বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_২,৩

0
1640

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_২,৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__২

ঘরে প্রবেশ করতেই কোমরে বাধা ওড়নাটা খুলে নিলো বৃষ্টি। শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে পাজামায়। দ্রুত পায়ে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো সে। পেছন থেকে ডাক দিলো তার মা। রান্না ঘরে কাজ করছে সে।
– এতোক্ষন কোথায় ছিলি বৃষ্টি।
– ওইতো মা মিমদের বাসায় গিয়েছিলাম কিছু নোটস আনতে। সামনে তো পরিক্ষা তাই।
– ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা রেডি করছি। নাস্তা করে সোজা পড়তে বসবি।
রান্না ঘর থেকেই কথাগুলো বললো বৃষ্টির মা। লক্ষি মেয়ের মতো নিজের রুমে চলে গেলো বৃষ্টি।
ব্যাগ রেখে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সে।লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে। জামা কাপর গুলো ধুয়ে শুকাতে দেয়।
মায়ের ডাকে চলে যায় নাস্তা করতে। ওদিকে রুমে সোফায় বসে আছে বর্ষা। মাথায় চিন্তার ভার। কানে আসছে মায়ের বর্ষা বর্ষা বলে গলা ফাটানো ডাক।
,
,
আজ বর্ষাকে দেখতে আসবে রাতের বাড়ির লোকজন। এর আগে শুধু তাদের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে কথা দিয়ে রাখা হয়েছিলো।

রাতের মা বাবা ও তার ছোট বোন এসেছিলো আজ। কথা বার্তা পাকা করে গেছে তারা। ওদিকে বর্ষাও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা কাউকে।
রাত বার বার ফোন দিয়ে বর্ষার নাম্বার বিজি পেলো। কার সাথে এতো কথা বলছে বর্ষা?

বসে বসে ফোন ঠিপছে বর্ষা। তখনই বৃষ্টি এসে বসলো তার পাশে।
– কিরে কিছু বলবি?
– রাত ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো। বললো, তুমি নাকি ফোন ধরছোনা।
– ওহ্। আর শুন, ছোট মানুষ এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে আসবিনা।
– আচ্ছা আপু, ইদানিং তোমাকে কেমন চিন্তিত মনে হয়, তুমি কি নিয়ে এমন চিন্তিত একটু বলবে?
হটাৎ বর্ষা বৃষ্টির দু,গালে হাত রেখে বলে উঠে,
– আমায় ভালোবাসিস?
– এটা আবার কেমন প্রশ্ন অবশ্যই বাসি।
– আমার জন্য কি করতে পারবি?
– সব।
– যা ঘুমিয়ে পর।
– কিন্তু আপু হটাৎ এমন প্রশ্ন করার কারণ?
– কিছুনা এমনি, যা ঘুমা অনেক রাত হয়েছে।
– তুমি ঠিক আছো তো আপু?
– লাইট টা অফ করে যা শুয়ে পর।
বর্ষার এমন আচরণ বুজে উঠতে পারছেনা বৃষ্টি। লাইট অফ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো সে ও।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। রাত ইদানিং বর্ষার মাঝে কিছুটা পরিবর্তন খুজে পেলেও সব স্বাবাভিকই মনে হয়েছে তার।

আজ গায়ে হলুদ। রাতকে ফোন দিয়ে আসতে বললো বর্ষা। কিছু ইনফর্টেন্ট কথা আছে তার সাথে।
রাতও বর্ষা দাড়িয়ে আছে একে অপরের সামনে।
– রাত তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। যা আমার আরো আগে বলা উচিৎ ছিলো।
– ওফ বর্ষা, আমি তো শুনতেই এসেছি তাই না? আর কি এমন কথা যা বলার জন্য এই সময়ে আমায় ডেকে এনেছো। ওদিকে হয়তো বাসায় আমায় খুজতেই শুরু করে দিয়েছে।
– রাত আমি….
তার আগেই রাতের ফোনটা বেজে উঠলো। রাতে ছোট বোন আর্শির ফোন।
– হ্যালো ভাইয়া, কই তুই? এদিকে সবাই তোকে খুজতেছে।
– এইতো একটু দরকারে বাইরে এসেছি। এক্ষুনি চলে আসছি।
রাত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বলে উঠে,
– ওফ বর্ষা এতো নার্ভাস হলে কি চলে? আমার সামনে নিঃসংকোচে কথা বলার অধিকারটা তোমার এখন আছে।
– আসলে নার্ভাস না আমি কথাটা কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা। আর এটাও বুঝতে পারছিনা কথাটা শুনার পর তোমার রি-একশানটা কেমন হবে?
এবার একটু কপাল কুচকে বর্ষার দিকে তাকায় রাত। তখনি বৃষ্টি সহ কয়েকজন মেয়ে আসে বর্ষার কাছে।
– আরে আপু তুই এখানে? সেই সারা বাড়ি খুজে বেড়াচ্ছি তোকে। আর রাত ভাইয়া, কথা বলার জন্য তো সারা জীবন সময় পাবেন। এই মিলি এক কাজ কর রাত ভাইয়াকেও ধরে নিয়ে আপুর সাথে হলুদ মাখিয়ে দিই, কি বলিস?
পরিস্থিতি খারাপ দেখে এক দৌড়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় চলে এলো রাত। ওদিকে বৃষ্টির হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।

বিয়ের দিন রাতে,
একটা বিয়ের শাড়ি ও কিছু গহনা নিয়ে রুমে আসলো বর্ষার মা। বারান্দায় ফোন কানে নিয়ে দাড়িয়ে আছে বর্ষা। মাকে দেখেই ফোন কেটে একটা হাসির রেখা টানলো।
– এখানে কি করছিস? রুমে আয়, পার্লারের লোক এসে গেছে। আর পাত্র পক্ষও চলে আসবে একটু পর।

বাইরে কাজ ও মেহমানদের আপ্যায়নে দৌড়া দৌড়ি করছে বৃষ্টি। বড়ো বোনের বিয়েতে তারও কিছু দায়িত্ব আছে। তাছারা বরের জুতা চুরির প্লেন তো আছেই।
বর্ষাকে সাজিয়ে রেডি করে ফেলেছে। ওদিকে পাত্র পক্ষও চলে এসেছে। সবাইকে রুম তেকে বের করে এদিক ওদিক পায়চারি করছে বর্ষা। বার বার তিহানের নাম্বারে ফোন দিয়ে চলছে সে।

বিয়ের সব রেডি। হটাৎ ভেতর থেকে আওয়াজ এলো বর্ষাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সারা ঘর খুজেও বর্ষার কোনো দেখা পেলোনা কেও। সবাই মিলে খুজেও কোনো হদিস পেলোনা বর্ষার। পেয়েছে শুধু টেবিলে একটি চিরেকুট।
হতাশা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার বাবা। সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।বিয়ের দিন কনে পালিয়ে যাওয়া তাও আবার লাব এ্যারেজ মেরেজে। পাগড়িটা হাতে নিয়ে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে রাতও।
বৃষ্টি বার বার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বর্ষার ফোন বন্ধ।
রাতের বাবা রুদ্র ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। ঠন্ডা মাথায় বৃষ্টির বাবাকে বলে উঠে,
– আমাদের ডেকে এনে এভাবে অপমান না করলেও পারনে। আপনার জদি ফোনে আপনাদের মতামত জানিয়ে দিতেন তাহলে আমরা কখনোই আসতাম না এখানে।
বর্ষার বাবা হাত দুটি জোড় করে বলে উঠে,
– আজ আমি নিজে আপনাদের সামনে লজ্জিত। নিজের মেয়ে যে এমন একটা কাজ করবে তা ভাবতেি পারিনি আমি।
পাশ থেকে রাতের মা বলে উঠে,
– এমন একটা মেয়েকে নিজের পূত্র বধু বানাবো ভেবেছিলাম ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে আমার। ছি ছি।
হটাৎ রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– দেখুন এতো লাকজনের সামনে এখন আমাদের দুই ফ্যামিলিরই মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পরছে। তাই আপনার জদি কোনো আপত্বি না থাকে, তাহলে আমটা আপনার অপর মেয়েকেই বৌ হিসেবে নিয়ে যেতে চাই।
কথাটা শুনা মাত্রই যেনো আকাশ থেকে পরলো বৃষ্টি। মাথাটাও ধরে গিয়েছে সাথে সাথে। বোনের বিয়েতে আজ কতো আনন্দ কতো মজা বরকে নিয়ে কতো কিছুই প্লেন করে রেখিছিলো বৃষ্টি। আর শেষে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি বৃষ্টি। আপু তো এই ব্যাপারে আমাকেও কিছু বলেনি।আর কিছু ভাবতে পারছেনা বৃষ্টি, আশে পাশে পরিস্থির দিকে তাকিয়ে থাকা ছারা আর এই মুহুর্তে কিছুই মাথায় আসছেনা তার।
পাশ থেকে রাতের মা বলে উঠে,
– অসম্ভব, রাত এটা কিছুতেি মেনে নিবেনা। কারণ লাইফটা রাতের, আমরা সিদ্ধান্তের উপরে রাতের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারিনা।
তখনি পাশ থেকে রাত বলে উঠে,
– আমি রাজি।
এটা বলেই সেখান থেকে সরে গেলো রাত। চোখ দুটি লাল হয়ে আছে, রাগে কাপছে ঠোট জোড়া। বুঝাই যাচ্ছে এই সিদ্ধান্তটা সে মন থেকে নয়, রাগের ক্ষোপ থেকেই নিয়েছে। মান সম্মানের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যায় বৃষ্টির বাবাও।
বৃষ্টির কাছে গিয়ে বলে উঠে,
– মারে, আমি জানি তোর উপর অন্যায় হচ্ছে এটা। তবুও এটা একটা মান সম্মানের প্রশ্ন। আজ এতো মানুষের সামনে আমার সম্মানটা নিচু করিস না মা। বাবা হয়ে তোর কাছে অনুরুধ করছি আজ। দেখিস অনেক সুখি হবি তুই জীবনে। প্লিজ মা আজ কথাটা পিরিয়ে দিসনা তুই।
বৃষ্টি বাবার হাত দুটি ধরে বলে উঠে,
– আমার কারণে জদি তোমরা সম্মার ফিরে পাও তাহলে আমার কিছু বলার নেই বাবা তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো।

কবুল বলার পর মুহুর্তে নিজেকে একটা নতুন মানুষ হিসেবে আবিস্কার করলো বৃষ্টি। আজ থেকে নতুন পরিচয় তার। আজ থেকে নিজের সব দায় দায়িত্ব একটা নতুন মানুষের। রাতের মুখেও কোনো কোনো হাসির আভাস নেই। একটু আগে শুধু কবুল বলার আগ মুহুর্তে একটা তাচ্ছলের হাসি দিয়েছিলো সে।
বৃষ্টি ভালোই বুঝতে পারছে এই হাসিতে তার সুখ নয়, জীবন তছনছ হওয়ার হাসি এটা।

To be continue…….

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__৩

বাসর ঘরে বসে আছে বৃষ্টি। পুরু রুমটায় ফিনফিনে নিরবতা বিরাজ করছে। বাইরে লোকজনের কোলাহল কানে আসছে তার। বধু সেজে সেই তিন চার ঘন্টা ধরে বসে আছে এই ঘরে। রাতের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনটা? যেনো প্রকৃতির মতো একটা ঝড় এসে এলো মেলো করে দিয়েছে তাকেও। গতকাল এই সমটায়ও তার চিন্তা ধারা ছিলো সম্পুর্ন ভিন্ন। আর আজ তার নিয়তি তাকে কোথায় এনে দার করালো। গতকাল পর্যন্ত যাকে ভাইয়া বলে সম্মোধন করেছে আজ কিনা সেই লোকটারই স্ত্রী সে।
ভয় যেনো পিছু ছারছেনা তার। এভাবে বিয়ে হলো তাদের। আরেকজনের জন্য সাজানো ঘরটাতে সে আজ নিজে বৌ সেজে বসে আছে। কিন্তু এই সাজে নেই কোনো মুগ্ধতার আভাস ও। কারণ এটা যে তার জন্য সাজানো হয়নি।
এসির মাঝেও ঘামাচ্ছে বৃষ্টিকে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। রাত কেনো আসছেনা। আসবে কিনা তাও সন্দেহ। ছয় বছরের রিলেশন থাকার শর্তেও বর্ষা যে ধোকাটা দিলো তাকে। তাতে সে ঠিকটাক আচরণ করবেনা এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেনো বর্ষা এমন করলো? ভালোবাসার থেকে কি অর্থটাই বড় হয়ে গেলো তার কাছে। সম্মান বাচাতে রাতের হাতে তুলেদিয়েছে তাকে পরিবারের সবাই। বাবা কতো সুন্দরেই বলে দিয়েছে, অনেক সুখি হবি তুই। কিন্তু ভালোবাসা যেখানে থাকবেনা সেখানে আদৌ সুখ মিলবে?

দরজা নারানোর আওয়াজ পেয়ে একটু নরে চরে বসলো বৃষ্টি। মুহুর্তেই যেনো এক ভিন্ন অনুভুতি হানা দিলো মনে। পিট পিট করছে বুকের ভেতরটা।
রুমে প্রবেশ করলো রাত। বড় ঘোমটা টেনে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। এক পা এক পা করে বিছানার পাশে এসে দাড়ালো রাত। কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। চক্ষু জোড়া লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে একটু আগে কেদেছে সে, প্রচুর কেদেছে। আঘাতের কান্না নয় এটি, প্রিয়জন হারানোর কান্না এটা। হৃদয় ভাঙার আর্তনাৎ।
কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থেকে বারান্দায় চলে গেলো রাত। সিগারেটের পেকেট টা খুলে একটা সিগারেট মুখে তুলে নেয় সে। এক দলা ধোয়ার সাথে একনাগারে কাশির শব্দ কানে এলো বৃষ্টির। এক নিয়মে বসে আছে সে। বর্ষা কতো কষ্টই না দিয়েছে তাকে। একের পর এক সিগারেটে কাশির শব্দটা ভারি হয়ে এলো রাতের। আর চোখে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। তার স্বপ্নের রাতটা কি এমনই লেখা ছিলো তার ভাগ্যে? এই রাত নিয়ে কতো স্বপ্নই বুনা ছিলো মনে। আর আজ? একেই বলে ভাগ্যের লিখন।

একের পর এক সব সিগারেট শেষ করে বারান্দা থেকে ঢুলতে ঢুলতে রুমে প্রবেশ করলো রাত। আগে কখনো সিগারেট মুখে তোলেনি সে। আজ হটাৎ হওয়ায় মাথাটা ধরে গিয়েছে তার।
রুমে এসেই এক ঝাটকায় হাতটা ধরে খাট থেকে নামিয়ে নিলো বৃষ্টিকে। চক্ষু জোড়া লাল করে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। মাথা নিচু করে রাতের সামনে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি।
– তোর মতো মেয়ের কোনো যোগ্যতাই নেই এই বিছানায় বসার। ওরে বাবা অনেক সেজেছিসও দেখছি। তোকে আমি বিয়ে করে এনেছি তার অর্থ এই নয় যে, আমি সব ভুলে তোর সাথে ঢেং ঢেং করে সংসার করা শুরু করবো। নেভার, তোকে আমি বিয়ে করেছি মাত্র ওই ফ্যামিলিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। বাসর করতে আসছে। বাসর।
দত খটমট করতে করতে সাজানো রুমের সব ফুল ছিরে ফ্লোড়ে ফেলে দিতে থাকে রাত। রুমে থাকা সকল কাঁচের জিনিস গুলো একে একে ফ্লোড়ে ছুরে ফেলছে রাত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁচের টুকরো ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে সারা রুমে। বৃষ্টির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
– এখনো দাড়িয়ে আছিস কেনো। গেট আউট ফ্রম মাই রুম।
রাতের ধমকে কিছুটা কেপে উঠে বৃষ্টি। কাপা গলায় বলে উঠে,
– এতো রাতে কোথায় যাবো? এখানে কাওকেই তো চিনিনা আমি।
ঠাস করে একটা চর পরে যায় বৃষ্টির গালে।
– যেখানে যাবি যা, প্রয়োজনে জাহান্নামের চৌরাস্তায় যা। তবুও আমার সামনে থেকে সর। তোকে যতই দেখছি ততোই মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। কাওকে চিনিস না তো আমাকে ভালো করে চিনিস যে ঢেং ঢেং করে বাসর করতে চলে এলি? আর সেইদিন তোর উপর দয়া দেখিয়েছিলাম তাই বলে আমি অতটাও মোহান নই।
গালে হাত দিয়ে এখনো নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। শুধু এবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে পানি। বুকের ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে রাতের প্রতিটা কথায়।
রাত এবার ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– ওহ্, এখন তো তুই আমার বৌ। বের করে দিলেও লোকে খারাপ ভাববে। আজ থেকে ওই সোফাটাই তোর বিছানা। এই খাটের ত্রি-সীমানায়ও আসার চেস্টা করবিনা। মনে রাখবি তুই আমার বৌ শুধু মাত্র নামে।
ক্লান্তি নিয়ে এলো মেলো বিছানায় সুয়ে পরে রাত। বৃষ্টি এখনো ঠায় দাড়িয়ে অশ্রু বিশর্জন দিচ্ছে ওখানে। তখনি চোখ পরলো, একটি সোনালি রঙের ছোট মাছ পানির জন্য মেঝেতে ছটপট করছে। তার থাকার পাত্রটাও যে একটু আগে মেঝেতে ফেলে টুকরু টুকরু করে ফেলেছে রাত। গাল থেকে হাত সরিয়ে মাছটাকে তুলে নিলো বৃষ্টি। মাছটাকে বাচানোর জন্য আশেপাশে তাকায় সে। মনে হচ্ছে আজ মাছটাও তার মতো অসহায়।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো বৃষ্টি। শেষ রাতের দিকে হালকা চোখ লেগে এসেছিলো তার। সকালে আবার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় শরিরটা ভার হয়ে ছিলো। তাই ফ্রেশ হয়ে একটা নীল রঙের শাড়ি পরে সে। রাত এখনো বেগোরে ঘুমাচ্ছে। পর্দা সরিয়ে দিতেই সকালের নব সূর্যের মিষ্টি কিরণে কিছুটা মুখে এসে পরছে তার। স্নিদ্ধ চুলে ও ফর্সা মুখ সোন্দর্য যেনো আরো বেড়ে উঠেছে রাতের মধ্যে। বারান্দায় ছোট চেয়ারটায় ফ্যাকাসে মুখ করে বসে রইলো বৃষ্টি। তাকিয়ে আছে বাইরে রাঙা প্রভাতের কিরণে মেতে উঠা প্রকৃতির দিকে।

ঘুম ভাঙায় ফ্রেশ হয়ে ছাদে গিয়ে দোলনাটায় বসে রইলো রাতের ছোট বোন আরশি। মা আর চৈতি মিলে নিচে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করছে। আরশি দোলনায় বসে গুন গুন করে গান গাইছে তখনি কেও একজন এসে একটা চটি মারে তার মাথায়। রাগে দাত মুখ খিচকে পেছন তাকিয়ে দেখে রিদ ভাইয়া একটা দাত কেলানো হাসি দিয়ে তার পাশে এসে বসলো। রিদ তার মামাতো ভাই। লোকটা চরম বিরক্তিকর। তার থেকে চার বছরের বড়। রাত ও রিদ সম বয়সি। দুজনের মাঝে মামাতো ফুফাতো ভাইয়ের চেয়ে বন্ধুত্বটাই গভির। এই রিদকে দেখলেই রাগটা চরম পর্যায়ে চলে যায় আরশির। কারন তার পেছনে একবার পরলে নাকানি চুবানি খাইয়ে তারপর ছারবে।
রিদ একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? খুব সুন্দর লাগছে বুঝি আমায়? লাগারই কথা শশুর মশাইয়ের একমাত্র জামাই বলে কথা। বাই দ্যা ওয়ে, এভাবে তাকিয়ে থাকিসনা এই অবলা ছেলেটার প্রেমে পরে যাবি।
আরশি একটু গাল মোচরে বলে উঠে,
– এ্যা,, এভাবে তাকিয়ে তাকিস না প্রেমে পরে যাবি!! তোমার মতো সাইকোর প্রেমে পরবো আমি? হুহ্।
– কি আমি সাইকো? তুই আমার ফুফা ফুফির এক মাত্র জামাইকে সাইকো বলতে পারলি?
আরশি এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো রিদের দিকে।
রিদ আবারও বলে উঠে,
– ওসব বাদ দে, শুনলাম ইদানিং কলেজের বেশ কিছু ছেলের সাথে ভাব জমিয়েছিস। কারা ওরা?
– তোমাকে বলবো কেনো? তুমি কে? আর ওরা হলো আমার নতুন ফ্রেন্ড।
– দেখিস উল্টোপাল্টা কিছু করলে আমার শশুরেরই কপাল পুরবে।
– তুমি তো আন ম্যারিড তাহলে তোমার শশুর আসলো কোথা থেকে? আর আমি কিছু করলে তোমার শশুরের কপাল পুরতে যাবে কেনো?
– কারণ তার মেয়ে, আমার মতো হেন্ডসাম ছেলে রেখে আরেকজনের দিকে চোখ দেওয়া, তাহলে আমি কি চেয়ে থাকবো। তাই আমার শশুরের কপালই তো পুরবে।
– তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি।
রিদ এবার আরশির নাক টেনে দিয়ে বললো,
– বুঝবি বুঝবি সময় হলে সবই বুঝবি। আমার এতো চালাক শশুরের মেয়ে হয়ে তুই কিভাবে এতো মাথামোটা হলি সেটাই বুঝতে পারিনা আমি।
বলেই চায়ের কাপটা নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো রিদ।
চোখ দু,টি বড় বড় করে রিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি চোখ দুটি বেড়িয়ে আসবে।
“তার মানে ওনি এতোক্ষন আমার বাবাকেই ইনডিরেক্টলি শশুর শশুর বলে সম্মোধন করে গেলেন?
,
,
আরশি বেশ কিছুক্ষন ধরে ডাকছে রুমের বাইরে থেকে। বৃষ্টি বারান্দা থেকে এলো রুমে। রাত এখনো ঘুমের দেশে। কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে চেয়ে আছে বৃষ্টি। এই মানুষটাকে কতোইনা কষ্ট দিয়েছে আপু। এই মানুষটা যে তার স্বামী এটা এখনো অবিশ্বাস্য তার কাছে। তবুও হাজার হোক এখন এটা আমার সদ্য বিয়ে করা স্বামী। আচ্ছা আমি চাইলে কি তাকে আগের সাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারিনা? আর আমি তার জীবন ঘুচিয়ে দিবোই বা কোন অধিকারে? কারন সে তো গত কাল বলেই দিয়েছে, তার স্ত্রী হওয়ার জোগ্যতা আমার নেই। নামেই মাত্র আমি তার স্ত্রী, অন্যথায় নয়।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here