বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_৪,৫

0
1304

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_৪,৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__৪

বৃষ্টি কিছুক্ষন রাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে দাড়িয়ে আছে। আজ কেনো জানি বড্ড মায়া লাগছে মানুষটার জন্য তার। একটা দির্ঘশ্বাস পেলে হাটা ধরে বৃষ্টি। দরজা খুলতেই আরশি দাত কেলিয়ে বলে উঠে,
– কি হলো ভাবি? তোমার আশিক তো দেখি বেঘোরে ঘুমাচ্ছা তাহলে দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেনো তোমার?
আরশির কথায় কিছুটা লজ্জার ছাপ ভেষে উঠে বৃষ্টির মুখে।

বৃষ্টিকে নিয়ে নিচে চলে যায় আরশি। দেখে অনেক মেহমান বসে আছে ওখানে। বৃষ্টিকে দেখে সবাি কেমন ভ্র কুচকে তাকায় বৃষ্টির দিকে। যেনো বৃষ্টি একটা আসামি আর বাকিরা তার বিচার করতে বসেছে। পাশ থেকে এক মহিলা রাতের মাকে বলে উঠে,
– এটাই তাহলে বৌ? দেখতে শুনতে তো ভালোই আছে দেখছি।
পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠে,
– আরে ওই বোনটার শরির স্বাস্থ আরো ভালো ছিলো। কি মায়াবি মেয়ে ছিলো সে। কিন্তু কে জানতো এতো ভালো মেয়েটা এমন কাজ করে বসবে?
আগের মহিলাটা আবার বলে উঠে,
– আজকালকার মেয়েদের বুঝা বড় দায়। কখন মনে কি ফন্দি আটে তা বুঝাই মুশকিল। বড় বোনটা তো বিয়ের দিনই বেটা মানুষ নিয়ে ভাগছে। যার বড় বোনের চরিত্র এমন সেখানে ছোট বোনটাও আর কেমনই হবে? এখন এটা টিকলেই হলো।
ওদের কথা শুনে চোখের কোনে পানি জমে গেলো বৃষ্টির। তবুও মুখ বুজে সব সহ্য করছে মাথা নিচু করে।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– আচ্চা চাচি, আপনারা এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো, আপনার ছেলের গলায় ধরে আমরা কাওকে ঝুলিয়ে দিয়েছি? তাছারা ভাইয়ার সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে। সে জদি ভালো তাকে তাহলে আপনাদের এতো জ্বলে কেনো? নাকি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেনি দেখে তাই এমন জ্বলছে?
মহিলাটা চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে,
– দেখলেন আজকাল মেয়েরা কেমন চট চট কথার উত্তর দিয়ে দেয়। মুরুব্বিরা কথা বলার সময় কথা মাটিতে পরতে পারেনা তার আগেই তুলে নেয় মুখে।
পাশের মহিলাটা একটু নরে চরে বসে,
– আচ্ছা মা তোমার নাম কি?
বৃষ্টি কাপা গলায় ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
– বৃষ্টি।
– বাহ্, দুই বোনের নামে তো বেস ভালোই মিল আছে। তো তোমার বোনটা এভাবে বিয়ের দিন ভেগে গেলো কেনো? ছেলেটার সাথে কি আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো তার?
সবার এমন আহম্বকি প্রশ্নের উত্তর খুজে পাচ্ছেনা বৃষ্টি। তাই চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে সে। তাদের কোনো কথাই স্বস্থিকর নয়। প্রতিটি কথায় যেনো অসস্থি তৈরি করছে মনে। যেখানে একটা মেয়ের বিয়ের পর কতো মানুষ আসবে তাকে দেখার জন্য, সকলে হাসিখুশি ভাবে সময় কাটাবে তার সাথে, নতুন বৌ নিয়ে থাকবে সকলের মনে খুশির উত্তেজনা, আর সেখানে তাকে আজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার এবং বোনের চরিত্রের ইন্টারবিউ দিতে হচ্ছে। বিয়েটা এভাবে হওয়া, বাসর রাতে স্বামির কাছে অপমানিত হয়ে চর খাওয়ার দৃশ্য। সত্যিই তার ভাগ্যটা অতুলনিয় ভাগ্য হিসেবে চিহ্নিত।

নিয়ম অনুসারে আজ মেয়ে পক্ষরা এই বাড়িতে আসার কথা। কিন্তু সেটাও কেন্সেল করে দিয়েছে রাত। ওই বাড়িথেকে কেও আসেনি আজ রুমের এক কোনে বসে আছে বৃষ্টি। শুধু চোখের কোনে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে সে। রাত সেই সকালে বেড়িয়েছে এখনো বাড়ি ফিরেনি।
আরশি রুমে আসতেই তরিঘরি করে চোখের পানি মুছে গাল টেনে একটা হাসি দিলো বৃষ্টি। তবুও কান্নার ভাবটা আরশির চোখ এড়ালোনা।
বৃষ্টির চোখের জল মুছে দিয়ে বলে উঠে,
– কেদোনা ভাবি। এক সময় দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া আসলে এমন ছিলোনা। বাবা মায়ের মুখের উপর সে কোনোদিনও কথা বলেনি। এই একটা কষ্টই পালটে দিয়েছে তার জীবনটা। এতো বছরের ভালোবাসা ভুলতে তো একটু সময় লাগবে এটাই তো সাভাবিক। কিছু মেয়েদের জীবনটাই এমন। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাও একটা বড় সংগ্রাম। কেদোনা ভাবি, এই সুন্দর মুখে কান্নাটা একধম বেমানান। একটু হাসো আয়নায় গিয়ে দেখো নিজেকে কতো সুন্দর লাগবে ওই হাসিতে।
হটাৎই আরশিকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেদে দিলো বৃষ্টি।

এভাবে কেটে গেলো আরো দুদিন। রাতে সবাই মিলে খাচ্ছে টেবিলে। আরশি বৃষ্টিকে বসিয়ে দিলো রাতের পাশে। চুপচাপ বসে প্লেট টেনে নিলো রাত।
রাতের মা ইশারা করে রাতের প্লেটে খাবার তুলে দিতে বললো বৃষ্টিকে। মায়ের কথা মত কাপা হাতে রাতের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে বৃষ্টি। হাতটা কাপছে তার।
হটাৎই রাত উঠে দাড়ায় খাবার ছেরে।
– কিরে আবার কি হলো? উঠে গেলি কেনো?
– ইচ্ছে হলো তাই।
হন হন করে হেটে রুমে চলে গেলো রাত। মুখটা গোমরা করে মাথা নিচু করে রইলো বৃষ্টি।

সকলে খেয়ে নেয় বসে। বৃষ্টিকে দিয়ে রাতের খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দেয় তার বাবা। ভয়ে ভয়ে খাবার গুলো রাতের পাশে রেখে বলে উঠে,
– দয়া করে আমি দোষ করলে খাবারের উপর রাগ দেখাবেন না। শরির খারাপ করবে। খাবারটা খেয়ে নিন।
রাত সুয়ে থাকা অবস্তায় বলে উঠে,
– নিয়ে যাও এগুলো।
বৃষ্টি কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা সে।
রাত হুট করে উঠে খাবার সহ প্লেট টা ছুড়ে মারলো প্লোড়ে। এক পাশে দড়িয়ে একটু কেপে উঠে বৃষ্টি। তার শরির দিয়ে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।
– খিদে নেই বললাম, কথা কানে যায় না? আর একধম আমার সামনে ভালো সাজতে আসবিনা। যতটুকু আছিস ততোটুকুতেই পরে থাক। এর চাইতে বেশি আগানোর চেষ্টা করবিনা।
বলেই হন হন করে ছাদে গিয়ে সিগারেট ধরালো রাত। সেখানে দাড়িয়ে থেকে একটা বড় নিশ্বাস নিলো বৃষ্টি।

রাত তখন গভির, হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলো বৃষ্টির। কানে এলো নিঃশব্দে কিছু কান্নার আওয়াজ। সোফা থেকে নেমে ধিরে পায়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো বৃষ্টি। দেখে চাঁদের আলোয় বেলকনিতে বসে বর্ষার ছবি হাতে নিয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে রাত। চখের জল গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে।
নিরবে রাতের পাশে গিয়ে বসলো বৃষ্টি। একবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো রাত। আজ আর বৃষ্টিকে কিছু বলছেনা রাত। ইচ্ছে করছে সব কষ্ট আজ বৃষ্টির সাথে ভাগাভাগি করে নিতে। বৃষ্টিও চুপচাপ বসে তার কাধে একটি হাত রাখলো। সে কখনো ছেলেদের এভাবে কাদতে দেখেনি। দেকেছে মায়ের মার খেয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা কান্না করছে। কিন্তু বড় হওয়ার পর এভাবে কোনো ছেলেকে কাদতে দেখেনি সে। বর্ষা কি আঘাতটাই না দিয়েছে তাকে।
,
,
কেটে গেলো আরো দু,দিন। আজ বৃষ্টিকে নিতে এসেছে তার বাবা। বিয়ের পর স্বামী সহ বাপের বাড়ি দু,একদিন থেকে আসার প্রথাটা আমাদের সমাজে প্রচলিত। কিন্তু রাত ওই বাড়িতে যেতে নারাজ। যেতে হলে বৃষ্টি একাই যাবে। অনেক জোরাজুরি করেও রাতকে নিতে পারেনি কেও। রাতের বাবা বৃষ্টির বাবাকে বুঝিয়ে বললো ব্যপারটা। দরকার হলে রাত ওই বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে যাবে বৃষ্টিকে।
অবশেষে রাজি হয়ে যায় বৃষ্টির বাবাও। বৃষ্টিকে নিয়ে চলে যায় সে।
,
,
রাত ৮ টা একটা পাতলা কাঁতা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে আরশি। শরির টা ভালো নেই আজ। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর উঠেছে। সন্ধায় ডাক্তার এসে ঔষধ লিকে দিয়ে গেছে।
ঘুমাচ্ছে সে, হটাৎ খেয়াল করলো তার দিকে কেও একজন ঝুকে মাথায় পট্টি দিচ্ছে। চোখ খুলতেই দেখে রিদ ভাইয়া। মা বাবা কেওই পাশে নেই। রিদকে দেখে এক লাপে বিছানা থেকে উঠে বসে সে। রিদ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
– আরে আরে কি করছিস? তোর তো জ্বর, শুয়ে থাক আমি মাথায় জ্বল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে।
– আপনার সাহস তো দেখছি কম না। আমার বেড রুমে চলে এলেন? তাও আবার রাতে?
আরশি কথাটা যেনো ফু দিয়ে ফেলে দিলো রাত। শান্ত গলায় বলে উঠে,
– কিছু খাবি?
– নাহ্।
– তুই যে ঘুমের মাঝেও বকিস তা তো আগে জানা ছিলোনা। এই কার সাথে এমন বকিস রে তুই?

চলবে

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__৫

রিদের কথায় একটু অসহ্যকর ভাব নিয়ে চোখ মুখ কুচকে তার দিকে তাকায় আরশি।
– আমি মোটেও ঘুমের মাঝে বকিনা রিদ ভাই, তুমি সব সময় আমায় নিয়ে ফাজলামি করো।
এবার রিদ একটু নরে চরে বসে,
– ফাজলামি করবো কেনো? যা সত্য তাই তো বলছি, কার সাথে কথা বলিসরে এতো? আমায় নিয়ে স্বপ্ন টপ্ন দেখিস নাকি?
বলেই একটা দাত কেলানো হাসি দেয় রিদ। এই জ্বরের ঘোরেও নিজের চুল নিজে ছিরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আরশির। চোখ মুখ খিচে বলে উঠে,
– তোমাকে নিয়ে দেখা ওটা স্বপ্ন হতে পারেনা। ওটা হবে দুঃস্বপ্ন।
– তার মানে তুই স্বীকার করে নিলি যে তুই আমায় নিয়ে দুঃস্বপ্ন হলেও দেখিস। তাহলে চিন্তা করে দেখ, তুই যাই বলিস, তোর স্বপ্নে কিন্তু আমার মতো সু-পুরুষই থাকে।
নিজের বোকামিতে আরশি আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– তুমি যাও তো রিদ ভাই, আমার মাথা ধরে যাচ্ছে। আর নিজেকে যে সব সময় সু-পুরুষ দাবি করো? তাহলে একটা মেয়ের বেড রুমে অনুমতি ছারা ঢুকে পরাটা কোন সু-পুরুষের কাজ একটু বলবে?
– কোনো সু-পুরুষেরই নিজের স্ত্রীর রুমে আসতে অনুমতি নেয় না। তেমন আমিও। আর হবু স্বামীর সাথে এমন বিহেব করা কি আদৌ ঠিক?
রিদের কথায় চোক্ষুজোড়া বড় বড় করে তাকায় আরশি। এই বড় বড় চক্ষু জোড়া রিদের মুখের পানে স্থির হয়ে আছে।
– বস আমি খাবার নিয়ে আসছি। খাওয়া শেষ করে ঠিকঠাক ঔষধ খেয়ে নিবি, দেখবি জ্বর চলে গেছে। তুই একটু বস আমি যাবো আর আসবো।
এটা বলেই আরশির ডান গালে একটা চুমু একে দিয়ে পানির পাত্রটা আর পট্টি দেওয়া কাপরটা নিয়ে হন হন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রিদ। আরশি যনো এবার অবাকের সপ্তম আকাশে অবস্থান করছে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে ছিলো রিদের চলে যাওয়ার দিকে। কি অসভ্য ছেলেরে বাবা।
,
,
খাওয়ার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সবাই। রুদ্র চৌধুরি রাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
– আগামি কাল বৃষ্টিকে গিয়ে নিয়ে আসবি ওই বাড়ি থেকে। বাড়ির নতুন বৌ বাবার বাড়ি গেছে আর তুই একটি বার খোজ খবরও নিলিনা। এটা কেমন ধরনের ব্যাবহার রাত? আগামি কাল গিয়ে নিয়ে আসবি বৃষ্টিকে।
– সরি বাবা, তুমি ভালো করেই জানো ওই বাড়িতে আমি যেতে ইচ্ছুক নই। আর এসব উস্ক ঝামেলায় আমাকে না জড়ালেই খুশি হবো।
– ঝামেলা? যেটাকে তুই ঝামেলা মনে করছিস ওটা তোর দায়িত্বের মধ্যে পরে। আর তাছারা বৃষ্টি এখন তোর বিয়ে করা স্ত্রী। আর তার সব দায় দায়িত্ব এখন তোরই। কথা না বাড়িয়ে যা বলছি তাই করবি।
খাবার টেবিল থেকে উঠে হন হন করে রুমে চলে গেলো রাত। ছেলের এমন আচরণে একটা হতাশার নিশ্বাস ছারলো রুদ্র চৌধুরি।
,
,
মেয়েদের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। এই অদ্ভুত জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় তাদের। যেই বাড়িতে তার জম্ম, যেই বাড়িটা ১৮-২০ বছর ধরে নিজের বাড়ি বলে মনে করতে, সেই বাড়িতেই তাদের এক সময় অতিথি হয়ে আসতে হয়।
বৃষ্টি বাবার বাড়ি আশার আজ কয়েকদিন হয়ে গেলো, তবুও একটিবার ফোন দিলোনা রাত। শাশুরির কাছ থেকেই রাতের খোজ খবর নিতে হয় তার। এমনকি নিতেও আসলোনা তাকে। এতে একটুও অবাক হলোনা বৃষ্টি। কারণ এমনটাই হওয়ার কথা। নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হচ্ছে তার। এতো অবহেলার পরও ওই বাড়িতে পরে আছে, বেড়াতে আসছে আবার ফিরেও যাচ্ছে। এতে যেনো একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই রাতের।
আরো দু,একদিন থাকতে বললেও থাকলোনা বৃষ্টি। বৃষ্টিকে দিয়ে আসছে তার বাবা। আজ কিছু বলছেনা সে। হয়তো বুঝতেই পারছে তার মেয়ে ওই বাড়িতে কতোটা সুখে আছে। জানালা দিয়ে বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো তার বাবা।

ঘরে প্রবেশ করতেই আরশি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিকে।
– কেমন আছো ভাবি?
– ভালো, তুমি।
– খারাপ থাকলেও এখন তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেলাম।
আরশির কথায় হেসে দিলো বৃষ্টি।
রুদ্র চৌধুরিকে সালাম করে উঠে দাড়ায় বৃষ্টি। রাতের মাকে সালাম করে উঠে দাড়তে বৃষ্টিকে জড়িয়ে নেয় সে।
– ঘরের লক্ষি ফিরে এসেছে বলে।
উপর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখে চলছে রাত। বৃষ্টি রাতকে দেখে আড় চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তার দিকে। বৃষ্টির দৃষ্টি খেয়াল করতেই সেখান থেকে চলে গেলো রাত।
ব্যাগটা তুলে বৃষ্টিকে নিয়ে রুমের দিকে হাটা ধরলো আরশি। একটা জোড় পূর্বক হাসির রেখা টেনে হাটা ধরলো বৃষ্টিও।

ছাদে ফুলের টব গুলোতে পানি দিচ্ছে বৃষ্টি। ফুল ফোটার সময় হয়েছে গাছ গুলোতে। আরশি গেছে কলেজে। প্রতিদিন আরশির সাথে কলেজে চলে গেলেও আজ যায়নি সে। এক্সামও ঘনিয়ে এসেছে তার। তবুও যেনো নিজেকেপ্রস্তুত করতে পারছেনা। পেছন থেকে মায়ের কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকালো বৃষ্টি।
– কিছু বলবেন মা?
– হুম, এদিকে আসো।
– হ্যা মা বলুন।
– মা, আমি জানি এখানে তোমার সাথে যাই হচ্ছে সব অন্যায় হচ্ছে। ভুলটা তো তোমার না, তবুও সব দিক থেকে কষ্ট টা তোমারই পেতে হচ্ছে। বিশ্বাস করো রাত এমন ছিলোনা। ভালোবাসা নামক একটা ধোকা এলোমেলো করে দিয়েছে তার জীবন টা। একটা সতেজ বৃক্ষও যখন শুকনো হয়ে ঢলে পড়ে, তখন তার গোড়ায়ও পানি দিয়ে প্রান ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর আমার রাত এখন সেই বৃক্ষটার মতোই। একটা ধোকা তাকে যতটা আঘাত করেছে, ঠিক ততোটাই ভালোবাসা প্রয়োজন তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর আমার মনে হয় সেটা তুমি পারবে। আমার ছেলেটাকে আগের মতো করে দিও তুমি।
– আমি চেষ্টা করবো মা।
– ভালোবাসার গভিরতা তারাই মাপতে পারে যারা এটা পেয়েও খুব নির্মম ভাবে হারিয়ে ফেলে। তুমি অনেক সুখি হবে মা। অনেক সুখি হবে।
এটা বলেই চোখের কোনের জলটা মুছে হাটা ধরলো রাতের মা। ওখানে এখনো বসে আছে বৃষ্টি। আবারও এই পরিবারের জ্বালের মাঝে জড়িয়ে গেলো সে। যখনই ভাবে এসব ছেরে অনেক দুরে চলে যাবে তখনি নিজেকে এটা বুঝ দেয় যে, জদি সেও চলে যায় তাহলে তার আর বর্ষার মাঝে তফাৎ টা কি থাকবে? আবারও এলোমেলো হয়ে যাবে পরিবার টা। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা সম্ভব। এমন একটা সময় আসবে যখন এসব সমস্যা থাকবেনা। কিন্তু কবে আসবে সেই সু-দিন।

এভাবেই কেটে গেলো একটি মাস। এই একটি মাসে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। শুধু রাতের পাগলামু গুলো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো সে নিজেও এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু বৃষ্টির প্রতি অবহেলাটা এখনো তার মাঝে বিধ্যমান। বৃষ্টিকে এখনো এড়িয়ে চলে সে।

সন্ধা ৭ টা,
সোফায় বসে ছিলো বৃষ্টি। কনিং ব্যাল এর শব্দ আসে কানে। উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয় বৃষ্টি। দেখে একটা সুন্দরি মেয়ে দাড়িয়ে আছে বাইরে। বৃষ্টিকে দেখে মুখটা কুচকে বলে উঠে,
– রাত আছে?
– না নেই।
– তাহলে স্যার আছে?
– নাহ্, কেওই নেই।
– বুজলাম না আজ অফিস থেকেও তারাতারি চলে এসেছে আর আমাকেও রাত কিছু বলে আসেনি। আচ্ছা ঠিক আছে। রাত আসলে বলবে তাকে কেও খুজতে এসেছে।

আর কিছু না বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলো মেয়েটা। হতভ্বম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। রাত আসলে তাকে বলে আসতে হবে কেনো? আর এমন ভাবে বলছে যাতে রাত ওর খুব কাছের কেও। আচ্ছা রাত কি তাহলে বাইরেও অন্য একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে? কথা গুলো ভাবতেই যেনো কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে তার। মাথাটা ঘুরছে। বুকের ভেতরটায় চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে মুহুর্তেই। কিন্তু এমন কেনো হচ্ছে তার? সে তো রাতের কেও না। নাহ্ কিছুই ভাবতে পারছেনা সে, মাথাটা প্রচুর ধরে গেছে তার।

ওইদিন রাতকে কিছু বলার সাহস পায়নি বৃষ্টি। ভয়ের সাথে কিছুটা অভিমানও ভর করেছিলো মনে।

শেষ বিকেলের দিকে ছাদে দাড়িয়েছিলো রাত। থালার মতো লাল সূর্যটা আজ দেখতে পারছেনা সে। সারা আকাশ মেঘে ঢেকে আছে। পুরু আকাশটা কালো হয়ে যাচ্ছে ধিরে ধিরে। হালকা বাতাসে চুলগুলো নারাচারা করছে রাতের।
বৃষ্টি এসে দাড়ায় তার পাশে। তার খোলা চুল গুলোও উড়ছে বাতাসে।
– আপনার যে বাইরেও সম্পর্ক আছে যানতাম না তো।
কথাটা একটু অভিমানি সুরেই বললো বৃষ্টি। বৃষ্টির কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো রাত।
বৃষ্টি আবার বলে উঠে,
– গতকাল সন্ধায় আপনার গার্লফ্রেন্ড এসেছিলো বাসায়। আপনাকে খুজছিলো, বাসায় ছিলেন না তাই আবার চলে গেছে।
বৃষ্টির কথায় কোনো প্রতি উত্তর দিলোনা রাত। শুধু একটা হাসির রেখা টেনে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। রাতের কোনো উত্তর না পেয়ে কান্নার ভাব চলে এলো মুখে। হয়তো ভেবেছিলো রাত বলবে, না ও আমার গার্লফ্রন্ড না এমনি বন্ধু ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্কই নেই।
এই জাতিয় উত্তর আশা করেছিলো। কিন্তু রাত কিছু বলেনি। তাহলে কি মেয়েটার সাথে কি রাতের সম্পর্কটা গভির?
কান্নার ভাবটা চেপে রেকে একটু অভিমানি শুরে বলে উঠে,
– আমাদের সম্পর্কটা কি এমনই থাকবে?
– হয়তো।
এইটুকু বলে পকেটে হাত রেখে হাটা ধরলো রাত।
ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো বৃষ্টি। কিছুক্ষন পরই মুষলধারে বৃষ্টি নেমে আসলো। বৃষ্টিতে ঔভাবে দাড়িয়েই ভিজতে থাকলো বৃষ্টি। এই বর্ষন কি পারেনা তার সব কষ্ট ধুয়ে মুছে শেষ করে দিতে?

খেয়ে দেয়ে সুয়ে পরলো সবাই। প্রতি দিনের মতো সোফায় গিয়ে সুয়ে পরলো বৃষ্টি। শরিরটা কেমন কাপছে। শীতল ভাব অনুভব করছে সে। হয়তো সন্ধায় ভিজে জ্বর চলে আসছে ধিরে ধিরে।

বৃষ্টি হটাৎ অনুভব করলো তাকে কেও ঘুমের মাঝে কোলে তুলে নিয়ে হাটছে। পিট পিট করে চোখ খুলতেই দেখে রাত। রাত কোলে করে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো বৃষ্টিকে। এই প্রথম রাতের স্পর্স অনুভব করলো বৃষ্টি। জ্বরের ঘোরেও যেনো অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো তার মাঝে। চুপ চাপ চোখ বন্ধ কর আছে সে। বৃষ্টিকে বিছানায় সুইয়ে পাতলা কম্বলটা গায়ে টেনে দিয়ে পাশে বসে কপালে হাত বুলাচ্ছে রাত।

To be continue………….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here