বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_৬,৭

0
1290

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ_৬,৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ_৬

বৃষ্টি হটাৎ অনুভব করলো তাকে কেও ঘুমের মাঝে কোলে নিয়ে হাটছে। পিট পিট করে তাকাতেই চোখ পরে সামনে রাতের মুখের দিকে। হটাৎ এমন হওয়ায় পুরু ব্যাপারটাই যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে বৃষ্টির। রাত আর তাকে কোলে তোলা, ইম্পসিবল। চোখ দুটি বুজে রইলো বৃষ্টি। এই প্রথম রাতের স্পর্শ অনুভব করছে সে। জ্বরের ঘোরেও যেনো অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে। আজ রাত যেই পথেই হাটুক না কেনো, এই পথটা যেনো হয় এক অফুরন্ত পথ।

বৃষ্টিকে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো রাত। পাতলা কম্বলটা গায়ে টেনে দিলো। মাথায় পাশে বসে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির মুখের দিকে। হতটা কপালে রেখে জ্বর চেক করছে সে।
চোখ বুজে মুহুর্তটা ভালোই উপভোগ করছে বৃষ্টি। কাত হয়ে জড়িয়ে ধরে রাতকে। মাথার পাশে বসায়, কোমর ধরে জড়িয়ে ধরার সুবিধাটা ভালোই হয়েছে তার। কিন্তু তাও আজ রাত কিছু বলছেনা। শুধু চুপ চাপ চেয়ে আছে বৃষ্টির দিকে।

আবার কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তা খেয়ালই করেনি বৃষ্টি। কিছুক্ষন পর চোখ খুলতেই চার পাশে সবাইকে দেখতে পেলো সে। পাশে বসে ঔষধ লিখে রাতকে দিলো ডাক্তার। অপর পাশে বাবা মা আরশি সবাই বসে আছে। ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি পিট পিট করে তাকাচ্ছে সবার দিকে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে, যেনো এক মস্ত বড় কান্ড পাকিয়ে ফেলেছে সে।

পাখির কিচির মিচির শুনা যাচ্ছে চার দিকে। ভোরের আলো পুরুপুরি ভাবে ফুটে উঠেছে। বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে আরাম করে শুয়ে আছে বৃষ্টি। আর রাতকে দেখলো ওয়াশরুম থেকে বৃড়িয়ে আসতে।
বৃষ্টি এইবার শিওর হলো যে গতকাল রাতের ব্যাপারটা স্বপ্ন নয় সত্যি রাত তাকে কোলে নিয়ে হেটেছে। তাহলে কি রাত আর আমি একই বিছানায় ছিলাম আজ? ভাবতেই লজ্জায় শিওরে উঠলো বৃষ্টি। রাতের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়ে নিচে চলে গেলো সে।
ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৭ টা। বাইরে সোনালি রোদ টা ধিরে ধিরে প্রখর হয়ে উঠছে। পাখিদের কিচির মিচিরের শব্দটাও কমে গিয়েছে অনেকটা। এখন শরির কিছুটা হালকা লাগছে বৃষ্টির। তবে মাথাটা এখনো কিছুটা ধরে আছে। ধিরে পায়ে বিছানা থেকে নেমে নিচে চলে গেলো সে। দেখে মা আর চৈতি মিলে নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছে। তাদের দেখেই কিচেনের দিকে এগিয়ে যায় বৃষ্টি। মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে তার। বাড়ির বৌ পড়ে ঘুমুচ্ছে আর শাশুরি রান্না ঘরে।
– মা আপনি কেনো কষ্ট করছেন? চৈতিকে বললেই তো সে আমায় ডেকে দিতো। আমি পরে ঘুমুচ্ছি আর আপনি কষ্ট করছেন, ব্যাপারটা কি মানানসই বলুন?
রাতের মা রাত্রি চৌধুরি মুখে একটা হাসির রেখা টেনে বলে উঠে,
– তোমার শরির কেমন লাগছে এখন?
– এখন মোটামুটি ভালো লাগছে মা।
রাত্রি চৌধুরি বৃষ্টির কপালে হাত রেখে বলে উঠে,
– জ্বর তো দেখছি এখনো আছে। আচ্ছা তুমি কি এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলে যে গতকাল সারা বিকেল বৃষ্টিতে ভিজলে? এখন জ্বর বাধিয়ে ফেললে। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। আর রাত কি ঔষধগুলো এনেছে?
– কেনো অন্য বাড়ির একটা মেয়ের কাজ আমার কেনো করতে হবে? আমি কি তার কাজের লোক নাকি? যত্বসব ফাউল কথাবার্তা।
পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটা বললো রাত।
হাসি মুখটা যেনো নিমেশেই মলিন হয়ে যায় বৃষ্টির। সত্যি ই তো সে অন্য বাড়ির মেয়ে। সুজুগ বুঝে ঠিকই খোচাটা দিয়ে দিলো রাত।
মুখটা গোমড়া করে উপরে চলে যায় বৃষ্টি। ওদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে নাস্তা করতে ব্যাস্ত রাত। যেনো বৃষ্টির অভিমানটা তার চোখেই ধরা পরেনি।
পাশ থেকে রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– দিলিতো মেয়েটার মনটা খারাপ করে। আচ্ছা একটা কথা বলতো, কেনো ওর সাথে এমন করিস তুই? দোষটা কি তার, যে সব কিছু তাকেই সহ্য করতে হবে? কখনো একটু ভালো ব্যাবহার করিসনা মেয়েটার সাথে। জীবনে মানুষ কষ্ট পায়, প্রতারিত হয়, আরো কতো কিছুই হয় মানুষের জীবনে। তাই বলে তার জেদ অন্য কারো উপরই ফেলতে হবে? একটা মেয়ের নতুন বাড়িতে নতুন বৌ হয়ে এসে সব কিছু ঘুচিয়ে তুলতেও কয়েকমাস সময় লাগে। মনের মাঝে থাকে পরিবার ছেরে আশার কষ্ট। আর সেখানেও যদি তার জীবন স্বামী, শশুর বাড়ির অবহেলায় ডুবে থাকে তাহলে তার মনের অবস্থাটা কেমন তা শুধু সে নিজেই বুঝতে পারে। আর বিয়েটাতে তো তুই নিজেই সম্মতি দিয়েছিস, তাহলে কেনো এমন করছিস মেয়েটার সাথে। তুই এখন অবুজ নয়। জদি পারিস বৃষ্টির জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দিখিস। এটুকু বলেই কিচেনের দিকে হাটা ধরে রাতের মা। রুদ্র চৌধুরিও এসে নাস্তা করছে।
খাওয়া শেষ করে একটা প্লেটে কিছু নাস্তা নিয়ে উপরে চলে যায় রাত।
বিষন্ন মনে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। রাতকে দেখে দাড়িয়ে যায় সে। হাত দুটু একটু কাচুমাচু করে সেখান থেকে সরে যেতেই পেছন থেকে হাতটা চেপে ধরলো রাত।
– আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি কোনো এলিএন নই। আর অভিমানি মুখেও তোমাকে হেব্বি লাগে। এখন যাও অভিমান দুর করে ফ্রেশ হয়ে আসো।
চলে যেতে চেয়েও রাতের কথায় এবার স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। বৃষ্টিকে ওভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাত উঠে বৃষ্টির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ওয়াশ রুমে। বৃষ্টিকে আয়নার সামনে দার করিয়ে ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দেয় রাত।
– নাও এটা, এখন কি তোমালকে আমার ব্রাশও করে দিতে হবে?
– না, আমি নিজের কাজ নিজে করতে পারবো। অন্য বাড়ির মানুষের জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।

বৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে বের হয় ওয়াশ রুম থেকে। হাত মুখ মুছে আয়নার সামনে বসে পরে সে। রাত হাতটা ধরে তার পাশে এনে বসায় বৃষ্টিকে,
– এখন তোমার বডি ট্রিটমেন্ট করার সময় নয়। শরিরের যত্ন নেওয়ার সময়। খেয়ে ঔষধ না খেলে সুস্থ হবে কি করে? দেখি হা করো।
রাত একে একে খাইয়ে দিলো বৃষ্টিকে। খাওয়া শেষে ঔষধ গুলোও খাইয়ে দিলো। দুটা ঔষধ বড় হওয়ায় সেগুলো ভেঙে দিলো রাত।
– আপনি না বললেন, ঔষধ আনেন নি। তহলে?
– চিন্তা করোনা, ঘর থেকে উল্টা পাল্টা ঔষধ খাওয়াচ্ছিনা তোমাকে। তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন নিয়ে আসলাম।
রাত বৃষ্টিকে খাইয়ে উঠে আশার সময় আবার দাড়িয়ে বলে উঠে,
– শুনো, এই বাড়িটা তোমারও। যাই হোক তুমি এখন এই বাড়ির বৌ। সো ভয় নয় নিজের বাড়িতে অধিকার নিয়েই চলবে। তাছারা এই বাড়িতে আশার পর থেকে শুধু কষ্টই পেয়েছো তুমি। বাসর রাতেও তোমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করিনি আমি। রাগের বসে তোমার গায়ে হাতও তুলেছি। এই বাড়িতে তোমাকে হাতের আঘাতে না হলেও মুখের আঘাতে কষ্ট দিয়ে এসেছি দিনের পর দিন। বিশ্বাস করো আমি এসব কেনো করেছি তা আমি নিজেও জানিনা। আমি সত্যিই আমার ব্যাবহারের জন্য লজ্জিত। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।
– আপনি নিজেকে এতোটা ছোট করে দেখবেন না প্লিজ। আপনার তো কোনো দোষ নেই এতে। আমার পরিবার থেকে আপনি যেই আঘাতটা পেয়েছেন তাতে,,,,,,
– স্টপ, বর্ষা তোমার পরিবারের কেও না। তোমার পরিবারের কিছু হলেও তোমার কেও না। কারন তুমিও এখন ওই বাড়ির অতিথি এই চৌধুরি বাড়ির বৌ। সো ওর নাম আমার সামনেও উচ্চারন করবেনা কখনো।
এই বলে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো রাত। বৃষ্টির চোখের কোনে ভিজে উঠেছে, আজ তা দুঃখে নয়। রাত কি তাহলে আজ তাকে স্ত্রী হিসেবে সম্মোধন করে নিলো?
সাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে অফিসের জন্য রেডি হলো রাত। রুদ্র চৌধুরি আগেই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নাস্তা করছিলো। নিচে গিয়ে রুদ্র চৌধুরিকে বলে উঠে,
– বাবা আমি যাচ্ছি। আমি থাকতে তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। তুমি এখন থেকে রেষ্ট নিবে শুধু। আজ থেকে আমি একাই সামলাবো সব।
– তুই কি একা সব সামলাতে পারবি?
– অবশ্যই পারবো বাবা। তোমার ছেলে না আমি? তুমি এক সময় সব একা সামলিয়েছো না? আর তোমার সাথে গিয়ে গিয়ে তো আমি সব বুঝেি নিয়েছি এখন। So, no tention, you take rest.?

বিকেলে বাইরে হাটতে বেড়িয়েছে বৃষ্টি ও আরশি। বৃষ্টি ঘুমাচ্ছিলো তখনই আরশি উঠিয়ে নিয়ে আসলো তার সাথে ঘুরতে।
ঘুরতে ঘুরতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেলো। একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকে খাবার অর্ডার করলো আরশি।
এলো পাথারি সব খাবার খেয়ে চলছে আরশি। বৃষ্টি পাশে বসে ধিরে ধিরে খাচ্ছে আর আরশির দিকে তাকিয়ে হাসছে।

খাবার শেষে হেলান দিয়ে বসে আছে আরশি। বিলের কাগজ হাতে নিয়ে দেখে ৩ হাজার ৭ শত টাকা বিল। ব্যাগ চেক করে মাথায় হাত দেয় আরশি। বৃষ্টিকে নিয়ে তাড়া হুরা করে বের হতে একটা টাকাও নিয়ে আসেনি সাথে। ব্যাগে আছে শুধু কিছু খুচরা টাকা।
বিল প্লে করে তারপর যেতে হবে এখান থেকে। ফোনটা হাতে নিয়ে ওটাও বন্দ হয়ে আছে, হয়তো চার্জ শেষ। নয়তো ভাইয়া অথবা বাবাকে বলে টাকা নিয়ে নিতো। বৃষ্টিও ফোন আনেনি সাথে করে, আরশি ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসায় এতো কিছু খেয়াল ছিলোনা তার। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধা হয়। উপায় খুজে পাচ্ছেনা আরশি। হটাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি চাপলো তার। ফোনটা কানে ধরেই কান্না শুরু করে সে,
– ও আল্লা গো একি হয়ে গেলো গো, আমার সব শেষ হয়ে গেলো গো।
বলেই এমন ভাবে দৌড় দিলো যাতে মস্ত বড় সর্বনাস হয়ে গেছে তার। পেছন পেছন বৃষ্টিও ছুটলো তার সাথে। যেনো মস্ত বড় কিছু হারিয়ে ফেলেচে তারা।

রাস্তায় এসে হাপাতে থাকে দুজন। বৃষ্টি হাপাতে হাপাতে বলে উঠে,
– এই আরশি কার কি হয়ে বলো তো। আমি আর টেনশন নিতে পারছিনা।
বৃষ্টির কথায় অট্ট হাসিতে মেতে উঠে আরশি।
– তুমি সত্যি একটা গাধি ভাবি। এমনটা না করলে কি ওখান থেকে বেরোতে পারতাম।
– তার মানে এটা তোমার বেড়িয়ে আসার ধান্দা ছিলো??
– হুম?

রাতে খাবার খেয়ে ছাদে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি ও আরশি। পেছন থেকে রাত গিয়ে বুকে দু,হাত গুজে দাড়ালো।
– ভাইয়া কিছু বলবে?
– বিকেলের পর রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি?
– একটু বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম ভাইয়া।
– তা বুঝলাম, কিন্তু আজ আবার কোন কান্ড পাকিয়ে আসলি?
– কই না তো।
– তুই বলবি নাকি আমিই বলে দিবো?.
– কোনো কান্ড পাকালেই তো বলবে তাইনা?
– তোরা কি ভেবেছিস তোদেরকে রেস্টুরেন্ট থেকে এমনি এমনি আসতে দিয়েছে।
জ্বিভে কামর দেয় আরশি। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– তু তুমি জানলে কি করে।
– কারন ওরা জানে তুই আমার বোন আর বাবার একমাত্র মেয়ে। ভালোই ডস দিতে শিকেছিস দেখি।
বৃষ্টি আস্তে করে পাশ কাটিয়ে সরে যেতেই রাত তার হাতটা ধরে আবার আরশির পাশে এনে দাড় করালো,
– তুমি কোথায় যাচ্ছো?
– আমি কিছু করিনি, যা করেছে আরশি করেছে।
– যে চুরি করে আর যে পাহারা দেয় দুজনই সমান অপরাধি।

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। আরশিও তার রুমে চলে গেছে। বৃষ্টি গিয়ে শুয়ে পরলো সোফায়। চোখ বুজে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত সে। আচমকাই কেও এসে টেনে তোলে বৃষ্টির হাতটা ধরে। চোখ খুলে দেখে রাত।
– কিছু লাগবে আপনার?
– আজ থেকে তোমার আর সোফায় শুতে হবেনা বৃষ্টি। তুমি এই বাড়ির বৌ তাই তোমার সব কিছুতেই অধিকার আছে। বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ো তুমি। আমিই আজ থেকে এখানে থাকবো।
– না না আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা। আপনি ঘুমান, আমি ঠিকই আছি।
– আমি কিছু জানতে চেয়েছি তোমার থেকে? এখান থেকে সরতে বলেছি সরো আজ থেকে আমি এখানেই ঘুমাবো। এতো বড় খাট খালি পরে আছে তুমি গিয়ে ওখানেই ঘুমাবে আজ থেকে।

To be continue……

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ?
#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__৭

ইদানিং রাতের আচার আচরণে অনেকটাই পরিবর্তন দেখা যায়। বৃষ্টির সাথেও আগের মতো অস্বাভাবিক আচরণ করেনা সে। স্ত্রীর অধিকার না দিলেও আচরণ টা ঠিক ঠাকই করে বৃষ্টির সাথে। এটা কি বৃষ্টির প্রতি তার কর্তব্য পালন করা? নাকি একটু সহানুভুতি? নাকি বৃষ্টির প্রতি তার ধিরে ধিরে ভালোবাসা জম্ম নেওয়া? এটা যেনো একটা অজানা প্রশ্ন।

সন্ধার পর সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে বৃষ্টি। বাইরে গাড়ির হর্ণ শুনতে পায় সে। বুঝতেই পারছে রাত এসেছে। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখে রাতের হাতে ভারি কিছু। যা হাতে করে ঘরে নিয়ে আসছে সে। পেপার দিয়ে মোড়ানোর কারনে বুঝা যাচ্ছেনা ওটা।
ওগুলো রুমের এক পাশে রেখে হাত থেকে ঘরি খুলছে রাত। বৃষ্টি পেছন থেকে বলে উঠে,
– এগুলো কি?
– অফিসের কিছু কাগজ।
– ওহ্।
টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় রাত। দেখার আগ্রহ জম্মালেও অফিসের কাগজ পত্র শুনে আর গুরুত্ব দিলোনা বৃষ্টি। মায়ের ডাক আসতেই নিচে চলে গেলো সে।

রাতে খাবার খেয়ে বেলকনিতে বসে আছে বৃষ্টি। এই থমথমে পরিবেশে জোৎস্নার দেখাও আলাদা একটা তৃপ্তিময়। হাতে দু,টা কফির মগ নিয়ে বৃষ্টির পাশে এসে বসলো রাত। বৃষ্টির পাশে বসে একটা কফির মগ বাড়িয়ে দেয় তার দিকে।
– নাও কফি,
– উহু, ইচ্ছে করছেনা।
– নাও নাও, ভালো লাগবে। আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে।
– আপনি বানিয়েছেন? বাব্বাহ্, তাহলে তো খেয়েই দেখতে হয়।
রাত কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
– আমার কফির প্রশংসা করলে নাকি নাকি অপমান করলে ঠিক বুঝতে পারছিনা। যাই হোক কেমন হয়েছে?
– জঘন্ন।
– ওটা খারাপ হলে আমারটা ট্রাই করতে পারো। এটা ভালোই হয়েছে।
– না থাক, এমনি দুষ্টুমি করছিলাম। খুব ভালো কফি বানার আপনি।
একটা মৃদ হাসি দিয়ে কফির মগে চুমুক দেয় দুজনই।

-তোমার না সামনে ইয়ার ফাইনাল?
বৃষ্টি মাথা নিচু বলে উঠে,
– হুম।
– শুধু হুম হুম করলে কি হবে? পরিক্ষার জন্য তো প্রস্তুতি ও থাকতে হয়।
বৃষ্টি একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,
– আর প্রস্তুতি, দের মাস ধরে কলেজের সাথে নেই কোনো সংযোগ, বই খাতার সাথে নেই কোনো সম্পর্ক।
– আগামি কাল থেকে তুমি আবার কলেজে যাচ্ছো। তোমার সাথে কলেজে গিয়ে আমিই স্যারদের বুঝিয়ে বলবো।
বৃষ্টি খুশিতে হকচকিয়ে বলে উঠে,
– সত্যি?
– হুম।
– তাহলে কাল বাড়ি গিয়ে বইগুলোও সব নিয়ে আসবো। সেই সাথে বাবা মাকেও দেখে আশা হবে। যাবেন?
– এখন তুমি ওই বাড়িতে গিয়ে বই নিয়ে আসবে। আর পরে বলবে, নিজের বৌয়ের পড়াশুনার জন্য বই যৌতুক নিছি।
– কিহ্! বই নিয়ে আশার সাথে যৌতুকের কি সম্পর্ক? আর আমি ওসব বলবো কেনো?
– মেয়েদের এই একটা সমস্যা হলো, ঝগড়ার সময় কোনো কিছু নিয়ে খোটা দেওয়া। বলতে গেলে এটাও তাদের একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে।
– দেখেন সবাই এক নয়? আর আপনি ডিরেক্টলি মেয়ে জাতিকে এভাবে অপমান করতে পারেন না, হুম।
– ছেলেরা মেয়েদের ব্যাপারে সত্যিটা বললেই ওটা অপমান হয়ে যায় তাই না?
– আপনার মতো পাগলের সাথে ঝগরা করার মুড নেই আমার, হুহ্। তাছারা বই না আনলে পড়বো কি?

রাত বৃষ্টির হাত ধরে নিয়ে চলে যায় রুমে। বিছানায় বসিয়ে তখন নিয়ে আশা ওই পেপার মোড়ানে জিনিসটা নিয়ে আসে তার সামনে।
– এটা খুলে দেখো সব ঠিকঠাক আছে নাকি?
বৃষ্টি ওটা খুলে দেখে তার প্রয়োজনিয় সব বই ই নিয়ে এসেছে রাত।
– তার মানে আপনি তখন বই নিয়ে এসেছেন?
– হুম, তোমার বই সম্পুর্ন সেট ই আছে। কাল থেকে আবার স্টাডির সাথে সু-সম্পর্ক গরে তুলবে। এই বাড়ির বৌ হয়ে মাজ পথে পড়াশুনা বন্ধ করে দাও এটা আমি চাই না।
কাল থেকে আবার কলেজে যাবে বৃষ্টি। ভেবেছিলো এই বাড়িতে এসে তার পড়াশুনাটাই অফ হয়ে গেছে। কখনো বলার সাহস পায়নি রাতকে। যতটা খারাপ ভেবেছে অতোটাও খারাপ নয় লোকটা। এখন তার বাচ্চাদের মতো গলা জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে।
“” আপনি খুব ভালো।

পরদিন কলেজে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেয় রাত। ছুটি শেষে বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো রাত। হটাৎ বৃষ্টি হাত নাচিয়ে বলতে থাকে,
– এই গাড়ি থামান গাড়ি থামান।
গাড়ি থামিয়ে রাগি লুক নিয়ে বলে উঠে,
– কি হলো বানরের মতো এমন লাফাচ্ছো কেনো?
– ওইযে দেখেন, ফুলগুলো কি সুন্দর। আমাকে দু,টু এনে দিন না।
– বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর, শিশুরা যেমন মাতৃ কোলে, তেমনই পুষ্প সব সময় গাছেই সুন্দর। মানুষের হাতে সুন্দর লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। তারপর ঠিকই সে ছুড়ে ফেলে দেয়, সেগুলো। এগুলো এখন গাছে থাকায় তুমি যেমন সৌন্দর্যটা উপভোগ করছো, এখন জদি ছিরে ফেলো তেমন অন্যরা কি আর সেই সুন্দর্যটা উপভোগ করতে পারবে?
– আমি এতো কিছু বুঝিনা। আমাকে একটা হলেও এনে দিন। আর আমি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কিছু পেলে, সেটা ফেলে দিই না, যত্ন করে রেখে দিই।
রাত কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে, গাড়ি থেকে নেমে ওই ফুলগাছ গুলোর কাছে চলে গেলো।
জানালা দিয়ে মাথা বের করে রাতের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় বৃষ্টি।

ফুল নিয়ে ফেরার পতেই একটা ছেলে গাড়ি থেকে নেমে বন্ধু বন্ধু বলে জড়িয়ে ধরে রাতকে।
– আরে দোস্ত কতো বছর পর দেখা। কেমন আছিস?
ওদের কথাপোকথনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো বৃষ্টি।
গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে যায় সে। রাতের বন্ধু রাফিকে দেখিয়ে রাত বলে উঠে,
– আমার কলেজ ফ্রেন্ড রাফি। বাইরে থাকে, আজ ৪ বছর পর দেশে ফিরেছে।
বৃষ্টি হাই বলে হাত বাড়িয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। রাফিও হাত বাড়িয় বলে উঠে,
– নাইস টু মিট ইউ।
রাতের দিকে তাকিয়ে হাত ছেরে দেয় বৃষ্টি। একটা রাগি লুক দেখতে পায় রাতের চোখে। রাফি রাতকে বলে উঠে,
– কি হয় তোর?
বৃষ্টিও একটু উৎসাহের দৃষ্টিতে তাকায় রাতের দিকে। রাত আজ তাকে কি বলে সম্মোধন করে এটা দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে সে।
রাত একবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– আমার কাজিন বৃষ্টি।
– ওহ্।
নিমেষেই মুখটা গোমড়া হয়ে যায় বৃষ্টির। নিজের স্ত্রী হিসেবে সম্মোধন করতে কি এতোই গায়ে লাগে তার? গোমড়া মুখে সেখান থেকে হাটা ধরে বৃষ্টি।
” যেখানে আমার বর্তমান পরিচয়টা দিতে তার মুখে বাধে, সেখান থেকে প্রস্থান করাটাই ভালো।
রাত ও রাফি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। রাফি রাতের কাধে হাত রেখে বলে উঠে,
– ওর হটাৎ কি হলো। কাহিনি বলতো।
– কিছুনা বাদ দে।
– কাজিন বলায় মুখটা বাংলা ৫ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় তোর কাজিন তোকে ভালোবেসে ফেলেছেরে। বলেই একটা হাসি দেয় রাফি।
বৃষ্টি গিয়ে গাড়িতে উটে বসে রইলো।
সারা পথ আর রাতের সাথে একটাও কথা বলেনি বৃষ্টি। তবুও মনকে এটা বুঝ দেয়,
” আজ আমার এমন লাগছে কেনো? সত্যিই তো আমি ওর কেও না। সে তো আগেই বলে দিয়েছিলো আমি তার স্ত্রী শুধু মাত্র নামে। তার পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার কেওই না আমি। কেও না।

To be continue…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here