাক দিয়ে রিসিভ করে নিলো সে।
– হ্যালো কে বলছেন। আর যেই বলে থাকুন, দেখছেন না ফোন ধরছিনা, আর বন্ধও করে রেখেছি। এখন মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কেনো বিরক্ত করছেন? সুনুন আপনার সাথে সংসার করার সব ইচ্ছে মরে গেছে আমার। থাকেন আপনি ওই তৃষ্নাকে নিয়ে। আর আমি আর ওই বাড়িতে যাচ্ছিনা। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, ওকে?
এটুকু বলেই থেমে গেলো বৃষ্টি। অপেক্ষা করতে থাকে রিপ্লাইয়ের জন্য। কিন্তু ওপাস থেকে ভেষে আসলো একটা মেয়েলি কন্ঠ,
– বৃষ্টি…..
– সরি, এক জনের উপর রাগ করে হয়তো ভুল করে আপনাকে ঝেরেছি। কে বলছেন?
– বৃষ্টি আমায় চিনতে পারছিস না?
– চেনা চেনা মনে হচ্ছে বাট চিনতে পারছিনা। পরিচয়টা দিলে খুশি হতাম।
– বৃষ্টি আমি বর্ষা।
এবার থমকে গেলো বৃষ্টির কন্ঠস্বর। বাগ রুদ্ধ হয়ে গেছে সে। সব কিছু এভাবে গোলমাল করে দিয়ে আজ এতোদিন পর হটাৎ পরিবারের কথা মনে হোলো তার।
বৃষ্টির নিরবতা ভাংলো বর্ষার ডাকে।
– কিছু বলছিস না যে? এখনো রাত করে আছিস আমার উপর?
– এমন কেনো করলি আপু? ছোট বেলা থেকে তোর সব কিছু আমিই সামাল দিতাম। তোকে কতো ভালোবাসতাম আর সেই তুই ই আমাকে এই প্রতিদান দিলি?
– বৃষ্টি আমি মামছি আমি ভুল করেছি। আর আমি চাই সেই ভুলটা শুধরে নিতে। আমি জানি রাত তোকে এখনো স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেনি। দেখ চাইলেই সব আবার আগের মতো হওয়া সম্ভব।
– আপু তুই কি আর কিছু বলবি? নাহলে আমি ফোন রাখতাম।
– জানি তুই আমার উপর এখনো রেগে আছিস। বাবা মা কেমন আছে?
– আছে যেমন রেখে গিয়েছিলি তার চেয়ে ভালো আছে।
– আব্বু আম্মু কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছে?
– না, তারা এখন তোকে চুমু দিয়ে বরণ করার জন্য লসল গালিচা বিছিয়ে ফুলের ভান্ডার নিয়ে বসে আছে।
আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো বৃষ্টি। বর্ষার সাথে যতই কথা বলছে ততোই রাগটা চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বৃষ্টির। আরেকটু হলে হয়তো মায়ের ফোনটা এখনি আছড়ে টুকরু টুকরু করে ফেলতো।
,
,
সন্ধায় কলিং বেলের আওয়াজে। দরজা খোলে বৃষ্টির মা। দরজা খুলে রাতকে দেখেই অবাকের চরম সীমানায় সে। রাত যে এই বাড়িতে এলো তা বিশ্বাসই হচ্ছেনা তার। কারণ রাত সবার মুখের উপরই বলে দিয়েছিলো। তার পা কখনো এই ঘরের দরজার সামনে পড়বে না।
কিন্তু আজ রাত এখানে? তাই একটু অবাক সে।
– আসসালামুআলাইকুম মা।
– ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছে বাবা?
– জ্বি মা, আলহাম্দুলিল্লাহ্।
– আসো ভেতরে আসো।
ভেতরে এসে সোফায় গিয়ে বসলো রাত। বৃষ্টি রাতকে দেখে পুরুপুরিই অবাক। রাতের সামনে আসলো না সে নিজের রুমে গিয়ে বসে আছে সে। কিছুক্ষন পর রুমে আসলো রাত। দেখে বৃষ্টি বিছানায় বসে বসে কাদছে। রাত গিয়ে তার কাছে বসতেই ছিটকে দুরে সরে যায় সে। বৃষ্টি রাতের এক হাত ধরে টেনে খাট থেকে নামিয়ে নিচে দাড় করায়।
– শুনো আজ আমি এখানে তোমার কোনো কথাই শুনতে আসিনি। আর না তোমাকে কোনো কথা শুনাতে। আমি জানি, আমি কিছু বলতে চাইলেও তুমি এখন শুনবেনা। তাই তোমাকে কিছু বলবোনা আমি শুধু দেখাবো। কাপর চোপর সব চেন্জ করে নাও, আর চলো আমার সাথে।
– কি ভেবেছেন টা কি আপনি? আমায় খেলার পুতুলের মতো নাচাবেন আর আমি নাচবো? আমি এতোটাও বোকা নই। আমি কোথাও যাচ্ছিনা এখন।
– দেখো বৃষ্টি তোমাকে প্রথমেই বলেছি আমি কিছু শুনতে চাই না আর আমি এতো কথাও পছন্দ করিনা। তুমি শুধু আমার ভালো রুপটাই দেখেছো। আমি চাইনা এখানে আমার খারাপ রুপটা তোমার সামনে প্রকাশ পাক। সো কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও।

নিচে গিয়ে দেখে বৃষ্টির মা আর কাজের মেয়েটা রান্না করছে। চলে যেতে চাইলেও বৃষ্টির বাবা ও মা খাওয়ার আগে যেতে দেয়নি তাদের। রাত আাসার কিছুক্ষন পরই বৃষ্টির বাবা এসেছে।
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বৃষ্টির হাতটা ধরে বেড়িয়ে গেলো রাত। বৃষ্টি আজ আর কিছু বলছেনা। শুধু রোবটের মতো সোজা হয়ে রাতের সাথে হাটছে।

রাত তখন গভির, প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। বৃষ্টিকে হাত ধরে হেচকা টানে কোলে বসিয়ে নেয় রাত। সামনে লেপটপটা ওপেন করে বৃষ্টিকে বলে উঠে,
– চুপচাপ দেখতে থাকো। আমায় সন্দেহ করো তাই না? দেখো ওই দিনের সি,সি,টিভি ফুটেজ।
ভিডিও ওপেন করে সামনে রেখে দিলো রাত। আর এক হাত দিয়ে বৃষ্টির কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে নিলো যাতে উঠে যেতে না পারে। ভিডিও চলছে, দেখে রাত বসে বসে লেপটপে কি যানো করছে। তখনি রুমে কেও একজন ঢুকে পড়লো। হ্যা তৃষ্না। কথার এক ফাকে রাত উঠে তৃষ্নার সামনে গিয়ে কি যেনো বুঝাচ্ছে তাকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, হয়তো রাত খুব রেগে আছে। এর মাঝেই দরজা ঠেলে বৃষ্টি ভিতরে
প্রবেশ করতেই তৃষ্না হুট করে কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরে রাতকে।
তাদের এমন অবস্থা দেখে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো বৃষ্টি। তখনি তৃষ্নাকে ধাক্কা দিয়ে দাত মুখ খিচকে তৃষ্নার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রাত। তারপর সেও ছুটে চলে বৃষ্টির পিছন পিছন। থাপ্পর খেয়ে ফ্লোড়ে ছিটকে পরে তৃষ্না কিছুক্ষন ওভাবে থেকেই হুট করে উঠেই নিজের জামাটা খুলে নেয় সে। তৃষ্না ছোট জামাটা খুলতেই বৃষ্টি ঘুরে রাতের চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে। রাত মুচকি হেসে বলে উঠে,
– আমায় না হয় কিছুক্ষনের জন্য অন্ধ বানিয়ে দিলে। কিন্তু তুমি দেখো আমার দোষটা কোথায় ছিলো। এখন হয়তো তোমার সন্দেহটা দুর হবে। বৃষ্টি আড় চোখে লেপটপের দিকে তাকাতেই দেখে। তৃষ্না ছোট কাপর টা রাতের ব্যাগে ঢুলিয়ে দিলো। তার পর জামা পড়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। এবার রাতের চোখ ছারলো বৃষ্টি। রাত আবার বলে উঠে,
– এবার কি আমার চরিত্র নিয়ে তোমার কোনো সন্দেহ হচ্ছে।
বৃষ্টি একবার লুকুচুরি দৃষ্টিতে রাতের দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে আবার লজ্জা ভঙ্গিতে চোখ নামিয়ে ফেললো।

To be continue……..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here